'উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি' প্রতিপাদ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেছে প্রজাপতি মেলা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়।
সকাল থেকে দর্শনার্থীদের কলরবে মুখর ক্যাম্পাস। রঙিন প্রজাপতি সেজে শিশুরা ঢোকে মেলায়। কিশোর, তরুণসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশ নিয়েছে মেলায়।
নানা আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে দিনভর চলে প্রজাপতি মেলা। জাহাঙ্গীরনগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে মেলার অস্থায়ী স্টলগুলোয় সাজানো হয়েছে ঘুড়ি, মুখোশ ও রকমারি নকশার গহনা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আক্তার, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন আব্দুল জাব্বার হাওলাদার, বার্ড ক্লাব বাংলাদেশের সভাপতি এনাম আল হক, পাখিপ্রেমী পল, আইইউসিএন কান্ট্রি রিপ্রেজিন রাকিবুল আমিন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব এ মেলা আয়োজন করে। মেলার আহ্বায়ক ছিলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও মেলায় প্রজাপতি প্রদর্শন, শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতির ছবি আঁকা ও কুইজ, আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী এবং ঘুড়ি ওড়ানোর আয়োজন করা হয়।
জাহাঙ্গীনগরের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শেখ সামাদ তাওমিয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে। অনেক দিন পর প্রজাপতি মেলা পেলাম। গত দুই বছর করোনার কারণে এই মেলা হয়নি। অনেক রেয়ার প্রজাপতি এ বছর দেখতে পাচ্ছি।’
তানজিলা নামে এক শিশু জানায়, ‘অনেক দিন স্কুল বন্ধ থাকার পর এই প্রথম এমন অনুষ্ঠানে এসেছি। এখানে অনেক মানুষ আসছে। কত রকমের প্রজাপতি এখানে উড়ে বেড়াচ্ছে। খুব ভালো লাগছে।’
মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রজাপতি মেলা ঘিরে ভালোবাসার জায়গাটি হলো প্রকৃতি ও তার অনুষঙ্গ। এটি শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ এড়ানোর জন্য এবার শোভাযাত্রা বন্ধ রেখেছি।’
প্রজাপতি সংরক্ষণে অবদানের জন্য সিরাজগঞ্জের ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হাসমত আলী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান সামী পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরির লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুক্তিপাড়া ও ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে বুধবার রাত ১টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই দুই যুবক হলেন আলমডাঙ্গা উপজেলার গড়চাপড়া গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী রাশেদুজ্জামান শান্ত ও সদর উপজেলার পিরোজখালী গ্রামের ৩০ বছর বয়সী বিল্লাল হোসেন।
ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, শান্ত দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে এনএসআইয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ে তিনি চাকরি দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।
সম্প্রতি এনএসআইয়ের জুনিয়র ফিল্ড অফিসার ও এরিয়া অফিসার পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে শান্ত কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করেন।
এরপর আলমডাঙ্গা উপজেলার কাবিলনগর গ্রামের আব্দুল লতিফ বুধবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় শান্ত ও বিল্লালসহ দুই থেকে তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মামলা করেন।
পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মুক্তিপাড়ায় অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে শান্তকে গ্রেপ্তার করে। তার ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় ১৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা। পরে ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তার সহযোগী কাঠমিস্ত্রি বিল্লালকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি মাহাব্বুর বলেন, ‘শান্ত আব্দুল লতিফের ছেলে আব্দুর সবুরকে চাকরি দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর শান্ত ও বিল্লালের কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
‘শান্ত আগে বিজিবির বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। সরকারি চাকরি দেয়ার নামে তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে তোলা হবে।’
আরও পড়ুন:জায়গা স্বল্পতার সমস্যা মেটাতে অস্থায়ীভাবে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন।
আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে বাস টার্মিনালটি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে তিনি বিষয়টি জানান।
জেলা বাস মালিক গ্রুপের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় পাঁচ বছর আগেও অভ্যন্তরীণ রুটে ৯০টি বাস ছিল। বর্তমানে সেই বাসের সংখ্যা ১৯০টি এবং দূরপাল্লার রুট মিলিয়ে এই টার্মিনালে বাস আছে তিন শতাধিক। তবে এত বাস রাখার জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই এই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে।
জায়গা না পেয়ে বাস রাখা হয় টার্মিনাল সংলগ্ন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সামনের সড়কে। এতে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে সড়ক। বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচল।
পাশাপাশি বাস মালিক ও শ্রমিকরা রয়েছেন চুরির আতঙ্কে। খোলা জায়গায় বাস রাখায় বিভিন্ন সময় ব্যাটারিসহ নানা যন্ত্রাংশ চুরির মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ।
সাদি পরিবহনের চালক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাস টার্মিনালের যে বর্তমান অবস্থা, তাতে বাস রাখা অনেক কষ্টের। বাস একবার টার্মিনালের মধ্যে ঢুকালে বের করতে জান-পরান বের হয়ে যায়। জরুরি ট্রিপ থাকলে তো ভোগান্তির শেষ নাই। তাই বাধ্য হয়ে সড়কের ওপর বাস রাখতে হয়। টার্মিনালে যে জায়গা রয়েছে, তার থেকে দ্বিগুণ জায়গা প্রয়োজন। তাহলে ভোগান্তি কমে যাবে।’
তুফান মেল পরিবহনের চালক সুমন বলেন, ‘রাস্তার ওপরে গাড়ি রাখলে নানা সমস্যা হয়। অনেক বাসের ব্যাটারি চুরি হইছে। বাইরে বাস রাখাটা রিস্ক। শুনছি ট্রাক টার্মিনালের জন্য যে জায়গা করছিল ওই জায়গায় বাস স্ট্যান্ড নেবে। বাস স্ট্যান্ডের চাইতে ট্রাক টার্মিনালের জায়গা বড়। সব বাস রাখাও সম্ভব হবে। এইটা হইলে ভোগান্তি মনে হয় কমবে।’
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘দিন দিন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাসের সংখ্যা বাড়ছেই। পদ্মা সেতু চালু হলে নতুন অনেক কোম্পানির বাস এই টার্মিনালে থাকবে। এখন যে বাস রয়েছে সেই বাসগুলোকেই জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। টার্মিনালের সামনে যানজটও অনেক বেড়েছে।
‘জনগণের ভোগান্তি তো হচ্ছেই, বাস মালিকরাও ভোগান্তিতে রয়েছে। এমন অবস্থায় মেয়র সেরনিয়াবাত জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে কাশিপুরে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
কিশোর জানান, যন্ত্রাংশের দোকানগুলোও সেখানে স্থানান্তর করা হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই বাস টার্মিনাল ট্রাক টার্মিনালে স্থানান্তর হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘বর্তমানে যেখানে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল রয়েছে সেখানে বাস রাখার জন্য জায়গার স্বল্পতা রয়েছে। মেয়র মহোদয় ট্রাক টার্মিনালে বাস টার্মিনাল স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অস্থায়ীভাবে সেখান থেকেই বাস চলাচল করবে। বাসগুলো আর ঝুঁকি নিয়ে বাইরে কোথাও রাখতে হবে না। সব বাসই ট্রাক টার্মিনালে রাখা সম্ভব।
‘তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের প্ল্যান অনুযায়ী বর্তমানে যেখানে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল রয়েছে সেখানে নগর ভবন এবং গড়িয়ারপারে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণের কথা রয়েছে। গড়িয়ারপারে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থায়ীভাবে স্থানান্তর হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’
আরও পড়ুন:সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ও জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন। অসহায়, দুস্থ, প্রতিবন্ধীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সেবা দিতে প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে যাচ্ছে ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
এতে সাধারণ মানুষ সহজে সেবা নিতে পারবে। কমবে দুর্ভোগসহ নানা হয়রানি। প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে লক্ষ্মীপুরে গ্রামীণপর্যায়ে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে শুরু হওয়া কার্যক্রমটি এখন পরিচালিত হচ্ছে ১০টি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে। এই অ্যাম্বুলেন্সগুলো জেলার ৫৮টি ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে কেনা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সগুলো। ২৪ ঘণ্টায় সদরসহ জেলার ৫টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছে ‘স্বপ্নযাত্রা’।
সহজেই মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে এই সার্ভিস ব্যবহারও করতে পারছেন। সে জন্য গুগল প্লে স্টোরে দেয়া হয়েছে স্বপ্নযাত্রা নামের একটি অ্যাপ, যা ডাউনলোড করে সেবার বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
সদর উপজেলার হামছাদীর আয়েশা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, হঠাৎ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিতে বিভিন্ন স্থানে অ্যাম্বুলেন্স খুঁজে না পেয়ে ‘স্বপ্নযাত্রা’ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা কার্যক্রমে কল দেন স্বজনরা। স্বল্প খরচে অল্প সময়ে বাড়িতে পৌঁছে যায় অ্যাম্বুলেন্স। স্বল্প সময়েই পৌঁছান হাসপাতালে। কয়েক দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন তিনি।
উত্তর হামছাদীর নাজমুল করিম টিপু বলেন, ‘প্রতি কিলোমিটার রোগীদের কাছ থেকে এসি গাড়ি ২০ টাকা হারে নেয়া হচ্ছে। যেখানে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স করে ভাড়া দিতে হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। সেখানে এ সার্ভিসের মাধ্যমে নেয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।’
এমন সেবায় খুশি তারা। তাদের ভাষ্য, তারা সহজে যেমন সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি স্বল্প খরচে সবাই সেবাও নিতে পারছেন।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু বলেন, ‘কম খরচে ও সঠিক সময়ে এ সেবা পেয়ে খুশি সাধারণ মানুষ। এ সেবা কার্যক্রম জেলাজুড়ে ব্যাপক সাড়া মিলেছে।’
প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনিও। তার দাবি, এ ‘স্বপ্নযাত্রা’ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষগুলো স্বাস্থ্যসেবা নিতে সহজ হবে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, 'আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে লক্ষ্মীপুরে গ্রামীণপর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ‘স্বপ্নযাত্রা’ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। সরকারি অনুদানে নয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে চলছে এ কার্যক্রম।’
জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে চাই। আমরা শহরের সুবিধা গ্রামেও পৌঁছাতে চাই। সে লক্ষেই এই উদ্যোগ। আমরা এতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। সারা দেশে এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে পারলে গ্রামীণ জনপদে মৃত্যুর হার অনেক কমে আসবে।’
এটি অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি এ কার্যক্রমে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:টেরাকোটা, মূর্তি, মাটির তৈরি বড় কড়াইয়ের আংটা, কড়ি, চাল, ইটের মতো আরও অসংখ্য নিদর্শন একে একে বেরিয়ে এসেছে। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের রেজাকপুর গ্রামে প্রত্নতাত্তিক খননের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে হাজার বছরের পুরোনো এসব নিদর্শন।
গত ১২ মার্চ থেকে শুরু করে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এই খননকাজ চলে। খননে বেরিয়ে আসা প্রত্নতাত্ত্বিক ওই স্থানটির নাম দেয়া হয়েছে ‘কপিলমুনি ঢিবি’।
খননকাজে নিয়োজিত দলটির নেতৃত্বে ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা।
তিনি বলেন, ‘রেজাকপুর গ্রামে আমরা যে নিদর্শনগুলো পেয়েছি, ধারণা করা হচ্ছে তা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ বছরের পুরোনো।’
তিনি জানান, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা অঞ্চলে আগেও অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে। সেসব নিদর্শনের সঙ্গে কপিলমুনি ঢিবির নিদর্শনের অনেক মিলও রয়েছে। বিশেষ করে যশোর জেলার কেশবপুরের ভরতভায়নার নিদর্শনের সঙ্গে অনেক মিল। সেখানকার ইটগুলোর সঙ্গে কপিলমুনিতে পাওয়া ইটগুলোর খুবই সাদৃশ্য রয়েছে।
খুলনা শহর থেকে সড়কপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের ওই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮০ মিটার প্রস্থজুড়ে খননকাজ হয়েছে। সমতল থেকে মাটির প্রায় ৭ ফুট গভীরে খনন করা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।
ওই ঢিবিতে একটি বর্গাকার স্থাপত্যকাঠামো আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্গাকার এই স্থাপনার চারপাশে দেয়ালঘেরা একটি প্রদক্ষিণ পথও রয়েছে।
এখানে পাওয়া বিভিন্ন মাটির পাত্র ও পাত্রের ভাঙা অংশের মধ্যে হাঁড়ি, কলস, বাটি, থালা, বদনা, কড়াই, প্রদীপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও পোড়ামাটির ফলকের ভাঙা অংশ, পোড়ামাটির প্রতিমার ভগ্নাংশ, অলঙ্কৃত ইট, কড়িসহ বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক উপকরণও পাওয়া গেছে।
বর্গাকার স্থাপত্যকাঠামোর উত্তর-পশ্চিম কোণ ও উত্তর-পূর্ব কোণের প্রদক্ষিণ পথের বাইরের দেয়ালসংলগ্ন মাটিতে মিশ্রিত অবস্থায় এক ধরনের কালো রঙের চাল পাওয়া গেছে। একে পোড়া চাল বলছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
এই চাল নিয়ে গবেষণা করলে এখানকার প্রাচীন আমলের ধানের প্রজাতিসহ প্রকৃতি-প্রতিবেশ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে বলে তাদের ধারণা।
এই ঢিবি এলাকা এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি। বহুকাল ধরেই স্থানীয়রা এখানকার টালিসদৃশ বিশেষ ইট নিজেদের কাজে ব্যবহার করেছেন।
কপিলমুনি ও সংলগ্ন সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার একাধিক জায়গায় এমন আরও ঢিবি রয়েছে। এ থেকে অনুমান করা হচ্ছে, এখানে আরও অনেক নিদর্শন পাওয়া যেতে পারে।
তবে হাজার বছর আগে এই অঞ্চলটিতে কারা বসবাস করেছিল, সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আফরোজা খান মিতা বলেন, ‘এখনও নিশ্চিত না হওয়া গেলেও যেসব স্থাপনা ও নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে- সেখানে এমন কোনো জনগোষ্ঠী ছিল যাদের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের নিবিড় সংযোগ ছিল।’
সুন্দরবনসংলগ্ন এই অঞ্চলে বহুদিন আগে থেকেই মানুষের বসতি বলে ধারণা করা হয়। মহাকাব্য রামায়ণে কপিলেশ্বর মুনি ও বিশাল জলাভূমি বনের উল্লেখ রয়েছে।
এ ছাড়া সতীশচন্দ্র মিত্রের শত বছরের পুরোনো গ্রন্থ ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’-এ কপিলমুনিতে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও স্থানের উল্লেখ রয়েছে। এই এলাকায় একাধিক ঢিবি থাকার কথাও অনেকে জানিয়েছেন।
অতীতে একটি পুকুর খননের সময় এই অঞ্চলে একটি বুদ্ধ প্রতিমা পাওয়া গিয়েছিল। আর কপিলমুনি বাজারের মন্দিরে থাকা বিষ্ণু মূর্তিটিও ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ বছরের পুরোনো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কপিলমুনি ঢিবিতে খনন শুরুর পর থেকে এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, গবেষকসহ বিদেশি প্রতিনিধিদলও ঘুরে গেছেন।
স্থানীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে অনুসন্ধিৎসু পাঠক, আইনজীবী বিপ্লব কান্তি মণ্ডলও কিছুদিন পর পর ওই খননস্থলটিতে ঘুরতে যান। তিনি বলেন, ‘অনেক পরে হলেও রেজাকপুরে খননকাজ করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ একটি যথাযথ কাজ করেছে। তবে এই খননকাজটি আরও অনেক বিস্তৃত হওয়া উচিত। এত দিনে অনেক নিদর্শন হারিয়ে গেছে। যা আছে, তা রক্ষা করতে হবে।’
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় পাথরবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় লেগুনার পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছেন। তারা সবাই কৃষি শ্রমিক ছিলেন।
হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের গোজা ব্রিজ এলাকায় বুধবার রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ছোটপাকা গ্রামের মকুল হোসেন ও মনির হোসেন, বাসাবাড়িয়া গ্রামের মকবুল হোসেন ও আব্দুল হালিম এবং গুরুদাসপুর উপজেলার জুমাইগর গ্রামের হায়দার আলী।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে যাত্রী নিয়ে লেগুনাটি নাটোরের দিকে যাচ্ছিল। গোজা ব্রিজ এলাকায় পাথরবোঝাই একটি ট্রাক একে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত ও ছয়জন আহত হন।
আহতদের সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে রাজশাহীতে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
ওসি আরও জানান, লেগুনা ও ট্রাক থানা হেফাজতে রাখা আছে। ট্রাকের চালক পলাতক। মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুন:ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরাকে জেলা সদরসহ সারা দেশের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ফেরি চালুর লক্ষ্যে পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান আহমেদ শামীম আল রাজী ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক।
ফেরি চালুর লক্ষ্যে উপজেলার রামনেওয়াজ মৎস্য ঘাট, তুলাতলী ঘাট ও হাজীরহাট ঘাট পরিদর্শন করেন তারা।
পরিদর্শন শেষে বেলা সাড়ে ১২টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সমাবেশে যোগ দেন তারা।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ভিশন ও এমপি জ্যাকবের প্রশংসা করেন। এ ছাড়া দ্রুত ঢাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন মনপুরার যোগাযোগ রক্ষায় নোয়াখালীর হাতিয়ার ৪ নম্বর চেয়ারম্যান ঘাটে যাওয়ার জন্য লঞ্চ সার্ভিসের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সারা দেশের সঙ্গে মনপুরার সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপন শুধু মনপুরার দাবি নয়, এটা আজ থেকে আমার দাবি। দ্রুত ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
এর আগে মনপুরা থেকে নোয়াখালীর ৪ নম্বর ঘাটে সিট্রাক সার্ভিস চালুর আশ্বাস দেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেলিনা আকতার চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মিয়া, সাবেক সম্পাদক একেএম শাহাজান মিয়া।
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা মিটিং ও মাসিক সমন্বয় সভায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে চড়-থাপ্পড়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে।
বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ভাড়ারিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল সদর থানায় মারধরের বিষয় উল্লেখ করে মামলা করেন।
এর আগে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বুধবার বেলা দেড়টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরে প্যানেল মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজাকে থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ।
মামলার হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ‘সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মানসম্মত শিক্ষা, জনসেবা ও দুর্নীতিসহ মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভা হয়। সভা চলাকালে দুপুরের দিকে সদরের ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের সঙ্গে প্যানেল মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।
‘এক পর্যায়ে সভা চলাকালে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে সভার অন্য সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।’
ওসি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোন করে পুলিশ পাঠাতে বলেন। পুলিশ গিয়ে আব্দুর রাজ্জাক রাজাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।’
ওই সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইস্রাফিল হোসেনসহ উপজেলা ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র রমজান আলী ছুটিতে থাকায় পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর, প্যালেন মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজা ওই মাসিক সভায় অংশ নেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য