নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে তীব্র সমালোচিত ডা. মুরাদ হাসান প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাকে পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর আলোচিত টকশোটির সঞ্চালক নাহিদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগে দম্ভের প্রশ্রয় নেই।’
গত ১ ডিসেম্বর রাতে ‘অসুস্থ খালেদা, বিকৃত বিএনপির নেতাকর্মী’ শিরোনামে এক ফেসবুক লাইভে যুক্ত হন মুরাদ। লাইভটির সঞ্চালক ছিলেন ইউটিউবার ও ফেসবুকার নাহিদ।
লাইভে বিএনপির রাজনীতি সমালোচনার একপর্যায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন মুরাদ হাসান। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্ম ও পরিবার নিয়েও কথা বলেন তিনি।
মুরাদ হাসানের আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এর মধ্যে রোববার রাতে আবারও নাহিদের সঙ্গে লাইভ আলোচনায় আসেন মুরাদ। তার ওই লাইভেও ছিল বিতর্কিত অজস্র মন্তব্য। এ ছাড়া তার ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপ নিয়েও শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।
এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবারের মধ্যে মুরাদকে প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়ার নির্দেশ দেন বলে সোমবার জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এর পরপরই ফেসবুকার ও ইউটিউবার নাহিদ তার ফেসবুক পেজ নাহিদরেইনসে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ, দাম্ভিকতা ও অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেয় না। আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’
স্ট্যাটাস দেয়ার পর লাইভেও আসেন নাহিদ। তিনি দাবি করেন, মুরাদের বক্তব্য আপত্তিকর মনে হলেও প্রতিমন্ত্রী হওয়ার কারণে তাকে থামাতে পারেননি।
নাহিদ বলেন, ‘আমার খুব বেশি যে কন্ট্রোল আছে তা না, হি ইজ আ মিনিস্টার, কাম-অন। আই অ্যাম জাস্ট গাই নেক্সট ডোর। আমি যত কথাই বলি না কেন, আমার কথায় খুব বেশি কিছু একটা হবে না। হি হ্যাজ টু কন্ট্রোল হিমসেলফ’।
‘তাও বলব, আমার লাইভে যেহেতু হয়েছে অ্যান্ড আই ওয়াজ হোস্টিং ইট, আমারও কিছু দায় আছে ওনাকে থামিয়ে দেয়ার। আমাদের দেশের একটা মন্ত্রীকে থামিয়ে দেয়ার প্র্যাকটিসটা আমরা এখনও করে উঠতে পারিনি। আই লার্নড মাই লেসন। আমি একটা জিনিস শিখেছি যে, আমার যখন থামানো উচিত মনে হবে, তাকে থামিয়ে দিতে হবে।’
মুরাদ যা বলেছেন তার প্রতি কোনো সমর্থন নেই বলেও জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ‘তিনি যা করেছেন এটা আমি মোটেও তা সাপোর্ট করি না। ডেফিনিটলি ইটস রিয়েলি ব্যাড। তিনি ক্ষমা চাইবেন এ ব্যাপারে। আমার রেসপনসিবিলিট হচ্ছে আমার শোতে হয়েছে। আই অ্যাম রিয়েলি স্যরি ফর দ্যাট।’
ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে নাহিদ বলেন, বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে জানতে চাওয়া হয় প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের কাছে, কিন্তু মুরাদ হাসান যে ভাষায় উত্তর দিয়েছেন, সেটা ছিল অপ্রত্যাশিত।
তিনি বলেন, ‘এ রকম একটা লাইভ শোতে আসলে, যখন এটি ভয়েস কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হয়, তখন অপজিট গেস্টকে কন্ট্রোল করা অনেক টাফ হয়। আমরা জানি যে ডা. মুরাদ হাসান একটু হাইপার টাইপের মানুষ। উনি অনেক বেশি এক্সাইটেড থাকেন সব সময়। ইফ হি হ্যাজ আ মাইক, যখন তিনি একটা টকশোতে থাকেন, তখন আরও বেশি হাইপার থাকেন।’
জাইমা রহমান ইস্যুতে রাখা বক্তব্য নিয়ে ডা. মুরাদ হাসানের উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও দাবি করেন নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘উই ট্রাইড টু মেক হিম আন্ডারস্ট্যান্ড, মেক হিম কাম অ্যাবাউট হিজ স্টেটমেন্ট। এবং উনি আসলে কোন প্রশ্নের কী জবাব দেবেন সেটা সম্পূর্ণ ওনার ব্যক্তিগত মতামত ছিল। যেখানে আমাদের বা আমার কোনো কন্ট্রোল ছিল না। আই অলওয়েজ ট্রাইড মাই বেস্ট। আমি ওনাকে প্রশ্ন করেছি একটা, উনি জবাব দিছ্ছিলেন আরেকভাবে। হি ওয়াজ ইন হাইপার মুড।’
জাইমাকে নিয়ে মুরাদ হাসানের বক্তব্যের কড়া সমালোচনাও করেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘জাইমাকে নিয়ে অনেকগুলো কমেন্ট করেছেন মে বি ফিউ সেকেন্ডসের মধ্যে, যে কমেন্টগুলো হি ওয়াজ নট দ্যাট আই ওয়াজ সাপোর্টিং হিম, ইট ওয়াজ বিকজ সো আনএক্সপেক্টেড।’
মুরাদ যখন জাইমা রহমানকে নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন টকশো সঞ্চালক নাহিদকে হাসতে দেখা যায়। বিষয়টি অস্বীকার করেননি নাহিদ নিজেও। আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি দাবি করেন, সে সময় কী করা উচিত বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
তিনি বলেন, ‘আমি যে প্রশ্ন করেছিলাম, সেই প্রশ্নের উত্তরে খুবই আনএক্সপেক্টেড ছিল। আই ওয়াজ অ্যাকচুয়ালি বিগ সারপ্রাইজড। আই ডিডনট নো হোয়াট টু ডু। আই ওয়াজ অ্যাকচুয়েলি লাফিং।’
তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে মুরাদ হাসানের করা মন্তব্য সমর্থনযোগ্য নয় বলেও জানান নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘ওনার স্টেটমেন্টগুলো অনেককেই হার্ট করেছে। যে কারণে আমি ওনাকে আবারও দুদিন পরে লাইভে আসার জন্য রিকোয়েস্ট করেছিলাম। যাতে উনি স্যরি বলেন সবাইকে।’
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাসহ আরও অনেকে রোববার রাতের লাইভে আসার জন্য মুরাদ হাসানকে অনুরোধ করেন বলেও দাবি করেন নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘কষ্ট করে বুঝিয়ে রাজি করে বলেছিলাম যে ইউ হ্যাভ টু সে স্যরি। আপনি যে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, সেই স্টেটমেন্টটা নট আপ টু দ্য স্ট্যান্ডার্ড। আপনার স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে যায় না। আওয়ামী লীগের স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে যায় না। ইউ হ্যাভ টু সে স্যরি।’
নাহিদ বলেন, ‘এটা শেইমিং হয়ে গেছে, ক্যারেক্টার শেইমিং হয়ে গেছে। এটা ডেফিনিটলি নট আ গুড থিং। বিশেষ করে আমাদের নারী সমাজের জন্য।’
রোববার রাতে লাইভে আসার পরে মুরাদ হাসান দুঃখ প্রকাশে আগ্রহী ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ। তবে লাইভ শুরুর পর সেটি আর ঘটেনি।
নাহিদ বলেন, ‘লাইভে আসার পরে, হি ওয়াজ সাপোসড টু সে স্যরি। আমি অনেকবার চেষ্টাও করেছি, উনি যেন স্যরিটা বলে অ্যাজ হি প্রমিজড, অ্যাজ হি সেইড। উনি স্যরি বলবেন সবাইকে টু কাম পিপল ইউ নো। বাট উনি ওইদিকে যাননি।
‘উনি বেসিক্যালি ওনার মতোই উত্তেজিত ছিলেন। যদিও উনি কিছু স্যরি বলার চেষ্টা করেছেন, বাট হি ওয়াজ নট রিয়েলি অ্যাপোলজিটিক। ওনার হয়ে আমি নিজেই স্যরি বলেছিলাম। বিকজ দ্যাটস দ্য লিস্ট আই ক্যান ডু। আমি একজন মন্ত্রীকে ফোর্স করতে পারি না। উনি কী স্টেটমেন্ট দেবেন না দেবেন সেটা সম্পূর্ণ ওনার ব্যক্তিগত মতামত।’
নাহিদ বলেন, ‘সেই লাইভেও অনেক কথাবার্তা চলে এসেছে। উনি স্যরি বলার ভাবটা আনার পরেও ইনফ্যাক্ট আরও অনেক কথাবার্তা চলে এসেছে, হুইচ আই রিয়েলি ডিডনট লাইক। যেগুলো বেসিক্যালি নারীদের হার্ট করবে। নারী অধিকারকে হার্ট করবে। শেইমিং করবে। দ্যাটস হোয়াই আই ডিলিটেড দ্য লাইভ ইয়েস্টার ডে।’
আরও পড়ুন:
টিকটকের ভিডিও বানাতে গিয়ে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তা নদীতে ডুবে সোহাগ (১২) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
ঈদুল ফিতরের তৃতীয় দিন শনিবার বিকেলে তিস্তা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
প্রাণ হারানো সোহাগ রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশের ভাষ্য, সোহাগ তার ফুফাতো বোনকে নিয়ে টিকটক বানাতে নদীতে গোসল করতে নামে। ওই সময় তার সঙ্গে আরও দুই বন্ধু ছিল। টিকটকের ভিডিও ধারণের সময় সোহাগ পানিতে গোসল করছিল। অন্যরা গোসল করে তীরে ওঠে।
দুই বন্ধু নদীর পাড়ে গিয়ে সোহাগকে খুঁজে না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টা পর তিস্তা নদী থেকে সোহাগের মরদেহ উদ্ধার করে।
রাজারহাট থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান টিকটকের ভিডিও বানাতে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘তিস্তা নদী থেকে সোহাগ নামের এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:সংবাদ ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তুকে ভবিষ্যতে কম গুরুত্ব দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য ফেসবুকে খবর প্রচার বন্ধ করবে মেটা। গত বছর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে ফিচারটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
ফেসবুকে ২০১৯ সালে চালু হওয়া নিউজ ট্যাবটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ছোট ও স্থানীয় প্রকাশনার শিরোনামগুলোও ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করেছে।
মেটা বলছে, ব্যবহারকারীরা সংবাদ নিবন্ধের লিংক দেখতে সক্ষম হবেন। সংবাদ সংস্থাগুলো তাদের লেখা ও ওয়েবসাইট লিঙ্ক পোস্ট ও প্রচার করতে পারবে, যেমন অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা ফেসবুকে করতে পারে।
ভুল তথ্য কীভাবে ছড়ানো হয় এবং এটি রাজনৈতিক মেরুকরণে অবদান রাখে কি না, তা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সমালোচনার পর মেটা তার প্ল্যাটফর্মগুলোতে সংবাদ ও রাজনৈতিক উপাদান কমানোর চেষ্টার পর এই পরিবর্তন আসছে।
মেটার মুখপাত্র ড্যানি লিভার বলেছেন, ‘এই পরিবর্তন গ্রাহকের ফলো করা অ্যাকাউন্টের পোস্টে প্রভাব ফেলবে না। এটি সিস্টেমের সুপারিশগুলোকে প্রভাবিত করবে এবং ব্যবহারকারীরা যদি আরও চায়, তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
‘ঘোষণাটি এমন সময় আসছে, যখন ব্যবহারকারীরা বছরের পর বছর আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল যে, আমরা কীভাবে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুগুলো পরিচালনা করি তার উপর ভিত্তি করে।’
মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিউজ ট্যাবে এই পরিবর্তন তাদের ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক এবং ভুল তথ্যের পর্যালোচনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ভুল তথ্য প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েই গেছে। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতা চলছে।
কর্নেল ব্রুকস স্কুল অফ পাবলিক পলিসির টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও প্রযুক্তি বিষয়ক নীতি গবেষক সারাহ ক্রেপস বলেছেন, ‘ফেসবুক নিজেকে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে মনে করে না, এটি চালান প্রযুক্তিবিদরা। তারপর হঠাৎ তারা এ বিষয়ে মূল্যায়ন শুরু করে এবং নিজেদের রাজনীতিতে নিমজ্জিত দেখতে পান। ফলে তারা নিজেরাই শিরোনাম হয়ে ওঠেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বছর অনেকগুলো বড় নির্বাচন আসছে। ফলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ফেসবুক রাজনীতি থেকে আরও এক ধাপ দূরে সরে যাচ্ছে। অসাবধানতাবশত নিজেরাই যাতে রাজনৈতিক শিরোনাম হয়, তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত।’
পয়েন্টারের মিডিয়া বিশ্লেষক রিক অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘নিউজ ট্যাবের বিলুপ্তি সংবাদ সংস্থাগুলোর জন্য আশ্চর্যজনক নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে ফেসবুক ট্র্যাফিক হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সংস্থাগুলোকে দর্শকদের আকৃষ্ট করার অনুসন্ধান ও নিউজলেটারের মতো অন্যান্য উপায়গুলোতে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করছে।’
অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘আমি বলব আপনি যদি খেয়াল করতেন, তাহলে আপনি দেখতে পেতেন যে, এটি আসছে। তবে এটি সংবাদ ব্যবসার জন্য আরও একটি দুঃসংবাদ।’
মেটা জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীরা তাদের ফেসবুক ফিডে যা দেখেন, তার চেয়ে তিন শতাংশেরও কম সংবাদ তৈরি হয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক সংবাদ ব্যবহারকারীর সংখ্যা গত বছর ৮০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।
তবে ২০২৩ সালের পিউ রিসার্চ স্টাডি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অর্ধেক অন্তত মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে খবর পান। ফেসবুকের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম অন্যান্য মাধ্যমকে সেখানে ছাড়িয়ে গেছে।
পিউ জানিয়েছে, প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যে তিনজন বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ফেসবুক থেকে খবর পান এবং ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ইনস্টাগ্রাম থেকে খবর পান। এ দুই মাধ্যমেরই মালিকানা মেটার।
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা সম্প্রতি ব্যবহারকারীদের অনুসরণ করেন না, এমন অ্যাকাউন্টগুলোতে পোস্ট করা রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর ‘সক্রিয়ভাবে’ সুপারিশ করা বন্ধ করার জন্য অ্যাপটির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ফিল্টার বন্ধ করার অপশন সবসময় ইউজার সেটিংসে থাকলেও মেটা যে এই পরিবর্তন করেছে তা অনেকেই জানতেন না।
আরও পড়ুন:ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মেটার প্ল্যাটফর্মগুলো স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব এবং অ্যামাজন ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে নজরদারি করছে বলে অভিযোগ করে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের বরাত দিয়ে বুধবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক ২০১৬ সালে ‘ঘোস্টবাস্টারস’ নামে একটি গোপন প্রজেক্ট চালু করেছিল যাতে স্ন্যাপচ্যাট ও এর সার্ভার ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা যায়।
স্ন্যাপচ্যাটের ভূতের (ঘোস্ট) মতো লোগোর সঙ্গে মিল রেখে ফেসবুক এটির নাম দিয়েছে ‘প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারস’।
আদালতের নথি অনুসারে, ঘোস্টবাস্টারস প্রজেক্টটি স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন ও ব্যবহারকারীর আচরণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
নথিতে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করা সে সময়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক ইমেইলগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে মার্ক এমন একটি ইমেইলে বলেন, স্ন্যাপচ্যাট তাদের সিস্টেম এনক্রিপট (যে পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয় যা তথ্যের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে) করার কারণে অ্যাপটির অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য ফেসবুকের কাছে নেই।
তাই তাদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে একটি নতুন উপায় বের করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মার্ক। এর জন্য একটি কাস্টম সফটওয়্যার তৈরির কথা জানান তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে ফেসবুকের প্রকৌশলীরা ঘোস্টবাস্টারস তৈরি করেন। পরে অ্যামাজন এবং ইউটিউবকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রকল্পটি প্রসারিত করা হয়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের তথ্য অনুসারে, ফেসবুকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের একটি দল এবং প্রায় ৪১ জন আইনজীবী প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারে কাজ করেছেন, তবে ফেসবুকের কিছু কর্মী এ প্রকল্পের বিপক্ষে ছিলেন। তারা এটি নিয়ে তাদের উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর অবশেষে ঠিক হয়েছে ফেসবুক। রাত দশটা ৩৫ মিনিটে লগইনের চেষ্টা করলে দেখা যায়, সচল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম বৃহৎ এ প্লাটফরমটি।
এদিকে রাত সাড়ে নয়টার পর থেকে হঠাৎ ফেসবুকে ঢুকতে না পেরে দেশের অনেক নাগরিক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাদের আশ্বস্ত করে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেছেন ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এসপি মো. নাজমুল ইসলাম।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের কার্যক্রম বর্তমানে কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, সমস্যার সমাধানে তারা কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ফেসবুকের কারিগরি সমস্যা। কেউ আতঙ্কিত হবেন না। এতে ফেসবুক অ্যাকাউন্টধারী বা ফেসবুক অ্যাপের কোনো ত্রুটি নেই। পাসওয়ার্ড বা আর্থিক কোনো বিষয়েও সংশ্লিষ্টতা নেই।
‘আপনার ফেসবুক হ্যাক হয়নি, তাই কেউ আতঙ্কিত হবেন না। শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর অবশেষে ঠিক হয়েছে ফেসবুক। রাত দশটা ৩৫ মিনিটে লগইনের চেষ্টা করলে দেখা যায়, সচল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম বৃহৎ এ প্লাটফরমটি।
বিস্তারিত আসছে…
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক হঠাৎ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা কেউ ফেসবুকে লগইন করতে পারছেন না। এমনকি ফেসবুকে সক্রিয় থাকা আইডিগুলোও স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগআউট হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর থেকে এ সমস্যার কথা জানাতে থাকেন ব্যবহারকারীরা।
প্রযুক্তি ওয়েবসাইট ডাউন ডিটেক্টরও ফেসবুক ব্যবহারে সমস্যার কথা নিশ্চিত করেছে। এক্সের ট্রেন্ডিং ফিডেও ফেসবুক সার্ভার ডাউনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
ফেসবুকের পাশাপাশি মেটার আওতাধীন ইনস্টাগ্রাম ও মেসেঞ্জারও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
ব্যবহারকারীরা জানান, হঠাৎ করেই তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগ আউট হয়ে যায়। পরে তারা লগ ইন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পুরো বিশ্বজুড়ে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের কোথাও কেউ ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে প্রবেশ করতে পারছে না। এই দুটি মাধ্যমের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস উভয়ই অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
মেটা কিংবা ফেসবুক তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি।
টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে দেশের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ঘুরছিল ২০২৩ সাল থেকেই। এসব তথ্য কেনাবেচার কথাও শোনা গেছে। গ্রাহক-তথ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নতুন একটি ভুয়া ব্যবসা শুরু করেছে একটি চক্র। এসব তথ্যের বিক্রি বাড়াতে সম্প্রতি দেশের প্রতিষ্ঠিত মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর নামও জুড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শুরুর দিকে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের বিশেষ সফটওয়্যারের (বট) মাধ্যমে কাজটি করা হয়েছে বলে জানা গেলেও পরে এর পাশাপাশি ওয়েবসাইট খুলেও ভুয়া তথ্যের এই জমজমাট ব্যবসা চলছে। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের দেয়া বিজ্ঞাপনে বেশ কিছু নামি-দামি ব্যাংকের গ্রাহকের তথ্য রয়েছে বলেও প্রচার চালাচ্ছে। নিত্যনতুন কৌশলে তারা গ্রাহককে ধোঁকা দেয়ার এই ব্যবসা করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বেহাত হওয়ার পর টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রচার হওয়া নির্দিষ্ট একটি লিংকে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ দিলেই তার অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য বেরিয়ে আসছিল। একইভাবে এখানেও কিছু মানুষের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
তবে যে তথ্য এখানে পাওয়া যাচ্ছে তার সত্যতা নিরূপণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এটাকে ভূঁইফোড় ব্যবসা বলেও আখ্যায়িত করছেন। বেশকিছু ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, মোবাইল নম্বর দিলে আবার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা নাম এমন কিছু তথ্য আসছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য যারা অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করছে এবং প্রলোভনে পড়ে যারা কিনছে তারা উভয়েই সমান অপরাধী। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়ায় উভয়েরই জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
‘কাজেই যারা এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে এলে শাস্তির সম্মুখীন হবেন। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো এমন তথ্য কিনে কখনোই টাকা পাওয়ার কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নেই।’
সূত্র বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিভাগ থেকে ‘লাখ লাখ’ মানুষের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে। তার দুই থেকে তিন মাস পর স্মার্ট কার্ডের তথ্য বেহাতের তথ্য সামনে আসে। এখন এসব তথ্যকেই নতুন মোড়কে মোবাইল ব্যাংকিং এবং প্রচলিত ব্যাংকের গ্রাহক তথ্য হিসেবে হাজির করা হচ্ছে।
তবে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, একেক গ্রুপে একেক রকম তথ্য আসছে। কোথাও গ্রাহকের সঙ্গে সঙ্গে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর আছে বলে বলা হচ্ছে। আবার কোথাও মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মতারিখের উল্লেখ থাকছে। কোথাও কোথাও ছবি থাকার দাবিও করা হচ্ছে।
দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্টাগ্রাম লিমিটেড যারা ইথিক্যাল হ্যাকিং নিয়ে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান শাহরিয়ার দিচ্ছেন ভয়াবহ তথ্য। তিনি বলেন, ‘মূলত প্রলোভনে পড়েই অনেকে এমন তথ্য কিনে থাকেন। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের একটি যৌথ এনালাইসিসে দেখা যায়- যারা তথ্য চুরি করেছে, তারা তথ্য বিক্রির সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের তথ্যও সংরক্ষণ করে রাখে।
‘যেহেতু ক্রয়কারীর তথ্য ওরা সংরক্ষণ করছে, ফলে ভবিষ্যতে গ্রাহক হ্যাকিং, ব্ল্যাক মেইলসহ নানা জটিলতার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তখন কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে তারা বলতেও পারবেন না কেন এবং কী কারণে তিনি অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।’
তবে গ্রাহকদের তথ্য এভাবে অবাধে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ানোর দাবি করায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের নাস্থা তৈরি হওয়া বা অহেতুক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের এই প্রচারণা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিতেও এসেছে। তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আমরা প্রতিনিয়তই তথ্যগত নানা অপপ্রচারের শিকার হই। এবারকার বিষয়ও আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা এটি অবহিত করেছি।’
বর্তমানে যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও ছবি লাগে। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে তথ্য ঘুরছে বলে বলা হচ্ছে এসব তথ্য সত্য হলেও এ দিয়ে কিছুই করা যাবে না বলেও মনে করিয়ে দেন ওই প্রযুক্তিবিদ।
তবে তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ থেকে তথ্য বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনার খবরে এমনিতেই মানুষ এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। এখন তাদেরকে বিভ্রান্ত করাটা আগের চেয়ে সহজ। ফলে সত্য-মিথ্যা নানা কথা বলে সুযোগ সন্ধানী কেউ কেউ ব্যবসা করে থাকতে পারে।
বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজে ১২ কোটির মতো মানুষের তথ্য রয়েছে।
মন্তব্য