একাত্তরের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আজ বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দৃষ্টি কাড়ছে সবার। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের’ জায়গায় কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশগুলোও এখন বাংলাদেশের বন্ধু হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে। ইউনেসকো বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামে বাংলাদেশ এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আয়তনে ছোট ও সীমিত সম্পদ নিয়ে ৫০ বছরের মাথায় অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যাওয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
বাংলাদেশ এখন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) নামের ৬২ দেশের জোটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামেও নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউনিসেফ নির্বাহী বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও জাতিসংঘ প্রকল্প সেবাগুলোর কার্যালয়ের (ইউএনওপিএস) নির্বাহী বোর্ডের সহ-সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক সিবেড অথরিটি কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। এ সংস্থাটি বিশ্বের সমুদ্র সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও সঠিক ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৩টি রাষ্ট্রের সংস্থা ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) ২১তম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ।
আঞ্চলিক জোটের নেতৃত্বেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশনের (বিমসটেক) নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ। বিমসটেকের সদরদপ্তর এখন ঢাকায়। এ ছাড়া দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্ক বাংলাদেশের উদ্যোগেই গঠিত হয়েছিল।
এ ছাড়া বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর চাপ উপেক্ষা করে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থায় (ওআইসি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বের অন্যতম মুসলিম দেশ হিসেবে অন্য মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭৪ সালে ভারতকে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে ওআইসি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন।
৫০ বছরে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গেও কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে।
বাংলাদেশ এখন রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করছে। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে চালিয়ে যাচ্ছে কূটনীতি।
৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক সময়ে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীলের কাতারে উন্নীত হওয়ার সুপারিশ পেয়েছি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে নেতৃত্ব দিচ্ছি। বিদেশে বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ তৈরিতে কাজ করছি। আমাদের কেউই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।’
মুক্তবাজার অর্থনীতি ও স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী যুগে এসে বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। ফলে ’৭১-এ বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়া ভারতই কেবল নয়, সে সময়ের অন্যতম মিত্র রাশিয়াও আজ একই রকম বাংলাদেশের বন্ধু। আবার স্বাধীনতার বিরোধিতা করা চীন, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও বাংলাদেশের ভারসাম্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
চলতি বছরের পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে (২৩ মার্চ) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সে দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ তিনি কোভিড আক্রান্ত ইমরান খানের সুস্থতাও কামনা করেন। এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে এবার আম পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে ২৬ মার্চ, অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসেই ঢাকা আসেন। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এসেছেন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে স্থায়ী কোনো বন্ধু থাকে না, স্থায়ী কোনো শত্রুও থাকে না।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সৌদি আরবসহ আরও অনেক মুসলিম দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। কিন্তু তখন বিশ্ব ছিল দুই ব্লকে বিভক্ত। ভারত ও রাশিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছে। কিন্তু এখন বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ব এখন বলতে গেলে এককেন্দ্রিক। তাই বাংলাদেশও আর কোনো ব্লকের দিকে নয়, সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার মতে, বঙ্গবন্ধু একজন ঝানু কূটনৈতিক দূরদর্শী ছিলেন। আর এই কারণেই তিনি ১৯৭৫ সালের প্রথম দিকে কে এম কায়সারকে চীনে পাঠিয়েছিলেন, চীন যাতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তিনি এটাও উপলব্ধি করেছিলেন, ইসলামি বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জরুরি। আর সে কারণেই তিনি ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত মিলে এ অঞ্চলে চীনকে আটকানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে চীন বাংলাদেশের প্রধান উন্নয়ন অংশীদার ও সামরিক সরঞ্জামও অস্ত্রের যোগান দাতা। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানও এই অঞ্চলে তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। যে কারণে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও জাপানের ‘দ্য ইনিশিয়েটিভ অব বিগ বি’ বা ‘দ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলাদেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করে বাংলাদেশের উন্নয়নে, দাতা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কটাকে একটা শক্তিশালী পর্যায়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দাতা দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ককে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিকভাবেই বজায় রাখছে। কখনই বাংলাদেশের সঙ্গে দাতা দেশগুলোর সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো ঘাটতি হয়নি; কিন্তু সম্পর্কের ধরনের মধ্যে আত্মমর্যাদা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য বিষয়গুলোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির জন্য বা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দাতা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থবহ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এবং দরকষাকষিমূলক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অন্যদিকে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক পাশে তিন দিক দিয়ে ঘিরে রাখা ভারত, অন্যদিকে মহাচীন বাংলাদেশকে একটি তুলনামূলক ছোট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এমনকি প্রতিবেশী মিয়ানমার, জনসংখ্যায় আমাদের এক-তৃতীয়াংশ হলেও আকারে পাঁচ গুণ। বাংলাদেশের কূটনীতি এসব বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই পরিচালিত করতে হয়েছে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়—এই মূলনীতি দিয়েছে আমাদের সংবিধান। তবে বাস্তব দুনিয়া এত সরল পথে চলে না।’
২০০৯ এ বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ দেশের জন্য যেমন, কূটনীতিকদের জন্যও একটা স্বস্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একে স্বাগত জানায় এবং কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উপনীত হয়, দুই দেশের উচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকা ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তি অবশেষে কার্যকর হয় এবং ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে বিতাড়ন করা হয় এবং তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা বেড়েছে।
ভারতকে তার উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে খুলে দেওয়া ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু এ ক্ষেত্রে আরেকটি সংযোজন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, সাফল্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কূটনীতি বেশ কিছু হতাশা আর সমস্যারও সম্মুখীন হয়েছে এ সময়ে। প্রথমত, উচ্চপর্যায়ের সুসম্পর্ক সত্ত্বেও বাংলাদেশের এত সব ইতিবাচক পদক্ষেপের কোনো দৃশ্যমান প্রতিদান দেয়নি ভারত। সীমান্তে হত্যা বন্ধ করেনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী, তিস্তা পানিবণ্টনের কোনো সুরাহা হয়নি। উপরন্তু ভারতীয় শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিকদের কিছু অসম্মানজনক কথাবার্তা বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভই শুধু বাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্বেগ বাড়িয়েছে আসামের নাগরিকপঞ্জি আর ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বপরিমণ্ডলে শেখ হাসিনা আজ গণতন্ত্র, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রতীক। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অনেক প্রস্তাব আনে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন এবং সব জাতিসত্তার অব্যাহত উন্নয়ন ও মুক্তি। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার কল্যাণেই আজ জাতিসংঘে “শান্তির সংস্কৃতি” চালু হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী জোরালোভাবে অনুসৃত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ধৈর্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
‘শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ মীমাংসা, আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর নেতৃত্ব প্রদান, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদান—এ বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেয়া বক্তব্যে পৃথিবীর অনেক প্রখ্যাত নেতাও এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন।’
মোমেন বলেন, ‘আমাদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো মানবসম্পদ ও পানিসম্পদ। এই দুই সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা অর্জন আমাদের জন্য সহজ হবে।’
৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:চলতি বছর ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ বছর কারা ও কতজন এ পুরস্কার পাচ্ছেন, তা জানাননি উপদেষ্টা।
সচিবালয়ে রবিবার স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি উল্লিখিত বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কমিটি কিছু নাম সুপারিশ করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্যতিক্রমী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই সময়ে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এর আগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। র্যাবের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেও দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর ১০ জনের কম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য