লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়া একটি মোবাইল কল রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযোগ, ভবানীগঞ্জ ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনির কর্মী রিয়াজ উদ্দিন মিজিকে ওই হুমকি দেন নৌকার প্রার্থী আবদুল খালেকের ভাতিজা আবদুল্লাহ আল মামুন রাব্বি।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রিয়াজের মোবাইলে রাব্বি কল দিলে এটি রেকর্ড করা হয়।
১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে রাব্বিকে বলতে শোনা যায়, ‘এই মিজি নিরে। মিজি, যদি আর একটা স্ট্যাটাস দেস নৌকার বিরুদ্ধে তাহলে তোরে বাড়িত তন ধরি আনি ক্রসফায়ার করিয়াম।
‘নৌকার বিরুদ্ধে কোনো স্ট্যাটাস দিলে ডাইরেক্ট আঁকি হালাইয়াম, তুই যিয়ানেই থাহস। তুই বাড়িত নি হেডা ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘তুই নৌকার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিবিতো, তুই মহানগর যুবলীগ করসতো, যুবলীগের নাম বেচস কেন? তুই বিএনপির লগে লিয়াজু করে আওয়ামী লীগের ফেস্টুন ভাঙস, এগিন মাইনসে জানে না?
‘বিএনপির লগে লিয়াজু করে যুবলীগের নাম বেচস। মারি হালাইয়াম, ডাইরেক্ট মারি হালাইয়াম।’
এ বিষয়ে রিয়াজ উদ্দিন মিয়াজি বলেন, ‘কল পেয়ে আমি রাব্বিকে সালাম দিয়েছি, কিন্তু রাব্বি শুরু থেকেই আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলে। প্রতিটি বাক্যে তিনি আমাকে গালাগাল করেছে।
‘আমাকে ক্রসফায়ার দেবে, মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে। নিজের জীবনের নিরাপত্তায় আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করব। আর আমি নৌকার বিরুদ্ধেও কোনো স্ট্যাটাস দেইনি।’
হুমকি দেয়ার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন আবদুল্লাহ রাব্বি। তিনি বলেন, ‘হুমকি তো দূরের কথা, আমি কাউকে কলই দিই নাই। আর কেনই বা হুমকি দেব। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। ওই কল রেকর্ডিং আমার না। আমার মোবাইল থেকে অন্য কেউও রিয়াজকে কল দেয়নি। রিয়াজ মামলা করুক, সমস্যা নেই।’
রাব্বি হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে-এমন দাবি করে শুক্রবার রাতে সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ৫ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী। সেখানে রাব্বিকে অভিযুক্ত করেছেন প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুনুর রশিদ ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি জানান, নৌকার প্রার্থী নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার করছেন। পাশাপাশি তাদের হুমকিতে প্রার্থীসহ সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত। এ জন্য সব চেয়ারম্যান প্রার্থী সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
নৌকার প্রার্থী আবদুল খালেক বাদল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নৌকার বিরুদ্ধে কীভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়, সেটা আমি জানি না। প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছেন।’
হুমকি দেয়া অডিওর বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের একটি অডিও আমি শুনেছি। ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি। কেউ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনোভাবে ছাড় দেয়া হবে না।’
চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর ভবনীগঞ্জসহ সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে।
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কপোতাক্ষপাড়ের মানুষ।
‘ত্রাণ চাই না, পরিত্রাণ চাই’ স্লোগানে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সামনে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মানববন্ধন করেছেন তারা।
জেলা নাগরিক কমিটি, নারী কমিটি, আশাশুনি সদর ও শ্রীউলা ইউনিয়নবাসী এই কর্মসূচির আয়োজন করেন।
জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে ও যুগ্মসচিব আলী নুর খান বাবলুর সঞ্চালনায় মানববন্ধন হয়।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম হোসেনুজ্জামান, জাসদ নেতা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী।
আনিসুর রহিম বলেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। নদনদীর ভাঙন আর দেখতে চাই না। আশাশুনির নদনদী খনন প্রয়োজন। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের বরাদ্দের অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা জলাবদ্ধ। অনেকের ঘরের মধ্যে পানি। জলাবদ্ধতায় জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
মানববন্ধন শেষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন নাগরিক নেতারা।
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে অপহরণের অভিযোগে ৪ জনকে আটক করেছে র্যাব।
মানিকগঞ্জের র্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফট্যানান্ট কমান্ডার আরিফ হোসেন মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ধামরাইয়ের বারোবাড়িয়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
তারা হলেন, ধামরাইয়ের দক্ষিণ হাতকোড়া এলাকার আল আমিন, কৃষ্ণপুরা এলাকার পিন্টু মিয়া, বারোবাড়িয়া এলাকার আবু বকর সিদ্দিক ও চরিপাড়া এলাকার আরিফুল ইসলাম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার রাত ৯টার দিকে সাটুরিয়ায় কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের এক ছাত্র ও এক ছাত্রী বাড়ি ফিরছিলেন। ধামরাইয়ের বারোবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামার পর তাদের অপহরণ করা হয়। তাদের নিয়ে রাখা হয় বারোবাড়িয়া এলাকার পুরোনো একটি বাড়িতে।
সে রাতেই ওই শিক্ষার্থীদের পরিবারের কাছে ফোন করে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বাড়িতে ফোন করার কথা বলে র্যাবকে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীদের একজন।
র্যাব কর্মকর্তা আরিফ জানান, ফোন পেয়ে র্যাবের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। আটক করা হয় ৪ জনকে। তাদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, ৩২ হাজার টাকা ও ৫টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
ধামরাই থানায় মামলা দিয়ে তাদের সেখানে হস্তান্তর করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।।
আরও পড়ুন:রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে পুলিশের অভিযানে জব্দ ২৬ হাজার ৭২৪ লিটার ভোজ্যতেল খোলাবাজারে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেয়া হয়েছে।
রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমলি আদালত-২-এর বিচারক মারুফ আল্লাম মঙ্গলবার দুপুরে এ নির্দেশ দেন।
আদালত পরিদর্শক আব্দুর রফিক নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৯ মে রাতে তাহেরপুর বাজারপাড়া ও তেলিপাড়া এলাকার দুটি গুদামে অভিযান চালিয়ে ২৬ হাজার ৭২৪ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করে পুলিশ। এর মধ্যে সয়াবিন তেল ছিল ১৯ হাজার ২২৪ লিটার এবং সরিষার তেল ৭ হাজার ৫০০ লিটার।
আদালত পরিদর্শক জানান, জব্দ করা এসব তেল আগামী ২৮ ও ২৯ মে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) স্থানীয় দুই ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা। একজন ভোক্তার কাছে সর্বোচ্চ ২ লিটার তেল বিক্রি করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘থানার একজন এসআই তেল বিক্রি কার্যক্রম তদারকি করবেন। এ ছাড়া প্রত্যেক ডিলার পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তেলের বাড়তি মূল্য যেন আদায় না হয়, সেটিও নিশ্চিত করবে পুলিশ। তেল বিক্রি শেষে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।’
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অবৈধভাবে মজুত করা এসব তেল জব্দ করার পর পুলিশের পক্ষ থেকে এগুলো খোলা বাজারে সাধারণ মানুষের মাঝে বিক্রির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আদালত অনুমতি দিয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব তেল এখন বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।’
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব তেল বাগমারা এলাকাতেই বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া আরও বেশ কিছু তেল খোলা বাজারে বিক্রির অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এক ঠিকাদারের কাছে ভাড়া দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়টির মাঠজুড়ে রাখা হয়েছে ইট, খোয়াসহ নানা ধরণের নির্মাণ সামগ্রী। আর মেশিন দিয়ে ইট ভাঙার শব্দে পাঠগ্রহণে প্রতিদিনই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. কামাল হোসেন দাবি করেছেন, উপজেলার নাগরা-বান্ধাবাড়ি-রাশমীল সড়কের নির্মাণ সামগ্রী রাখতে বান্ধাবাড়ি জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি ৭ লাখ টাকায় ভাড়া দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার মো. জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে এই টাকা গ্রহণ করেছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কামাল হোসেন বলেন, ‘মাঠটিতে জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয় ও বান্ধাবাড়ি হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়- দুই স্কুলের শিক্ষার্থীরাই খেলাধুলা করে। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রী রাখার কারণে তাদের খেলাধুলা এখন বন্ধ। আর বিদ্যালয় চলার সময়ে মেশিন দিয়ে ইট ভাঙার শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়ও সমস্যা হচ্ছে।’
খেলাধুলা ও পড়াশোনায় সমস্যা হওয়ার কথা জানিয়েছে বান্ধাবাড়ি হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির কয়েক শিক্ষার্থীও। এ স্কুলের ছাত্র-অভিভাবক সবুজ ঘরামী বলেন, ‘আমরাও শুনেছি, ঠিকাদারের কাছ থেকে জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হান্নান মোল্লা ও প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুর রশিদ ৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। এতে দুই স্কুলেরই শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’
এ বিষয়ে বান্ধাবাড়ি জেবিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, ‘যে মাঠটি ভাড়া দেয়া হয়েছে সেটি আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করে না। মাঠটি আমাদের হলেও ব্যবহার করে বান্ধাবাড়ি হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।’
তবে ভাড়া হিসেবে সাত লাখ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক দাবি করেছেন, নির্মাণ সামগ্রী রাখতে ৫০ হাজার টাকা ও একটি সিসি টিভি মনিটরের বিনিময়ে ঠিকাদার জসিমউদ্দীনকে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘৭ লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন।’
সাত লাখ টাকা দেয়ার কথা অস্বীকার করেন ঠিকাদার জসিমউদ্দীনও। তিনি বলেন, ‘আমি ৩ মাসের জন্য মাঠটি ভাড়া নিয়েছি। বিনিময়ে বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা ও ১টি সিসি টিভি মনিটর দিতে হবে।’
তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাঠ ভাড়া দেয়ার কোন বিধান নেই। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:বছরের পর বছর বিদ্যুৎ বিল না দেয়ায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
১৭ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৬ টাকা বকেয়া থাকায় সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বাগেরহাট ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)।
ওজোপাডিকোর দাবি, ২০১৬ সাল থেকে বাগেরহাট পৌরসভার মালিকানাধীন জেলার এই বাস টার্মিনালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।
অপরদিকে বাগেরহাট বাস মালিক সমিতি বলছে, বিদ্যুৎ বিলের টাকা নিয়মিত পৌরসভাকে দেয়া হয়েছে। আর বাগেরহাট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি তাদের জানা নেই। তবে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের জন্য চেষ্টা করা হবে।
ওজোপাডিকো সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পক্ষে মেয়র বাগেরহাট পৌরসভার ব্যাংক হিসেবে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৬ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। শুধু বাগেরহাট বাস টার্মিনাল নয়, বাগেরহাট পৌরভবন, স্ট্রীট লাইটসহ বিভিন্ন ধরণের ১৮টি হিসেবে বাগেরহাট পৌরসভার কাছে আরও প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ওজোপাডিকোর।
পৌরসভার বাইরেও বাগেরহাট জেলা পুলিশের কাছে ২৫ লাখ ১৯ হাজার, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে ৪ লাখ ২১ হাজার, পিসি কলেজে ৩ লাখ ২০ হাজার, বাগেরহাট মেডিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজে ২ লাখ ২২ হাজার, রেলরোড জামে মসজিদে ৩ লাখ, শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে ৪৪ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে ওজোপাডিকোর।
এদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বাস শ্রমিক-কর্মচারীরা।
বাস শ্রমিক রানা শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাগেরহাট বাস স্ট্যান্ডে একদিন বাস রাখলে ঢাকার পরিবহনের জন্য ৮০ টাকা এবং লোকাল পরিবহনের জন্য ৫০ টাকা দিতে হয়। এখানের টয়েলেটগুলোও আমাদের টাকা দিয়ে ব্যবহার করতে হয়। তাহলে কেন টাকার জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে? আসলে আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, আমাদের টাকার কোন দাম নেই।’
জামাল শেখ বলেন, ‘এই স্ট্যান্ড থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের বাস ছাড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে, পুন সংযোগ স্থাপনের দাবি জানাই।’
নিউজবাংলাকে বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার আব্দুল বাকি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিদ্যুৎ বিলের জন্য প্রতি মাসে পৌরসভার মার্কেটিং কর্মকর্তার কাছে ২০ হাজার টাকা দেয়া হত। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে এই টাকা নিয়মিত দেয়া হয়নি।
‘বিদ্যুৎ না থাকায় কয়েক হাজার বাস শ্রমিক ও যাত্রী ভোগান্তিতে রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভোগান্তি লাঘবে অতি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার দাবি জানাই।’
বাগেরহাট পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মুছাব্বেরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাগেরহাট বাস টার্মিনালে যাতে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায়, সে বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিলের টাকা নিয়মিত পৌরসভার কাছে দেয়া হত- বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার আব্দুল বাকির এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাস টার্মিনাল থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল বাবদ টাকা দেয় বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।’
সাড়ে চার কোটি টাকা বকেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য হিসেবে যে সাড়ে চার কোটি টাকা রয়েছে ওই টাকার বিপরীতে মাঝে মাঝে কিছু টাকা দেয়া হয়। এছাড়া জুন মাসের শেষে রাজস্ব খাতের হিসেব করে বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’
বাগেরহাট ওজোপাডিকোর সহকারি প্রকৌশলী সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকের কাছে ওজোপাডিকোর প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বকেয়া থাকা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের নোটিশ দেয়া হয়েছে।
অনেকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং কারও কারও বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার পরিমাণ অনেক বেশি, তাদের বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কিমিটির সভায়ও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় করতে পারি।’
আরও পড়ুন:বাগেরহাটের মোংলায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
সোমবার করা মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারের পাঠিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে আসামিকে মুখ্য বিচারিক হাকিম খোকন হোসেনের আদালতে তোলা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মোংলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিকাশ চন্দ্র ঘোষ নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কিশোরীর বাবা প্রায় চার বছর আগে মারা যান। মা সৌদি প্রবাসী।অভিযুক্ত ৫২ বছরের নাসির হাওলাদার মেয়েটির দূর সম্পর্কের আত্মীয়। সে তার ছোট বোনকে নিয়ে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নাসিরের পরিবারের সঙ্গেই থাকত।
এজাহারে বলা হয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে নাসিরের একটি চায়ের দোকান আছে। ওই দোকানে রোববার রাতে ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি। বিষয়টি কাউকে না জানাতে তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান নাসির।
মেয়েটি বিষয়টি আশ্রয়কেন্দ্রের এক ব্যক্তিকে জানায়। এ ঘটনায় পরদিন মোংলা থানায় মামলা করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
থানার পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘১৪ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সোমবার রাতেই চাঁদপাই ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য বাদী হয়ে মামলা করেন। রাতেই ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। নাসিরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
মেয়েটিকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:মায়াভরা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে চার বছর বয়সী অর্ণা বিশ্বাস। সে জানে না তার মা-বাবা আর নেই। কেউ জিজ্ঞেস করলে কখনও সে উত্তর দিচ্ছে তার মা-বাবা হাসপাতালে, আবার কখনও উত্তর দিচ্ছে না।
খুলনার ডুমুরিয়ার কুলটি গ্রামে নিজ ঘরে গত বুধবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একসঙ্গে মারা যান অর্ণার বাবা অভিজিত বিশ্বাস ও মা কেয়া বিশ্বাস। ওই সময় আহত হয় অর্ণাও।
সম্প্রতি অর্ণাদের বাড়িতে যান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে আছেন অর্ণার দাদা অসীম বিশ্বাস ও দাদি সুন্দরী বিশ্বাস।
সেই উঠানে খেলা করছে অর্ণা। তার ডান হাত ও ডান পায়ে রয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ক্ষত। ব্যথায় হাত নাড়াতে না পারলেও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে অর্ণা।
ঘটনার দিন কী হয়েছিল জানতে চাইলে অর্ণার দাদি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে ছেলে ও বউমা একসঙ্গে ধান মাড়াই করছিল। পরে গোসল করে এসে ভাত খেয়ে ছেলে, বউমা ও অর্ণা একত্রে ঘরে যায়। আমি ও আমার স্বামী তখন বাড়ির উঠানে ধান মাড়াই করছিলাম।
‘হঠাৎ বউমা আমাকে ডেকে একটা চিৎকার দেয়। পরে আর কোনো শব্দ করেনি। আমি ও আমার স্বামী তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি ছেলে ঘরের বারান্দায় মাথা গুটিয়ে বসে টিনের বেড়া ধরে কাঁপছে। বউমা তার পাশে শুয়ে একইভাবে কাঁপছে। অর্ণা পড়ে আছে তার মায়ের কোলে।’
তিনি জানান, সন্তান ও বউমার এমন পরিস্থিতি দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। আগে অর্ণাকে টেনে তাদের কাছ থেকে আলাদা করে পরে ছেলে ও বউমাকে ছাড়াতে গেলে বিদ্যুতের শক খেয়ে বাইরে ছিটকে পড়েন তিনি।
পরে প্রতিবেশীরা এসে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়। ছেলে ও তার বউকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
অর্ণার দাদা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে ছেলে ও বউমার মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। পরে রাত ৩টার দিকে শ্মশানঘাটে নিয়ে তাদের সৎকার করা হয়।’
‘বাবা হয়ে সন্তানের চিতায় আগুন দেয়া যে কত কষ্টের, তা যে বাবা দিয়েছে শুধু সেই জানে। আমার সেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ছেলে আমাদের কত আশা দেখাত। এর আগেই আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল। তার মৃত্যুতে আমিও যেন মারা গেলাম।’
তিনি জানান, অভিজিত তার একমাত্র ছেলে। তার দুই মেয়ে আছে, তারা বিবাহিত।
তিনি বলেন, ‘একসময়ে আমাদের পরিবারে অনেক অভাব ছিল। এসএসসি পরীক্ষার ফি জমা না দিতে পেরে ছেলে অভিজিত লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরে সে সংসারের হাল ধরে। ছেলের অনেক শখ ছিল তাদের মেয়ে অর্ণাকে অনেক লেখাপড়া শেখাবে।
‘এখন অর্ণাকে নিয়ে আমরা আছি। সে কিছু বুঝছে না, কাঁদছেও না। অর্ণাকে নিয়ে ছেলে যে স্বপ্ন দেখত, আমি যতদিন বেঁচে থাকি ছেলের স্বপ্ন পূরণ করব, অনেক লেখাপড়া শেখাব।’
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শরীফ আসিফ রহমান বলেন, ‘আমি অর্ণার কাছে গিয়েছিলাম। তার দাদা-দাদির সঙ্গেও দেখা করেছি। তখন ওই পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।’
যেভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন অর্ণার বাবা-মা
অর্ণার বাবা-মা টিনের ঘরে থাকতেন। ঘরের ভেতর মাঝামাঝি এক স্থানে একটি বিদ্যুতের সার্কিট রয়েছে। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে বিদ্যুতের তার।
মৃত অভিজিতের ভগ্নিপতি দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘ঘরের মাঝামাঝি যে সার্কিটটি আছে, সেখানে মেইন সুইচ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে। সেই সার্কিটটি ভালো করে ফিটিং ছিল না।’
‘ওই সার্কিট থেকে একটি তার বের হয়ে টিনের বেড়ার সঙ্গে বিদুৎসংযোগ লেগে যায়। এতে পুরো ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। ’
তিনি বলেন, ‘দুপুরে খাবার খেয়ে অর্ণার বাবা-মা ঘরের ভেতরে খাটে ছিল। ওই খাটের পাশেও টিনের বেড়া আছে। সেই বেড়া থেকে তারা প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। পরে সেখান থেকে ছিটকে বারান্দায় পড়ার পর আবারও টিনের বেড়ায় হাত লাগায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তারা।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য