নোয়াখালীর সেনবাগে মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন তার মা।
শারীরিক পরীক্ষার জন্য শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে পাঠানো হয়।
ছাত্রীর মা বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সেনবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী।
আসামিরা হলেন সেনবাগের বীজবাগ ইউনিয়নের জহির উদ্দিন ও একই এলাকার হাবীব উল্যাহ।
মামলার বরাতে ওসি জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে জহির ওই ছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। তাকে সহযোগিতা করেন হাবীব। স্থানীয় কয়েকজন বিষয়টি টের পেয়ে সেখানে উপস্থিত হলে তারা দুজন পালিয়ে যান।
ওসি বলেন, ‘ওই ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
নড়াইলে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে অপমান, ঢাকার সাভারে এক কলেজ শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভের মধ্যে এবার পটুয়াখালীতে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে অপমান করার ঘটনা ঘটেছে।
সেখানে এই অভিযোগ উঠেছে সেই শিক্ষকের দুই সাবেক সহকর্মীর বিরুদ্ধেই।
পটুয়াখালীর বাউফল পৌর শহরের ২নং ওয়ার্ডের হাজি সড়ক এলাকায় বাউফল মদিনাতুল উলুম নুরানি হাফিজি ক্যাডেট মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটে। মাথা ন্যাড়ার সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পটুয়াখালীর বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক সম্প্রতি এই মাদ্রাসাটি ছেড়ে অন্য একটি মাদ্রাসায় যোগ দিয়েছেন। তার অভিযোগ, তার সাবেক কর্মস্থল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আনিচুর রহমানের নির্দেশে এই ঘটনা ঘটে।
যদিও মারধরের কথা অস্বীকার করে আনিচুর রহমান বলেন, ‘মাথা ন্যাড়া সুন্নতি কাম। তাই ওনাকে লজ্জা দিতে এই কাজ করিয়েছে অন্যরা।’
ঘটনার শিকার হাফেজ মনিরুল ইসলাম ভোলা সদর উপজেলার আলী নগর গ্রামের বাসিন্দা।
মনিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই মদিনাতুল উলুম নুরানি হাফিজি ক্যাডেট মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে চাকরি করতেন। একজন ভালো শিক্ষক হিসাবে ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে তার সুনাম ছিল। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ওই শিক্ষকের কাছে পড়াতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন।
অভিযোগ উঠে, এই বিষয়টি ওই মাদ্রাসার পরিচালক আনিচুর রহমানের ভালো লাগেনি। এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে গত ঈদের আগে চাকরি ছেড়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার লাউতলী জামিয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন মনিরুল ইসলাম।
স্থানীয় বাসিন্ধা আলী আহম্মেদ জানান, মনিরুল চলে যাওয়ার পর কয়েকজন ছাত্র ওই মাদ্রাসা ছেড়ে চাঁদপুরের সেই মাদ্রাসায় গিয়ে ভর্তি হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন বাউফল মদিনাতুল উলুম নুরানি হাফিজি ক্যাডেট মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আনিচুর রহমান। তার ধারণা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ওই ছাত্রকে ফুঁসলিয়ে তার মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন।
এক শিক্ষক জানান, আনিচুর রহমান অভিভাবক পরিচয়ে অন্য একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে মনিরুল ইসলামকে কয়েকজন ছাত্র দেয়ার নাম করে গত ৩ জুলাই বাউফলে ডেকে আনেন। কালিশুরী এলাকার একটি মাদ্রাসার কক্ষে মনিরুলকে আটকে রেখে মারধর করা হয়।
এরপর আনিচুরের নির্দেশে মাওলানা জসিম উদ্দিন নামে আরেক শিক্ষক মনিরুল ইসলামের মাথা ন্যাড়া করে দেন এবং তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ও সাড়ে ৪ হাজার টাকা রেখে রাত ৮টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
বুধবার দুপুরের পর মাথা ন্যাড়ার একটি ভিডিও ফেইস বুকে ছড়িয়ে পড়েলে তোলপাড় হয়। পরে বাউফল থানার ওসি আল মামুনের নির্দেশে এসআই নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ মদিনাতুল উলুম নুরানি হাফিজি ক্যাডেট মাদ্রাসায় গিয়ে খোঁজ খবর নেন। কিন্তু মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় তারা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করলেও মাথা ন্যাড়া করার কথা স্বীকার করে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন মাওলানা আনিচুর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ‘আসলে কাজটি ঠিক হয়নি। আমাদের উচিত ছিল ছেলে ধরা বা ছেলে অপহরণের অভিযোগ এনে পুলিশের কাছে পাঠানো। কিন্তু ওই সময় স্থানীয় অনেক লোকজন এসে কে কীভাবে মাথা ন্যাড়া করলো, আমি নিজেও হতবাক।’
তিনি বলেন, ‘যারা মাথা কামিয়েছে তারা বলছে যে, মাথা কামিয়ে দিলে অনেকে মনে করবে সুন্নাতী কাম। আর এতে যদি মনিরুল লজ্জা পেয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায়।’
আপনার নির্দেশে মাওলানা জসিম মাথা ন্যাড়া করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে আনিচুর বলেন, ‘না, না আমি কাউকে কিছু বলি নাই। তাছাড়া এটার তো ফয়সালা হয়েই গেছে। মনিরুলকে পাঁচ হাজার পাঁচ শ টাকা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেও ভুল স্বীকার করেছে। আর আমরাও বুঝেছি যে আমাদেরও কাজটা ঠিক হয়নি।’
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহেদ আহমেদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে জানান, ‘খুবই বাজে কাজ। আমি লোক পাঠিয়েছি। মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। তারপরেও মনিরুল সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে আরো বিস্তারিত জানাতে পারব।’
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক গৃহবধূর হাত-পা ও মুখ বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
উপজেলার গোপালদী পৌরসভার সাদসারদী গ্রামের কাজীপাড়ার চকের বাড়ী থেকে বুধবার বিকেলে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত আনোয়ার বেগম কাজী পাড়ার নৈশ প্রহরী ওমর আলীর স্ত্রী।
আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, নিহতের বাড়িটি চকের মাঝখানে। এর আশপাশে অন্য কোনো বাড়ি-ঘর নেই। তার স্বামী আড়াইহাজার বাজারের নৈশ প্রহরী। তিনি সেখানেই থাকেন।
বিকেলে গ্রামের কেউ একজন সেই বাড়িটিতে গিয়ে দেখেন, আনোয়ারার মরদেহ পড়ে আছে। পরে খবরটি গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে দেখে, ঘরের ভেতরে একপাশের টিন-শিট কাটা এবং হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় আনোয়ারার মরদেহটি পড়ে আছে।
ওসি বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা চুরি বা ডাকাতি করতে ওই বাড়িতে প্রবেশ করেছিল। এতে বাধা দেয়ায় আনোয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’
এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসি।
আরও পড়ুন:বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় যেসব ভর্তিচ্ছু বাদ পড়ছেন, সেসব শিক্ষার্থীরা ফেল বা অকৃতকার্য হচ্ছেন- বিষয়টি এমন নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের বাদ কিংবা ফেল নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থী বাছাই করে নিচ্ছে।’
বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফেল করাচ্ছে, তা কিন্তু না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ধারণক্ষমতা রয়েছে। সেই অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বাছাই করছে। যারা সেই পরীক্ষায় বাছাই হচ্ছে না, তারা যে অকৃতকার্য হচ্ছে; বিষয়টি এমন নয়।’
বন্যায় বিভিন্ন জেলায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সংস্কারের উদ্যােগ নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্যায় যেসব শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়েছে, তাদের তালিকা করে বই দেয়ার এক সপ্তাহ পর পরীক্ষা নেয়া হবে।’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছাত্রলীগের অর্থের বিনিময়ে নেতা নির্বাচন প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। বিষয়গুলো দেখার জন্য দলীয় ফোরামে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা রয়েছেন। তারা অভিযোগের সত্যতা খুঁজে বের করবেন।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মজিবুর রহমান, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বেপারী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. হেলাল হোসাইন প্রমুখ।
আরও পড়ুন:সিলেটে সারা দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। বৃষ্টি হচ্ছে মঙ্গলবার রাত থেকেই। ফলে আবার বাড়ছে সিলেটের নদনদীর পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েছে ২ সেন্টিমিটার। তবে অন্যান্য পয়েন্টে পানি কমেছে।
সারি নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার ও লোভা নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে কিছুটা কমেছে ধলাই নদীর পানি।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার পানি কিছুটা কমেছিলে। বৃষ্টিতে আজ সকালে আবার পানি বেড়ে গেছে।ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে এখনও হাঁটু পানি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী একেএম নিলয় পাশা বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে সিলেটে নদনদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি থাকতে পারে।
সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত সিলেটে ৩১৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। এতে আশ্রয় নিয়েছেন ২২ হাজার ১৭৬ জন। ২৩৫টি পশুও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।
বন্যার্তদের চিকিৎসায় জেলায় ১৪০টি মেডিক্যাল দল ও পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ৪০টি মোবাইল টিম কাজ করছে।
আরও পড়ুন:দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না পেয়ে মঙ্গলবার রাতে সড়ক অবরোধ করেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেতলি এলাকার বাসিন্দারা।
এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া স্থানীয় যুবক সাজ্জাদ আহমদ জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ গিয়েছিল। টানা আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকার পর সড়ক অবরোধে নামেন তারা। বিক্ষোভ চলাকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
দুদিন ধরেই ভ্যাপসা গরম সিলেটে। মঙ্গলবার তা আরও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে দিনভর ছিল বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা। রাতে লোডশেডিং আরও বাড়ে। রাতে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। গরম আর লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় গ্রাহকদের। সেই সঙ্গে দীর্ঘ বন্যার দুর্ভোগ তো রয়েছেই।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় অর্ধেক সরবরাহও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে । রাতে ও গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। ফলে এ রকম সময়ে লোডশেডিংও বাড়ে।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে সিলেট নগর ও গ্রামাঞ্চলের অন্তত ১০ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তারা জানিয়েছেন, নগরে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ও গ্রামে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বুরুঙ্গা এলাকার সুমন দেব বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ ছিল না। একবার গেলে দীর্ঘক্ষণ পর আবার আসার কিছুক্ষণই পর পরই চলে যায়। আর রাতে তো বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎহীন ছিল।’
কদিন ধরেই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দিনে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে বলে জানান নগরের টিলাগড় এলাকার গৃহিণী রুমানা আক্তার। তিনি বলেন, ‘তীব্র গরমের সময়, ঘুমানো বা খাওয়ার সময়- এ রকম সময়েই বিদ্যুৎ চলে যায়।’
চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ার কথা জানিয়ে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মহাব্যবস্থাপক সঞ্জীব কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। বিশেষত পিক আওয়ারে সরবরাহ সবচেয়ে কম মিলছে।’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমাদের চাহিদা ছিল ৪২ মেগাওয়াট। পেয়েছি মাত্র ২০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে। কাল সকাল থেকেই লোডশেডিং শুরু হয়েছিল, যা রাতেও অব্যাহত থাকে।
‘গরম বেশি হলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। এতে লোডশেডিংও বাড়ে।’
চাহিদার ৬০ শতাংশ সরবরাহ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমাদের চাহিদা ছিল ১০৩ মেগাওয়াট। সরবরাহ পেয়েছি ৬০ মেগাওয়াটের মতো।’
মঙ্গলবার সরবরাহের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাল গরম বেশি ছিল। তাই ঘাটতিও বেশি ছিল। এতে লোডশেডিংও বেশি করতে হয়েছে।’
তবে বুধবার আবহাওয়া ঠান্ডা থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা কম বলে জানান তিনি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতাধীন গ্রাহকদের প্রতি ৪ ঘণ্টা পরপর ১ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিডিবি সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম পাচ্ছি। বুধবার দুপুরে সিলেট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১২৩ মেগাওয়াট আর বিভাগে ৫৫০ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে সরবরাহ পেয়েছি জেলায় ১০০ মেগাওয়াট ও বিভাগে ৪২০ মেগাওয়াট।’
সব সময় দুটি করে ফিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৪-৫ ঘণ্টা পরপর প্রতিটি ফিডে ১ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।
তার হিসাবেই দিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে ৫-৬ ঘণ্টা।
আব্দুল কাদির বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেল সংকট দেখা দিয়েছে। তাই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় গ্যাসের চাপ কম। এ কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বন্ধ আছে। এতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এই ঘাটতির কারণেই লোডশেডিং হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ঈদের আগে ও পরে ৭ দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেলে চলাচল নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গাজীপুরে মানববন্ধন করেছেন একদল বাইকার।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বুধবার দুপুরে মাথায় হেলমেট পরে ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদর্শন করে মানববন্ধনে অংশ নেন শতাধিক বাইকচালক।
এ সময় মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের জন্য বাস মালিকদের দোষারোপ করেন তারা। এছাড়া ঈদের আগে ও পরে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান বাইকচালকরা।
মানবন্ধনে অংশ নেয়া বাইকার আশিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিরাপত্তার ইস্যুতে আন্তমহাসড়কে বাইক চলাচল বন্ধ কার্যকরী সমাধান নয়। বরং মহাসড়কে আইনের প্রয়োগ করে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেয়া হোক।’
এ নিষেধাজ্ঞার ফলে লাখো মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী এবারের ঈদে তাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে সমস্যার সম্মুখীন হবেন বলে মনে করেন তিনি।
বাইকার সবুজ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই সঠিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে অনুমতি দেয়া হোক। তবে যারা আইন অমান্য করে হেলমেট, লাইসেন্স ও সেফটি গার্ড ব্যবহার করবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের নিকট স্বারকলিপি দেন মানববন্ধনে অংশ নেয়া বাইকচালকরা।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ঈদের আগে তিন দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরে তিন দিন অর্থাৎ মোট সাত দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে মহাসড়কে রাইড শেয়ারিং করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নুরি।
৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই নির্দেশনা।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করছেন বাইকাররা।
পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতির দাবিতে বুধবার দুপুরেও পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজার সামনে মানববন্ধন করেছে শরীয়তপুর বাইকারস নামের একটি সংগঠন।
মানববন্ধন থেকে ঈদের আগে পদ্মা সেতুসহ সব মহাসড়কে বাইক চলাচলের অনুমতির দাবি জানানো হয়।
বাইক নেয়া যাবে না নৌপথেও
মহাসড়কে বাইক চালানোর দাবিতে মানববন্ধন করলেও এরই মধ্যে দুই চাকার যানটি বহন নিষিদ্ধ হয়েছে নৌপথেও।
এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গেছে। আগামী ১১ দিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। অর্থাৎ ঈদের পর আরও পাঁচ দিন লঞ্চে বা ফেরিতে করে বাইক পরিবহন করা যাবে না।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল গত ১২ জুন। আর সেটি কার্যকর হয়েছে ২৪ দিন পর।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হত্যার ঘটনায় তোলপাড়, সেটির অধ্যক্ষ সাইফুল হাসানকে শোকজ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। অনুমতি ছাড়া নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান করায় সাত কর্মদিবসের মধ্য সুষ্পষ্ট ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ৩০ জুন আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে আমাকে কারণ দর্শানোর একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কলেজের এক শিক্ষক মোবাইলে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।’
কী বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুল শাখাটা বোর্ডের অনুমোদন না নিয়ে চালানো এটার বিষয়ে কীভাবে চালাচ্ছি সেটা জানতে চেয়েছেন। সাত কর্মদিবেসর মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে একটা তদন্ত টিম এসেছিলেন। তারাই প্রতিবেদন দিয়েছিলেন এই বিষয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে উৎপল স্যারকে হত্যার বিচার অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটা বড় চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সব স্কুলগুলো স্কুল উপজেলার অনুমতি নিয়ে এভাবেই চলে। দেখেন, আমরা এতদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছি, উপবৃত্তি পাচ্ছি। তাহলে এতদিন তো শিক্ষা বোর্ড আমাদের বলে নাই যে আপনারা বন্ধ করেন।’
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষকে আমরা শোকজ করেছি। ওনার নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি কোথা থেকে কীভাবে পেয়েছেন এই বিষয়টার ব্যাখ্যা চেয়েছি আমরা।’
গত ২৫ জুন কলেজ প্রাঙ্গণে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার সময় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে।
পরদিন সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় উৎপলের। একই দিন নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার চার দিন পর ২৯ জুন জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিন রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার হয় জিতু।
৫ দিনের রিমান্ড শেষে ৬ জুলাই আদালতে শিক্ষক উৎপলকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন জিতু।
এ নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অনুমোদন ছাড়াই প্রাক প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য