নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গেলেন ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আজ আমাদের মা (খালেদা জিয়া) মৃত্যুশয্যায় থেকে নির্বাচনে অংশ না নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি একজন জিয়ার সৈনিক হিসেবে সে নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। তাই দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন আর শ্রদ্ধা রেখে আমি এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলাম।’
সাখাওয়াত সরে গেলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকার।
বুধবার দুপুরে প্রথমে মনোনয়ন জমা দেন তৈমূর আলম। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জমা দেন ফরম।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তৈমুর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিএনপির নেতা হিসেবে একমাত্র আমিই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। ছবি: নিউজবাংলা
তৈমূর বলেন, ‘বিএনপি অনেক বড় একটা দল। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এই বিএনপিকে অনেক কৌশল অবলম্বন করে চলতে হয়েছে। সিটি করপোরেশনকে পরিবর্তনের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের জনগণের পাশে অবস্থান এবং জনগণের জন্য এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে।’
গত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অনেক প্রার্থীকে জেলখানায় থাকতে হয়েছে উল্লেখ করে তৈমূর বলেন, ‘অনেক প্রার্থীর বাড়িঘর লুট করা হয়েছে, অনেককে পেটানো হয়েছে। যাদের পেটানো হয়েছে তাদের মামলা পুলিশ নেয়নি। তাদের গায়েবি মোকদ্দমা দিয়ে বাড়িঘর ছাড়া করা হয়েছে।
‘এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপিকে রাজনীতি করতে হয়েছে কিন্তু বিএনপি কখনও কম্প্রমাইজ করেনি। আন্দোলন সংগ্রামের স্বার্থে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল পৃথিবীর সব জায়গায় কৌশল অবলম্বন করে। আমরা আমাদের অবস্থানে এগিয়ে যাচ্ছি। সময়মতো আপনারা বুঝবেন আমাদের অবস্থানটা কী। দল জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহর হতে হবে বায়ুদূষণ ও জলাবদ্ধতামুক্ত শহর। এ শহরে মানুষ নিরাপদে চলাচল করবে, রাস্তা হবে পরিষ্কার। সকল নাগরিক সুবিধা নগরবাসী পাবে। আমরা ২০০২ সালে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম সে প্রস্তাবের ভিত্তিতে আমরা একটি সুন্দর সিটি করপোরেশন হিসেবে নারায়ণগঞ্জকে তৈরি করতে চাই।’
আইভীর প্রতিশ্রুতি
নির্বাচন কার্যালয় থেকে তৈমূর আলম খন্দকারসহ তার দলীয় নেতা-কর্মীরা চলে যাওয়ার পর সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সেলিনা হায়াৎ আইভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত বা দলীয় কৌশল থাকতে পারে। তবে আমার দলের কৌশল সরাসরি নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে হবে৷ আমার দল আমাকে মনোনীত করেছে তাই নৌকা নিয়েই নির্বাচন করব৷ তবে নির্বাচনি মাঠে কে কোন প্রতীক নিয়ে আসবে সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমার আস্থা আমার জনগণ, আমাকে দীর্ঘদিন তারা দেখেছে, আমি তাদের জন্য কাজ করেছি, আমার বিশ্বাস জনগণ আমাকে ভোট দেবে৷’
বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতীক মুখ্য বিষয় না, ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ৷ আমার মনে হয় নারায়ণগঞ্জে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে৷ কারণ ২০১১ সালে প্রথম যখন ইভিএমে নির্বাচন হয়েছিল, অনেকে অনেক কথা বলেছিল কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে৷ ইভিএমে সারা দেশে নির্বাচন হচ্ছে৷ আমি তখনও ইভিএমকে স্বাগত জানিয়েছি, এখনও স্বাগত জানাই এবং আমি জয়ের আশা করছি৷’
কেন সরে গেলেন সাখাওয়াত
বুধবার দুপুর ১টার দিকে ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছেন গতবারের পরাজিত বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
সাখাওয়াত বলেন, ‘আমি আশা করব আমার মতো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সব সিনিয়র নেতারা এই নির্বাচন থেকে সরে আসবেন। আমি মনে করি আমাদের দলে যে পর্যায়ের ব্যক্তিরাই হোক এ নির্বাচন থেকে বিরত থাকবেন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন।’
সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিপক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ভোটে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাখায়াত হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল।
‘আমি দলের নীতিনির্ধারক কমিটির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, দল আগের সিদ্ধান্তে বহাল আছে। যদি কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীর প্রতি তাদের দলীয় কোনো সমর্থন নাই। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কাজে আমি অংশগ্রহণ করব না। আমি মনে করি কোনো নেতা-কর্মীও অংশগ্রহণ করবেন না,’ যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুসারে আগামী ১৬ জানুয়ারি ইভিএম পদ্ধতিতে ২৭টি ওয়ার্ডের ভোট হবে। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭। এর মধ্যে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৯ পুরুষ ভোটার ও ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৭ নারী ভোটার রয়েছেন। তাছাড়া চারজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন এই সিটিতে।
আরও পড়ুন:বরগুনায় এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে দুই শিশুসন্তান বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা মামলায় ইলিয়াস পহলান নামে এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মো. ইলিয়াস পহলান (৩৪) বরগুনা সদর উপজেলার পূর্ব কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রঞ্জু আরা শিপু, আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আহসান হাবীব স্বপন। আইনজীবী রঞ্জু আরা শিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ওই নারী তার মেয়ে তাইফা (৩) ও ছেলে হাফিজুলকে (১০) নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় ইলিয়াস তাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে পড়েন। বিষয়টি টের পেয়ে বাধা দেন ওই নারী। এ সময় তাইফা ও হাফিজুলের ঘুম ভেঙে গেলে ইলিয়াস ধারালো অস্ত্র দিয়ে তিনজনকেই কুপিয়ে আহত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় হাফিজুল নিহত হয়, আর বরিশালে নেওয়ার পথে মারা যায় শিশু তাইফা।
তবে গুরুতর আহত ওই নারী দীর্ঘ চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার পরই ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়।
তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনাল সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে ইলয়াস পহলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দোষী তাকে সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেন। একই সঙ্গে দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত।
এ ছাড়াও ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছর করে আরও ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে ওবাইদুর রহমান (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার মধুপুর নামক স্থান থেকে লাশটি উদ্ধার করেছে ভারতের পুলিশ।
নিহত ওবাইদুর মহেশপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের হানেফ মন্ডলের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, গতরাতে মহেশপুর উপজেলার গোপালপর গ্রামে ৭ থেকে ৮ জন লোক অবৈধভাবে ভারতে যায়। রাত দেড়টার দিকে তারা বিএসএসএফের সামনে পড়ে। সেসময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তখন তারা পালিয়ে আবারো বাংলাদেশের ভিতরে চলে আসে। কিন্তু ওবাইদুর রহমানসহ দু’জন আসতে পারেনি। ওবাইদুর রহমানকে বিএসএফ ধরে ফেলে। বিএসএফ তাকে বস্তায় জড়িয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে গুলি করে হত্যা করে।
সকালে ভারতের অভ্যন্তরে মধুপুর নামক স্থানে একজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। ওই লাশটি ওবাইদুর রহমানের হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। লাশটি ভারতের বাগদা থানার পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। আরেকজনের খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ওমর আলী জানান, খবর পেয়ে তিনি ওবাইদুরের বাড়িতে যান। বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি করছেন। তিনি জানান, রাত ১টার দিকে ওপারে গোলগুলির শব্দ শুনেছে গ্রামবাসী। এতে ধারণা করা হচ্ছে ওবাইদুরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
যাদবপুর ইউনিয়নের মেম্বর বাবুল হোসেন জানান, তিনিও সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির সংবাদ শুনেছেন। এ ঘটনার পর থেকেই শোনা যাচ্ছে গোপালপুর গ্রামের ওবাইদুর নিখোঁজ রয়েছেন। ওপারে পড়ে থাকা লাশটি ওবাইদুরের হতে পারে।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা জানান, ভারতের অভ্যন্তরে একজনের লাশ পড়ে আছে বলে আমি বিজিবির মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
বিজিবির যাদবপুর বিওপির কমান্ডার হাবিলদার মফিজুল ইসলাম জানান, লোকমুখে তিনি এমন খবর পেয়ে সীমান্তে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তবে এখনো কোনো পরিবার তাদের দপ্তরে অভিযোগ করেনি।
মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম জানান, রবিবার সাকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ভারতের মধুপর বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ফোন করে তাকে জানিয়েছে, ভারতের সীমানার মধ্যে একটি লাশ পড়ে আছে। সেটা বাংলাদেশি না ভারতীয় বোঝা যাচ্ছে না। ভারতের বাগদা থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পলিয়ানপুর সীমান্তে গত ৮ এপ্রিল ওয়াসিম নামে এক বাংলাদেশি যুবককে হত্যা করে ইছামিত নদীতে ফেলে দেয় বিএসএফ। ১৯ দিন পার হলেও তার লাশ এখনো বিএসএফ ফেরৎ দেয়নি। নিহত ওয়াসিম বাঘাডাঙ্গা গ্রামের রমজান আলীর ছেলে।
ওয়াসিমের ভাই মেহেদী হাসান দাবি করেন, গত ৮ এপ্রিল ওয়াসিমসহ কয়েকজন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যায়। ভারত থেকে ফেরার সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের ধাওয়া করলে মহেশপুরের সলেমানপুর গ্রামের আব্দুস সোবহান, কাঞ্চনপুর গ্রামের রাজু, শাাবুদ্দিন, মানিক ও বাঘাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ ফিরে আসলেও তার ভাই বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে। তাকে নির্যাতনে হত্যার পর লাশ ইছামতি নদীতে ফেলে দেয়। বিজিবি লাশ ফেরৎ চাইলেও ভিসা ও আইনি জটিলতার কারণে ১৯ দিনেও লাশ ফেরৎ পায়নি পরিবার।
ভারতীয় পুলিশ বিজিবিকে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে লাশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ভারতে গিয়ে লাশ শনাক্ত করার সক্ষমতা ওয়াসিমের পরিবারের নেই বলে জানা গেছে।
অপহরণের সাতদিন পর মুক্তি পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী। তবে বুধবার (২৩ এপ্রিল) তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে একদিন পর বৃহস্পতিবার।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে। অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী বর্তমানে তাদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বার্তা সংস্থা ইউএনবি বলেন, ‘পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বিবৃতি দিয়েছে যে তারা তাদের সংগঠনের শিক্ষার্থীদের ফিরে পেয়েছে। আমরা ওই ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারে সাথে যোগাযোগ করেছি। তারাও নিজেদের পরিবার সদস্যদের ফিরে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাহলে এখন মোটামুটি ধরে ধরে নেওয়া যায় যে ওই ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পরিবারের হেফাজতে আছেন।’
বিজু উৎসব উদ্যাপন শেষে ফেরার পথে ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তাদের বহন করা অটোরিকশার চালককে অজ্ঞাতনামা স্থানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিশন চাকমা, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপহরণকারীরা চালককে ওই সময় ছেড়ে দিয়েছিল।
পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় শুরু থেকে ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছে জেএসএস–সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ইউপিডিএফের অন্যতম জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
শুরু হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের যাত্রা। এ সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এরপর শুরু হবে দুটি জেটির সমন্বয়ে একটি টার্মিনালের নির্মাণকাজ, যা ২০২৯ সালের দিকে শেষ হবে। এতে দেশের সমুদ্রবাণিজ্যের চেহারা পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক সংশ্লিষ্টদের অন্যতম একজন। তিনি বলেন, ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার ঢাকার হোটেল লো মেরিডিয়ানের বলরুমে জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকার সঙ্গে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
এখন জাপানি প্রতিষ্ঠানটি মাতারবাড়িতে দুটি জেটি নির্মাণের কাজ শুরু করবে। জেটি দুটির একটির দৈর্ঘ্য ৪৬০ মিটার। এটিতে শুধু কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হবে। অপরটি মাল্টিপারপাস জেটি, যেটির দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। নির্মিত জেটিতে ১৪ মিটার ড্রাফটের বিশালাকারের কন্টেইনার কিংবা কার্গো জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে বড় আকৃতির তিনটি, মাঝারি আকৃতির হলে চারটি মাদার ভ্যাসেল বার্থিং দেওয়া যাবে।
ইতোমধ্যে সাড়ে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চ্যানেলটিতে ভেড়ানো হয়েছে। জাহাজটিতে ৬৫ হাজার ২৫০ টন কয়লা ছিল। এ বন্দরে অনায়াসে এক লাখ টন পণ্যবোঝাই জাহাজ বার্থিং দেওয়া সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, জোয়ার-ভাটার বাধা না থাকায় এই চ্যানেলটিতে রাতে দিনে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা রয়েছে। গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে বাংলাদেশের যে সীমাবদ্ধতা ছিল মাতারবাড়ি তা পুরোপুরি কাটিয়ে দিতে যাচ্ছে। এক লাখ টন ধারণক্ষমতার কার্গো জাহাজ কিংবা ৮-১০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বহনকারী জাহাজ ভিড়ানো শুরু করা হলে পণ্য পরিবহন খরচ বহুলাংশে কমে যাবে।
ইতোমধ্যে একটি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে ২০২৯ সালের মধ্যে বছরে ১১ লাখ এবং ২০৪১ সালে ২৬ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। বন্দর সূত্র জানায়, মাতারবাড়িতে ১২শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে জাপানের আর্থিক সহায়তায়। জাইকা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছে।
১২শ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন ১০ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হয়। দুই মাসের প্রয়োজনীয় অন্তত ৬ লাখ টন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে মজুদ রাখতে হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় জ্বালানির জোগান দিতে বিদেশ থেকে প্রতি মাসে অন্তত তিন লাখ টন কয়লা আমদানি করতে হয়। এক একটি জাহাজে ৬০ হাজার টন কয়লা পরিবহন করলেও মাসে অন্তত ৫টি মাদার ভ্যাসেল এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যই হ্যান্ডলিং করতে হচ্ছে।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কয়লা আমদানির পথঘাট তৈরি করতে ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৫০ মিটার প্রস্থের ১৬ মিটার গভীর একটি চ্যানেল তৈরি করা হয়। এই চ্যানেল তৈরির পর জাইকার একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দরে এসে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর করা যায় মন্তব্য করে পুরো বিষয়টি উপস্থাপন করে। তারা জানান যে, কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যেই চ্যানেলটি তৈরি করা হয়েছে সেটিকে যদি পাশে ১০০ মিটার বাড়িয়ে ৩৫০ মিটার এবং গভীরতা ২ মিটার বাড়িয়ে ১৮ মিটার করা হয় তাহলে এটি গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তারা গভীর সমুদ্রবন্দরের বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হলে নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন নামে আলাদা একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
শুরুতে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প নামের প্রকল্পটি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু হয়। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বর্ধিত করে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়। গভীরতাও ১৮ মিটার (এমএসএল) করা হয়েছে। নির্মিত চ্যানেল ও হারবার নিরাপদ ও সুরক্ষিত করার জন্য সিপিজিসিবিএল কর্তৃক ১,৭৫৩ মিটার উত্তর ব্রেকওয়াটার, ৭১৩ মিটার দক্ষিণ ব্রেকওয়াটার এবং উত্তর দিকে ১৮০২.৮৫ মিটার রিভেটমেন্ট নির্মাণ করা হয়।
২০১৮ সাল থেকে এসব কার্যক্রম শুরু হয়। জাপানের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পের খরচ জোগান দিতে থাকে। প্রকল্পটির জন্য জাইকা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা প্রদান করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার এবং সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা মিলে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু প্রকল্প গ্রহণের পরে কিছু ক্ষেত্রে খরচ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে নির্মাণ সামগ্রির মূল্যবৃদ্ধি এবং আনুষঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ব্যয় সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ১৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। সময় রাখা হয় ২০২৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তীতে নানা প্রতিকুলতায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে থাকে। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে চ্যানেল ও জেটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করেছে সিপিজিসিবিএল। একই সঙ্গে ওই চ্যানেল ও জেটি নির্মাণে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে তার দায়ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর দেওয়া হয়।
এবার নতুন করে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে পুরো প্রকল্পটি সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. সাখাওয়াত হোসেন মাতারবাড়ি বন্দর পরিদর্শনের পর পুরো কার্যক্রমে গতিশীলতা আসে বলে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে যে, জাইকা প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করবে। প্রথম ধাপে ৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জেটি, টার্মিনাল এবং ব্যাকইয়ার্ড ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা হবে।
এই ব্যয়ের পুরো অর্থের যোগান দেবে জাপানি সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। জেটি এবং টার্মিনাল নির্মাণ করবে জাপানি প্রতিষ্ঠান পেন্টা ওশান এবং থোয়া করপোরেশন। প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে এই চুক্তি স¤পাদিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে আগামী ৪ বছরের মধ্যে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কন্টেনার জেটি এবং ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করবে। দুটি জেটির জন্য সমন্বিতভাবে নির্মাণ করা হবে একটি টার্মিনাল।
বন্দরের তথ্যমতে, মহেশখালীর ১ হাজার ৩০ একর জায়গায় বন্দরের অবকাঠামো এবং ব্যাকইয়ার্ড নানা ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা হবে। আগামী ২০২৯ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে কাজ শুরু করবে। এর মাধ্যমে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে নতুন গতিশীলতা তৈরি হবে। পাল্টে যাবে সমুদ্রবাণিজ্যের চেহারা।
জেলা সদরে আজ সুরমা নদীতে টাস্কফোর্সের অভিযানকালে বিভিন্ন ভারতীয় কসমেটিক্স সামগ্রী ও বিস্কুট জব্দ করেছে টাস্কফোর্স।
আজ মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে সুরমা নদীর সাহেব বাড়িঘাট এলাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মেহেদী হাসান হৃদয়-এর নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের অভিযানকালে এসব সামগ্রী জব্দ করা হয়।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সুরমা নদীর সাহেববাড়ি ঘাট এলাকায় টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে মালিকবিহীন একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ ভারতীয় বেটনোবিট সি, হোয়াইট টোন, পন্ডস ব্রাইট ক্রিম ও অন্যান্য কসমেটিক্স আইটেমসহ মোট ছয়হাজার ১৩০ পিস কসমেটিক্স সামগ্রী এবং চারহাজার ১৭০ প্যাকেট ভারতীয় বিস্কুট জব্দ করা হয়। জব্দকৃত সামগ্রির আনুমানিক মূল্য ৪০ লাখ ১২ হাজার ৯২০ টাকা।
অভিযানে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি’র সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম-সহ বিজিবি জওয়ানরা অংশ নেন।
সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জব্দকৃত ভারতীয় পণ্য সুনামগঞ্জ কাস্টমস কার্যালয়ে জমা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ২ লক্ষ ৬ হাজার ৫ শত ৪৭ জন মানুষের বসবাস। এটি জেলার সবচেয়ে ছোট একটি উপজেলা। জেলা সদর থেকে এই উপজেলার দুরুত্ব ১৭ কিলোমিটার। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করে সরকার। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানার অবহেলা আর উদাসীনতায় প্রায় ২ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গত রোববার সকাল ৯ টা। নওগাাঁর বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের উপচে পড়া ভীড়। হাতে ও পায়ে ব্যথা নিয়ে কয়েকজন রোগী চিৎকার করলেও পাচ্ছে না সেবা। কষ্টে কাটছে তাদের সময়। এসব বিষয় দেখভালের জন্য অফিসে তখনো আসেননি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানা। তার অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা ও দাপ্তরিক কাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। আর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলছেন দাপ্তরিক কাজে বাহিরে থাকতে হয় মাঝে মধ্যে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানা ১৪ মার্চ ২০২২ সালে এ হাসপাতালের দায়িত্ব নেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে তিনি অনুপস্থিত থাকেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে কর্মস্থলে ১০ দিন অনুপস্থিত আর ডিসেম্বর মাসে ১৮ দিন অনুপস্থিত, ৬দিন লেট এবং বাকী দিন গুলোতে সে সকাল দশটার পর আসেন এবং দুপুর দেড়টায় অফিস ত্যাগ করেন। তার দেরীতে আসা যেন নিত্য দিনের রুটিনে পরিনত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ বর্তমানে তিনি আরো দেরীতে আসেন। বেশ কয়েকদিন সরেজমিনে গিয়েও তার সত্যতা পাওয়া যায়। শুধু কর্মস্থলে অনপস্থিত নয়, সে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সরকারি গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আসছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি কোয়াটারে থাকার নিয়ম থাকলেও সে যোগদানের পর থেকেই নওগাঁ সদর থেকে অফিস করেন। আর এভাবেই তিনি সেবাগ্রহীতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দিনের পর দিন, এমন কি মাসের পর মাস ইচ্ছেমতো চাকুরি করে চলেছেন। যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয়রা বলছেন, গত এক বছর থেকে চালক অভাবে এ্যম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত এই উপজেলার অসহায় রোগীরা। ফলে চালক অভাবে নষ্ঠ হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সটি। এবং গত বছরের ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হাসপাতালে চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে। এবং হাসপাতালের রাজস্ব খাতের ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ ৪ মাসেও করেনি কোন মামলা। চলতি মাসের ৭ এপ্রিল আউটডোরে টিকিট কাউন্টারে রোগীর কাছ থেকে টিকিট বাবদ ৩ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৫ টকা। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার জানালেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত নেওয়া হয় নি কোন ব্যবস্থা।
সচেতন মহল বলছে, সরকারি বিধি অনুসারে একজন কর্মকর্তা তিন বছরের অধিক একই জায়গায় থাকতে পারবেন না। কিন্তু নিজ কাজে এতো উদাসিনতা আর অবহেলার পরও সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে স্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন ডাঃ কানিজ ফারহানা। তার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করেছি, পুলিশ তদন্ত করছে। রোগীর কাছ থেকে টিকিট বাবদ ৩ টাকার জায়গায় ৫ টাকা বেশী নেওয়ার বিষয়ে তাকে সাবধান করেছি।’
মাসে ১২ দিন অফিস করার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাপ্তরিক কাজের জন্য এমনটা মাঝে মাঝে হয়। ব্যক্তিগত কাজে অফিসের গাড়ী ব্যবহারের কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত এক বছর ধরে জ্বালানী বাবদ কোন বিল পাই নি। নিজ খরচে গাড়ী ব্যবহার করছি।’
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডাঃ মো আমিনুল ইসলাম এর কাছে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানার অবহেলা ও উদাসীনতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি এই জায়গায়। কোথায় কোথায় সমস্যা আপনি হোয়াটসঅ্যাপে লিখে দিন। আমি দেখছি। বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গিয়ে পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার একই গ্রামের পাঁচ তরুণসহ ছয়জন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারও কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজরা হলেন— জকিগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫)।
তারা সবাই উপজেলার ৪ নম্বর খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহার মহল গ্রামের বাসিন্দা।
নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে সিলেট থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তারা। পরদিন ১৬ এপ্রিল (বুধবার) সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পৌঁছা পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এরপর থেকে তাদের সকলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে পুলিশ বলছে, মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করে ছয়জনের অবস্থান কক্সবাজার দেখাচ্ছে। পুলিশ এনিয়ে কাজ করছে।
নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সফর উদ্দিন।
নিখোঁজ এমাদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই আব্দুল বাছিত দুলাল বলেন, ‘কক্সবাজার পৌঁছার পর জানিয়েছিল পৌঁছেছে। এরপর থেকে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন কক্সবাজারে যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে থানায় জিডি করবেন। জকিগঞ্জ থানায় অভিযোগ নিচ্ছে না।’
নিখোঁজ রশিদ আহমদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, ‘৪ থেকে ৫ বছর ধরে রশিদ চট্টগ্রামে কাজ করে। বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল। কক্সবাজার এই প্রথম গিয়েছে। ওইখানে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতো। ওইদিনও ওই ঠিকাদারের কাছে তারা যায়। এরপর থেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। যদি তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকতো বা কেউ জিম্মি করত, তাহলে তো টাকা পয়সা চাইতো, এরকম কিছুই না। আমাদের ধারণা তাদের ওইখানে যে লোক নিয়েছে, ওই লোকই কিছু করেছে।’
তবে ঠিকাদারের নাম ঠিকানা কোনো কিছু জানাতে পারেননি নিখোঁজ রশিদের ভাই বাছিত।
নিখোঁজ খালেদ হাসানের বাবা ও ইউপি সদস্য সফর উদ্দিন বলেন, ‘তারা প্রায় সময়ে কাজের জন্য চট্টগ্রাম ৫ থেকে ৬ মাস থাকে। ঈদে বা ওয়াজের সময় বাড়িতে আসে। আবার সেখানে গিয়ে কাজ করত। মঙ্গলবারের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই। গতকাল সারারাত থানায় ছিলাম।
তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারের মোবাইল বন্ধ। তবে ঠিকাদারের নাম রশিদ ও তার সঙ্গে একজনের নাম বাবুল বলে জানিয়েছেন থানার ওসি। যে জায়গা থেকে তারা নিখোঁজ হয়েছেন সেখানে অভিযোগ দেওয়ার জন্য পুলিশ জানিয়েছে। আমাদের এলাকার আরও লোকজন সেখানে রয়েছেন তারাও তাদের মতো করে খোঁজাখুঁজি করছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘নিখোঁজ ছয়জনই দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে কাজ করেন। এখন হঠাৎ করে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছেন না। আমরা গত ১৮ এপ্রিল বিষয়টি অবগত হয়েছি। এরপর থেকে কাজ করছি। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান কক্সবাজার দেখাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।’
মন্তব্য