বিবাহিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে এক শিক্ষার্থীর সিট কেটে দিয়েছে হল প্রশাসন। বিবাহিত হওয়ায় আরও কয়েকটি হলেও নারী শিক্ষার্থীদের সিট বাতিল করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের একজন জানান, ১২ নভেম্বর হলের সিট বরাদ্দ কমিটির একজন শিক্ষক বিবাহিত হওয়ায় তার সিট কেটে দেন। ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তবে তিনি তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী। করোনার বন্ধে আমার বিয়ে হয়। বন্ধের পর যখন আমি হলে আসি তখন ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী স্বামীর মঙ্গল কামনায় শাখা-পলা-সিঁদুর পরি।
‘হল খোলার প্রথম দিন বিষয়টি একজন ম্যামের নজরে আসার পর তিনি আমি বিবাহিত কি না জানতে চান। আমি বিবাহিত বললে তিনি আমার নাম মার্ক করে রাখেন। এরপর ১২ নভেম্বর আমার ফ্লোরের ইলা ইসমাইল ম্যাম আমার সিট কেটে দেন। যখন আমার সিট কাটা হয় তখন আমার পরীক্ষা চলছিল।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি ম্যামের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করি। তবে সেটি সম্ভব হয়নি। পরে আমি হলের অন্য এক ম্যামকে বলি, ম্যাম আমার সিটটা বেশি প্রয়োজন। ঢাকায় আমার থাকার জায়গা নেই। আমার হাজবেন্ড পটুয়াখালীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সেও শিক্ষার্থী। সে সেখানেই থাকে। আমাকে একটু হলে রাখার ব্যাপারে সাহায্য করা যায় কি না। তবে ওই ম্যামও কোনো সাহায্য না করে উল্টো অপমানসূচক কথা বলেন।’
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘হলের অনেকেই বিবাহিত, কিন্তু বিয়ের বিষয়টি তাদের গোপন রাখতে হয়। কেবল হলের সিট বাঁচিয়ে রাখতে। বিয়ে তো কোনো অপবিত্র কাজ নয়, যে কেউ বিবাহিত হলে সেটি লুকিয়ে রেখে তাকে চলতে হবে।’
এ বিষয়ে কুয়েত মৈত্রী হলের সিট কমিটির সদস্য এবং পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ইলা ইসমাইল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের যে রকম নির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবেই আমরা হলটি চালাই।’
এ রকম নিয়ম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই নিয়ম আমরা বানাইনি। এটি প্রশাসন থেকে আসা এমন একটি নিয়ম যেটি অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। আমরা শুধু সেটি অনুসরণ করি।’
শুধু কুয়েত মৈত্রী হলের ঘটনায় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্রী হলে বিবাহিত হওয়ার বিষয়টি প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থীদের সিট হারাতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল সংসদের সাবেক সহসভাপতি তাসনিম আফরোজ ইমি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে হলের একজন আবাসিক ছাত্রীকে বিবাহিত হওয়ার কারণে হল প্রশাসন দ্বারা হেনস্তার অভিযোগ করেন।
সেখানে তিনি লেখেন, ‘সেই ছাত্রীর বোন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি হলে আবাসিক হওয়ার সাক্ষাৎকার প্রদান করতে এলে তার বড় বোন বিবাহিত এবং হলে থাকে, এটি তিনি প্রকাশ করেন আর এতে হলের হাউস টিউটর ক্ষেপে যান। পরবর্তী সময়ে এই হাউস টিউটর নির্দেশ প্রদান করেন বড় বোন হল না ছাড়লে ছোট বোন হলে উঠতে পারবে না।’
কোন শিক্ষক এই নির্দেশ দিয়েছেন জানতে চাইলে তাসনিম আফরোজ ইমি নিউজবাংলাকে বলেন, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক নুসরাত তাসনীম।
অভিযোগের বিষয়ে নুসরাত তাসনীম বলেন, ‘কথাটা আসলে সেভাবে বলা হয়নি। প্রথম বর্ষের সেই শিক্ষার্থী যেহেতু মেধা তালিকায় সিট পেয়েছে তার সিট হবে। আমি সেদিনই এই শিক্ষার্থীকে বলেছি, তার বড় বোনের বিষয়টি আমরা আপাতত স্কিপ করছি। সে যদি লোকাল গার্ডিয়ান নিয়ে আসতে পারে তার সিট হবে।’
লোকাল গার্ডিয়ান বড় বোন হলে সমস্যা কী জানতে চাইলে তিনি হলটির প্রাধ্যক্ষ ড লাফিফা জামালকে ফোন দিতে বলেন।
ড. লাফিফা জামালকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তার ফোন সংযোগ পাওয়া যায়নি।
বিবাহিত হওয়ার কারণে হল খোলার পর অক্টোবরে আরও এক শিক্ষার্থীর সিট কেটে দেয় শামসুন্নাহার হল প্রশাসন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘অক্টোবরে হল খোলার পর আমার ফ্লোরের হাউস টিউটরের সঙ্গে আমার দেখা হয়। উনাকে আমি বিবাহিত হওয়ার কথাটা বলি। তিনি বলেন, যেহেতু তুমি বিবাহিত, তোমার ব্যাপারটা প্রাধ্যক্ষ ম্যামের সঙ্গে কথা বলে দেখতে হবে।
‘আমি বলেছি, ম্যাম আমার পরীক্ষা চলছে। এই পরীক্ষার সময়টা আমাকে একটু কনসিডার করার জন্য আমি ম্যামকে অনুরোধ করি। এরপর একদিন তিনি আমাকে ফোন করে জানান, আমার সিট কাটা হয়েছে। পরে আমি আর হলে থাকতে পারিনি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য পাঁচটি আবাসিক হল রয়েছে।
এসব হলের আসন বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালার একটি ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়মভঙ্গের কারণে তার সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।’
বিবাহিত হওয়ায় সম্প্রতি শামসুন্নাহার হল এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের দুই ছাত্রীর সিট নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। সেই প্রেক্ষাপটে এ নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাঁচ ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার এসব হলের শিক্ষার্থীদের কয়েকজন প্রতিনিধি এই নিয়ম বাতিলের আবেদন জানিয়ে উপাচার্যের কাছে যান।
শিক্ষার্থীরা এই নিয়ম ছাড়া আরও কয়েকটি দাবি উপাচার্যের কাছে উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো, শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষায় সব ছাত্রী হলে ‘লোকাল গার্ডিয়ান’ বা ‘স্থানীয় অভিভাবকের’ পরিবর্তে ‘ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট’ বা ‘জরুরি যোগাযোগ’ শব্দটি রাখা, আবাসিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা যেকোনো ধরনের হয়রানি এবং অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল করা ও জরুরি প্রয়োজনে তাদের হলে অবস্থান করতে দেয়া।
শিক্ষার্থীরা জানান এসব দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তাদের বলেছেন, হল কর্তৃপক্ষ ও ডিনস কমিটির সভায় আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কোনো পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত এ নিয়মটিই বহাল থাকবে।
এমন নিয়মের বিষয়ে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন মেয়ে যখন বিবাহিত হয় তখন তার একটি সোশ্যাল লাইফ হয়। সে কিন্তু একজন স্বাভাবিক ছাত্রীর মতো থাকতে পারে না। আর অন্তঃসত্ত্বা হলে তো আরও অনেক রকম পরিবর্তন আসে। যেটি হলে থেকে করা সম্ভব নয়। এই নিয়মটা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। আমরা শুধু পুরোনো জিনিসটাই প্র্যাকটিস করে যাচ্ছি।’
প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘একটি রুমে সাতজন শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি একজন অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে থাকে, তখন মেয়েটির পাশাপাশি বাকি শিক্ষার্থীদেরও সমস্যা হয়। অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটি বাসায় থাকলে যে রকম রিল্যাক্সে থাকতে পারবে, হলে কিন্তু সেটি সম্ভব নয়। আর বিবাহিত মেয়েরা থাকবে স্বামীর সংসারে। সে কেন হলে থাকবে? স্বামী যদি অন্য কোথাও থাকে তাহলে স্বামীকে স্ত্রীর জন্য কোনো শেল্টার খুঁজে দিতে হবে।’
এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি এই নিয়মের পক্ষে। কারণ হলগুলো এক-একটি হোস্টেল, বাসা না। হোস্টেলটা হোস্টেলের মতোই থাকতে হবে। তাই আমরা বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা মেয়েদের হলে থাকাকে ডিসকারেজ করছি।’
হলের নীতিমালায় বলা আছে, ‘শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়া হবে।’
এই বিশেষ ক্ষেত্র কখন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো মাস্টার্সের শিক্ষার্থী যদি তার অ্যাকাডেমিক জীবনের শেষ মুহূর্তে থাকে আর সে যদি বিবাহিত হয় তখন আমরা তাকে থাকার সুযোগ দেব। কারণ আমরা যদি তাকে থাকার সুযোগ না দিই, হয়তো তার ডিগ্রিটা কমপ্লিট হবে না। এসব ক্ষেত্রে আমরা এটিকে কনসিডার করি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হলগুলো সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হয়। সমাজ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ধারণ করে সে নিয়মনীতি করা। শিক্ষার্থীরা যেহেতু দাবি তুলেছে, আমরা সেগুলোকে আমলে নিয়েছি। সুতরাং যুগের সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ বা কোথাও কোনো অসংগতি আছে কি না, সেগুলো পর্যালোচনা করে আমাদের বুঝতে হবে।’
আরও পড়ুন:ডেভিল যতদিন শেষ না হবে, ততদিন পর্যন্ত অপারেশন চলবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে রবিবার সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘গাজীপুরে যারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাড়াতাড়ি বাকিদেরও আনা হবে।’
যারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে, তাদের টার্গেট করে ডেভিল হান্ট অপারেশন চলবে বলেও জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।
গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর নড়েচড়ে বসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঘোষণা দেয় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানের।
পরে শনিবার রাত থেকেই সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টহল জোরদার করা হয়।
ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৪০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী জাবের সাদেক।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অপরাধ দেশবাসীর জানা রয়েছে।’
আরও পড়ুন:সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও বিচারপতি মোহাম্মাদ আবদুর রউফ ইন্তেকাল করেছেন, যার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
রাজধানীর মগবাজারের ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিউ) রবিবার সকাল ১০টার দিকে ইন্তেকাল করেন তিনি।
সাবেক এ বিচারপতি ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর সিইসি নিযুক্ত হন। ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
পরে তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
আবদুর রউফ ১৯৯৫ সালের জুনে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি অবসরে যান।
এ ছাড়া তিনি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সমন্বয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজধানীর মহাখালীর টিবি হাসপাতাল গেট সংলগ্ন গাউছুল আজম জামে মসজিদে আজ বাদ আছর মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার বাদ জোহর জাতীয় ঈদগাহে দ্বিতীয় জানাজা এবং ময়মনসিংহের দাপুনিয়া হাই স্কুল মাঠে বাদ মাগরিব তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
আরও পড়ুন:গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শনিবার আহত লোকজনকে দেখতে গিয়ে এ কথা জানান।
এর আগে আহত ছাত্রদের খোঁজখবর নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, ‘গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে।’
গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শুক্রবার রাতে হামলার শিকার হন শিক্ষার্থীরা।
আহত শিক্ষার্থীদের দাবি, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নেতিবাচকভাবে বিশ্বে তুলে ধরতে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আর এতে জড়িত রয়েছে ভারতের মিডিয়া।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার ‘দ্রোহের গ্রাফিতি: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান প্রকাশনা’ শীর্ষক উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই সময় দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান শফিকুল আলম।
তিনি বলেন,‘যে যেখানে আছেন, সবাই শান্ত থাকুন। তবে ফ্যাসিস্ট সরকার যাতে ফিরে আসতে না পারে, আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকার যাতে ফিরে আসতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। পতিত সরকার যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে, গ্রাফিতির মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিতে হবে।’
অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনকে হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডিএমপি ডিবির যুগ্ম কমিশনার তালেবুর রহমান ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মেহের আফরোজ শাওনকে তার নিজ বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য করার কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সম্প্রতি শাওনের রাজনৈতিক অবস্থান ও কিছু মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরই মধ্যে আজ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিল ডিবি।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এতে বলা হয়, ‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
‘গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি। গতকাল রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে, যার দুটো অংশ আছে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘একটা অংশ হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন, শেখ হাসিনা তাদেরকে অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহিদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
‘দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধামকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে, সে ক্ষতে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব। সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এমন কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না।
‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এই বিচার নিশ্চিত করে গণহত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কী কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা সরকার খতিয়ে দেখবে।’
আরও পড়ুন:জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন।
বেলা ১১টার দিকে তারা শাহবাগ অবরোধ শুরু করেন। এতে মোড়ের চারপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অবরোধের আগে শহিদ পরিবারের স্বজনরা প্রায় এক ঘণ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সমাবেশ করেন।
ওই সময় তারা পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন।
১. প্রতিটি হত্যার বিচারের লক্ষ্যে আসামিদের ১০ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে হবে।
২. শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩. শহীদ পরিবারের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. শহীদ পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যায্য সম্মানী দিতে হবে।
৫. শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানীর দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বজনদের দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
অবরোধে অংশ নিয়ে গত বছরের ৪ আগস্ট মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে নিহত ইমন হোসেন আকাশের মামা বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল সরকার পতনের, কিন্তু যারা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, সেই হত্যাগুলোর বিচার এখনও হয়নি।
‘আমরা দাবি জানাই, দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং শহীদ পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
গত বছরের ১৮ জুলাই নিহত শাকিলের মা হেলেনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে শেখ হাসিনা হত্যা করেছে। আমরা তার বিচার চাই, কিন্তু ডক্টর ইউনূস আমাদের সহযোগিতা করছেন না কেন? তাই আমরা রাজপথে নেমেছি।
‘আমাদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। আমাদের থাকার জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। চাকরির ব্যবস্থাও করা হয়নি। আমরা কীভাবে বাঁচব? অথচ তারা আমার ছেলের রক্তের বিনিময়েই গদি পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ লাখ বা দুই লাখ টাকা কোনো ক্ষতিপূরণ হতে পারে না। আমাদের জন্য ন্যায্য সম্মানী ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
‘আমরা শুনেছি শহীদ পরিবারের জন্য ৩০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই অর্থ কোথায়? আমাদের সেই টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য