বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনের পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতে হয়েছে সমাবেশ। বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ বিভাগীয় শহরে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল সমাবেশ ঘিরে।
সিলেট নগরীর রেজিস্টারি মাঠে মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সমাবেশ শুরুর পর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা বিভাগে বিভাগে সমাবেশ না ডেকে ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকেন। আমরা ঢাকা অচল করে দেব। ৯ মাস লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। মাসখানেক লড়াই করতে পারলেই এই সরকারের পতন ঘটাতে পারব।’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আইনি বাধা নয়, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় সবচেয়ে বড় বাধা শেখ হাসিনা। তাকে সরাতে হবে। না হলে দেশ ও খালেদা জিয়াকে বাঁচানো যাবে না।’
সমাবেশে জাতীয় কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান বলেন, ‘লিভার সিরোসিস সাধারণত পুরুষ মানুষের হয়। বেশি মদ খেলে লিভার সিরোসিস হয়, কিন্তু খালেদা জিয়া তো দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। তবে কি সরকার তার খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে? বিদেশে চিকিৎসায় গেলে এসব ধরা পড়ে যেতে পারে, তাই সরকার তাকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না।’
সমাবেশে দেখা উপস্থিত আছেন ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরসহ দলের কেন্দ্রীয় ও সিলেট জেলাসহ বিভাগের অন্য জেলার নেতারা। এর সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী।
প্রায় একই সময় রাজশাহী মহানগরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হয় সমাবেশ। তাতে যোগ দিতে আশপাশের জেলার নেতা-কর্মীরা দুপুর থেকে সেখানে জড়ো হন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আজকে যদি খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটে, তবে দেশে যে পরিস্থিত ঘটবে, সেই পরিস্থিতি আমরা দমাতে পারব না। দেশ একটা অরাজক পরিস্থিতির দিকে চলে যাবে। সে জন্য দেশের শান্তির জন্য জনগণের শান্তির জন্য অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দেন, সেই ব্যবস্থা করবেন।
‘আজকে এই সরকারকে বলতে চাই, এই সরকারে পতনের আন্দোলন এখনও আমরা ঘোষণা করি নাই। এই পতনের আন্দোলনের ঘোষণা আমার করতে চাই... এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে মাথা উঁচু করে এগিয়েছি, সেই ধরনের একটি আন্দোলনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা করব যদি আল্লাহ চায়।’
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।
চট্টগ্রাম নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকার কেবি কনভেনশন হলে দুপুরে সমাবেশ শুরুর পরপরই ভেঙে পড়ে মঞ্চ। সে সময় মঞ্চে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম) মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগরের আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করসহ অন্য নেতারা।
তবে সঙ্গে সঙ্গে নেমে যাওয়ায় কেউ আহত হননি। মঞ্চ ঠিকঠাক করে মিনিট দশেক পর আবার সমাবেশ শুরু হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমাবেশে বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কোনো দোষ করেননি, তিনি দোষী নন। তাকে গায়ের জোরে সরকারের নির্দেশে একটি ভুয়া মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে।’
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা-১ পাঠ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের মন্ত্রীরা এই আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। এই আইনে নির্বাহী আদেশে শর্ত দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে সাময়িকভাবে সাজা মওকুফ করেছেন। এই আইনের প্রথমেই আছে বিনা শর্তে সাজা মওকুফ করা যাবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য যেখানে উইদআউট কন্ডিশন আছে, সেখানে কন্ডিশন দিয়ে দিয়েছেন।
‘আজকে বলছেন আর কিছু করার নাই, আমরা বলতে চাই এই ৪০১-এর যেটা বিনা শর্তের কথা আছে, সেটা আপনি প্রয়োগ করেন। এই আদেশকে যদি সংশোধন করে বিনা শর্ত সংশোধন করা হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে কোনো বাধা নেই। তাই আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আইনের কোনো বাধা নেই, বাধা হচ্ছে সরকারের।’
সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস. এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমসহ অনেকে।
খুলনা নগরীর কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সমাবেশ সফল হলেও এখনও দাবি আদায় হয়নি। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে নামতে হবে। ঢাকার আনাচকানাচের মানুষ আজ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া একা কোনো ব্যক্তি নয়, তিনি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক আজব দেশে বসবাস করি, যেখানে মানুষের চিকিৎসার জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়... ক্ষমতা থেকে নেমে গেলে কেউ থাকবে না, সবাই পালিয়ে যাবে। খালেদা জিয়ার বিষয়ে দুঃসংবাদ এলে কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। না হলে জনগণ আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।’
খুলনার এই সমাবেশে ছিলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানসহ বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা।
এর আগে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল নিয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে আসেন।
রংপুরে নগরীর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সেখানকার সমাবেশ শুরু হয় বিকেলে। দুপুর থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। বিভিন্ন স্লোগান ও কাফনের কাপড় পরে সমাবেশে যোগ দেন অনেকে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সেখানে সরকারে উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা নেমেছি। রাজপথে নেমেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার মা, গণতন্ত্রের মা, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মানুষ বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা করা হবে না, ততক্ষণ আমরা আর ঘরে ফিরে যেতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে জিয়ার সৈনিকরা, খালেদা জিয়ার সৈনিকরা রাজপথে নেমেছে। আমাদের প্রোগ্রাম ৫ তারিখ পর্যন্ত আছে, আমরা আর ঘরে ফিরে যাব না।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি যুবক ভাইদের বলছি, পাকিস্তান গুলি করে যা করতে পারে নাই, এবার কাফনের কাপড় পরে বাংলাদেশের পুলিশের গুলি খাওয়ার জন্য পিঠ পেতে থাকতে হবে। তোমরা প্রস্তুত হও...।’
নেত্রীর মুক্তির দাবি নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ করে বিএনপি।
বেলা আড়াইটার দিকে গঙ্গাদাস গুহ রোডে কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল নেতা-কর্মী।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবেশে ছিলেন। এর সভাপতিত্ব করছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম শফিকুল ইসলাম।
সমাবেশে যোগ দেন বিশেষ অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম ও ওয়ারেস আলী মামুন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাজশাহীর আহসান হাবীব অপু, সিলেটের দেবাশীষ দেবু, চট্টগ্রামের আরাফাত বিন হাসান, রংপুরের রফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহের কামরুজ্জামান মিন্টু।
আরও পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বালুচরে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে প্রবাসীকে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
উপজেলার চরপানিয়া এলাকায় শনিবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন নিহতের স্ত্রী-সন্তানসহ শতাধিক মানুষ।
পরিবারের এক সদস্যের ভাষ্য, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় সৌদি আরব প্রবাসী মুজিবুরকে (৪৫)। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও ঘটনায় জড়িত খাসকান্দি এলাকার জহির হোসেনকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। জহির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিতে হবে।
চরপানিয়া এলাকার একটি ক্ষেত থেকে গত ১০ মার্চ প্রবাসী মুজিবুরের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় অভিযুক্ত জহির হোসেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গাড়ির চাপায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওডালা এলাকায় শনিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার খেজুরা এলাকার সুরেশ ডাকুয়া (৩৫) ও তার ছেলে লোকেশ ডাকুয়া (৯)। এ ঘটনায় আহত লোকেশ ডাকুয়ার মা নিপু রায় (৩০) বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতে স্বামী-সন্তানসহ নারায়ণগঞ্জে ‘বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী’ মন্দিরে পূজা করতে যান তারা। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বামী স্ত্রী ও সন্তান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওঢালা এলাকা পার হচ্ছিলেন। এ সময় একটি গাড়ি তাদের চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় তিনজনকে স্থানীয়রা একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে লোকেশকে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। সুরেশ ও নিপু রায়কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে সুরেশ ডাকুয়ার মৃত্যু হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক বলেন, ‘নিপু রায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। নিহত দুইজনের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলাসহ গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে ১৯৭১ সালের অসহায় শরণার্থীদের দুর্ভোগ স্মরণে ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রায় ফুটে উঠেছে নওগাঁয় রোড ধরে ভারতে পাড়ি দেয়া শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র।
ঐতিহাসিক ২০ এপ্রিলের এ দিনে ‘রোড টু বালুরঘাট’ স্মরণ করল নওগাঁবাসী। প্রায় ৬০ মিনিটে ৩ কিলোমিটার পদযাত্রায় যুদ্ধকালীন নওগাঁ রোডের শরণার্থীদের যুদ্ধ বিভীষিকা ও অবর্ণনীয় দুর্দশা তুলে ধরা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে পাঁচ শতাধিক মানুষ নওগাঁ রোডে এ প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নেন। শহরের তাজের মোড় শহিদ মিনার পাদদেশ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মুক্ত মঞ্চ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে শরণার্থীদের প্রতীকী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা মইনুল হক দুলদুল, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যক্ষ বিন আলী পিন্টু, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সাইমা ফেরদৌসী, নাইস পারভীন, বিষ্ণু কুমার দেবনাথ, গুলশানারাসহ অনেকে।
এ সময় বক্তারা জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরোচিত অত্যাচার-নিপীড়ন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে যুদ্ধের শুরু থেকে বিশেষ করে ২০ এপ্রিল এই দিনে পায়ে হেঁটে নওগাঁর সড়ক পথে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতের বালুরঘাটে আশ্রয় নেন। চলার পথে সেই সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকের মৃত্যু হয়। সে সব শরণার্থীদের ক্লান্তি ও দুর্ভোগ স্মরণে একুশে পরিষদ নওগাঁ ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী বলেন, ‘আমরা অনেকেই একাত্তরের ইতিহাস ভুলে গেছি। ৫৩ বছরের আগে কী ঘটেছিল। লাখ লাখ মানুষ নওগাঁ শহরের ওপর দিয়ে দেশ ছেড়েছিল দেশকে মুক্ত করার জন্য। চলার পথে সে সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নওগাঁর মূল ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী এ জেলার সব তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের জানানোর লক্ষ্যেই আয়োজনটি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে জোর করে ধান কাটা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের এক উপপরিদর্শক তথা এসআইসহ চারজন আহত হয়েছেন।
উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের পলশিয়া গ্রামে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পলশিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কাজিম মন্ডল একদল সন্ত্রাসী নিয়ে একই গ্রামের সানু মিয়ার ডুব বিলের দুই বিঘা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেন। সানু মিয়া ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে গোপালপুর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম একজন কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ দেখে সস্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়।
‘তারা রামদা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথা ফেটে যায়। কনস্টেবল শফিকুল ইসলামসহ সানু মিয়ার দুই আত্মীয় আহত হয়। আহতরা সবাই গোপালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
গোপালপুর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে।’
গোপালপুর থানার ওসি ইমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। হামলার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের পটিয়ার সড়কে শুক্রবার বিকেল ও রাতে দুটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
বাস উল্টে হেলপার নিহত
পটিয়ার মনসা বাদামতলা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী একটি মিনিবাস বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে মহাসড়কের পাশে উল্টে যায়। ওই সময় বাসটির হেলপার রফিক (২৩) লাফ দিলে বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তিনি।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছেন।
অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত
উপজেলার খরনা চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
নিহত দুজন হলেন চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকার আবু বক্কর তাসিফ (১৮) ও কক্সবাজারের ঈদগাহ মধ্যম মাইজপাড়া এলাকার নুরুল আমিন (২৭)।
আহত চারজন হলেন বৈলতলীর রাকিব হোসেন (২০), মোহাম্মদ জাবেদ (১৯), মোহাম্মদ সিহাব (২২) ও চকরিয়ার অটোরিকশার চালক লিটন (৩৫)।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম অভিমুখী দ্রুতগামী মারসা পরিবহনের একটি বাস নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়রা অটোরিকশার যাত্রীদের উদ্ধার করে চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চারজনকে হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জের ছাতকের ঐতিহ্যবাহী জাউয়া বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি ধারা জারি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ এড়াতে শনিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যধারার এক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মুস্তাফা মুন্না।
আদেশে বলা হয়েছে, “যেহেতু ছাতক উপজেলাধীন ‘জাউয়া বাজার’ ইজারাকে কেন্দ্র করে বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এর ফলে আইন শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতিসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে মর্মে অফিসার ইন- চার্জ, ছাতক থানা, সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছে।
“সেহেতু সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আমি গোলাম মুস্তাফা মুন্না, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ছাতক, সুনামগঞ্জ আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ৬ ঘটিকা হতে রাত ১২ ঘটিকা পর্যন্ত জাউয়া বাজার এলাকা এবং তার আশেপাশের এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করলাম।”
আদেশ অনুযায়ী, এ সময় উক্ত এলাকায় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন, লাঠি বা দেশীয় কোনো অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন, যে কোনো ধরনের মাইকিং বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার, পাঁচ বা তার অধিক সংখ্যক ব্যক্তির একসঙ্গে চলাফেরা, সভা সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।
ঢাকার সাভারে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিকের ওপর ঝাঁঝালো রাসায়নিক নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে কলমা এলাকায় শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইকবাল হাসান ফরিদ দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক।
ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফরিদকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক ইকবাল হাসান ফরিদ বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে ঢাকা থেকে সাভারের বাসায় ফিরছিলাম। আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বাসার অদূরে অন্ধকার গলিতে পৌঁছালে পেছন থেকে একজন মুখোশধারী যুবক আমাকে নাম ধরে ডাক দেয়। ডাক শুনে দাঁড়ানোর পর মুখোশধারী দুই যুবক স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে আগামী এক মাসের মধ্যে সাভার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এলাকা ছেড়ে না গেলে সপরিবারে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় তারা।
‘এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগে পেছন থেকে তাদের একজন মরিচের গুঁড়াসদৃশ এক প্রকার ঝাঁঝালো কেমিক্যাল আমার মাথায় ও চোখে-মুখে ছিটিয়ে দেয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। ঝাঁঝালো কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেয়ার পর চোখে-মুখে ও শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা সাভারের যে দুইজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাদের কারও সঙ্গে আমার পরিচয়, যোগাযোগ কিংবা কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি হাসপাতালে অসুস্থ সাংবাদিক ফরিদকে দেখতে যায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘তদন্ত করে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য