মূল্যস্ফীতির চেয়ে আমানতের সুদহার বেশি রাখার নির্দেশের পরও আমানতের সুদহার ক্রমেই কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতে আমানতের গড় সুদহার এখন ঠেকেছে ৪ দশমিক ০১ শতাংশে। অথচ মূল্যস্ফীতির হার এখন ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
অবশ্য এটাও ঠিক যে, মূল্যস্ফীতির চেয়ে সুদহার বেশি রাখতে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেটি শুধু ব্যক্তি আমানতের ওপর। প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের সুদহার সর্বনিম্ন কত হবে, সে বিষয়ে অবশ্য কিছু বলা নেই। আর ব্যাংকে যে টাকা জমা রাখা হয়, তাতে ব্যক্তি আমানতের অবদান শতকরা হিসাবে অর্ধেকেরও কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ০৮। কিন্তু অক্টোবরে সেখান থেকে আরও কমে যায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্যাংকে আমানতের সুদহার এর চেয়ে কম কখনও ছিল না। ফলে ব্যাংক খাতে আমানতের সুদ হার নিয়ে হতাশা ক্রমেই বাড়ছে।
গত আগস্টে আমানতের গড় সুদহার ছিল সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ।
করোনা শুরুর আগে দেশের প্রায় সব বেসরকারি ব্যাংক আমানতের তীব্র সংকটে ছিল। তখন বেশি সুদের অফার দিয়ে অন্য ব্যাংকের গ্রাহককে নিজ দখলে নেয়ার প্রতিযোগিতায় ছিলেন ব্যাংকাররা।
কিন্তু করোনোর প্রাদুর্ভাবের শুরুতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি হারালে ঋণের চাহিদা যায় কমে। বিনিয়োগ-খরায় দেশের মুদ্রাবাজারে তৈরি হয় অলস তারল্যের পাহাড়। সে সময় কোনো কোনো ব্যাংক আমানতের সুদহার নামায় ২ শতাংশের নিচে।
এই পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগী হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার দিয়ে জানানো হয়, মেয়াদি আমানতে সুদহার আগের তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির কম থাকা চলবে না।
কিন্তু এই সার্কুলারের সঙ্গে ব্যাংকের সুদহারের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৩৬ শতাংশ। গত আগস্টে তা বেড়ে হয় ৫.৫৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে হয় ৫.৫৯ শতাংশ। অক্টোবরে তা বাড়ে আরও।
অন্যদিকে গত মে মাসে আমানতের গড় সুদ ছিল ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। জুনে তা কমে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ১৩ শতাংশে, জুলাইয়ে যা আরও কমে হয় ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। পরের দুই মাসেও ধারাবাহিকভাবে কমে আরও।
সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম থাকায় আসলে ব্যাংকে টাকা রেখে মানুষের আসলে কোনো লাভ হচ্ছে না। উল্টো টাকার মান কমে যাওয়ায় লোকসান হচ্ছে।
আমানতের সুদহার কমালেও ঋণের সুদহার ঠিকই বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। করোনার সময় যখন ঋণপ্রবাহ তলানিতে ঠেকেছিল, তখন ৭.৯৯ শতাংশ সুদহারে পারসোনাল লোন নিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হতো।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর আর্থিক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়ার পর ঋণের চাহিদাও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ঋণের সুদহারও।
সবশেষ তথ্য বলছে, ঋণের গড় সুদহার এখন ৭.১৫ শতাংশ, যা গত বছর এই সময়ে ছিল ৭.৬৭ শতাংশ। গত আগস্টে তা ছিল ৭.২৪ শতাংশ, জুলাইয়ে ছিল ৭.৩০ শতাংশ।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আমানত-ঋণের সুদ হার নিদির্ষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ঠিক হয় ক্রেডিট কার্ড ছাড়া যেকোনো ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৯ শতাংশ, আর আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৬ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতির চেয়ে আমানতের সুদহার বেশি রাখার আদেশ না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাধারণ সম্পাদক দ্য সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করলে সুদহার বেড়ে যেত। কিন্তু এক লাখ টাকা দেখা যাচ্ছে ডিপোজিট না করে সেভিংস অ্যকাউন্টে রাখা হচ্ছে। টাকা ব্যাংকে না রেখে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে।’
তিনি বলেন, ‘ফিক্সড ডিপোজিটে মানুষ টাকা না রেখে টাকা শেয়ারবাজারে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির সমান সুদ ফিক্সড ডিপোজিটে দেয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণে কারেন্ট ও সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। এসব অ্যাকাউন্টের কোনো নির্ধারিত মাত্রা বলে দেয়া নেই।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশ অমান্য করে মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হারে সুদ দেয়ার কারণ জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নতুন আমানতে সুদহার বাড়া শুরু হয়েছে। হঠাৎ করে এটা বেড়ে যাবে এমন নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ব্যাংকাররা মেনে চলছে।’
ব্র্যাক ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে এখন কী হারে সুদ দেয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলছি।’
তবে ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতের গড় সুদহার বিবেচনায় নিলে আহসান মনসুরের এই দাবি প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই ব্যাংকে আমানতের গড় সুদহার এখন আড়াই শতাংশের কম। মূল্যস্ফীতির হার এর চেয়ে অনেক বেশি।
কোন ব্যাংকে কত সুদ দিচ্ছে
অক্টোবর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের গড় সুদ হার ৪.০৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম সুদ হার সোনালী ব্যাংকে, ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে এই সুদহার ছিল ৩.৩৫ শতাংশ।
বিশেষায়িত কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ও প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের গড় সুদ হার ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় সুদ হার ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম সুদহার ছিল ডাচ্-বাংলায়, ১.৭২ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে এই ব্যাংকটির গড় সুদহার ছিল ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। আগস্টে এই ব্যাংকটির গড় সুদহার ছিল ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
অক্টোবরে ব্র্যাংক ব্যাংকের আমানতের গড় সুদহার ২.৩০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির গড় সুদহার ছিল ২ দশমিক ২০ শতাংশ। আগস্টে ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতের গড় সুদহার ছিল ২ দশমিক ১১ শতাংশ।
প্রাইম ব্যাংকে আমানতের গড় সুদহার ছিল ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ছিল ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে আমানতের গড় সুদহার ছিল ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে গত অক্টোবরে আমানতের গড় সুদহার বেড়ে ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির সুদহার ছিল ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আগস্টে আমানতের গড় সুদহার ছিল ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ইস্টার্ন ব্যাংকে গত অক্টোবরে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৩ দশমিক ০৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ছিল ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগস্টে আমানতের গড় সুদ ছিল ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এ ছাড়া সিটি ব্যাংকের গড় সুদ ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
তবে এত কিছুর পরও ব্যাংকে আমানত বাড়ছে। সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়ে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এর আগের বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিন্ন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৬৮ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ মঙ্গলবার ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ৪৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকেই ডলার কিনছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ডলার কেনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ দফায় ডলার কেনে। ১৩ জুলাই ১৮ ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১১ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম হঠাৎ করে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া- দুটোই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বিদেশি দায় পরিশোধও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ডলারের তীব্র চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদাও বাড়তে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যবিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে ৩ টাকা। নতুন মূল্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৭৩ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়েছে ।
এছাড়া, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারে ১৩ পয়সা কমিয়ে ৫৮ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি খাতে ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেখান থেকে বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হবে।
তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরামকোর প্রপেন ও বিউটেনের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে এ দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের বড় বাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভারত থেকে টমেটো বোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টমেটো আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮ টন টমেটো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো আমদানি করতে শুল্কসহ খরচ গুণতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ টমেটো আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার হিলি বন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ণ করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এই বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি করা হয়েছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজতে থাকায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে পৌঁছেছে।
এশিয়ায় প্রাথমিক লেনদেনের সময় মূল্যবান ধাতুটি প্রতি আউন্স ৩,৫০১ দশমিক ৫৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে এর আগের রেকর্ড ৩,৫০০ দশমিক ১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মার্কিন ডলার ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নেওয়ায় সোনার দামের এই দরপতন ঘটেছে।
মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির একটি মূল্য সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে পিছিয়ে এসেছে। একই সময়ে, ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শ্রম দিবসের জন্য সোমবার ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, তখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ডলার মিশ্র লেনদেন করেছে।
বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগে ফেডের গভর্নরকে তিরস্কার করার পর ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুক পদত্যাগ না করলে, তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন।
মার্কিন আপিল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক শুল্ক, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেগুলো অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পরও এই রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
তবে আদালত আপাতত এই ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য সময় পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কমিউনিটি ব্যাংকের স্টার্টআপ রিফাইন্যান্স স্কিমের অধীনে অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখার উপস্থিতিতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসএমইএসপিডি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কিমিয়া সাআদত পারস্পরিক অংশীদারত্বমূলক এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে- বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হাফিয়া তাজরিয়ান, যুগ্ম পরিচালক মো. নুরুল কাওসার সাঈফ এবং কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মোঃ আরিফুল ইসলাম, হেড অব এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শরিফ হাসান মামুনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ব্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় ১০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয় ছিল ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে, সামগ্রিক এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টে অর্জিত ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য