কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়ার দেড় শতাধিক জলদস্যু ২০১৮-১৯ সালে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এ আত্মসমর্পণের মূল লক্ষ্য ছিল দ্বীপ উপজেলায় শান্তি ফিরিয়ে আনা। আর অপরাধ জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসার বার্তা ছিল জলদস্যুদের।
তবে বছর দুয়েক না যেতেই এসব এলাকায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। আত্মসমর্পণ করা সেই দস্যুদের একটি বড় অংশ ফের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়েছে। কয়েকজনের নাম ফের উঠেছে পুলিশের তালিকাতে।
অভিযোগ, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ইন্ধনে নতুন করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি বাহিনী। এসব বাহিনীর অর্থের জোগানও দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক মাসে প্রাণ গেছে আত্মসমর্পণ করা দুই জলদস্যুর। এসব হত্যাকাণ্ডে নাম এসেছে আরেক জলদস্যু গ্রুপের। তারাও ২০১৮ সালে অস্ত্র জমা দিয়েছিল।
২০১৯ সালে ৯৬ জলদস্যুর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শান্তি ফিরেছিল মহেশখালীর আলোচিত ইউনিয়ন কালারমারছড়ায়। সেই ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি তারেক বিন ওসমান শরীফ। নির্বাচিত হওয়ার পর সন্ত্রাস দমনে সুনাম কুড়িয়েছেন। তবে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকেও পড়তে হচ্ছে সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে।
তিনি বলেন, ‘ইউপি নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক একটি গোষ্ঠী আত্মস্বীকৃত দস্যুদের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ, যার প্রমাণ মিলেছে গেল এক মাসে দুই দস্যু হত্যাকাণ্ডে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দস্যুরাই এসব তথ্য জানিয়েছে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, শুধু কালারমারছড়া ও কুতুবজোম ইউনিয়ন ঘিরে নতুন করে গড়ে উঠেছে রশিদ আহমদ গ্রুপ, আব্বাস গ্রুপ, হশশাবর গ্রুপ, জিয়াউর রহমান জিয়া গ্রুপ ও বদাইয়া গ্রুপ। এসব দলের সদস্যদের মধ্যে অর্ধশতাধিক আত্মসমর্পণ করা দস্যু, যারা প্রকাশ্যে বা গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ১০ থেকে ১২ জনের নাম এরই মধ্যে পুলিশের তালিকাতেও উঠেছে।
‘আলোর পথে ফেরার কথা বলে অনেকে এখনও সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত। নিয়মিত অপরাধ সংঘটনের পাশাপাশি নিজের সহযোদ্ধাকেও হত্যা করতে দ্বিধা করছে না। আতঙ্ক আর ঘুমহীন রাত কাটে এখন আমাদের।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ কক্সবাজার অঞ্চলে ১৮৭টি অভিযান চালিয়ে ২০৮ জলদস্যু ও অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। জব্দ করা হয় দেশি-বিদেশি ৬৮২টি অস্ত্র এবং ৭ হাজার ৯৯০টি গুলি। র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওই সময় ১১ দস্যু নিহত হন।
এরপর সাংবাদিক ও পুলিশের মধ্যস্থতায় মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলের ছয়টি বাহিনীর ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। তারা তখন জমা দিয়েছিলেন ৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৭ হাজার ৬৩৭টি গুলি।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে পুলিশের মধ্যস্থতায় আত্মসমর্পণ করে ১২ বাহিনীর ৯৬ জলদস্যু। তারা জমা দেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৫৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮৪ রাউন্ড গুলি, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন যন্ত্র।
এরপর প্রায় দুই বছর দস্যুদের নিয়ে তেমন কোনো কথা শোনা যায়নি। তবে গত ১ জুলাই রাতে মহেশখালীর মাতারবাড়ির কোহেলিয়া নদীতে পাওয়া যায় আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু একরামুল হকের মরদেহ। ময়নাতদন্তে তার শরীরে মিলে আঘাতের চিহ্ন।
ওই সময় একরামের মামা ও ইউপি সদস্য লিয়াকত আলী দাবি করেছিলেন, একরাম আত্মসমর্পণ করায় ক্ষিপ্ত ছিলেন দলের সদস্যরা। কবির ডাকাত নামের একজনকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করেছিলেন একরাম। তার দলের লোকজনই একরামকে হত্যা করেছে।
সবশেষ ৫ নভেম্বর রাতে মহেশখালীর কালারমারছড়ায় আলাউদ্দিন নামের আরেক জলদস্যুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলেন আলাউদ্দিন।
ওই হত্যাকাণ্ডে পুলিশ ও র্যাব আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু গ্রুপ আয়ুব আলী বাহিনীর প্রধান আয়ুব আলীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। আয়ুব আলীর দেয়া তথ্যে জব্দ করা হয় ১০টি অস্ত্র ও গুলি। তাদের কাছ থেকেই রাজনৈতিক ইন্ধনে নতুন করে সন্ত্রাসী দল গড়ার বিষয়টি জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রথম ধাপে ৪৩ জলদস্যুর আত্মসমর্পণে মধ্যস্থতাকারী ও যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মহসিনুল হাকিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুন্দরবনেও জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের যেভাবে নজরদারিতে রাখা হয়েছে, মহেশখালীর ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। যার ফলে রাজনৈতিক মদদে হয়তো তারা আবারও ভুল পথে ফিরে যাচ্ছে।
‘আত্মসমর্পণের শুরুতে বিষয়টি আমরা বুঝেছিলাম। কারণ সুন্দরবনে শুধু জলদস্যুতা ছিল, কিন্তু মহেশখালীতে তার ভিন্ন চিত্র ছিল। মূলত এখানকার জলদস্যুরা রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত ছিল।’
আরেক মধ্যস্থতাকারী সাংবাদিক আকরাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক ইন্ধনের বিষয়টি সামনে এলেও মূলত তারা গোষ্ঠীগত বিরোধে সন্ত্রাসবাদে ফিরছে বলে মনে হচ্ছে। আমি নিজেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
‘আত্মস্বীকৃতদের অনেকে এলাকায় ফিরে আধিপত্য করতে চাচ্ছেন। যার ফলে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি, যারাই অন্ধকার জগতে পুনরায় ফিরতে চায়, তাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।’
আত্মসমর্পণের মধ্যস্থতায় থাকা র্যাব-৭-এর তৎকালীন কক্সবাজার কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশির ভাগ দস্যু এখনও নিজেদের ধরে রেখেছেন স্বাভাবিক জীবনে, কিন্তু কয়েকজন নিজেদের অপরাধে জড়িয়ে ফেলেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
‘আলোর পথে ফেরা কেউ সন্ত্রাসবাদে যেতে পারবে না, এটা তাদের শর্ত দেয়া হয়েছিল। আমরা তাদের বিষয়ে কাজ করছি।’
কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য