স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি পাওয়ার পর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোনোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনের সমাপনী দিন রোববার সংসদ নেতার বক্তব্যে তিনি এ তাগিদ দেন।
বক্তব্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের যাত্রা সহজ ছিল না বলে উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের মূল লক্ষ্য একটি সামনে আছে। ২০৪১ সালের মধ্যে যেন বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হয়, সে লক্ষ্য অর্জন করা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি বিষয়ে আজ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করব। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকারে ২০০৮ এর নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। রূপকল্প ২০২১ আমরা ঘোষণা দেই। তারই ভিত্তিতে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করি ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত। সুপরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কাজ করি। একটি লক্ষ্য স্থির করে কোনো দেশ যদি এগিয়ে যায়, তাহলে সেটা অর্জন করা সম্ভব। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।
‘২৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টা, তখন বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা। সে সময় জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ৭৬তম অধিবেশনে ৪০তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের ঐতিহাসিক রেজুলেশন গৃহীত হয়। এ প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া আমাদের সম্পন্ন হলো।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে। আজকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যে গ্র্যাজুয়েশন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা এত তাড়াতাড়ি হয়নি। এটাও মনে রাখতে হবে।
‘আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই আমরা ২০০৯ সাল থেকে যে পরিকল্পনা নিয়েছি এবং তা বাস্তবায়ন করেছি। বাংলাদেশের দারিদ্র্যমুক্তি, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কাজ আমরা করেছি এবং খুব পরিকল্পিতভাবে।’
পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ার কথা জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, ‘বারবার জনগণ ভোটে নির্বাচিত করেছে বলেই এ উত্তরণ সম্ভব হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, এই কাজগুলো যে আমরা খুব সহজভাবে করতে পেরেছি, তা না। আমরা দেশের জনগণের জাতীয় জীবনের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে মানুষের সে গৌরবজনক যাত্রা শুরু হয়।
‘আমরা ২০১৮ সালে প্রথম জাতিসংঘের যে কমিটি-সিডিপি, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ করে। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যে বারবার সরকারে আসতে পেরেছি, তার ফলে যে উন্নতি আমরা করতে পেরেছি, তারই ফসল হচ্ছে এ স্বীকৃতি।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী এলডিসি উত্তরণের জন্য সিডিপি পরপর দুবার ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা করে। এতেও বাংলাদেশ আমাদের অর্জিত মানদণ্ড ধরে রাখতে সক্ষম হই। কোভিড-১৯-এর প্রকোপে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, বাংলাদেশেও। এরপরেও আমরা আমাদের অর্জনগুলো ধরে রাখি এবং ক্ষেত্রবিশেষে উন্নত করি।
‘২০২০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিববর্ষ। ২০২১ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ সময় এ অর্জন এটা আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। বাঙালি জাতির জন্য বিরল সম্মান অর্জন। বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল উত্তরণ।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এবং এর আলোকে আমরা যে পরিকল্পনাগুলো পরপর নিয়েছি, সে সময় প্রকৃতপক্ষে অনেকে ধারণাই করতে পারেনি যে, বাংলাদেশ এ ধরনের অর্জন করতে পারে, কিন্তু সুপরিকল্পিত লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়েছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আশু করণীয় কী, সেটা নিয়েও কিন্তু আমরা অনেক কাজ করেছি।
‘অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তারপরেও আমরা জানি এটার একটা ফলাফল বাংলাদেশের মানুষ পাবে। যেমন: রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শুরু করে যখন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে গেছি, অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু আমরা সমালোচনায় কান দেইনি, কারণ আমরা জানি, এ দেশটাকে আমরা চিনি।’
তিনি বলেন, ‘অভীষ্ট লক্ষ্য স্থির করেই আমরা কাজ করেছি। দেশে উন্নয়ন কাঠামো গড়ে তোলা এবং দীর্ঘমেয়াদি আশু করণীয় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আমরা কাজ করেছি।’
সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত লক্ষ্য রেখে আমরা আরেকটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ যাতে একটি উন্নত দেশ হয়, সেই পরিকল্পনাই আমরা হাতে নিয়েছি। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত স্থায়ী উন্নয়নের কাজও আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
‘এটি এ কারণে ২০০৮ এর নির্বাচন, এরপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন, প্রতিটিতে তারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমাদের জয়যুক্ত করেছেন এবং আমরা জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। এর ফলে আজকে দীর্ঘদিন জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি বলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে এ কথা ঠিক, এ যাত্রাপথ কখনো সুগম ছিল না। অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে, অনেক অপপ্রচারের শিকার হতে হয়েছে। আমরা দেখেছি আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, পেট্রলবোমা মারা, চলন্ত বাস-স্কুটার থেকে মানুষকে টেনে বের করে পেট্রল দিয়ে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। সেই অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার আমাদের একজন সংসদ সদস্যও আজ এখানে উপস্থিত আছেন।
‘ঠিক এভাবে রাস্তা কেটে ফেলা, হাজার হাজার গাছ কেটে ধ্বংস করা, মানুষ হত্যা, তারপর হরতাল-অবরোধ। অবরোধ মনে হয় এখনও বিএনপি তুলে নেয়নি। সেই অবরোধসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করার জন্য। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগও কিন্তু আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। এটা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফল।’
তিনি বলেন, ‘এরপরে আসল করোনাভাইরাস। করোনার মধ্যেও সারা বিশ্বের অর্থনীতি যেখানে স্থবির, সেখানে আমরা চেষ্টা করেছি অর্থনীতি সচল রাখতে। আমরা প্রায় এক লক্ষ ৮৩ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়ে নগদ অর্থ সরবরাহ একেবারে গ্রামের তৃণমূল মানুষকে দিয়েছি।
‘আমরা অন্য সব বাদ দিয়ে মানুষের হাতে যেন টাকা যায়, মানুষের হাতে যেন খাবার যায়, সেটি নিয়ে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেছি। আমাদের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, চাকরীজীবী, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী সকলের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, এ জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু বাজেট থেকে বা সরকারি কোষাগার থেকে না প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকেও কয়েক শ কোটি টাকা মানুষের কাছে বিলিয়েছি। অর্থাৎ মানুষকে সব ধরনের সহযোগিতা করা, এটা আমরা করতে পেরেছি।
‘এর ফলাফল হলো এই অতিমারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল থেকেছে। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য একটি সামনে আছে। ২০৪১ সালের মধ্যে যেন বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হয়, সে লক্ষ্য অর্জন করা।’
আরও পড়ুন:ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিন্ন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৬৮ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ মঙ্গলবার ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ৪৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকেই ডলার কিনছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ডলার কেনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ দফায় ডলার কেনে। ১৩ জুলাই ১৮ ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১১ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম হঠাৎ করে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া- দুটোই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বিদেশি দায় পরিশোধও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ডলারের তীব্র চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদাও বাড়তে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যবিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে ৩ টাকা। নতুন মূল্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৭৩ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়েছে ।
এছাড়া, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারে ১৩ পয়সা কমিয়ে ৫৮ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি খাতে ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেখান থেকে বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হবে।
তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরামকোর প্রপেন ও বিউটেনের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে এ দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের বড় বাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভারত থেকে টমেটো বোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টমেটো আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮ টন টমেটো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো আমদানি করতে শুল্কসহ খরচ গুণতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ টমেটো আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার হিলি বন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ণ করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এই বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি করা হয়েছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজতে থাকায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে পৌঁছেছে।
এশিয়ায় প্রাথমিক লেনদেনের সময় মূল্যবান ধাতুটি প্রতি আউন্স ৩,৫০১ দশমিক ৫৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে এর আগের রেকর্ড ৩,৫০০ দশমিক ১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মার্কিন ডলার ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নেওয়ায় সোনার দামের এই দরপতন ঘটেছে।
মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির একটি মূল্য সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে পিছিয়ে এসেছে। একই সময়ে, ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শ্রম দিবসের জন্য সোমবার ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, তখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ডলার মিশ্র লেনদেন করেছে।
বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগে ফেডের গভর্নরকে তিরস্কার করার পর ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুক পদত্যাগ না করলে, তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন।
মার্কিন আপিল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক শুল্ক, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেগুলো অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পরও এই রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
তবে আদালত আপাতত এই ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য সময় পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কমিউনিটি ব্যাংকের স্টার্টআপ রিফাইন্যান্স স্কিমের অধীনে অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখার উপস্থিতিতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসএমইএসপিডি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কিমিয়া সাআদত পারস্পরিক অংশীদারত্বমূলক এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে- বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হাফিয়া তাজরিয়ান, যুগ্ম পরিচালক মো. নুরুল কাওসার সাঈফ এবং কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মোঃ আরিফুল ইসলাম, হেড অব এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শরিফ হাসান মামুনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ব্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় ১০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয় ছিল ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে, সামগ্রিক এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টে অর্জিত ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য