যুদ্ধবিধ্বস্ত পোড়ামাটি আর ধ্বংসস্তূপের ছাই থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে – এক কথায় বাংলাদেশের ৫০ বছরের পথচলার গল্পটা এ রকম।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ানোর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল গোটা বাংলাদেশ।
অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তাফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ ও ভয়াবহতা ছিল অবর্ণনীয়। পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, তখন সারা দেশের মানুষের হাতে ছিল মাত্র ৪ কোটি টাকা। কোনো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিল না।
‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্দেশে আল-বদর সদস্যরা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সব টাকা ১৬ ডিসেম্বর সকালে রাস্তায় এনে আগুন দিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছিল। অর্থাৎ একটি ধ্বংসস্তূপের ছাই থেকে শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা, যার স্থপতি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
‘মাত্র ১০ হাজারের মতো নথি দিয়ে শুরু হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়। বঙ্গবন্ধু যেদিন টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করেন, সেদিন ঢাকার সঙ্গে মাত্র তিনটি জেলার টেলিযোগাযোগ ছিল। বাকি জেলাগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন।
‘বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার নেয়া যুগান্তকারী বিভিন্ন পদক্ষেপের উপর ভর করে একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও ধ্বংসস্তূপের ছাই থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ আজ নিজের যোগ্যতায় বিশ্বের বুকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে জায়গা করে নিয়েছে।’
একাত্তরে বিশ্বের মানচিত্রে যখন নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়, তখন অর্থনৈতিকভাবে এটির টিকে থাকা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন।
১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক তাদের প্রথম প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিল, ‘সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন সমস্যাটি হবে জটিল।’ একই বছর তখনকার আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার দম্ভোক্তি করেছিলেন, ‘বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ।’
১৯৭৬ সালে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পরীক্ষাক্ষেত্র বলে উল্লেখ করেন নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড এবং আমেরিকান অর্থনীতিবিদ জে আর পার্কিনসন।
তবে এতোসব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে যখন বিজয় দিবস পালন করছে বাংলাদেশ, তখন অনেক বিবেচনাতেই বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
উন্নয়ন পরিক্রমা বিবেচনায় স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির যে অসামান্য অর্জন, তা বিশ্বের খুব কম দেশেরই রয়েছে। অর্থনীতির এই ঈর্ষণীয় অর্জনের উচ্চতা কতটুকু, তা পরিমাপের পরিষ্কার ধারণা উঠে এসেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যে। সেখানে সমৃদ্ধির সমার্থক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদ ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখেও বাংলাদেশের উন্নয়নের জয়গান শোনা যায়। জাতিসংঘের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তকমা ঘুচিয়ে উন্নয়নশীল দেশ। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) সুপারিশ অনুযায়ী, গত ২৫ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভায় বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ হবে পরিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ।
জাতিসংঘের ইকোসক-এর মানদণ্ড অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে হলে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৬৪ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্ট দরকার হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হয় ৩২ শতাংশ বা এর কম, সেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের স্বীকৃতি এসেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের সবশেষ প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল- ২০২১’ প্রতিবেদন থেকেও।
এই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বাংলাদেশকে ২০২০ সালের সূচকে বিশ্বের ১৯৬টি দেশের মধ্যে ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যদ্বাণী করে আরও বলা হয়েছে, আগামী ১৫ বছর পর অর্থাৎ ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড বা আইএমএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখনই তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ব্লুমবার্গ বলেছে, বাংলাদেশ হতে পারে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ।
হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)-এর সবশেষ গ্লোবাল রিসার্চ ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ২০৩০: আওয়ার লং টার্ম প্রজেকশনস ফর ৭৫ কান্ট্রিজ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৬ ধাপে উন্নীত হবে। এর মধ্য দিয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নের প্রধান ১২টি সূচকের ১০টিতেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও অন্যান্য নিম্ন আয়ের দেশের তুলনায় ভালো করছে।
৫৪টি স্বাধীন দেশের সমন্বয়ে গঠিত জোট কমনওয়েলথ-এর মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড জানান, ‘শুধু গত দশকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১৮৮ ভাগ বেড়েছে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইকমিশন ও কমনওয়েলথ সচিবালয়ের যৌথ আয়োজনে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় তিনি বাংলাদেশের এই অসামান্য অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করে আরও বলেন, ‘১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা বহন এবং বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশে অর্থনীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।’
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত মানব উন্নয়ন সমীক্ষা ২০২০-এ দাবি করা হয়, মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন অসাধারণ। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মানব উন্নয়ন সূচক শতকরা ৬০ দশমিক ৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের অগ্রগতির নজির বিশ্বে কমই আছে। এতে আরও বলা হয়, গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪ বছর, গড় শিক্ষাকাল বেড়েছে ৩ দশমিক ৪ বছর এবং প্রত্যাশিত শিক্ষাকাল বেড়েছে ছয় বছর। এ ছাড়া এ সময়ে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও বেড়েছে প্রায় শতকরা ২২০ দশমিক ১ ভাগ।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ‘ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স-আইডিআই ২০১৮’ র্যাংকিংয়ে অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে (আইডিআই) ভারতের চেয়ে ২৮ ধাপ এবং পাকিস্তানের চেয়ে ১৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬-এর তথ্য অনুযায়ী লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ এশিয়ায় সবচেয়ে সফল দেশ। ১৪৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিচারেও এগিয়ে বাংলাদেশ
একটি দেশের অর্থনীতি কতটা এগোল, তার আরেকটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ভিত্তিক প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা থেকে। তাই দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা দাবি করেন, একটি দেশ আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কতটা উন্নতি করল, মোটাদাগে তার পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে সে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতা থেকে। প্রবৃদ্ধি যত বেশি হবে এবং সেটা যতো টেকসই হবে, সেই দেশের অর্থনীতির ভিত্তি তত বেশি মজবুত।
অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল জানান, ‘স্বাধীনতার প্রথম ৩৮ বছর আমাদের জিডিপির আকার ছিল ১০০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা চার গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১১ বিলিয়ন ডলারে।’
আর জিডিপি অর্জনের এই গভীরতাকে একটু ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বের দেশে দেশে প্রবৃদ্ধির অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। সেখানে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পর গত পাঁচ দশকের শেষ দুই দশকে প্রায় প্রতি বছর আগের বছরের তুলনায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি গড়ে এক শতাংশ হারে যোগ হয়েছে। এটা বিশ্বে অনন্য নজির। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের প্রথম তিন দশকেও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ছিল। ওই সময় প্রতি দশকে গড়ে এক শতাংশের অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধি যোগ হয়েছে।’
ড. খলীকুজ্জমান আহমদ জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশির দশকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। ৯০ দশকে তা বেড়ে হয় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, শূন্য দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। ২০১০ সাল থেকে টানা পরবর্তী পাঁচ বছর গড়ে ৬ শতাংশ হারে এবং ২০১৫ পরবর্তী টানা তিন বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় গড়ে ৭ শতাংশ হারে। ২০১৮-১৯ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়, যা বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের আঘাত আসার আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
ড. কাজী খলিকুজ্জামান দাবি করেন, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মানুষের বর্তমান মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা স্বাধীনতার পর ৭০ দশকে ছিল ৫০ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে।
সামাজিক ও মানব উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকেও বাংলাদেশের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। সাফল্য মিলেছে শিল্পেও। দেশে এখন শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের জোয়ার বইছে। পিছিয়ে নেই কৃষিতেও। কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরি প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদন বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই বাড়ছে বাংলাদেশে।
ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, ‘এসব সাফল্য অর্জিত হয়েছে সরকারের সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারণেই। এই অভূতপূর্ব অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে তার বিজয়ের গৌরব অটুট রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে নিয়ে আর কেউ দম্ভোক্তিপূর্ণ মন্তব্য করতে সাহস রাখে না।’
সমালোচকেরাও করছেন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা
বাংলাদেশের এই উন্নয়ন অগ্রগতির মূল্যায়ন প্রশ্নে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজয়ের ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্যরকমের। বিশ্ববাসী যা ভাবতে পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো বাংলাদেশকে। এখন নিন্দুকেরাও আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, জন্মহার, মৃত্যুহার, শিক্ষার হার, দারিদ্র্যের হার – এমন আর্থ-সামাজিক সব সূচকেই বাংলাদেশ তার অপ্রতিরোধ্য সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এগিয়ে যাওয়ার এখনও অনেক পথ বাকি। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও বৈষম্য কমেনি। এটা কমানো না গেলে সবার জন্য সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। তা ছাড়া আমাদের লক্ষ্য উচ্চ আয়ের দেশে পৌঁছানো। এর জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। ভোগ এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ ছাড়া সেটা সম্ভব হবে না। দেশে বেসরকারি বিনিয়োগে খরা চলছে। সরকারি বিনিয়োগের বাস্তবায়ন সক্ষমতা কম। বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত হারে আসছে না। দারিদ্র্যের হার করোনার কারণে আবার বাড়তে শুরু করেছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারকে এখনই এসব বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন সারা বিশ্বে প্রশংসনীয়। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছি। দেশ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে করে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বিশ্বের শীর্ষ ২০টি দেশের একটি হব। এই অর্জন এ দেশের সাধারণ মানুষের। আমি বিশ্বাস করি, এই অর্জন আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন:৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:চলতি বছর ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ বছর কারা ও কতজন এ পুরস্কার পাচ্ছেন, তা জানাননি উপদেষ্টা।
সচিবালয়ে রবিবার স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি উল্লিখিত বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কমিটি কিছু নাম সুপারিশ করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্যতিক্রমী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই সময়ে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এর আগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। র্যাবের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেও দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর ১০ জনের কম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য