‘সময় আছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করুন। অযথা টাকা খরচ করবেন না, আমারও ২০-২৫ লাখ টাকা খরচ করাবেন না। নির্বাচন কেমনে করতে হয়, সেটা আমি জানি। সাধারণ মানুষ ভোট দিলেও চেয়ারম্যান, আর না দিলেও চেয়ারম্যান। তাই আবারও বলছি। সময় থাকতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান, ভালো হবে। নইলে শত্রুতা সৃষ্টি হবে। আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হতে চাই।’
সভা-সমাবেশে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের প্রকাশ্যে এভাবেই হুঁশিয়ার করছেন লক্ষ্মীপুর সদরের চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু ইউসুফ ছৈয়াল। ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানও তিনি।
চতুর্থ ধাপে চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদে ভোট ২৬ ডিসেম্বর।
ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট পূর্ব বাজারে বুধবার রাতে জনসভায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সালেহ আহম্মদকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে নাম ধরে হুমকি দেন আবু ইউসুফ। জনসভার একটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে হুমকি দিচ্ছেন তিনি। সমাবেশে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মজুচৌধুরীর হাটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষদের একই হুমকি দেন আবু ইউসুফ। তার কথার শেষ গিয়ে থামে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হওয়ার বাসনায়। অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উঠিয়ে নিতে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।বলছেন, নির্বাচনি মাঠে কোনো প্রার্থী না থাকলে তার ১৫-২০ লাখ টাকা বেঁচে যাবে, তা না হলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে বিরোধ হবে।
স্থানীয়রা জানান, দল থেকে নৌকা প্রতীক পেলেও এলাকায় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আবু ইউসুফের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে। এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচনি মাঠে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চাচ্ছেন না তিনি।
প্রতীক না পেয়েও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মজুচৌধুরীর হাটে নির্বাচনি জনসভায় আবু ইউসুফ বলেন, ‘আপনারা চিন্তা ভাবনা করুন। এখন কিছু বলব না। নির্বাচনের পর আপনাদের সঙ্গে মাদ্রাসা-মসজিদে দেখা হবে।
‘সেদিন আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। আপনারা আমাদের পূর্ণ ২০ লাখ টাকা অপচয় করেছেন। এখনও সময় আছে, সময় থাকতে চিন্তা করুন। আমাদের টাকাগুলো খরচ করাবেন না, পয়সা খরচ করা শয়তানের লক্ষণ। এ টাকাগুলো খরচ না করে সৎ পথে, মাদ্রাসা, মসজিদে খরচ করতে আমরা রাজি।’
জনসভায় তিনি আরও বলেন, ‘চরমোনাই ভাইয়েরা, আপনাদের এখনও সময় আছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। আমাদের টাকা-পয়সা আর আপনারা খরচ করাবেন না। খরচ করালে আপনাদের সঙ্গে আমাদের একটা শত্রুতা সৃষ্টি হবে।’
এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘নির্বাচন থেকে সরে যেতে নৌকার প্রার্থী শুধু প্রকাশ্যে নয়, বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। তারা খালি মাঠে গোল দিতে চান।’
আবু ইউসুফ বলেন, ‘নির্বাচনের নামে টাকা অপচয় করে লাভ কী। আমার ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হবে। তাই বলেছি, টাকাগুলো খরচ করে কী লাভ। আমি দুবার জয়ী হয়েছি। আগেও আমার সঙ্গে বিএনপি এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে।’
রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, চররমনী মোহন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়াম লীগ মনোনীত আবু ইউসুফ ছৈয়াল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. সালেহ আহম্মেদ, স্বতন্ত্র ছায়েদুর রহমান খলিফা, মো. মনিরুল ইসলাম ও মো. আব্দুল কাদের।
আগামী ৬ ডিসেম্বর মনোননয়পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৭ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা দেবেশ কুমার সিংহ জানান, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনি প্রচারণা আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ ছাড়া এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলতে পারেন না। এটিও আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। কোনো প্রার্থী তথ্য-প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন জানান, ছৈয়াল ও তার ভাতিজাদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। সবশেষ ১৬ জুন আব্দুস সহিদ নামে এক জেলেকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ছৈয়াল ও তার ছেলে আবু সুফিয়ানসহ ১৩ জনের নামে সদর থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।
ওসি জসিম জানান, গত বছরের ২২ জুলাই তার পুত্রবধূ সুমাইয়া ইসলাম শান্তা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় চেয়ারম্যান ছৈয়াল ও তার ছেলে আবু সুফিয়ানকে আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে।
মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে গিয়ে শনিবার বেলা ১১টার দিকে শেষ হয় এই শোভাযাত্রা।
এতে অংশ নেন জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম, সিভিল সার্জন নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার-৭১-এর নরসিংদীর সভাপতি মোতালিব পাঠানসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শোভাযাত্রা শেষে স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেলা ৩টায় স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে গান পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের শাফিন আহমেদ।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ঝালকাঠিতে আনন্দ র্যালি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শনিবার সকাল ৯টায় কার্যালয়ের সামন থেকে র্যালিটি বের হয়। বিভিন্ন ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে হয় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে গিয়ে।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলীসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ র্যালিতে লোক অংশ নেন। এসময় নাচে-গানে আনন্দে মেতে উঠেন তারা।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আজ। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খুব উচ্ছ্বসিত। ঝালকাঠিতে আনন্দের বন্যা বইছে।’
কিছুক্ষণ পরই মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় উদ্বোধন করা হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। এ সেতুর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কুমিল্লার তেমন সম্পর্ক না থাকলেও উদ্বোধন উপলক্ষে জেলাবাসীর উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে শুরু হয়ে নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টাউনহলে এসে মিলিত হয়। আনন্দ শোভাযাত্রায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করে।
শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ, জেলা পরিষদের প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল অবসরপ্রাপ্ত আবু তাহের, বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখি, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী সফিকুর রহমান।
আরও উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু খান, কুমিল্লা মহিলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জামাল নাছের, র্যাব ১১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন, নেত্রী পাপড়ি বসুসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উধর্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এ দিকে সকাল ১০টার দিকে নগরীর টাউনহলে দেখা যায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠান বড় পর্দায় দেখতে হাজার খানেক মানুষ ভীড় করেছেন।
নিজের রিকশা থামিয়ে টাউনহলের বাইরে থেকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেখতে আসা জমির হোসেন জানান তার বাড়ি পিরোজপুর।
জমির বলেন, ‘আমাদের মনে আনন্দের বন্যারে ভাই। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে আমাদের কেমন মনে হচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না। এখন আর ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। সেতুর উপর দিয়া দ্রুত চলে যাবো বাড়ি।’
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আমাদের আরেক বিজয়। সবাই হয়তো অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে উদ্বোধন দেখতে পারবেন না, তাই কুমিল্লাবাসীর জন্য জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নগরীর টাউনহলে উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করেছি।
‘আয়োজনে সব শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে বলা যায় আজ কুমিল্লার জন্যও আনন্দের দিন।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশে যোগ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। হুইলচেয়ারে করে তিনি সুধী সমাবেশে আসেন।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে ডা. জাফরুল্লাহকে দেখা যায়। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা-কালো রঙের শার্ট ও খাকি লুঙ্গি।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সকাল ১০টার দিকে তিনি মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী মাওয়ায় যোগ দেন সুধী সমাবেশে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই সমাবেশে। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন।
ফুরিয়ে এলো ক্ষণগণনার পালা। আর অল্প সময়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উচ্ছ্বাসে মুখর গোটা মাওয়া প্রান্ত। অপেক্ষার অবসান হলো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আগমনের মধ্য দিয়ে।
দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার নেতৃত্বেই নির্মিত হয়েছে সেতুটি। আজ তার হাত ধরেই খুলে যাবে সেতুটি।
এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল সরাসরি যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর সঙ্গে।
সুধী সমাবেশ শেষে বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার।
বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ওই সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মা সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:খুলনা থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্বাস উদ্দিন। বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি সারা রাত ঘুমাতে পারে নাই। কখন আসব, আর মুক্তির গান শুনব।’
আর কিছু মুহূর্ত। এরপরই বর্ণিল আয়োজনে উন্মোচিত হবে দেশের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতুর।
এই দিনটি বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে মুক্তির দিন। আর এমন দিনে না আসলে আক্ষেপ থেকে যেত আজীবন। তাই এখানে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত বীর মুক্তিযোদ্ধা। যে উচ্ছ্বাস তার কাছে ঈদের আনন্দের চেয়েও কম নয়।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এই বিজয় ঈদের আনন্দের চেয়ে কম নয়। সারা জীবন ঘাটে এসে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তির দিন আজ। এমন দিনে আসনে না পারলে মনে দুঃখ থেকে যেত। এখন মনে হয় পরিপূর্ণতা পেয়েছে। আর কয় দিনই বাঁচব। যে কয় দিন আসি, সেই কয় দিন শান্তিতে পার হতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু ঘোষণার দিন থেকেই ইচ্ছে ছিল প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে আসব। শুক্রবারই আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পরিবারের লোকজন আসতে দেয় নাই। পরে রাত ৩টার দিকে গাড়িতে করে রওনা দেই। সকাল ৭টায় শিবচর উপজেলার পাচ্চর নামিয়ে দেয়। পরে প্রায় ৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সভামঞ্চের কাছে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন শান্তি পাচ্ছি। প্রশাসনের ভাইরা খুব সহযোগিতা করছে, না হলে মঞ্চের কাছে আসতে পারতাম না।’
আরও পড়ুন:‘আমাগো আর গাঙ্গে ডুইববা মরতে অইব না। লঞ্চ ডুইবা আমি পোলারে হারাইছি। এই দিনে পোলাডারে মনে পাড়তাছে। আর কয় বছর আগে সেতুডা হইলে পোলাডা হয়তো জীবিত থাকত। আইজ এই দিনে আমি ঘরে বিয়া থাকতে পারি? বয়স ওইছে তো কী হইছে। আমিও যাইতাছি প্রধানমন্ত্রীরে ধন্যবাদ দিতে।’
কথাগুলো বলছিলেন ৬৫ ঊর্ধ্ব আমজাদ হোসেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যেকোনো মূল্যে শামিল হতে চান তিনি। তাই তো পথের ক্লান্তি আর বয়সের ভার তোয়াক্কা না করে তিনি যোগ দিয়েছেন বিজয় মিছিলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিতে।
শুধু আমজাদ হোসেন নন, বিজয় মিছিলে সমাবেত হয়েছেন শত শত মানুষ। জেলা শহর থেকে মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাক, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে তারা ছুটছেন সমাবেশস্থল কাঁঠালবাড়ীর পানে। আর যারা যানবাহন পাননি তারাও বসে নেই। হেঁটে ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে রওনা করেছেন অনেকে।
তাদেরই একজন রেজা শামিম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার বিজয় দেখিনি, কিন্তু পদ্মা বিজয়ের উৎসব দেখছি। আমাদের জন্মান্তরের ভোগান্তি লাঘব হবে। পদ্মা সেতু উপহার দেয়ায় সড়কের ভোগান্তির তোয়াক্কা না করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে যাচ্ছি।’
জাজিরা টিঅ্যান্ডটি মোড় থেকে কাঁঠালবাড়ী পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। সমাবেশে যোগ দিতে শহর থেকে ৩ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। উৎসবে যোগ দিতে লঞ্চ ও ট্রলারে করে আসছেন ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া, সখীপুর ও চরাঞ্চলের মানুষ।
শহর থেকে কাঁঠালবাড়ী পর্যন্ত ছেয়ে গেছে পদ্মা সেতু, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবিসংবলিত ব্যানার ফেস্টুনে। শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা বিজয়ের উৎসব পালন করছি আমরা। ৩ লাখ মানুষ সড়ক ও নৌপথে শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে জেলা থেকে কাঁঠালবাড়ী এসেছে।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সেজেছে শরীয়তপুর শহর। শহরের প্রতিটি সড়কে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাদ পড়েনি সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনাও। জেলাব্যাপী শুরু হয়েছে ৩ দিনের বিজয় উৎসব।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য