বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনের পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতে হয়েছে সমাবেশ। বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ বিভাগীয় শহরে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল সমাবেশ ঘিরে।
সিলেট নগরীর রেজিস্টারি মাঠে মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সমাবেশ শুরুর পর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা বিভাগে বিভাগে সমাবেশ না ডেকে ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকেন। আমরা ঢাকা অচল করে দেব। ৯ মাস লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। মাসখানেক লড়াই করতে পারলেই এই সরকারের পতন ঘটাতে পারব।’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আইনি বাধা নয়, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় সবচেয়ে বড় বাধা শেখ হাসিনা। তাকে সরাতে হবে। না হলে দেশ ও খালেদা জিয়াকে বাঁচানো যাবে না।’
সমাবেশে জাতীয় কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান বলেন, ‘লিভার সিরোসিস সাধারণত পুরুষ মানুষের হয়। বেশি মদ খেলে লিভার সিরোসিস হয়, কিন্তু খালেদা জিয়া তো দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। তবে কি সরকার তার খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে? বিদেশে চিকিৎসায় গেলে এসব ধরা পড়ে যেতে পারে, তাই সরকার তাকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না।’
সমাবেশে দেখা উপস্থিত আছেন ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরসহ দলের কেন্দ্রীয় ও সিলেট জেলাসহ বিভাগের অন্য জেলার নেতারা। এর সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী।
প্রায় একই সময় রাজশাহী মহানগরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হয় সমাবেশ। তাতে যোগ দিতে আশপাশের জেলার নেতা-কর্মীরা দুপুর থেকে সেখানে জড়ো হন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আজকে যদি খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটে, তবে দেশে যে পরিস্থিত ঘটবে, সেই পরিস্থিতি আমরা দমাতে পারব না। দেশ একটা অরাজক পরিস্থিতির দিকে চলে যাবে। সে জন্য দেশের শান্তির জন্য জনগণের শান্তির জন্য অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দেন, সেই ব্যবস্থা করবেন।
‘আজকে এই সরকারকে বলতে চাই, এই সরকারে পতনের আন্দোলন এখনও আমরা ঘোষণা করি নাই। এই পতনের আন্দোলনের ঘোষণা আমার করতে চাই... এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে মাথা উঁচু করে এগিয়েছি, সেই ধরনের একটি আন্দোলনে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা করব যদি আল্লাহ চায়।’
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।
চট্টগ্রাম নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকার কেবি কনভেনশন হলে দুপুরে সমাবেশ শুরুর পরপরই ভেঙে পড়ে মঞ্চ। সে সময় মঞ্চে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম) মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগরের আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করসহ অন্য নেতারা।
তবে সঙ্গে সঙ্গে নেমে যাওয়ায় কেউ আহত হননি। মঞ্চ ঠিকঠাক করে মিনিট দশেক পর আবার সমাবেশ শুরু হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমাবেশে বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কোনো দোষ করেননি, তিনি দোষী নন। তাকে গায়ের জোরে সরকারের নির্দেশে একটি ভুয়া মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে।’
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা-১ পাঠ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের মন্ত্রীরা এই আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। এই আইনে নির্বাহী আদেশে শর্ত দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে সাময়িকভাবে সাজা মওকুফ করেছেন। এই আইনের প্রথমেই আছে বিনা শর্তে সাজা মওকুফ করা যাবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য যেখানে উইদআউট কন্ডিশন আছে, সেখানে কন্ডিশন দিয়ে দিয়েছেন।
‘আজকে বলছেন আর কিছু করার নাই, আমরা বলতে চাই এই ৪০১-এর যেটা বিনা শর্তের কথা আছে, সেটা আপনি প্রয়োগ করেন। এই আদেশকে যদি সংশোধন করে বিনা শর্ত সংশোধন করা হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে কোনো বাধা নেই। তাই আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আইনের কোনো বাধা নেই, বাধা হচ্ছে সরকারের।’
সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস. এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমসহ অনেকে।
খুলনা নগরীর কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সমাবেশ সফল হলেও এখনও দাবি আদায় হয়নি। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে নামতে হবে। ঢাকার আনাচকানাচের মানুষ আজ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া একা কোনো ব্যক্তি নয়, তিনি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক আজব দেশে বসবাস করি, যেখানে মানুষের চিকিৎসার জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়... ক্ষমতা থেকে নেমে গেলে কেউ থাকবে না, সবাই পালিয়ে যাবে। খালেদা জিয়ার বিষয়ে দুঃসংবাদ এলে কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। না হলে জনগণ আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।’
খুলনার এই সমাবেশে ছিলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানসহ বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা।
এর আগে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল নিয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে আসেন।
রংপুরে নগরীর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সেখানকার সমাবেশ শুরু হয় বিকেলে। দুপুর থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। বিভিন্ন স্লোগান ও কাফনের কাপড় পরে সমাবেশে যোগ দেন অনেকে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সেখানে সরকারে উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা নেমেছি। রাজপথে নেমেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার মা, গণতন্ত্রের মা, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মানুষ বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা করা হবে না, ততক্ষণ আমরা আর ঘরে ফিরে যেতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজকে বাংলাদেশে জিয়ার সৈনিকরা, খালেদা জিয়ার সৈনিকরা রাজপথে নেমেছে। আমাদের প্রোগ্রাম ৫ তারিখ পর্যন্ত আছে, আমরা আর ঘরে ফিরে যাব না।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি যুবক ভাইদের বলছি, পাকিস্তান গুলি করে যা করতে পারে নাই, এবার কাফনের কাপড় পরে বাংলাদেশের পুলিশের গুলি খাওয়ার জন্য পিঠ পেতে থাকতে হবে। তোমরা প্রস্তুত হও...।’
নেত্রীর মুক্তির দাবি নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ করে বিএনপি।
বেলা আড়াইটার দিকে গঙ্গাদাস গুহ রোডে কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল নেতা-কর্মী।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবেশে ছিলেন। এর সভাপতিত্ব করছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম শফিকুল ইসলাম।
সমাবেশে যোগ দেন বিশেষ অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম ও ওয়ারেস আলী মামুন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাজশাহীর আহসান হাবীব অপু, সিলেটের দেবাশীষ দেবু, চট্টগ্রামের আরাফাত বিন হাসান, রংপুরের রফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহের কামরুজ্জামান মিন্টু।
আরও পড়ুন:
চট্টগ্রাম নগরের বারেক বিল্ডিং মোড়ে ডাকাতের আস্তানায় চালানো অভিযানে দুই পুলিশ সদস্য ছুরিকাঘাতে আহতের ঘটনায় ডাকাত চক্রের মূলহোতা আরিফ হোসেন ওরফে মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও ৫০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে নগরের ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সে একজন পেশাদার অপরাধী এবং অস্ত্রসহ এলাকায় আতঙ্ক ছড়াত। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ডবলমুরিং থানার আওতাধীন বারেক বিল্ডিং মোড়ের একটি ফাঁকা প্লটে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। তখন পুলিশের একটি দল সেখানে উপস্থিত হলে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী ও ডাকাত দলের সদস্যরা তাদের ঘিরে ধরে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে চক্রের মূল হোতা আরিফ হোসেন ছুরি দিয়ে পুলিশকে আঘাত করে পালিয়ে যায়। ছুরিকাঘাতে আহত হন দুই পুলিশ সদস্য। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ওসি কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর থেকেই আরিফ হোসেন আমাদের নজরে ছিল। সে একজন পেশাদার অপরাধী এবং অস্ত্রসহ এলাকায় আতঙ্ক ছড়াত। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ ভোরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে যে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে, তা ব্যবহার করে সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি।
তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে অভিযান চলবে বলেও জানান ওসি।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মাহবুব আলম সুমন নামে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক পিয়নের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সরকারি অনুদানের কথা বলে ও প্রধান উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে তাদের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমানের কাছে পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগকারীরা হলেন- সনমান্দি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের নুরউদ্দিনের মেয়ে স্বর্ণা আক্তার, একই ইউনিয়নের গিরদান গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে তাসলিমা বেগম ও নাজিরপুর গ্রামের মুকবিল হোসেনের ছেলে জনি মিয়া।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তারের কার্যালয়ের পিয়ন মাহবুব আলম সুমন সনমান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দরিদ্র অসহায়দের নগদ দুই লাখ করে টাকা অর্থ সহায়তা দেবেন বলে প্রচার করেন। সেই অর্থ পেতে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থান ব্যাংকে ৬ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে বলে জানান। পিওনের কথা বিশ্বাস করে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মানুষ তাকে ৬ হাজার টাকা করে ব্যাংকে দেওয়ার জন্য দিয়েছেন। তবে ওই টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নাম করে তিনি আবেদনকারীদের মোবাইল ফোনে সান্ত্বনা এসএমএস দিয়েছেন। সেখানে লেখা রয়েছে আপনার অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা জমা হয়েছে। তবে বিষয়টি আবেদনকারীদের সন্দেহ হলে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থান ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে তাদের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তাছাড়া সেখানে কোনো প্রকার টাকা-পয়সা জমা হয়নি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার অনুদানের কথা বলে নগদ টাকা ছাড়াও সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩২ জনের কাছ থেকে তিনি এক থেকে দেড় লাখ, গাভী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২৬ জনের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, খাদ্য ভাতা পাইয়ে দেওয়ার জন্যও টাকা নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী স্বর্ণা আক্তার জানান, তারা গরিব মানুষ। মাহবুব আলম সুমন মৎস্য কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রধান উপদেষ্টার অনুদান দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সনমান্দী ইউনিউনের আরেক ভুক্তভোগী তাছলিমা বেগম জানান, তাদের এলাকার অনেকের থেকেই বাড়ি ও গাভী দিবে বলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা টাকা নিয়েছেন। অফিসে এসে জানতে পেরেছি তিনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা নিয়েছেন।
অভিযুক্ত পিওন মাহবুব আলম সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও কোনো উত্তর আসেনি।
সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, ‘আমার কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে কৃষি অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করছে কর্মকর্তা শাহিন রানা। কৃষকদের জন্য ধান, সয়াবিন, বাদাম ও ভুট্টা কাটার যন্ত্রপাতি বরাদ্দ এনে তা প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার পছন্দের লোক দিয়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ট্রেনিং, প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর নামে কৃষকদের এনে নামমাত্র নাস্তা ও সামান্য নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সাদা কাগজ স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে বিদায় করা হয়। কৃষি অফিসটি এভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করছেন এই কর্মকর্তা।
অভিযোগ উঠেছে, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, প্রদর্শনী, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের সিংহভাগ লুটপাট হচ্ছে। তারা কৃষকদের নিয়ে একটি ফসলের মাঠ দিবসের অনুষ্ঠান করে ব্যানার টাঙিয়ে ছবি তুলে রেখেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। এছাড়া প্রতিটি বরাদ্দের কলাম ফাঁকা রেখেই স্টক-রেজিস্টারে নেওয়া হয় কৃষকদের স্বাক্ষর ও টিপসই।
এসব অভিযোগের সত্যতার খোঁজে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রদর্শনীতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দের চার ভাগের তিন ভাগই চলে যাচ্ছে কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানার পকেটে। সরকারি বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশও কৃষকরা পাচ্ছেন না। অফিসের যন্ত্রপাতি (মেশিন) থেকে শুরু করে প্রতিটি খাত থেকে কৃষি কর্মকর্তার বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান অন্তত ১৫ জন কৃষক।
বেশির ভাগ কৃষকই জানেন না, তাদের জন্য সরকার কি পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে এবং কৃষকরা পাচ্ছেন কতটুকু। তারা বলছেন, আমরা তো এত কিছু জানিও না, আর বুঝিও না। কৃষি অফিসে বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে কিছুই জানায় না। উল্টো তার নাম কেটে দেওয়ার হুমকি ধমকিও দেন এ কর্মকর্তা। এতে কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
কৃষি অফিস বলছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরিষা, খেসারি, মসুর, চিনাবাদামসহ বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে এবং কৃষকদের সব বরাদ্দ পূর্ণভাবে বণ্টন করা হয়েছে। কিন্তু নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি সূত্র বলছে, উন্নত মানের ধান, গম, পাট ও ভুট্টার বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ জন কৃষককে ৫ একরের একটি করে প্রদর্শনী প্লট দেওয়ার কথা। কোন গ্রুপে ১৫ হাজার আবার কোন গ্রুপে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। হেক্টর-প্রতি কৃষকের জন্য যে পরিমাণ বীজ, সার, কীটনাশক,নগদ টাকাসহ যেসব উপকরণ দেওয়ার কথা তাও দেওয়া হয়েছে নামমাত্র।
এএসসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। প্রতিটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৩০ জন কৃষক। ওই প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কৃষকের জন্য খাবার বাবদ বরাদ্দ ৪০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ৬৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১০০ টাকা দামের ১ প্যাকেট বিরিয়ানি আর ১০০ থেকে ১৫০ টাকার একটি ব্যাগ। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাশতা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে না।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে কৃষক ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দের তালিকা চাইলে তিনি আজ নয় কাল বলে তালবাহানা করে তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ প্রতিবেদক কাগজপত্রের জন্য কৃষি অফিস অন্তত তিনবার গিয়ে তার কাছ থেকে এসব তথ্য নিতে পারেননি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, গত বছর কমলনগর উপজেলায় ভুট্টা কাটার মেশিন ৮ টি,কম্বাইন হারভেস্টার ২ টি,রিপার ৪ টি,রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ওয়াকিং টাইপ ২ টি ও পাওয়ার স্প্রয়ার ১ টি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কমলনগর উপজেলায় ভুট্টা চাষ না হলেও এ কর্মকর্তা লুটপাটের উদ্দেশ্যে ধান কাটার মেশিন বাদ দিয়ে ভুট্টা কাটার মেশিনের চাহিদা পাঠান। এতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ৮ টি মেইজ শেলার (ভুট্টা মাড়ার মেশিন) বরাদ্দ দেন। মেশিনগুলো প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার অনুগত লোকজনের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে ফটোসেশান করে ওই মেশিন অন্যদের নিকট নামেমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। ৪ টি রিপার পেলেও ওইগুলো তার পছন্দের এক দালালের মাধ্যমে ভৈরব নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে।
উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট এলাকার মোঃ আবুল কাশেমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন একটি মেইজ শেলার মেশিন। ১৫ দিনের মাথায় তিনি ওই মেশিনটি অন্য এক কৃষকের নিকট বিক্রি করে দেন।
চরলরেন্স এলাকার হাছন আলীর নামে একটি মেইজ শেলার মেশিন বরাদ্দ দেখানো হয়। তার ফোন নম্বরে কল করা হলে নাম্বারটি ঢাকার এক বাসিন্দা দাবী করে বলেন, তার বাড়ী ঢাকায়, তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেননা। তার ফোন নাম্বার কৃষি অফিসের তালিকায় কেন থাকবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
পুষ্টি বাগানের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে ১৪৫ জন কৃষককে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতি কৃষককে ৫টি গাছের চারা,২৫০ টাকার বীজ, ও ৪৫০ টাকার সার দিয়ে বাকি টাকা সম্পূর্ণ তার পকেটে ঠুকান বলে অভিযোগ করেন ৫ জন কৃষক।
এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় বাগান পরিচর্যার জন্য শতাধিক কৃষককে ট্রেনিং দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেক কৃষকের জন্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি কর্মকর্তা সাদা-কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দুইভাগ ৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। এ নিয়ে কৃষকদের সাথে কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডাও হয়েছে বলে তিনজন কৃষক এ প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেন।
এছাড়া এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় কৃষক ট্রেনিংয়ের নামে ২০ টাকার নাস্তা,১২০ টাকার দুপুরের খাওয়া ও নগদে ২৫০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই চলছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি।
এসএসিপি প্রকল্পে ট্রেনিং নেওয়া সাহেবের-হাট এলাকার কৃষক খুরশিদ আলম বলেন, একবার একটা ট্রেনিং করে তিনি ৮০০ টাকার ভাতা পেয়েছেন।
চরফলকন এলাকার কৃষক মো. ইউসুফ জানান, তার একটি পুষ্টি বাগান রয়েছে। কখনো ট্রেনিং করেননি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটা আমের চারা, লেবুর চারা ও একটি সাইনবোর্ড ছাড়া তিনি কিছুই পাননি।
চরলরেন্স এলাকার কৃষক মোঃ ইউসুফ জানান, তার একটি টমেটো বাগান রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে একবার ২ হাজার ৫০০, আবার ৩ হাজার টাকা ও কিছু বীজ পেয়েছেন তিনি।
বরাদ্দের বিষয়ে অফিসের এক সহকারী বলেন, ‘কৃষক ও কৃষি যন্ত্রপাতি বরাদ্দের কোনো কপি আমাদের দেওয়া হয় না। অফিস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, আমরা ডায়েরিতে নোট করে নিই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানা বলেন, ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। তবে তার আমলে কৃষকদের বরাদ্দ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের পছন্দের কেউ থাকলে নাম দিতে পারেন। আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপনাদের দেওয়া নামগুলোকে বরাদ্দের আওতায় নিয়ে আসব।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি মাইক্রোবাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
ওই সময় ছিনতাইকারীদের বাধা দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন মাইক্রোবাসটির দুই যাত্রী।
আহত দুজন হলেন মাইক্রোবাসের যাত্রী তাহেরা বেগম (৬৫) ও আবদুস সালাম (১৮)। তাদের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায়।
প্রত্যক্ষদর্শী মাইক্রোবাসের যাত্রী হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমার ছোট ভাই হুমায়ুন কবির সৌদি আরব প্রবাসী। ছুটিতে তিনি আজকে বাংলাদেশে আসছেন। আমরা যাচ্ছিলাম তাকে এয়ারপোর্ট থেকে এগিয়ে আনতে। ভোর সাড়ে তিনটার দিকে আমরা সোনাইমুড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই। এ সময় চালকসহ আমরা চারজন মাইক্রোবাসটিতে ছিলাম।
‘শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের ভিটিকান্দি এলাকায় পৌঁছাই। এ সময় ঢাকাগামী লেনে একটি যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনার শিকার হলে মহাসড়কের এই অংশে যানজট ছিল। যানজটে আটকে থাকার সময় হঠাৎ করে তিন-চারজন যুবক বগি দা, রামদা নিয়ে আমাদের গাড়িতে হামলা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের মারধর করে নগদ ২৮ হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। ডাকাতের হামলায় আমার মা তাহেরা বেগম, আমার ভাগিনা আবদুস সালাম আহত হয়েছে। আমরা এই ঘটনায় গজারিয়া থানাতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
ছিনতাইয়ের ঘটনায় আহত আবদুস সালাম বলেন, ‘দিনে-দুপুরে এভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। তা ছিল আমাদের কল্পনার বাহিরে। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে অস্ত্রের মুখে আমাদের জিম্মি করে আমাদের সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
‘আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে রামদা দিয়ে কোপ দেওয়া হয়। আমি সরে গেলে তা আমার পাঞ্জাবিতে লাগে।’
আহত তাহেরা বেগম বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা আমার ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চাইলে আমি তাদের বাধা প্রদান করি। এ সময় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর করে। তাদের সাথে না পড়ে একসময় বাধ্য হয়ে আমি ভ্যানিটি ব্যাগ তাদের দিয়ে দিই।’
এ বিষয়ে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘এ রকম একটি খবর আমিও পেয়েছি। ভুক্তভোগীদের থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির নামে দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানায় অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মো. মতিউর রহমান বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়া মহল্লার ওলিউর রহমান নয়ন বাদী হয়ে সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে, ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলাটি দায়ের করেছেন।’
মামলায় অপর উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা সভাপতি আবু ইবনে রজবী, আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা রশিদুল ইসলাম, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী সমিতির সভাপতি মাসুদ আলম, ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউর রহমান জিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার শাহ আলম, ধীমান সরকার, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মুক্তি বাবু ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী সৈয়দা সেলিনা মমতাজ।
বাদী তার মামলায় অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি শহরের মুন্সিপাড়ার লুৎফুন্নেসা টাওয়ারে তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রিজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৎকালীন প্রাথমিক গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানকে দিয়ে উদ্বোধন করিয়েছিলেন।
এ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে আসামিরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
তিনি অভিযোগে জানান, ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে তার প্রতিষ্ঠানে এসে হুমকি দেয় এবং তারা বলেন, ইকবালুর রহিমকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো নেতাকে দিয়ে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করায় তার কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন।
পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি দুপুরে বাদী নয়নকে আসামিদের দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় তাকে অপহরণ করে আসামি আবু ইবনে রজবীর সদর উপজেলার বাঙ্গিবেচা ঘাটের পাশে তার রিসোর্টে নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখা হয়। পরে আসামিদের নির্যাতনে বাধ্য হয়ে বাদী ওই দিন বিকেলে তার স্কুলের কর্মচারী সাক্ষী মিজানুর রহমান ও মিজানুর রহমান জুয়েলের মাধ্যমে আসামি রশিদুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান জিয়া ও ধীমান সরকারকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে পরিশোধ করেন।
আসামিরা চাঁদা পেয়ে অবশিষ্ট ৭০ লাখ টাকা স্বল্প সময়ের মধ্যে দেওয়ার অঙ্গীকারে ওলিউরকে ছেড়ে দেয়।
ওলিউর তার মামলায় অভিযোগ করেন, আসামি ইকবালুর রহিমের প্রভাবে পরবর্তী সময়ে আসামি সৈয়দা সেলিনাল মমতাজ বাদী হয়ে তার কন্যাকে ভুক্তভোগী সাজিয়ে অলিউর রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি নিয়মিত মামলা এবং অপরটি নারী নির্যাতন আইনে। এই মামলা দুটি অনেক অর্থের বিনিময়ে আপস-নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এরপর নয়ন নিরাপত্তার অভাবে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্য চলে যান। বর্তমানে দেশে মামলা দায়ের ও বিচারের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করেন।
আরও পড়ুন:নাটোরের লালপুরের গোধড়া এলাকায় প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই বছরের মেয়ে শিশুসহ বাবা নিহত হয়েছেন।
উপজেলার গোধড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় শিশুটির মা ও গাড়ির চালক গুরুতর আহত হন।
নিহত দুজন হলেন বগুড়া সদরের কইতলা এলাকার বাসিন্দা শাহরিয়ার শাকিল ও তার মেয়ে সুমাইরা আক্তার।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, নাটোর-পাবনা মহাসড়কের গোধড়া এলাকায় যশোর থেকে বগুড়াগামী দ্রুতগতির একটি প্রাইভেট কার মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যানকে রক্ষা করতে গিয়ে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে প্রাইভেট কারটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হন দুজন।
পুলিশ জানায়, শাহরিয়ার শাকিল যশোরের কর্মস্থল থেকে পরিবার নিয়ে ঈদের ছুটিতে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রাজশাহীর পুঠিয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন।
উপজেলার বেলপুকুর রেলগেট এলাকায় বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন নাটোর সদর উপজেলার চাঁদপুর বাজারের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩) ও একই এলাকার সোলাইমান ইসলামের ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৫)।
রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, ‘ইফতারের আগ মুহূর্তে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেন বেলপুকুর রেলক্রসিংয়ের কাছাকাছি এলে ব্যারিকেড ফেলা হয়। কিন্তু মোটরসাইকেলটি ব্যারিকেডের নিচ দিয়ে ঢুকে লাইনে উঠে যায়। আর তখনই ট্রেন চলে এলে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হন।’
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য