কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়ার দেড় শতাধিক জলদস্যু ২০১৮-১৯ সালে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এ আত্মসমর্পণের মূল লক্ষ্য ছিল দ্বীপ উপজেলায় শান্তি ফিরিয়ে আনা। আর অপরাধ জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসার বার্তা ছিল জলদস্যুদের।
তবে বছর দুয়েক না যেতেই এসব এলাকায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। আত্মসমর্পণ করা সেই দস্যুদের একটি বড় অংশ ফের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়েছে। কয়েকজনের নাম ফের উঠেছে পুলিশের তালিকাতে।
অভিযোগ, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ইন্ধনে নতুন করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি বাহিনী। এসব বাহিনীর অর্থের জোগানও দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক মাসে প্রাণ গেছে আত্মসমর্পণ করা দুই জলদস্যুর। এসব হত্যাকাণ্ডে নাম এসেছে আরেক জলদস্যু গ্রুপের। তারাও ২০১৮ সালে অস্ত্র জমা দিয়েছিল।
২০১৯ সালে ৯৬ জলদস্যুর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শান্তি ফিরেছিল মহেশখালীর আলোচিত ইউনিয়ন কালারমারছড়ায়। সেই ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি তারেক বিন ওসমান শরীফ। নির্বাচিত হওয়ার পর সন্ত্রাস দমনে সুনাম কুড়িয়েছেন। তবে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকেও পড়তে হচ্ছে সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে।
তিনি বলেন, ‘ইউপি নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক একটি গোষ্ঠী আত্মস্বীকৃত দস্যুদের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ, যার প্রমাণ মিলেছে গেল এক মাসে দুই দস্যু হত্যাকাণ্ডে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দস্যুরাই এসব তথ্য জানিয়েছে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, শুধু কালারমারছড়া ও কুতুবজোম ইউনিয়ন ঘিরে নতুন করে গড়ে উঠেছে রশিদ আহমদ গ্রুপ, আব্বাস গ্রুপ, হশশাবর গ্রুপ, জিয়াউর রহমান জিয়া গ্রুপ ও বদাইয়া গ্রুপ। এসব দলের সদস্যদের মধ্যে অর্ধশতাধিক আত্মসমর্পণ করা দস্যু, যারা প্রকাশ্যে বা গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ১০ থেকে ১২ জনের নাম এরই মধ্যে পুলিশের তালিকাতেও উঠেছে।
‘আলোর পথে ফেরার কথা বলে অনেকে এখনও সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত। নিয়মিত অপরাধ সংঘটনের পাশাপাশি নিজের সহযোদ্ধাকেও হত্যা করতে দ্বিধা করছে না। আতঙ্ক আর ঘুমহীন রাত কাটে এখন আমাদের।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ কক্সবাজার অঞ্চলে ১৮৭টি অভিযান চালিয়ে ২০৮ জলদস্যু ও অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। জব্দ করা হয় দেশি-বিদেশি ৬৮২টি অস্ত্র এবং ৭ হাজার ৯৯০টি গুলি। র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওই সময় ১১ দস্যু নিহত হন।
এরপর সাংবাদিক ও পুলিশের মধ্যস্থতায় মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলের ছয়টি বাহিনীর ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। তারা তখন জমা দিয়েছিলেন ৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৭ হাজার ৬৩৭টি গুলি।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে পুলিশের মধ্যস্থতায় আত্মসমর্পণ করে ১২ বাহিনীর ৯৬ জলদস্যু। তারা জমা দেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৫৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮৪ রাউন্ড গুলি, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন যন্ত্র।
এরপর প্রায় দুই বছর দস্যুদের নিয়ে তেমন কোনো কথা শোনা যায়নি। তবে গত ১ জুলাই রাতে মহেশখালীর মাতারবাড়ির কোহেলিয়া নদীতে পাওয়া যায় আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু একরামুল হকের মরদেহ। ময়নাতদন্তে তার শরীরে মিলে আঘাতের চিহ্ন।
ওই সময় একরামের মামা ও ইউপি সদস্য লিয়াকত আলী দাবি করেছিলেন, একরাম আত্মসমর্পণ করায় ক্ষিপ্ত ছিলেন দলের সদস্যরা। কবির ডাকাত নামের একজনকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করেছিলেন একরাম। তার দলের লোকজনই একরামকে হত্যা করেছে।
সবশেষ ৫ নভেম্বর রাতে মহেশখালীর কালারমারছড়ায় আলাউদ্দিন নামের আরেক জলদস্যুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলেন আলাউদ্দিন।
ওই হত্যাকাণ্ডে পুলিশ ও র্যাব আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু গ্রুপ আয়ুব আলী বাহিনীর প্রধান আয়ুব আলীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। আয়ুব আলীর দেয়া তথ্যে জব্দ করা হয় ১০টি অস্ত্র ও গুলি। তাদের কাছ থেকেই রাজনৈতিক ইন্ধনে নতুন করে সন্ত্রাসী দল গড়ার বিষয়টি জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রথম ধাপে ৪৩ জলদস্যুর আত্মসমর্পণে মধ্যস্থতাকারী ও যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মহসিনুল হাকিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুন্দরবনেও জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের যেভাবে নজরদারিতে রাখা হয়েছে, মহেশখালীর ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। যার ফলে রাজনৈতিক মদদে হয়তো তারা আবারও ভুল পথে ফিরে যাচ্ছে।
‘আত্মসমর্পণের শুরুতে বিষয়টি আমরা বুঝেছিলাম। কারণ সুন্দরবনে শুধু জলদস্যুতা ছিল, কিন্তু মহেশখালীতে তার ভিন্ন চিত্র ছিল। মূলত এখানকার জলদস্যুরা রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত ছিল।’
আরেক মধ্যস্থতাকারী সাংবাদিক আকরাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক ইন্ধনের বিষয়টি সামনে এলেও মূলত তারা গোষ্ঠীগত বিরোধে সন্ত্রাসবাদে ফিরছে বলে মনে হচ্ছে। আমি নিজেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
‘আত্মস্বীকৃতদের অনেকে এলাকায় ফিরে আধিপত্য করতে চাচ্ছেন। যার ফলে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি, যারাই অন্ধকার জগতে পুনরায় ফিরতে চায়, তাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।’
আত্মসমর্পণের মধ্যস্থতায় থাকা র্যাব-৭-এর তৎকালীন কক্সবাজার কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশির ভাগ দস্যু এখনও নিজেদের ধরে রেখেছেন স্বাভাবিক জীবনে, কিন্তু কয়েকজন নিজেদের অপরাধে জড়িয়ে ফেলেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
‘আলোর পথে ফেরা কেউ সন্ত্রাসবাদে যেতে পারবে না, এটা তাদের শর্ত দেয়া হয়েছিল। আমরা তাদের বিষয়ে কাজ করছি।’
শেরপুরের ঝিনাইগাতীর দুটি গুচ্ছগ্রাম - গোমড়া ও কান্দুলীর বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কুরবানীর মাংস থেকে বঞ্চিত ছিল। গোমড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা এক যুগ এবং কান্দুলী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা গত ৬ বছর ধরে কুরবানীর মাংস পায়নি। তবে এবার ‘দৈনিক বাংলাদেশের খবর’ পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় সংগঠন ও দাতাদের উদ্যোগে এই দুটি গ্রামের মানুষ কোরবানির মাংস পেয়েছে।
গোমড়া গুচ্ছগ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা আঙ্গুরী বেগম (৭০) বলেন, ‘১২ বছর ধরে আমরা কোরবানির মাংসের স্বাদ পাইনি। এবার রক্তসৈনিক ফাউন্ডেশন আমাদের জন্য গরু দিয়েছে। আল্লাহ তাদের ভালো রাখুন।’
গুচ্ছগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকার অনেক গরিব মানুষ আছে যারা কোরবানি দিতে পারে না। এই উদ্যোগ আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আমরা সংগঠনটির কাছে কৃতজ্ঞ।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামের দুঃস্থ মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত ছিল। স্থানীয় সংগঠন ও দাতাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করে সবাইকে কোরবানির মাংসের আওতায় আনার চেষ্টা করব। আমাদের বিভাগীয় কমিশনার স্যারও গোসত পাঠাচ্ছেন। যদি কোনো অসহায় মানুষ কোরবানির মাংস না পেয়ে থাকে, আমরা নিশ্চিত করব যেন তারা গোসত পায়।’
পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর রক্তসৈনিক বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন সংগঠনটি বিষয়টি নজরে নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়। সংগঠনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া গোমড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য একটি গরু কোরবানির ব্যবস্থা করেন।
অন্যদিকে কান্দুলী গুচ্ছগ্রামে শাহ অলি উল্লাহ ইসলাম সেন্টার বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে এবং অরফান শেল্টার ফাউন্ডেশন, যুক্তরাজ্যের আর্থিক সহায়তায় একটি গরু কোরবানি দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, গত ৬ বছর ধরে এই গ্রামে কুরবানীর মাংস বণ্টন হয়নি। এবার দাতাদের সহযোগিতায় গ্রামবাসী মাংস পেয়ে খুশি।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ঝিনাইগাতীর দুটি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন পর কুরবানীর মাংস পেয়ে আনন্দিত। স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন কুরবানীর মাংস থেকে বঞ্চিত না হয়।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন দেখা দেয়ায় বেনাপোল চেকপোষ্টে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাচ্ছিদের। জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব স্থানে ওমিক্রন ধরনের (variant) LF.7, XFG, JN.I and NB.1.8.1 উপধরনের (Sub variant), কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশসমুহে সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এই সংক্রমণ এড়াতে দেশের সকল নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সমুহে স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মানার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মাসের ৪ জুন রোগ নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালীর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশ জারি করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় ভারতসহ বিভিন্ন সংক্রমিত দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের দেশের স্থল, নৌ বন্দর এবং বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তার বিষয়ে স্বাস্থ্য বার্তা প্রদান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবিড়ভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিকেল ডেস্কে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কর্মকর্তাদের ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের করোনার উপসর্গ আছে কিনা তা যাচাই-বাছাইসহ শরীরের তাপমাত্রা মাফতে দেখা গেছে।
ভারত ফেরত যাত্রী পরিতোষ মন্ডল জানান, দশদিন আগে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। আজ দেশে ফিরলাম। বাংলাদেশের মতো ভারতের কোথাও করোনা বা ওমিক্রনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি।
ভারত ফেরত যাত্রী সীমা রানি বলেন, একমাস চিকিৎসার পর আজ দেশে ফিরে আসলাম। ভারতের কোথাও নতুন করে করোনার প্রভাব ছড়িয়েছে শুনিনি। দেশে আসার পর দেখছি করোনার পরীক্ষা করছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, ভারতে জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে ভারতের কিছু কিছু স্থানে ওমিক্রন ধরনের (variant) LF.7, XFG, JN.I and NB.1.8.1 উপধরন (Sub variant) সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে করোনার এ ধরনটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সতর্কতার জন্য ভারত ফেরত প্রত্যেক যাত্রীকে আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। আমাদেরকে পরিচালক স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন যদি কারও শরীরে করোনা বা ওমিক্রনের উপধারার উপসর্গ পাওয়া যায় তাহলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন দেখা দেয়ায় বেনাপোল চেকপোষ্টে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাচ্ছিদের। জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব স্থানে ওমিক্রন ধরনের (variant) LF.7, XFG, JN.I and NB.1.8.1 উপধরনের (Sub variant), কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশসমুহে সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এই সংক্রমণ এড়াতে দেশের সকল নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সমুহে স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মানার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মাসের ৪ জুন রোগ নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালীর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশ জারি করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় ভারতসহ বিভিন্ন সংক্রমিত দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের দেশের স্থল, নৌ বন্দর এবং বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তার বিষয়ে স্বাস্থ্য বার্তা প্রদান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবিড়ভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিকেল ডেস্কে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কর্মকর্তাদের ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের করোনার উপসর্গ আছে কিনা তা যাচাই-বাছাইসহ শরীরের তাপমাত্রা মাফতে দেখা গেছে।
ভারত ফেরত যাত্রী পরিতোষ মন্ডল জানান, দশদিন আগে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। আজ দেশে ফিরলাম। বাংলাদেশের মতো ভারতের কোথাও করোনা বা ওমিক্রনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি।
ভারত ফেরত যাত্রী সীমা রানি বলেন, একমাস চিকিৎসার পর আজ দেশে ফিরে আসলাম। ভারতের কোথাও নতুন করে করোনার প্রভাব ছড়িয়েছে শুনিনি। দেশে আসার পর দেখছি করোনার পরীক্ষা করছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, ভারতে জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে ভারতের কিছু কিছু স্থানে ওমিক্রন ধরনের (variant) LF.7, XFG, JN.I and NB.1.8.1 উপধরন (Sub variant) সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে করোনার এ ধরনটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সতর্কতার জন্য ভারত ফেরত প্রত্যেক যাত্রীকে আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। আমাদেরকে পরিচালক স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন যদি কারও শরীরে করোনা বা ওমিক্রনের উপধারার উপসর্গ পাওয়া যায় তাহলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে চট্টগ্রাম নগরীতে জমে উঠেছে পশুর হাট। এবার চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর।
টানা ছয়দিন বৃষ্টির পর বুধবার সকাল থেকে তা কিছুটা কমায় হাটমুখো হয়েছেন ক্রেতারা। তবে এর মাঝেও থেমে থেমে চলা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ভোগাচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
কাদা আর গরুর হাটের আবর্জনা মাড়িয়ে হাটগুলোতে চলছে দরদাম। জমে উঠেছে বেচাকেনাও। ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা এবার সবচেয়ে বেশি।
বুধবার বিকালে নগরীর বিবিরহাট গরুর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, এই হাটে বেশিরভাগ গরু এসেছে উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও গরু নিয়ে হাটে এসেছেন ব্যাপারিরা।
জামালপুর থেকে তিনদিন আগে এই হাটে আসা বিক্রেতা সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২২টা গরু নিয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত চাইরটা বেচছি। লোকজন দাম বলে কম।
“দুই লাখ ২০ হাজার টাকা একটা গরুর দাম চাইলাম। কাস্টমাররা ১ লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত বলছে। এই দামে গরু বেচা সম্ভব না। আরেকটু বাড়তি পেলে বিক্রি করতাম।”
তবে পাল্টা অভিযোগ ক্রেতাদের; বলছেন- বিক্রেতারা দাম ছাড়ছে না; ঈদের আগের দুই দিনের বাজার পরিস্থিতি দেখার অপেক্ষায় বিক্রেতারা।
এই হাট থেকে দেড় লাখ টাকায় একটি গরু কিনে ফেরার পথে নগরীর কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বুধবার বলেন, “গরুর দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে খুব বেশি না।
“বাজারে অনেক গরু আছে। আজকে একটা কিনলাম। কালকে বাজার দেখে আরেকটা কিনব।”
বুধবার নগরীর আতুরার ডিপো থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিবিরহাটে গরু কিনতে আসা আকবর হোসেন বলেন, “একটার সময় হাটে আসছি। ৩ ঘণ্টা ঘুরে বেশ কয়েকটা গরু দেখলাম। বাজারে গরু আছে পর্যাপ্ত। কিন্তু ব্যাপারিরা দাম ছাড়ছে না।
“তারা মনে করছে কাল-পরশু দুইদিন সময় হাতে আছে। আমরাও অপেক্ষা করব। কালকে দেখেশুনে কিনব।”
বুধবার দুপুরে গিয়ে নগরীর সবচেয়ে বড় কোরবানি পশুর হাট সাগরিকা গরুর বাজারেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছে ব্যাপারিরা।
সাগরিকা গরুর বাজারে কুষ্টিয়া থেকে ৪৫টি গরু নিয়ে আসা সিরাজুল আলম বলেন, “চারদিন হলো আসছি। আমাদের বেশিরভাগই বড় গরু। বৃষ্টি বেশি থাকায় এতদিন হাটে লোকজন আসেনি।
“কালকে আর আজকে মিলে মাঝারি সাইজের ৫টা গরু বেচছি। বড় গরুর পার্টি আজকে কেবল আসা শুরু করছে। তারা দর দেখতেছে। কালকে থেকে হয়ত কিনবে।”
সাগরিকা গরু বাজারের হাসিল গ্রহণকারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “হাটে প্রচুর গরু আছে। এতদিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় লোকজন খুব একটা আসেনি। আজকে আসতেছে। বেচাকেনাও হচ্ছে। শহরের লোকজন কোরবানের ২-৩ দিন আগেই গরু কেনে।
“আমাদের হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিমও আছে। এখন পর্যন্ত সব ভালোভাবে চলছে।”
বিবিরহাট গরু বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বুধবার বিকালে একটি দলকে টহল দিতে দেখা গেছে। তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। হাটের বাইরেও সেনা সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।
এ হাটে গরুর চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি দল কাজ করছে।
এই দলের সদস্য সুব্রমনিয়ম বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দূর-দূরান্ত থেকে গরুগুলো দীর্ঘ সময় ধরে গাড়িতে করে এখানে আনা হয়। পাশাপাশি গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি পড়েছে।
“একারণে কিছু কিছু গরুর শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এরকম গরু চিহ্নিত হলে জ্বরের ওষুধ ও অ্যান্টি হিস্টামিন ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০টি গরু নিয়ে গত ২৯ মে বিবিরহাটে এসেছেন আবদুস সামাদ ও তার সঙ্গীরা। সেখানে গরুগুলোর পাশেই খালি জায়গায় নিজেদের জন্য খাবার রান্নার কাজও চলছিল।
আবদুস সামাদ বলেন, “এতদিন বৃষ্টিতে খুব কষ্ট পাইছি। কালকে থেকে বিক্রি শুরু হইছে। আজ পর্যন্ত ১১টা গরু বিক্রি করছি। বাকি গরু আশা করি, কালকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।”
হাটের বাইরে গরু সাজানোর গলার মালা বিক্রি বাড়ায় খুশি বিক্রেতা মো. শফিও খুশি বেচাকেনা জমে ওঠায়। দেড়শ থেকে তিনশ টাকার মধ্যে মালা বিক্রি করছেন তিনি।
গরুর সাজসজ্জা সামগ্রী বিক্রেতা মো. শফি বলেন, “গতকাল প্রায় ১০ হাজার টাকার মাল বেচেছি। আজকেও বিক্রি ভালো। বৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে মানুষ হাটে কম আসে।”
বিবিরহাট বাজার লাগোয়া বাইরের গলিতে বিক্রি হচ্ছে ছাগল। সাড়ে ১৯ হাজার টাকায় একটি ছাগল কেনা হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা মো. কামাল বলেন, “বাড়ি যাবার পথে ছাগল কিনে নিলাম। গরু কিনব গ্রামে খামারির বাড়ি থেকে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুর সংখ্যা মোট ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৬২টি। জেলায় এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। সে হিসাবে জেলায় এবার ৩৫ হাজার পশুর ঘাটতি আছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগরীর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৪০ হাজারের বেশি গরু এসেছে আজকে পর্যন্ত। আরো আসতে পারে। কাজেই এবার গরুর স্বল্পতা হবে না।
“গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম সামান্য বেড়েছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। হাটগুলোতে বিক্রিও শুরু হয়েছে। হাটে আসা গরু-মহিষে তেমন কোনো রোগের প্রার্দুভাব দেখা যায়নি।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২৪ সালে জেলায় কোরবানি হয়েছিল ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতালে উন্নত জাতের ঘাস চাষ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় খামারীকে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর ‘‘শীর্ষক” প্রকল্পেরে আওতায় দৌলতপুর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন থেকে প্রতি ইউনিয়নে ২জন করে নির্বাচিত ২৮ জন খামারীকে উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের ঘাস চাষ প্রর্দশনী প্লট স্থাপন বাবদ জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সরকারি এ বরাদ্দকৃত অর্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খামারীদের প্রদান করেন জনপ্রতি ৪৪০০ টাকা। এতে খামারিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের খামারী ময়না খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কত টাকা বরাদ্দ সেটা ঠিক জানিনা, তবে গত বছর ও এবছর ৪৪০০ টাকা করে মোট ৮৮০০ টাকা আমাকে দিয়েছে।
মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামের খামারী জোয়াদুর রহমানসহ একাধিক খামারীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের বরাদ্দ ৫০০০ টাকা থাকলেও বিভিন্ন খাত দেখিয়ে গত বছর ও এবছর ৪৪০০ টাকা করে ৮৮০০ টাকা সকলকে দিয়েছে। কেন কম দিলো সেটা আমরা জানিনা।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কমিউনিটি এক্সট্রেনশন এজেন্ট শাহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানিনা স্যার যা বলেছে আমি তাই করেছি, আপনি স্যারের সাথে কথা বলেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ মাহমুদুল ইসলাম খামারীদের প্রাপ্য অর্থ কম দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অডিট ও মাঠ পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য টাকা কম দেয়া হয়েছে। এসকল খরচ তো আমি পকেট থেকে দেবনা। তাই খামারীদের ৬০০ টাকা করে কম দেয়া হয়েছে। আপনি অফিসে আসেন কথা বলি।
ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা উজানি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। এতে করে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে নতুন করে বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নদী দুটির চারটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বইছে ১৩ দশমিক ৬২ মিটার উচ্চতায়। যেখানে বিপৎসীমা হচ্ছে ১২ দশমিক ৭৫ মিটার। অমলশিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বইছে ১৭ দশমিক ২৫ মিটার উচ্চতায়, যেখানে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০ মিটার। শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি ১৩ দশমিক ৫১ মিটার উচ্চতায় বইছে, যেখানে বিপৎসীমার চেয়ে ০ দশমিক ৪৬ মিটার ওপরে রয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছে ৯ দশমিক ৭৯ মিটার উচ্চতায় যা বিপৎসীমার চেয়ে ০ দশমিক ৩৪ মিটার বেশি।
পাউবো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত পানি এবং টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদনদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে উজানের ঢলের প্রভাব বেশি পড়ছে সীমান্তবর্তী পয়েন্টগুলোতে।
এদিকে, জেলার ধলাই নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো—সারি, ডাউকি ও সারি-গোয়াইন নদ-নদীর পানি কমতির দিকে আছে।
জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ভারতের দিক থেকে হঠাৎ করে ঢল নামায় কুশিয়ারা নদীর পানি খুব দ্রুত বাড়ছে। নদীর পাড়ঘেঁষে অনেক ঘরবাড়ি আছে, এখনই পানি না নামলে কয়েকদিনের মধ্যেই প্লাবিত হওয়ার ভয় আছে। আগে থেকে যদি সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। নিচু এলাকা ও প্লাবনপ্রবণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মোকাবিলায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। প্রত্যন্ত ও প্লাবনপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
সুন্দরবন বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকায় প্রায়ই বাঘ চলে আসে। সম্প্রতি এই ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। তাই লোকালয়ে বাঘের প্রবেশ রুখতে বাঘ প্রকল্পের বিস্তীর্ণ অংশ ঘেরা রয়েছে জালের বেড়া দিয়ে। তবে বহু অংশে জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রয়েছে। আবার বেশ কিছু জায়গায় এখনও দেওয়া হয়নি জালের বেড়া। এবার বন্যপ্রাণী বিশেষ করে বাঘের প্রবেশ থেকে বাসিন্দাদের সুরক্ষিত করতে পুরনো নেট পরিবর্তন করে নতুন নেট লাগানো হবে। একইসঙ্গে, এখনও পর্যন্ত যেসব এলাকা অরক্ষিত রয়েছে সেগুলি প্রথমবার জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হবে।
বাঘ প্রকল্পের দুটি রেঞ্জে ১০০ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে জালের বেড়া রয়েছে। এই পুরো এলাকা জুড়ে নতুন জাল লাগানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন আধিকারিকরা। জুলাইয়ের শেষ থেকে তাঁরা এই কাজ করতে চাইছেন। সে বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন আধিকারিকরা। এই অবস্থায় কথাটা যার প্রয়োজন? কত খরচ পড়বে? তার হিসেবে চলছে বলে জানা গিয়েছে। সেই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বন বিভাগের কাছে প্রস্তাব দেবেন আধিকারিকরা। এবিষয়ে বাঘ প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন জানিয়েছেন, এ নিয়ে এখনও পরিকল্পনা চলছে। জুলাইয়ের শেষ থেকে এই কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে আধিকারিকরা জানাচ্ছেন। প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে সুন্দরবনে। যার ফলে বিভিন্ন অংশে জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আর সেই সুযোগে বার বার লোকালয়ে এসে পড়ে বাঘ। তাছাড়া, বহুদিন ধরে নতুন জল লাগানো হয়নি। অনেক জায়গায় জলের বেড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এসব কারণেই নতুন জাল লাগাতে উদ্যোগী হয়েছেন বা প্রকল্পের আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, বিশেষ করে গত বছর সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামগুলিতে বাঘের আনাগোনা বেড়েছিল। এইসবের কারণে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। সে কথা মাথায় রেখেই ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় কোনও বনাঞ্চল রাখতে চাইছেন না আধিকারিকরা। তাই বাসিন্দাদের সুরক্ষায় যাতে কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত জালের বেড়ার সুযোগে বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ না করতে পারে তারজন্য নতুন জল টাঙানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন বাঘ প্রকল্পের আধিকারিকরা।
মন্তব্য