বিক্ষিপ্ত সহিংসতা, এক ছাত্রলীগ নেতার প্রাণহানি ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হাজার ইউনিয়নের ভোট, শুরু হয়েছে গণনা।
রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু করে ভোট চলেছে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে। নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়।
দ্বিতীয় ধাপের আগে, ভোটের দিন এমনকি ভোটের পরেও ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির পর এ পর্যায়ের ভোটে রক্তপাত বন্ধে ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
সহিংসতা এবারের ভোটেও দেখা গেছে কিছু জেলায়। তবে বিকাল পর্যন্ত কোথায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও ভোট শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে লক্ষ্মীপুরের একটি কেন্দ্রে সংর্ঘষে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন।
রামগঞ্জের ইছাপুর ইউনিয়নের নয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে এই সংঘর্ষ হয়।
নিহত সজিব হোসেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহনাজ আক্তারের সমর্থক ছিলেন।
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, ওই কেন্দ্রের সামনে ভোট শেষে আগে নৌকা ও এর বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আমির হোসেন খানের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে এটি সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়ায়। সে সময় মাথায় আঘাত পান সজিব হোসেন। তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া জেলার রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশীর পশ্চিম চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ জন আহত হন।
কুমিল্লার বড়ুরায় ‘কেন্দ্র দখল করতে’ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও এক পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালানো হয়।
তাদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় বলে জানিয়েছেন আহত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয় ওই পুলিশ কর্মকর্তার পিস্তল।
উপজেলার ডেউয়াতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আমার কক্ষে ছিলাম। এ সময় চায়নিজ কুড়াল দিয়ে আমাকে আঘাত করা হয়। পরে আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বাম হাতে ১১টি সেলাই পড়েছে।’
বরুড়া উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, হামলার ঘটনার পর ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বাতিল করা হবে।
এ ছাড়া জেলার দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের বাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে অন্তত ৫০ জন বহিরাগত হেলমেট পরে কেন্দ্রে ঢোকে। তারা প্রায় ৩০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। সে সময় এক ঘণ্টা ভোট বন্ধ রাখা হয়।
নরসিংদী সদরের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গোলাগুলিতে অন্তত ২০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নরসিংদীর চরাঞ্চল করিমপুর, নজরপুরের দিলারপুর, কালাই গোবিন্দপুর, শীলমান্দি ও আমদিয়ায় এসব ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষগুলো হয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে।
আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম সংঘর্ষের ঘটনাগুলো নিশ্চিত করেছেন।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে একটি ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বৌলজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে রোববার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বানিজ মিয়া।
জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার কবাখালী, বোয়ালখালী ও মেরুং ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
দীঘিনালার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহ্মিদা মুস্তফা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বেনাপোলের শার্শার বাগআচড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন নৌকার প্রার্থী ইলিয়াস কবির বকুল।
তিনি অভিযোগ করেন, কোনো কেন্দ্রেই তার এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। তাদের মারধর করা হয়েছে। ভয়ে তিনিও ঘর থেকে হতে পারেননি, ভোটও দিতে পারেননি।
এসব অভিযোগ তুলে নিজ বাড়িতে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
ব্যালটবক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়। আটক করা হয় ৭ জনকে।
উপজেলার সম্মানদী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে বিকালে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউসুফ উর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, ব্যালট ছিনতাইয়ের কথা জানাজানি হলে কেন্দ্রের বাইরে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, ছিনতাই হওয়ায় ব্যালট বাক্স উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।
ফেনীতে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগে দুই উপজেলার দুটি কেন্দ্র থেকে প্রার্থীসহ ২৫ জনকে আটক করে পুলিশ। কেন্দ্রে গোপন ভোটারের সঙ্গে যাওয়ায় এক পোলিং এজেন্টকেও প্রত্যাহার করা হয়।
পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় রোববার সকালে এ ঘটনাগুলো ঘটে।
ভোলার চরফ্যাশনে চর কুকরীমুকরী ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কবির হোসেনের অভিযোগ, প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেয়ার প্রতিবাদ করায় তার লোকজনের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এতে তিনিসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে এক কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানান, নৌকার সিল মারা ১৩৪টি ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়।
বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে রোববার বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মদ বলেন, ‘আড়াইটার দিকে হঠাৎ চারজন আমার কক্ষে ঢুকে নৌকার প্রার্থীর সমর্থক পরিচয় দিয়ে ২০০ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকার সিল মারা শুরু করেন। এ সময় সেখানে অন্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা চলে এলে ওই চারজন পালিয়ে যান। তাদের ফেলে যাওয়া ব্যালট পেপারের মধ্যে ১৩৪টি সিল মারা অবস্থায় পাওয়া গেছে। এগুলো বাতিল করা হয়েছে।’
মেহেরপুর গাংনীর ধানখোলা ইউনিয়নে ভোট চলাকালে সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে দুজনকে।
ময়মনসিংহ ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ি ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। গুজিয়াম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি জানান, এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষের সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল দেয়া শুরু করে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তারা কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর এক ঘণ্টা ভোট বন্ধ থাকে। যে ব্যালটগুলো ছিনতাই হয়েছে সেগুলো বাতিল করা হবে।
নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ তুলে নেত্রকোণার কলমাকান্দার এক কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সেখানে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
কলমাকান্দার খারনৈ ইউনিয়নের বামনগাও মিশনারি স্কুল কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।
ভোট স্থগিত হয় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের ৬টি কেন্দ্রে। হামলা, ভাঙচুর, বিশৃঙ্খলার কারণে নির্বাচন অফিস এই সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
এ ছাড়া জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে দিনাজপুরে ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ এবং হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা ও গাইবান্ধায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে ১ হাজার সাতটি ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে সাতটিতে ভোট স্থগিত করা হয়।
ইউপির পাশাপাশি ভোট হয়েছে ৯ পৌরসভাতেও। এর মধ্যে নীলফামারীর জলঢাকা ও কক্সবাজার পৌরসভায় শুধু কাউন্সিলর পদে ভোট হয়েছে।
১ হাজার ইউপিতে ৫৬৯ জন প্রার্থী আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যানের সংখ্যা ১০০। আর সাধারণ সদস্য ৩৩৭ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা ১৩২।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
মন্তব্য