অনন্য এক মিলন উৎসবে মাতলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিসিএস ক্যাডাররা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শুক্রবার।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিসিএস অফিসার্স ফোরাম (জুবফ)।
আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
অনুষ্ঠান শুরুর আগেই কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট পরিণত হয় জুবফ সদস্যদের প্রাণের মেলায়। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে জাবির যে গ্র্যাজুয়েটরা যোগ দিয়েছেন তাদের পেশাজীবী সংগঠন জুবফ। ভেন্যু প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিভিন্ন স্টলে জুবফ সদস্যরা ছোট ছোট গ্রুপে আড্ডার মাধ্যমে পিঠা, ফুচকা ও অন্যান্য মজাদার খাবার খেতে খেতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন।
ক্যাম্পাসের স্থাপনার আদলে নির্মিত দুটি ফটো বুথে ছবি তুলতে গিয়ে অনেকেই যেন ফিরে যান ছাত্রজীবনে।
মূল আয়োজন শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায়। বাংলাদেশ পুলিশ নাট্যদল মঞ্চস্থ করে তাদের প্রযোজিত নাটক ‘অভিশপ্ত আগস্ট’। নাটকটি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়। এর মধ্য দিয়ে উপস্থিত হাজারখানেক জুবফ সদস্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনাবলী ও তার পটভূমি অবলোকন করেন।
নাট্য পরিবেশনার পর শুরু হয় আলোচনা সভা। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জুবফ সাধারণ সম্পাদক ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আ. আহাদ। তিনি জুবফ গঠনের ইতিহাস, তাৎপর্য ও লক্ষ্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে সঠিকভাবে দেশ পরিচালনায় ফোরামের প্রতিটি সদস্য প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকবে।
জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন দেশের বাইরে থাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। জাবির এই সাবেক শিক্ষার্থী একটি লিখিত বক্তব্য মেইল করে পাঠান। পরে তার পক্ষে সেটি পাঠ করা হয়।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম তার বক্তব্যে তার ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিচারণ করেন ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জুবফের সফলতা কামনা করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা ধারণ করে শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকায় তিনি সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানান।
সভায় অন্যদের মধ্যে জুবফ সভাপতি সাবেক সচিব মনোয়ার আহমেদ, সাবেক সচিব ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন প্রস্তুতি উপ-কমিটির আহবায়ক মো. তাহিয়াত হোসেনসহ সংগঠনটির নেতারা বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময়কালে শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, নিহতদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেয়া, আহতদের সুচিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া এবং জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের ওপর জোর দিতে বলেন। এছাড়া গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘খুচরাভাবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আগে দেখা হয়েছে। আজকে অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। ভালো হলো। তোমাদের কথা শুনতেই মূলত আজকে বসা। তোমরা সরকারের কাছে কী চাচ্ছো, আশাগুলো কী, পরামর্শ আছে কি না- এসব জানতে চাওয়া।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘তোমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক, তোমাদের কারণেই রাষ্ট্র। নিজেদের ভূমিকা ভুলে যেও না। অনেকে এখানে আছে, অনেকে নেই। যারা নেই, তারাও রাষ্ট্রের অভিভাবক। তোমাদের দায়িত্ব আছে রাষ্ট্র যেন ঠিক পথে চলে, যেন বিচ্যুত না হয়। এটুকু মনে রাখলে রাষ্ট্র ঠিক থাকবে। নিজের অভিভাবকত্ব ভুলে যেও না।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য ঠিক থাকতে হবে। সিন্ডিকেট নাকি কী- এ ধরনের ব্যাখ্যা আমরা চাই না। কতগুলো লোক বাজারমূল্য কব্জা করে রাখবে সেটা হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখার। রমজানেও দ্রব্যমূল্য স্টেবল রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। হঠাৎ করে যেন কোনো পরিস্থিতি না হয়।’
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার সংস্কারের জন্য কমিশন আছে। তারা পরামর্শ দেবে, আমরা কাজ করব। আমরা চাই স্থানীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া। খুব কম জিনিস উচ্চ পর্যায়ে থাকবে। দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেম, একবার একটা ফান্ড বানিয়ে দিলে কারা যেন খেয়ে ফেলে। সেজন্য সুশৃঙ্খলভাবে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন স্থায়ী হয়।’
জুলাইয়ে শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও খেতাবের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। জুলাইয়ে যারা শহীদ হয়েছে তাদের অবদান আমরা ভুলব না। তাদেরকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হবে।’
শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন- শিক্ষার্থীদের এমন পরামর্শের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। যেন বাংলাদেশে কেউ শিক্ষিত না হয়ে উঠতে পারে, দক্ষ হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে। বেকারত্ব তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক কিছু নেই। এটা আমদের ঠিক করতে হবে। তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রধান উপদেষ্টা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন আমাদের অর্থনীতি বিভাগে নারী শিক্ষার্থী ছিল মাত্র চারজন। তোমরা বলছো, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী প্রায় ৫২ শতাংশ। এটি অত্যন্ত আনন্দের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে আগে সিট বণ্টন হতো সেই দাসপ্রথা এখন ভেঙে গেছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে দেয়া যাবে না।’
মতবিনিময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বার বার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গণমাধ্যমে সরকারের কাজ সঠিকভাবে প্রচার না হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। শিক্ষার্থীদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সরব এটা ঠিক। সরকারের নিজের কোনো পত্রিকা নেই। আছে শুধু প্রেস উইং। তারা পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠায়। কেউ ছাপে, কেউ ছাপে না। কিংবা তাদের মনমতো শেষ পাতায় বা কোণায় ছোট করে দেয়।
‘প্রেস উইং ওদের মতো করে চেষ্টা করছে, কাজ করছে। সরকার কোনো গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করবে না। সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে কাজ করবে- এটাই আমাদের নীতি। আমরা এই নীতিতে থাকব। আমি বুঝতে পারছি তোমরা কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ। এটা আসলে কিছুটা মন খারাপ হওয়ার মতো যে সরকারের কাজ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পুরো সিস্টেমটাই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। চারদিকে চুরি-চামারি, ব্যাংক কাজ করে না। কমিটি অর্থনীতির শ্বেতপত্র দিয়েছে। আমি বলেছি, এটা একটা ঐতিহাসিক দলিল। আমি মনে করি এটা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো উচিত। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার দায় আওয়ামী লীগের। তবে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে বলে যারা ঘোষণা দিয়েছে তাদেরও ধরতে হবে।
‘যে ধ্বংসস্তূপ রেখে গেছে সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। যেদিকে হাত দেই সেদিকেই ভাঙাচোরা। এই ভাঙাচোরা পরিষ্কার করেই যাচ্ছি। কাজ শুরু করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কার কাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তারা জানান, দেশের মানুষ সরকারের পাশে আছে। এটি গণমানুষের সরকার। জনগণ চায় অন্তর্বর্তী সরকার যেন প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজটি সম্পন্ন করে।
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘দেশের মানুষ ছাত্রদের ওপর ভরসা করে। এই বিশ্বাস ধরে রেখো। হাতছাড়া করো না। তোমরা কখনোই আশাহত হবে না। তোমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছো। দেশ বদলিয়ে ফেলেছো। তোমরাই পারবে।
‘মানুষের আশা তোমাদের পূরণ করতে হবে। অন্তত সে পথে তোমাদের অগ্রসর হতে হবে। এক বিজয় করেছো, আরেক বিজয় আসবে। তোমরা বার বার আমাদের মনে করিয়ে দেবে যেন আমরাও সতর্ক হই, সজাগ হই।’
আরও পড়ুন:দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে সব পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় এখন থেকে নবীন কর্মকর্তাদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হলো।
মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে নতুন কর্মকর্তাদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সেনাপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘তোমাদের যে কোনো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। সামরিক চেতনা মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’
কর্মক্ষেত্রে অধীনস্তদের সামনে নিজেদের উদাহরণ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান ওয়াকার-উজ-জামান।
সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনী এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে শৃঙ্খলা প্রধান চালিকা শক্তি। এখানে সব নির্ধারিত নিয়ম প্রথা ও অনুশাসন পরিচালিত হয়ে থাকে। যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিবেকের দ্বারস্থ হবে। তোমরা ভুলে যাবে না তোমাদের গড়ে তুলতে দেশের খেটে খাওয়া মানুষের অনেক অবদান রয়েছে।
৮৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স এবং ৫৯তম বিএমএ বিশেষ কোর্স থেকে ২৪ জন নারীসহ ২৩১ জন কর্মকর্তা ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন।
সকাল ৯টায় ভাটিয়ারি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে নতুন ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে শুরু হয় কুচকাওয়াজ।
প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সকালে সেনাপ্রধান অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান জেনারেল অফিসার কমান্ডিং আর্মি ট্টেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড ও ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির কমান্ড্যান্ট।
অনুষ্ঠান শেষে মা-বাবা-অভিভাবকরা নতুন কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকতাদের র্যাঙ্ক-ব্যাজ পরিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার মিলিটারি একাডেমির কমান্ড্যান্ট, দেশি-বিদেশি উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এবার ৮৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে ২১৩ জন ও ৫৯তম বিএমএ স্পেশাল কোর্স থেকে ১৪ জন কর্মকর্তা ক্যাডেট অফিসার ও চারজন ট্রেইনি অফিসার কমিশন লাভ করেছেন। কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে ২০৭ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর সহায়তা নিতে অন্তর্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান। সূত্র: ইউএনবি
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘উগ্রবাদীরা ভারতের বিজেপির উস্কানিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নিষ্ক্রিয় উপস্থিতিতে আগরতলার কুঞ্জবনে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে তাতে আগুন দেয়া, পতাকার খুঁটি ভাঙচুর ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ অবস্থায় অন্তর্বতী সরকারের উচিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সহায়তা চাওয়া। মানুষদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আগরতলায় কূটনৈতিক মিশনে এহেন নজিরবিহীন হামলা ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন, ১৯৬১-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
‘ভারত সরকার হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও অতীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের আগ্রাসী হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে, যা আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘ভারতের হিন্দুদের বলব- আপনাদের বন্ধুত্ব তো হাসিনার সঙ্গে। সেই বন্ধুত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যে শত্রুতায় নেমেছেন, সেটা সৎপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ নয়। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে আপনাদের বন্ধু হাসিনা আপনাদের কাছে আশ্রয় পেয়েছে। তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন।
‘মনে রাখবেন, বাংলাদেশ লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে, দিল্লির দাসত্ব করতে নয়। বরং যিনি সেবাদাসী হতে চেয়েছিলেন, সেই দাসী এখন আপনাদের পদতলে।
বিএপির এই নেতা আরও বলেন, ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনার চেয়েও বেশি পাগল হয়ে গেছে বিজেপি সরকার ও উগ্রবাদীরা। মরিয়া হয়ে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠাতে বলছেন।
রিজভী বলেন, ‘ভারতেই তো বাংলাদেশের মিশনগুলো অরক্ষিত। মিশনের একজনকে আমরা ভিডিওতে ভাইরাল হতে দেখেছি, কী বেদম প্রহার করা হচ্ছে! তারপরও মমতা ব্যানার্জি বলবেন, বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী দরকার না ভারতে শান্তিরক্ষী বাহিনী দরকার?’
একই সঙ্গে কাশ্মীর, আসাম এবং মনিপুরেও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো প্রয়োজন বলে মনে করেন রিজভী।
মমতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আগে নিজের দেশ সামলান। শান্তিরক্ষী বাহিনী আপনার দেশ ভারতে মোতায়েন করুন। বিশেষ করে কাশ্মীর, আসাম ও মনিপুরে। নরেন্দ্র মোদির এক দশকের শাসনামলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার ক্রমশ কমে আসছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) মুসলিমবিরোধী বলে অভিযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করেছে মোদি সরকার। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থানে নির্মিত হয়েছে রামমন্দির। একাধিক রাজ্যে গরুর মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুছে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে মুঘল আমলের বিভিন্ন নাম ও স্মৃতিচিহ্ন।’
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগগুলো তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা।
‘ভারতের পরিকল্পনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখা’
রিজভী বলেন, ‘ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত…। সেসব নিয়ে দেশটির কোনো সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের মাস্টারপ্ল্যানের পরিস্থিতিতে তারা অযাচিত উদ্বেগ-উগ্রতা প্রকাশ করছে। সেই পরিস্থিতি কিছুই না, দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
‘কিন্তু ভারতের মাস্টার প্ল্যানের অংশ হচ্ছে- বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করো, বাংলাদেশ যাতে সঠিকভাবে চলতে না পারে…। এটাই হচ্ছে তাদের আন্তর্জাতিক মাস্টার প্ল্যান এবং এখানে বাইরের একটি দেশ জড়িত বলে বাংলাদেশের জনগণ মনে করে।’
ভারতকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত। কিন্তু শত্রুতা করতে চাইলে সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মেনে নেবে না। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন না।’
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে অবৈধ কর্মে লিপ্ত থাকার অপরাধে ইসকন থেকে বহিষ্কারের উল্লেখ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘চিন্ময়কে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। রাষ্ট্র হিসেবে ভারত কি শিশুর ওপর অত্যাচারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়? এটা তো বড় প্রশ্ন দেশের মানুষের। চিন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইসকনই করেছে।’
‘দেশের সব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান- যারাই নিরাপত্তাহীন মনে করেন তারা সরকারকে জানান। সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লাভ নেই।
‘জন্মভূমির প্রতি অনুগত থাকুন। এই মৃত্তিকায় যদি আপনার জন্ম হয় এই মৃত্তিকার প্রতি এই মাটির প্রতি আপনি ভালোবাসা প্রকাশ করুন। বিজেপি ভারতকে ধর্মীয় উগ্রবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ ভারতের মতো উগ্রবাদী কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশ ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র ভেবে কত কিছু দিয়েছে। কিন্তু ভারত সীমান্তে রক্ত, লাশ আর আগ্রাসন ছাড়া কিছু দেয়নি।’
‘বাংলাদেশে অস্থিরতার অপচেষ্টা বিজেপির প্রত্যক্ষ মদদে’
রিজভী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো কিছু ধর্মীয় উগ্রবাদী ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ভারতের চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠন বিজেপির প্রত্যক্ষ মদদে ও উসকানিতে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান- এই উগ্রবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করুন।
‘ভারতের সাধারণ জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু চরম উগ্রবাদী বিজেপি যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সম্মান-আত্মমর্যাদা রক্ষায় রুখে দাঁড়াবে।’
আরও পড়ুন:ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়া থেকে আসা দুটি ফ্লাইটের পাঁচ যাত্রীর কাছ থেকে ওয়েল্ডিং মেশিনের কয়েলের ভেতরে লুকানো সাত কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টম হাউজ। জব্দ করা স্বর্ণের বাজার মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সোমবার রাতে এই পরিমাণ স্বর্ণসহ তাদেরকে আটক করা হয়। আটকরা হলেন- রুবেল হোসেন, দুলাল আহম্মেদ, সামিউল ইসলাম, সবুজ আলী ও সাগর মিয়া।
বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল আমিন মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মালয়েশিয়া থেকে আসা এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইট সোমবার রাত আড়াইটায় বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাটিক এয়ারের একটি ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টম হাউজের প্রিভেন্টিভ দল দুটি ফ্লাইটের পাঁচ সন্দেহভাজন যাত্রীর সঙ্গে আনা কম্বলে প্যাঁচানো অন্যান্য মালামালের সঙ্গে ওয়েল্ডিং মেশিন চিহ্নিত করে স্ক্যান করে। এ সময় প্রতিটি ওয়েল্ডিং মেশিনের কয়েলের ভেতরে মোট পাঁচটি স্বর্ণের চাকতি, দুটি স্বর্ণেরর টুকরো ও ১০০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। জব্দ স্বর্ণের মোট ওজন প্রায় সাত কেজি এবং বাজার মূল্য সাত কোটি ৫০ লাখ টাকা।
প্রাথমিক পরীক্ষায় সেগুলো স্বর্ণ বলে নিশ্চিত হলে জব্দ করা হয়। আটক যাত্রীদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় ফৌজদারি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন। চোরাচালানের মাধ্যমে আনা স্বর্ণের উৎস শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারের কারণে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে। ফলে ভারতের একটা অংশ ভায়োলেন্স ছড়াচ্ছে। আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা ভারতীয় মিডিয়ার এই মিস ইনফরমেশনের ক্যাম্পেইনের ফল।
‘ভারতের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক চাই। তবে এই সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কূটনৈতিক প্রসেসে পদক্ষেপ নিচ্ছি। এটার একটা ডিউ ডিপ্লোম্যাটিক প্রসেস (যথাযথ কূটনৈতিক প্রক্রিয়া) আছে, আমরা সব প্রসেস ফলো করছি। আমরা আমাদের কনসার্নগুলো জানিয়েছি। সে অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
ভারতের মিডিয়ার অপতথ্যের বিষয়ে বিশ্বের অন্যান্য মিডিয়াকে অবগত করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা বিবিসি, সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেছি। ভারতীয় মিডিয়া আগে ডিটারমাইন করেছে কী ঘটেছে। সব মিডিয়াকে বলবো- আপনারা আসেন, দেখে যান কী ঘটছে। ভারতীয় মিডিয়া আমাদের পুরো জাতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।’
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের পল্লীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের রাড়ইল গ্রামে এই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ মুহিবুর রহমান চৌধুরী, আঞ্জু চৌধুরী, সোহেল চৌধুরী, জুয়েল চৌধুরী, আকমল চৌধুরী, কনর চৌধুরী, শুভ চৌধুরী, ইসলাম উদ্দিন চৌধুরী, জাবেদ চৌধুরী, তাসিম চৌধুরী, রাবেল চৌধুরী, জুবেদ চৌধুরী ও মুর্শেদ চৌধুরীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রামবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাড়ইল গ্রামে আনু মিয়া চৌধুরী ও নানু মিয়া চৌধুরীর সঙ্গে একই গ্রামের জসীম উদ্দিন চৌধুরী ও সুমন চৌধুরীর লোকজনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে একাধিকবার বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা-মোকাদ্দমাও দায়ের করেছে।
আনু চৌধুরীর করা একটি মামলায় মঙ্গলবার সকালে তদন্তে যায় দিরাই থানা পুলিশ। তদন্ত শেষ করে পুলিশ গ্রাম থেকে ফেরার পর উভয় পক্ষের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষে ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আহতদের দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রশান্ত দাস গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে রেফার করেন।
ডা. প্রশান্ত সাগর দাস বলেন, আহতদের শরীরে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি শুনেছি সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে গ্রামে অভিযান চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে করা মামলায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থীর ৩০ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে ছাত-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার পর কারা অভ্যন্তরে তারা অনশন শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদেরকে আইনি সহায়তা দেয়া শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতোমধ্যে ওই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মোট পাঁচ মামলার মধ্যে দুটিতে জামিন মিলেছে। তবে এখনই মুক্তি মিলছে না তাদের। অন্যান্য মামলা থেকে জামিন পেলেই তারা কারামুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
খুলনার মহানগর দায়রা জজ মো. শরীফ হোসেন হায়দার গত রোববার ওই দুই শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান (রুকু)। মামলাটি পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেল।
চার বছরেরও অধিক সময় ধরে কারাবন্দি ওই দু’জন হলেন- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের ’১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক ও পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ’১৭ ব্যাচের মো. মোজাহিদুল ইসলাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খানজাহান আলী থানা কৃষক লীগ কার্যালয় ও ৫ ডিসেম্বর আড়ংঘাটা থানার গাড়ি রাখার গ্যারেজে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি এই দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরে সোনাডাঙ্গা থানায় বিস্ফোরক আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আরও দুটি মামলা করা হয়। একই সময়ে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়।
মামলাগুলোর মধ্যে তাদের দু’জনকে সোনাডাঙ্গা থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপর মামলায় তাদের দুজনের ১০ বছরের সাজা হয়েছে।
এছাড়া খুলনার খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানা এবং ময়মনসিংহ জেলায় তাদের বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা রয়েছে, যেগুলো আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানার মামলা দুটিতে তারা জামিন পেয়েছেন।
কারাবন্দী দুই শিক্ষার্থীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ ১৭ দিন বগুড়া ডিবি হেফাজতে নিয়ে গুম করে নির্যাতন করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট মামলা দেয়া হয়েছে।
তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিগত সরকারের দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে জনমত গড়ে তোলার কারণে এ প্রহসনের মামলার শিকার হয়েছেন। তারা এখন মুক্তি চান। মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তারা কারা অভ্যন্তরে অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জানান, তাদের অনশনের বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে কারাবন্দি দুই শিক্ষার্থীর জামিনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল সেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনার জন্য সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহানকে নিযুক্ত করা হয়।
আইনজীবী গত ১ ডিসেম্বর জামিন শুনানিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দুই শিক্ষার্থীর বর্তমান শারীরিক অসুস্থতার বিষয় তুলে ধরেন। পরে সার্বিক দিক বিবেচনা করে আদালত তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করে।
মন্তব্য