রাজনৈতিক হীনম্মন্যতার কারণে দেশের উন্নয়ন বিএনপির চোখে পড়ে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি মনে করেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে অস্বীকার করাও এক ধরনের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের শামিল।
রোববার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিএনপি এতই অন্ধ যে, কোনো উন্নয়ন ও প্রগতি তাদের চোখে পড়ে না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দাবি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত সাফল্যে বিএনপি বিচলিত হয়ে পড়ে, শুধু তাই নয়, বিএনপি এমন ধারাবাহিক উন্নয়নকে নিজেদের পরাজয় মনে করে। তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতাদের লাগাতার মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাধীনতার ৫০ বছরে কোনো প্রাপ্তি খুঁজে পাননি। মির্জা ফখরুলের এই না পাওয়ার মর্মবেদনার উৎসমূল সম্পর্কে আমরা উপলব্ধি করতে পারি।'
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একসময়ের মঙ্গা-খরা, দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষকবলিত, দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশ যখন জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জন করেছে, তখন বিএনপি নেতারা কোনো প্রাপ্তি খুঁজে পাবেন না; এটাই স্বাভাবিক। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ি দাপিয়ে বিএনপি নেতারা সিলেট গমন করলেন অথচ প্রশস্ত এই মহাসড়কের দু’পাশের উর্বর সবুজ প্রান্তর এবং বদলে যাওয়া উন্নত জনপদ তাদের চোখে পড়ে না।
‘পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, সাবমেরিন, এলএনজি টার্মিনাল, চার ও আট লাইনের অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে, নিত্যনতুন মহাসড়ক ও সেতু, নতুন নতুন রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন, উড়াল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি ও শিক্ষাবৃত্তি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দারিদ্র্যবিমোচন, গৃহহীনদের জন্য বিনা মূল্যে জমি ও গৃহ প্রদান, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিনা মূল্যে করোনা টিকা প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টিসহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মাইলফলক স্পর্শকারী বাংলাদেশের অসংখ্য প্রাপ্তি বিএনপি নেতাদের চোখে পড়ে না।’
ওবায়দুল কাদের মনে করেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে অস্বীকার করাও এক ধরনের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের শামিল।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতিতে জাতিদ্রোহী-দেশদ্রোহীদের যেমন গাত্রদাহ হয়, ঠিক তেমনি বিএনপি নেতাদেরও সহ্য হয় না। রাজনৈতিক হীনম্মন্যতার কারণে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত সাফল্যে বিচলিত হয়ে পড়ে বিএনপি। এমনকি সত্যকে স্বীকার করার সাহস পর্যন্ত রাখে না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির উত্তরাধিকার এবং একাত্তরের ঘাতক-যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি ও তাদের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলামের এই হতাশা ও মর্মবেদনাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ বিকাশের প্রধান অন্তরায়।
‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ মহা-আড়ম্বরে উদযাপন করেছে এ দেশের মানুষ। এমন একটি মহতীক্ষণে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে কোনো প্রকার ইতিবাচক রাজনৈতিক কর্মসূচি তুলে না ধরে চিরাচরিতভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাকর।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে এই ষড়যন্ত্র, অপকৌশল ও অপপ্রচারের রাজনীতি পরিত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক ও সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:‘ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার’ উল্লেখ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে দুর্গাপূজার উৎসব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে- দল-মত নির্বিশেষে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।’
শুক্রবার বিকেলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুর্গাপূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। এতে সারা দেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আপনার-আমার, আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে- এটাই বিএনপির নীতি, এটাই বিএনপির রাজনীতি।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আগামী মাসেই আপনাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই উৎসব উপলক্ষে আপনাদেরকে আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনারা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিরাপদে পূজা উদযাপন করুন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্র ছিলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বাসী বলুন আর অবিশ্বাসী বলুন কিংবা সংস্কারবাদী- প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র বা সমাজে যার যার ধর্মীয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক অধিকারগুলো স্বচ্ছন্দে বিনাবাধায় উপভোগ করবেন এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রীষ্টান- মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের এমন কোনো জিজ্ঞাসা ছিলো না। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এসব নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র পরিচয়- আমরা বাংলাদেশী।’
দেশনায়ক তারেক রহমান বলেন, ‘গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে যা হয়েছে আপনারা তা দেখেছেন। সারাদেশে আইনের শাসন ছিলো না বলেই প্রধান বিচারপতি হয়েও এস কে সিনহাকে অবিচারের শিকার হতে হয়েছিলো।
‘পলাতক স্বৈরাচারের আমলে আদালত আর আয়না ঘর একাকার হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি নিজ নিজ অধিকার রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের ভোটের অধিকার একটি কার্যকরী শক্তিশালী অস্ত্র। যতদিন পর্যন্ত মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান অর্থাৎ দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিজের ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষিত নয়।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করা। একটা অবিশ্বাস্য বিপ্লব ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করে একটা ভয়াবহ দানবকে হটাতে হয়েছে এবং আমরা বিজয় অর্জন করেছি।
‘এই বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে- এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দুঃখজনকভাবে আপনাদেরকে এর ভেতরে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় এসব ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। ইন্ডিয়ার জার্নালিস্ট এসেছিলেন দলে দলে। সবাইকে একটা কথা আমরা বলেছি যে, এই পরিবর্তনের ফলে যেটুকু ঘটেছে সেটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক, সেটা কোনো সাম্প্রদায়িক নয়।
‘আজকে আবার একই চক্রান্ত শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। দেখুন, এগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেখবেন না। আজকে সেখানে একইভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।
‘আসুন আমরা ভবিষ্যতে যেন একটি রেইনবো নেশন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে পারি তারেক রহমানের নেতৃত্বে সেই পথে আমরা এগিয়ে যাই।’
বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তপন দে’র যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, ফেনীর কামাক্ষা চন্দ, খাগড়াছড়ির অজয় সেনগুপ্ত, সাভারের উত্তম ঘোষ, খুলনার সুজনা জলি, বরিশালের সঞ্জয় গুপ্ত, অবসরপ্রাপ্ত টিভি প্রযোজক মনোজ সেনগুপ্ত, গৌড় সিনহা প্রমুখ।
অন্যদের মধ্যে ইসকনের চারু চন্দ্র্র দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গোস্বামী, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, গুলশান পূজা কমিটির জেএল ভৌমিক, পান্না লাল দত্ত, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্যপরিষদের নির্মল রোজারিও প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, আবদুল বারী ড্যানি, অর্পণা রায়, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, সুশীল বড়ুয়া, জন গোমেজ, মিল্টন বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লাউঞ্জে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক সময়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে এই জরুরি সিন্ডিকেট সভা করেছে যখন ক্যাম্পাসে একটি হলে চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে হলটির একদল শিক্ষার্থী।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না বা থাকলেও কীভাবে থাকবে এসব নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ‘এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সিন্ডিকেট সদস্যরা ছাত্ররাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষে বিভিন্ন মত দিয়েছেন। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তটি খুব দ্রুত আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দেয়া হবে।’
সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার জেলা বিএনপির আয়োজনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের আন্দোলনে নিহত ও আহত লোকজনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্য তিনি এ অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার।
‘দ্য কোড অফ ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর ১২ (১) ধারা অনুযায়ী দুই মাসের (৬০ দিন) জন্য এ ক্ষমতা দিয়ে মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সারা দেশে প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্টেরিয়াল পাওয়ার দেয়া হয়েছে (বিচারিক ক্ষমতা)। তার মানে এই যে প্রশাসন ল’ অ্যান্ড অর্ডার (আইনশৃঙ্খলা) মেন্টেইন করতে পারছে না। আমি মনে করে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার সেই সব এলাকাতে দেয়া দরকার, যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, কিন্তু যেসব এলাকাগুলো শান্তিপূর্ণ আছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা সমস্ত বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, সেইসব এলাকাতে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে নতুন সমস্যা তৈরি করা সমীচীন হবে না; বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
‘আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করব, তারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় নেবেন এবং তারা কখনোই এমন কোনো ব্যবস্থা নেবেন না যা সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষের জন্য অসুবিধা হবে। আমি কথাটা স্পষ্ট করে বলছি। কারণ এটা বলা দায়িত্ব আমার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৫/১৬ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করছি, মার খাচ্ছি, জেলে যাচ্ছি, শুধুমাত্র এ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে সরিয়ে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা এখন সবাই আশাবাদী হয়ে উঠেছি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যারা এই জঞ্জালকে দূর করে দেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে এবং সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে জনগণের একটি পার্লামেন্ট তৈরি হবে।’
আরও পড়ুন:অবৈধ ও প্রতারণামূলক নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগ এনে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), এসব কমিশনের কমিশনারবৃন্দ ১৮ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়েছে। আর এসব নির্বাচনে ইন্ধনদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদেরকেও এতে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম কাজী শরিফুল আলমের আদালতে আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম।
দায়িত্ব পালনকালে অভিযুক্তরা সংবিধান লঙ্ঘন, শপথ ভঙ্গ এবং নির্বাচনের নামে প্রহসন করে দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজ করেছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাদী অভিযোগে বলেন, গত তিন জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দলসহ অনেক জনপ্রিয় নেতার অংশগ্রহণ ছিল না। সাধারণ মানুষ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। যারা কমিশনে ছিলেন তাদের ব্যর্থতার কারণে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও নির্বাচনি মাঠে একপেশে আচরণ করেছে।
বিপুল টাকা ব্যয়ে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে তাতে সংবিধানের খেলাপ করেছেন নির্বাচন কমিশনারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসব কারণে রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রতারণা মামলার আবেদন করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- ২০১৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মো. জাবেদ আলী, মো. আবদুল মোবারক ও মো. শাহনেওয়াজ; ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী ও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ; ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিসুর রহমান ও নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
এই তিন নির্বাচনের নির্দেশদাতা, ইন্ধনদাতা ও ভুয়া সংসদের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে আসামি করার কথা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আদালত আমাদের আবেদনটি আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।’
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের ‘আমানত’ আখ্যা দিয়ে তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর বিএনপির আয়োজনে বুধবার শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর আমরা এখন মুক্ত, স্বাধীন। এ স্বাধীনতা ততক্ষণ থাকবে, যতক্ষণ আমরা তা ধরে রাখতে পারব। আমাদের দেশে সনাতন ধর্মালম্বীসহ সকলে মিলেমিশে বসবাস করব।’
তিনি বলেন, ‘তারা (সংখ্যালঘু) আমাদের আমানত। সামনে দুর্গাপূজা আসছে। তাদের জানমাল নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। কারণ তারা আমাদের আমানত।
‘আমানতের খেয়ানত যারা করে, তারা মোমিন না। তাদের যেন কেউ ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘এ আন্দোলনে খুনি হাসিনা হাজার হাজার মানুষ খুন করেছে; বিএনপি নেতা, ছাত্র-জনতাকে নির্যাতন করেছে, নির্যাতনের আয়নাঘর বানিয়েছে।
‘মনে রাখবেন, সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তিনি যখন যাকে চান আমির বানান। আবার যখন যাকে চান ফকির বানান।’
শেখ হাসিনার পতনের দিন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাসের ৪ তারিখে চিন্তাও করতে পারিনি ৫ তারিখে রাস্তায় এত মানুষ নেমে আসবে আর হাসিনার পতন ঘটাবে। সব শেষে জনতার ভয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে।’
নেতা-কর্মীদের অন্যায় না করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কারও ওপর অন্যায়, নির্যাতন করবেন না। নয় তো আওয়ামী লীগের মতো পরিণতি হবে। আপনারা কেউ তা চান না।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র ও বিএনপি দুটি সমার্থক শব্দ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপিই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার এক বিশাল সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৬ বছরে আমাদের (বিএনপি) অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির বহু নেতা নির্বাসিত হয়েছেন। আজকে আমরা যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি সেটা যেন হেলায় না চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সরকারে যারা আছেন, তাদের বলব- এখনও ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেকে তাদের চেয়ারে বসে আছেন। এরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাধা হয়ে নানা ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছেন। তাদেরকে দ্রুত চেয়ার থেকে সরাতে হবে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জনগণের অধিকার এখনও ফয়সালা হয়নি। এই অন্তর্বর্তী সরকার নানা সংস্কারের কথা বলছে। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার সেটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এই সরকারকে অনুরোধ করতে চাই, অনতিবিলম্বে দেশে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সাজানো মামলায় জেল খেটেছি, এর বিচার আমরা করব। গত কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। যেখানেই তাদের পেয়েছে গণপিটুনি দিয়েছে। এই ১৭ বছরে ৩৪ বার গ্রেপ্তার হয়েছি। কই আমাদের তো ফুল দিয়ে বরণ করেছে। আমরা জেলে গিয়েছি বীরের মতো, বেরও হয়েছি বীরের মতো।’
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা যে ইতিহাস তৈরি করেছে, তা পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ছাত্র-জনতার স্রোতে স্বৈরাচার হাসিনা ভেসে গেছে। ছাত্র-জনতাকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে ও দেবে। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রথম ম্যান্ডেট নির্বাচন দিতে হবে। একইসঙ্গে গত ১৬ বছরে যে জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে তার বিচার করতে হবে।’
সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। তীব্র রোদ ও ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমানের নামে নেতা-কর্মীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সমালোচনা সংবলিত স্লোগানের উত্তাল হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এবং আশপাশের পুরো এলাকা।
নেতাকর্মীরা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। নয়াপল্টনে আশপাশের এলাকা ও অলিগলিতে অবস্থান করেন ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, শান্তিনগর, বিজয়নগর, ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকায় যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়।
আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই সমাবেশে আসতে পেরে সবার মধ্যেই আনন্দ-উদ্দীপনা কাজ করেছে বলে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় দেখা যায়, দুপুর ১২টার আগে থেকেই নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খ্ণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন সমাবেশস্থল নয়াপল্টনে। এসময় নেতাকর্মীদের হাতে বিভিন্ন ফেস্টুন, প্লাকার্ড ও পোস্টার দেখা যায়।
সমাবেশে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে জাতীয়বাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা-কর্মীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদীন ফারুক, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কামরুজ্জামান রতন, গাজীপুর জেলা বিএনপির ফজলুল হক মিলন, ঢাকা জেলা বিএনপির নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, গাজীপুরের শওকত হোসেন সরকার, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের হেলাল খান, মৎসজীবী দলের আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো কার্যক্রম সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত না-ও হতে পারে; তবে এই সরকারের ব্যর্থতা হবে সবার ব্যর্থতা। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তবে নিজেরাই যেন ব্যর্থতার কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার এই সমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘এই সরকারের ব্যর্থতা হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। বাংলাদেশ কিংবা যেকোনো দেশেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে।
‘তবে কোনো এক পর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতাও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তী সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হওয়া জরুরি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অগ্রাধিকারভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জবাবদিহিমূলক সরকার এবং সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া দরকার।
‘কারণ জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন-গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনোটিই টেকসই এবং কার্যকর হয় না। কেবল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি ভোটারের ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করে ভোটারদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্যে বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন ও জনপ্রশাসনের সংস্কার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্ষম এবং উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
‘বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এজেন্ডা সেটিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারী চক্র নানা সুযোগ নিতে পারে। এর কিছু আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এবারের গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র অতীতের যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে ব্যতিক্রম। কারণ এবারের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কেবল মানুষের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেয়েছে।
‘দেশ এবং জনগণ এখন গুম, খুন, অপহরণ আর বিভীষিকাময় আয়নাঘরের আতঙ্কমুক্ত এবং স্বাধীন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পর এবার দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা সুরক্ষায় প্রথম কাজ হতে হবে রাষ্ট্র এবং সমাজে মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’
তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটার। এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। ভোটার হওয়ার পর তরুণ প্রজন্মের এই আড়াই কোটি ভোটার একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেননি। কিংবা তাদের নিজেরাও কেউ ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাননি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের জনশক্তির অর্ধেক নারী ও তরুণ। এই বৃহৎ অংশকে রাজনৈতিক অংশীদারত্বের বাইরে রেখে বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। সংবিধান কিংবা প্রবিধানে যা-ই থাকুক জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে, সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা না হলে কোনো সংস্কার কার্যক্রমেরই কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে না।’
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালেই বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তবে ঘোষিত ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি- সব ক্ষেত্রেই সংস্কার কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির আরও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন-পরিমার্জনকেও দল স্বাগত জানায়।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এমনকি কেউ যদি মনে করেন একটি উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে, তাতেও দোষের কিছু নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে- তারা কাকে সমর্থন জানাবে কিংবা কাকে সমর্থন দেবে না।
এ কারণেই বিএনপি বার বার জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছে। বিএনপি মনে করে, একমাত্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র-রাজনীতি ও রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে রাজনীতির মাঠে নানারকম কথা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য রীতি যে প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন।
‘রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ফৌজদারি অপরাধের বিচার যেমন বিচারিক আদালতে হয় তেমনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা রাজনৈতিক আচরণের বিচার হয় জনগণের আদালতে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি যে ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্রক্ষমতার হাতবদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মনে রাখা প্রয়োজন রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণেও গুণগত পরিবর্তন জরুরি।
‘সুতরাং, আমার আহ্বান- কোনো প্রলোভন কিংবা উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজের নেতৃত্বদানের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখুন।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস প্রমুখ।
বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। অবশ্য তার আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় সমাবেশ নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কসহ পুরো এলাকা।
প্রসঙ্গত, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে পূর্বঘোষিত ১৫ সেপ্টেম্বরের সমাবেশ দুদিন পিছিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আয়োজন কের বিএনপি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য