স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা মানুষের মন। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি মুক্তি পায় রোমান্টিক ড্রামা ঘরানার সিনেমাটি। মুস্তাফা মেহমুদ পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেন রাজ্জাক, ববিতা, আনোয়ার হোসেন, রোজী আফসারী, আনোয়ারাসহ অনেকে।
স্বাধীন দেশে ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে চলচ্চিত্রের বিকাশ ঘটে দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে। একের পর এক নতুন সিনেমা হল তৈরি হতে থাকে। চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে প্রধান বিনোদন মাধ্যম।
স্বাধীনতার পরের বছরই প্রায় ৩০টির মতো সিনেমা মুক্তি পায়, যার মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধত্তিক সিনেমা ওরা ১১ জন। সে বছর মুক্তি পায় মন্টু পরদেশী এবং রূপকার নামের দুটি উর্দু ভাষার সিনেমাও।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৩ সালেও মুক্তি পায় প্রায় ৩০টির মতো সিনেমা। এর মধ্যে তিনটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা, একটি ছিল উর্দু। ওই বছরই মুক্তি পায় ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম।
এটির প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর সিনেমা ব্যবসা ভালো ছিল। সেটা বোঝা যায় সিনেমা নির্মাণের পরিমাণ এবং প্রেক্ষাগৃহের বৃদ্ধি দেখে। ব্যবসা ভালো ছিল বলেই তা হয়েছে।’
১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭ সালে সিনেমা মুক্তির সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩১, ৩৪, ৪৬, ৩০টি করে। ’৭৮ থেকে ’৮৫ পর্যন্ত সিনেমা মুক্তির সংখ্য কমে যায়। ১৯৮৬ সালে সিনেমা মুক্তির সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৫০-এ।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৩১৩টি। এর মধ্যে ঢাকায় ১৩টি আর সারা দেশ মিলিয়ে বাকি ৩০০টি প্রেক্ষাগৃহ ছিল বলে জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিঞা আলাউদ্দিন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কারণ তখন সিনেমার ভালো ব্যবসা ছিল। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সিনেমা হল বেড়েছে। তখন সিনেমা হলের সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় ১৪শর ওপর।’
প্রেক্ষাগৃহ বৃদ্ধির পেছনে মিঞা আলাউদ্দিন তিনটি সিনেমার ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এগুলো হলো রূপবান, বাহরাম বাদশাহ ও বেদের মেয়ে জোসনা।
মিঞা আলাউদ্দিন জানান, ১৯৯৩ সাল থেকে সিনেমা হলের সংখ্যা কমতে থাকে। সে সময় সিনেমার প্রিন্ট করতে খরচ হতো অনেক। কারণ সব ছিল থার্টি ফাইভ মিলিমিটার ফিল্ম। প্রযোজক তার সিনেমার পাঁচটি প্রিন্ট করালে সেটি একে একে ঘুরত সারা দেশের সিনেমা হলগুলোতে।
যারা সারা দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে সিনেমার প্রিন্ট পাঠাতেন তাদেরকে বলা হয় ডিস্ট্রিবিউটর। টাকা খরচ করে সিনেমা নির্মাণ করেন প্রযোজক। প্রযোজকের কাছ থেকে সিনেমাটি নিয়ে সারা দেশে পরিবেশন করেন ডিস্ট্রিবিউটর। আর যারা সিনেমাটি দেখান তারা হলেন হল মালিক বা এক্সিবিটর।
সব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এই পদ্ধতিতেই কাজ চলে বলে জানান মধুমিতা হলের মালিক ও প্রযোজক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এভাবেই কাজ হচ্ছে। আর এটাই স্ট্যান্ডার্ড সিস্টেম।’
তবে এইখানে ‘বুকিং এজেন্ট’ নামে নামে একটি মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠী সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। এরা সিনেমা হল মালিকদের কাছে সিনেমা নিয়ে যাবে বলে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে কমিশন নেয়। আবার সিনেমা পাইয়ে দেবে বলে সিনেমা হল মালিকদের কাছ থেকেও কমিশন নেয়।
ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ পদ্ধতি পৃথিবীর আর কোথাও নেই।’
এসব সমস্যা নিয়েও ৯০ এর দশক পর্যন্ত ভালোই চলেছে সিনেমার ব্যবসা। একবিংশ শতাব্দিতে এসে সিনেমার ব্যবসা নেই বলে মনে করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজকরা।
২০১৯ সালে অর্থাৎ করোনার আগের বছরগুলোতে ক্রমাগত সিনেমা মুক্তির সংখ্যা কমেছে। সেন্সর বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত দেশে গড়ে মুক্তি পেয়েছে ৪৮টি করে সিনেমা। প্রেক্ষাগৃহ এসে ঠেকেছে ৬০ এ।
সিনেমা নির্মাণে প্রযুক্তির পরিবর্তন এসেছে ঠিক, কিন্তু সে পরিবর্তনে সিনেমার ব্যবসা বাড়েনি। সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ হয়েছে বিপুলভাবে আর তার বিপরীতে স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার, সিলভার স্ক্রিনের মতো উন্নত প্রযুক্তির নতুন প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হয়েছে হাতে গোনা ১০টি। এসব স্প্লিট স্ক্রিনে বিদেশি সিনেমা প্রদর্শিত হয়। ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত এসব প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ২৬৪টি হলিউড সিনেমা।
তবে চিত্রটি একতরফা চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষয়ের নয়। প্রযুক্তির উৎকর্ষ ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্ম নামে নতুন একটি ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে। হইচই, জি-ফাইভ এর মতো বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি দেশেও তৈরি হয়েছে কয়েকটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সিনেমা থেকে শুরু করে নানা রকম কনটেন্ট নির্মিত হচ্ছে। সে সংখ্যাও কম নয়।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ১২ মাসে ১২টি কনটেন্ট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমরা আপাতত সেটা পূরণ করছি। আগামীতে অবশ্যেই কনটেন্ট সংখ্যা বাড়বে। আমরা যেমন আশা করেছিলাম তার চেয়েও বেশি সাড়া পাচ্ছি। একটা উদাহরণ দিলে বুঝবেন, ৩১টি কারেন্সি (৩১ ধরনের বিদেশি মুদ্রা) দিয়ে চরকির সাবস্ক্রিপশন হয়।’
চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানের সংখ্যা এবং পরিমাণ দুটোই বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬টি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান দিয়েছে সরকার।
অনুদান কমিটির সাবেক সদস্য নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনুদান এবং অনুদানের অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। আমি যখন কমিটিতে ছিলাম, এটা তখন থেকেই বলছিলাম এবং সরকার এটা করেছে এ জন্য ধন্যবাদ। এই বৃদ্ধি করোনার জন্য নয়। এখন থেকে এ পরিমাণেই অনুদান দেয়া হবে।’
দেশে চলচ্চিত্র শিল্পটি ব্যবসা হিসেবে সংকুচিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের বিশ্ব দরবারে পা রাখা শুরু হয়েছে।
দেশের বাইরে বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। মিশন এক্সট্রিম সিনেমাটি এক সঙ্গে চার মহাদেশে মুক্তি পেয়েছে। ঊনপঞ্চাশ বাতাস টাইমস স্কয়ারসহ কানাডায় প্রদর্শিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে প্রদশিত হচ্ছে বাংলাদেশের সিনেমা।
১৯৭৯ সালে মুক্তি পাওয়া সূর্য দীঘল বাড়ী সিনেমাটি ১৯৮০ সালে জার্মানির ম্যানহেইম চলচ্চিত্র উৎসব অংশগ্রহণ করে এবং তিনটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। পর্তুগালের ফিগুএরা দা ফোজ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে অর্জন করে একটি পুরস্কার। এ ছাড়া সীমানা পেরিয়ে, মাটির ময়না, স্বপ্নডানায়সহ অনেক সিনেমাই অংশ নিয়েছে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে।
২০২১ সালে সেই অর্জনকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমাটি। এটি কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অঁ সতেঁ রিগা নামের প্রতিযোগিতা বিভাগ অংশে নেয়া প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা।
এমন ছোট ছোট আরও অনেক অর্জন বাংলাদেশের সিনেমা জগতে যুক্ত হয়েছে গত ৫০ বছরে। তবে আশানুরূপ সিনেমা নির্মাণ না হওয়া, সিনেমা হল কমে যাওয়া এবং সিনেমায় ব্যবসা না থাকায় এসব অর্জন অনেক সময়েই থাকছে চোখের আড়ালে।
মুক্তির আগ থেকেই তুমুল আলোচনায় ছিল ভারতের দক্ষিণের কন্নড় সিনেমা কেজিএফ চ্যাপ্টার টু।
যেমনটি আলোচনায় ছিল, বাস্তবেও ঠিক তেমনই ঘটছে। গত ১৪ এপ্রিল মুক্তির পর থেকেই বক্স অফিসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কেজিএফ টু।
ইতোমধ্যে হিন্দি ভার্সনে রেকর্ড গড়েছে সিনেমাটি। ৭ দিনে ২৫৫ কোটি রুপি আয় করেছে। যা বাহুবলি টুর রেকর্ডও ভেঙেছে।
হিন্দি ছাড়াও সিনেমাটি কন্নড়, তেলেগু, তামিল ও মালায়ালাম ভাষায় মুক্তি পেয়েছে। সব মিলিয়ে প্রথম সপ্তাহের শেষে সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী ৭০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করেছে।
ভারতীয় চলচ্চিত্র বাণিজ্য বিশ্লেষক মনোবালা বিজয়বালান বৃহস্পতিবার দুপুরে এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন।
#KGFChapter2 ZOOMS past ₹700 cr milestone mark.
— Manobala Vijayabalan (@ManobalaV) April 21, 2022
২০১৮ সালের শেষের দিকে মুক্তি পায় প্রশান্ত নীল পরিচালিত এই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম সিনেমা কেজিএফ চ্যাপ্টার ওয়ান।
মুক্তির পর শুধু ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এটি। বক্স অফিসে গড়েছিল ইতিহাস।
গ্যাংস্টারদের নিয়ে গল্পের এই সিনেমায় দুর্দান্ত মারকুটে অভিনয় দিয়ে পুরো ভারত মাতিয়েছিলেন কন্নড় সুপারস্টার যশ। শুধু তা-ই নয়, এই সিনেমা দিয়ে দেশের বাইরেও লাখো ভক্ত-অনুরাগী জুটিয়েছেন এই অভিনেতা।
যশ বাদেও কেজিএফ চ্যাপ্টার টু-তে আরেক মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকে। এ ছাড়া এতে গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাবিনা ট্যান্ডন, প্রকাশ রাজ, শ্রীনিধি শেট্টির মতো তারকারা।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্থগিত থাকা ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ এপ্রিল নজরুল মঞ্চে। উৎসব চলবে ১ মে পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলিউড অভিনেতা ও আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে বিজয়ী তৃণমূল এমপি শত্রুঘ্ন সিনহা।
আরও উপস্থিত থাকবেন অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে।
উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হলেও আমাদের সাবধানে থাকতে হবে। সাবধানতার কথা বিবেচনা করেই এবার বাইরের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’
কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধায় উৎসবের উদ্বোধনী ফিল্ম হিসেবে একই সঙ্গে নজরুল মঞ্চ ও রবীন্দ্র সদনে দেখানো হবে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অরণ্যের দিনরাত্রি।
পরিচালক অরিন্দম শীল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সত্যজিতের সঙ্গে কাজ করা জীবিত শিল্পী ও কলাকুশলীদের এবার সংবর্ধনা দেয়া হবে।
এবার সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তব্য দেবেন পরিচালক সুজিত সরকার। সত্যজিতের জীবন ও কাজের ওপর প্রদর্শনীও থাকছে উৎসবে।
চলচ্চিত্র উৎসবের থিম ‘কান্ট্রি ফিনল্যান্ড’। কলকাতা শহরের ১০ হলে ৪০ দেশের ১৬৩টি সিনেমা দেখানো হবে এবারের উৎসবে।
২৭তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আটটি বিলুপ্তপ্রায় ভাষার সিনেমা দেখানো হবে। ভাষাগুলো হলো বোরো, টুলু, রাজবংশী, সান্তাড়, ও কোঙ্কনী ও কুড়ুম্বা।
চিদানন্দ দাশগুপ্ত, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, দিলীপ কুমার, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত ও নিকোলাস জাঙ্কসোকে নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকছে।
শিশির মঞ্চে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব শান্তনু বসু, মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী, পরিচালক গৌতম ঘোষ, পরিচালক অরিন্দম শীল, হরনাথ চক্রবর্তী, অভিনেত্রী জুন মালিয়া।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জানান যে, তার এবং নিক জোনাসের জীবনে সন্তান এসেছে। সারোগেসির মাধ্যমে তারা মা-বাবা হয়েছেন। তবে ছেলে না মেয়ে সন্তান তা জানাননি তিনি।
সেসময় বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম জানায়, কন্যা সন্তানের মা-বাবা হয়েছেন তারকা দম্পতি।
কিন্তু কখনো সন্তানের নাম কিংবা ছবি, কোনোটাই প্রকাশ্যে আনেননি অভিনেত্রী।
তবে দেশটির একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রিয়াঙ্কা-নিক তাদের মেয়ের নাম কী রেখেছেন তা এবার প্রকাশ্যে। তারকা দম্পতি কন্যার নাম রেখেছেন মালতী মারি চোপড়া জোনাস।
জন্ম সনদও নাকি হাতে পেয়েছে হলিউড কেন্দ্রিক একটি সংবাদ সংস্থা। সেই সূত্রেই জানা গেছে এই নাম।
সংস্কৃত এবং ল্যাটিন দুই শব্দ মিশিয়ে মেয়ের নাম রেখেছেন প্রিয়াঙ্কা-নিক। সংস্কৃতে ‘মালতী’ শব্দের অর্থ হল একরকম সুগন্ধযুক্ত ছোট সাদা ফুল অথবা চাঁদের আলো।
অন্যদিকে ‘মারি’ শব্দের অর্থ সমুদ্রকে রক্ষা করে যে নারী। মূলত মাতা মেরিকে অনেক সময় এই আখ্যা দেয়া হয়। যিশুর মাতা মেরিকে ফ্রাঞ্চে ‘মারি’ বলা হয়।
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও মেয়ের নাম বা ছবি কোনোটাই প্রকাশ্যে আনেননি তারকা জুটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগো শহরের এক হাসপাতালে গত ১৫ জানুয়ারি জন্ম হয়েছে নিক-প্রিয়াঙ্কার মেয়ের।
এরপর ২২ জানুয়ারি ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান হওয়ার কথা প্রকাশ্যে আনেন প্রিয়াঙ্কা।
প্রিয়াঙ্কার হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রোজেক্ট। এর মধ্যে টেক্স অফ ইউ রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। পাশাপাশি আমাজনের টিভি সিরিজ সিটাডেল-এর শুটিংও শেষ করেছেন অভিনেত্রী।
সম্প্রতি এক পান মসলার কোম্পানির বিজ্ঞাপন করেন বলিউডের অভিনেতা অক্ষয় কুমার। শাহরুখ খান, অজয় দেবগনের মতো বলিউড তারকারা আগে থেকেই সেই সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
তবে অক্ষয় এই বিজ্ঞাপনে অংশ হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া জানান তার ভক্ত-অনুরাগীরা। তাই তাদের ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে সেই সংস্থা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন অভিনেতা।
নিজের স্বাস্থ্য এবং শরীরচর্চা নিয়ে অত্যন্ত সজাগ অক্ষয়। যা তার চারপাশের লোকজন এবং অনুরাগীদেরও অনুপ্রেরণা জোগায়। তাই তিনি এই ধরনের বিজ্ঞাপনে অংশ নেয়ায় রুষ্ট হন অনেকেই।
এ জন্য বুধবার গভীর রাতে এক টুইট বার্তায় বিজ্ঞাপন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেন অক্ষয়।
সেই পোস্টে ক্ষমা প্রার্থনা করে অভিনেতা লেখেন, ‘আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার অনুরাগী, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। গত কয়েক দিন ধরে আপনাদের কাছে থেকে যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি তা আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। আমি তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন কখনই করিনি এবং কোনো দিন করব না। বিমন ইলাইচির সঙ্গে আমার চুক্তি নিয়ে আপনাদের আবেগ বুঝতে পারছি। সেই আবেগকে সম্মান জানিয়েই বিনয়ের সঙ্গে সরে দাঁড়াচ্ছি।’
ওই বিজ্ঞাপন থেকে পাওয়া টাকা সমাজসেবার কাজে দান করে দেবেন বলেও জানিয়েছেন অক্ষয়।
তিনি লেখেন, ‘বিজ্ঞাপনের পারিশ্রমিক বাবদ পাওয়া টাকা দান করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই সংস্থা হয়তো বিজ্ঞাপনটির সম্প্রচার চালিয়ে যাবে, অন্তত আইনিভাবে চুক্তির মেয়াদ শেষ না পর্যন্ত। তার দায় আমারই। তবে কথা দিচ্ছি, আগামী দিনে কাজের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকব। বিনিময়ে আপনাদের ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা প্রার্থনা করি।’
তবে সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ কবে শেষ, তার উল্লেখ করেননি অক্ষয়।
আরও পড়ুন:২০১৮ সালের শেষের দিকে মুক্তি পায় ভারতের দক্ষিণের কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিগ বাজেটের সিনেমা কেজিএফ চ্যাপ্টার ওয়ান।
মুক্তির পর শুধু ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এটি। বক্স অফিসে গড়েছিল ইতিহাস।
গ্যাংস্টারদের নিয়ে গল্পের এই সিনেমায় দুর্দান্ত মারকুটে অভিনয় দিয়ে পুরো ভারত মাতিয়েছিলেন কন্নড় রকিং স্টার যশ। শুধু তা-ই নয়, এই সিনেমা দিয়ে দেশের বাইরেও লাখো ভক্ত-অনুরাগী জুটিয়েছেন এই অভিনেতা।
এরপর আবার ১৪ এপ্রিল কেজিএফ চ্যাপ্টার টু মুক্তির পর ঝড় তুলেছে বক্স অফিসে। জনপ্রিয়তা আর খ্যাতির শীর্ষে এখন যশ। তার সঙ্গে যখন অভিনয় করতে মুখিয়ে আছেন একাধিক অভিনেত্রী, কিন্তু তিনি কার সঙ্গে অভিনয় করার অপেক্ষায় রয়েছেন।
সেই অভিনেত্রী আর কেউ নন তিনি বলিউডের মাস্তানি দীপিকা পাডুকোন। ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যশ।
সেই সাক্ষাৎকারে যশ জানান, যদি সুযোগ দেয়া হয় তাহলে দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গে কাজ করতে চান তিনি। আর তার বিপরীতে অভিনয় করেই বলিউডে পা রাখতে চান তিনি।
শুধু দর্শকদের নয় অনেক তারকারও পছন্দের অভিনেত্রী দীপিকা। তার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ারের ইচ্ছা প্রকাশ করেন অনেকেই। এবার সেই তালিকায় যোগ হল কেজিএফ তারকা যশ।
আরও পড়ুন:বিগত কয়েক বছরে বলিউডের চেয়ে বেশি সাড়া ফেলছে ভারতের দক্ষিণী সিনেমা। তার উদাহরণ বাহুবলী, পুষ্পা, আরআরআর, কেজিএফসহ অনেক সিনেমা। বর্তমানে বক্স অফিসে চলছে দক্ষিণী কন্নড় সিনেমা কেজিএফ টু-এর ঝড়।
কন্নড়, তেলেগু, তামিল, মালয়ালাম ও হিন্দি ভাষায় মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। এতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কন্নড় রকিং স্টার যশ। আর অন্যতম আরেক প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত।
বলিউড ও দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে পার্থাক্য কোথায়? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তা নিজের অভিমত জানিয়েছেন সঞ্জয় দত্ত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সেই সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘আমার মনে হয় হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হিরোইজম ভুলতে বসেছে, কিন্তু দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি বীরত্বকে এখনও ভুলে যায়নি। আমি বলছি না যে স্লাইস অফ লাইফ খারাপ। কিন্তু আমরা কেন আমাদের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থানের দর্শকদের ভুলে গিয়েছি, যারা আমাদের দর্শকমহলের একটি বড় অংশ।
‘আমি আশা করি, হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সেই প্রবণতা ফিরে আসবে। আগে আমাদের স্বতন্ত্র প্রযোজক এবং অর্থদাতা ছিল, যা ফিল্ম স্টুডিওগুলোর করপোরেটাইজেশনের অবসান ঘটিয়েছে। করপোরেটাইজেশন ভালো, তবে এটি সিনেমার পছন্দের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেখুন এস এস রাজমৌলির নির্দিষ্ট প্রযোজক রয়েছেন, যারা তার দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন। আমাদের সঙ্গে আগেকার দিনে গুলশান রাই, যশ চোপড়া, সুভাষ ঘাই এবং যশ জোহরের মতো প্রযোজকও ছিলেন। তারা যে সিনেমাগুলো তৈরি করেছেন তা দেখুন। দক্ষিণে তারা কাগজে স্ক্রিপ্ট দেখে, এখানে আমরা কাগজে পরিসংখ্যান দেখি।’
সঞ্জয়কে পরবর্তী সময়ে যশ রাজ ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিতব্য পৃথ্বীরাজ সিনেমায় দেখা যাবে। এতে আরও রয়েছেন অক্ষয় কুমার, মানুষী চিল্লার, সাক্ষী তানওয়ার এবং সোনু সুদ। এ ছাড়া শামশেরায় দেখা যাবে তাকে।
আরও পড়ুন:ভারতের দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল আগারওয়াল মা হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে তার কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে পুত্রসন্তান। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ আছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এ তথ্য জানিয়েছেন অভিনেত্রীর বোন নিশা আগারওয়াল।
এটি জীবনের সেরা সুখবর উল্লেখ করেন নিশা। এর আগে তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন, ‘এটি একটি আনন্দের দিন, একটি বিশেষ খবর আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার অপেক্ষা সইছে না।’
চলতি বছর জানুয়ারিতে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর জানিয়েছিলেন কাজল। ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রেমিক গৌতম কিসলুর সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন অভিনেত্রী। এবার তাদের পরিবারে এলো নতুন সদস্য। তা নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত তারকাদম্পতি।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গৌতম কিসলু তাকে যেভাবে দেখভাল করেছেন, তাতে ভীষণ খুশি অভিনেত্রী। গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বামীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি আবেগঘন বার্তাও লিখেছিলেন কাজল।
সেখানে তাকে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমাদের সন্তান আসার আগে কতটা যত্ন নিচ্ছ আমার, আমি জানতে চাই, তুমি ঠিক কতটা অসাধারণ একজন মানুষ আর কতটা অসাধারণ একজন বাবা হতে চলেছ।’
শিগগিরই কাজলকে দেখা যাবে চিরঞ্জীবী এবং রামচরণ অভিনীত আচার্য সিনেমায়। ২৯ এপ্রিল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।
মন্তব্য