কেউ মিস্ত্রি, কেউ ফল বিক্রেতা, কেউ অটোরিকশাচালক। দিনে তাদের পেশা ভিন্ন হলেও রাতে একজোট তারা। একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রে জড়িয়ে দিনে পেশার ফাঁকে রেকি আর রাতে পরিকল্পিতভাবে দুর্ষর্ধ সব চুরিতে জড়ান।
এমন অভিযোগে শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এবং ঢাকা উদ্যান এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২।
বাহিনীটি জানিয়েছে, চোরচক্রটির সদস্য সংখ্যা ছয়-সাত জন। ধানমন্ডির একটি ফাঁকা বাসায় ৬ ডিসেম্বর রাতে চুরির পরিকল্পনা করে তারা। এ জন্য ভাড়া করা মেসে পরিকল্পনা করতে একত্রিত হয় চোরচক্রের পাঁচ সদস্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ ডিসেম্বর রাতে ওই বাসায় চুরি করে তারা।
গ্রেপ্তারের সময় চুরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও চোরাই মালামালও উদ্ধার করেছে র্যাব।
শনিবার বেলা ৩টায় কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর রাতে ধানমন্ডির একটি বাসার জানালার গ্রিল কেটে বাসার ভেতরে ঢুকে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় চোর দলের সদস্যরা বাসার ভেতরে আলমারি, ওয়্যারড্রব ইত্যাদি ভাঙচুর করে। তারা প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণালংকার এবং টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।’
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘চুরির ঘটনাটি প্রবাসে থাকা বাড়ির মালিক সিসি ক্যামেরায় দেখতে পান। পরে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হলে আলোড়ন তৈরি হয়। ওই ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তারা ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর এলাকাকেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এদের সদস্য সংখ্যা ছয়-সাতজন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তাররা সবাই বিভিন্ন পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ করে আসছিল। চোরচক্রটির একজন সদস্য অটোরিকশাচালক। তিনি অটোরিকশা চালানোর আড়ালে আড়ালে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ফাঁকা বাসাবাড়ি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নেয়।
‘৬ ডিসেম্বর ধানমন্ডি এলাকায় ফাঁকা বাড়ির সন্ধান পায় ওই অটোরিকশা চালক। বিষয়টি সে চক্রের হোতা নাসিরকে জানায। নাসির তার ভাড়া মেসে পাঁচজন চক্রের সদস্যদের নিয়ে পরিকল্পনা করার জন্য একত্রিত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি ভ্যান নিয়ে চুরির উদ্দেশ্যে ধানমন্ডির ওই বাসায় যায়।’
যেভাবে চুরি ধানমন্ডির বাসায়
গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ধানমন্ডির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং আবাহনী মাঠের পাশের এলাকায় চারজনকে নামিয়ে দিয়ে ভ্যানচালক অপেক্ষা করতে থাকে। বাড়ির নিচে একজনকে পাহারায় রেখে তিনজন পাঁচতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় সানশেড বেয়ে ওপরে উঠে এবং জানালার গ্রিল কাটে। এরপর নাসির এবং ফরহাদ ভেতরে ঢোকে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তাররা বাসার ভেতরে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখতে পেয়ে সেটি কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখে। মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীর খোঁজে বাসার আলমারি এবং ওয়্যারড্রবের ড্রয়ার ভেঙে একটি গলার হার, পাঁচটি কানের দুল, এক জোড়া চুড়ি এবং টাকা চুরি করে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা র্যাবকে জানিয়েছে, চুরির ঘটনার পরদিন সকালে তারা চুরির স্বর্ণালংকার নিয়ে গ্রেপ্তার আজাদের স্বর্ণের দোকানে যায় এবং ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পরে সেই টাকা নাসির, ফরহাদ, সেলিমসহ দলের আরও দুজন নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। গ্রেপ্তার আজাদ স্বর্ণালংকারগুলো কেনার সঙ্গে সঙ্গে গলিয়ে ফেলেন।
গ্রেপ্তারদের পেশা
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার নাসির পেশায় একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। সে পাঁচ-ছয় বছর ধরে পেশার আড়ালে চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে। ধানমন্ডির বাসায় চুরির ঘটনায় গ্রিল কাটার পর সর্বপ্রথম সে বাসার ভেতর ঢোকে। তার নামে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ফরহাদ পেশায় একজন ফল বিক্রেতা। সে এই চোরচক্রের অন্যতম একজন সদস্য। ধানমন্ডির বাসায় চুরির ঘটনায় তাকে বাসার ভেতর টর্চলাইট দিয়ে আলো ফেলতে এবং গ্রিল কাটতে দেখা যায়। এর আগেও ২০১৭ সালে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
বাহিনীটি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার সেলিম পেশায় সবজি বিক্রেতা। সেও চক্রটির একজন নিয়মিত সদস্য। ধানমন্ডির বাসায় চুরির ঘটনায় তিনি সানশেডে অবস্থান নিয়ে গ্রিল কাটতে সহায়তা করে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার আজাদ একজন স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী। বছিলায় তার একটি নিজের স্বর্ণের দোকান রয়েছে। সে ব্যবসার পাশাপাশি চোরাই স্বর্ণালংকার কেনাবেচায় জড়িত। এর আগেও চুরি ও ছিনতাই করা স্বর্ণাললংকার কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করেছে সে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর ধানমণ্ডি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর সৃষ্ট এই সংঘর্ষে ১৭ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আহতরা হলেন- ঢাকা কলেজের মশিউর রহমান, আব্দুল্লাহ, তৌহিদুর রহমান তানভীর, বাদল, সামির, তাহমিদ সালেহ, আব্দুল্লাহ, আরিফ, শামীম, বখতিয়ার, শামীম, নিশাত, হুজাইফা ও ইয়াসিন একং আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী উসাইব, মুসা ও আব্দুল্লাহ।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা বের হলে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে তাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়।
অপরদিকে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে এসে ভাঙচুর করে ও প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড খুলে নিয়ে যায়। এর জের ধরে তাদের সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এতে তাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতরা চিকিৎসা নিতে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে পাঁচটার মধ্যে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে আসে। তাদের অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। বাকি কয়েকজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোতে গণরুম বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
হলের গেমস রুমকে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সোমবার অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান সভাপতিত্ব করেন।
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চালুর বিষয়ে সভায় আলোচনা করা হয় এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রভোস্টবৃন্দকে নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে আশপাশের এলাকাগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।
‘টেকনিক্যাল স্টুডেন্ট মুভমেন্ট’-এর ব্যানারে ছয় দফা দাবি আদায়ে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে ফার্মগেট থেকে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত বাস, প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাসহ সব ধরনের গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি গাজী শামীমুর রহমান ইউএনবি-কে বলেন, ‘অবরোধের কারণে সড়কের দুপাশে যানবাহন আটকা পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। অবরোধকারীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সড়ক অবরোধকালে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে- ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া সব ‘বিতর্কিত’ কারুশিল্প প্রশিক্ষককে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান থেকে অবিলম্বে বদলি করা, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি নিশ্চিত করা এবং প্রতিটি সেমিস্টার পূর্ণ মেয়াদের অর্থাৎ ছয় মাসের করা।
তারা আরও দাবি করেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে (দশম গ্রেড) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য কেউ আবেদন করতে পারবেন না এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংস্কার করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত কোনো জনবল থাকতে পারবে না।
শিক্ষক সংকট দূর করতে শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে সব শূন্য পদে কারিগরি জনবল নিয়োগের দাবি জানান।
এছাড়াও উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ আসন নিশ্চিত করার দাবি তাদের।
আরও পড়ুন:মেট্রো রেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আব্দুর রউফ।
এর আগে ডিএমটিসিএল এমডির পদে থাকা এমএএন ছিদ্দিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
সোমবার প্রথমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এমএএন ছিদ্দিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগটি বাতিল করা হয়। আরেক অফিস আদেশে মোহাম্মদ আব্দুর রউফকে এমডির চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এম এ এন ছিদ্দিক ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত এই পদে থেকে অবসরে যাওয়ার পর তাকে ডিএমটিসিএলের এমডি হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন।
ডিএমটিসিএলের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আব্দুর রউফ এর আগে কোম্পানি সচিব ছিলেন। এরপর তাকে এমআরটি ৫-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালতের দায়িত্ব দেয়া হয়।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শনিবার শিপইয়ার্ডে বিস্ফোরণে দগ্ধ একজনের মৃত্যু হয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
৩৮ বছর বয়সী আহমাদুল্লাহর মৃত্যু হয় রোববার সকাল সোয়া ছয়টার দিকে, যিনি শিপইয়ার্ডের প্রজেক্ট ম্যানেজার ছিলেন।
এর আগে বিস্ফোরণে দগ্ধ আটজনকে ভর্তি করা হয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হওয়ায় এখন হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন সাতজন।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া দগ্ধ অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪৮), আবুল কাশেম (৩৯), বরকাতুল্লাহ (২৩), আনোয়ার হোসেন (৪৫), খাইরুল ইসলাম (২৩), আলামিন (২৩) ও হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩৫)।
দগ্ধদের জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা নাজমুল ইসলাম জানান, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সীতাকুণ্ডে এস এন করপোরেশনের শিপ ইয়ার্ডে জাহাজের সিট কাটার সময় তেলের ট্যাংকারে বিস্ফোরণে এক কর্মকর্তাসহ ১২ জন দগ্ধ হন। দগ্ধদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আটজনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়। রোববার সকালের দিকে প্রজেক্ট ম্যানেজার আহমাদুল্লাহর মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, হাসপাতালে থাকা অন্যদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ আটজন পেশেন্ট (রোগী) চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালের দিকে একজন মারা যান।
‘বাকি সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাতজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসার জন্য ভর্তি রাখা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আগারগাঁওয়ের হাসপাতালটিতে শনিবার সকালে পরিদর্শনে যান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আট শিক্ষার্থীসহ গুরুতর আহত অন্তত ১১ জন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালটির পরিচালক কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন চার শিক্ষার্থীর অবস্থা তিনি (ইউনূস) দেখেছেন।’
হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘চারজনেরই মাথায় গুলি লেগেছে। তাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।’
ওই সময় ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলমসহ হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ বছর করার দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ৩৫ প্রত্যাশী সমন্বয় পরিষদ।
এ পরিষদের ভাষ্য, অনেক দেশে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বা তারও বেশি। তাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশেও চাকরির ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণ করতে হবে।
এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার বেলা ১১টা থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে চাকরিপ্রত্যাশীদের এ সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে বক্তাদের একজন বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে। আজকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়ছি না।’
চাকরিপ্রত্যাশীদের এ সমাবেশে এসে সংহতি প্রকাশ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, চাকরিতে প্রবেশের কোনো বয়সীমা থাকা উচিত নয়।
কেউ যাতে বয়সের কারণে বৈষ্যমের শিকার না হয়, সেটি নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম চালু করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
ওই সময় আন্দোলনকারীরা ‘এক দুই তিন চার, ৩৫ আমার অধিকার’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, ৩৫ আমার ঠিকানা’, ‘৩০ না ৩৫, ৩৫, ৩৫’, ‘বয়স না মেধা, মেধা মেধা’, ‘বয়স না যোগ্যতা, যোগ্যতা যোগ্যতা’ স্লোগান দেন।
সমাবেশে নোমান নামের এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমরা আজকে ভালো নেই। রাষ্ট্রের কর্তারা আমাদের ভালো থাকতে দেয়নি। আমরা যেহেতু ফ্যাসিবাদ দূর করতে পেরেছি, ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের এই দাবিও পূরণ করে ছাড়ব।
‘আমরা চাই অনতিবিলম্বে আমাদের দাবি মেনে নেয়া হোক। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আজকে আমরা ঘরে ফিরব না।’
তিনি বলেন, ‘ঘরে গিয়ে আমরা কী করব? ঘরেই তো আমরা বোঝা হয়ে আছি।’
দেশে অনেক ভারতীয় চাকরি করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘হয় এই ভারতীয়দের চাকরিচ্যুত করুন নয় আমাদের ক্রসফায়ার দিন। আমরা আর বাঁচতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ছেলে মানুষ। আমাদের মেরুদণ্ড আছে, কিন্তু এই সমাজ আমাদের মূল্য দেয় না।
‘আগের সরকার আমাদের মূল্যায়ন করেনি। আমরা চাই নতুন সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে।’
আলী নামের আরেক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে চাকরির ন্যূনতম বয়স ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন চলছে। সরকার আমাদের বারবার আশ্বাস দিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে।
‘এই বছরের শুরুতেও যখন আমরা আন্দোলন করি, তখন আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে মামলাও, কিন্তু আমরা দমে যাইনি। আজকেও আমরা দমে যাব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা আশা করব আজকেই আমাদের দাবি মেনে নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য