নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য ও ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পদত্যাগ করেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। দলের পদ থেকেও তাকে দেয়া হয়েছে অব্যাহতি।
মুরাদের পদত্যাগের পর তার এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, মুরাদ তার অনুসারীদের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। এ ছাড়া তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে খোদ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাই বিব্রত ছিলেন। এ কারণে তার মন্ত্রিত্ব হারানোর পর উল্লসিত এলাকাবাসী।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, মুরাদের রাজনীতির শুরু বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের মাধ্যমে হলেও কিছু দিনের মধ্যে তিনি যোগ দেন ছাত্রলীগে। এরপর যুবলীগ করে হয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার পর পান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ।
দাম্ভিকতা আর অশালীন মন্তব্যের কারণে সব মহলেই সমালোচনার পাত্র ছিলেন তিনি। এ কারণে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানোর পর তাকে জামালপুর জেলার স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদও এখন তার নেই।
জামালপুরের স্থানীয়রা জানান, মুরাদের বাড়ি সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে। তবে তার পরিবার এখন থাকে জামালপুর শহরের নয়াপাড়ার একটি বাসায়।
মুরাদের বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার। তিনি দীর্ঘদিন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন।
মুরাদের শিক্ষাজীবন ও ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জামালপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৯০ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। ১৯৯২ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ১৯৯৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের (মমেক) এম-৩০ ব্যাচে এমবিবিএসে ভর্তি হন।
তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। মেডিক্যালে ভর্তির পরই ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মুরাদ। ১৯৯৬ সালে কলেজ শাখা কমিটি দেয়া হলে প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ডিসেম্বরেই ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করে ছাত্রলীগে যোগ দেন মুরাদ। ১৯৯৭ সালে মমেক শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন তিনি। ২০০০ সালে একই শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন।
মুরাদের সময় ছাত্রদলের মমেক শাখার সভাপতি ছিলেন সৈয়দ মেহবুব উল কাদির। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইসহাক।
ডা. মেহবুব উল কাদির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের হয়ে মিছিল-মিটিংয়ে মুরাদের সরব উপস্থিতিসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমেও তিনি যুক্ত ছিলেন। কমিটিতে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করলে তার কার্যক্রম দেখে আমরা প্রচার সম্পাদকের পদ দিই।’
মুরাদ হাসান যে কমিটিতে ছিলেন, সে কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন তখনকার জেলা ছাত্রদল সভাপতি মোতাহার হোসেন তালুকদার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুরাদ বরাবরই সুবিধাবাদী ছিলেন, দলের দুঃসময়ে তিনি পল্টি দেন। ক্ষমতার পালাবদলে নিজে ভোল পাল্টে ছাত্রদলের পদধারী নেতা থেকে হয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি। এ জন্য মুরাদকে একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতা হিসেবেই আমরা চিনতাম।’
তখনকার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম রিপন নিউজবাংলাকে জানান, মুরাদ ১৯৯৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির পরই ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরে তিনি কলেজ শাখা ছাত্রদলের কমিটির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
মুরাদের বাবা মতিউর রহমান তালুকদার ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচরও ছিলেন। এসব দিক বিবেচনায় পরে মুরাদকে ছাত্রলীগে পদ দেয়া হয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, মুরাদ ২০০১ সালে এমবিবিএস পাস করেন। ২০০৩ সালে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। একই বছর আওয়ামী লীগের জামালপুর জেলা শাখার সদস্যও হন।
এরপর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
২০১৪ সালে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ২০১৫ সালে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন মুরাদ। ২০১৭ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্যও হন।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেলেও ২০১৮ সালে ফের নৌকা নিয়ে সংসদ সদস্য হন মুরাদ। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে।
২০১৯ সালের ১৯ মে মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী থেকে মুরাদকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।
সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের অভিযোগ, মুরাদ তার বাবার কারণে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি হয়েই তিনি দলের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করেন। আধিপত্য বিস্তার করতে একটি ক্যাডার বাহিনীও গঠন করেন।
ওই সময় তার ‘ক্যাডার বাহিনী’ সরিষাবাড়ীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার ক্যাডারদের হাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী লাঞ্ছিত হন। এ ছাড়া তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও মনগড়া মন্তব্যে বিব্রত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মুরাদের দ্রুত উত্থান হয়েছিল। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগে পদ পাওয়ার পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর একের পর এক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। তবে নিজের ব্যবহারের কারণে প্রকৃতিও তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মুরাদ এমপি হওয়ার পর নিজেকে সংযত রাখতে পারেননি। তার পাশে অনেক অবাঞ্ছিত কর্মীকে জায়গা দিয়েছেন। নিজেও সংযত না হওয়ার কারণেই আজ সব হারাতে বসেছেন তিনি।’
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘একজন প্রতিমন্ত্রী তার পদ হারিয়েছেন, এমন খবরে নিজের নির্বাচনি এলাকার লোকজন ও কর্মীদের কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল, তবে মুরাদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো দৃশ্য দেখেছি।
‘সাধারণ জনতাসহ নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন। এতেই বোঝা যায় মুরাদের জনপ্রিয়তা আর নেতার প্রতি কর্মীদের ভালোবাসা কতটা কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুরাদ আগে থেকেই বিতর্কিত ছিলেন। তার ছত্রছায়ায় থাকা কিছু নেতা-কর্মী তাকে আরও বিতর্কিত করেছেন। এ জন্য মুরাদের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীরা তার পাশে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
গত ১ ডিসেম্বর এক ফেসবুক লাইভে মুরাদ হাসান খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেন। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এরপর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার অশোভন কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে শুরু হয় নতুন বিতর্ক।
এমন পরিস্থিতিতে মুরাদকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি সোমবার রাতে নিশ্চিত করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মুরাদ পরদিন পদত্যাগপত্র দিলে রাতেই সেটি গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি।
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী এলাকায় গত '২৪ এর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১ টায় ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি।
বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী এলাকায় বন্যা পরবর্তী উন্নয়নমূলক সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ ও পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলার হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় এর নবনির্মিত শাহীন ভবন উদ্বোধন এবং দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী জেলার বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল সেবা পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী জেলায় ২০২৪ সালের আকস্মিক বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর ভুমিকার ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক, ত্রাণ ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিমান বাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যার সাথে তৎকালীন বৈরী আবহাওয়া ও বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনায় এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভয়াবহ এ বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিমান বাহিনী বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, দূর্গাপুর, ছাগলনাইয়্যা-এ অবস্থিত হাবিব উল্যাহ্ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করতঃ শাহীন ভবন নামে একটি চারতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা ভবন আসবাবপত্রসহ নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক, বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ, ফেনী জেলা প্রশাসক, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য