× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
The victim of greed is the mothers womb
google_news print-icon

লোভের শিকার মাতৃগর্ভ

লোভের-শিকার-মাতৃগর্ভ
চিকিৎসকের লোভ ও অপচিকিৎসায় অকালে জরায়ু হারাচ্ছেন উপকূলের অনেক নারী।
উপকূলের নারীরা একদিকে নোনা পানির প্রভাবে চর্ম ও জরায়ুসংক্রান্ত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন; অন্যদিকে আবার সেই রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অকালে জরায়ু খুইয়ে সন্তানধারণের ক্ষমতা হারাচ্ছেন। এখানেই শেষ হচ্ছে না তাদের দুর্বিষহ জীবনগাথা; এরপর শুরু হচ্ছে নানামুখী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ানক যন্ত্রণা, যা বাকি জীবন একাই বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এই নারীদের।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার জয়াখালী গ্রামের ৪০ বছর বয়সী রহিমা বেগম প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, সঙ্গে রক্তস্রাব ও সাদাস্রাবে ভুগছিলেন। মাস সাতেক আগে চিকিৎসার জন্য যান উপজেলা সদরে ডা. সুজিত রায়ের কাছে। তিনি সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার; কিন্তু নিয়মিত রোগী দেখেন বেসরকারি চেম্বারে আর চুক্তিতে অস্ত্রোপচার করেন স্থানীয় ‘সুন্দরবন অ্যাপোলো হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’-এ। রোগীর অবস্থা দেখে-শুনে ওই দিনই তিনি জানিয়ে দেন, রহিমার একটি অঙ্গ অপারেশন করে ফেলে দিতে হবে।

দুশ্চিন্তায় পড়ে যান রহিমা। পরে আরেক ক্লিনিকে গিয়ে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে তার ওষুধ খেয়ে কিছুদিন ভালো থাকেন। কিন্তু করোনাকালের নানা সমস্যায় পড়ে সেই ডাক্তারের কাছে আর যেতে না পেরে আবারও যান ডা. সুজিতের কাছে।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর রহিমা বেগম বলেন, ‘ডাক্তার তখন বেশ রাগ করেন- কেন আমি তার পরামর্শমতো অপারেশন করাইনি।’

ডাক্তারের ধমক খেয়ে স্বামীকে নিয়ে রহিমা এবার গেলেন এলাকার ‘বড় ডাক্তার’ বলে পরিচিত সুন্দরবন অ্যাপোলো ক্লিনিকেরই মালিক মো. শাহজাহান সিরাজের কাছে। সব শুনে তিনিও বলে দেন, অপারেশনই একমাত্র সমাধান। কিন্তু মন সায় দেয় না কিছুতে। আরও যাচাইয়ের জন্য স্বামী-স্ত্রী গেলেন অ্যাপোলো হাসপাতালেরই ডা. শেখ আরাফাতের কাছে। তিনি আবার রহিমাকে কিছু ওষুধ লিখে দিলেন।

এভাবে চরম বিভ্রান্তিতে পড়ে শেষমেশ এই দম্পতি ‘এলাকার ছেলে শাহজাহান ডাক্তার’-এর ওপর ভরসা করে অপারেশনেই রাজি হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর সুন্দরবন অ্যাপোলোর ওটিতে ডা. সুজিত রায় নিজ হাতে অপারেশন করে রহিমার দেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কেটে ফেলে দেন।

আরেক ঘটনা শ্যামনগরেরই কৈখালী গ্রামের খাদিজা বেগমের। উপকূলবাসী এই নারীর সমস্যা ছিল অনিয়মিত পিরিয়ড এবং তলপেটে ব্যথা। চিকিৎসার জন্য স্থানীয় এমআরএ ক্লিনিকে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রভাষক ডা. আনিছুর রহমানকে দেখাতে গেলে তিনিও খাদিজার একটি অঙ্গ ফেলে দেয়ার পরামর্শ দেন। গত ২৮ আগস্ট ওই বেসরকারি ক্লিনিকের ওটিতে নিয়ে ৩২ বছর বয়সী খাদিজা বেগমের শরীর থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি কেটে বাদ দেন সরকারি চিকিৎসক আনিছুর রহমান।

  • নোনা পানিতে রোগাক্রান্ত জরায়ু চিকিৎসা ছাড়াই কেটে বাদ
  • উপকূলবাসী নারীরা নীতিহীন ডাক্তার-হাসপাতালের কাছে অসহায়
  • মানবাধিকার লঙ্ঘন, ফৌজদারি অপরাধ আখ্যা দিয়ে শাস্তি দাবি


এই দুই বয়সের দুই নারীর দেহ থেকে যে অঙ্গটি অবলীলায় কেটে ফেলা হলো, সেটি সাধারণ অঙ্গ নয়; মানুষ যেখানে জন্ম নেয় সেই মাতৃগর্ভ; যাকে বলা হয় জরায়ু। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মতো উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নোনা পানির আগ্রাসনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা। সারাটা বছর তাদেরকে নোনা পানির সঙ্গে বসবাস করতে গিয়ে নানা রকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হচ্ছে; বিশেষ করে জরায়ু সংক্রান্ত রোগে। কিন্তু মানবপ্রজাতির বংশবৃদ্ধির জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটি রোগাক্রান্ত হলে কোনো রকম চিকিৎসার উদ্যোগ না নিয়ে সরাসরি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন এ অঞ্চলের এক শ্রেণির চিকিৎসক।

শ্যামনগরে গত ৬ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ১৫ দিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত ‘টাকার লোভে’ চিকিৎসক আর তাদের সহযোগী হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিকেরা এমন কাজ করে চলেছেন। বিশিষ্ট নাগরিক ও আইন বিশেষজ্ঞরা একে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ বলে অভিহিত করেছেন।

উপকূলের নারীরা একদিকে নোনা পানির প্রভাবে চর্ম ও জরায়ুসংক্রান্ত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন; অন্যদিকে আবার সেই রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অকালে জরায়ু খুইয়ে সন্তানধারণের ক্ষমতা হারাচ্ছেন। এখানেই শেষ হচ্ছে না তাদের দুর্বিষহ জীবনগাথা; এরপর শুরু হচ্ছে নানামুখী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ানক যন্ত্রণা, যা বাকি জীবন একাই বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এই নারীদের।

সরেজমিন অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, রহিমা-খাদিজা-ফিরোজার মতো নানা বয়সী নারীরা অহরহ শিকার হচ্ছেন এ রকম ‘অপচিকিৎসা’র। চিকিৎসাশাস্ত্রে জরায়ু অপসারণকে বলা হয় হিস্টেরেক্টমি। এই অপারেশন করা হয়েছে- এমন অন্তত ৭৫ জন নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সবার বেলায়ই সংশ্লিষ্ট ‘ডাক্তার’ অন্য কোনো চিকিৎসা না দিয়ে সরাসরি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন হিস্টেরেক্টমির বা জরায়ু কেটে ফেলার।

লোভের শিকার মাতৃগর্ভ

ধর মুরগি, কর জবাই!

অনুসন্ধানে এমন সব ঘটনার কথা জানা যায়, সেগুলো যেন চিকিৎসার নামে ‘ধর মুরগি, কর জবাই’। বছর চারেক আগের ঘটনা। খাদিজার মতো লক্ষণ নিয়ে গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান শ্যামনগরের বৈশখালী গ্রামের ফিরোজা বেগম। জরায়ুতে ‘ঘা হয়েছে’ জানিয়ে তা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। পরে রিপোর্ট দেখে গ্রাম্য ডাক্তারও একই পরামর্শ দেন। দিশেহারা ফিরোজা তখন এক দালালের মাধ্যমে গিয়ে ভর্তি হন উপজেলা সদরের সেবা ক্লিনিকে। সেখানে এক রাতে কলে এসে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. কবিরুল ইসলাম কবির নিজের হাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সী মেয়েটির জরায়ু কেটে ফেলে দেন।

ফিরোজা ও তার স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, ডাক্তার কবির এই রোগীকে কখনও দেখেনইনি। প্রথমে ক্লিনিকের পক্ষ থেকে কয়েকটি টেস্ট করানো হয়। পরে ক্লিনিকে এসে সেই রিপোর্ট দেখেই ফিরোজাকে অপারেশন টেবিলে শুইয়ে দেন ডা. কবির।

জানা গেল, একই গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শে ওই সেবা ক্লিনিকেই সেই কবির ডাক্তারের কাছে গিয়ে ফিরোজার বাড়ির আরেক নারী রোমেছা বেগমও (৩৫) জরায়ু অপসারণ করান কয়েক বছর আগে।

জানতে চাইলে গত ৬ ডিসেম্বর ডা. কবিরুল ইসলাম কবির অকপটে স্বীকার করেন ‘ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় রোগী বা রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট না দেখেই’ অপারেশন করার কথা।

তিনি বলেন, ‘শুধু আমি একা না, প্রতিটি সার্জনই এই রকম পরিস্থিতির শিকার হন। আমরা তো সাতক্ষীরা থেকে সপ্তাহে একদিন অ্যানেসথেশিয়া টিম নিয়ে শ্যামনগরে যাই। আমার হয়তো ৫-৭টা অপারেশন থাকে। এর মধ্যে হয়তো ২-১টা রোগী আমার দেখা থাকে না।’

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, প্রয়োজনে জরায়ু কেটে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত ডাক্তাররা নিতেই পারেন; কিন্তু তার আগে কয়েকটি ধাপে রোগীর চিকিৎসা করাতে হবে।

হিস্টেরেক্টমি করা হয়েছে- শ্যামনগরের এমন অন্তত ১০ জন রোগীর চিকিৎসাপত্র ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট ঢাকার তিনজন এবং ময়মনসিংহ মেডিকেলের দুইজন গাইনি বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। ১০ জনের ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞরা মত দেন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই হিস্টেরেক্টমির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখনই হিস্টেরেক্টমি করে ফেলার মতো লক্ষণ কোনো রোগীরই ছিল না। বরং আরও কিছুদিন চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের অসুখটা সারানো যেত।

অথচ অনুসন্ধানকালে ওই ১০ জন রোগীর সবাই বলেছেন, ডাক্তারের কাছে গেলে তাদের কাউকেই ওষুধপত্রের মাধ্যমে চিকিৎসার কথা বলা হয়নি; বরং তাদের অসুখ অনিরাময়যোগ্য- এমনটি বুঝিয়ে জরায়ু কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারপর তারা সেই ডাক্তার অথবা দালালদের দেখানো ক্লিনিকে গিয়ে অপারেশন করিয়ে নিয়েছেন। শ্যামনগরে ১৩টির মধ্যে সাতটি ক্লিনিকেই খোঁজ নিয়ে এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জরায়ু ফেলতে আসা প্রতিটি রোগীকেই তারা অপারেশন করেছেন, কাউকেই ফেরাননি।

শ্যামনগরের খাদিজা বেগমের আলট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন ডা. ইশরাত জাহান স্বর্ণার কাছে মেইল পাঠিয়ে তাকে জানানো হয়, স্থানীয় চিকিৎসক এই রোগীর জরায়ু কেটে ফেলতে বলেছেন। রোগী সেটা করবেন কি না, পরামর্শ চাইছেন। ডা. স্বর্ণা রিপোর্ট দেখে গত ১৩ অক্টোবর বলেন, ‘রিপোর্টে যে টার্ম ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি। খাদিজার রোগের ইতিহাস পিআইডির (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ) লক্ষণের সঙ্গে কিছুটা মিললেও, সেটা একিউট কন্ডিশনের নয়। আর এমন রোগীর জরায়ু কেটে ফেলা কোনোভাবেই উচিত নয়।’

পরে ডা. স্বর্ণাকে যখন জানানো হয় যে, স্থানীয় ডাক্তাররা ইতোমধ্যে খাদিজার জরায়ু কেটে বাদ দিয়েছেন এবং ক্লিনিকের ছাড়পত্রে তার অসুখের নাম বলা হয়েছে পিআইডি, তখন তিনি বলেন, ‘পিআইডি যদি একিউট কন্ডিশনে থাকে অর্থাৎ রোগীর সবগুলো সিম্পটম যদি অতি তীব্র হয়, তাহলে গাইনি রোগ সংক্রান্ত জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী ওষুধের মাধ্যমেও চিকিৎসা আছে। এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে একিউট লেভেলের পিআইডি ভালো হয়ে যায়। তবে ওষুধের সঙ্গে রোগীকে কিছু নিয়ম মানতে হয়।’

আবার ক্রনিক কন্ডিশনের ক্ষেত্রেও ওষুধের রেজিম আছে। তারপরেও যদি রোগী ভালো না হয়, তখন হিস্টেরেক্টমির (জরায়ু কেটে ফেলা) অপশন আসে। তবে সেক্ষেত্রেও কিছু প্রটোকল রয়েছে- বলেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

ডা. স্বর্ণা বলেন, ‘আমাদের গাইডলাইনে পিআইডির ক্ষেত্রে হিস্টেরেক্টমি করার কথা বলা আছে তবে সেটাও অনেক জাজমেন্টের পরে। পিআইডির লক্ষণ পেলাম আর হিস্টেরেক্টমি করলাম, সেটা ঠিক নয়।’

তার মতে, ‘জরায়ু কাটার ক্ষেত্রে রোগীর বয়স বড় বিবেচ্য বিষয়। ৪৫ বছরের নিচে কোনো নারীর জরায়ু ও ওভারি কেটে ফেললে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় ভয়াবহ।’

একইভাবে রহিমা বেগমের অস্ত্রোপচারপূর্ব রিপোর্ট ময়মনসিংহ মেডিক্যালেরই আরেক চিকিৎসককে পাঠিয়ে তার হিস্টেরেক্টমি জরুরি কি না, জানতে চাওয়া হয়। রহিমার রোগের পুরো হিস্ট্রি জেনে তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই নয়। তবে রোগীর সার্ভিক্যাল ক্যান্সার আছে কি না জানতে ভিআইএ (Visual Inspection of the cervix with Acetic acid) পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করা দরকার।’

পরে প্রকৃত ঘটনা জানানো হলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘এই রোগীর জরায়ু কেটে ফেলা উচিত হয়নি।’ তবে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

রহিমা বেগমের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, অপারেশনের আগে তার রক্তের গ্রুপ, আল্ট্রাসনোগ্রাম, হিমোগ্লোবিন, আরবিএস, ক্রিটিনিন, এইচবিএসএজি-আইসিটি পরীক্ষা করা হয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, জরায়ু অপসারণের আগে এগুলোর সঙ্গে সিবিসি, ইউআরই, ইসিজি, পেলভিক অর্গানের আল্ট্রাসনোগ্রাম, টিভিএস, ভিআইএ পরীক্ষা করাতেই হবে। আর হিমোগ্লোবিন কমপক্ষে ১১ না থাকলে জরায়ু অপারেশন না করাই ভালো। কারণ, এই অপারেশনে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তবে খুব জরুরি হলে রক্তের ব্যবস্থা রেখে অপারেশন করা যেতে পারে।

জানা গেল, রহিমা বেগমের রক্তে হিমোগ্লোবিন ছিল ৮.৪। অপারেশনের সময় পাঁচ ব্যাগ রক্ত লেগেছে তার। আগের আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে এবং হাসপাতালের ছাড়পত্রে দুই জায়গাতেই তার অসুখের নাম বলা হয়েছে, মাইল্ড বাল্কি ইউটেরাস (ঈষৎ ভারী জরায়ু)।

দেশের উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে বর্তমানে সুইডেনে আছেন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. তাসনুভা আফরিন। অনলাইনে রহিমার নথিপত্র পাঠালে সব দেখে তিনি মন্তব্য করেন, ‘জরায়ু কাটার সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে রোগীর টিভিএস (ট্রান্স ভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড) এবং ভিআইএ টেস্ট অবশ্যই করাতে হবে। তার জরায়ু ভারী বলছে কেন, সেটা জানতে হবে। সেটা কোনো টিউমার কি না, টিভিএস ছাড়া বোঝা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘রক্তক্ষরণ, ব্যথা, টিউমারের মতো জরায়ুর যেকোনো সমস্যায় দীর্ঘ সময় ধরে ভুগলে হিস্টেরেক্টমি করা যায়। কিন্তু এসব সমস্যার সবগুলোরই ওষুধে চিকিৎসা আছে এবং সেটা করে দেখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে পুরো জরায়ু না কেটে আক্রান্ত স্থানটুকু শুধু অপারেশন করে বাদ দেয়া যায়।

‘তবে ওষুধে কোনোভাবেই কাজ না হলে অথবা জরায়ু ক্যান্সারে রূপ নিতে যাচ্ছে- এমন অবস্থা হলে হিস্টেরেক্টমি করা যায়। তবু তার আগে কমপক্ষে টিভিএস এবং ভিআইএ পরীক্ষা করা অত্যাবশ্যক। কিন্তু সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কোনো ক্লিনিকেই এই চর্চা নেই।’

জানতে চাইলে অবস্ট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি (ওজিএসবি), বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বেগম বলেন, ‘পিআইডির কিংবা জরায়ুর যেকোনো ধরনের সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা আছে। পিআইডি একজন কিশোরীরও থাকতে পারে। তাই শুধু একটা আল্ট্রাসোনো করেই জরায়ু কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।’

লোভের শিকার মাতৃগর্ভ

টাকার লোভেই অমানবিকতা!

শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন রীতা রানী পাল বললেন, ‘দুই বছর আগে এখানে এসে দেখেছি, ২২-২৩ বছর বয়সী মেয়েদের জরায়ু কেটে ফেলেছে। খুব খারাপ লাগতো। অনেক দিন ধরে ব্লিডিং হওয়া মানে জরায়ু কেটে ফেলতে হবে, এটা ঠিক না- এই কথাটা তাদেরকে বলার কেউ ছিল না।’

তিনি বলেন, “পিল অনিয়মিত খাওয়ার কারণে হরমোনাল ইমব্যালেন্সে মাসিক অনিয়মিত হয়ে গেছে- এমন লক্ষণ নিয়ে রোগী কোনো সার্জনের কাছে গেলে, জরায়ু কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আবার অল্প বয়সে বিয়ে হয় বলে কম বয়সেই এখানকার মেয়েদের একাধিক সন্তান হয়। তখন ‘ফ্যামিলি কমপ্লিট’ যুক্তি দেখিয়ে জরায়ু কেটে ফেলেন অনেক সার্জন বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।”

কেন এমন অবলীলায় জরায়ু কেটে ফেলছেন- সে প্রশ্নের জবাব কেউ সরাসরি দিতে চান না। তবে ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, এর নেপথ্যে রয়েছে টাকার লোভ। জরায়ু অপারেশন বাবদ রহিমা বেগমকে সুন্দরবন অ্যাপোলো হসপিটালে পরিশোধ করতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। ওষুধপত্র কেনার খরচ আলাদা। সব মিলিয়ে এই অপারেশন বাবদ তার প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

আর খাদিজার স্বামী মো. ইব্রাহিম জানান, স্ত্রীর জরায়ু অপারেশনের পর থেকে এ পর্যন্ত তার ৪২ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এর মধ্যে এমআরএ ক্লিনিককে দিতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা; সেখানে ১১ দিন থাকাকালে ওষুধ কিনতে হয়েছে ১১ হাজার টাকার। এখনও ওষুধপত্র লাগছেই।

শ্যামনগরের মতো উপকূলীয় এলাকার বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালগুলো আয়ের জন্য যে অস্ত্রোপচারের দিকেই তাকিয়ে থাকে, তার সাক্ষ্য মেলে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াতের কথায়। তিনি বলেন, ক্লিনিকগুলো আসলে বাণিজ্যিক কারণেই বানানো হয়ে থাকে। তাদের সিংহভাগ আয় আসে গাইনি ও অবস্টেটিকস থেকে।

তিনি বলেন, ‘এর আগে ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে একটি মিটিংয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে আমি বলেছিলাম, আপনারা সিজারের রোগীদেরকে সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবেন। তখন তারা প্রায় সমস্বরে বলে ওঠেন, তাহলে অর্ধেকের বেশি ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাবে।’

বিভিন্ন ক্লিনিকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জরায়ু অপারেশনপ্রতি ডাক্তারদেরকে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে হয়।

সিভিল সার্জনের হিসাবে- শ্যামনগরে নিবন্ধিত ও নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে ৯টি আর শুধু ডায়গনস্টিক সেন্টার আছে পাঁচটি। তবে এলাকা ঘুরে এবং বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর বাইরেও আরও অনেক ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে। নিবন্ধিত হোক আর অনিবন্ধিত হোক, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসাসেবার মানে রয়েছে যথেষ্ট ঘাটতি।

নগর প্রাইভেট হাসপাতালের কর্ণধার হাফিজুর রহমান জানান, তার ক্লিনিকটিতে মাসে ৩০-৩৫টি অপারেশন করা হয়। এর মধ্যে জরায়ু অপারেশন হয় ২-৩টি।

সুন্দরবন অ্যাপোলা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মকর্তা যামিনী রায় জানান, গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে ১২ জনের হিস্টেরেক্টমি করা হয়েছে। আর শুধু অক্টোবর মাসে অপারেশন হয়েছে মোট ৭৯ জনের, এর মধ্যে জরায়ু কাটার অপারেশন তিনটি।

রহিমা ও খাদিজার খরচের হিসাবকে গড় ধরলে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবন অ্যাপোলা হসপিটাল শুধু জরায়ু অপসারণ করেই প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেছে। এর সঙ্গে রোগীদের নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকেও তাদের আয় যথেষ্ট। করোনা মহামারি না থাকলে এই আয় যে আরও অনেক বেশি হতো, তা ক্লিনিকগুলোর কর্মকর্তারাই স্বীকার করছেন।

নগর প্রাইভেট হাসপাতালের কর্ণধার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০২০ সালে মাত্র ৪০ জন রোগীর হিস্টেরেক্টমি করানো হয়। করোনার কারণে গত বছর থেকে শুধু সিজারের মতো জরুরি অপারেশনগুলোই বেশি করা হয়।’

লোভের শিকার মাতৃগর্ভ

অথচ সঠিক চিকিৎসা দিলে যে এসব রোগী জরায়ু কাটার অভিশাপ থেকে রেহাই পেতেন, সে উদাহরণও উঠে আসে অনুসন্ধানে। বেশ কিছুদিন ধরে অনিয়মিত রক্তপাত আর তলপেটে ব্যথায় ভুগতে থাকা মাজেদা বেগম মর্জিনার (৩৫) একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পর জরায়ু কেটে ফেলার পরামর্শ দেন একজন গ্রাম্য ডাক্তার। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন মর্জিনা। যোগাযোগ হয়েছিল একটি ক্লিনিকের দালালের সঙ্গেও। এরই মাঝে এক স্বজনের পরামর্শে শ্যামনগরের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে যান তিনি। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেখানকার একজন চিকিৎসক মর্জিনাকে ১৫ দিনের ওষুধ দেন এবং বলে দেন যে, কোনো অবস্থাতেই তার জরায়ু অপসারণের দরকার নেই।

গত ২৩ নভেম্বর যোগাযোগ করা হলে মর্জিনা এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি এখন ভালো আছেন।

আরেক ভালো দৃষ্টান্ত মেলে শ্যামনগরের বিদেশি সহায়তায় পরিচালিত ‘ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’-এ। ২০২০ সালে জরায়ুর অসুখের মাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে এখানে প্রায় ৪০০ নারীর ভিআইএ করা হয়। এদের মধ্যে ৬৭ জনের ক্যান্সারের মারাত্মক ঝুঁকি পাওয়া যায়। পরবর্তী চিকিৎসার জন্য তাদের খুলনা ও ঢাকায় রেফার করা হয়। বাকি সবাইকে ওষুধপত্রের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়েই ভালো রাখা হয়। কারও জরায়ু কেটে ফেলতে হয়নি।

এসব ঘটনার কথা জানালে মানবাধিকার-কর্মী ও আইনজীবী সালমা আলী বলেন, ‘নারীকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছে এই জরায়ু। অথচ সামান্য কটা টাকার লোভে অসাধু ডাক্তার-ক্লিনিক-হাসপাতাল চক্র কোনো রকম চিকিৎসা-উদ্যোগ ছাড়াই নারীদের জরায়ু কেটে চলেছে, যা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। যারা এসব করছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’

বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে অযথা অপারেশন করে জরায়ু কেটে ফেলা হলে সেটি একজন নারীর জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি; নারীত্বের জন্য চরম দুর্ঘটনা। দেশের বিভিন্ন উপজেলা বা গ্রামাঞ্চলে গজিয়ে ওঠা শত শত ক্লিনিকের কিছু কিছু চিকিৎসক আছেন, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করেন; আবার অনেকের অবহেলাও রয়েছে। এসব ডাক্তারের বিরুদ্ধে বিএমডিসিতে (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) আবেদন করে লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা করা যতে পারে; আবার ফৌজদারি মামলাও করা যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারও রাখেন। কিন্তু সমস্যা হলো, সাধারণ মানুষ এত কিছু জানেন না। আবার এতো প্রতিকূলতার মধ্যে আইনি যুদ্ধ করার শক্তিও তাদের নেই। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা বা সামাজিক সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।’

অযাচিতভাবে জরায়ু কেটে ফেলা মানবাধিকার লঙ্ঘন মন্তব্য করে এই আইনজ্ঞ বলেন, ‘একজন নারীর জরায়ু যদি সেরকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে অপসারণের প্রয়োজন না হয়; তাহলে বেঁচে থাকার অধিকারের মতোই নারীর অধিকার আছে তার জরায়ু সংরক্ষণ করার।’

লোভের শিকার মাতৃগর্ভ

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দুর্বিষহ জীবন

জরায়ু কাটলেই যে নারীরা ভালো থাকছেন, তাও নয়। কথা বলে জানা যায়, নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গত ৪ নভেম্বর দুই সন্তানের মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘আগে তো মাসের কিছুদিন শুধু পেটে ব্যথা করতো। অপারেশনের পর এখন সারাক্ষণ গা দিয়ে দাহ ওঠে। কাটা জায়গায় জ্বালা-যন্ত্রণা করে। মনে হয়, পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি, তাহলে একটু আরাম পাব।’

জরায়ু অপারেশনের পর থেকেই প্রচণ্ড রকম মাথা ও শরীর জ্বালায় ভুগছেন বলে জানান ৩০ বছর বয়সী ফিরোজা বেগম। এমনকি স্বামীর সঙ্গও ভালো লাগে না। সংসারেও অশান্তি লেগে থাকে সারাক্ষণ। সংসার টেকানো দায় হয়ে গেছে।

ফিরোজা বলেন, ‘এমন সমস্যা হবে জানলে আমি অপারেশন করতামই না।’

ময়মনসিংহ মেডিক্যালের ডা. ইশরাত জাহান স্বর্ণা বলেন, ‘মেয়েদের শরীরে আলাদা হরমোন আছে, যা দিয়ে মাসিক চক্র, মেজাজ, স্মৃতি নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু জরায়ু কেটে ফেললে এসব হরমোনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। জরায়ুর সঙ্গে আবার ওভারি কেটে ফেললে এসব হরমোনের সোর্স নষ্ট হয়ে যায়।

‘ফলে একজন অল্পবয়সী রোগী যার মেনোপেজ হওয়ার কথা ছিল না, তার জরায়ু ও ওভারি কেটে ফেললে ভয়াবহ সব সিম্পটম হবে। তার তীব্র গরম লাগবে, মনে হবে মরে যাচ্ছে। তার ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস হবে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তা শুকনো হয়ে যাবে, ফলে স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে যেতে পারবে না; কষ্ট হবে। তার হাড় ক্ষয়ে যেতে থাকে। সার্বিক ভালোলাগা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন থেকে ২০০৬ সালে প্রকাশিত এক আর্টিকেলে বলা হয়, হিস্টেরেক্টমি ডিম্বাশয়ের রক্ত সরবরাহ এবং কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে।

শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন রীতা রানী পাল বলেন, ‘অল্প বয়সে জরায়ু কেটে ফেললে নারীদের হট ফ্লাস (হাত-পা ও শরীর জ্বালাপোড়া), অল্পতে মেজাজ উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতেই থাকে।’

প্রায় সব রোগী জানিয়েছেন, জরায়ু কেটে ফেলার পর চিকিৎসকরা জ্বালাপোড়া কমাতে আজীবনের জন্য ‘টিবোনর’ ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকরাও জানান, নারীদের মেনোপজ-পরবর্তী বা অস্ত্রোপচারের ফলে মেনোপজের উপসর্গের চিকিৎসায় এই ট্যাবলেট দেয়া হয়।

তবে বেশির ভাগ রোগীই বলেছেন, এক পাতা (১০টি ট্যাবলেট) টিবোনর কিনতে প্রায় ২০০ টাকা লাগে। যেখানে অভাব সবার নিত্যসঙ্গী, সেখানে সারা জীবন এই ওষুধ কিনে খাওয়া কি সম্ভব?

আরও পড়ুন:
শৃঙ্খল ভেঙে মূলধারায় নারী
কোয়ারেন্টিন শেষে ছুটিতে ১৯ নারী ক্রিকেটার
মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Iftar of love for low income people in Naogaon at two taka

দুই টাকায় ইফতার

দুই টাকায় ইফতার
নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে ভ্যানে ‘ফুড প্যালেস’ নামের রেস্তোরাঁর ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা
কম আয়ের মানুষের জন্য দুই টাকায় ইফতারসামগ্রীর একটি প্যাকেটে থাকে খিচুড়ি, একটি ডিম, বেগুনি, পিঁয়াজু, ছোলা, শসা ও খেজুর। প্যাকেটগুলো দুই টাকায় বিক্রি হলেও এগুলোতে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ টাকার ইফতারসামগ্রী দেয়া হয়।

নওগাঁ শহরে রমজানে দুই টাকার বিনিময়ে ইফতারের প্যাকেট বিক্রি করছে ‘ফুড প্যালেস’ নামের রেস্তোরাঁ।

শহরের কাজীর মোড় এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে রেস্তোরাঁটির পক্ষ থেকে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যায়।

প্রতিদিন নওগাঁ শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করা হয়। প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন কম আয়ের মানুষের মধ্যে এ ইফতার বিতরণ করা হয়।

কম আয়ের মানুষের জন্য দুই টাকায় ইফতারসামগ্রীর একটি প্যাকেটে থাকে খিচুড়ি, একটি ডিম, বেগুনি, পিঁয়াজু, ছোলা, শসা ও খেজুর। প্যাকেটগুলো দুই টাকায় বিক্রি হলেও এগুলোতে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ টাকার ইফতারসামগ্রী দেয়া হয়।

রিকশাচালক আতিক বলেন, ‘নওগাঁ শহরে আমি রিকশা চালাই। হঠাৎ দেখি এখানে ইফতার দেয়া হচ্ছে মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে। তাই দুই টাকা দিয়ে ইফতারের প্যাকেটটি নিলাম। এত কম টাকায় পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’

ভ্যানচালক জাফর বলেন, ‘আমি তো প্রথমে অবাক হয়েছি। মাত্র দুই টাকায় ইফতার এখানে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই ভালো করে শুনে তারপর দুই টাকার বিনিময়ে ইফতার নিলাম।

‘আমাদের মতো মানুষের প্রতিদিন বেশি টাকায় ইফতার কিনে খাওয়া সম্ভব না। এ ধরনের উদ্যোগ নিলে আমরা সাধারণ মানুষরা কিনে খেতে পারব।’

৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আলম হোসেন বলেন, ‘ভ্যান গাড়ি দেখে পাশে দাঁড়িয়ে শুনি মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে ইফতার দেয়া হবে। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে আমিও নিলাম।

‘খুব ভালো লাগছে। এত অল্প টাকায় এত সুন্দর আয়োজনের জন্য।’

ফুড প্যালেস রেস্টুরেন্টের মালিক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমার সাধ্যের মধ্যে কম আয়ের মানুষের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা করি। তার ধারাবাহিকতায় নামমাত্র দুই টাকা নিয়ে ইফতার বিতরণ করছি শহরের বিভিন্ন স্থানে পুরো মাস ধরে।’

দুই টাকা কেন নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি এমনিতে ইফতার দিই, তাহলে অনেকে লজ্জা পেতে পারে। তাই দুই টাকা দিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই।

‘এতে করে সাধারণ মানুষরা নিজের টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছে ভেবে আমাদের কার্যক্রমকে সহজে গ্রহণ করবে আর নিতে আগ্রহী হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Sanatan Dharmas Sujan Prasad is serving free Iftar

বিনামূল্যে ইফতারি খাওয়াচ্ছেন সনাতন ধর্মের সুজন প্রসাদ

বিনামূল্যে ইফতারি খাওয়াচ্ছেন সনাতন ধর্মের সুজন প্রসাদ সুজন প্রসাদ নিজ হাতেই ইফতার পরিবেশন করেন। ছবি: নিউজবাংলা
সুজন প্রসাদ বলেন, ‘আমি যে ধর্মই পালন করি না কেন, দিন শেষে আমি একজন মানুষ। তাই মানুষ হিসেবে এ দেশের প্রতি, এ দেশের মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি রোজাদারদের জন্য এ ইফতারের আয়োজন করছি।’

গাইবান্ধার সনাতন ধর্মের একজন হোটেল ব্যবসায়ী সুজন প্রসাদ। চলমান পবিত্র রমজানে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত রোজাদারের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করে থাকেন তিনি।

যেখানে প্রতিদিন রিকশাচালক, ভ্যান চালক, ঠেলা ওয়ালা, ফুটপাতের দোকানি, পথচারী, স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় অর্ধশত মানুষ ইফতারে অংশ নেন।

রমজানে এমন মহানুভবতা দেখিয়ে যাচ্ছেন গাইবান্ধা জেলা শহরের হকার্স মার্কেটের ‘বাঙলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের’ মালিক হিন্দু ধর্মের সুজন প্রসাদ। রোজাদার ও স্থানীয়রা বলছেন, হিন্দু ধর্মের লোক হয়েও মুসলিম রোজাদারদের জন্য সুজন প্রসাদের বিনা মূল্যের এই ইফতার আয়োজন যেন এ শহরে সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে প্রথম রমজান হতে রোজাদারদের জন্য ইফতারের এমন আয়োজন করছেন বলে জানান সুজন প্রসাদ। সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ মহতী কাজটি চালিয়ে যেতে যান তিনি।

গাইবান্ধা জেলা শহরের রেলগেটের দিক থেকে হকার্স মার্কেটের প্রথম গলিতেই সুজন প্রসাদের এই হোটেল।

সরেজমিনে পড়ন্ত বিকেলে হোটেলে গেলে দেখা যায়, মাগরিবের আজানের আগেই টেবিলের ওপরে প্লেটে প্লেটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে অন্তত ১৩ ধরনের থালা ভর্তি ইফতারি। ওইসব থালায় রয়েছে, ছোলা বুট, পেয়াজু, বেগুনের চপ, আলু মিশ্রিত ডিমের চপ, ঝুড়ি (চিনি ময়দায় তৈরি এক ধরনের খাবার) ও জিলাপি। এসবেই শেষ নয়- পুষ্টির চাহিদা জোগান দিতে ইফতারির প্লেটে যোগ করা হয়েছে, খেজুর, গাজর-শসা, কলা, তরমুজ, ও বেলের শরবত। এ ছাড়া একই প্লেটে রয়েছে বিরিয়ানিও।

বিনামূল্যে ইফতারি খাওয়াচ্ছেন সনাতন ধর্মের সুজন প্রসাদ

আজানের ঠিক আগ মুহূর্তে দেখা যায়, একে একে বাঙলা হোটেলে ইফতার করতে আসছেন রোজাদার ব্যক্তিরা। ঠিক এমন সময় কর্ম ব্যস্ততাও বাড়ে হোটেলের মালিক সুজন প্রসাদসহ হোটেলের কর্মচারীদের, তবে হোটেলের কর্মচারীরা কেবল পানি দেয়া এবং অন্য কাজ করলেও ইফতার পরিবেশন করেন সুজন প্রসাদ নিজ হাতে।

এ হোটেলে হঠাৎ এবং প্রথমদিন ইফতারে আসা তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তার ইফতার শেষে দাম জানতে চেয়ে ইফতারির বিল দেয়ার চেষ্টা করতেও দেখা যায়। কিন্তু সুজন প্রসাদ তাদের হাসি মুখে বলেন, ‘এখানে ইফতারের কোনো টাকা নেয়া হয় না। প্রতিদিন এখানে এসে ইফতার করবেন। যদি পারেন দুই একজনকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন।’

এদিন ইফতারে অংশ নেয়া বোয়ালী ইউনিয়নের সাবুতখালীর ভ্যান চালক আব্দুস সবুর বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন থেকে দাদার হোটেলে বিনে টাকায় ইফতার করি, পেট ভরে গেছে। ইফতারে যত কিছু থাকে আমাদের মতো গরিবের এতকিছু জোগাড় করা সম্ভব নয়।’

গোবিন্দপুর এলাকার ওই বাজারের পান ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন পথচারী, রিকশাচালক, অটোরিকশা চালক, ভ্যানচালক, হোটেলের কাছাকাছি ফুটপাতের দোকানদার এবং এই বাজারের কিছু ব্যবসায়ী নিয়মিত ইফতারে অংশ নেয়। আমি প্রতিদিন এখানে ইফতার করে থাকি।’

প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেন বলেন, ‘সুজন প্রসাদ একজন হিন্দু ধর্মের লোক। তার এমন ইফতার আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমার মনে হয় সুজন প্রসাদ একেবারেই অন্তর থেকে মানসম্মত এবং রুচিসম্মত এসব ইফতার আয়োজন করে থাকেন।’

গাইবান্ধার সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু ফোনে বলেন, ‘হিন্দু ধর্মীয় লোক হয়েও মুসলিম রোজাদারদের জন্য সুজন প্রসাদের এ ইফতার আয়োজন সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সুজন প্রসাদের এমন আয়োজনই প্রমাণ করে বাংলাদেশ অসম্প্রদায়িক দেশ।’

কথা হয় সুজন প্রসাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি যে ধর্মই পালন করিনা কেন, দিন শেষে আমি একজন মানুষ। তাই মানুষ হিসেবে এ দেশের প্রতি, এ দেশের মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি রোজাদারদের জন্য এ ইফতারের আয়োজন করছি।’

আরও পড়ুন:
পাঁচ বছর ধরে দুই শতাধিক মুসল্লির ইফতার আয়োজন করছে মসজিদটি
ফরিদপুরে ৫০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস, ১০০ টাকায় তরমুজ বিক্রি  
এতিম ছাত্রদের নিয়ে জামালপুর প্রেসক্লাবের ইফতার
রমজান এলেই অন্য মানুষ হয়ে যান ব্যবসায়ী আনিসুর
‘আমরা রমজানে বিনা লাভে পণ্য বিক্রি করব’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
10 doctor shortage in national award winning and top health complex

১০ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

১০ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংকট রয়েছে চিকিৎসকের। ছবি: নিউজবাংলা
গাজীপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদা আখতার বলেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন ডাক্তার সংকট দূর করা যায়। এ বিষয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই ডাক্তার সংকট দূর হবে।’

দীর্ঘদিন ধরে ১০ জন চিকিৎসক ছাড়াই চলছে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে ১৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কাজ করছেন সাতজন।

দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর মধ্যে আলোচিত কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্স। এটি ২০২০ সালে জাতীয় পুরস্কার পায়।

কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটি থেকে জেলার বিভিন্ন কারাগারে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ডেপুটেশনে নেয়া হয় চিকিৎসকদের, যার ফলে এ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ জন রোগী আসে। সব শয্যায় সারা বছরই রোগী থাকে। এমন বাস্তবতায় মেডিক্যাল অফিসার ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট সংকটে কমে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান।

অনেক দিন ধরে এ স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে ছয়জন চিকিৎসক গাজীপুরের বিভিন্ন কারাগারে পেষণে কর্মরত রয়েছেন। অন্যদিকে একজন মেডিসিন কনসালট্যান্ট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হাসপাতালে পেষণে কর্মরত।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সটিতে নেই অর্থোপেডিক্স ও ইএনটি কনসালট্যান্ট।

কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা কার্যক্রম মানসম্মত রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোতে অর্থোপেডিক্স কনসালট্যান্ট ও ইএনটি কনসালট্যান্ট পদায়ন জরুরি। প্রেষণে কর্মরত ছয়জন মেডিক্যাল অফিসারের পেষণাদেশ বাতিল করা খুব প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মাসেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরও তিনজন ডাক্তার কোর্সের জন্য পেষণে চলে যাবেন। তখন সংকট আরও তীব্র হবে।

‘এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুণগত মান ধরে রাখতে চিকিৎসক সংকট দূর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জেলার সিভিল সার্জন মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।’

গাজীপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদা আখতার বলেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন ডাক্তার সংকট দূর করা যায়। এ বিষয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই ডাক্তার সংকট দূর হবে।’

আরও পড়ুন:
ভৈরবে গর্ভের শিশুর মৃত্যু: তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ
গাজীপুরে বিস্ফোরণে দগ্ধ অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
চিকিৎসকদের ওএসডি করে রাখার বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
‘দেশে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে’
আগামী সংসদেই সুরক্ষা আইন পাস করতে চাই: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Land officials do not work without money service seekers complain

টাকা ছাড়া কাজ করেন না ভূমি কর্মকর্তা, অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের

টাকা ছাড়া কাজ করেন না ভূমি কর্মকর্তা, অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘উপজেলা অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভূমি অফিসগুলো কবরের পাশে করা উচিত। যাতে করে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ নেয়া এবং সাধারণ মানুষদের হয়রানি করার আগে মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে পারে।’

জমি খারিজ করে দেয়ার কথা বলে এক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নিচ্ছেন পাঁচ হাজার টাকা। আর যিনি টাকা নিচ্ছেন তিনি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর-পাটিচরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রসেস সার্ভার গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী। সম্প্রতি এমন লেনদেনের কিছু ছবি ধারণ করেছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।

শুধু এই একটি অভিযোগই নয়, এ ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে অঢেল ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ।

সেবাপ্রার্থীরা জানান, গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই ভূমি অফিসে তার আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। চাহিদামতো ঘুষ না দিলে মেলে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। আবার কেউ টাকা দিতে না চাইলে নানা শুরু করেন তালবাহনা। সেবা গ্রহীতাদের ভূমি অফিসের বারান্দায় ঘুরতে হয় দিনের পর দিন।

গোলাম কিবরিয়ার অফিশিয়াল কাজ নোটিশ জারি ও ভূমি জরিপ হলেও অনেক সেবাগ্রহীতারা বাধ্য হন তার মাধ্যমে খাজনা-খারিজসহ অন্যান্য কাজ করতে।

উপজেলার নেপালপুর গ্রামের কারিমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রসেস সার্ভার গোলাম কিবরিয়া আমার জমি খারিজ করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছে থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়। তারপর দিনের পর দিন আমাকে ঘুরাতে থাকে। আমার জমি খারিজ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমাকেই গরম দেখায় ফোন বন্ধ করে রাখে। এভাবেই আমাকে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে।’

ভূমি অফিসে গিয়ে কথা হয় আব্দুল্লাহ প্রামাণিক নামের এক সেবাগ্রহীতার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি হোল্ডিং খুলতে। তার পর কিবরিয়া বলল, এখন হবে না পরে এসো। তার পর এখানে আরেক কর্মকর্তাকে বললাম, তিনিও কোনো কাজ করে দেয়নি। এ ভূমি অফিসে প্রতিটি কাজের জন্যই অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কোনো সেবা মেলে না। নইলে ঘুরতে হবে দিন, মাস, এমনকি বছর।’

ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘উপজেলা অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভূমি অফিসগুলো কবরের পাশে করা উচিত। যাতে করে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ নেয়া এবং সাধারণ মানুষদের হয়রানি করার আগে মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে পারে। যখন আমার মতো মুক্তিযোদ্ধার কাছেও ঘুষ দাবি ও হয়রানি করা হয়। তখন সাধারণ মানুষ তো আরও নিরুপায়।’

তিনি বলেন, প্রশাসনের উচিত এদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সরেজমিনে খোঁজ নিতে গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নাম প্রকাশে না শর্তে কথা হয় একাধিক প্রতিবেশীর সঙ্গে।

তারা বলেন, প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর আগে চাকরিতে যোগদান করেন গোলাম কিবরিয়া। তার পর থেকেই নিজেকে প্রভাবশালী মনে করেন নিজেকে। প্রতিবেশী হওয়ার পরও তার কাছে সেবা নিতে গেলে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না। প্রতিটি কাজেই ঘুষ নেন তিনি।

তারা আরও জানান, নিরুপায় হয়ে চাহিদামতো টাকা দিয়েই কাজ করে নিতে হয়। প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।

এ সময় স্থানীয়রা তাদের নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান।

অভিযোগের বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর বক্তব্য নিতে গেলে, ভূমি অফিসে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের অতিরিক্ত টাকা নেই না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পপি খাতুন বলেন, ‘ভূমি অফিসের প্রসেস সার্ভার গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
স্বামীকে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বাকে ‘ধর্ষণ’: ৫ দিনেও গ্রেপ্তার নেই
শেরপুরে হাতুড়ির আঘাতে বৃদ্ধকে হত্যার অভিযোগ, ছেলে আটক
হাতের সঙ্গে উঠে যাচ্ছে পিচ
কলা চুরির অভিযোগে কলেজছাত্রকে মারধর, দুজন আটক
কুমিল্লায় পাঁচ শতাধিক কলাগাছ কেটে জমি দখলের অভিযোগ

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Iftar is organized for hundreds of Muslims in five years throughout Ramadan

পাঁচ বছর ধরে দুই শতাধিক মুসল্লির ইফতার আয়োজন করছে মসজিদটি

পাঁচ বছর ধরে দুই শতাধিক মুসল্লির ইফতার আয়োজন করছে মসজিদটি কুড়িগ্রামের হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর বাজার জামে মসজিদে রোজাদারদের সামনে রাখা ইফতারসামগ্রী ও পানি। কোলাজ: নিউজবাংলা
হাতিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম আবুল হোসেন বলেন, ‘নদীভাঙন আর চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ হাতিয়া হাটে আসেন, কিন্তু রমজান মাসে তারা রোজা রেখে হাট করে বাড়ি ফিরে যেতে রাস্তার মধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। আবার অনেকের দোকানের ইফতার কিনে খাবার সামর্থ্য থাকে না। এসব চিন্তা করে পাঁচ বছর ধরে মসজিদে বিনা মূল্যে ইফতারের আয়োজন করা হয়।’

বিগত পাঁচ বছর ধরে দুই শতাধিক মানুষের জন্য প্রতিদিন ইফতারের আয়োজন হচ্ছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পুরাতন অনন্তপুর জামে মসজিদে।

পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতি ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।

ব্যতিক্রমী এ ইফতার আয়োজনে রোজাদারদের মিলনমেলা দেখা যায়।

মসজিদটিতে রোজ ইফতারে অংশ নেন দাগারকুটি, বাবুরচর, চরগুজিমারী চর হাতিয়াসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল আর প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ।

এ আয়োজনকে দৃঢ় করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় দাতারা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও দূরদূরান্তের রোজাদারদের জন্য এমন উদ্যোগে খুশি অনেকেই।

আছরের নামাজের পর শুরু হয় ইফতারের প্রস্তুতি। মসজিদের মুসল্লি ও পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইফতারি তৈরিতে।

ইফতার করতে আসা একজন বলেন, ‘প্লাস্টিকের বড় বড় গামলায় ইফতার সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। জায়নামাজে বসে সারিবদ্ধভাবে থাকা রোজাদারদের সামনে প্লেটে করে ইফতার,পানি পৌঁছে দিচ্ছেন সেচ্ছাসেবীরা। কলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, শরবত, আঙুর এবং খিচুড়িসহ নানা পদের খাবার।

‘সবাই ইফতার ও পানি নিয়ে আজানের অপেক্ষায়। আজান দিলে একসঙ্গে শুরু হয় ইফতার খাওয়া। এমন সুন্দর আয়োজন রমজান মাসজুড়ে থাকে।’

ইফতারি করতে আসা অনন্তপুরের ভিক্ষুক নুর আলী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন পুরাতন অনন্তপুর বাজার জামে মসজিদে ইফতার করি। সারা দিন ভিক্ষা করে যে আয় হয়, তা থেকে কোনো রকমে সংসার চলে।

‘ইফতার কিনে কীভাবে খাব? তাই বিনা মূল্যে এখানে ইফতার করতে ছুটে আসি।’

হাতিয়া বাজার থেকে আসা রনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই এখানে ইফতার করতে আসি। আমি একা না; আমার মতো অনেক পথচারী, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা এবং আশপাশের ফুটপাতের দোকানদাররা এ মসজিদে ইফতার করতে আসেন। একসঙ্গে শতাধিক মুসল্লি ইফতার করার সুযোগ পাই।’

দাগারকুটি চর থেকে আসা বৃদ্ধ মোজাম্মেল বলেন, ‘হাতিয়া হাটে আসছি। শেষ বিকেলে হাট করে বাড়ি যেতে চরের মধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। তাই এখানে ইফতার খেয়ে নামাজ আদায় করে হাটে খরচ করে বাড়ি ফিরে যেতে পারি।’

মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা মসজিদে সবাই মিলে ইফতার করে যে আনন্দ পাই, সেটা বাড়িতে একা হয় না। ছোট, বড়, বৃদ্ধসহ নানা বয়সের নানা পেশার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করার আনন্দ অন্য রকম। আমরা চাই আমাদের পরের প্রজন্ম এ কার্যক্রম ধরে রাখুক।’

পুরাতন অনন্তপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভুট্টো বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এমন আয়োজন করে আসছি। বাজারে অনেক অসহায়, দুস্থ মানুষজন থাকে। সামর্থ্য না থাকায় বাইরে ইফতার করতে ইতস্তত বোধ করেন।

‘আমরা মূলত আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সবার সহযোগিতায় প্রতি বছর রমজান মাস ধরে ইফতারের আয়োজন করে থাকি। এটি দেখে পরের প্রজন্ম যেন এ ইফতার আয়োজনটি ধরে রাখে, এই প্রত্যাশা আমাদের।’

হাতিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম আবুল হোসেন বলেন, ‘নদীভাঙন আর চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ হাতিয়া হাটে আসেন, কিন্তু রমজান মাসে তারা রোজা রেখে হাট করে বাড়ি ফিরে যেতে রাস্তার মধ্যে ইফতারের সময় হয়ে যায়। আবার অনেকের দোকানের ইফতার কিনে খাবার সামর্থ্য থাকে না।

‘এসব চিন্তা করে পাঁচ বছর ধরে মসজিদে বিনা মূল্যে ইফতারের আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন একসঙ্গে ২০০ থেকে ৩০০ মুসল্লি ইফতার করেন। এটি যেন আগামীতে অব্যাহত রাখা হয়, সকলের সহযোগিতা চাই।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Why jelly fish wandering on the beach at this time

সৈকতে এ সময়টাতেই কেন জেলি ফিশের বিচরণ

সৈকতে এ সময়টাতেই কেন জেলি ফিশের বিচরণ কুয়াকাটা সাগর সৈকতে ভেসে আসা জেলি ফিশ। ছবি: নিউজবাংলা
সাগর-কন্যা কুয়াকাটার সৈকত জুড়ে মৃত জেলি ফিশের ছড়াছড়ি। পনের দিন ধরে চরগঙ্গামতি পয়েন্টসহ আশপাশের সৈকত এলাকা সয়লাব হয়ে গেছে মৃত জেলি ফিশে। এগুলো এভাবে পড়ে থাকলে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিপাকে পড়েছেন জেলেরাও। তারা সাগরে ঠিকমতো জাল ফেলতে পারছেন না।

সাগর-কন্যা কুয়াকাটার সৈকত জুড়ে আবারও মৃত জেলি ফিশের ছড়াছড়ি। গত পনের দিন ধরে চরগঙ্গামতি পয়েন্টসহ আশপাশের সৈকত এলাকা সয়লাব হয়ে গেছে মৃত জেলি ফিশে। গত বছরও এখানে একই চিত্র দেখা গেছে এবং তা এই সময়টাতেই।

জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা হাজার হাজার জেলি ফিশ সৈকতের বালুতে আটকে মারা যাচ্ছে। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের তুলনায় চরগঙ্গামতি পয়েন্টে পর্যটক কম থাকায় এটি কারও বড় মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে না। তবে এগুলো এভাবে পড়ে থাকলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। ইতোমধ্যে জিরো পয়েন্টের আশপাশ এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সৈকত জুড়ে জেলি ফিশের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্থানীয় জেলেদেরও। কারণ তারা ঠিকভাবে সাগরে জাল ফেলতে পারছেন না। এসব পয়েন্টে জাল ফেললেই জীবিত জেলি ফিশ আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। জেলি ফিশে জাল আটকে যাচ্ছে।

সৈকতে এ সময়টাতেই কেন জেলি ফিশের বিচরণ
কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসা জেলি ফিশ মরে পরিবেশ দূষণের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা

মৃত জেলি ফিশগুলোর কোনোটা দেখতে চাঁদের মতো আবার কোনোটা অক্টোপাসের মতো। সৈকত থেকে এগুলোকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন পর্যটকরা।

পটুয়াখালী জেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলি ফিশ সমুদ্রের এক আজব প্রাণি। এগুলোকে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগের ডাইনোসর যুগের প্রাণি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন বিজ্ঞানীরা।

‘জেলি ফিশের মাথা, হৃৎপিণ্ড, লেজ, মেরুদণ্ড বা হাত-পা বলে কিছু নেই। সম্পূর্ণ নরম দেহ বা জিলেটিনাস দেহ নিয়ে এটা গঠিত। বিভিন্ন প্রজাতির জেলি ফিশ পৃথিবির সব সাগর, মহাসাগর, হ্রদ বা লেগুনে বিস্তৃত রয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে এগুলো টিকে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জেলি ফিশ প্রকৃতপক্ষে লোনা পানির প্রাণি। এরা সাধারণত সাঁতার কাটার উপযুক্ত নয়। কারণ এদের সাঁতার কাটার কোনো দৈহিক শক্তি বা অঙ্গ নেই। তবে উল্লম্বভাবে সামান্য চলাচলে ভার্টিকেল প্রোপালশন সিস্টেম রয়েছে, যার মাধ্যমে এগুলো পানির গভীর থেকে উপরে এবং উপর থেকে গভীরে গমনাগমন করতে পারে। পার্শ্বীয় চলাচল বা সামন্তরাল পথ ভ্রমণে এরা মোটেই উপযুক্ত নয়। তাই জেলি ফিশ পানির স্রোত বা বাতাসের গতির ওপর নির্ভরশীল থাকে।

সৈকতে এ সময়টাতেই কেন জেলি ফিশের বিচরণ

‘সমুদ্রের স্রোত, জোয়ার বা সামদ্রিক বাতাসের তোড়ে এগুলো সমুদ্র থেকে উপকূলে বা সমুদ্রতীরে বা বিচে এসে আটকে পড়ে। স্রোতের বিপরীতে যাওর অক্ষমতার জন্য এখানেই এদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে থাকে।

‘জেলি ফিশ সাধারণত উপযুক্ত লবণাক্ততায় প্রজনন করে থাকে এবং নির্দিষ্ট একটি বয়সে এসে মারা যায়। প্রচুর খাবার, সঠিক অক্সিজেন ও লবণাক্ততা পেলে জেলি ফিশ দ্রুত বংশ বিস্তার করে।

‘কিছু প্রজাতির জেলি ফিশের স্টিং থাকে। আর তাতে ভেনম বা বিষ থাকে; যদিও এই বিষ মৃত্যুঝুঁকির মতো নয়। তবে চুলকানি, লাল বার্ন হয়ে যাওয়া বা কিছু ক্ষেত্রে চোখে লাগলে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘কুয়াকাটার বিচে আটকে পড়া এসব জেলি ফিশ সাদা জেলি ফিশ নামে পরিচিত, যার বৈজ্ঞানিক নাম ফাইলোরিজা পাঙটাটা। এরা মোটেই বিষাক্ত প্রজাতির নয়। এদের স্টিং নেই যেখানে বিষ থাকতে পারে। তবে এই প্রজাতির জেলি ফিশের সংস্পর্শে কিছুটা চুলকানি হতে পারে।’

সৈকতে এ সময়টাতেই কেন জেলি ফিশের বিচরণ

প্রতি বছর মার্চ মাসের দিকে সাগর উপকূলে জেলি ফিশের বিস্তারের কারণ সম্পর্কে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মার্চ থেকে জুলাই মাসে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেন ভালো থাকে। পাশাপাশি অনুকূল তাপমাত্রা ও ও লবণাক্ততা প্রজননের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় সাদা জেলি ফিশ এই সময়ে ব্যাপকমাত্রায় প্রজনন করে পপুলেশন ব্লুমস তৈরি করে। পরবর্তীতে সাগরের ঢেউ, স্রোত ও বাতাসের শক্তিতে এগুলো উপকূলভাগে চলে আসতে বাধ্য হয়।

‘এ কারণেই প্রতি বছর মার্চ মাসের শুরুতে বা কিছু ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এসব জেলিফিশ উপকূলে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। তবে তাপমাত্রা কমে গেলে বা সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই এগুলো মারা যাবে।’

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়, সাগরে অধিক পরিমাণ মাছ আহরণের কারণেও জেলি ফিশের ব্যাপক বংশ বিস্তার হতে পারে। কারণ অনেক সামুদ্রিক মাছ বা প্রাণি জেলি ফিশ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। তাই সাগরে কিছু প্রয়োজনীয় মাছ কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই জেলি ফিশের সংখ্যা বেড়ে যায়।

বাংলাদেশের সাগর সীমায় সরকার যে ৬৫ দিনের জন্য মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) তা অব্যাহত থাকলে সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে এবং মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জেলি ফিশের সংখ্যা বা ব্লুমস প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ হবে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Drug resistant tuberculosis is on the rise in Gaibandha

ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বাড়ছে গাইবান্ধায়

ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বাড়ছে গাইবান্ধায় যক্ষ্মা শনাক্তের জন্য কফ পরীক্ষার জিন এক্সপার্ট মেশিন। ছবি: নিউজবাংলা
এনটিপি গাইবান্ধার ডেটা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত গাইবান্ধায় ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী ৩৭ জন, যা রংপুর বিভাগের আট জেলার সর্বোচ্চ। এ সময়ে জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ১৯৯৩ সালে যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণার পর থেকেই রোগটি নির্মূলে নানা পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ সরকার। এ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয় বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও।

সারা দেশের মতো গাইবান্ধাতেও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত কার্যক্রম চলছে। এসবের পরও উত্তরের জেলাটিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে যক্ষ্মা ও মাল্টিড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকুলোসিস (এমডিআর) তথা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা।

পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) গাইবান্ধার ডেটা অনুযায়ী, জেলায় ২০১৯ সালে এমডিআর আক্রান্ত রোগী ছিল পাঁচজন, যেটি পরের বছর ২০২০ সালে কমে হয় চারজন, তবে পরের বছর থেকে গাইবান্ধায় বাড়তে থাকে এমডিআর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

গাইবান্ধায় ২০২১ সালে এমডিআর আক্রান্ত রোগী ছিল ২৪ জন। জেলায় ২০২২ সালেও সমসংখ্যক মানুষ যক্ষ্মার এ ধরনের আক্রান্ত হন। এর পরের বছর ২০২৩ সালে এমডিআরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ জনে।

এনটিপি গাইবান্ধার ডেটা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত গাইবান্ধায় ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী ৩৭ জন, যা রংপুর বিভাগের আট জেলার সর্বোচ্চ। এ সময়ে জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বাড়ছে গাইবান্ধায়

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বলছে, চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত গাইবান্ধায় যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী ৬৮১ জন।

বক্ষব্যাধি নিয়ে কাজ করা রাজশাহী চেস্ট ডিজিজ হসপিটালের (সিডিএইচ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের ২০ মার্চ পর্যন্ত রংপুর বিভাগে এমডিআরে আক্রান্ত রোগী ১২৫ জন। এ সময়ে এমডিআর আক্রান্ত বিভাগের সর্বোচ্চ রোগী ছিল গাইবান্ধায়, যেখানে সর্বনিম্ন পাঁচজন রোগী পাওয়া যায় কুড়িগ্রামে।

এনটিপি গাইবান্ধার ডেটা বলছে, ২০২৩ সালে গাইবান্ধায় যক্ষ্মার সব ধরনে আক্রান্ত রোগী তিন হাজার ৬০৩ জন।

পরীক্ষায় অবহেলা

গাইবান্ধায় সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও আইসিডিডিআরবির অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

তারা জানান, যক্ষ্মার সব লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও মানুষ সহজে প্রকাশ করতে চান না, যার মূলে রয়েছে সামাজিক কুসংস্কার, লোকলজ্জা ও রোগের ব্যাপারে অজ্ঞতা, অবহেলা ও অসচেতনতা।

তারা বলেন, একজন সম্ভাব্য রোগীকে নানাভাবে বোঝানোর পরও কাশি পরীক্ষার জন্য কফ দিতে চান না এবং এক্সরে করতে চান না। কফ পট নিলেও অবহেলা ও নানা অজুহাতে তা ফেরত দেন।

ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বাড়ছে গাইবান্ধায়

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, যক্ষ্মা পজিটিভ রোগীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যক্ষ্মার পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে টিপিটি (টিবি প্রিভেনটিভ থেরাপি) দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে তাদের আরও বেশি জটিলতায় পড়তে হয়। কেননা রোগীর স্বজনরা সুস্থতা দাবি করে কোনোভাবেই টিপিটির আওতায় আসতে চান না।

যক্ষ্মার লক্ষণ

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি তথা এনটিপির রংপুর বিভাগীয় বিশেষজ্ঞ ডা. রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যক্ষ্মা হচ্ছে একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি, যেটা মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে, যা হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে বাতাসের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে থাকে। যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ এক নাগাড়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি। সে ক্ষেত্রে কাশির সাথে রক্ত আসতেও পারে, নাও আসতে পারে।

‘এ ছাড়া রোগীর ওজন কমে যাওয়া, আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল হতে থাকা, ক্ষুধামান্দ্য, বিকেল-সন্ধ্যায় জ্বর হওয়া, ঘামের সঙ্গে ভোররাতে জ্বর ছেড়ে যাওয়া ও বুকে-পিঠে ব্যথা হওয়া যক্ষ্মার লক্ষণ।’

তিনি বলেন, ‘এসব লক্ষণ যদি কোনো ব্যক্তির মাঝে থাকে তাহলে সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী হিসেবে তাকে পরীক্ষা করাতে হবে। শনাক্ত হলে নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ খেলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়।’

এ চিকিৎসক জানান, যক্ষ্মা হাত-পায়ের নখ, দাঁত ও চুলের বাইরে অনেক স্থানকে আক্রান্ত করতে পারে। এটি মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে শরীরের অস্বাভাবিক গুটি, ফোঁড়া, ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি, হাড়, জরায়ু, অস্ত্রোপচারস্থলসহ শরীরে রক্ত সঞ্চালন হয় এমন যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শরীরের যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হবে, সেই অংশটি ফুলে উঠবে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘রোগটি সাধারণত ঘনবসতিপূর্ণ ও দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এ ছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল, এ জীবাণু থেকে তাদেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

‘এ ছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী, মাদকে আসক্তি ব্যক্তি, অপুষ্টি, দারিদ্র্য, পরিবেশ দূষণ এবং সঠিক সময়ে সকল রোগী শনাক্ত না হওয়া যক্ষ্মার হার বাড়ার অন্যতম কারণ।’

একজন মানুষ এমডিআরে কীভাবে আক্রান্ত হন

এমডিআরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে রাজশাহী চেস্ট ডিজিজ হসপিটালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শোভন পাল মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমডিআর যক্ষ্মা রোগী প্রধানত দুইভাবে হয়ে থাকে। এক. সরাসরি ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর জীবাণু দ্বারা। দুই. যক্ষ্মা পজিটিভ রোগী যদি অনিয়মিত ওষুধ খায় কিংবা অনেকেই সেরে উঠেছেন ভেবে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে এসব রোগী এমডিআরের রোগী হিসেবে চিহ্নিত হন। এসব রোগীর যক্ষ্মার স্বাভাবিক ওষুধে আর কোনো কাজ হয় না।’

যক্ষ্মার নিরাময় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘যক্ষ্মা দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ায় এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ খেতে হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের ধরন, মাত্রা এবং রোগীর বয়স অনুসারে ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করতে ছয় থেকে ৯ মাস পর্যন্ত, এমনকি রোগীর কন্ডিশন অনুযায়ী আরও দীর্ঘ সময় হতে পারে। এসবের ব্যত্যয় হলে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুও হয়।

‘এমন অবস্থায় যক্ষ্মা রোগীদের ধৈর্যের সাথে নির্দিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী পুরো মেয়াদে ওষুধ খেতে হবে। সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে এই জীবাণু শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে এবং একজনের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ জনের মধ্যে জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

শোভন পালের মতে, যক্ষ্মা এবং এমডিআর রোগী কমাতে আক্রান্তদের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যক্ষা রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজনের আরও সজাগ হওয়া, অস্বাস্থ্যকর ও ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকা মানুষগুলোকে নিয়মিত পরীক্ষার আওতায় নেয়ার পাশাপাশি জীবাণুবাহী রোগী হাসপাতালে আসার আগেই রোগ শনাক্ত করতে। এ ছাড়া কেউ যাতে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে না দেন, সে বিষয়ে নজরদারি করা, শনাক্ত রোগীদের চিকিৎসার দুই, তিন ও পাঁচ মাসের নিয়মিত ফলোআপ এবং যক্ষ্মায় আক্রান্ত গরিব মানুষদের চিকিৎসার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ধর্মীয় নেতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।

এনটিপি কতটা সফল

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বর্তমান সফলতা প্রসঙ্গে ডা. রানা বলেন, ‘রোগী চিহ্নিত ও চিকিৎসায় করার ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আর ৯৬ ভাগ রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা যাচ্ছে। এনটিপি এবং সহযোগী সংস্থাগুলো গত কয়েক দশকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে যেখানে প্রতি এক লাখে প্রায় ৪৫ জন লোকের মৃত্যু হতো, বর্তমানে তা ২২ জনে নেমে এসেছে।’

যক্ষ্মা রোগীর নিবন্ধন ও পরামর্শসহ সব কার্যক্রম সরকারিভাবে করা হলেও রোগী শনাক্তের চ্যালেঞ্জিং কাজটি করে থাকে ব্র্যাক, আইসিডিডিআরবির মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

এ বিষয়ে ব্র্যাক যক্ষ্মা কর্মসূচির (বিএইচপি টিবি) গাইবান্ধার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার (ডিএম) নাজমুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও ব্র্যাক যৌথভাবে ১৯৯৩ সাল থেকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গাইবান্ধায় এই রোগ নির্মূলে শ্রেণিভেদে মাঠ পর্যায়ে ব্র্যাকের ৫৬ জন কর্মী সরাসরি কাজ করছে এবং তাদের সহযোগিতায় জেলায় ৩২০০ স্বাস্থ্য সেবিকা কাজ করছে। আমরা সরাসরি রোগীর কাছ থেকে কফ কালেকশন করে হসপিটালে পরীক্ষার জন্য জমা দিচ্ছি।

‘পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা রোগীদের ওষুধ খাওয়ানো এবং নিয়মিত ফলোআপ এবং টিপিটির ব্যবস্থা করছি। অতি দরিদ্র রোগী, পরিবহন শ্রমিক, রিকশাচালক, ইটভাটা শ্রমিকসহ এই ক্যাটাগরির পরিবারের রোগীদের পরীক্ষার জন্য যাতায়াত খরচ এবং পুষ্টিকর খাবারের জন্য অর্থ সহায়তা করা হচ্ছে। শিশুদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা এবং ডেটা প্রোভাইডারদের ভাতা প্রদান করে রোগীদের ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে চলেছে ব্র্যাক।’

২০৩৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে যক্ষ্মা রোগ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এটি কতটা সহজ হবে, এমন প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে যক্ষ্মা নিয়ে অনেক কাজ হলেও ২০৩৫ সালের মধ্যে এটি নির্মূল করা অত্যন্ত কঠিন। কেননা একদিকে মানুষ যেমন সচেতন নয়, অপরদিকে রোগী শনাক্তও অত্যন্ত কঠিন, তবে ওই সময়ের মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আবু হানিফ মোবাইল ফোনে নিউজবাংলকে বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিসহ সব পরিকল্পনাই রয়েছে আমাদের। যক্ষা নির্মূলে জেলার সরকারি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, এমনকি জেলখানা ও গার্মেন্ট কর্মীদের চিকিৎসা কেন্দ্র ছাড়াও ব্র্যাকসহ বেসরকারি আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বহুসংখ্যক ল্যাবরেটরিতে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় হচ্ছে। এ জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিও।

‘এর পরও যক্ষ্মা নির্মূলে যতটুকু সংকট আর চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আমরা তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করা সম্ভব হবে।’

আরও পড়ুন:
জাল টাকায় বই-খাতা কিনতে এসে যুবক আটক
রেললাইনে মাথা রেখে ঋণগ্রস্ত যুবকের আত্মহত্যা, ধারণা পুলিশের
ট্রাকের বুবলীর বিরুদ্ধে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ নৌকার রিপনের
বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে নৌকার পোস্টার, ‘ভাতা বন্ধের হুমকি’ আওয়ামী লীগ নেতার
গাইবান্ধায় যাত্রীবাহী বাসে হঠাৎ আগুন

মন্তব্য

p
উপরে