দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার বুস্টার ডোজ দেয়া এ মাস থেকে শুরুর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বুস্টারের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, বুস্টার আমরা দেবো। যারা ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার (সম্মুখসারির কর্মী) যারা আছে, তাদেরও দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। এ বিষয়ে কার্যক্রম চলছে। নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। সুরক্ষা অ্যাপে কিছু আপডেট করতে হবে। আমরা আশা করছি এ মাসেই কাজ শুরু করতে পারব।
‘প্রস্তুতি চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে প্রস্তুতি সেটাও হয়ে যাবে। আইসিটির প্রস্তুতিটাও আমরা করে ফেলতে পারব। একটা প্রায়োরিটি সেট করতে হয়। সে অনুযায়ী যারা বয়স্ক বা মৃত্যুঝুঁকি বেশি, তাদেরকে আমরা আগে দেবো। যারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, আমরা দেবো। আমাদের প্রায়োরিটি হলো যারা এখনও এক ডোজও পায়নি, তাদের কিন্তু আমরা প্রায়োরিটিতে রাখব। পাশাপাশি যারা বয়স্ক, তাদের দেবো। সকলকে দেয়ার পরে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’
বুস্টার ডোজ কী
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রথম দুই ডোজ নেয়ার পর যে টিকা নেয়া হয়, তাকে বুস্টার ডোজ বলা হয়।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) জানিয়েছে, প্রথম ডোজ থেকে পাওয়া সুরক্ষাকে বেগবান করে বুস্টার ডোজ। এ ডোজ করোনাভাইরাসে মারাত্মক অসুস্থ হওয়া থেকে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দেয়।
কারা বুস্টার ডোজ নিতে পারেন
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী এবং যারা কমপক্ষে তিন মাস আগে টিকা নিয়েছেন, তারা বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।
ওমিক্রন নিয়ে প্রস্তুতি
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়ার কথাও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালগুলো যেভাবে ছিল আমরা সেভাবেই রেখেছি। আরও এটাকে জোরদার করা হয়েছে। আমরা প্রায় ৮০টি জেনারেটর এখন স্থাপন করছি, অক্সিজেন জেনারেটর। এর মধ্যে ৩০টি স্থাপনের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। বাকিগুলো আগামী অল্প দিনের মধ্যে দেশে আসলে আমরা লাগিয়ে দেবো।
‘গতকালও ঢাকায় আমরা প্রায় এক হাজার লিটার পার মিনিট স্থাপন করেছি। অন্যগুলো ম্যাক্সিমাম ৫০০ লিটার পার মিনিট। আমাদের এখন অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ টন হয়ে গেছে। অতীতে এটা ডেল্টার সময় সবচেয়ে বেশি লেগেছিলো ৩০০ টন প্লাস। আমরা এখন সে ক্ষমতা নিজেরাই অর্জন করতে পেরেছি। এটা একটা ভালো খবর।’
মন্ত্রিসভা বৈঠকের বিষয় তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের টিকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো। আমরা এ পর্যন্ত টিকা ১১ কোটি দিয়েছি। এ মাসে আরও দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টিকার দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। টিকা আমাদের হাতে প্রায় ৪ কোটি আছে। আজকেও ইউকে থেকে ৪০ লাখ ডোজ টিকা পাব। টিকার কোনো অসুবিধা নেই।
‘প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, স্কুলের ছাত্রদের টিকার অগ্রগতি। আমি বলেছি, সেখানে আমরা সে রকম অগ্রগতি লাভ করতে পারিনি। আমরা এটা যেহতু ফাইজার দিতে হচ্ছে, দেশের সব কর্নারে তো কোল্ড চেইন নেই আমাদের সেভাবে। কাজেই যে কয় জায়গায় আছে, সেখানেই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করছি। এটা যাতে আরও বাড়ে, গতি যেন আনতে পারি, সে জন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এক হাজার বুধ আমরা বাড়াবার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। আড়াই হাজার বুথ যেটা আছে তার সাথে আরও এক হাজার যোগ হলে আমরা মনে করি টিকা কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।’
ওমিক্রনে আক্রান্ত দুই ক্রিকেটার ভালো আছে
জিম্বাবুয়েতে গিয়ে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরা দুই নারী ক্রিকেটার ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ দুজন ছাড়া দেশে এখনও কারও মধ্যে ওমিক্রন শনাক্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওমিক্রনের বিষয়ে আপনারা যেটা জানেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম জিম্বাবুয়ে থেকে এসেছিল এবং তারা সোনারগাঁওয়ে কোয়ারেন্টিনে ছিল। আমরা তাদের বেশ কয়েকবার টেস্ট করেছি এবং দুজনের গায়ে ওমিক্রন পাওয়া গিয়েছে। জিনোম সিকোয়েন্সিং করে আমরা এ তথ্য পেয়েছি।
‘তারা এখন ভালো আছে, সুস্থ আছে। অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তির গায়ে আমরা ওমিক্রন পাইনি। যারা হোটেলে আছে এবং তাদের সংস্পর্শে এসেছে তাদেরও টেস্টের ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা এখনও ভালো আছি। বর্ডার স্ক্রিনিং, এয়ারপোর্ট স্ক্রিনিংও আমরা এ কারণে জোরদার করেছি। আমাদের যে দুজন, যাদের শরীরে পাওয়া গেছে তারা সুস্থ আছে, ভালো আছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাসটি (ধরন) এখনও খুব ক্ষতিকারক না। এটি সাংঘাতিক সংক্রামক, কিন্তু মৃত্যুর খবর কোথাও আমরা পাইনি। আমাদের এ জন্য সজাগ থাকতে হবে। গতকালও আমরা দেখেছি ১ দশমিক ৫ সংক্রমণের হার। এটি এখন কিছুটা বাড়তির দিকে।
‘আমাদের মৃত্যুও ৬ হয়েছে গতকাল, এটা শূন্য, ১ বা ২-এ ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের চলতে হবে। টিকা যারা নেয়নি তাদের আহ্বান করব টিকা নিয়ে আপনারা সুরক্ষিত হয়ে যান।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য