৬ ডিসেম্বরকে বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রী দিবস হিসেবে পালন করছে ঢাকা ও দিল্লি। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দিনটিকে পালনের সিদ্ধান্ত হয় চলতি বছরের মার্চে ভারতের নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়।
ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ১৮টি দেশ এই মৈত্রী দিবস পালন করবে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলজিয়াম, কানাডা, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর টালমাটাল ছিল পরিস্থিতি। স্নায়ুযুদ্ধের সেই সময়ের সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তখন পাকিস্তানের পক্ষে।
অন্যদিকে ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন অবস্থান নেয় বাংলাদেশের পক্ষে। সম্প্রতি প্রকাশিত দলিলপত্রে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে মার্চের আগেই বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের আগমনের সংবাদ দেন তাদের কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার।
অন্যদিকে আগস্টের মাঝামাঝি বেইজিংয়ে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত খাজা মোহাম্মদ কায়সারকে ডেকে চীনের প্রেসিডেন্ট চৌ এন লাই সাফ জানিয়ে দেন, চীন পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেবে না। এ সংবাদ জেনেভায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত পি কে হালদারকে জানিয়ে দেন সেখানে নিযুক্ত পূর্ব পাকিস্তানের তরুণ কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যতই যুদ্ধবিরতির দাবি তুলুক না কেন, দিল্লি ও মস্কোর দাবি ছিল আগে আত্মসমর্পণ, পরে যুদ্ধবিরতি।
সেই সময় সম্পর্কে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার অপারেশন ভারতীয় হাইকমিশন বইয়ে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একটা ছায়াযুদ্ধ বা প্রক্সি ওয়ার চলছিল কয়েক মাস ধরে। ৩ ডিসেম্বর শুরু হয়ে যায় সরাসরি যুদ্ধ। ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতীয় স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন জাতিসংঘে একটি বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সামরিক নির্যাতন ও গণহত্যার বিষয়টিকে ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একদিন সত্যি সত্যিই স্বাধীন হবে…ভারত চেয়েছে বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে না, যদিও ভারত তাকে সাহায্য দিয়ে যাবে।
‘১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল । আজ তিনি জেলে পচছেন। তার কী অবস্থা কেউ জানে না। কোনো নারী, পুরুষ বা শিশু বলতে পারবে না—আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি। পাকিস্তানের সৈন্যরা যে ভয়াবহ নৃশংসতা চালাচ্ছে, মানব ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, শিশুদের খুন করা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। আপনারা এসব ঘটনার ছবি দেখেছেন, যা এসবের সাক্ষী। পাকিস্তানে একটা বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটছে বললে যথেষ্ট বলা হবে না। এ ব্যাপারে আমাদের সহানুভূতি থাকা এবং এসব ভুলে যাওয়া উচিত—এ রকম মনে করলে হবে না। এসব নৃশংসতা ঘটেছে এবং এক কোটি মানুষ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।’
এর দুই দিন পর ৬ ডিসেম্বর প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভারত কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। ওই দিন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে একটি বিবৃতি দেন সমর সেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সরে যাওয়া উচিত। শেখ মুজিবুর রহমানকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। ২৫ মার্চের পর থেকেই তিনি জেলে পচে মরছেন। পাকিস্তানিদের উচিত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া। এ কাজগুলো এখনও করা সম্ভব। এখনও যথেষ্ট সময় আছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এ পদক্ষেপগুলো নিতে পাকিস্তান সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে।’
ওই সময় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুধু বাংলাদেশ সীমান্তেই নয়, পশ্চিম সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়েছিল। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য উভয় দেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি জর্জ বুশ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে একটি চিঠি দেন।
চিঠিতে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের একটি পক্ষ পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। কিন্তু অপর পক্ষ ভারত এখনও মেনে নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদের কর্তব্য হলো জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকা।’
একই দিন সমর সেন জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টকে একটি চিঠি দেন। তিনি জর্জ বুশের বক্তব্যের ইঙ্গিত দিয়ে যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পেছনে যে সূক্ষ্ম রাজনীতি কাজ করেছিল, তা আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বিধিসম্মত মনে হলেও এর শিকার হতো বাংলাদেশ।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে লেখা চিঠিতে সমর সেন বলেন, ‘যদি একটি রাষ্ট্রের ওপর ওই রাষ্ট্রের একটি অঞ্চলের জনগণের আস্থা না থাকে—যেটা বাংলাদেশের বেলায় হয়েছে, তাহলে একটা আলাদা রাষ্ট্রের জন্মের শর্ত তৈরি হয়ে যায়।
‘ভারত মনে করে, ঠিক এটাই ঘটছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাষ্ট্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। ভারত এই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নতুন এই রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের বক্তব্য না শুনে ভারতকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বলা কি বাস্তবসম্মত?’
গবেষক মঈদুল হাসান তার মূলধারা ’৭১ বইয়ে লিখেছেন, ৩ নভেম্বর পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত বেঞ্জামিন ওয়েলার্ট সীমান্ত অঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে ভারতের অসম্মতির তীব্র সমালোচনা করেন এবং অযাচিতভাবে ১৯৫৯ সালের পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “পাকিস্তান যেকোনো রাষ্ট্র কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পর এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের অস্ত্র ও সৈন্যবল সহযোগে পাকিস্তানকে সাহায্য করার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”’
ওয়েলার্টের বিবৃতিতে স্পষ্ট হুমকি দেয়া হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত এমন এক চুক্তি সই করে, যাতে দিল্লি আক্রান্ত হলে মস্কো মনে করবে তারা আক্রান্ত হয়েছে।
চীন আগেই পাকিস্তানকে বলেছিল, যুদ্ধে জড়াবে না
মুক্তিযুদ্ধের ওই সময়টাকে অন্যভাবে দেখেন তখনকার তরুণ কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান। জেনেভায় পাকিস্তানের স্থায়ী মিশনের এ কর্মকর্তা সেই সময়টা স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তান যখন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে তাদের সেনাদের লেলিয়ে দিল, তখন কেবল জেনোসাইডই ঘটল না, আরো দুটো ঘটনা ঘটল। মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। তখন থেকে আমরা হলাম পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। আর সীমান্তের ওপারে ভারত বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখছিল। স্টাডি করছিল। তারা জানত, এখানে কী হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে। তারা আমাদের বন্ধু ছিল। কোনো সন্দেহ নাই।
‘কিন্তু এটাও ঠিক যে, ঐতিহাসিকভাবে পিওরলি স্ট্র্যাটেজিক্যালি রাষ্ট্রে ব্যক্তির কোনো জায়গা নেই। যখন অবস্থার অবনতি হলো, যুদ্ধ হলো, যুদ্ধের শুরুতেই তখন আমরা সবাই বুঝলাম, পাকিস্তান সব কিছু হারাচ্ছে। এর কারণ আমাদের মুক্তিবাহিনী। প্রথমে তারা একটু সমস্যায় ছিল, কিন্তু যখন মুক্তিবাহিনী এক থেকে দেড় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে একেকজন ফিরছিল, তখনই তারা দক্ষতার প্রমাণ রাখছিল। যখন এই সংখ্যা এক লাখ পেরোল, তখন ভারত আমাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া শুরু করল। তারা আমাদের এক কোটি শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে, মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অস্ত্র দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল পাওয়া ছিল।’
তিনি বলেন, “প্রশ্ন হলো ভারত কেন এটা করল? তারা আমাদের সহায়তা করেছে আমাদের চাওয়ার কারণেই। আমরা চেয়েছি। আর ভারত চেয়েছে শরণার্থীর হাত থেকে রক্ষা পেতে। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকা, ইউরোপ সফর করেছেন। আর বলেছেন, এই ১ কোটি শরণার্থী আমি খাবার দিতে পারব না। তিনি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বললেন, ‘আপনারা যদি অ্যাকশন না নেন, তাহলে আমি অ্যাকশানে যাব। এটা আমাদের অস্তিত্বর জন্য। কেননা ১ কোটি শরণার্থীকে আমি খাওয়াতে পারব না।’”
“যুদ্ধ শেষ হতে লাগল। বিশেষ করে নভেম্বরের শেষের দিকে। আমরা কিন্তু যুদ্ধ জিতছি। এ সময় যে বড় যুদ্ধটা হলো, সেটা হলো আখাউড়ায়। সে সময়ই কিন্তু ভারত-বাংলাদেশের মিত্রবাহিনী একই সঙ্গে মেঘনা নদী পার হলো, যদিও তখন পশ্চিম সীমান্তে ভারত ধীরে এগিয়েছে, যদিও সেখানে তাদের ৫ হাজার কিলোমিটার সীমান্ত আছে।”
ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘ডিসেম্বরের শুরুতে ভারত প্রথম বাংলাদেশকে ভুটানকে দিয়ে স্বীকৃতি দেয়ালো। নিজেরা আগে দিল না। এই কারণে যে, এটা করলে যাতে তারা চাপে না পড়ে। কিন্তু ভুটানের সাত ঘণ্টা পর তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল।
‘এটা বুঝতে হবে যে, ভারত সরকারের নীতির বাইরেও ইন্দিরা গান্ধীর আলাদা লক্ষ্য ছিল। আর তা হলো একদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। সে সময় চীনের আগ্রহে নিরাপত্তা পরিষদে জোর আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র তাতে সমর্থন দিচ্ছে। তারা চাচ্ছে, যুদ্ধবিরতি। ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থায়ী প্রতিনিধিকে জানালেন, আলোচনা করো, নো সিসফায়ার উইদাউট স্যারেন্ডার অফ পাকিস্তানি সোলজারজ। পাকিস্তানি সেনাদের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের পরই কিন্তু যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয় এবং রেজুলেশনে স্বাধীন বাংলাদেশে সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য সব দেশ রেজুলেশনে সই করে।’
ওয়ালিউর বলেন, ‘অগাস্ট ১৯৭১। ২১ ও ২২ তারিখে জেনেভায় একটি বৈঠক হলো। যেখানে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ সব দেশকে ডাকল। সেখানে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলো জাস্ট টু টেক অ্যা নোট। সবাই ভয় পাচ্ছিল, চীন হয়তো পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। উত্তর-পশ্চিম বা উত্তর সীমন্ত দিয়ে হয়তো তারা আক্রমণ করবে। খাজা মোহাম্মদ কায়সার ছিলেন আমাদের (পাকিস্তান) রাষ্ট্রদূত। তিনি বেইজিং থেকে এসেছিলেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি। আমার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। রাত্রে আমরা কথা বললাম। আমরা হোটেলে গেলাম। ইন্টার কন্টিনেন্টাল। তিনি আমাকে বললেন, বয় তুমি হোটেলে ফিরে যাও। চায়না পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জাড়বে না।
‘আমি হোটেলে ফিরে গেলাম। রাত্রে ভালো ঘুম হলো। পরের দিন সকালে মিটিং শুরু হলো। কায়সার প্রথমেই পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান জেনারেল গোলাম মোহাম্মদকে বললেন, চীন পাকিস্তানকে সরাসরি যুদ্ধে সহায়তা করবে না এবং যুদ্ধে অংশও নেবে না। গোলাম মোহাম্মদ পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে জেনেভায় এসেছিলেন। খাজা মোহাম্মদ বললেন, আমি জেনেভায় রওনা দেয়ার আগের দিন চীনা প্রেসিডেন্ট চৌ এন লাই আমাকে ব্রেকফাস্ট মিটিংয়ে ডেকেছিলেন এবং চীনের এই মনোভাবে কথা জানিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সেই মোস্ট স্কুপ ও ইম্পোর্টেন্ট খবরটি কলকাতা পাঠাই ও বলি এটা দিল্লিকে জানাতে। এটা ছিল নয় মাসের যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে জরুরি খবর। কারণ চীন পাকিস্তানের সঙ্গে জড়াতে রাজি হয়নি। আমি তখন জেনেভায়। আমি সুইস সরকারকে নোটিশ দিয়েছি, চাকরি ছাড়ার। কিন্তু মুজিবনগর সরকার আমাকে বলছে যে, তুমি মিটিং শেষ করে পাকিস্তান সরকারের চাকরি ছাড়। আমি ওয়াশিংটন ডিসিতে কিবরিয়াকে ও কলকাতায় হোসেন আলিকে খবর দেই। দিল্লিকে এই খবর বলে দিতে বলি। একই সময় জেনেভায় ভারতের রাষ্ট্রদূত পি কে হালদারকেও এ কথা জানাই।’
ভারত জানত বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, ভারত জানত, বাংলাদেশের স্বাধীন না হওয়ার কারণ নেই।
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস হলো, যেহেতু ১৯৭১ সাল একটা স্নায়ুযুদ্ধের সময় ছিল, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব ছিল, দুপক্ষই সে সময় এমন ছিল একজন এক পক্ষ হলে অন্যজন অন্যপক্ষ, তখন ভারত ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, তাদের কী করতে হবে এবং বাংলাদেশের মানুষ কী চায়, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠে ৭ মার্চের ভাষণ শোনার পর। জেনোসাইড যখন হলো হলো (২৫ মার্চের গণহত্যা), ১০ মিলিয়ন শরণার্থী যখন তাদের দেশে গেল, ভারতের তখন বুঝতে কষ্ট হয়নি, কী ঘটতে যাচ্ছে। সম্ভবত এপ্রিল মাসেই তাদের ইন্টেলিজেন্স গুরু যাকে বলা হয়, সেই কে সুব্রমানিয়াম তার রিপোর্টে বলেছিলেন, নতুন এক বাংলাদেশ হচ্ছে। একইভাবে আমেরিকার হেনরি কিসিঞ্জার ৭ মার্চের আগেই রিপোর্টে বলে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ নতুন দেশ হচ্ছে। বর্তমান প্রকাশিত রিপোর্টগুলোতে তাই দেখা যাচ্ছে। ফলে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে কিন্তু রিপোর্ট ছিল সীমান্তের এপারে কী ঘটতে যাচ্ছে। তাই সবাই বুঝে গিয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষ আর পাকিস্তানের সঙ্গে থাকছে না। আর গণহত্যার পর তো তা সম্ভবও ছিল না।
‘ইন্দিরা গান্ধীর তখন কেবল দরকার ছিল আন্তর্জাতিক সমর্থন। কেননা আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করছিল এবং চীনেরও পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, যে কারণে ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলো এবং একটি চুক্তিও করল। সেই ফ্রেন্ডশিপ চুক্তিটায় বলা হলো, ভারতকে যদি কেউ আক্রমণ করে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন মনে করবে, তার গায়েই আঘাত লেগেছে এবং সে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে ও ভারতকে সব ধরনের সহায়তা করবে। তাই বাংলাদেশের যুদ্ধে জড়ানো ভারতের জন্য বড় ঝুঁকি ছিল এটা বলা মনে হয় না ঠিক হবে। কেননা বাংলাদেশের মানুষ তখন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেয়ায় গ্রাম অঞ্চল তখন প্রায় মুক্তিবাহিনীরই অধীনে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘দিল্লির তখন দরকার ছিল কেবল ঢাকার পতন। কারণ ঢাকার পতন না হলে যুদ্ধটা অন্যদিকে মোড় নিতে পারত। কারণ জাতিসংঘে তখন কেবল যুদ্ধবিরতির কথা উঠছিল। দিল্লি আর মস্কো তখন বলছিল, ঢাকার পতন হলেই কেবল যুদ্ধবিরতি হতে পারে। পাকিস্তানিদের জন্যও দরকার ছিল ভারতীয় সৈন্যদের হাতে আত্মসমর্পণের। কেননা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পড়লে তাদের বেঁচে থাকাটা কঠিন হতো।
‘বিশেষ করে ২৫ মার্চের গণহত্যার পর থেকে তারা বাঙালিদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছিল। তাই যখন তাদের আল্টিমেটাম দেয়া হয়, তারা দ্রুত রাজি হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হওয়ার কোনো কারণই ছিল না, যখন গুটিকয় মানুষ ছাড়া সারা বাংলাদেশই স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ ছিল।’
ভারতের স্বীকৃতি ছিল মুক্তিযুদ্ধে ন্যায্যতার স্বীকৃতি
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা হওয়ার পরই মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতা ও স্বীকৃতি জরুরি ছিল। যেহেতু তখন বিশ্ব ছিল স্নায়ুযুদ্ধের যুগে। বিশ্ব ছিল দ্বিধাবিভক্ত এবং পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আমরা দেখলাম, যখন মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ল এবং একটি পর্যায়ক্রমিক অবস্থান তৈরি করল, সে সময় ভারত ওই অবস্থাতেই বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিল। এতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা পেল। এতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব তৈরি হলো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ন্যায্যতা পেল।
‘যারা তখন বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে জানত না, তাদের কাছেও সেই বার্তা পৌঁছে গেল। এটা ছিল ভারতের সময়োপোযোগী সিদ্ধান্ত। প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ভারত সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আগস্টের ৪ তারিখে চিঠি লিখেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর বাংলাদেশ সফরের সময় দিনটিকে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর দিন হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তাই দুই দেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে এটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।’
তিনি বলেন, ‘যারা পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়, তারা বলতে থাকে, এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর বিরুদ্ধে ভারত শক্ত অবস্থান নেয়। অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র সফরেই ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন, কেউ কোনো অবস্থান না নিলেও তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেবেন। সেখানে যে গণহত্যা চলছে, তাতে সবাই চোখ বুজে থাকলেও ভারত বসে থাকবে না। কেননা এক কোটি শরণার্থীর বোঝা বহন করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তিনি সবার চাপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের মতোই ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ পরিতাপের বিষয়, সেই বিএনপি মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ দিবস ১৭ এপ্রিল পালন করে না।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ‘নবম আওয়ার ওশান কনফারেন্সে’ যোগ দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নভোটেল এথেন্স হোটেল বলরুমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যে ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই ৭ মার্চও বিএনপি পালন করে না। এ থেকেই স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে বিএনপি কতটুকু বিশ্বাস করে তা প্রমাণ হয়।
মুজিবনগর দিবস স্মরণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার বৈদ্যনাথতলা অর্থাৎ বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের আগের মধ্যরাতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের কলকাতা প্রেসক্লাবে সমবেত হতে বলা হয়। গোপনীয়তার মধ্যে তাদেরকে পরদিন সকালে মুজিবনগরে পৌঁছানো হয় যেখান থেকে তারা সংবাদ পরিবেশন করেন।
এ সময় গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের আইনানুগ ও পরিশ্রমী জীবনের জন্য নিজের ও গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসার কথা জানিয়ে এই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ও সবাইকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে আহ্বান জানান মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সমবেতদের হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি জানান, গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সাথে বৈঠকে জানিয়েছেন যে, গ্রিস আরও ৬টি দেশে দূতাবাস খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
গ্রিস আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ত্রিশটিরও বেশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গ্রিস আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মাতুব্বরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স মোহাম্মদ খালেদ, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস নেতাদের মধ্যে গোলাম মওলা, হাজী আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল খালেক মাতুব্বর, আহসান উল্লাহ হাসান, শেখ আল আমিন, আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বর, রায়হান খান, মিজানুর রহমান আলফা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
মন্তব্য