লিভার সিরোসিস লিভার বা যকৃতের ক্রনিক রোগ। এতে লিভারের সেলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত দেখা দেয়। ‘হেপাটাইটিস সি’ ভাইরাস শরীরে দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে যকৃতের কোষগুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটাতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসা সম্ভব। তাই অবহেলা না করে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রোকসানা বেগম। সম্প্রতি নিউজবাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. রোকসানা বেগম বলেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগী দীর্ঘদিন কোনো উপসর্গ ছাড়া স্বাভাবিক চলাফেলা করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পেনসেটেড সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে কিছু অভিন্ন লক্ষণ থাকে; যেমন- শারীরিক দুর্বলতা, মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া, ওজন কমে যাওয়া, চামড়া ত্বক ও চোখ হলুদ হওয়া, বমি বমি ভাব। এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিস বলতে আমরা কী বুঝি?
ডা. রোকসানা বেগম: শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে আসা রোগীদের একটি বড় অংশ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। রোগের ক্ষেত্রে এর পরেই লিভার ক্যান্সারের অবস্থান। লিভার বা যকৃতের যে কোনো ক্রনিক রোগের কারণে লিভারের সেলগুলো নষ্ট হয়ে যায়, লিভারের সেলগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। তখন যে অবস্থা তৈরি হয়, তাকে মূলত লিভার সিরোসিস বলা হয়।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ কী?
ডা. রোকসানা বেগম: প্রধান কারণ ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। এ ভাইরাস কারও কারও শরীরে ১০-১৫ বছর অবস্থান করে। এই দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে লিভার সিরোসিস দেখা দেয়। ফ্যাটি লিভারের কারণেও এই লিভার সিরোসিস দেখা দেয়। এখন এটি অনেক কমন হয়ে দেখা দিয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করলেই একটা বড় অংশের ফ্যাটি লিভার ধরে পড়ে। ‘হেপাটাইটিস সি’ ভাইরাসের কারণে লিভার সিরোসিস দেখা দেয়। এ ছাড়া জেনেটিক কারণও লিভার সিরোসিসের জন্য দায়ী। অ্যালকোহলও অনেক ক্ষেত্রে লিভার সিরোসিসের জন্য দায়ী।
মানুষের শরীরে দীর্ঘদিন হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস বি’র অবস্থান, অ্যালকোহলিজম, ফ্যাটি লিভার, জেনেটিক ডিজিজ এগুলোর কারণে লিভারের কোষগুলোয় এক ধরনের উপদাহ সৃষ্টি হয়। উপদাহ হতে হতে একসময় কোষগুলো কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন লিভার ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।
প্রশ্ন: কীভাবে বুঝবেন আপনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত?
ডা. রোকসানা বেগম: লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না দুইভাবে জানা যাবে। লিভার সিরোসিসের দুটি পর্যায় থাকে। একটি হচ্ছে কম্পেনসেটেড সিরোসিস। আর একটি হচ্ছে ডি-কম্পেনসেটেড সিরোসিস। কম্পেনসেটেডকে প্রাথমিক পর্যায় বলা হয়। এ সময় কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সাধারণত এ সময় রোগীর শরীরিক দুর্বলতা দেখা যায়। এ ছাড়া লিভার যেখানে থাকে, পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে, সেখানে ব্যথা থাকে। অন্য কোনো রোগ শনাক্ত করতে যে পরীক্ষা দেওয়া হয়, তাতে অনেক সময় বি ভাইরাস, সি ভাইরাস বা লিভারের কোনো সেল নষ্ট পাওয়া যায়। এ সময় সাধারণত সঠিক চিকিৎসা নিলে এটি নিরাময় সম্ভব। তবে তখন এই লিভার সিরোসিসের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
প্রশ্ন: রোগীরা হাসপাতালে কোন ধরনের জটিলতা নিয়ে আসেন?
ডা. রোকসানা বেগম: যেহেতু লিভার নিয়ে কাজ করি, তাই আমরা সব ধরনের রোগী পেয়ে থাকি। অবস্থা যখন বেশি গুরুতর, তখন রোগীরা আমাদের কাছে আসেন। পেটে বা পায়ে পানি দেখা দিলে, জন্ডিস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি এসব সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে বেশি আসেন। তখন আমরা তাদের লিভার সিরোসিস পরীক্ষা করি। অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যেই লিভার সিরোসিস আছে কি না পরীক্ষা করি।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা কী?
ডা. রোকসানা বেগম: লিভার সিরোসিস চিকিৎসার বিষয়ে কিছু কিছু জিনিস আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রথমে দেখতে হবে রোগীর লিভার সিরোসিস কোন পর্যায়ে আছে। পূর্ণাঙ্গ লিভার সিরোসিস নিরাময় সম্ভব নয়। তাই যে রোগের কারণে লিভার সিরোসিস হয়েছে, আমরা সেই রোগ নিরাময় করার চেষ্টা করি। একজন যদি সম্পূর্ণভাবে এই রোগে আক্রান্ত হন, তা হলে লিভার প্রতিস্থাপন করা ছাড়া নিরাময় করা সম্ভব নয়। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, সব দেশেই এই অবস্থা। যখন কোনো রোগী লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারেন না, তখন আমরা সাইড সিম্পটমগুলোর চিকিৎসা করার চেষ্টা করি। যেমন লিভার সিরোসিসের সঙ্গে যাদের জন্ডিস রয়েছে, তাদের জন্ডিসের চিকিৎসা দিই। যার পেটে পানি দেখা দেয়, তার পেটের পানি কমানোর চিকিৎসা দিই। রোগীদের রক্তবমি ও কালো পায়খানা হয়। এটি নিয়ন্ত্রণে আমরা চিকিৎসা দিই। আমরা সেটি কমানোর চেষ্টা করি। রোগী যাতে অজ্ঞান না হয়ে যান, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শরীরের লবণের মাত্রা কমে যাচ্ছে কি না, নতুন করে কোনো ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে কি না- এগুলো লক্ষ্য রাখা হয়।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হেপাটাইটিস সি এবং বি ভাইরাস। এ দুটি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে মুখের খাওয়ার ওষুধ পাওয়া যায়। এ ওষুধ বাংলাদেশে কম মূল্যে পাওয়া যায়। তাই আমরা যখন কোনো রোগীর শরীরে হেপাটাইটিস সি ও বি ভাইরাস দেখি, তা প্রতিরোধে ওষুধ দিয়ে থাকি। আগে থেকে এই দুই ভাইরাসের চিকিৎসা দিলে লিভার সিরোসিসের পর্যায়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুবই কম থাকে। ফ্যাটি লিভার থাকলে সেটির চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
গুরুতর রোগীকে প্রতিনিয়ত ফলোআপে রাখা হয়। নতুন কোনো সাইড সিম্পটম দেখা দিচ্ছে কি না, সেটি আমরা লক্ষ্য রাখি। সেখান থেকে ক্যান্সারের দিকে ধাবিত হচ্ছে কি না, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়। এ ধরনের রোগীকে নির্দিষ্ট সময় পরপর ফলোআপে রাখা হয়। এটিও আসলে চিকিৎসার অংশ।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর কি সার্জারির প্রয়োজন হয়?
ডা. রোকসানা বেগম: লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির সম্পূর্ণ চিকিৎসা লিভার প্রতিস্থাপন। তবে লিভার প্রতিস্থাপন দেশের সব হাসপাতালে এখনও সব জায়গায় শুরু হয়নি। শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে বেশ কয়েকটি দেশে লিভার প্রতিস্থাপনে চিকিৎসা দেয়া হয়। সবচেয়ে কম খরচের কথা যদি বলতে চান, তা হলে অবশ্যই ভারতে চিকিৎসার কথা বলতে হবে। দেশে থেকে চিকিৎসা নিলে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। এটি মূলত লিভার প্রতিস্থাপনের খরচ।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হলে অনেক সময় রক্তবমি হয়ে থাকে। এটি বন্ধে ব্যান্ড পরানো হয়। এর পেছনে খরচ হয়ে থাকে। এই চিকিৎসার জন্য খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া স্টেম সেল থেরাপি নামে একটি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আছে। যারা লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারে না, তাদের জন্য স্টেম সেল থেরাপির একটি ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থাপনা রয়েছে। স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশে এ চিকিৎসা হচ্ছে। দেশে অল্প খরচে এটি সম্ভব হচ্ছে। মাত্র দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে এই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। অন্যান্য দেশে ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হয়। এই চিকিৎসা আমরা লিভার সিরোসিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিতে পারি। তবে এটি লিভার প্রতিস্থাপনের বিকল্প নয়। সুযোগ থাকলে লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্তদের একটি বড় অংশের পেটে পানি জমে। সেই পানি বের করার জন্য আমরা এক ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করি। এই ইনজেকশনের মাধ্যমে পেট থেকে পানি বের করা হয়। এই চিকিৎসা আমরা সরকারিভাবেও দিয়ে থাকি, বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে এ সেবা দেয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন: কোন ধরনের জীবনাভ্যাস লিভার সিরোসিসের জন্য দায়ী?
ডা. রোকসানা বেগম: লিভার সিরোসিসের মূল কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। তবে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের কারণেও এ রোগে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া জেনেটিক কারণ ও লিভারে চর্বির কারণে লিভার সিরোসিস হয়। আমরা যদি একটু সচেতন হই, তা হলে অবশ্যই এটি প্রতিরোধ করতে পারি। কোনো ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ হলে তারা সহজে পরীক্ষা করতে পারেন। মাত্র দুটি টেস্ট করলেই হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আছে কি না তা জানা সম্ভব। এই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের যদি ট্রিটমেন্ট করা যায়, তা হলে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে।
প্রশ্ন: লিভার সিরোসিস রুখতে করণীয় কী?
ডা. রোকসানা বেগম: ফ্যাটি লিভারের কারণেও যেহেতু লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, সে জন্য আমরা যদি নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করতে পারি, তা হলে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত থাকা যায়। জীবনযাপনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আমাদের হাতে। আমরা চাইলেই ফাস্টফুড ত্যাগ করতে পারি, গরুর মাংস, খাসির মাংস, চর্বিযুক্ত খাবার নিয়মতান্ত্রিকভাবে খেতে পারি। নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত। লিভারে চর্বি জমা না হলে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। আমরা সুরক্ষিত থাকব। নিয়মতান্ত্রিকভাবে অ্যালকোহল গ্রহণ করতে হবে। হেপাটাইটিস ভাইরাস প্রতিরোধে অবশ্যই আমরা টিকা গ্রহণ করব। অনেক সময় দেখা যায় হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে গর্ভবতী মা। তখন সন্তান প্রসব করলে শিশু হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে গর্ভবতী মা যদি হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তা হলে সন্তান প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে সেই সন্তানকে দুটি টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য