সদ্য তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানকে গালি দিয়ে দেয়া বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। জানান, গালি দিয়ে বক্তব্য দেয়ায় তিনি লজ্জিত। এটা কোনোভাবেই উচিত হয়নি।
রোববার রাতে এক ভিডিওবার্তায় এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। জানান, সেই বক্তব্য দিয়ে বাড়ি ফেরার পরে তার মাও বলেছেন, এই ধরনের কথা বলা তার উচিত হয়নি।
ইশরাক বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমাদের দলীয় একটি সভা হচ্ছিল ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আমি একপর্যায়ে আমার আবেগকে ধরে রাখতে পারিনি। সেখানে আমি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত অশালীন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছি, সদ্য বহিষ্কৃত একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।’
তিনি বলেন, ‘যারা আমার বক্তব্যগুলো নিয়মিত দেখেন, আমাকে পছন্দ করেন, অনেক মুরব্বিরা রয়েছেন, নতুন প্রজন্মের অনেক ভাই-বোন রয়েছেন। আমি সবার কাছে মূলত ক্ষমাপ্রার্থী যে, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আগামীতে চেষ্টা করব এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’
ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ইশরাক বলেন, ‘আমি নিজেও খুব লজ্জিত ছিলাম, মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আমার পিতৃতূল্য ও অভিভাবক বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরও সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ছিলেন, তাদের মধ্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামসহ দর্শক সারিতেও অনেক মুরব্বি ছিলেন।’
সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো মুরাদ হাসান একটি অনলাইন সাক্ষাৎকারে এসে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
বিএনপি এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়। তাদের প্রতিবাদের মধ্যে বিএনপির দুই নেতার দুটি বক্তব্য ভাইরাল হয়। এর মধ্যে ইশরাক একটি প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করেগালি দেন মুরাদকে। অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভারতীয় সরকার প্রধানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের অশালীন ইঙ্গিত করে কথা বলেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দল ও নেতা-কর্মীরা বিএনপির এই দুই নেতার শাস্তি দাবি করে আসছিল। এর মধ্যে দলটির পক্ষ থেকে বিবৃতিতে আলালের বক্তব্যকে ‘ন্যায়সঙ্গত সমালোচনা’ উল্লেখ করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে ইশরাকের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
ভিডিওবার্তায় প্রয়াত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে তার সেই বক্তব্যের পেছনে কোনো অযুহাত দেখাননি। বলেন, ‘আমি এটা কোনো অজুহাত হিসেবে বলতে চাচ্ছি না। জাস্ট প্রেক্ষাপটটা বলতে চাচ্ছি। আমি ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে সেই ব্যক্তির (ডা. মুরাদ হাসান) একটা ভিডিও শুনছিলাম, সেখানে আমাদের কারাবন্দি নেত্রী খালেদা জিয়া, আমরা স্পর্শকাতর অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীরা রয়েছি। সেই মুহূর্তে এ কথাগুলো আমাদের খুবই আঘাত হানে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। এটি কোনোভাবে কাম্য নয়।
‘আমরা নতুন প্রজন্ম যারা রাজনীতিতে আসছি, আমরা এটি বারবার বলে আসছি যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত। একে অন্যের প্রতি সহনশীল এবং শ্রদ্ধা নিয়ে কথা বলা উচিত। ওই দিন আমার বক্তব্য শেষ করার পর আমি নিজেই বিব্রতবোধ করছিলাম, যে এতগুলো মুরব্বি এবং টিভি ক্যামেরার সামনে আমি এই শব্দ ব্যবহার করেছি। তখন আমি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করি। আমি বাসায় ফেরার পর আমার মা আমাকে বলেন, এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর ভুল হয়েছে আমার দ্বারা।’
ইশরাক বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে আমি আমাদের দলীয় মহাসচিবসহ অন্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি এবং এই ভিডিওর মাধ্যমে দর্শকশ্রোতা যারা রয়েছেন, বিশেষ করে যাদের আমার প্রতি একটা প্রত্যাশা রয়েছে যে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতি হয়তোবা আমরা সূচনা করতে পারি। তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আপনারা আমাকে এই একটি ভুলের জন্য ক্ষমা করে দেবেন এবং এটিকে দিয়ে আমার সার্বিক কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন না করার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘ডা. মুরাদ হাসান দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। তাকে প্রতিটি বাহিনীর নিজস্ব রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। আমাদের গণমাধ্যম এই রকম মেরুদণ্ডহীন হয়ে গেছে, এটা দুঃখজনক, লজ্জাজনক এবং শঙ্কার কারণ।’
ইশরাক আরও বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের আন্দোলন বৃথা যেতে দেব না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আবারও একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ নামের হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।
বাসসকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন লন্ডনের বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক শাহেদ শফিক।
ডা. জাহিদকে উদ্ধৃত করে শাহেদ শফিক বলেন, ‘বেগম জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি। বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার নতুন করে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে।
‘শুক্রবার সেসব রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্টে যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে তার ছুটি হতে পারে। এরপর তিনি বাসায় ফিরবেন।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, পরবর্তী সময়ে বাসা থেকে নিয়মিত চিকিৎসা নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সার্বক্ষণিকভাবে অধ্যাপক পেট্রিক কেনেডি ও জেনিপার ক্রসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকবেন তিনি।
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘গত ১৭ দিনে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। দুই-একটি রিপোর্ট এখনও আসেনি। কয়েকটি পরীক্ষা ‘দ্য ক্লিনিকে’ করা যায় না। সেগুলো বাহিরের হাসপাতাল থেকে করাতে হয়।
‘তবে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে আগের চেয়ে এখন অনেকটাই বেটার আছেন।’
খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে না আসার কারণ জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ, বয়সটা এখানে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। তা ছাড়া জেলে রেখে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।’
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকের ডাক্তাররা বলছেন, আরও অনেক আগে ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে আসা গেলে তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেত। তাকে দ্রুত সুস্থ করা যেত।
‘এখন ওষুধের মাধ্যমে উনার যে চিকিৎসা চলছে, তা অব্যাহত রাখার জন্য সব চিকিৎসকরা একমত এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।’
ওই সময় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে ফ্যাসিবাদীরা ফিরে আসবে বলে শুক্রবার মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে সকালে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এমন কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন না যাতে আমাদের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয় এবং ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসার সুযোগ পায়।’
তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে ফ্যাসিস্টরা। জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে।’
উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ সরকার ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে অভিযোগ করে শফিকুর বলেন, সেই ফ্যাসিস্টদের আশ্রয় আর বাংলার মাটিতে হবে না।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সংঘটিত সকল হত্যার বিচার চাই। মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই যুদ্ধ চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৩ বছরের প্রত্যেকটি খুন, গুম ও অপকর্মের বিচার বাংলার মাটিতে হবে। যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছে, জমি দখল করেছে, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে, অন্যায়ভাবে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে,তাদের ইজ্জতে হাত দিয়েছে, সেসব দুষ্কৃতিকারীদের তালিকা তৈরি করে জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।’
আরও পড়ুন:সবার আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, একদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে শতাধিক পণ্য ও সেবায় নতুন করে ভ্যাট আরোপ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
এক বিবৃতিতে সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন বা সংস্কার নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে চিন্তা করার যেন কেউ নেই। টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিনে দিনে বড় হচ্ছে।
‘এখন প্যান্ট-শার্ট পড়েও স্বল্প দামে চাল-ডাল কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসংখ্য মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় অনেকেই ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে না পেরে একবুক কষ্ট নিয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরছে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম কেনা দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকরা সন্তান ও পরিজনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছেন না; কিনতে পারছেন না জীবন রক্ষাকারী ঔষধ।
‘এমন বাস্তবতায় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা।’
জিএম কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করি। আমরা মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা বলেই যাব।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সরকার দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কার ও নির্বাচন একটি থেকে আরেকটি পৃথক নয়। দুটোই নির্বিঘ্নে এবং সমান্তরালে এগিয়ে যেতে পারে।
জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার অব্যাহত থাকবে; নির্বাচনও চলবে।
তিনি বলেন, যে দল নির্বাচনে জয়ী হবে এবং সরকার গঠন করবে, তারাই সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এটা পরিষ্কারভাবে বলতে পারি যে, আমরা প্রতিটি সংস্কার (যদি আমরা সরকার গঠন করি) এগিয়ে নেব।’
চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মির্জা ফখরুল।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার বলেছে যে, তারা প্রতিবেদন পাওয়ার পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং তার পরে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে ঐকমত্য ছাড়া কোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে আমরা সকল মানুষের মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য কামনা করি এবং আশা করি যে, আমরা শিগগিরই একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে আসতে পারি; একটি সঠিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’
এর আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মির্জা ফখরুল।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শেরেবাংলা নগরে জিয়ার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে তারা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করেন।
ওই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, ডা. রফিকুল আলম মঞ্জুসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও জিয়ার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
আরও পড়ুন:বাজার নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দুষেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, পূর্ববর্তী সরকারের মিথ্যা তথ্যের কারণেই বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে বর্তমান সরকার।
সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। যদিও বিগত সরকার আলুর বাম্পার ফলন দেখিয়েছে।
কৃষি সাংবাদিকতাবিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে রবিবার সকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার এতদিন দেশবাসীকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে; বলেছে, উৎপাদন বেড়েছে।কিন্তু ঘটনা উল্টো, যার ফলে অন্তর্বর্তী সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের জুট চুক্তি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। এর ফলাফল ১৯৭৪ সালে ১০ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে।’
নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে প্রেস সচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হবে। সেই সঙ্গে কী পরিমাণ সংস্কার চায়, তার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হবে।’
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যাদের হাতে রক্ত আছে, তাদের সবার বিচার হবে। দলটির নেতাদের মধ্যে এখনও কোনো অনুশোচনা নাই।
‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা এই সরকারের নেই। তাদের নিষিদ্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দলগুলো।’
২০২৫ সালের বাজেট জনবান্ধব হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যৌক্তিকতা বিবেচনা করেই সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আরও পড়ুন:বহুদলীয় গণতন্ত্রের রূপকার, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী রবিবার।
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীর নশিপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
রসায়নবিদ মনসুর রহমান ও জাহানারা খাতুন দম্পতির পাঁচ ছেলের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। তার ডাকনাম কমল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী একদল সেনা সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার শিকার হন। এরপর ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
কর্মসূচি
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল বেলা ১১টায় শেরে বাংলানগরে তার কবরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের পুষ্পস্তবক অর্পণ।
অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুপুর ২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির আলোচনা সভা। এতে বক্তব্য দেবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয় নেতা ও বিশিষ্টজনরা।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলটির বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ ছাড়া বেলা ৩টায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বিএনপির শরিক দলের নেতারা। এতে বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ জাতীয় নেতারা।
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জিয়া স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’-এর আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। ২৬ থানার অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে সন্ধ্যা ৫টা ৩০ মিনিটে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
পুরস্কার বিতরণ করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।
এ ছাড়া জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
দলের অঙ্গ, সহযোগী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। সারা দেশে একই কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
এদিকে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাণীতে তিনি বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের প্রবক্তা ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দেশের সব ক্রান্তিকাল উত্তরণে শহীদ জিয়া জাতির দিশারী।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর আক্রমণ করার পর তিনি পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘২৬ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন অসীম বীরত্বে।
‘সেদিন থেকেই দেশবাসী তার অসাধারণ নেতৃত্বের পরিচয় পায়। দেশের সব সংকটে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বারবার অবতীর্ণ হয়েছেন।’
পণ্যের ওপর যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার, সেটিকে ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির ভাষ্য, এ সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তিতে ফেলবে। যদিও অন্তবর্তী সরকারের দাবি, ‘এতে ন্যূনতম প্রভাব পড়বে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের অফিসে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যে ভ্যাট ও পরোক্ষ কর বাড়িয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।’
দেশের চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মুদ্রাস্ফীতির কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। কিছু কিছু পণ্যের ওপর থেকে কর অব্যাহতিও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে খাদ্য, পোশাক, ওষুধ ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও রয়েছে।’
এতে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্তদের ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হবে।’
এসব ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে বিকল্প পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর পরিবর্তে সরকার যাতে অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন খরচ কমিয়ে দেয়, অন্তবর্তী সরকারকে সেই পরামর্শও দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, ‘জবাবদিহিতাপূর্ণ একটি প্রশাসনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত একটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা।’
এর আগে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বেড়ে যেতে পারে সাধারণ মানুষের। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেছেন, মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে। আবার পোশাক–আশাকের দামও বাড়তে পারে ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে।
এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে মিষ্টি, ওষুধ, এলপি গ্যাস, ফলের রস, ড্রিংক, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম, সিগারেটসহ নানা পণ্যের।
গেল ৯ জানুয়ারি রাতে এ–সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫।
এ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের ওপর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য