× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Niazi could not forget the shame of surrender even in 33 years
google_news print-icon

আত্মসমর্পণের গ্লানি ৩৩ বছরেও ভুলতে পারেননি নিয়াজী

আত্মসমর্পণের-গ্লানি-৩৩-বছরেও-ভুলতে-পারেননি-নিয়াজী
ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ভারতীয় জেনারেল জে এস অরোরার কাছে পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণ। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে লজ্জাজনক আত্মসমর্পণের পর আড়াই বছর ভারতে যুদ্ধবন্দি হিসেবে থাকতে হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীকে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান ফিরে গিয়ে তিনি জড়ান রাজনীতিতে। বিশ্বাস করতেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরাজয় সামরিক কারণে হয়নি। তিনি আরও যুদ্ধ চালাতে পারতেন। ২০০৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরাজয়ের এই লজ্জা মেনে নিতে পারেননি।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় তাদের ইস্টার্ন কমান্ডের সর্বাধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। মুক্তিযুদ্ধের ইস্টার্ন থিয়েটারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৯৪ হাজার সেনাসদস্যসহ আত্মসমর্পণ করেন তিনি।

ভারতীয় বাহিনীর কাছে আড়াই বছর যুদ্ধবন্দি থাকার পর দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হন নিয়াজী।

১৯৭৪ সালের এপ্রিলে জেনারেল নিয়াজী ভারতীয় বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেশে ফিরে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর যোগ দেন রাজনীতিতে। বরাবর জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিরোধিতা করেন তিনি। কারণ তার বিবেচনায় পাকিস্তান বিভক্তির জন্য দায়ী ভুট্টোই।

জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত ইতিহাস নিবন্ধিত থাকলেও এর পরবর্তী সময়ে কী হয়েছিল, সে আখ্যান খুব একটা প্রচলিত নয়। বিশেষ করে তার ভারতে যুদ্ধবন্দি হিসেবে অবস্থান ও পাকিস্তানে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পর রাজনৈতিক জীবন তার সামরিক জীবনের মতো এতটা ঘটনাবহুল নয়।

আত্মসমর্পণের পর নিয়াজীসহ সামরিক বাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। জায়গা হয় ভারতের মধ্যপ্রদেশের জবলপুর সেনানিবাসের বিশেষায়িত ক্যাম্পে। সেখানে তাদের রাখা হয় দুই বছর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় এ বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়াজীসহ পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের জবলপুরে ক্যাম্পে রাখার বিষয়টির গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। সাধারণ জনগণ তো নয়ই, সামরিক বাহিনীর সব সদস্যের কাছেও নিয়াজী ও তার সিনিয়র অফিসাররা কোথায় আছেন সেটা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না।

১৯১৫ সালে পাঞ্জাবে জন্ম নেয়া নিয়াজী ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির ওয়াই ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর ব্রিটিশ আর্মির কমিশনড অফিসার হিসেবে আসাম ও মনিপুর ফ্রন্টে বার্মা যুদ্ধে যোগ দেন। ঘটনাচক্রে এর তিন দশক পর সেই ভারতেই তাকে যুদ্ধবন্দি জীবন কাটাতে হয়।

নিয়াজী ও তার অফিসারদের যুদ্ধবন্দি সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত একটি প্রশাসনিক চিঠি জবলপুরের সেনা জাদুঘরে এখনও দর্শনার্থীদের জন্য রেখে দেয়া আছে।

পিওডাব্লিউ ক্যাম্প হান্ড্রেড নামে পরিচিত এলাকাটি এখন অনেকটাই বদলে গেছে ও নাম পাল্টে রাখা হয়েছে ভিজায়ান্তা ব্লক।

নিয়াজী তার আত্মজীবনীতে বন্দিজীবনে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলোর একটা বর্ণনা দিয়েছেন।

তার ‘বিট্রেয়াল অফ ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ে নিজের বন্দিজীবন নিয়ে নিয়াজী লিখেছেন, ‘কোনো একটা ইউনিটের ব্যাচেলর অফিসার্স কোয়ার্টারে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। আমরা প্রত্যেক অফিসার একটি করে কোয়ার্টার পাই। এক বেডরুম, সঙ্গে লাগোয়া বাথরুম ও বারন্দাসহ একটা বসার জায়গা ছিল প্রতিটি কোয়ার্টারে। মোটামুটি সুসজ্জিত ছিল রুমগুলো। বসবাসের জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল। যে কারণে আমরা একটিকে মসজিদ ও আরেকটিকে মেস বানিয়ে নিয়েছিলাম।’

দৈনিক ভাতা হিসেবে তাদের ১৪০ রুপি করে দেয়া হতো। বই পড়ার সুযোগও তার ছিল।

ওই সময়ে সেনানিবাসে চাকরিরত বেসামরিক কর্মকর্তা সুজয় ব্যানার্জি টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানান, নিয়াজী ও তার অফিসাররা যে জবলপুরে আছেন সেটা তিনি লোকমুখে শুনেছেন, তবে কখনও দেখেননি। পত্রপত্রিকায় যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে লেখালেখি হলেও কে কোথায় আছে, সেটা প্রকাশ পেত না।

তিনি বলেন, ‘নিয়াজী যে ওখানে আছেন, সেটা জানতেন হাতে গোনা কয়েকজন। অনেকে ক্যাম্পের বাইরের টিলাগুলোয় উঠে দেখার চেষ্টা করত আসলেই উনি ভেতরে আছেন কি না।’

নিয়াজী লিখেছেন, পাকিস্তান সরকার তাকে হত্যা করার জন্য দুইজন আততায়ী পাঠিয়েছিল ভারতে। ওই দুই আততায়ীর হাত থেকে নিয়াজীকে রক্ষা করতে বন্দিশিবিরের চতুর্দিকের দেয়াল উঁচু করে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী।

বইয়ে তিনি লেখেন, ‘একপর্যায়ে আমি দেখলাম ক্যাম্পের চারদিকে ভারতীয়রা দেয়াল নির্মাণ শুরু করেছে। আমি প্রতিবাদ করলে স্টেশন কমান্ডার মেজর জেনারেল পাড্ডা আমাকে জানান তাকে দিল্লির হেডকোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা কলকাতা থেকে জামশেদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। জামশেদ স্বীকার করেছে যে তাকে ও তার এক সঙ্গীকে পাকিস্তান সরকার পাঠিয়েছে নিয়াজীকে হত্যার জন্য। যে কারণে জেনারেল পাড্ডাকে হেডকোয়ার্টার থেকে বলা হয়েছে আমার সুরক্ষা ও জীবন রক্ষার ব্যবস্থা নিতে।’

১৯৭২ সালের ২ জুলাই স্বাক্ষরিত সিমলা চুক্তি অনুসারে পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে পাকিস্তান ফিরে আসেন নিয়াজী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় এবং ভারতের কাছে ৯৪ হাজার সেনার বন্দি হওয়া ও নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে পাকিস্তানের জনগণের মনে জন্ম নেয় অসংখ্য প্রশ্নের, যা ধীরে ধীরে পরিণত হয় ক্ষোভে।

বাংলাদেশের কাছে যুদ্ধে পরাজয়ের পর ক্ষমতা ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। দায়িত্ব পান জুলফিকার আলী ভুট্টো।

দেশের জনগণের কাছ থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংসতা ও ভয়াবহতা একরকম আড়াল করে রেখেছিল ইয়াহিয়া সরকার। তবে দাবির মুখে ভুট্টো ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমান অধীনে কাজ করা শুরু করে তদন্ত কমিশন।

আত্মসমর্পণের গ্লানি ৩৩ বছরেও ভুলতে পারেননি নিয়াজী
আত্মসমর্পণের পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন জেনারেল নিয়াজী। ছবি: সংগৃহীত



গোপনভাবে ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এ কমিশন কাজ শুরু করে। ২১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। ১২ জুলাই প্রেসিডেন্টের কাছে টেনটেটিভ বা সাময়িক প্রতিবেদন জমা দেয়া হয় প্রেসিডেন্টের কাছে।

১৯৭৪ সালের এপ্রিলে ভারত থেকে যুদ্ধবন্দিরা ফিরে এলে নিয়াজীসহ মোট ৭২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে কমিশন। এরপর আরেকটি সম্পূরক রিপোর্ট জমা দেয়া হয়।

কমিশনের রিপোর্টে নিয়াজী সম্বন্ধে বলা হয়, ‘শিয়ালকোট ও লাহোরের জিওসি এবং সামরিক প্রশাসক থাকার সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল কোর্ট মার্শাল বা সামরিক আইনের মামলাগুলোয় তিনি অর্থ কামিয়ে নিচ্ছেন। লাহোরের গুলবার্গে সায়িদা বুখারির সঙ্গে তার সখ্য ছিল। সায়িদা সিনোরিতা হোম নামে একটি যৌনপল্লি চালাতেন। একই সঙ্গে সায়িদা ঘুষ নিয়ে নিয়াজীর কাছ থেকে কাজ উদ্ধার করতেন। নিয়াজীর বিরুদ্ধে নৈতিকতাবিরোধী কাজ ও চোরাচালানের যে অভিযোগ রয়েছে, তা আপাতদৃষ্টিতে সত্য।’

নিয়াজীর বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে এই অভিযোগও ছিল যে সামরিক ক্ষমতাবলে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে পান চোরাচালান করতেন।

কমিশনের করা সুপারিশের মধ্যে ছিল ‘অফিসারদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অপরাধমূলক অবহেলার অভিযোগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ, মেজর জেনারেল রহিম খান, ব্রিগেডিয়ার বাকের সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার হায়াত ও ব্রিগেডিয়ার আসলাম নিয়াজীর কোর্ট মার্শাল করা যায়।’

তবে এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়াজী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সামরিক আদালতের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তাব দেন। নিয়াজীর বক্তব্য ছিল, হামুদুর রহমান কমিশনের সামরিক বিষয় নিয়ে কোনো ধারণা নেই।

এর পরই তাকে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে অবনমিত করা হয়। বন্ধ করা হয় তার অবসরকালীন ভাতা। বাতিল করা হয় সেনাবাহিনী থেকে তার নামে বরাদ্দকৃত জমি। ১৯৭৫ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন।

তার আত্মজীবনীতে নিয়াজী লেখেন- তাকে ভুট্টো সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খান আব্দুল কাইয়ুম খান রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানান।
নিয়াজী লিখেছেন, “তিনি আমাকে তার কাইয়ুম লিগে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ দেন। আমি তাকে জানাই যে এটা অত্যন্ত সম্মানের বিষয়, কিন্তু আমি এটা গ্রহণ করতে পারব না। তিনি কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি বলেছিলাম, ‘খান লালা আপনি ভুট্টোর সরকারের একজন মন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি আপনার সহানুভূতি থাকবে। আর আমি তার ঘোর বিরোধী।’

তিনি বলেন, ‘আসলে ভুট্টো আমাকে পাঠিয়েছেন কমান্ডার অফ সিভিল আর্মড ফোর্সেস পদের জন্য। রাজনীতিতে আমন্ত্রণ জানানোটা আসলে একটা বাহানা।’

আমি আবারও তাকে বলি, ‘খান লালা খুবই লোভনীয় একটা প্রস্তাব। কিন্তু ভুট্টো আমাকে মন থেকে ঘৃণা করে। আমি একটা কোর্ট মার্শাল চেয়েছিলাম কিন্তু ভুট্টো পর্যাপ্ত অভিযোগ খুঁজে পায়নি।

আমি যদি আবার সামরিক ইউনিফর্ম গায়ে চাপাই, তাহলে সে আবার একগাদা অভিযোগ দাঁড় করাবে ও আমাকে দোষী সাব্যস্ত করবে। এমনকি আমাকে ফাঁসিও দিতে পারে’।’’

নিয়াজীর দাবি, ভুট্টো স্বয়ং তাকে একটি কূটনীতিবিদের পদ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটিও প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি লিখেছেন, ‘ভুট্টো আমাকে কূটনৈতিক একটি চাকরির প্রস্তাব দেন। তবে তার শর্ত ছিল যে আমাকে জনসমক্ষে স্বীকার করে নিতে হবে যে পূর্ব পাকিস্তানের পরাজয় ছিল একটি সামরিক ব্যর্থতা, রাজনৈতিক নয়।

‘আমি ভুট্টোকে মুখের ওপর না করি। তাকে বলি যে এটা একটা রাজনৈতিক পরাজয় ছিল। আর যে সামরিক পরাজয় ঘটেছে, সেটা তার কারণে হয়েছে। তিনি সামরিক বাহিনীকে খাটো করতে চান। তিনি আমাকে বিষয়টি ভেবে দেখতে বলেন; না হলে আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকিও দেন।’

আজীবন নিয়াজী ভুট্টোর বিরোধিতা করে গেছেন। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি জামিয়াত উলেমা-ই-পাকিস্তানের অংশ হিসেবে ১৯৭৭ সালে যোগ দেন পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সে (পিএনএ)।

ভুট্টো সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। তার কারাবাসের সময়ই জেনারেল জিয়াউল হক মার্শাল ল জারি করে ভুট্টোকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন। নিয়াজী যে কারাগারে ছিলেন, সে সুক্কুর জেলেই জায়গা হয় ভুট্টোর।

কারাগারে ভুট্টো তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন বলে দাবি নিয়াজীর। তিনি লিখেছেন, “ভুট্টো দেখা হওয়ার পর তাকে বলেন, ‘নিয়াজী আমি অত্যন্ত দুঃখিত তোমার সঙ্গে কঠোর হওয়ার জন্য। আমাকে ভুল পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।’

‘আমি তাকে আমার রুমে নিয়ে যাই ও তাকে এক কাপ কফি খাওয়াই। তিনি আমাকে বলেন, ‘আমরা ফিরে গিয়ে একসঙ্গে কাজ করব।’ জবাবে আমি তাকে বলি, ‘ভুট্টো আমরা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করব। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। আমরা একে অপরের শত্রু’।”

১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় নিয়াজীর আত্মজীবনী। বইটির প্রায় পুরো অংশই ছিল কীভাবে রাজনৈতিক মতবিভেদের কারণে পাকিস্তান আর্মির মতো শক্তিশালী বাহিনীকে ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়।

বইয়ের শেষ অংশে তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে যদি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য না করা হতো, তাহলে পূর্ব পাকিস্তানকে আমরা আরও দীর্ঘদিন দখলে রাখত পারতাম। ওই সময় ভারতীয়রা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল আর আমাদের দখলে ছিল বড় শহর, বিমান ও নৌবন্দরগুলো।’

নিয়াজী লাহোরে মারা যান ২০০৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। শেষ দিন পর্যন্ত তার বিশ্বাস একই ছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও পাকিস্তানের বিভাজন ও পরাজয় তিনি মেনে নিতে পারেননি।

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Begum Khaleda Zia returns home on May 7

বেগম খালেদা জিয়া ৫ মে দেশে ফিরছেন

বেগম খালেদা জিয়া ৫ মে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

চার মাস পরে আগামী সোমবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাসস’কে বলেছেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি আগামী ৫ মে দেশে ফিরবেন।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন তাঁরই দুই পুত্রবধূ তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি।

বিএনপি’র নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফিরবেন বিএনপি’র চেয়ারপার্সন। দেশে ফিরতে পুরোপুরি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা পাওয়া না গেলেও লন্ডনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও সফরসঙ্গীরা সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। তারেক রহমান পুরো বিষয়টি তদারকি করছেন।

লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী থাকবেন ৮ জন। তারা হচ্ছেন: তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান, কোকর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. আমিনুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম এবং রূপা হক।

২০১৮ সালে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনা মহামারির সময় বিগত সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দু’টি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন খালেদা জিয়া।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাবন্দি অবস্থায় চারটি ঈদ কেটেছে কারাগার ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।

বর্তমানে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। সেখানে তাঁর পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Ministry of Religion is requesting not to perform Hajj without permission

অনুমতি ছাড়া হজ পালন না করার অনুরোধ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের

অনুমতি ছাড়া হজ পালন না করার অনুরোধ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ছবি: সংগৃহীত

অনুমতি ছাড়া হজ পালন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা, হজযাত্রীদের কল্যাণ এবং বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিবেচনায় দেশে ও সৌদিতে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে চলতি হজ মৌসুমে ভিজিট ভিসায় মক্কা কিংবা সেদেশের পবিত্র স্থানসমূহে অবস্থান না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, হজ বিধিমালা অমান্যকারী ভিজিট ভিসাধারীকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, পরিবহন করা, সংরক্ষিত হজ এলাকায় প্রবেশে সহায়তা করা ও তাদেরকে হোটেল কিংবা বাড়িতে আবাসনের ব্যবস্থা করা থেকে বিরত থাকতেও বাংলাদেশিদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ বছর হজযাত্রীদের মক্কায় প্রবেশ সুগম করা, অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে নতুন বিধিমালা জারি করেছে সৌদি সরকার। এ বিধিমালা অনুসারে সেদেশের পবিত্র স্থানগুলোতে কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমতিপত্র, মক্কায় নিবন্ধিত বসবাসের প্রমাণপত্র (ইকামা) ও সরকারিভাবে ইস্যু করা হজ পারমিট থাকলেই কেবল মক্কায় প্রবেশ করা যাবে।

আসন্ন হজ মৌসুমে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজ পারমিট ছাড়া কেউ হজ পালনের চেষ্টা করলেই তাকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা গুনতে হবে। একাজে সহায়তা করলেও রয়েছে এক লাখ রিয়াল পর্যন্ত জরিমানার বিধান।

শুধু জরিমানাই নয়, অপরাধ প্রমাণিত হলে এরূপ সহায়তাকারীর নিজস্ব যানবাহনও আদালতের রায় অনুসারে বাজেয়াপ্ত করা হবে।

সৌদি সরকার আরো জানিয়েছে, যদি কোনো বিদেশি নাগরিক নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করে কিংবা বৈধ অনুমতি ছাড়াই হজ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পরবর্তী ১০ বছর তাকে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

জিলকদ মাসের ১ তারিখ (২৯ এপ্রিল) থেকে জিলহজ মাসের ১৪ তারিখ (১০ জুন) পর্যন্ত এই বিধান কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে হজের অনুমতি ছাড়া পবিত্র মক্কা নগরী বা আশপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে কেউ প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবে না। বিশেষ করে যারা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছেন, তাদের ওপর নজরদারি থাকবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় আইন-কানুনের কঠোর প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, হজের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকার ঘোষিত আইন-কানুন ও বিধিনিষেধ অনুসরণ করা আবশ্যক। সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় জড়িত আছে। প্রায় ৩৫ লক্ষ বাংলাদেশি সৌদিতে কর্মরত। এদেশ থেকেই আসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। দু’দেশের বিদ্যমান সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে সুষ্ঠু ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি অননুমোদিত হজ পালন থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলেছেন, হজ একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা এবং টিম ওয়ার্ক। সৌদি আরব এবং মুসলিম দেশ সমূহের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় হজ পরিচালিত হয়। তবে হজ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সৌদি আরব মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সুপরিকল্পিত কর্মসূচি, আইন-কানুনের যথাযথ প্রয়োগ ও অংশীজনের সহযোগিতা ছাড়া সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে হজযাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সৌদি সরকারের প্রচলিত আইন কানুন ও বিধি বিধান অনুসরণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকারের সকল পদক্ষেপকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাগত জানায়।

হজের পবিত্রতা রক্ষা এবং সকল হজযাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকরা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং ২০২৫ সালে বাংলাদেশ একটি সফল হজ আয়োজন করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Decide to give the corridor will come from elected parliament

করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদ থেকে আসতে হবে

করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদ থেকে আসতে হবে

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, করিডোর দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে। কারণ, এ ধরনের সিদ্ধান্ত স্পর্শকাতর।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।

তারেক রহমান বলেন, বিদেশি স্বার্থ নয়, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত, পাকিস্তান কিংবা মিয়ানমার নয়, সবার আগে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রায় আট কোটি মানুষই শ্রমজীবী। এসব শ্রমজীবীরাই এ দেশের প্রাণ। উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রাণ তারাই। মেহনতি মানুষকে বঞ্চিত রেখে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও আজ পর্যন্ত জনগণের রাজনৈতিক অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না।

‘বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। কিন্তু কোনো নেতাকর্মীকে বিদেশে পালিয়ে যেতে হয়নি। কারণ, আমরা জনগণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য’- বললেন তারেক রহমান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে সর্বত্র শ্রমিকরা এখনো নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না।

সংস্কারের প্রসঙ্গ টেনে তারেক বলেন, দেশে সংস্কার নিয়ে শোরগোল চলছে। কিন্তু সেই কর্মযজ্ঞে শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর কোথায়? রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে জনগণের কথা পৌঁছাতে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার প্রয়োজন। কারণ, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতরা জনগণের কথা শুনতে বাধ্য।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তনের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার, তেমনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অপরিহার্য।’

অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, ‘সরকারের একটা অংশ সংস্কার ও নির্বাচন মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। এটা সঠিক পথ নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।’

এর আগে বেলা ২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশ ঘিরে বেলা ১২টা থেকে রাজধানী এবং এর আশপাশের জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শ্রমিক নেতারা নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এতে নয়াপল্টন এলাকায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

নেতাকর্মী-সমর্থকদের জমায়েত ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। হাজারো শ্রমিকের উপস্থিতি সমাবেশটি রূপ নিয়েছে জনসমুদ্রে।

সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। রঙিন টুপি, টি-শার্ট, ব্যানার ও ঢোল নিয়ে উপস্থিত হন শ্রমিক নেতারা। তাদের কন্ঠে স্লোগান ওঠে-‘দুনিয়া মজদুর এক হও, লড়াই করো’। শ্রমিকদের এ সার্বজনীন স্লোগানের পাশাপাশি ‘অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন চাই, নির্বাচন দিতে হবে, দিতে হবে’ এ স্লোগানও উচ্চারিত হয়।

সমাবেশস্থলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমূল বিশ্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মজিবুর রহমান সারওয়ার, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
In April 28 Incorrect Information Identify Rumor Scanner

এপ্রিলে ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত: রিউমার স্ক্যানার

এপ্রিলে ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত: রিউমার স্ক্যানার

গত এপ্রিল মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।

বাংলাদেশে চলমান গুজব এবং ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্বে নিয়োজিত রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে রিউমার স্ক্যানার।

রিউমার স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে জাতীয় বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ১০১টি ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩৪ শতাংশ। এছাড়া রাজনৈতিক বিষয়ে ৯৫টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৩৮টি, ধর্মীয় বিষয়ে ২৭টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে আটটি, শিক্ষা বিষয়ে সাতটি, প্রতারণা বিষয়ে ১০টি, খেলাধুলা বিষয়ে ৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। মার্চ মাসে ২৯৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছিল।

গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে রিউমার স্ক্যানার।

রিউমার স্ক্যানারের ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান টিমের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এসব ঘটনায় তথ্য কেন্দ্রিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি ১৩৮টি। এছাড়া ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল ছিল ১০৫টি এবং ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৫৩টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৮০টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৬৬টি এবং বিকৃত হিসেবে ৪৮টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে দুইটি।

রিউমার স্ক্যানার জানায়, প্লাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবুক পেইজে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। সংখ্যার হিসেবে যা ২৭৬টি। এছাড়া ইউটিউবে ৫৪টি, ইনস্টাগ্রামে ৪৮টি, এক্সে ৪৪টি, টিকটকে ২৪টি, থ্রেডসে ১৩টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৪টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমার স্ক্যানার।

রিউমার স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুল তথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমার স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে। সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমার স্ক্যানার দেখতে পেয়েছে যে, এসব অপতথ্যের প্রায় ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই সরকারকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

রিউমার স্ক্যানার জানায়, এপ্রিলে ২৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও, যা চলতি বছরের মাসগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

রকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে তিনটি, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে দুইটি, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে দুইটি, আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে একটি, শেখ বশিরউদ্দীনকে জড়িয়ে একটি এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে একটি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।

রিউমার স্ক্যানার আরও জানায়, এপ্রিলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপিকে জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ১৩টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের সবগুলোই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে একটি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে দুইটি এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে নয়টি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে জড়িয়ে এই সময়ে দুইটি এবং যুবদলকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

রিউমার স্ক্যানার জানায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে ছয়টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের সবগুলোই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রয়েছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানকে জড়িয়ে এই সময়ে দুইটি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এই সময়ে ছয়টি অপতথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান টিম।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে জড়িয়ে গত মাসে তিনটি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এই দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে গত মাসে দুইটি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া দলটির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে তিনটি, সারজিস আলমকে জড়িয়ে দুইটি, নুসরাত তাবাসসুমকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।

ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। এপ্রিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে ছয়টিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ১৬টি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো ৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।

ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমার স্ক্যানার দেখেছে যে, এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে ১৯টি। একই সময়ে ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে তিনটি।

ফিলিস্তিনের গাজায় 'চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে' বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেয়া হয়। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রিউমার স্ক্যানার এপ্রিলে এ সংক্রান্ত অন্তত ৩৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। গেল মাসে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, ঢাকায় ২৬ এপ্রিল সুন্নি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৫৮টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ২৫টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৬২টি ভুল তথ্য প্রচার শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Government will implement the recommendations of the Labor Reform Commission Chief Advisor

শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা ঐতিহাসিক মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস, ২০২৫ উপলক্ষে আজ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য রাখেন। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শ্রমিকদের আগের অবস্থায় রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। এজন্য তিনি শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হলো শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আশু করণীয় নিয়ে যাত্রা শুরু করা। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে গড়বো এ দেশ নতুন করে’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের মে দিবস উদযাপিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ৫ জন শ্রমিকের পরিবারের হাতে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাংবোর একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Great May Day today

মহান মে দিবস আজ

মহান মে দিবস আজ

আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা, শ্রমের মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে শ্রমিকেরা যে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাদের সে আত্মত্যাগের সম্মানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সকল গণমাধ্যম বিভিন্ন লেখা প্রকাশ ও অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

এবারের মহান মে দিবসের প্রতিপাদ্য-‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’।

মহান মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।

দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে এই দিবসের তাৎপর্য ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর ফলে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় নেমে আসে আট ঘণ্টায়।

সারা বিশ্বের শ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করেন। নিজেদের অধিকার আদায়ে সফল হয়েছেন। বিশ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় সামাজিক পরিবর্তনের নতুন অধ্যায়। মে দিবসের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়, তার ফলে ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করে সামাজিক শ্রেণি-বৈষম্য।

তবে শ্রেণি-বৈষম্য এখনও পুরোপুরি দূর না হলেও মে দিবসের সেই আত্মত্যাগ নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে অনেকটাই মুক্ত করেছে।

এদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রম অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ণে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে। গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন শ্রম বিষয়ে অংশীজন ও বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন ২১ এপ্রিল তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে তারা।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম শাখার এক স্মারকে শ্রমিককে চাকুরিচ্যুতি, ছাঁটাই এবং মহান মে দিবসে কারখানা বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে :

গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আরএমজি বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (আরএমজি বিষয়ক টিসিসি) এর ২০তম সভার বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তসমূহ প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশক্রমে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়। সিদ্ধান্তসমূহ হচ্ছে- ‘যৌক্তিক কারণ এবং শ্রম আইনের প্রতিপালন ব্যতীত শ্রমিক চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করা যাবে না। এক্ষেত্রে শ্রমিক চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করার পূর্বে স্থানীয় প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং বিজিএমইএ এর ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। শ্রম আইন মেনে শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করা না হলে-মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্মারকে বলা হয়, মহান মে দিবসে সকল কারখানা/প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কোন কারখানা কর্তৃপক্ষ মে দিবসে কারখানা খোলা রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শ্রম শাখার উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ স্মারক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The price of fuel oil has dropped one penny 

লিটারে এক টাকা কমেছে জ্বালানি তেলের দাম 

লিটারে এক টাকা কমেছে জ্বালানি তেলের দাম 

ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম কমিয়েছে সরকার। সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা কমিয়ে আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নতুন এ দাম বুধবার দিনগত মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, ডিজেলের বিক্রয়মূল্য প্রতি লিটার ১০৫ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১০৪ টাকা, কেরোসিন ১০৫ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১০৪ টাকা এবং অকটেন ১২৬ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১২৫ টাকা, পেট্রোল ১২২ টাকা থেকে এক টাকা কমে ১২১ টাকায় পুনঃনির্ধারণ/সমন্বয় করা হয়েছে। যা ১ মে ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমা-বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

এ জন্য ‘জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকা’র আলোকে মে মাসের জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিতে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা বাড়িয়ে বর্তমান দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ মূল্য মার্চ ও এপ্রিল মাসেও বহাল ছিল।

মন্তব্য

p
উপরে