রাজধানীর রামপুরায় সোমবার রাতে বাসের চাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সে সঙ্গে বিক্ষোভ হয়েছে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, সায়েন্সল্যাব, এলিফ্যান্ট রোড এলাকায়। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ পথচারীরা।
নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি অনেকেই। গাড়িতে অপেক্ষা করে যখন আর চলছিলই না তখন অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন।
ভোগান্তির এমন দৃশ্য ছিল সারা ঢাকাতেই।
সকাল ১০টার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। নিরাপদ সড়ক, শিক্ষার্থী নিহতের বিচার দাবি, গণপরিবহনে হাফ ভাড়া দাবিসহ বেশ কিছু দাবিতে তারা সড়ক অবরোধ করেন।
রামপুরায় অবরোধের পর সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে রামপুরা থেকে কোনো দিকেই কোনো গাড়ি আর চলতে পারছে না।
বনশ্রী-রামপুরা, রামপুরা-মালিবাগ, মেরুল বাড্ডা, গুলশান লিংকরোড, উত্তর বাড্ডা-শাহাজাদপুর, হাতিরঝিল এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বিক্ষোভের প্রভাবে। যার রেশ পড়েছে প্রগতি সরণিসহ উত্তরার রাস্তাতেও।
সড়ক অবরোধ করে যানবাহনের ফিটনেস সনদ ও চালকদের লাইসেন্সও যাচাই করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
কোনো ব্যত্যয় পাওয়া গেলে তাদের ট্রাফিক পুলিশের কাছে নিয়ে মামলা দিতে বলছেন তারা।
রামপুরা এলাকায় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সড়কে জরুরি কাজে নিয়োজিত গাড়িগুলোর জন্য রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছেন।
রামপুরা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক পায়ে হেঁটে পাড়ি দিচ্ছেন সাধারণরা।
হেঁটে বাড্ডা থেকে রামপুরা ব্রিজ পার হচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব শ্যামল দাস। তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন বারিধারায়। সেখান থেকে আজিমপুরের বাসায় ফিরতে গিয়ে বাড্ডায় ভয়াবহ যানজটে পড়েছেন। উপায় না দেখে স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটা শুরু করেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আজিমপুর যাব। আমি আর আমার স্ত্রী বয়স্ক মানুষ, হাঁটতে পারি না। আবার রাস্তাও চিনি না। কিন্তু ছাত্ররা আমাদের গাড়ি যেতে দেবে না, তাই নেমে হাঁটছি। কিন্তু কোনদিকে যাব বুঝতে পারছি না।’
পরে প্রতিবেদকের সহযোগিতায় তারা হাতিরঝিল থেকে আজিমপুর চলে যান।
অসুস্থ্য ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন নাজমা বেগম। ছেলের প্রচণ্ড জ্বর। তাকে নিয়ে বনশ্রী এলাকার একটি হাসপাতালে যাচ্ছেন তিনি।
বলেন, ‘আমি একটা সিএনজি করে যাচ্ছিলাম, কিন্তু জ্যামের কারণে এগুতে পারছিলাম না। এর মধ্যে ছেলেটা বমিও করেছে। তাই বাধ্য হয়ে কিছুটা হেঁটে রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে একটা রিকশা নিলাম।’
পুরো সড়কে কোন যানবাহন না থাকায় পায়ে হেঁটেই রামপুরা মালিবাগ সড়ক পাড়ি দিচ্ছেন সাধারণরা। মাঝে কিছু রিকশা পাওয়া গেলেও আকাশ ছোঁয়া ভাড়া চাওয়ায় অনেকেই আর তাতে যাচ্ছেনও না।
রামপুরা পুলিশ বক্সের সামনে এক রিকশাচালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তর্কে জড়াতে দেখা গেল একজন চাকরিজীবীকে। তিনি রামপুরা থেকে গুলিস্তান যাবেন। রিকশাচালক ভাড় চাইলেন ২৫০ টাকা। আরেকজন সেখান থেকে মালিবাগ পর্যন্ত ভাড়া হাঁকছেন ১০০ টাকা।
বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে মিরপুর-নিউমার্কেট সড়কে দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি শুরু করেন। এতে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মিরপুর-নিউমার্কেট সড়কের জটের প্রভাব পড়ে সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা মানিক মিয়া এভিনিউয়ে। সেখানেও গাড়ির সারি দেখা যায়।
লোকজন বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিলেও রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু পর শাপলা চত্বর এলাকায় নেমে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন।
সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবির পাশাপাশি নটর ডেম, একরামুন্নেছার শিক্ষার্থী নিহতের বিচার দাবি করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা মিডলাইন পরিবহনের একটি বাস ভাঙচুর করেন।
শিক্ষার্থীরা মোহাম্মদপুর এলাকাতেও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। নিরাপদ সড়ক চাই, শিক্ষার্থী নিহতের বিচারসহ কয়েকটি দাবি জানান তারা।
সহপাঠী হত্যার বিচার চেয়ে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নীলক্ষেত এলাকায়ও বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সেখানে শিক্ষার্থীদের উই ওয়ান্ট জাস্টিস; নিরাপদ সড়ক চাইসহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করলে কলেজের শিক্ষকরা তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বাধ্য করেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী জানান, তারা বিক্ষোভ শুরু করলে কিছু পরেই তাদের শিক্ষকরা গিয়ে মারমুখী আচরণ করে তাদের সরে যেতে বাধ্য করেন। পরে অবশ্য অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে তারা তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বেলা ১টা ২৫ মিনিটে বনানীর বিআরটিএ ভবনের সামনে ছাত্ররা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
এ সময় ছাত্ররা নিরাপদ সড়ক চাই; ছাত্ররা মরবে কেন, প্রশাসন জবাব চাইসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিআরটিএর কাছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন নিয়ে আবদুল কাদের নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘ছাত্রদের হাফ ভাড়া কার্যকর হয়েছে তাহলে আবার আন্দোলন কেন? এসব করে সাধারণদের ভোগান্তি বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই মিলবে না।’
তনিমা হামিদ নামের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ছাত্রদের দাবি সবার আগে প্রাধান্য দেয়া উচিত সরকারের। তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো সাথে সাথে মেনে নিলেইতো হয়। ছাত্রদের রাস্তায় কেন থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন:নির্বাচন কমিশন থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ দিতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেনসহ ১০১ জন আইনজীবী। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনা আক্তার লাভলী এবং লাবাবুল বাসার স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি জানানো হয় এই মত।
বিবৃতিতে বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(৩) এবং অন্যান্য বিদ্যমান আইন অনুসারে এনসিপির শাপলা প্রতীক বরাদ্দ পেতে কোনো আইনগত বাধা নেই বলে উল্লেখ করে বলা হয়, ১৯৭২ সালের অর্ডারের তৃতীয় তফসিল এবং ১৯৭২ সালের বিধিমালার পরিশিষ্ট-ক তে জাতীয় প্রতীকের নকশা অংকিত আছে। নকশা অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক হচ্ছে লালচে এবং হলুদ রঙের যুগল বৃত্তের ভেতরে লালচে এবং হলুদ রঙে অংকিত পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল, দু’পাশে দুটি ধানের শীষ, উপরে তিনটি সংযুক্ত পাট পাতা যার ঠিক দুই পাশে দুটি করে চারটি তারকার সন্নিবেশ ও সামষ্টিক রূপ। অর্থাৎ জাতীয় প্রতীকের নকশা এবং রঙ ১৯৭২ সালের অর্ডারের ৩য় তফসিল ও বিধিমালার পরিশিষ্ট-ক দ্বারা সুনির্দিষ্ট। তাছাড়া জাতীয় প্রতীকের শাপলাটি পানিতে ভাসমান কিন্তু এনসিপি ‘ভাসমান শাপলা’ প্রতীক হিসেবে চায়নি।
একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতীকে হিসেবে জাতীয় প্রতীকের উপাদান বরাদ্দ দেওয়ার নজির উপস্থাপন করে বিবৃতিতে বলা হয়, ধানের শীষ, শাপলা, পাটপাতা এবং তারকা আলাদা আলাদা করে চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আর এই চারের সমষ্টিই হচ্ছে জাতীয় প্রতীক, যা দুই রঙের দুটি বৃত্ত দ্বারা পরিবেষ্টিত। জাতীয় প্রতীকের উপাদানের মধ্যে দুইটি উপাদান ইতোমধ্যে দুইটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দকৃত। সুতরাং প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণসাপেক্ষে এনসিপির নিবন্ধিত হবার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আইন মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং প্রতীকের তালিকায় সংযোজনপূর্বক শাপলা প্রতীকটি এনসিপিকে বরাদ্দ দিবে বলে বিবৃতিদাতা আইনজীবীরা আশা প্রকাশ করেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড, উত্তরা সেন্টার, মেট্রো রেল স্টেশন, উত্তরা এবং বিজয় সরণিতে অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা ও বহির্গমন বিষয়ক মহড়া করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ২৫ জুন সকাল ১১টায় উত্তরা সেন্টারে এবং বিকেল ৩টায় বিজয় সরণি সেন্টারে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। মহড়ায় ওয়াটার টেন্ডার, পাম্প ক্যারিং টেন্ডার, সিজার লিফট, অ্যাম্বুলেন্স ও স্নোরকেল গাড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়।
মেট্রো রেলে বা মেট্রো রেল স্টেশনে হঠাৎ করে অগ্নিদুর্ঘটনা সংঘটিত হলে কিভাবে যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে হবে, কিভাবে অগ্নিনির্বাপণ করতে হবে, কিভাবে সাধারণ লোককে ইভাকুয়েট করতে হবে এবং আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক শুশ্রূষা প্রদান করে কিভাবে হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে মহড়ায় তার বাস্তব অনুশীলন দেখানো হয়। মহড়ায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মী এবং ফায়ার সার্ভিসের স্থানীয় ভলান্টিয়াররা অংশগ্রহণ করেন। মহড়া চলাকালীন মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যগণ যানবাহন নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
মহড়া শেষে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (প্রশাসন) একেএম খায়রুল আলম। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক জনাব মোঃ ছালেহ উদ্দিন। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রকৃত দুর্ঘটনায় মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ এবং যাত্রী সাধারণের কার কী করণীয় সে সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষ্যে এ প্রশিক্ষণ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
মহড়া দুটি পরিচালনা করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকার সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাজাহান শিকদার ও সিনিয়র স্টেশন অফিসার একেএম রায়হানুল আশরাফ। এ সময় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জোন প্রধানগণসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। খবর : ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আবারও তিন ঘণ্টার কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কাফনের কাপড় পরে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
এর আগে শনিবার (২১ জুন) এ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় এনবিআর কর্মকর্তাদের সংগঠন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
কাউন্সিলের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার এবং সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সহেলা সিদ্দিকা পুনরায় এনবিআরে ‘যুক্তিসংগত সংস্কার’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
তারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, কারণ তার নেতৃত্ব সংস্কার প্রক্রিয়া শুধু বিলম্বিত হয়েছে।
এর আগেই তাকে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
গত ১৯ জুন গঠিত এনবিআর সংস্কার কমিটি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তারা।
এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, এ কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা পর্যন্ত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ১২ মে জারি করা এক অধ্যাদেশে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বাতিল করে সরকার রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে।
এরপর থেকেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআর কর্মকর্তারা নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ সংশোধনের ঘোষণা দেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার নতুন এই কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, শিশুমেলা থেকে এনবিআর কার্যালয় পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রবিবার থেকে কার্যকর হওয়া নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সব কক্ষের তালা খুলে দেওয়া হবে। তবে প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ তালাবদ্ধই থাকবে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, নাগরিক সেবার স্বার্থে আঞ্চলিক অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো চালু রাখা এবং কর্মরতদের নিজ নিজ দফতরে ফিরে গিয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। একই সঙ্গে নাগরিক সেবা নির্বিঘ্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ না করিয়ে আদালত ও সংবিধান লঙ্ঘন করায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার অপসারণ দাবি করছি।’
মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভাণ্ডার ও ক্রয়, হিসাব ও অডিট, সমাজ কল্যাণ, আইন, রাজস্ব, সম্পত্তি, পরিবহন, বিদ্যুৎ, যান্ত্রিক, সংস্থাপন, নিরাপত্তা, জনসংযোগ, আইসিটি সেল, নগর পরিকল্পনা বিভাগ এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দফতরে থেকে জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়নপত্র, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ এবং সড়কবাতি সচল রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, সাবেক সরকারের দোসর বা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর নগরভবন বা আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। দেখামাত্র প্রতিহত করা হবে। কোনও কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে নগর ভবনের বেশ কিছু কক্ষে শিকল দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তালা খুললেও প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ বন্ধই থাকবে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, নতুন করে কেউ নিয়োগ দিতে চাইলে সেটিও প্রতিহত করা হবে।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশগ্রহণ করা সব প্রার্থীকে সনদ প্রদানের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
রবিবার (২২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর ফলে ওই এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ বারবার সরে যেতে বললেও স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ এবং প্রেসক্লাব ফাঁড়িতে বসেই তাদের কথা হবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভাইভায় রেকর্ড ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থীকে ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের দাবি, ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করে ভাইভায় অংশ নেওয়া সবাইকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন তারা এনটিআরসির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগামীকাল রবিবার (২২ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। শনিবার (২১ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘শেরেবাংলা নগর থানার অন্তর্গত শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডে অবস্থিত এনবিআর কার্যালয় (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড), বিডা কার্যালয় (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ও আশেপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।’
ডিএমপি জানিয়েছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী রবিবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে সই করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।
টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করছেন সরকারি কর্মচারীরা। অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। পরে সচিবালয়ের ভিতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যাননুরুল ইসলাম জানান, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। । এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
মন্তব্য