একের পর এক গ্যাস বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দাদের জন্য। এ ধরনের ঘটনায় ওই জেলায় দুই বছরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১৮ জন। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক মানুষ।
বেশির ভাগ ঘটনাতেই থানায় অপমৃত্যুর মামলা হলেও এগুলোর যথাযথ তদন্ত হয়নি। ফলে এত মৃত্যুর পরও দায়ীদের চিহ্নিত করার কোনো উদ্যোগ নেই। এতে এ ধরনের দুর্ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলছে।
চলতি বছর এই জেলায় ১১৭টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দগ্ধ ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে আরও অর্ধশত মানুষকে। ২০২০ সালেও একই রকম ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৪ জন।
এসব তথ্য ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় উল্লেখ থাকলেও দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া অনেকের তথ্য অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাসাবাড়িতে গ্যাস পাইপ লিক করে বিস্ফোরণের অধিকাংশ কারণ অসচেতনতা ও অবহেলা। দেখা যায়, অনেকে বাড়ির লাইনে লিকেজের কথা জেনেও তা মেরামত করেন না। দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় তিতাস গ্যাসের পাইপগুলোতে প্রায়ই লিকেজ হয়ে যায়।’
তিনি জানান, ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা বন্ধ অবস্থায় তিতাসের গ্যাসলাইন বা গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ লিক হয়ে রুমে গ্যাস জমে গেলেই বিপদ। কারণ এ সময় বৈদ্যুতিক সুইচ কিংবা চুলা জ্বালানো হলেও বিস্ফোরণ ঘটে আগুন ছড়িয়ে যাবে এবং মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই সেখানে থাকা মানুষ দগ্ধ হবেন।
ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় আছে, ২০২১ সালের ৩১ সেপেম্বর পর্যন্ত রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১৮টি ঘটনা ছাড়াও তিতাসের লাইনের ত্রুটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে ৭১টি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বয়লার বিস্ফোরণ ও বৈদ্যুতিক কারণে আরও ২৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এ ছাড়া নভেম্বরের শুরু থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৫টি ঘটনা মিলে মোট ১১৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এ বছর।
এসব ঘটনায় অন্তত ৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।
এর মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর ভোরে আড়াইহাজারের কুমারপাড়া গ্রামের একটি বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার লিক করে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে দুই শিশুসহ এক পরিবারের চারজন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে সোলাইমান নামের একজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার এক দিন আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিলাসনগর এলাকায় একটি ছয়তলা ভবনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন চারজন।
গত ২৫ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের আদনান টাওয়ারের চতুর্থ তলায় গ্যাসের পাইপ লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে পারভেজ ও মামুন নামে দুই পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার চার দিন আগে রূপগঞ্জে সিটি অটো রাইস মিলে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ২ শ্রমিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১২ নভেম্বর ফতুল্লার পূর্ব শেয়াচরের লালখা এলাকায় একটি ৫ তলা বাড়ির নিচ তলায় গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাসে বিস্ফোরণে মায়া রানী দাস, মঙ্গলী রানী দাস, ঝুমা রানী ও তুলসী রানী নামে চার নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
৯ মার্চ রাতে ফতুল্লার মাসদাইরের পতেঙ্গা এলাকায় ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাটে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৬ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পোশাক শ্রমিক মো. মিশাল, শিশুপুত্র মিনহাজ, চাচাতো ভাই মাহফুজ ও স্কুলছাত্র সাব্বির হোসেনের মৃত্যু হয়।
শহরের আমলাপাড়ায় গ্রিন জিএম গার্ডেন নামের একটি ভবনের আটতলায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে দগ্ধ দুজনের মধ্যে চিকিৎসাধীন একজন মারা যান।
এর আগে শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় তিনতলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে শিশুসহ দুটি পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
৭ জানুয়ারি ফতুল্লার বিলাসনগরে একটি দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে রফিক উল্লাহ নামের এক মিস্ত্রি মারা যান। আড়াইহাজারে একটি রেস্তোরাঁয় গ্যাসের লাইনে বিস্ফোরণে তিনজন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন ১ জনের মৃত্যু হয়।
বন্দরের লক্ষণখোলা এলাকায় একটি তুলার গোডাউনে আগুন লাগলে আমেনা বেগম নামের এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
২৩ জুন ফতুল্লায় একটি ডাইং কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে শরীফ মিয়া নামের এক শ্রমিক মারা যান। তা ছাড়া বন্দরে রান্না ঘরের গ্যাসের আগুনে ৫ জন দগ্ধ হন। সোনারগাঁর নয়াবাড়ি এলাকায় একটি ডাইং কারখানায় গ্যাস রাইজারের আগুনে দগ্ধ হন আরও পাঁচজন। শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় অ্যাপোলো নামের একটি ক্লিনিকে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুজন ওয়ার্ড বয়ও দগ্ধ হয়েছেন।
তবে এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে রূপগঞ্জের হাসেম ফুডের কারখানার অগ্নিকাণ্ডে। ওই ঘটনায় নিহত ৫৪ জনের দেহাবশেষ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের ২০২০ সালের খাতায় দেখা গেছে, এ জেলায় গ্যাস থেকে ১০৬টি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ওই সব অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দগ্ধ ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে অন্তত ২৬ জনকে।
এর মধ্যে তল্লায় মসজিদে এক বিস্ফোরণেই মৃত্যু হয় ৩৭ জনের। ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে সদর উপজেলার সাহেবপাড়া এলাকায় পাঁচতলা ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস ছড়িয়ে বিস্ফোরণ ঘটলে একই পরিবারের ৮ জন দগ্ধ হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়। একই বছর রূপগঞ্জে একটি রড প্রস্তুতকারক কারখানায় গলিত লোহা বার্টি বিস্ফোরণে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও চারজন শ্রমিক দগ্ধ হন।
আরও পড়ুন:ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় দিনদিন বেড়েই চলেছে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার। মাদকের নীল দংশন থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের শত চেষ্টা কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাদক ব্যাবসায়ীরা তাদের ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক বিরোধী র্যালী সেমিনার কোনো কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছেনা মাদকের ভয়াবহ বিস্তার। ৫ই আগষ্টের আগে প্রশাসনের তৎপরতা থাকায় উপজেলায় মাদকের ভয়াবহতা কিছুটা কম থাকলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে মাদকের বিস্তার।
মাদকের এই ভয়াবহ বিস্তারে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন উপজেলার অভিভাবকরা।
কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় মাদক কারবারীরা মাদকের কেনাবেচা করে থাকে। এর মধ্যে পৌর শহরেই রয়েছে বেশ কয়েকটি মাদকের স্পট। পৌর ৬নং ওয়ার্ডের ওয়াপদা রোড, আঃ জঃ কলেজ গেইট ও তৎসংলগ্ন এলাকা, উত্তর বাসষ্টান্ড, দক্ষিণ বাসষ্টান্ড, পঞ্চায়েত বাড়ির চৌরাস্তা, পৌর ৯নং ওয়ার্ডের বিএনপি বাজার, পৌর ১নং ওয়ার্ডের জয়া সড়ক, পৌর ৪নং ওয়ার্ডের সালাহউদ্দিন কমিশনারের বাড়ির পাশে রয়েছে ২টি স্পট। এছাড়া বড়মানিকা ইউনিয়নের মানিকার হাট বাজারের পাশে একটি স্পট, কুতুবা ইউনিয়নের ছাগলা গ্রাম, পক্ষিয়া ইউনিয়নের বোরহানগঞ্জ বাজার, টবগী ইউনিয়নের রাস্তার মাথা, নতুন ও পুরান হাকিমুদ্দিন বেড়িবাধ এলাকা, হাসাননগর ইউনিয়নের খাসমহল, কাজীরহাট সহ এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি স্পট রয়েছে।
জানা যায়, বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া ইউনিয়নের প্রানকেন্দ্র কুঞ্জেরহাট ও এর পাশে ফুলকাচিয়ায় রয়েছে ইয়াবা ও গাজার সবচেয়ে বড়স্পট আর এসব স্পটের নিয়ন্ত্রক ওই এলাকার প্রভাবশালী জ্বীন প্রতারকরা। এদের রয়েছে বেশ শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের হাত ধরে মাদকের চালান পৌছে যায় খুচরা ব্যাবসায়ীদের হাতে। সুত্রটি জানায় এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে অটোরিকশা ড্রাইভার, মটরসাইকেল ড্রাইভার, এরা এই পেশায় কাজ করলেও এরা মাদক বহন করে নিরাপদে কাষ্টমারের কাছে মাদকের চালান পৌছে দেয়।
আরও জানা যায়, ২০২৪ সালের (২২ডিসেম্বর) টবগী ইউনিয়নের হাকিমুদ্দিন বেড়িবাধ এলাকার মাদক বিক্রেতা ইউসুফ কে স্থানীয় জনতা মাদক বিক্রির সময় হাতেনাতে আটক করে। একইদিনে টবগী ইউনিয়নের বেড়িবাধ সংলগ্ন গুচ্ছগ্রামে ঐ এলাকার এক মাদক বিক্রেতা ইয়াবা ডেলিভারি দিতে আসলে স্থানীয় লোকজন দাওয়া দিলে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির লোকজনের সহায়তায় পালিয়ে যায়।
এসব জীবন বিধ্বংসী ক্ষতিকারক দ্রব্য সেবনের ফলে যুবসমাজের সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটছে। এরই পরিণাম স্বরূপ ছেলেমেয়ের হাতে মা-বাবা খুন, মাদকের টাকা জোগাড় করতে না পেড়ে বাবা- মায়ের কাছে টাকা চেয়ে টাকা না পেয়ে অভিমান করে আত্নহত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানি এখনকার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। মাদকাসক্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা।
পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পুলিশের টহল জোরদার করে মাদক বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনতে পারলে যুবসমাজকে মাদক থেকে দুরে রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন এখানকার সচেতন মহল।
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চলমান একটি জলকপাট নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার স্বীকার দৈনিক ইত্তেফাকের তজুমদ্দিন উপজেলা প্রতিনিধি রফিক সাদী ও আজকের ভোলার প্রতিনিধি মো: ফারুকের ওপর হামলার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে তজুমদ্দিন থানা পুলিশ।
শুক্রবার সকালে তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইস গেট এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে এই মামলার এজাহারভূক্ত আসামি আজগর (৪০) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজগর হাজারীগঞ্জ এলাকার মো: মোস্তফার পুত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক এর প্রতিনিধি রফিক সাদী ও আজকের ভোলা প্রতিনিধি মো: ফারুক নির্মাণস্থলে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোলাম রাব্বানী কন্সট্রাকশন এর কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে আহত করে তাদের সাথে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে হামলার শিকার ওই দুই সাংবাদিকদের মধ্যে মো: ফারুক তজুমদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেফতার করে। বাকিরা পলাতক রয়েছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মোহাব্বত খাঁন জানান, সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগে ১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে ফেনীর কয়েকটি উপজেলায়। এসব এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ নলকূপে পানি নেই। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জি.এম.হাট ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির নলকূপে মিলছে না সুপেয় পানি। বেশিরভাগ গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। একই চিত্র দেখা দিয়েছে পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঁঞা ও সদর উপজেলায়। ফলে পানি সংগ্রহে বেশ দূরে ছুটছেন ভুক্তভোগীরা। বাধ্য হয়ে পুকুর বা ডোবার জীবাণুযুক্ত পানি ফুটিয়ে পান করতে হচ্ছে অনেককে।
প্রায় এলাকায় পুকুর, খাল ও জলাশয়ের পানি শুকিয়ে গেছে। অনাবৃষ্টির পাশাপাশি গরমের তীব্রতা বাড়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গভীর নলকূপেও পাওয়া যাচ্ছে না পানি। জেলার লক্ষাধিক নলকূপে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
‘গত দুই-তিন মাস ধরে গভীর নলকূপে পানি পাচ্ছি না। পানির জন্য এলাকার লোকজন হাহাকার করছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নলকূপ দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি করছি,’ এসব কথা বলেন ফুলগাজী উপজেলার জি.এম.হাট ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ উদ দৌলা।
ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের বাসিন্দা আছমত আরা শিরি বলেন, ‘নলকূপে পানি না উঠায় আমরা পানির জন্য কষ্ট করছি। অপরদিকে নলকূপের সঙ্গে থাকা মোটরেও পানি উঠছে না। অনেক দূর থেকে পানি এনে পান করছি। ওখানেও পানি উঠছে না, দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে এক কলস পানি ভর্তি করতে হয়। নলকূপের পানির জন্য সরকার যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।’
এলাকাবাসী জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গত ৪-৫ মাস ধরে তারা কোনো গভীর নলকূপে পানি পাচ্ছেন না। পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করা হচ্ছে।
ফেনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিউল হক বলেন, ‘গত ছয় মাস বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানির লেয়ার নিচে নেমে গিয়ে ফেনীর অনেক এলাকায় গভীর নলকূপে প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পৃথিবীতে কোথাও এভাবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে না। সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নষ্ট করে ফেলছি। অপ্রয়োজনীয় পানি তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। নলকূপের নির্ভরশীলতা থেকে ফিরে আসতে হবে। ফেনীতে দেড় লাখ নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নলকূপে পানি উঠছে না। বর্তমানে প্রতি ইউনিয়নে ৮টি করে নলকূপ বরাদ্দ রয়েছে। সামনে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করছি।’
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। সেইসঙ্গে অসময়ে শুরু হয়েছে নদীর পাড় ভাঙন। গত বছর নদীভাঙনের পর যেটুক ভূমি ছিল, সেটুকুও এবার ভাঙনের আশঙ্কায় চরম হতাশার দিন পার করছেন নদীপাড়ের শত শত ভাঙন-কবলিত মানুষ।
সরেজমিনে উপজেলার জিগাতলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জিগাতলা গ্রামের প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলিজমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। সেখানে এবার স্থানীয়রা ভুট্টা, তিল, বাদাম, বোরো ধান ও পাটসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করেছিল। এ ছাড়া রামপুর, গোপিনাথপুর, বাসুদেবকোল এলাকাতেও একই চিত্র দেখা যায়।
গত বছরের মতো এবারও উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া, ভালকুটিয়া, কষ্টাপাড়া ও মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া, কোনাবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন নদীপাড়ের মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বারবার আশ্বাস দিলেও বাঁধের কাজ শুরু হচ্ছে না।
এদিকে প্রতিবছর বন্যায় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা বাঁধের জিওব্যাগ আনলোড ড্রেজারগুলোর কারণে মাটি ধসে যাচ্ছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ও আধ পাকা সড়ক, গাইড বাঁধ, বসতবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, ছোট-বড় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
জিগাতলা গ্রামের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, এখান থেকে প্রতিবছর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হতো। সেসময় কোনো ব্যক্তি প্রতিবাদ করতে পারত না, প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দিত। সাবেক এমপি ছোট মনির খোকার মাধ্যমে ঘাটটি পরিচালনা করতেন। এখন তার খেসারত দিচ্ছে এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, যমুনা নদীতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তাদের দাবি যতদ্রুত সম্ভব ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তা না হলে ফসলিজমির সঙ্গে তাদের ঘরবাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আবদুল্লাহ খানকে একাধিবার মোবাইলে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।
টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শামীম মিয়া জানান, ভূঞাপুরের ইউএনও এসিল্যান্ডের সঙ্গে তিনি ভাঙন-কবলিত জিগাতলা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নদীভাঙনের স্থান থেকে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার নিকটে ঘরবাড়ি রয়েছে। সুতরাং এলাকাটি মনিটরিং করে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোরে একটি তক্ষকসহ পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২০ মে) ভোরে উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের মাটিপুকুর গ্রাম থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
আটকরা হলেন— মাটিপুকুর গ্রামের মৃত হাসেম আলী ব্যাপারীর ছেলে করিম হোসেন (৪৮) ও মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে মামুনুর রশিদ (৪২)।
পুলিশ জানায়, গোপন খবরে মাটিপুকুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে করিমের বাসা থেকে একটি তক্ষক উদ্ধার করা হয়।
এর আগেও করিমের বিরুদ্ধে শার্শা থানায় একই অপরাধের দায়ে একটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে থানায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা হয়েছে। আটকদের আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
কক্সবাজারের টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযানে কোস্ট গার্ডের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধসহ তিন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়েছে। এ সময় ৩০ হাজার ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।
আটকরা হলেন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. ইলিয়াস (৩০), নুর মোহাম্মদ (৬১) ও গুলিবিদ্ধ আব্দুল শক্কুর (৪০)। গুলিবিদ্ধ শক্কুরকে চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (১৯ মে) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার দিবাগত রাত আড়াইটায় টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের তুলাতলী ঘাটসংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
অভিযানকালে একটি সন্দেহভাজন ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকাকে থামার সংকেত দিলে পাচারকারীরা গুলি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে কোস্ট গার্ড সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। এতে এক পাচারকারী গুলিবিদ্ধ হন। প্রায় এক ঘণ্টার ধাওয়া শেষে নৌকাটি জব্দ করা হয়।
পরে নৌকায় তল্লাশি চালিয়ে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি ৯ মি.মি. বিদেশি পিস্তল ও চার রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় পাচারচক্রের আরও চার সদস্য সাগরে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়।
কোস্ট গার্ড জানায়, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে স্থানীয় জেলেদের দাবি, সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আট জেলে সাগরে মাছ ধরতে যান। পরে গোলাগুলির ঘটনায় তাদের একজনের নিখোঁজ হওয়ার আশঙ্কায় স্বজনরা তুলাতলী ঘাটে ছুটে আসেন।
কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করছে কোস্ট গার্ড। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ট্রাক ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।
সোমবার (১৯ মে) সকাল ৬টার দিকে উপজেলার দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কের ২৬ মাইল এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
বীরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রায়হান জানান, গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে আজ (সোমবার) সকালে ঠাকুরগাঁওগামী একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাক এবং ঠাকুরগাঁও থেকে দিনাজপুরমুখী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাস চালকসহ দুইজন নিহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।
নিহতদের মধ্যে মাইক্রোবাস চালক মানিক (৩৫) ঠাকুরগাঁও জেলার হরিহরপুর এলাকার মৃত আবুলের ছেলে।
দুর্ঘটনাস্থলেই নিহত হওয়া যাত্রী দেলোয়ার হোসেন (৪৫) একই জেলার হাজীপাড়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় ট্রেজারি অফিসের একজন কর্মকর্তা। তিনি মৃত হাফিজুর রহমানের ছেলে।
তবে হাসপাতালে নেওয়ার সময় নিহত ব্যক্তির পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। আহতদের ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মন্তব্য