× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Tears welled up in Niazis eyes as he secretly surrendered
google_news print-icon

নিয়াজীর চোখে জল, আকুতি ছিল গোপন আত্মসমর্পণের

নিয়াজীর-চোখে-জল-আকুতি-ছিল-গোপন-আত্মসমর্পণের
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের আগে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। ছবি: সংগৃহীত
নিয়াজীর সঙ্গে আত্মসমর্পণ নিয়ে আলোচনা করা ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা জেনারেল জ্যাকব লেখেন, আত্মসমর্পণের শর্ত পড়ে নিয়াজীর চোখ থেকে দরদর করে পানি পড়তে থাকে, সেই সঙ্গে ঘরে নেমে আসে পিনপতন নিস্তব্ধতা। উপস্থিত অন্যদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। রাও ফরমান আলী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর আত্মসমর্পণে রাজি ছিলেন না। তিনি কেবল ভারতীয় বাহিনীর হাতে অস্ত্র সমর্পণ করতে চান।

মুক্তিযুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে, সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যুদ্ধ বিরতি করা যায় কি না।

৯ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এম এ মালিক অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতির সুপারিশসহ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে বার্তা পাঠান। ইয়াহিয়া খান বিষয়টি ঠেলে দেন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কাছে। বলেন, এ ব্যাপারে গভর্নরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণে যিনি রাজি করিয়েছিলেন, তিনি হলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব।

জ্যাকবের ‘সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা’ বইয়ে উল্লেখ আছে পুরো ঘটনাপ্রবাহ।

জ্যাকব লেখেন, সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে গভর্নরের এই বৈঠকের পরিকল্পনা তারা জেনে গিয়েছিলেন। আর ১৪ ডিসেম্বরের এই বৈঠক হামলা করে তারা ভেস্তে দেন। এই হামলা করলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব অংশের মনোবল ভেঙে পড়বে বলে তাদের ধারণা ছিল। আর হয়েছেও তা।

তখনকার পুরোনো গভর্নর হাউসে জ্যাকবের ভাষায়- ‘ছেলের হাতের মোয়ার মতো’ অনায়াস এই হামলার পর পরিস্থিতি একেবারেই বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

পাকিস্তানের চেষ্টা ছিল যুদ্ধবিরতির

১৩-১৪ ডিসেম্বরের রাতে নিয়াজী পাকিস্তানের কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল হামিদের সঙ্গে কথা বলে তাকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার অনুরোধ করেন। ১৪ ডিসেম্বর নিয়াজীর কাছে এক বার্তা পঠিয়ে ইয়াহিয়া অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

নিয়াজীকে পাঠানো ইয়াহিয়ার বার্তাটি ছিল: ‘প্রবল প্রতিকূলতার মুখেও আপনারা বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন। জাতি আপনাদের নিয়ে গর্বিত এবং সারা পৃথিবী প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানকল্পে মানুষের পক্ষে সম্ভব এমন সব পদক্ষেপই আমি গ্রহণ করেছি। বর্তমানে এমন একপর্যায়ে আপনারা পৌঁছেছেন যে, এরপরে প্রতিরোধের যেকোনো প্রচেষ্টাই হবে অমানুষিক এবং সেটা কার্যকরীও হবে না ; বরং তা আরও প্রাণহানি ও ধ্বংসেরই কারণ হবে। এই অবস্থায় আপনাদের উচিত হবে যুদ্ধ বন্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্য এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত সহযোগীর জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সমরাভিযান বন্ধ করে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর এবং অন্যান্য জনসাধারণ যারা দুষ্কৃতিকারীদের আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে, তাদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভারতকে অনুরোধ করার জন্য আমি ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে তৎপরতা চালিয়েছি।’

নিয়াজীর চোখে জল, আকুতি ছিল গোপন আত্মসমর্পণের
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছেন জেনারেল নিয়াজী

এই বার্তাটি ভারতীয়রা পেয়ে যান বিকেল ৩টায়। এরপর নিয়াজী ও রাও ফরমান আলি ইউনাইটেড স্টেটস কনসাল জেনারেল হার্বার্ট স্পিভ্যাকের সঙ্গে দেখা করতে যান। স্পিভ্যাককে নিয়াজী যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। জবাবে স্পিভ্যাক বলেন, বিষয়টি তার এখতিয়ারের বাইরে। তার পরও তিনি একটি বার্তা পাঠাবেন।

রাও ফরমান আলি বার্তাটির খসড়া তৈরি করে স্পিভ্যাককে দেন। এতে বলা হয়:

ক্রমবর্ধমান প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংসের যবনিকাপাতের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত সম্মানজনক শর্তসাপেক্ষে আমরা যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ইচ্ছুক:

ক . যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানে যাবতীয় সামরিক অভিযান বন্ধ হবে।

খ . পূর্ব পাকিস্তানের শাসনভার জাতিসংঘের গৃহীত ব্যবস্থা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তরিত হবে।

গ . যে বিষয়গুলোয় জাতিসংঘ নিশ্চয়তা দেবে, সেগুলো হলো:

১. পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যেতে পারেনি, সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর এমন সকল সদস্যের নিরাপত্তা।

২. সকল পশ্চিম পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক ও সরকারি চাকরিজীবী, যারা পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করতে পারেনি, তাদের নিরাপত্তা।

৩. ১৯৪৭ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত অস্থানীয় জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিরাপত্তা।

৪. মার্চ ১৯৭১ থেকে যারা পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেছেন অথবা সরকারকে সহায়তা করেছেন এবং পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার নিশ্চয়তা।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে (পরে শেরাটন) গভর্নরের কাছে ফরমান আলি এই বার্তার একটি অনুলিপি পাঠান। বার্তাটি ভারতে না পাঠালেও ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়। ১৪ ডিসেম্বর আনুমানিক বিকেল ৫টায় কলকাতায় কনস্যুলার অফিসের একজন কূটনীতিক স্পিভ্যাকের সঙ্গে নিয়াজীর ভাষায় যুদ্ধবিরতি অথবা আত্মসমর্পণের প্রস্তাবনা নিয়ে তার আলোচনার কথা জেনারেল জ্যাকবকে জানান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি কলকাতায় জাতিসংঘের কনসাল জেনারেল হার্বার্ট গর্ডনকে ফোন করেন। কিন্তু তিনি কিছু বলতে পারেননি।

জ্যাকব তার বইয়ে লেখেন, ‘জেক, সত্যি বলছি, নিয়াজির অনুরোধ সম্পর্কে আমি আসলেই কিছু জানি না।’

নিয়াজীর চোখে জল, আকুতি ছিল গোপন আত্মসমর্পণের

এরপর জ্যাকব ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল শ্যাম মানেক শকে ফোন করে তাকে দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেন।

জেনারেল মানেক শ আলোচনা করে তাকে জানান, স্পিভ্যাককে করা কোনো অনুরোধ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

জেনারেল মানেক শ বার্তাটি পান ১৫ ডিসেম্বর। তিনি নিশ্চয়তা দেন, পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে পাকিস্তানি পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডকে ফোর্ট উইলিয়ামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

পাকিস্তানি কমান্ডার-ইন-চিফ এই শর্ত গ্রহণ করার জন্য নিয়াজীকে সংকেত দেন। ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে পরদিন বেলা ৯টা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির জন্য উভয়পক্ষ রাজি হয়। পরে এই মেয়াদ বেলা ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

আত্মসমর্পণ তবে নাম যুদ্ধবিরতি রাখার চেষ্টা

জ্যাকব লেখেন, ‘যতটা বোঝা যায়, ইয়াহিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিলেন, যেটা ছিল আত্মসমর্পণেরই নামান্তর।

পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা হাসান জহির তার ‘দ্য সেপারেশন অফ ইস্ট পাকিস্তান বইতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, পাকিস্তানিরা 'আত্মসমর্পণ' শব্দটি পরিহারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।

ঢাকায় আত্মসমর্পণ নিয়ে আলোচনার সময় নিয়াজী আশা করেছিলেন, স্পিভ্যাককে দেয়া তাঁর প্রস্তাবনা অনুযায়ী দলিল তৈরি করা হবে। কিন্তু সেটি না হওয়ায় ঢাকায় আত্মসমর্পণের দলিল দেখার পরে সেটা গ্রহণ করতে নিয়াজীর অনীহা দেখা যায়।

আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি

১৬ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ৯টায় জ্যাকবকে ফোন করেন জেনারেল মানেক শ। তিনি অবিলম্বে ঢাকায় গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের যাবতীয় ব্যবস্থা করতে বলেন।

সুনির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়ে কী কাঠামোতে আলোচনা করবেন, এই প্রশ্নের জবাব জ্যাকবকে দেননি মানেক শ। কেবল ‘বেশি ঝামেলা বাধাতে’ নিষেধ করেন। বললেন যে, কী করতে হবে, এটা তিনি ভালোই বোঝেন।

এর মধ্যে নিয়াজী রেডিও বার্তায় জ্যাকবকে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানান। তবে জ্যাকব জানিয়ে দেন তিনি যেতে তেমন আগ্রহী নন।

এরপর জ্যাকব ব্রিফ করেন বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিত সিং অরোরাকে। তিনি প্রস্তুতি নেন ঢাকায় যাওয়ার। সঙ্গে নেন কর্নেল ইন্টেলিজেন্স খারা ও অ্যাডভান্স হেডকোয়ার্টার্সের এয়ার কমোডর পুরুষোত্তমকে।

এর আগে আত্মসমর্পণের দলিলের যে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য দিল্লিতে পাঠানো হয়, সেটার একটা কপি সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসেন জ্যাকব।

নিয়াজীর চোখে জল, আকুতি ছিল গোপন আত্মসমর্পণের

জ্যাকব ঢাকায় আসেন যশোর হয়ে। সে সময় মুক্তাঞ্চল এই জেলায় হেলিকপটার পাল্টান তিনি। তখন সেনা সদর দপ্তর থেকে তাকে একটি বার্তা পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, সরকার তাকে নিয়াজীর লাঞ্চের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে।

ঢাকার এয়ারফিল্ডের প্রবেশমুখে এসে আমরা জ্যাকব একটি হেলিকপ্টারকে চলে যেতে দেখেন। টারম্যাকে তখন ১৮ জন পাকিস্তানি সৈন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিমানবিধ্বংসী একটি কামান হেলিকপ্টারের দিকে নিশানা করা ছিল।

এর মধ্যেই হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। পাকিস্তানি পূর্বাঞ্চলীয় কম্যান্ডের চিফ অফ স্টাফ ব্রিগেডিয়ার বকর সিদ্দিকী তখন দেখা করেন জ্যাকবের সঙ্গে। ঢাকায় জাতিসংঘ প্রতিনিধিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় তার অফিস ব্যবহারের প্রস্তাব দেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি। কিন্তু জ্যাকব তা চাননি। তিনি পাকিস্তানি সেনা-কর্মকর্তাদের সঙ্গে হালকা ছলে আলোচনা করতে করতে সদর দপ্তরে যান।

প্রতিশোধের স্পৃহায় মুক্তিযোদ্ধারা

জ্যাকব লেখেন, পাকিস্তানি সদর দপ্তরে যাওয়ার পথে মুক্তিবাহিনী তাদের থামায়। তারা খুবই উত্তেজিত মেজাজে ছিল। তাদের সঙ্গে ছিলেন বিদেশি সংবাদ সংস্থার কয়েকজন প্রতিনিধি।

জ্যাকব তখন তাদের জানান, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে এবং রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করবে।

এই খবর শুনে মুক্তিযোদ্ধারা খুবই উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। বলতে থাকে, পাকিস্তানি কমান্ডের সদর দপ্তর দখল করে নিয়াজী ও তার সঙ্গীদের ‘পাওনা’ কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দিতে চায়।

এটা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে জ্যাকবের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেন, বিনা রক্তপাতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে এবং এই সরকারের সদস্যরা ক্ষমতা গ্রহণের জন্য শিগ্‌গির ঢাকায় এসে পৌঁছবেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটে বা কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা যাতে না নেয়া হয়, সেটি মুক্তিবাহিনীকে নিশ্চিত করতে বলেন জ্যাকব। বলেন, যুদ্ধবিরতি যেহেতু কার্যকর হয়েছে এবং পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছে, জেনেভা কনভেনশনের প্রতি সম্মান দেখাতেই হবে।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা রাজি ছিল না। তারা স্লোগান দিতে থাকে এবং হুমকি দেয় যে, তারা কারও তোয়াক্কা করে না এবং তারা তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করবে।

তখন জ্যাকব তাদের বলেন, জেনেভা কনভেনশনের ধারা যেন যথাযথভাবে অনুসৃত হয়, সেটি তারা নিশ্চিত করবেন।

এর পর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের যেতে দেয় এবং বেলা ১টায় জ্যাকবরা সেনা সদর দপ্তরে পৌঁছেন।

নিয়াজীর সঙ্গে কী কথা

নিয়াজী তার অফিসে স্বাগত জানান জ্যাকবকে। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিষয়ের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি, মেজর জেনারেল জামশেদ, নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল শরিফ, বিমানবাহিনীর এয়ার কমোডর ইমাম ও ব্রিগেডিয়ার বকর সিদ্দিকী।

জ্যাকব তখন নিয়াজীকে বলেন, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় তখনও সংঘর্ষ চলছে। তার উচিত লড়াই বন্ধের জন্য তার বাহিনীর প্রতি অর্ডার ইস্যু করা।

নিয়াজী যখন অর্ডার ইস্যু করছেন, তখন জ্যাকব তার কাজে মন দেন। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত সৈন্য ঢাকায় এনে আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করার ব্যবস্থা করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঘরোয়া পরিবেশে আত্মসর্পণের প্রস্তাব করলেও জ্যাকব চিন্তা করেন উল্টোটা।

তিনি তার বইয়ে লেখেন, ‘আমি মনে করি, এতদিন যারা নির্যাতিত নিপীড়িত হয়েছে, সেই জনগণের সামনে প্রকাশ্যেই এই আত্মসমর্পণ হওয়া উচিত।’

কিন্তু এর জন্য পর্যাপ্ত সময়ের অভাব ছিল। দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত আলোচনা, সব প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।

নিয়াজীর চোখে জল, আকুতি ছিল গোপন আত্মসমর্পণের
এই দলিলেই সই করেন জেনারেল নিয়াজী

জ্যাকব নিয়াজীকে তাদের প্যারাশুট রেজিমেন্ট ও একটি পাকিস্তানি ইউনিট দিয়ে মেজর জেনারেল গন্দর্ভ সিং নাগরাকে গার্ড অফ অনারের আয়োজন করতে বলেন। সেই সঙ্গে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করতে একটি টেবিল ও দুটি চেয়ারের ব্যবস্থা করতে বলেন।

এর মধ্যে ভারতীয় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্য কর্মকর্তারা ঢাকায় আসতে থাকেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের অভ্যর্থনা জানাতে জ্যাকব আবার বিমানবন্দরে যান। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য বিমানবন্দরে একটি দল পাঠানোর নির্দেশও দেন।

শর্ত শুনে নিয়াজীর চোখ ছল ছল

এরপর জ্যাকব আবার নিয়াজীর অফিসে ফিরে গেলে কর্নেল খারা আত্মসমর্পণের শর্তগুলো পড়ে শোনান।

জ্যাকব লেখেন, ‘নিয়াজীর চোখ থেকে দরদর করে পানি পড়তে থাকে, সেই সঙ্গে ঘরে নেমে আসে পিনপতন নিস্তব্ধতা। উপস্থিত অন্যদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়।’

পাকিস্তানিদের আশা ছিল, ১৪ ডিসেম্বরে স্পিভ্যাককে দেয়া তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী এই দলিল হবে, যেটাতে জাতিসংঘের দেয়া ব্যবস্থা অনুযায়ী যুদ্ধবিরতি ও প্রত্যাবর্তন কার্যকর করা হবে।

রাও ফরমান আলী সে সময় ভারতীয় ও বাংলাদেশের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানান।

জ্যাকব জানান, তারা যে আত্মসমর্পণের দলিলটি তৈরি করেন, সেটি যেন অপমানজনক না হয়, সেটি নিশ্চিতের চেষ্টা করেছেন।

তিনি লেখেন, ‘ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, অনমনীয় নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ পরবর্তীতে সুফল বয়ে আনেনি। পরাজিত প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা না করাটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতীতে যা কিছুই ঘটুক না কেন, কিছুটা ছাড় তাদের অবশ্যই দেয়া উচিত।’

নিয়াজীকে জ্যাকব বলেন, সৈনিকের প্রাপ্য সম্মান তারা পাবেন এবং জেনেভা কনভেনশন কঠোরভাবে পালন করা হবে। সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দেন তারা।

তিনি লেখেন, ‘এ ধরনের নিশ্চয়তা ও ধারা ইতিহাসের অন্য কোনো আত্মসমর্পণের দলিলে নেই।’

এরপর নিয়াজী দলিলটি অন্যদের পড়ার জন্য এগিয়ে দেন। তারা এর কিছু পরিবর্তন দাবি করেন।

জ্যাকব তাদের বলেন, এর শর্তগুলো যথেষ্ট উদার।

নিয়াজীর চোখে জল, আকুতি ছিল গোপন আত্মসমর্পণের

এরপর জ্যাকব ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে আবার কথা হয় নিয়াজীর সঙ্গে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, দলিলটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে কি না। কোনো মন্তব্য না করে তিনি কাগজটা ফেরত দেন। সেটাকেই নিয়াজীর সম্মতি হিসেবে ধরে নেন জ্যাকব।

এরপর আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া নিয়ে নিয়াজির সঙ্গে আলোচনা হয়। নিয়াজী তখনও তার অফিসেই আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তাব দেন। কিন্তু রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা জানিয়ে দেন জ্যাকব।

‘এটা ঠিক নয়’ বলে নিয়াজী প্রতিবাদ করেন।

তখন জ্যাকব তাকে বলেন, ভারতীয় ও পাকিস্তানি ডিটাচমেন্ট লেফটন্যান্ট জেনারেল অরোরাকে গার্ড অফ অনার দেবে। এর পর অরোরা ও নিয়াজী দলিলে সই করবেন। সবশেষে নিয়াজী তার তরবারি সমর্পণ করবেন।

নিয়াজী জানালেন, তার কোনো তরবারি নেই।

জ্যাকব বলেন, সে ক্ষেত্রে তিনি তার পিস্তল সমর্পণ করবেন।

নিয়াজী অসন্তুষ্ট হলেও নীরব ছিলেন।

এরপরে নিয়াজী জিজ্ঞেস করেন, তার অফিসার ও সৈনিকেরা তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সঙ্গে রাখতে পারবে কি না। এই অনুরোধ বিবেচনার আশ্বাস দেন জ্যাকব।

এরপর আত্মসমর্পণের পর তার লোকজনের নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা হবে- সে প্রশ্ন রাখেন নিয়াজী। জ্যাকব তাকে আশ্বস্ত করেন যে, তাদের সৈন্যরা শহরে ঢুকতে শুরু করেছে এবং ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি তারা সঞ্চার করতে পারবেন।

এরপর নিয়াজী বলেন, মুক্তিবাহিনীর হাতে পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র আছে, সেহেতু পর্যাপ্ত ভারতীয় সৈন্য এসে না পৌঁছা পর্যন্ত পাকিস্তানিরা নিজেদের কাছে অস্ত্র রাখতে পারবে কি না।

জ্যাকব বলেন, এটা তারা পারবেন। এ কারণে আত্মসমর্পণের পরেও পাকিস্তানিদের নিরস্ত্র করা হয়নি এবং এ সিদ্ধান্ত সমালোচিতও হয়।

শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি রেডিও দিয়েই জ্যাকব তাদের সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডকে জানান, আত্মসমর্পণের সমস্ত ব্যবস্থা হয়েছে। সবাই যেন ঢাকায় চলে আসে।

নিয়াজীর নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা

জ্যাকব মধ্যাহ্নভোজ সারেন নিয়াজীর সঙ্গে। এরপর বিকেল ৩টায় তাকেও বিমানবন্দরে যেতে বলেন। সামনে পাইলট- জিপ নিয়ে নিয়াজীর গাড়িতে করেই সেখানে যান।

কিন্তু সেখানে সমস্যার সূত্রপাত হয়। মুক্তিবাহিনী তাদের এয়ারফিল্ডে যেতে বাধা দেয়। তাদের কেউ কেউ গাড়ির বনেটের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

তখন গাড়িতে শিখ সেনা কর্মকর্তা খারা থাকায় সুবিধা হয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বলেন যে, নিয়াজী ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি এবং তাদের বাধা দেয়া উচিত হচ্ছে না।

তখন চার দিকে হালকা অস্ত্রের গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

জ্যাকব লেখেন, ‘এয়ারফিল্ডে নিয়াজীর নিরাপত্তা নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম। পাইলট-জিপে পাকিস্তানি মিলিটারি পুলিশের হাতে ছিল রিভলভার। কিন্তু দৃষ্টিসীমার মধ্যে কোনো ভারতীয় সৈন্যের দেখা নেই।

খারাকে তখন জ্যাকব বলেন যে, তা উচিত হবে কিছু ভারতীয় সৈন্য, সম্ভব হলে কিছু ট্যাংক সংগ্রহ করা।

কিছুক্ষণ পর এক ট্রাক মুক্তিবাহিনী রানওয়ের অন্য পাশে এসে থামে। এদের মধ্যে কাঁধে মেজর জেনারেল র‌্যাংকের ব্যাজ লাগিয়ে কাদের সিদ্দিকী এগিয়ে যান।

জ্যাকব লেখেন, “এই লোকটিই 'বাঘা' সিদ্দিকী, যাঁকে আমি তাঁর সম্পর্কে - শোনা বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে চিনতে পারি।”

বিপদের গন্ধ পেয়ে নিয়াজীকে আড়াল করার জন্য প্যারাট্রুপার দুজনকে নির্দেশ দিয়ে কাদের সিদ্দিকীর দিকে এগিয়ে যান জ্যাকব। তিনি আশঙ্কা করছিলেন কাদের সিদ্দিকী হয়তো নিয়াজীকে গুলি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আত্মসমর্পণের জন্য নিয়াজীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছিল অবশ্যম্ভাবী।

জ্যাকব যখন কাদের সিদ্দিকীকে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে বলেন, সে সময় তিনি তা মানতে চাননি। কিন্তু পরে চলে যান। এর সামান্য পরে একটি ট্যাংক নিয়ে হাজির হন খারা।

বিকেল সাড়ে চারটায় ভারতীয় ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা পাঁচটি এমআই ফোর ও চারটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় পৌঁছেন। সেই দলে ছিলেন মুক্তিবাহিনীর উপ প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারও।

নিয়াজী ও জ্যাকব তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান।

এরপর সেখান থেকেই সবাই গাড়িতে করে রেসকোর্স ময়দানের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দিকে যাত্রা করেন। সেখানে গার্ড অফ অনার পরিদর্শনের পর জেনারেল অরোরা ও নিয়াজী টেবিলের দিকে এগিয়ে যান।

আত্মসমর্পণের সময় নিয়াজীর চোখে জল

অরোরার নিয়ে আসা আত্মসমর্পণের দলিল তখন টেবিলের ওপরে রাখা হয়। নিয়াজী সেটা আরেক বার পড়ে সই করেন। অরোরাও সই করেন।

এরপর নিয়াজি তার কাঁধ থেকে সেনা অধিনায়কদের সম্মানসূচক ব্যাজ খুলে ফেলেন এবং ল্যানিয়ার্ড (ছোট দড়িবিশেষ) সহ ৩৮ রিভলবার অরোরার হাতে তুলে দেন করেন।

তখন নিয়াজীর চোখে জল দেখা যাচ্ছিল বলে উল্লেখ করেন জ্যাকব।

তিনি লিখেন, ‘সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত জনতা তখন নিয়াজী ও পাকিস্তানবিরোধী স্লোগান ও গালি দিতে থাকে।’

রেসকোর্সের আশেপাশে তেমন কোনো সৈন্য না থাকায় নিয়াজীর নিরাপত্তা আবার শঙ্কিত হয়ে পড়েন জ্যাকব। তখন কয়েকজন সিনিয়র অফিসার মিলে নিয়াজীর জন্য একটি বেষ্টনী রচনা করে তাঁকে পাহারা দিয়ে একটি ভারতীয় জিপের কাছে নিয়ে যান।

সেখানে পাকিস্তানিদের নিরস্ত্র করাসহ নানা বিষয়ে ব্রিফ করার পর আগরতলায় যাওয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দরে ফিরে যান জ্যাকব।

সে সময় পাকিস্তান নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল শরিফ অ্যাডমিরাল কৃষ্ণণকে বিদায় জানাতে আসেন। শরিফকে কৃষ্ণণ পিস্তল সমর্পণ করতে বললে তিনি হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করে কৃষ্ণণের হাতে তুলে দেন। এর জ্যাকবদের আমাদের হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ে।

সেই অস্ত্রটি নিয়াজীর ছিল না

আত্মসমর্পণের কয়েক দিন পর নিয়াজীর সমর্পণ করা রিভলবারটি পরীক্ষা করেন জ্যাকব। তখন বুঝতে পারেন, অস্ত্রটি নিয়াজীর নয়। এটা একটা সাধারণ আর্মি ইস্যু পয়েন্ট থ্রি এইট রিভলবার। ময়লা দিয়ে এর ব্যারেল বন্ধ হয়ে আছে এবং মনে হয়, বেশ কিছুদিন এটা পরিষ্কারও করা হয়নি। ল্যানিয়ার্ডটিও নোংরা, ঘর্ষণের ফলে কয়েকটি জায়গা ছিঁড়ে গেছে।

জ্যাকব তার বইয়ে লিখেন, ‘কোনো কমান্ডিং জেনারেলের ব্যক্তিগত অস্ত্র হতে পারে না। বরং মনে হয়, নিয়াজী এটা তাঁর কোনো মিলিটারি পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অস্ত্র হিসেবে সমর্পণ করেছেন।’

তিনি লিখেন, ‘আমার মনে হলো, নিয়াজির ভাগ্যে যা ঘটেছে, সেটা তাঁর প্রাপ্য ছিল।’

আরও পড়ুন:
আত্মসমর্পণের গ্লানি ৩৩ বছরেও ভুলতে পারেননি নিয়াজী

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
I will not be in any position in the post government government in February
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে ড. ইউনূসের নিবন্ধ

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, পরবর্তী সরকারের কোনো পদে আমি থাকব না

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, পরবর্তী সরকারের কোনো পদে আমি থাকব না

যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে নিবন্ধ লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে গত বছর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে প্রফেসর ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আর নির্বাচন শেষেই তিনি রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হবে সেটির কোনো পদেই থাকবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।

ড. ইউনূস লিখেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করেছি : জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে। এরপর যে সরকার আসবে সেখানে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করা কোনো পদে আমি থাকব না।’

তিনি বলেছেন, ‘আমার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনাগুলো বলতে পারবে। আমাদের মিশন হলো, সব বৈধ ভোটার যেন তাদের ভোট দিতে পারে, যারা প্রবাসে আছেন তারাও। এটি একটি বড় কাজ। কিন্তু আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

প্রফেসর ইউনূসের নিবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

এক বছর আগে, এই মাসেই বাংলাদেশের হাজার হাজার সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থী, যাদের পেছনে ছিল সমাজের সব স্তরের অগণিত মানুষের সমর্থন, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল, তার মাধ্যমেই তারা একজন স্বৈরাচারকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।

এরপর যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ছাত্রনেতারা আমাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ জানায়। এই সরকারের দায়িত্ব ছিল দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরি করা। শুরুতে আমি রাজি হইনি। কিন্তু যখন তারা জোর করল, তখন আমি তরুণদের জীবন উৎস্বর্গের কথা ভাবলাম, আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, সুশীল সমাজের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি উপদেষ্টা পরিষেদের সঙ্গে আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করি।

এই গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা থেকে। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জেড’ বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল। এই বিপ্লব তরুণদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে, যা দেখায় কীভাবে তারা মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং বৈষম্য—মোকাবিলার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।

আমরা ভাগ্যবান যে তারা ‘তাদের পালা আসার জন্য’ অপেক্ষা করেনি। যখন সভ্যতা অনেক দিক থেকে ভুল পথে চালিত হচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।

স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে আমাদের উত্তরণের একটি স্পষ্ট প্রমাণ ছিল যখন দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী বাংলাদেশকে তাদের ‘২০২৪ সালের সেরা দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা তখন অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং চুরি যাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধারে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমরা তখনো বুঝতে পারিনি বিশ্ব আমাদের এই অগ্রগতিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ডেসারেট নিউজ আমাদের এই যাত্রার চমৎকার কাভারেজ দিয়েছে, যা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি।

আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল গণঅভ্যুত্থানে যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল এবং যারা গুরুতর আহত হয়েছিল—সেই হাজার হাজার পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। এরসঙ্গে আমরা বিগত সরকার ও তার সহযোগীদের লুট করা অর্থ উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে সাবেক স্বৈরাচারী সরকার বছরে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য যুদ্ধ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যখন আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন অব্যবস্থার মাত্রা দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছিল না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল। অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছিল।

সরকারি কর্মচারীরা, যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য না দেখানোর কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তারা ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।

ধীরে ধীরে আমরা পুনর্গঠন শুরু করেছি। যেসব রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারের প্রতিরোধ করেছিল, তাদের পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও নতুন ধারণা, শক্তি এবং কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সশস্ত্র বাহিনী, যারা ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা চালাতে দেয়নি, তারা তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।

আমি এটি স্পষ্ট করে দিয়েছি: আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি এরপরের সরকারের কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকব না।

আমাদের প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকসহ সব যোগ্য নাগরিককে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া একটি বিশাল কাজ। কিন্তু আমরা এটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন এনেছি। যেন আমাদের প্রতিবেশী এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক জোরদার করা যায়।

বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির একটি মূল কেন্দ্র হতে পারে এবং হওয়া উচিতও। আমরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ।

রুবিওরে সঙ্গে সম্প্রতি আমার একটি ফলপ্রসূ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, যা আমাদের উভয় দেশের বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক ছিল।

যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘও আমাদের সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। আমরা এই পথে একা নই।

নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের নিয়ে একটি ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছি। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনা। যা এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে যাতে বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরাচারী শাসনে ফিরে না যায়।

বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত এমন একটি দেশে পরিণত হয় যেখানে দেশের সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। তবে তা হবে লাখ লাখ বাংলাদেশির দৃঢ়তা, কল্পনা এবং সাহসের ফল।

এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে যারা আছেন তাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। তারাই আমাদের সর্বোত্তম আশা—এবং সম্ভবত আমাদের শেষ আশা।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Authorization of Visa Exemption Agreement with Pakistan

পাকিস্তানের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি অনুমোদন

পাকিস্তানের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি অনুমোদন

সরকারি এবং কূটনীতিক পাসপোর্টে পারস্পারিক ভিসা অব্যাহতি সুবিধা পেতে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।

প্রেস সচিব বলেন, ‘পাকিস্তানের মতো এ রকম চুক্তি আমরা আরও ৩১টি দেশের সঙ্গে করেছি। এই চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য করা হবে । এর ফলে যারা অফিসিয়াল পাসপোর্ট এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তারা এখন বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফর করতে পারবেন। একইভাবে পাকিস্তানের যারা অফিসিয়াল এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন— তারাও বাংলাদেশে সফর করতে পারবেন কোন ভিসা ছাড়াই। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।’

উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Authorization of the draft of the Revenue Policy and Revenue Management Amendment Ordinance

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন

উপদেষ্টা পরিষদের ৩৯তম বৈঠকে আজ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।

ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীগণের পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।

এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Ministry of Social Welfare wants to work through the coordination team to speed up the pace the new secretary of the ministry

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সেবা দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সকলের সহযোগিতা চাই। এজন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
নতুন সচিব বলেন,
আমি এই মন্ত্রণালয়ের সুনাম কাজের মাধ্যমে, আইন কানুন মেনে মানুষের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, সচিবের রুম আপনাদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এবং ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন, আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমিও আপনাদের থেকে শিখতে চাই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Ministry of Youth and Sports is going to organize the National Policy Competition 2021

জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ আয়োজন করতে যাচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ আয়োজন করতে যাচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের নয়টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫। জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য "বাংলাদেশ ২.০: তারুণ্যের নেতৃত্বে আগামীর পথে " নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ধারণাপত্র জমা দিয়ে শুরু করবে এবং নির্বাচিত দলসমূহ পূর্ণাঙ্গ নীতিপত্র প্রস্তুত ও উপস্থাপনা করবে। বিজয়ীরা পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি তাদের নীতি প্রস্তাবগুলো সরকারিভাবে পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

নীতি প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল-

১. রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

২. জুলাই পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জাতীয় স্বার্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন

৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: শিক্ষা ও দক্ষতার রূপান্তর

৪.দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক সংযোগ: জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী তরুণদের ভূমিকা

৫. গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশের করণীয় ও বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি

৬. জুলাই গণভুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠন: তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ

৭.বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ: সম্ভাবনার ব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা প্রস্তুতি

৮. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের পথে: ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

৯. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের উদ্বোধনী সম্ভাবনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র

  1. কৃষি, নদী উন্নয়নের গতিপথ: বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পুনরাবিষ্কার।

রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নীতিগতভাবে অগ্রসর হওয়া। তরুণদের চিন্তাপ্রক্রিয়া, মননশীলতা এবং গবেষণাধর্মী সক্ষমতাকে সামনে রেখে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব আর সেটি হতে হবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে।

এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব বলেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে বিনিয়োগ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণই আমাদের রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে এবং বাংলাদেশ ২.০-কে বাস্তবায়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Jatiya Sangsad Election September 7 published a list of draft polling booths

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বুধবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্তকরণের জন্য গেজেটে কমপক্ষে ২৫ দিন পূর্বে তা প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকা ভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, এই তালিকার ওপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী : খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ: ১২ অক্টোবর, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ: ২০ অক্টোবর।
উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত ছকের আলোকে খসড়া ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The species of indigenous fish must be protected by identifying reservoirs across the country Fisheries and Livestock Advisors

সারাদেশে জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

সারাদেশে জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারাদেশ জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানান প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।

উপদেষ্টা বুধবার (২০ আগষ্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে 'টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত করণীয়' -শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।

সারাদেশে জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।

এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কমছিল। তাই আমরা এখাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তুলতে যা করণীয় তা করতেই হবে।

জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনে করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে রয়েছি যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই।

৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইর গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।

প্লাস্টিকদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিকদূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি মানুষের পক্ষে ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।

বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইর ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান। এসময় বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্যজীবী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

p
উপরে