১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় তাদের ইস্টার্ন কমান্ডের সর্বাধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। মুক্তিযুদ্ধের ইস্টার্ন থিয়েটারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৯৪ হাজার সেনাসদস্যসহ আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
ভারতীয় বাহিনীর কাছে আড়াই বছর যুদ্ধবন্দি থাকার পর দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হন নিয়াজী।
১৯৭৪ সালের এপ্রিলে জেনারেল নিয়াজী ভারতীয় বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেশে ফিরে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর যোগ দেন রাজনীতিতে। বরাবর জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিরোধিতা করেন তিনি। কারণ তার বিবেচনায় পাকিস্তান বিভক্তির জন্য দায়ী ভুট্টোই।
জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত ইতিহাস নিবন্ধিত থাকলেও এর পরবর্তী সময়ে কী হয়েছিল, সে আখ্যান খুব একটা প্রচলিত নয়। বিশেষ করে তার ভারতে যুদ্ধবন্দি হিসেবে অবস্থান ও পাকিস্তানে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পর রাজনৈতিক জীবন তার সামরিক জীবনের মতো এতটা ঘটনাবহুল নয়।
আত্মসমর্পণের পর নিয়াজীসহ সামরিক বাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। জায়গা হয় ভারতের মধ্যপ্রদেশের জবলপুর সেনানিবাসের বিশেষায়িত ক্যাম্পে। সেখানে তাদের রাখা হয় দুই বছর।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় এ বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়াজীসহ পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের জবলপুরে ক্যাম্পে রাখার বিষয়টির গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। সাধারণ জনগণ তো নয়ই, সামরিক বাহিনীর সব সদস্যের কাছেও নিয়াজী ও তার সিনিয়র অফিসাররা কোথায় আছেন সেটা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না।
১৯১৫ সালে পাঞ্জাবে জন্ম নেয়া নিয়াজী ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির ওয়াই ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর ব্রিটিশ আর্মির কমিশনড অফিসার হিসেবে আসাম ও মনিপুর ফ্রন্টে বার্মা যুদ্ধে যোগ দেন। ঘটনাচক্রে এর তিন দশক পর সেই ভারতেই তাকে যুদ্ধবন্দি জীবন কাটাতে হয়।
নিয়াজী ও তার অফিসারদের যুদ্ধবন্দি সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত একটি প্রশাসনিক চিঠি জবলপুরের সেনা জাদুঘরে এখনও দর্শনার্থীদের জন্য রেখে দেয়া আছে।
পিওডাব্লিউ ক্যাম্প হান্ড্রেড নামে পরিচিত এলাকাটি এখন অনেকটাই বদলে গেছে ও নাম পাল্টে রাখা হয়েছে ভিজায়ান্তা ব্লক।
নিয়াজী তার আত্মজীবনীতে বন্দিজীবনে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলোর একটা বর্ণনা দিয়েছেন।
তার ‘বিট্রেয়াল অফ ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ে নিজের বন্দিজীবন নিয়ে নিয়াজী লিখেছেন, ‘কোনো একটা ইউনিটের ব্যাচেলর অফিসার্স কোয়ার্টারে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। আমরা প্রত্যেক অফিসার একটি করে কোয়ার্টার পাই। এক বেডরুম, সঙ্গে লাগোয়া বাথরুম ও বারন্দাসহ একটা বসার জায়গা ছিল প্রতিটি কোয়ার্টারে। মোটামুটি সুসজ্জিত ছিল রুমগুলো। বসবাসের জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল। যে কারণে আমরা একটিকে মসজিদ ও আরেকটিকে মেস বানিয়ে নিয়েছিলাম।’
দৈনিক ভাতা হিসেবে তাদের ১৪০ রুপি করে দেয়া হতো। বই পড়ার সুযোগও তার ছিল।
ওই সময়ে সেনানিবাসে চাকরিরত বেসামরিক কর্মকর্তা সুজয় ব্যানার্জি টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানান, নিয়াজী ও তার অফিসাররা যে জবলপুরে আছেন সেটা তিনি লোকমুখে শুনেছেন, তবে কখনও দেখেননি। পত্রপত্রিকায় যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে লেখালেখি হলেও কে কোথায় আছে, সেটা প্রকাশ পেত না।
তিনি বলেন, ‘নিয়াজী যে ওখানে আছেন, সেটা জানতেন হাতে গোনা কয়েকজন। অনেকে ক্যাম্পের বাইরের টিলাগুলোয় উঠে দেখার চেষ্টা করত আসলেই উনি ভেতরে আছেন কি না।’
নিয়াজী লিখেছেন, পাকিস্তান সরকার তাকে হত্যা করার জন্য দুইজন আততায়ী পাঠিয়েছিল ভারতে। ওই দুই আততায়ীর হাত থেকে নিয়াজীকে রক্ষা করতে বন্দিশিবিরের চতুর্দিকের দেয়াল উঁচু করে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী।
বইয়ে তিনি লেখেন, ‘একপর্যায়ে আমি দেখলাম ক্যাম্পের চারদিকে ভারতীয়রা দেয়াল নির্মাণ শুরু করেছে। আমি প্রতিবাদ করলে স্টেশন কমান্ডার মেজর জেনারেল পাড্ডা আমাকে জানান তাকে দিল্লির হেডকোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা কলকাতা থেকে জামশেদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। জামশেদ স্বীকার করেছে যে তাকে ও তার এক সঙ্গীকে পাকিস্তান সরকার পাঠিয়েছে নিয়াজীকে হত্যার জন্য। যে কারণে জেনারেল পাড্ডাকে হেডকোয়ার্টার থেকে বলা হয়েছে আমার সুরক্ষা ও জীবন রক্ষার ব্যবস্থা নিতে।’
১৯৭২ সালের ২ জুলাই স্বাক্ষরিত সিমলা চুক্তি অনুসারে পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে পাকিস্তান ফিরে আসেন নিয়াজী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় এবং ভারতের কাছে ৯৪ হাজার সেনার বন্দি হওয়া ও নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে পাকিস্তানের জনগণের মনে জন্ম নেয় অসংখ্য প্রশ্নের, যা ধীরে ধীরে পরিণত হয় ক্ষোভে।
বাংলাদেশের কাছে যুদ্ধে পরাজয়ের পর ক্ষমতা ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। দায়িত্ব পান জুলফিকার আলী ভুট্টো।
দেশের জনগণের কাছ থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংসতা ও ভয়াবহতা একরকম আড়াল করে রেখেছিল ইয়াহিয়া সরকার। তবে দাবির মুখে ভুট্টো ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমান অধীনে কাজ করা শুরু করে তদন্ত কমিশন।
গোপনভাবে ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এ কমিশন কাজ শুরু করে। ২১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। ১২ জুলাই প্রেসিডেন্টের কাছে টেনটেটিভ বা সাময়িক প্রতিবেদন জমা দেয়া হয় প্রেসিডেন্টের কাছে।
১৯৭৪ সালের এপ্রিলে ভারত থেকে যুদ্ধবন্দিরা ফিরে এলে নিয়াজীসহ মোট ৭২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে কমিশন। এরপর আরেকটি সম্পূরক রিপোর্ট জমা দেয়া হয়।
কমিশনের রিপোর্টে নিয়াজী সম্বন্ধে বলা হয়, ‘শিয়ালকোট ও লাহোরের জিওসি এবং সামরিক প্রশাসক থাকার সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল কোর্ট মার্শাল বা সামরিক আইনের মামলাগুলোয় তিনি অর্থ কামিয়ে নিচ্ছেন। লাহোরের গুলবার্গে সায়িদা বুখারির সঙ্গে তার সখ্য ছিল। সায়িদা সিনোরিতা হোম নামে একটি যৌনপল্লি চালাতেন। একই সঙ্গে সায়িদা ঘুষ নিয়ে নিয়াজীর কাছ থেকে কাজ উদ্ধার করতেন। নিয়াজীর বিরুদ্ধে নৈতিকতাবিরোধী কাজ ও চোরাচালানের যে অভিযোগ রয়েছে, তা আপাতদৃষ্টিতে সত্য।’
নিয়াজীর বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে এই অভিযোগও ছিল যে সামরিক ক্ষমতাবলে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে পান চোরাচালান করতেন।
কমিশনের করা সুপারিশের মধ্যে ছিল ‘অফিসারদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অপরাধমূলক অবহেলার অভিযোগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ, মেজর জেনারেল রহিম খান, ব্রিগেডিয়ার বাকের সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার হায়াত ও ব্রিগেডিয়ার আসলাম নিয়াজীর কোর্ট মার্শাল করা যায়।’
তবে এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়াজী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সামরিক আদালতের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তাব দেন। নিয়াজীর বক্তব্য ছিল, হামুদুর রহমান কমিশনের সামরিক বিষয় নিয়ে কোনো ধারণা নেই।
এর পরই তাকে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে অবনমিত করা হয়। বন্ধ করা হয় তার অবসরকালীন ভাতা। বাতিল করা হয় সেনাবাহিনী থেকে তার নামে বরাদ্দকৃত জমি। ১৯৭৫ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন।
তার আত্মজীবনীতে নিয়াজী লেখেন- তাকে ভুট্টো সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খান আব্দুল কাইয়ুম খান রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানান।
নিয়াজী লিখেছেন, “তিনি আমাকে তার কাইয়ুম লিগে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ দেন। আমি তাকে জানাই যে এটা অত্যন্ত সম্মানের বিষয়, কিন্তু আমি এটা গ্রহণ করতে পারব না। তিনি কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি বলেছিলাম, ‘খান লালা আপনি ভুট্টোর সরকারের একজন মন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি আপনার সহানুভূতি থাকবে। আর আমি তার ঘোর বিরোধী।’
তিনি বলেন, ‘আসলে ভুট্টো আমাকে পাঠিয়েছেন কমান্ডার অফ সিভিল আর্মড ফোর্সেস পদের জন্য। রাজনীতিতে আমন্ত্রণ জানানোটা আসলে একটা বাহানা।’
আমি আবারও তাকে বলি, ‘খান লালা খুবই লোভনীয় একটা প্রস্তাব। কিন্তু ভুট্টো আমাকে মন থেকে ঘৃণা করে। আমি একটা কোর্ট মার্শাল চেয়েছিলাম কিন্তু ভুট্টো পর্যাপ্ত অভিযোগ খুঁজে পায়নি।
আমি যদি আবার সামরিক ইউনিফর্ম গায়ে চাপাই, তাহলে সে আবার একগাদা অভিযোগ দাঁড় করাবে ও আমাকে দোষী সাব্যস্ত করবে। এমনকি আমাকে ফাঁসিও দিতে পারে’।’’
নিয়াজীর দাবি, ভুট্টো স্বয়ং তাকে একটি কূটনীতিবিদের পদ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটিও প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি লিখেছেন, ‘ভুট্টো আমাকে কূটনৈতিক একটি চাকরির প্রস্তাব দেন। তবে তার শর্ত ছিল যে আমাকে জনসমক্ষে স্বীকার করে নিতে হবে যে পূর্ব পাকিস্তানের পরাজয় ছিল একটি সামরিক ব্যর্থতা, রাজনৈতিক নয়।
‘আমি ভুট্টোকে মুখের ওপর না করি। তাকে বলি যে এটা একটা রাজনৈতিক পরাজয় ছিল। আর যে সামরিক পরাজয় ঘটেছে, সেটা তার কারণে হয়েছে। তিনি সামরিক বাহিনীকে খাটো করতে চান। তিনি আমাকে বিষয়টি ভেবে দেখতে বলেন; না হলে আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকিও দেন।’
আজীবন নিয়াজী ভুট্টোর বিরোধিতা করে গেছেন। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি জামিয়াত উলেমা-ই-পাকিস্তানের অংশ হিসেবে ১৯৭৭ সালে যোগ দেন পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সে (পিএনএ)।
ভুট্টো সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। তার কারাবাসের সময়ই জেনারেল জিয়াউল হক মার্শাল ল জারি করে ভুট্টোকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন। নিয়াজী যে কারাগারে ছিলেন, সে সুক্কুর জেলেই জায়গা হয় ভুট্টোর।
কারাগারে ভুট্টো তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন বলে দাবি নিয়াজীর। তিনি লিখেছেন, “ভুট্টো দেখা হওয়ার পর তাকে বলেন, ‘নিয়াজী আমি অত্যন্ত দুঃখিত তোমার সঙ্গে কঠোর হওয়ার জন্য। আমাকে ভুল পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।’
‘আমি তাকে আমার রুমে নিয়ে যাই ও তাকে এক কাপ কফি খাওয়াই। তিনি আমাকে বলেন, ‘আমরা ফিরে গিয়ে একসঙ্গে কাজ করব।’ জবাবে আমি তাকে বলি, ‘ভুট্টো আমরা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করব। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। আমরা একে অপরের শত্রু’।”
১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় নিয়াজীর আত্মজীবনী। বইটির প্রায় পুরো অংশই ছিল কীভাবে রাজনৈতিক মতবিভেদের কারণে পাকিস্তান আর্মির মতো শক্তিশালী বাহিনীকে ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
বইয়ের শেষ অংশে তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে যদি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য না করা হতো, তাহলে পূর্ব পাকিস্তানকে আমরা আরও দীর্ঘদিন দখলে রাখত পারতাম। ওই সময় ভারতীয়রা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল আর আমাদের দখলে ছিল বড় শহর, বিমান ও নৌবন্দরগুলো।’
নিয়াজী লাহোরে মারা যান ২০০৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। শেষ দিন পর্যন্ত তার বিশ্বাস একই ছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও পাকিস্তানের বিভাজন ও পরাজয় তিনি মেনে নিতে পারেননি।
শেরপুরের নকলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বসতবাড়ি ও মাঠে চাষযোগ্য জমিতে আগাম শীতকালীন শাক-সবজি আবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে বীজ ও সার বিতরণের উদ্বোধন করেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী বলেন, বীজ ও সার মাঠে আবাদ না করে যদি কোনো কৃষক বিক্রির উদ্দেশ্যে অসদুপায় অবলম্বন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২৩০ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ৯ প্যাকেট করে মোট ২ হাজার ৭০ প্যাকেট সবজির বীজ এবং ৪০৫ কৃষকের মাঝে মাঠে চাষযোগ্য ২০ শতাংশ জমির জন্য লাউ, বেগুন, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ যেকোনো সবজির ১ প্যাকেট করে বীজসহ ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় যৌথ অভিযানে প্রায় ১৪ কোটি টাকার অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল জব্দ করেছে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় বিজিবি জানায়, গত ১১ ও ১২ অক্টোবর উপজেলার সীমান্তবর্তী আশ্রায়ণ বিওপির আওতাধীন এলাকায় অভিযানকালে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চল্লিশপাড়া ও মদনের ঘাট এলাকায় ৩৫ হাজার কেজি অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা। পরে গত সোমবার দুপুরে এসব অবৈধ জাল ধ্বংস করেন পরিচালক (অপারেশন) যশোর সদর দপ্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়ন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শিকদারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ।
রাঙামাটির বিলাইছড়িতে নদীতে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ হওয়ার দুঘণ্টা পর স্থানয়ীরা মাছের জাল দিয়ে নিহত নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত নারী হলেন লতা মার্মা (৩৩)। তিনি কেংড়াছড়ি গ্রামের মিলন কান্তি চাকমার স্ত্রী। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বিলাইছড়ি থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত মানস বড়ুয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে কেংড়াছড়ি থেকে নৌকাযোগে বিলাইছড়ি বাজার আসার পথে কেরণছড়ি এলাকায় এসে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মাছের জাল দিয়ে তল্লাশির পর বেলা সারে এগারটায় তার মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহতের স্বামী মিলন কান্তি চাকমা জানিয়েছেন তার স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তাদের সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে।
টেকসই ও উন্নত বিশ্ব গঠনে মানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রংপুরে উদযাপিত হয়েছে ৫৬তম বিশ্ব মান দিবস।
“সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে—মান” এই স্লোগানকে ধারণ করে দিবসটি পালন করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও রংপুর জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম এনডিসি।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ মজিদ আলী, রংপুর ক্যাবের সভাপতি মোঃ আব্দুর রহমান, রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মোঃ রশিদুস সুলতান বাবলু, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোঃ গোলাম জাকারিয়া পিন্টু, এবং জেলা হোটেল-রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল হক মুন্না। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। স্বাগত বক্তব্য ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসটিআই রংপুর বিভাগীয় অফিসের উপপরিচালক ও অফিস প্রধান (প্রকৌশলী) মুবিন-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে আইএসও’র সদস্যপদ লাভের পর থেকে নিয়মিতভাবে বিশ্ব মান দিবস পালন করে আসছে। বর্তমানে আইএসও’র ১৭৭টি সদস্য দেশের সঙ্গে একযোগে বাংলাদেশও এবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করছে।
তিনি আরও জানান, গত এক বছরে রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সচেতনতা বৃদ্ধি, মান নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্পখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিএসটিআই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
বক্তারা বলেন, পণ্য ও সেবার মান বজায় রাখা শুধু শিল্পোন্নয়নের জন্য নয়, বরং ভোক্তা নিরাপত্তা ও জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতির পূর্বশর্ত।
তাঁরা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে মান সচেতনতা বিস্তার এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণই টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি হতে পারে।
অনুষ্ঠানে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আল্টিমেটাম ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে মন্তব্য করেছেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ। মঙ্গলবার পূর্বের আল্টিমেটাম দেওয়া দাবির অগ্রগতি জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (রুটিন ভিসি) অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলীর সাথে সাক্ষাৎ এর পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সাহেদ আহম্মেদ বলেন, আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসির কাছে দুই দফা দাবি দিয়েছিলাম। তার আপডেট জানতে আজ স্যারের সাথে আবারও দেখা করেছি। আমাদের দাবিগুলো হলো, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়ক দ্রুত সংস্কার করার ব্যবস্থা করা এবং কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু মৌখিক দাবি ছিল। যেমন, ক্যাম্পাসে একটি ফায়ার সার্ভিস স্থাপন এবং ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া-শান্তিডাঙ্গা এলাকায় যে বিদ্যুৎ সমস্যা আছে তার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া। কারণ এখানে প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ভোগান্তির শিকার হয়। আমরা আশাবাদী যে প্রশাসন আমাদের দাবিগুলো দ্রুত পূরণ করবেন। তবে আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে আল্টিমেটাম ছাড়া কোনো কাজ হয় না বা বাস্তবায়ন দেখি না।
সাক্ষাৎকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (রুটিন ভিসি) অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, ছাত্রদল যে দাবিগুলো করেছে সেগুলো প্রায় কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিছু কাজ চলমান। আর কিছু নীতি নির্ধারনী কাজ আছে যেগুলো মাননীয় উপাচার্য আসলে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিবেন।
“রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না থেকেও জামায়াত জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে”- এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মো. খায়রুল হাসান।
তিনি বলেন, “মানুষের কষ্ট লাঘব করা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা না থাকলেও দলীয়ভাবে সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে জামায়াত একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোনপাড়ায় জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক সংস্কার কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী এ সড়ক সংস্কার হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, জামায়াতের উদ্যোগে সড়ক সংস্কার হওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. আফতাব উদ্দিন, পৌর আমীর মাওলানা আমিমুল এহসান, পৌর নায়েবে আমীর মাওলানা আনোয়ার হোসেন, থানা কর্মপরিষদ সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম, জামায়াত নেতা ও সাংবাদিক হুমায়ুন কবির, মো. আরিফ, মো. আবু তাহের, মনির হোসেনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উপস্থিত নেতারা বলেন, “জামায়াত সবসময় আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখে এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জননেতা মো. খায়রুল হাসান সরকারি কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ ও কালীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার আহ্বান জানান এবং শিক্ষার প্রসারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এলাকার বাসিন্দারা বলেন, জামায়াতের এ ধরনের অংশগ্রহণমূলক উদ্যোগ স্থানীয় উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও দেশবরেণ্য সাংবাদিক মরহুম মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার মাদারীপুর পৌরসভার ডিজিটাল সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি শরীফ মোঃ ফায়েজুল কবীর। সঞ্চালনা করেন সংগঠনিটির জেলা শাখার সেক্রেটারী সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ও মাদারীপুর পৌরসভা প্রশাসক হাবিবুল আলম, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব, জেলা তথ্য কর্মকর্তা বেনজীর আহম্মেদ, মাদারীপুর পৌরসভা সচিব খন্দকার আবু আহম্মেদ ফিরোজ, সংস্থাটির উপদেষ্টা এবং জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুবল বিশ্বাস, নবনির্বাচিত উপদেষ্টা মিজানুর রহমান পিন্টু, সিনিয়র সাংবাদিক আহসান কাজল, জাতীয় রিপোর্টার্স ক্লাব মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি তাজুল মাতুব্বর, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, বিশিষ্ট ঠিকাদার ব্যবসায়ী শরীফ মহিউদ্দিন হাফিজ, জেলা কিন্ডারগার্টেন এর সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট এফ,এইচ কিন্ডারগার্টেন প্রধান শিক্ষক মাহাববুর রহমান রিপন মুন্সী, মানবাধিকার প্রতিনিধি ও সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট (অবঃ) আঃ কুদ্দুস পান্না হাওলাদারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সহ বিশেষ অতিথিবৃন্দ ও আমন্ত্রিত অতিথিরা মরহুম মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনের মতো এমন একজন দেশবরেণ্য সিনিয়র সাংবাদিকের ১ম মৃত্যু বার্ষিকীতে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনের জন্য জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, মাদারীপুর জেলা শাখার নেতারাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবন্দকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। পরে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ নবনির্বাচিত উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ মিজানুর রহমান পিন্টুকে ফুলের শুভেচ্ছা প্রদানের পাশাপাশি সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
মন্তব্য