৬ ডিসেম্বরকে বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রী দিবস হিসেবে পালন করছে ঢাকা ও দিল্লি। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দিনটিকে পালনের সিদ্ধান্ত হয় চলতি বছরের মার্চে ভারতের নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়।
ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ১৮টি দেশ এই মৈত্রী দিবস পালন করবে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলজিয়াম, কানাডা, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর টালমাটাল ছিল পরিস্থিতি। স্নায়ুযুদ্ধের সেই সময়ের সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তখন পাকিস্তানের পক্ষে।
অন্যদিকে ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন অবস্থান নেয় বাংলাদেশের পক্ষে। সম্প্রতি প্রকাশিত দলিলপত্রে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে মার্চের আগেই বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের আগমনের সংবাদ দেন তাদের কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার।
অন্যদিকে আগস্টের মাঝামাঝি বেইজিংয়ে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত খাজা মোহাম্মদ কায়সারকে ডেকে চীনের প্রেসিডেন্ট চৌ এন লাই সাফ জানিয়ে দেন, চীন পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেবে না। এ সংবাদ জেনেভায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত পি কে হালদারকে জানিয়ে দেন সেখানে নিযুক্ত পূর্ব পাকিস্তানের তরুণ কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যতই যুদ্ধবিরতির দাবি তুলুক না কেন, দিল্লি ও মস্কোর দাবি ছিল আগে আত্মসমর্পণ, পরে যুদ্ধবিরতি।
সেই সময় সম্পর্কে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার অপারেশন ভারতীয় হাইকমিশন বইয়ে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একটা ছায়াযুদ্ধ বা প্রক্সি ওয়ার চলছিল কয়েক মাস ধরে। ৩ ডিসেম্বর শুরু হয়ে যায় সরাসরি যুদ্ধ। ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতীয় স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন জাতিসংঘে একটি বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সামরিক নির্যাতন ও গণহত্যার বিষয়টিকে ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একদিন সত্যি সত্যিই স্বাধীন হবে…ভারত চেয়েছে বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে না, যদিও ভারত তাকে সাহায্য দিয়ে যাবে।
‘১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল । আজ তিনি জেলে পচছেন। তার কী অবস্থা কেউ জানে না। কোনো নারী, পুরুষ বা শিশু বলতে পারবে না—আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি। পাকিস্তানের সৈন্যরা যে ভয়াবহ নৃশংসতা চালাচ্ছে, মানব ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, শিশুদের খুন করা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। আপনারা এসব ঘটনার ছবি দেখেছেন, যা এসবের সাক্ষী। পাকিস্তানে একটা বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটছে বললে যথেষ্ট বলা হবে না। এ ব্যাপারে আমাদের সহানুভূতি থাকা এবং এসব ভুলে যাওয়া উচিত—এ রকম মনে করলে হবে না। এসব নৃশংসতা ঘটেছে এবং এক কোটি মানুষ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।’
এর দুই দিন পর ৬ ডিসেম্বর প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভারত কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। ওই দিন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে একটি বিবৃতি দেন সমর সেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সরে যাওয়া উচিত। শেখ মুজিবুর রহমানকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। ২৫ মার্চের পর থেকেই তিনি জেলে পচে মরছেন। পাকিস্তানিদের উচিত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া। এ কাজগুলো এখনও করা সম্ভব। এখনও যথেষ্ট সময় আছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এ পদক্ষেপগুলো নিতে পাকিস্তান সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে।’
ওই সময় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুধু বাংলাদেশ সীমান্তেই নয়, পশ্চিম সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়েছিল। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য উভয় দেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি জর্জ বুশ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে একটি চিঠি দেন।
চিঠিতে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের একটি পক্ষ পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। কিন্তু অপর পক্ষ ভারত এখনও মেনে নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদের কর্তব্য হলো জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকা।’
একই দিন সমর সেন জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টকে একটি চিঠি দেন। তিনি জর্জ বুশের বক্তব্যের ইঙ্গিত দিয়ে যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পেছনে যে সূক্ষ্ম রাজনীতি কাজ করেছিল, তা আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বিধিসম্মত মনে হলেও এর শিকার হতো বাংলাদেশ।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে লেখা চিঠিতে সমর সেন বলেন, ‘যদি একটি রাষ্ট্রের ওপর ওই রাষ্ট্রের একটি অঞ্চলের জনগণের আস্থা না থাকে—যেটা বাংলাদেশের বেলায় হয়েছে, তাহলে একটা আলাদা রাষ্ট্রের জন্মের শর্ত তৈরি হয়ে যায়।
‘ভারত মনে করে, ঠিক এটাই ঘটছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাষ্ট্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। ভারত এই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নতুন এই রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের বক্তব্য না শুনে ভারতকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বলা কি বাস্তবসম্মত?’
গবেষক মঈদুল হাসান তার মূলধারা ’৭১ বইয়ে লিখেছেন, ৩ নভেম্বর পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত বেঞ্জামিন ওয়েলার্ট সীমান্ত অঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে ভারতের অসম্মতির তীব্র সমালোচনা করেন এবং অযাচিতভাবে ১৯৫৯ সালের পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “পাকিস্তান যেকোনো রাষ্ট্র কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পর এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের অস্ত্র ও সৈন্যবল সহযোগে পাকিস্তানকে সাহায্য করার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”’
ওয়েলার্টের বিবৃতিতে স্পষ্ট হুমকি দেয়া হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত এমন এক চুক্তি সই করে, যাতে দিল্লি আক্রান্ত হলে মস্কো মনে করবে তারা আক্রান্ত হয়েছে।
চীন আগেই পাকিস্তানকে বলেছিল, যুদ্ধে জড়াবে না
মুক্তিযুদ্ধের ওই সময়টাকে অন্যভাবে দেখেন তখনকার তরুণ কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান। জেনেভায় পাকিস্তানের স্থায়ী মিশনের এ কর্মকর্তা সেই সময়টা স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তান যখন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে তাদের সেনাদের লেলিয়ে দিল, তখন কেবল জেনোসাইডই ঘটল না, আরো দুটো ঘটনা ঘটল। মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। তখন থেকে আমরা হলাম পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। আর সীমান্তের ওপারে ভারত বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখছিল। স্টাডি করছিল। তারা জানত, এখানে কী হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে। তারা আমাদের বন্ধু ছিল। কোনো সন্দেহ নাই।
‘কিন্তু এটাও ঠিক যে, ঐতিহাসিকভাবে পিওরলি স্ট্র্যাটেজিক্যালি রাষ্ট্রে ব্যক্তির কোনো জায়গা নেই। যখন অবস্থার অবনতি হলো, যুদ্ধ হলো, যুদ্ধের শুরুতেই তখন আমরা সবাই বুঝলাম, পাকিস্তান সব কিছু হারাচ্ছে। এর কারণ আমাদের মুক্তিবাহিনী। প্রথমে তারা একটু সমস্যায় ছিল, কিন্তু যখন মুক্তিবাহিনী এক থেকে দেড় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে একেকজন ফিরছিল, তখনই তারা দক্ষতার প্রমাণ রাখছিল। যখন এই সংখ্যা এক লাখ পেরোল, তখন ভারত আমাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া শুরু করল। তারা আমাদের এক কোটি শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে, মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অস্ত্র দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল পাওয়া ছিল।’
তিনি বলেন, “প্রশ্ন হলো ভারত কেন এটা করল? তারা আমাদের সহায়তা করেছে আমাদের চাওয়ার কারণেই। আমরা চেয়েছি। আর ভারত চেয়েছে শরণার্থীর হাত থেকে রক্ষা পেতে। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকা, ইউরোপ সফর করেছেন। আর বলেছেন, এই ১ কোটি শরণার্থী আমি খাবার দিতে পারব না। তিনি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বললেন, ‘আপনারা যদি অ্যাকশন না নেন, তাহলে আমি অ্যাকশানে যাব। এটা আমাদের অস্তিত্বর জন্য। কেননা ১ কোটি শরণার্থীকে আমি খাওয়াতে পারব না।’”
“যুদ্ধ শেষ হতে লাগল। বিশেষ করে নভেম্বরের শেষের দিকে। আমরা কিন্তু যুদ্ধ জিতছি। এ সময় যে বড় যুদ্ধটা হলো, সেটা হলো আখাউড়ায়। সে সময়ই কিন্তু ভারত-বাংলাদেশের মিত্রবাহিনী একই সঙ্গে মেঘনা নদী পার হলো, যদিও তখন পশ্চিম সীমান্তে ভারত ধীরে এগিয়েছে, যদিও সেখানে তাদের ৫ হাজার কিলোমিটার সীমান্ত আছে।”
ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘ডিসেম্বরের শুরুতে ভারত প্রথম বাংলাদেশকে ভুটানকে দিয়ে স্বীকৃতি দেয়ালো। নিজেরা আগে দিল না। এই কারণে যে, এটা করলে যাতে তারা চাপে না পড়ে। কিন্তু ভুটানের সাত ঘণ্টা পর তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল।
‘এটা বুঝতে হবে যে, ভারত সরকারের নীতির বাইরেও ইন্দিরা গান্ধীর আলাদা লক্ষ্য ছিল। আর তা হলো একদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। সে সময় চীনের আগ্রহে নিরাপত্তা পরিষদে জোর আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র তাতে সমর্থন দিচ্ছে। তারা চাচ্ছে, যুদ্ধবিরতি। ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থায়ী প্রতিনিধিকে জানালেন, আলোচনা করো, নো সিসফায়ার উইদাউট স্যারেন্ডার অফ পাকিস্তানি সোলজারজ। পাকিস্তানি সেনাদের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের পরই কিন্তু যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয় এবং রেজুলেশনে স্বাধীন বাংলাদেশে সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য সব দেশ রেজুলেশনে সই করে।’
ওয়ালিউর বলেন, ‘অগাস্ট ১৯৭১। ২১ ও ২২ তারিখে জেনেভায় একটি বৈঠক হলো। যেখানে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ সব দেশকে ডাকল। সেখানে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলো জাস্ট টু টেক অ্যা নোট। সবাই ভয় পাচ্ছিল, চীন হয়তো পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। উত্তর-পশ্চিম বা উত্তর সীমন্ত দিয়ে হয়তো তারা আক্রমণ করবে। খাজা মোহাম্মদ কায়সার ছিলেন আমাদের (পাকিস্তান) রাষ্ট্রদূত। তিনি বেইজিং থেকে এসেছিলেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি। আমার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। রাত্রে আমরা কথা বললাম। আমরা হোটেলে গেলাম। ইন্টার কন্টিনেন্টাল। তিনি আমাকে বললেন, বয় তুমি হোটেলে ফিরে যাও। চায়না পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জাড়বে না।
‘আমি হোটেলে ফিরে গেলাম। রাত্রে ভালো ঘুম হলো। পরের দিন সকালে মিটিং শুরু হলো। কায়সার প্রথমেই পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান জেনারেল গোলাম মোহাম্মদকে বললেন, চীন পাকিস্তানকে সরাসরি যুদ্ধে সহায়তা করবে না এবং যুদ্ধে অংশও নেবে না। গোলাম মোহাম্মদ পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে জেনেভায় এসেছিলেন। খাজা মোহাম্মদ বললেন, আমি জেনেভায় রওনা দেয়ার আগের দিন চীনা প্রেসিডেন্ট চৌ এন লাই আমাকে ব্রেকফাস্ট মিটিংয়ে ডেকেছিলেন এবং চীনের এই মনোভাবে কথা জানিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সেই মোস্ট স্কুপ ও ইম্পোর্টেন্ট খবরটি কলকাতা পাঠাই ও বলি এটা দিল্লিকে জানাতে। এটা ছিল নয় মাসের যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে জরুরি খবর। কারণ চীন পাকিস্তানের সঙ্গে জড়াতে রাজি হয়নি। আমি তখন জেনেভায়। আমি সুইস সরকারকে নোটিশ দিয়েছি, চাকরি ছাড়ার। কিন্তু মুজিবনগর সরকার আমাকে বলছে যে, তুমি মিটিং শেষ করে পাকিস্তান সরকারের চাকরি ছাড়। আমি ওয়াশিংটন ডিসিতে কিবরিয়াকে ও কলকাতায় হোসেন আলিকে খবর দেই। দিল্লিকে এই খবর বলে দিতে বলি। একই সময় জেনেভায় ভারতের রাষ্ট্রদূত পি কে হালদারকেও এ কথা জানাই।’
ভারত জানত বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, ভারত জানত, বাংলাদেশের স্বাধীন না হওয়ার কারণ নেই।
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস হলো, যেহেতু ১৯৭১ সাল একটা স্নায়ুযুদ্ধের সময় ছিল, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব ছিল, দুপক্ষই সে সময় এমন ছিল একজন এক পক্ষ হলে অন্যজন অন্যপক্ষ, তখন ভারত ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, তাদের কী করতে হবে এবং বাংলাদেশের মানুষ কী চায়, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠে ৭ মার্চের ভাষণ শোনার পর। জেনোসাইড যখন হলো হলো (২৫ মার্চের গণহত্যা), ১০ মিলিয়ন শরণার্থী যখন তাদের দেশে গেল, ভারতের তখন বুঝতে কষ্ট হয়নি, কী ঘটতে যাচ্ছে। সম্ভবত এপ্রিল মাসেই তাদের ইন্টেলিজেন্স গুরু যাকে বলা হয়, সেই কে সুব্রমানিয়াম তার রিপোর্টে বলেছিলেন, নতুন এক বাংলাদেশ হচ্ছে। একইভাবে আমেরিকার হেনরি কিসিঞ্জার ৭ মার্চের আগেই রিপোর্টে বলে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ নতুন দেশ হচ্ছে। বর্তমান প্রকাশিত রিপোর্টগুলোতে তাই দেখা যাচ্ছে। ফলে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে কিন্তু রিপোর্ট ছিল সীমান্তের এপারে কী ঘটতে যাচ্ছে। তাই সবাই বুঝে গিয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষ আর পাকিস্তানের সঙ্গে থাকছে না। আর গণহত্যার পর তো তা সম্ভবও ছিল না।
‘ইন্দিরা গান্ধীর তখন কেবল দরকার ছিল আন্তর্জাতিক সমর্থন। কেননা আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করছিল এবং চীনেরও পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, যে কারণে ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলো এবং একটি চুক্তিও করল। সেই ফ্রেন্ডশিপ চুক্তিটায় বলা হলো, ভারতকে যদি কেউ আক্রমণ করে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন মনে করবে, তার গায়েই আঘাত লেগেছে এবং সে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে ও ভারতকে সব ধরনের সহায়তা করবে। তাই বাংলাদেশের যুদ্ধে জড়ানো ভারতের জন্য বড় ঝুঁকি ছিল এটা বলা মনে হয় না ঠিক হবে। কেননা বাংলাদেশের মানুষ তখন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেয়ায় গ্রাম অঞ্চল তখন প্রায় মুক্তিবাহিনীরই অধীনে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘দিল্লির তখন দরকার ছিল কেবল ঢাকার পতন। কারণ ঢাকার পতন না হলে যুদ্ধটা অন্যদিকে মোড় নিতে পারত। কারণ জাতিসংঘে তখন কেবল যুদ্ধবিরতির কথা উঠছিল। দিল্লি আর মস্কো তখন বলছিল, ঢাকার পতন হলেই কেবল যুদ্ধবিরতি হতে পারে। পাকিস্তানিদের জন্যও দরকার ছিল ভারতীয় সৈন্যদের হাতে আত্মসমর্পণের। কেননা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পড়লে তাদের বেঁচে থাকাটা কঠিন হতো।
‘বিশেষ করে ২৫ মার্চের গণহত্যার পর থেকে তারা বাঙালিদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছিল। তাই যখন তাদের আল্টিমেটাম দেয়া হয়, তারা দ্রুত রাজি হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হওয়ার কোনো কারণই ছিল না, যখন গুটিকয় মানুষ ছাড়া সারা বাংলাদেশই স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ ছিল।’
ভারতের স্বীকৃতি ছিল মুক্তিযুদ্ধে ন্যায্যতার স্বীকৃতি
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা হওয়ার পরই মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতা ও স্বীকৃতি জরুরি ছিল। যেহেতু তখন বিশ্ব ছিল স্নায়ুযুদ্ধের যুগে। বিশ্ব ছিল দ্বিধাবিভক্ত এবং পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আমরা দেখলাম, যখন মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ল এবং একটি পর্যায়ক্রমিক অবস্থান তৈরি করল, সে সময় ভারত ওই অবস্থাতেই বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিল। এতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা পেল। এতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব তৈরি হলো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ন্যায্যতা পেল।
‘যারা তখন বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে জানত না, তাদের কাছেও সেই বার্তা পৌঁছে গেল। এটা ছিল ভারতের সময়োপোযোগী সিদ্ধান্ত। প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ভারত সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আগস্টের ৪ তারিখে চিঠি লিখেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর বাংলাদেশ সফরের সময় দিনটিকে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর দিন হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তাই দুই দেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে এটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।’
তিনি বলেন, ‘যারা পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়, তারা বলতে থাকে, এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর বিরুদ্ধে ভারত শক্ত অবস্থান নেয়। অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র সফরেই ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন, কেউ কোনো অবস্থান না নিলেও তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেবেন। সেখানে যে গণহত্যা চলছে, তাতে সবাই চোখ বুজে থাকলেও ভারত বসে থাকবে না। কেননা এক কোটি শরণার্থীর বোঝা বহন করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তিনি সবার চাপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য