লিভার সিরোসিস লিভার বা যকৃতের ক্রনিক রোগ। এতে লিভারের সেলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত দেখা দেয়। ‘হেপাটাইটিস সি’ ভাইরাস শরীরে দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে যকৃতের কোষগুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটাতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসা সম্ভব। তাই অবহেলা না করে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রোকসানা বেগম। সম্প্রতি নিউজবাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. রোকসানা বেগম বলেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগী দীর্ঘদিন কোনো উপসর্গ ছাড়া স্বাভাবিক চলাফেলা করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পেনসেটেড সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে কিছু অভিন্ন লক্ষণ থাকে; যেমন- শারীরিক দুর্বলতা, মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া, ওজন কমে যাওয়া, চামড়া ত্বক ও চোখ হলুদ হওয়া, বমি বমি ভাব। এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিস বলতে আমরা কী বুঝি?
ডা. রোকসানা বেগম: শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে আসা রোগীদের একটি বড় অংশ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। রোগের ক্ষেত্রে এর পরেই লিভার ক্যান্সারের অবস্থান। লিভার বা যকৃতের যে কোনো ক্রনিক রোগের কারণে লিভারের সেলগুলো নষ্ট হয়ে যায়, লিভারের সেলগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। তখন যে অবস্থা তৈরি হয়, তাকে মূলত লিভার সিরোসিস বলা হয়।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ কী?
ডা. রোকসানা বেগম: প্রধান কারণ ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। এ ভাইরাস কারও কারও শরীরে ১০-১৫ বছর অবস্থান করে। এই দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে লিভার সিরোসিস দেখা দেয়। ফ্যাটি লিভারের কারণেও এই লিভার সিরোসিস দেখা দেয়। এখন এটি অনেক কমন হয়ে দেখা দিয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করলেই একটা বড় অংশের ফ্যাটি লিভার ধরে পড়ে। ‘হেপাটাইটিস সি’ ভাইরাসের কারণে লিভার সিরোসিস দেখা দেয়। এ ছাড়া জেনেটিক কারণও লিভার সিরোসিসের জন্য দায়ী। অ্যালকোহলও অনেক ক্ষেত্রে লিভার সিরোসিসের জন্য দায়ী।
মানুষের শরীরে দীর্ঘদিন হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস বি’র অবস্থান, অ্যালকোহলিজম, ফ্যাটি লিভার, জেনেটিক ডিজিজ এগুলোর কারণে লিভারের কোষগুলোয় এক ধরনের উপদাহ সৃষ্টি হয়। উপদাহ হতে হতে একসময় কোষগুলো কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন লিভার ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।
প্রশ্ন: কীভাবে বুঝবেন আপনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত?
ডা. রোকসানা বেগম: লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না দুইভাবে জানা যাবে। লিভার সিরোসিসের দুটি পর্যায় থাকে। একটি হচ্ছে কম্পেনসেটেড সিরোসিস। আর একটি হচ্ছে ডি-কম্পেনসেটেড সিরোসিস। কম্পেনসেটেডকে প্রাথমিক পর্যায় বলা হয়। এ সময় কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সাধারণত এ সময় রোগীর শরীরিক দুর্বলতা দেখা যায়। এ ছাড়া লিভার যেখানে থাকে, পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে, সেখানে ব্যথা থাকে। অন্য কোনো রোগ শনাক্ত করতে যে পরীক্ষা দেওয়া হয়, তাতে অনেক সময় বি ভাইরাস, সি ভাইরাস বা লিভারের কোনো সেল নষ্ট পাওয়া যায়। এ সময় সাধারণত সঠিক চিকিৎসা নিলে এটি নিরাময় সম্ভব। তবে তখন এই লিভার সিরোসিসের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
প্রশ্ন: রোগীরা হাসপাতালে কোন ধরনের জটিলতা নিয়ে আসেন?
ডা. রোকসানা বেগম: যেহেতু লিভার নিয়ে কাজ করি, তাই আমরা সব ধরনের রোগী পেয়ে থাকি। অবস্থা যখন বেশি গুরুতর, তখন রোগীরা আমাদের কাছে আসেন। পেটে বা পায়ে পানি দেখা দিলে, জন্ডিস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি এসব সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে বেশি আসেন। তখন আমরা তাদের লিভার সিরোসিস পরীক্ষা করি। অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যেই লিভার সিরোসিস আছে কি না পরীক্ষা করি।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা কী?
ডা. রোকসানা বেগম: লিভার সিরোসিস চিকিৎসার বিষয়ে কিছু কিছু জিনিস আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রথমে দেখতে হবে রোগীর লিভার সিরোসিস কোন পর্যায়ে আছে। পূর্ণাঙ্গ লিভার সিরোসিস নিরাময় সম্ভব নয়। তাই যে রোগের কারণে লিভার সিরোসিস হয়েছে, আমরা সেই রোগ নিরাময় করার চেষ্টা করি। একজন যদি সম্পূর্ণভাবে এই রোগে আক্রান্ত হন, তা হলে লিভার প্রতিস্থাপন করা ছাড়া নিরাময় করা সম্ভব নয়। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, সব দেশেই এই অবস্থা। যখন কোনো রোগী লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারেন না, তখন আমরা সাইড সিম্পটমগুলোর চিকিৎসা করার চেষ্টা করি। যেমন লিভার সিরোসিসের সঙ্গে যাদের জন্ডিস রয়েছে, তাদের জন্ডিসের চিকিৎসা দিই। যার পেটে পানি দেখা দেয়, তার পেটের পানি কমানোর চিকিৎসা দিই। রোগীদের রক্তবমি ও কালো পায়খানা হয়। এটি নিয়ন্ত্রণে আমরা চিকিৎসা দিই। আমরা সেটি কমানোর চেষ্টা করি। রোগী যাতে অজ্ঞান না হয়ে যান, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শরীরের লবণের মাত্রা কমে যাচ্ছে কি না, নতুন করে কোনো ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে কি না- এগুলো লক্ষ্য রাখা হয়।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হেপাটাইটিস সি এবং বি ভাইরাস। এ দুটি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে মুখের খাওয়ার ওষুধ পাওয়া যায়। এ ওষুধ বাংলাদেশে কম মূল্যে পাওয়া যায়। তাই আমরা যখন কোনো রোগীর শরীরে হেপাটাইটিস সি ও বি ভাইরাস দেখি, তা প্রতিরোধে ওষুধ দিয়ে থাকি। আগে থেকে এই দুই ভাইরাসের চিকিৎসা দিলে লিভার সিরোসিসের পর্যায়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুবই কম থাকে। ফ্যাটি লিভার থাকলে সেটির চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
গুরুতর রোগীকে প্রতিনিয়ত ফলোআপে রাখা হয়। নতুন কোনো সাইড সিম্পটম দেখা দিচ্ছে কি না, সেটি আমরা লক্ষ্য রাখি। সেখান থেকে ক্যান্সারের দিকে ধাবিত হচ্ছে কি না, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়। এ ধরনের রোগীকে নির্দিষ্ট সময় পরপর ফলোআপে রাখা হয়। এটিও আসলে চিকিৎসার অংশ।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর কি সার্জারির প্রয়োজন হয়?
ডা. রোকসানা বেগম: লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির সম্পূর্ণ চিকিৎসা লিভার প্রতিস্থাপন। তবে লিভার প্রতিস্থাপন দেশের সব হাসপাতালে এখনও সব জায়গায় শুরু হয়নি। শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে বেশ কয়েকটি দেশে লিভার প্রতিস্থাপনে চিকিৎসা দেয়া হয়। সবচেয়ে কম খরচের কথা যদি বলতে চান, তা হলে অবশ্যই ভারতে চিকিৎসার কথা বলতে হবে। দেশে থেকে চিকিৎসা নিলে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। এটি মূলত লিভার প্রতিস্থাপনের খরচ।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হলে অনেক সময় রক্তবমি হয়ে থাকে। এটি বন্ধে ব্যান্ড পরানো হয়। এর পেছনে খরচ হয়ে থাকে। এই চিকিৎসার জন্য খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া স্টেম সেল থেরাপি নামে একটি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আছে। যারা লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারে না, তাদের জন্য স্টেম সেল থেরাপির একটি ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থাপনা রয়েছে। স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশে এ চিকিৎসা হচ্ছে। দেশে অল্প খরচে এটি সম্ভব হচ্ছে। মাত্র দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে এই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। অন্যান্য দেশে ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হয়। এই চিকিৎসা আমরা লিভার সিরোসিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিতে পারি। তবে এটি লিভার প্রতিস্থাপনের বিকল্প নয়। সুযোগ থাকলে লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্তদের একটি বড় অংশের পেটে পানি জমে। সেই পানি বের করার জন্য আমরা এক ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করি। এই ইনজেকশনের মাধ্যমে পেট থেকে পানি বের করা হয়। এই চিকিৎসা আমরা সরকারিভাবেও দিয়ে থাকি, বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে এ সেবা দেয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন: কোন ধরনের জীবনাভ্যাস লিভার সিরোসিসের জন্য দায়ী?
ডা. রোকসানা বেগম: লিভার সিরোসিসের মূল কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। তবে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের কারণেও এ রোগে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া জেনেটিক কারণ ও লিভারে চর্বির কারণে লিভার সিরোসিস হয়। আমরা যদি একটু সচেতন হই, তা হলে অবশ্যই এটি প্রতিরোধ করতে পারি। কোনো ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ হলে তারা সহজে পরীক্ষা করতে পারেন। মাত্র দুটি টেস্ট করলেই হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আছে কি না তা জানা সম্ভব। এই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের যদি ট্রিটমেন্ট করা যায়, তা হলে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিস রুখতে করণীয় কী?
ডা. রোকসানা বেগম: ফ্যাটি লিভারের কারণেও যেহেতু লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, সে জন্য আমরা যদি নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করতে পারি, তা হলে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত থাকা যায়। জীবনযাপনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আমাদের হাতে। আমরা চাইলেই ফাস্টফুড ত্যাগ করতে পারি, গরুর মাংস, খাসির মাংস, চর্বিযুক্ত খাবার নিয়মতান্ত্রিকভাবে খেতে পারি। নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত। লিভারে চর্বি জমা না হলে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। আমরা সুরক্ষিত থাকব। নিয়মতান্ত্রিকভাবে অ্যালকোহল গ্রহণ করতে হবে। হেপাটাইটিস ভাইরাস প্রতিরোধে অবশ্যই আমরা টিকা গ্রহণ করব। অনেক সময় দেখা যায় হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে গর্ভবতী মা। তখন সন্তান প্রসব করলে শিশু হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে গর্ভবতী মা যদি হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তা হলে সন্তান প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে সেই সন্তানকে দুটি টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তীব্র দাবদাহের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার সচিবালয়ে সারাদেশের হাসপাতালের পরিচালক এবং সিভিল সার্জনদের সঙ্গে অনলাইনে আয়োজিত এক সভা থেকে তিনি এই নির্দেশনা দেন। সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এই নির্দেশনার কথা জানান। খবর বাসসের
তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরম চরম আকার ধারণ করেছে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা এবং একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে জরুরি রোগী ছাড়া ভর্তি না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
বয়স্ক ও শিশুরা যেন প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না যায়, সে বিষয়েও পরামর্শ দেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই গরমে সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল বয়স্ক এবং বাচ্চারা। এবার এমন একটা জলবায়ু পরিবর্তন হলো যে আমরা জীবনে কখনো শুনিনি যে দুবাই বিমানবন্দর পানিতে ডুবে গেছে। যাহোক এটা প্রকৃতির নিয়ম। আমাদের এগুলোফেস করতে হবে।’
তীব্র দাবদাহে বাচ্চাদের ঝুঁকি এড়াতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার কাছে যখন মেসেজ আসলো (হিট অ্যালার্ট), আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে গিয়ে স্কুলটা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। কারণ, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে বাচ্চা এবং বয়স্করা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওরাল স্যালাইনের কোথাও কোনো ঘাটতি হলে যেন আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়। এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রকৃতির ওপর তো আমাদের কারও হাত নেই। এটা আমাদের রেডি রাখতে হবে।
শিশুদের জন্য হাসপাতালগুলোতে পর্যপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না- জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি শনিবার শিশু হাসপাতালে গিয়েছিলাম। শিশু হাসপাতালগুলোকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার জন্যই সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। কোল্ডকেসগুলোকে এখন হাসপাতালে ভর্তি না করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাচ্চাদের ব্যাপারে আজকে থেকে একটা অনলাইন ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি সারা দেশের চিকিৎসকদের নিয়ে।
সভায় জানানো হয়, মহাখালীতে করোনা চিকিৎসার জন্য ডিএনসিসি হাসপাতালে শিশু ও বয়স্কদের জন্য আলাদাভাবে বেড রাখতে বলা হয়েছে।
এ সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। বলা হয়েছে, এই দুদিন চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করবেন না।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
বিএমএ চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা প্রকাশ পরিষদ, চট্টগ্রাম প্রকাশ সমিতিসহ ৯টি সংগঠন অংশ নেয়।
বিএমএ নেতারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিচার না হওয়ায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের কর্মস্থলে খুবই অনিরাপদ।
চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।
মুজিবুল হক বলেন, ‘হামলার বিচার পাওয়ার জন্য আমরা পাঁচদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ১০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাস।
পরে ১৪ এপ্রিল ভুল চিকিৎসায় এক বছরের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে রোগীর স্বজনদের হামলায় রিয়াজ উদ্দিন শিবলু নামে আরেক চিকিৎসক আহত হন।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো চিকিৎসকের ওপর হামলা যেমন মেনে নেব না, তেমনই চিকিৎসায় কোন ধরনের অবহেলা হলে সেটাও মেনে নিতে পারব না।’
বুধবার বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে চিকিৎসদের নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে চিকিৎসা কাজে চিকিৎসকদের আরও বেশি মনোযোগী ও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের যেমন সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব আমার, রোগীদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বও আমার। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সম্প্রতি ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভুটান রাজার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার ভুটানে বার্ন হাসপাতাল করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত করোনার টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চর্ম রোগ দেখা দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো ড্রাগেই এলার্জি প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে এ বিষয়টি আমি এখনও শুনিনি।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনার প্রধান মুখপাত্র প্রফেসর ফলস-এর গবেষণায় এখনও এমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি। তবে এমনও হতে পারে যে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো এখন দেখা দিচ্ছে।’
এর আগে চান্দিনার মাধাইয়া ইউনিয়নের সোনাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব কমল কুমার ঘোষ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারওয়ার হোসেন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:পাবনায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুই প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দিয়েছেন সিভিল সার্জন। একইসঙ্গে অভিযোগ তদন্তে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গা-ঢাকা দিয়েছে।
সোমবার ঘটনাটি জানাজানি হলে জেলা সিভিল সার্জন সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টির প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন।
পাবনা সদর পৌর এলাকার শালগাড়িয়া হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত বেসরকারি আইডিয়াল হাসপাতালে রোববার (১৪ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে পৃথক চিকিৎসক দ্বারা সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এর আগে দুপুরে রোগীদের সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এলাকার মাহবুব বিশ্বাসের স্ত্রী ইনসানা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে রোববার দুপুরে তাকে পাবনা আইডিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় জাহিদা জহুরা লীজা নামক এক চিকিৎসক অপারেশন করতে গেলে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়।
অপর ঘটনায় একই সময়ে পাবনার আটঘরিয়ার স্বপ্না খাতুন নামক এক রোগী কাজী নাহিদা আক্তার লিপির কাছে সিজারিয়ান অপারেশন করতে আসেন। ভুল চিকিৎসায় তারও মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষ রাতেই রোগীসহ স্বজনদের হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। পরে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে তা ধামাচাপা দিতে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মরদেহসহ স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত শেষে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করার সময়ে যেসব উপকরণ ও মেডিসিন ব্যবহার হয়েছে সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লা দেওয়ান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন বা ওষুধ সেবনের ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যারা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিকটি যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত, তাই নিয়ম মেনে সব কার্যক্রম চলছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কোনো পরিবার থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি।’
আরও পড়ুন:দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট (ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন) করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে সারাহ ইসলাম নামে একজনের অঙ্গদানের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে এমন রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শামীমা আক্তার ও হাসিনা নামে দুই রোগীর শরীরে ওই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় নিউজবাংলায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়।
সারাহ ইসলামের কিডনি প্রতিস্থাপন করা রোগীদের একজন শামীমা আক্তার মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিএসএমএমইউ’র আইসিইউতে মারা গেছেন। কিডনি গ্রহীতা অপরজন হাসিনা হাসিনা এর আগে গত বছরের অক্টোবরে মারা যান। এর ফলে সারাহর কিডনি পাওয়া দুই নারীরই মৃত্যু হলো।
বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল মঙ্গলবার রাতে শামীমা আক্তারের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘কিডনি গ্রহীতা প্রথম জন (হাসিনা) ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গিয়েছিলেন। অপরজন শামীমাও চলে গেলেন। এটি খুবই কষ্টের। শামীমা শেষ ছয় মাস আমাদের আওতার বাইরে ছিলেন।’
তিনি বলেন, সম্প্রতি শামীমার ভাই জানায় যে শামীমার ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। তিন সপ্তাহ আগে আবারও তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুর দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও শামীমার শুকিয়ে যাওয়ার কারণটা ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা।
‘ক্রিয়েটিনিন পুনরায় বাড়ায় ওয়ার্ড থেকে তাকে কেবিনে আনা হয়। তারপরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চার দিন আগে আইসিইউতে নেয়া হয়।’
ডা. হাবিবুর রহমান জানান, শামীমার শরীরে হেপাটাইটিস-সি ধরা পড়ে। কারও হেপাটাইটিস-সি পজিটিভ হলে রক্ত কাজ করে না। এজন্য বিশেষ রক্ত লাগে। সেটি দেয়ার পরও কিন্তু শেষ মুহূর্তে রেসপন্স করেনি। আর বাড়িতে থাকার সময় অবস্থা খারাপ হলেও সময়মতো আমাদের জানানো হয়নি।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা ও নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়ে ইউনিসেফ দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সচিবালয়ে রোববার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তরে ইউনিসেফের জাতিসংঘ শিশু তহবিলের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের হেলথ সেকশনের চিফ মায়া ভ্যানডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইউনিসেফ করোনার সময় গোটা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করা, নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়েও জাতিসংঘের এই বিশেষ সংস্থাটি দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপদ মাতৃত্ব, ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করা, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তা করা, তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজেও ইউনিসেফ ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
‘এগুলোর সঙ্গে, শিশুদের জন্য তৃণপর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ইউনিসেফ প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানালে তারা সেটিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।’
বৈঠকে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের প্রতিনিধি দল করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানারকম ফলপ্রসূ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। দেশের স্বাস্থ্যখাত আগের থেকে আরও উন্নত হচ্ছে বলেও জানান তারা। টিকাদানে বাংলাদেশকে বিশ্বের একটি উদাহরণ হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার তাই করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইদের পর থেকে তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে আমি আবারও মাঠে নেমে পড়ব। প্রয়োজনে প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জে চলে যাব। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার আমি তাই করব।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘কথা কম বলে অসুস্থ মানুষের সেবায় কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধু এই দেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে সেই জন্য। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি কিন্তু দেশকে তার স্বপ্নের মতো করে সাজানোর সুযোগ পাননি।
‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) মাত্র তিন বছরের মত সময় ক্ষমতায় ছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলেও দেশে তেমন কোনো সম্পদ বা অর্থ ছিল না। সেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশের দায়িত্ব নিয়েই তিনি এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে তিনি কাজ শুরু করেননি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের সব ভালো উদ্যোগ জাতির পিতাই শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি যেভাবে শুরু করেছিলেন দেশের বিভিন্ন কুচক্রী মহলের কারণে সেগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এখন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার কাজগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা। সেই কাজ করতে মুখে আমাদেরকে বড় বড় কথা বললেই হবে না, আমাদেরকে কাজ করে দেখাতে হবে। এজন্য আমরা যেন মুখে কথা কম বলে কাজ করেই আমাদের সক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে পারি সে লক্ষ্যেই মাঠে নেমে পড়তে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউ এর ভিসি ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিয়া, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান (অতিরিক্ত সচিব)-সহ অন্যান্যরা।
মন্তব্য