বিদেশি ঋণে স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। গত দুই অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণসহায়তা পাচ্ছে সরকার। এতে করোনা মহামারিকালেও সরকারকে অর্থসংকটে পড়তে হয়নি; ব্যাংক থেকে খুব একটা ঋণ নিতে হচ্ছে না।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাংলাদেশের অনুকূলে ২৬২ কোটি ৬২ লাখ (২.৬২ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছে দাতারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ২২ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১৭১ কোটি ১১ লাখ (১.৭১ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছিল দাতারা। এ হিসাবে এই চার মাসে বিদেশি ঋণসহায়তা বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দাতারা বাংলাদেশকে যে ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার প্রায় সমান ঋণ ছাড় করেছে। এই চার মাসে ২৭৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার ঋণ ছাড় করার কথা ছিল; দিয়েছে ২৬২ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
সংকটের সময়ে বেশি ঋণ পেয়ে খুশি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমরা যতটা আশা করেছিলাম, তার চেয়েও বেশি ঋণসহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এতে করোনার টিকা খাতে ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ মেটাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে দ্রুত ঋণসহায়তা পাওয়া গেছে। আমরা (সরকার) আমাদের প্রয়োজনের বিষয়টি তাদের ভালোভাবে উপস্থাপন করেছিলাম। তারা দ্রুত সাড়া দিয়েছেন; এখনও দিচ্ছেন। সে কারণে করোনার ধাক্কা সামলে খুব দ্রুতই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি; যা বিশ্বের অনেক দেশই পারেনি।’
বিদেশি ঋণের এই গতি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন শামসুল আলম।
মহামারিকালে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ঋণসহায়তা পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চলমান প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি করোনা মোকাবিলার জন্যও মোটা অঙ্কের ঋণ পাওয়া গেছে। এখনও পাওয়া যাচ্ছে; ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
‘আমরা আমাদের প্রয়োজনের কথা সঠিকভাবে দাতাদের কাছে উপস্থাপন করেছিলাম। সে কারণেই তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। আর এই ঋণসহায়তা এবং আমাদের সরকারের ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজসহ নানা উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব যতটা পড়ার কথা ছিল, ততটা পড়েনি।’
শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি করোনার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। রপ্তানি-আমদানিসহ অর্থনীতির সব সূচকই এখন ভালো। সব মিলিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, করোনা মহামারি আমরা ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছি। মাঝে টিকা নিয়ে একটু সমস্যা থাকলেও এখন আর নেই। প্রচুর টিকা আছে; আরও আসছে। টিকার আর কোনো সংকট হবে না। আর টিকা কিনতে অর্থেরও কোনো সমস্যা হবে না।’
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশি ঋণ কোভিড মোকাবিলায় সরকারকে যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছে। পরপর দুই বছর ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফরেন এইড অবাক করার মতো; চলতি অর্থবছরেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই কঠিন সময়েও সরকারকে কোনো ধরনের অর্থসংকটে পড়তে হয়নি। উন্নয়নকাজ থেমে থাকেনি; টিকা কিনতে সমস্যা হয়নি।
‘আর এসব কারণেই কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ডলারের বাজারে অস্থিরতা ছাড়া কিন্তু অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই চলছে’ বলেন দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান মনসুর।
এই অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট যে বিদেশি ঋণ এসেছে, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক ১২০ কোটি ডলার দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ২৫ কোটি ডলারের মতো।
জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা ছাড় করেছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। চীন দিয়েছে ২২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। ভারতের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৩ কোটি ডলারের কিছু বেশি। রাশিয়া দিয়েছে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।
এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ছাড় করেছে ৪০ হাজার ডলার। এ ছাড়া অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ১৬ কোটি ডলার ঋণৱ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
তিন বছর আগেও বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছিল ৩০০ কোটি ডলারের মতো। করোনার মধ্যে সেটি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭১০ কোটি (৭.১ বিলিয়ন) ডলার ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ আসে বাংলাদেশে। ওই বছর ৭৩৮ কোটি (৭.৩৮ বিলিয়ন) ডলার ঋণ পাওয়া গিয়েছিল।
গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ঋণ পাওয়া গেছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটি ২৭০ কোটি ডলার ছাড় করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছাড় করেছে এডিবি ১৭০ কোটি ডলার।
তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম জুলাই-অক্টোবর তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এই তিন মাসে বিশ্বব্যাংকের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ ছাড় করেছে এডিবি।
গত ছয় অর্থবছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ ছাড়ের প্রবণতা বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসেছিল ৬৫৪ কোটি ডলার।
গত দুই বছর টানা ৭০০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পাওয়া গেছে। করোনা মহামারি থেকে উত্তরণে টিকাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থা বাড়তি ঋণ দিচ্ছে।
শুধু বিদেশি ঋণ নয়, মহামারিকালে সরকারের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিও ছিল বেশ ভালো। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছিল।
সেই ইতিবাচক ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। এই অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অঞ্চলে প্রথমবারের মতো পাইপলাইনে বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হয়েছে। গত রোববার বিকাল ৪টায় শুরু হয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ চট্টগ্রাম থেকে এক কোটি ১২ লাখ লিটার পরিশোধিত ডিজেল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন্স) মণি লাল দাশ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিপিসির জ্বালানি বিপণনকারী অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল কোম্পানির চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপোর মূল স্থাপনার ট্যাংকগুলো থেকে গোদনাইল ডিপোতে প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্যাংকে এই জ্বালানি তেল পাম্প করা হচ্ছে।
মণি লাল দাশ বলেন, প্রথমবারের মতো পাইপলাইনে বাণিজ্যিকভাবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল নেওয়া শুরু হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে পদ্মা অয়েল কোম্পানির গোদনাইল ডিপোর ট্যাংকে তেল নেওয়া হয়। গত সোমবার বেলা ১১টা থেকে মেঘনা পেট্রোলিয়াম তাদের ডিজেল পাঠাচ্ছে। মেঘনার তেল পাঠানো শেষ হলে যমুনা অয়েল তাদের প্রয়োজনীয় তেল পাঠানো শুরু করবে।
পাইপলাইনটিতে ঘণ্টায় ৩২০ মেট্রিক টন জ্বালানি পাঠানোর সক্ষমতা রয়েছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘণ্টায় ২৮০ টনের মতো পাঠানো হচ্ছে।
বিপিসির নবগঠিত পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসিপিএলসি) ও প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা এই জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি তদারকি করছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গনমাধ্যমকে বলেন, রোববার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল ডিপোতে পাইপলাইনে তেল পাঠানো শুরু হয়। গত সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত পদ্মা অয়েলের গোদনাইল ডিপোতে ৬৬ লাখ লিটার ডিজেল পাঠানো হয়েছে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বছরে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহের সক্ষমতাসহ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জ্বালানি পরিবহনের সিস্টেম লস কমানো, নৌপথে তেল পরিবহনের বিপুল খরচ সাশ্রয়সহ দ্রুততম সময়ে তেল পৌঁছানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত আড়াইশো কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।
পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুমোদন পায়। শুরুতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরু করতেই ২০২০ সাল লেগে যায়। পরে প্রথম দফায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় দফায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
বিপিসির এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় তিন হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়।
বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ২৭ লাখ টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে। পাইপে পরিবহন শুরু হলে বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের নথিতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর প্রকল্প থেকে ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুয়েল, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ আরও কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। এতে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। আগামী ১৬ বছরের মধ্যে প্রকল্পের বিনিয়োগ উঠে আসবে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয়েছে ৬৭ লাখ টন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ডিজেল। ঢাকা বিভাগেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ।
বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনের জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহৃত হয় প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে। ব্যয় আর ভোগান্তি কমাতেই এ পাইপলাইন তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি গ্রাহকদের নিকট আস্থাশীল ব্যাংকসমূহের আমানত বৃদ্ধির ন্যায় রাষ্ট্র মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকেরও আমানতসহ কয়েকটি সূচকে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। গত ৬ মাসে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বৃহৎ অংশকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে পেরেছে। উত্তম সেবার নিশ্চয়তা দিয়ে সারাদেশে শাখা ও উপশাখা নিয়ে গড়ে তুলেছে ব্যাংকটির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন সেবা। বিশেষ করে আমানতের ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্কিম। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম যোগদান করার পর রূপালী আস্থা, রূপালী শ্রদ্ধা ও রূপালী ডাবল বেনিফিট স্কিম নামে তিনটি আকর্ষণীয় স্কিম চালু করেছেন। ইতোমধ্যে নতুন হিসাব বেড়েছে প্রায় তিন লাখ এবং আমানত বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি এবং স্পর্শ করেছে ৭৮ হাজার কোটি টাকার আমানতের মাইলফলক।
দক্ষ ব্যাংকার কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম আর্থিক খাতে নিজেদের টেকসই অবস্থান নিশ্চিতকরণে খেলাপি ঋণ আদায়, নতুন হিসাব খোলা, সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ভারসাম্য রক্ষা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে রূপালী ব্যাংকের নেতৃত্ব।
রূপালী ব্যাংকের নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের নিষ্ঠাশীল আনুগত্য ও ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থার প্রমাণ পাওয়া যায় গত ৬ মাসে ব্যাংকটির নতুন হিসাব খোলার সংখ্যা বিশ্লেষণে। যেখানে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫৩ বছরে ব্যাংকটির সক্রিয় অ্যাকাউন্ট ছিল ৩০ লাখ, সেখানে ছয় মাসে নতুন অ্যাকাউন্ট যুক্ত হয়েছে ৩ লাখ। বর্তমানে ৩৩ লাখ গ্রাহকের রূপালী ব্যাংক জাতীয় সঞ্চয়ের বড় অংশীদারে পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাসে ৬৮ হাজার কোটি টাকা থেকে ৭৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে ব্যাংকটির আমানত।
ব্যাংকটির বর্তমান অগ্রগতির কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বের কথা। ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল হুদা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। অভিজ্ঞ পর্ষদের দিক নির্দেশনা এবং ২৭ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ব্যাংকের একটি শক্তিশালী সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম প্রতিটি আর্থিক সূচকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকটিকে।
দেশীয় ও বৈশ্বিক নানামুখী অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মাঝেও ব্যাংকটির পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) সঙ্গে ৪০ কোটি ডলারের অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার।
‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম – সাবপ্রোগ্রাম ২’ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এই ঋণ বাজেট সহায়তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
গতকাল সোমবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং এআইআইবির পক্ষে রজত মিশ্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। রজত মিশ্র এআইআইবির পাবলিক সেক্টর (রিজিয়ন ১) ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড ফান্ডস (গ্লোবাল) ক্লায়েন্টস বিভাগের অ্যাক্টিং চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার ও পরিচালক।
এই ৪০ কোটি ডলারের ঋণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতিগত সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যয় করা হবে।
অর্থ বিভাগ পরিচালিত এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য তিনটি: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, অভিযোজনমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন, এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা।
এ উদ্যোগ সরকারের জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়নে জলবায়ু সংবেদনশীলতা সংযোজনের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক সহনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঋণের মেয়াদ ৩৫ বছর, যার মধ্যে প্রথম ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড। এ ঋণ সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটভিত্তিক সুদ এবং একটি পরিবর্তনশীল স্প্রেডে নির্ধারিত, যেখানে ফ্রন্ট-এন্ড ফি ০.২৫ শতাংশ; যা এআইআইবির প্রচলিত শর্তানুসারে নির্ধারিত হয়েছে।
উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সচেতন নীতিগত সংস্কারের পথ সুগম হবে।
চলতি (জুন) মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এসময়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার।
এর আগেও প্রবাসী আয় প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ছিল। সদ্যবিদায়ী মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে গত মার্চে এসেছিল সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এরপর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ‘বেসরকারি’ খাতের জন্য সংকোচন নীতি নেওয়া হলেও সরকারের জন্য তা দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী নেতা ও বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
গতকাল শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বাজেট বিতর্ক: প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা মূল্যস্ফীতিকে দমন করার জন্য সুদের হার বাড়ায়া দিছি। ভালো কথা। আমরা সংকুচিত রাজস্ব নীতি করতে গিয়ে বাজেটের আকার ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দিছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কী, যে এটা বেসরকারি খাতের জন্য, বেসরকারি খাতের জন্যই শুধু সংকুচিত মুদ্রানীতি এবং সংকুচিত রাজস্ব নীতি।
‘যেই মাত্র এটা সরকারের জন্য, সরকারের জন্য আসে তখন আর এটা ওদের (সরকারের) জন্য সংকুচিত না।’
উদাহারণ দিয়ে মিন্টু বলেন, ‘গত দেড় বছরে বাংলাদেশে মোট ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকে আমানত পাইছে। এর ভিতরে ২ লাখ ৭০ কোটি টাকা নিয়ে গেছে সরকার। তো তাদের জন্য সংকুচিত রাজস্বনীতি তো আমি দেখতেছি না।’
এজন্য সরকারকে সকল দিক বিবেচনায় এনে ‘বিচার-বিশ্লেষণ’ করে নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন এ ব্যবসায়ী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের কথা বলা হলেও বিএনপি নেতা মিন্টু মতে, তা দেখা যাচ্ছে না।
প্রস্তাবিত বাজেটেও অর্থনীতির চিহ্নিত সমস্যার সংস্কার দেখা না যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম, আরেক দিক থেকে মূল্যস্ফীতি বেশি। এই দুইটার সমন্বয়ের যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি আমাদের দেশে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু সংস্কার করা যেত এই বাজেটে। কিন্তু সেটা আসলে আমি দেখি নাই।’
গত ২ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেটের আকার ছোট করলেও তা হয়েছে উন্নয়ন বাজেটে, যার দ্বারা সরাসরি উপকৃত হয় দেশের নাগরিক।
অপরদিকে অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ২৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। আর সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের আকার দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা।
আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ অন্য উৎসের মধ্যে সরকার ব্যাংক খাত থেকে নিতে চায় ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়াও সঞ্চয়পত্রপত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ২১ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
‘দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য’ দেখছেন উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আলোচনা সভার প্রধান অতিথি মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
‘অন্দরমহলের খবর দিতে চাই’- এ কথা বলে তিনি তার নয় মাসের উপদেষ্টা জীবনের তদবিরের গল্প তুলে ধরেন।
বলেন, ‘একটা জিনিসের ব্যাপারে আমি জাতীয় ঐক্যমত্য দেখতে পেয়েছি। সেটা হচ্ছে, দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য। সবাই দুর্নীতি করতে চান। কেউ কিন্তু বাদ নাই। রাজনীতিবিদ, আমলা, অধ্যাপক, কেউ বাদ নেই।’
উদাহরণ দিয়ে বলেন, আপনারা দেখবেন যে প্রথম আলোতে একটা সংবাদ এসেছে যে আমি যেগুলো দেখি (যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) তার মধ্যে একটা হচ্ছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগের তারা করেছেন কী, যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পুনর্বাসনের জন্য কতগুলো ভবন করেছেন। তো ভবন করতে গিয়ে ওনারা আবিষ্কার করলেন যে কিছু জায়গা বেঁচে গেছে।
‘তো এখন কী করতে হবে? তো এটা সব সরকারি কর্মকর্তাদের দিতে হবে। অথচ সেতু বিভাগের ভবন বানানো কিংবা আবাসনের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ই আছে। যেটাকে আমরা পূর্ত মন্ত্রণালয় বলে থাকি। …এখানে অকল্পনীয় ছিল যে ক্যাবিনেট সচিবরা পর্যন্ত অন্যায়-উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ অন্যায়-উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন।’
তদবির প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যে আমরা যে অফিসে আসি। আমার সঙ্গে এখন তো রাজনীতিবিদরাও দেখা করেন। কিন্তু কেউই কিন্তু চান না যে দুর্নীতির অবসান হোক। সবাই চান যে দুর্নীতি চলুক, তবে দুর্নীতিটা এবার আমাকে করার সুযোগ দিতে হবে।
‘সবাই বলেন, দেখেন ফ্যাসিস্ট আমলে জানেনই তো ব্যবসা করতে পারি নাই, এখন একটু খেয়াল রাখবেন। তো আমরা সে পথে যাচ্ছি না।’
এর বিপরীতে সরকারের চেষ্টা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যে অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা। যেই ব্যবসা পাবেন, প্রতিযোগিতা হবে সেখানে। আমরা সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’
আসছে জুলাই-আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলেও উপদেষ্টা আশার কথা শোনান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির আহ্বায়ক মাহবুব উল্লাহ।
পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ খুঁজে বের করতে, একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট গড়ে তুলতে এবং ব্যাংক ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে শিগগিরই একটি যৌথ কমিটি গঠন করবে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির প্রতিনিধিরা থাকবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
তারা বলেন, ব্যাংক ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি কমিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংগ্রহের সুযোগ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় দীর্ঘমেয়াদি মূলধন কীভাবে এবং কোনো প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজার থেকে সরবরাহ করা যেতে পারে সে বিষয় বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়াও দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং এর তারল্য বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়।
সবশেষে, এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান, গভর্নরের উপদেষ্টা মো. আহসান উল্লাহ, বিএসইসি চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও কমিশনার ফারজানা লালারুখসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সালে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের নামে পাওনা রয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় ( প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে ) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে যার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ। এখনকার বিনিময় হার ধরলে যার পরিমাণ ৩৯৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৩ গুণ। ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশের কাছে সুইজারল্যান্ডের দায় ছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় ৮৭৬ কোটি টাকা।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে দায়ের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, আমনাতকারীদের পাওনা এবং পুঁজিবাজারে বাংলাদেশের নামে বিনিয়োগের অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, যা বাণিজ্য কেন্দ্রিক অর্থ বলে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার করা সম্পদ হতে পারে বলে ধারণা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কয়েক বছর ধরে সুইজারল্যান্ড বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বা বিএফআইইউ সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগও করেছিল। কিন্তু ব্যক্তির তালিকা সম্বলিত কোনো তথ্য তারা দেয়নি।
সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রাখে তাহলে তা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা পরিসংখ্যানের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।
মন্তব্য