বিজয়ের ৫০ বছরে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অর্জন একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাত সৃষ্টি। সরকারি চেষ্টা ও নানা রকম নীতি সহায়তার ওপর দাঁড়িয়ে গড়ে ওঠা এই বেসরকারি খাতের জাদুকরী ছোঁয়াতেই মূলত পাল্টে গেছে অর্থনীতির চেহারা।
দেশ পুনর্গঠনের সময় বঙ্গবন্ধু সরকারের হাতে কৃষিভিত্তিক পণ্য পাট, চা ও চামড়া ছাড়া দেশীয় অবলম্বন বলতে আর তেমন কিছুই ছিল না। ওই সময় মোটা দাগে এই কয়টি পণ্যই ছিল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মূল উৎস। এর বাইরে ৫৫ হাজার বর্গমাইলজুড়ে যে উৎপাদন হতো, তখনকার ৭ কোটি মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা তা দিয়ে পূরণ হতো না।
সময় বদলেছে। প্রান্তিক কৃষকের সনাতনি সেই কৃষিতে লেগেছে বেসরকারি খাতের ছোঁয়া। কৃষির আরও সম্প্রসারণ, আধুনিকীকরণ এবং বাণিজ্যিক চাষাবাদের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরিতেও বেসরকারি খাত অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এতে করে ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃত্ত খাদ্য রপ্তানি হচ্ছে।
শুধু কৃষিই নয়, বেসরকারি খাতের জাদুকরীপ্রভাব পড়েছে শিল্প খাতেও। এর ওপর ভর করে কৃষিনির্ভর অর্থনীতি এখন শিল্পনির্ভর অর্থনীতিতে রূপ পেয়েছে। একের পর গড়ে উঠছে শিল্প। আসছে বহুমুখী বিনিয়োগ। সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। বাড়ছে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির পরিমাণ।
শিল্পায়নের এই প্রসারে পাট, চা ও চামড়াকে পেছনে ফেলে এখন প্রধান রপ্তানি খাত হয়ে উঠেছে তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশেরই জোগান দিচ্ছে পোশাক খাত। এ ছাড়া রপ্তানি ঝুলিতে যোগ হয়েছে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক পণ্য, ইলেকট্রনিক্স, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং ও জাহাজ নির্মাণ, ফার্নিচার, কাগজ ও কাগজপণ্য, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং সামগ্রী, অ্যাগ্রো প্রসেস ফুড, ব্যাগস অ্যান্ড পার্টস, রাবার, খেলনা, আগর, কাঠ, আতর, পাঁপড়সহ ৭২৯টি পণ্য, যা রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৯৬টি দেশে।
এ সময়ে বেসরকারি খাতের উদ্যোগে দেশে শক্তিশালী সেবা খাতেরও প্রসার ঘটেছে। দেশের অর্থনীতিতে এ তালিকায় যোগ হয়েছে ব্যাংক-বিমা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন খাত, উৎপাদন, কৃষি ও বনায়নসহ ২৮টি সেবা খাতের সম্মিলিত কার্যক্রম।
এসবের সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যোগ হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প পণ্যের বিপ্লব। সব মিলিয়ে দেশ এখন বহুমুখী পণ্য ও সেবার উৎপাদননির্ভর রপ্তানিমুখী দেশে পরিণত হতে চলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আজকের বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাধীন হওয়ার আগের পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বাস্তবতার আকাশ-পাতাল ব্যবধান। কারণ ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত ২০০ বছরের বেশি শাসনামলের ওই সময়ে কৃষি ছাড়া শিল্পের কোনো প্রসার ঘটেনি। এ দেশের কাঁচামাল দিয়ে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হতো যুক্তরাজ্যে। আবার পাকিস্তান আমলে বাঙালি নিয়ন্ত্রণাধীন যে কয়েকটি কারখানা ছিল, তা মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যায়। তবে তখনকার সময়ে ব্যাংক-বিমাসহ ছোট-বড় শিল্প-কারখানার সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ হাজারেরও কম। আর বেসরকারি খাত বলতে যা ছিল, তার ৯৯ ভাগই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিল্প-কারখানা ও ব্যাংক-বিমার নিয়ন্ত্রণ ছিল ২২ পরিবারের হাতে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই দেশে একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাত গড়ে উঠেছে। প্রায় শূন্য থেকে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের অর্থনীতির যাত্রা, কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে পুনর্গঠনে সব ধরনের উদ্যোগই নিয়েছিলেন। যার সূত্র ধরে আজকের এই বাংলাদেশ। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তাও ছিল উল্লেখ করার মতো।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশে একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাত সৃষ্টিতে উৎসাহমূলক ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেই এখন দেশে সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি লোক ব্যবসায়ী, যারা কৃষি প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে বহুমুখী শিল্প স্থাপন করেছেন, বিভিন্ন সেবা খাত এবং তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর খাতেও বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন। এখন দেশে একের পর এক প্রতিষ্ঠিত করপোরেট শিল্পগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষক থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীরা তাদের মেধা, মনন, দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে প্রতিনিয়ত উৎপাদন সচল রাখছেন বলেই দেশ এগিয়ে চলেছে। দেশের কর্মক্ষম পৌনে ৯ কোটি মানুষের অন্তত ৮০-৮৫ শতাংশেরই জীবিকা জড়িত আছে এই বেসরকারি খাতের সঙ্গে।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআরইউ) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি থাকবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যেখানে এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবে বেসরকারি খাত।
এদিকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে অষ্টম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ মোট বিনিয়োগের ৭৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণেতারা দাবি করেছেন, এই উদ্যোগ দেশে এফডিআইয়ের দ্রুত বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন, জ্ঞান হস্তান্তর ও দক্ষতার উন্নয়ন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে বড় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাড়াতে সহায়ক হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে দেশে অতি ক্ষুদ্র, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং বৃহৎসহ প্রায় ৮৮ লাখ শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। একই সঙ্গে এসব শিল্পে যে পণ্যসামগ্রী উৎপাদন হচ্ছে, তা অভ্যন্তরীণ ১৮ কোটি মানুষের চাহিদা মিটিয়েও বিশ্বের ১৯০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এভাবেই কৃষিভিত্তিক এবং আমদানিনির্ভর দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন উৎপাদননির্ভর রপ্তানিমুখী দেশে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৩ সালের প্রতিবেদনেও সারা দেশে সব মিলিয়ে শিল্পের সংখ্যা প্রায় ৮৮ লাখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কুটির শিল্প ৬৮ লাখ ৪২ হাজার, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান ১০ লাখের বেশি, ছোট শিল্প রয়েছে প্রায় ৯ লাখ। এ ছাড়া মাঝারি শিল্প ৭ হাজার ও বৃহৎ শিল্প ৫ হাজার ২৫০টি।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, গত দুই দশকে শিল্প খাতের বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৯ গুণ। ২০০১-০২ সালের বিবিএসের শিল্প উৎপাদন সমীক্ষা অনুযায়ী, সে সময়ে বছরে ৯০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন করত শিল্প খাত। আর এখন শিল্প খাত বার্ষিক ৮ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন করছে।
শিল্প খাতের বিকাশ সত্ত্বেও সমান্তরালে বেড়েছে কৃষি উৎপাদন। বিশ্বব্যাংকের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিএনপি) কৃষি খাতের অবদান ছিল ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ। আর শিল্প ও সেবা খাতের অবদান যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও ৩৪ শতাংশ।
তবে কৃষি উৎপাদন বাড়লেও জিডিপি অবদান বিবেচনায় এই সময়ে কমেছে কৃষির প্রাপ্তি। হিসাব অনুযায়ী ৪৫ বছর পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তিনটি খাতের মধ্যে কৃষি খাতের অবদান তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে। আবার শিল্প খাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে সেবা খাত।
সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ছিল ৫৩ দশমিক ১২ শতাংশ। আর কৃষি খাতের অবদান কমতে কমতে ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। শিল্প খাত জোগান দিয়েছে ৩১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন:ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিন্ন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৬৮ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ মঙ্গলবার ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ৪৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকেই ডলার কিনছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ডলার কেনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ দফায় ডলার কেনে। ১৩ জুলাই ১৮ ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১১ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম হঠাৎ করে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া- দুটোই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বিদেশি দায় পরিশোধও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ডলারের তীব্র চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদাও বাড়তে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যবিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে ৩ টাকা। নতুন মূল্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৭৩ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়েছে ।
এছাড়া, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারে ১৩ পয়সা কমিয়ে ৫৮ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি খাতে ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেখান থেকে বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হবে।
তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরামকোর প্রপেন ও বিউটেনের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে এ দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের বড় বাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভারত থেকে টমেটো বোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টমেটো আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮ টন টমেটো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো আমদানি করতে শুল্কসহ খরচ গুণতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ টমেটো আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার হিলি বন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ণ করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এই বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি করা হয়েছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজতে থাকায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে পৌঁছেছে।
এশিয়ায় প্রাথমিক লেনদেনের সময় মূল্যবান ধাতুটি প্রতি আউন্স ৩,৫০১ দশমিক ৫৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে এর আগের রেকর্ড ৩,৫০০ দশমিক ১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মার্কিন ডলার ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নেওয়ায় সোনার দামের এই দরপতন ঘটেছে।
মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির একটি মূল্য সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে পিছিয়ে এসেছে। একই সময়ে, ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শ্রম দিবসের জন্য সোমবার ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, তখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ডলার মিশ্র লেনদেন করেছে।
বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগে ফেডের গভর্নরকে তিরস্কার করার পর ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুক পদত্যাগ না করলে, তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন।
মার্কিন আপিল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক শুল্ক, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেগুলো অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পরও এই রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
তবে আদালত আপাতত এই ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য সময় পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কমিউনিটি ব্যাংকের স্টার্টআপ রিফাইন্যান্স স্কিমের অধীনে অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখার উপস্থিতিতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসএমইএসপিডি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কিমিয়া সাআদত পারস্পরিক অংশীদারত্বমূলক এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে- বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হাফিয়া তাজরিয়ান, যুগ্ম পরিচালক মো. নুরুল কাওসার সাঈফ এবং কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মোঃ আরিফুল ইসলাম, হেড অব এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শরিফ হাসান মামুনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ব্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় ১০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয় ছিল ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে, সামগ্রিক এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টে অর্জিত ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য