রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ভারতীয় জাল রুপিসহ জালিয়াতি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগ।
রাজধানীর খিলক্ষেত ও ডেমরা থানা এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে শনিবার ব্রিফিংয়ে জানায় ডিএমপি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ফাতেমা আক্তার অপি ও শেখ মো. আবু তালেব।
ব্রিফিংয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, খিলক্ষেত থানার বনরূপা আবাসিক এলাকার মেইন গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর এক নারী ভারতীয় জাল রুপিসহ অবস্থান করছেন বলে তথ্য পায় খিলক্ষেত থানা পুলিশ। এর ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ফাতেমা আক্তার অপি নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৫০ হাজার ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধার করা হয়।
পরে ফাতেমার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখান থানার পন্ডিতপাড়া এলাকায় তার নিজ বাসা থেকে আরও ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি ডেমরা থানার সারুলিয়া এলাকা থেকে জালিয়াতি চক্রের অপর সদস্য শেখ মো. আবু তালেবকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার ফাতেমা আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ ভারতীয় জাল মুদ্রা পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে ভারতীয় জাল মুদ্রা কৌশলে সংগ্রহ করে দেশীয় চক্রের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিপণনসহ ভারতে পাচার করত। জব্দ করা মুদ্রা গত ২৩ নভেম্বর ফাতেমার কাছে হস্তান্তর করেছিলেন তালেব।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, তালেব পাকিস্তানি নাগরিক সুলতান ও শফির মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা মার্বেল পাথরের ৫০০টি বস্তার মধ্যে ৯৫টি বস্তায় করে ভারতীয় রুপিগুলো আনেন। এসব মুদ্রা শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আনা হয়।
পুলিশ জানায়, ফাতেমার বিরুদ্ধে আগেও মতিঝিল থানায় জাল টাকা সংক্রান্ত মামলা করা হয়েছিল। এবার তার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় আরও একটি মামলা করা হয়েছে।
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৫ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ১০টি অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে মঙ্গলবার দুপুরে করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের চতুর্দশ বোর্ড সভায় মেয়র এ তথ্য জানান।
তাপস বলেন, ‘আমাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এজন্য আমরা মনে করি, আমাদের আরও করণীয় রয়েছে এবং সেভাবেই এবারের কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছি। কর্মপরিকল্পনার আলোকে ১৫ জুন থেকেই কার্যক্রম আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু করব। আমাদের ১০টি অঞ্চলে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য আমরা এরই মাঝে জানিয়েছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব। এছাড়াও আমাদের চিরুনি অভিযান পরিচালিত হবে।’
গতবারের তুলনায় এবার বেশি সময় ধরে চিরুনি অভিযান চালানো হবে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘গতবার আমরা এক মাস নিয়ন্ত্রণকক্ষ পরিচালনা করেছিলাম। এবার সেটা আমরা দুই মাস ধরে পরিচালনা করব। এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে আমরা চিরুনি অভিযানগুলো তদারকি করব।’
এ সময় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আপনারা যারা বাসাবাড়ির মালিক এটা আপনাদেরই দায়িত্ব যে আপনার আঙিনা, ছাদে, টবে পরিত্যক্ত জায়গায় যাতে কোনো পানি না জমে সেটা খেয়াল রাখা। বৃষ্টি হলে কোথাও পানি জমেছে কিনা সেটা দেখবেন। পানি জমে থাকলে সেটা ফেলে দিন। তিন দিনের জন্য অপেক্ষা না করে নিয়মিত জমা পানি ফেলে দিন।’
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তুলনামূলক সফলতার জন্য মেয়র তাপস বোর্ড সভায় কাউন্সিলরদের ধন্যবাদ জানিয়ে এবার আরও বেশি সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বোর্ড সভায় করপোরেশনের কাউন্সিলররা ছাড়াও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈম, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা করে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ঘটনায় তিনি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়ে তার জীবননাশের যে হুমকি দিয়েছেন তার প্রতিবাদে ছাত্রদল প্রতিদিন সভা সমাবেশ করেছে। গতকাল সেখানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে পিটিয়েছে।
‘হুমকি দিয়েছে ছাত্রদলকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেবে না। আজ মঙ্গলবারও সকাল ৯টার দিকে ছাত্রদল তাদের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়। এখনও সেই আক্রমণ চলছে। ইতোমধ্যে খবর পেয়েছি, শহীদুল্লাহ হলে দুজন ছাত্রকে আটক করে রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সাবেক এজিএস আকতার, ঢাবির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, ইয়াকুব গাজী রবি, হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের মানসুরা আকতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম-আহবায়ক জহির রায়হান রুবেল, সুফিয়ান, মিশু, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-আমিন, বাবলু, তন্নী মালিক, আবু হোরায়রা, সেলিমসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কেউ কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি অবিলম্বে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এসব সন্ত্রাসীদের যারা বিনা উসকানিতে আক্রমণ করেছে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করলে ছাত্রদলে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এই হামলায় ৩০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
আহতদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বেরিয়ে আবারও মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে যায় ছাত্রদল। মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্ত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেয় ছাত্রলীগ।
সেখানে দ্বিতীয় দফায় ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাদের সংঘর্ষ হয়।
আরও পড়ুন:দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জামিন বাতিল হওয়ায় আবারও কারাগারে যেতে হলো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।
মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ওই মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল করে তাকে আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দিয়েছিল আদালত; মঙ্গলবার সে আদেশেই আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি।
এদিন তিনি জামিন শুনানির আগেই হাসপাতাল থেকে আদালতে উপস্থিত হন। বিচারক যুবলীগের সাবেক এ নেতাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পাশাপাশি জামিন শুনানির জন্য ৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেন।
গত ১১ মে সম্রাটকে জামিন দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান। পরে বিচারিক আদালতের দেয়া জামিন বাতিল চেয়ে ১৬ মে হাইকোর্টে আবেদন করে দুদক।
১৮ মে দুদকের এই মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।
দুদকের মামলায় জামিন পাওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে থাকা আরও তিন মামলায় জামিন পান সম্রাট। চার মামলার সব কটিতেই জামিন পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএসএমইউ) প্রিজন সেল থেকে কারামুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।
সারা দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ওই বছরের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
অভিযোগপত্রে সম্রাটের বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
আরও পড়ুন:ইলেকট্রনিং ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) কোনো ত্রুটি পেলে মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেয়ার যে কথা একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তাকে উদ্ভট বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান তার বরাত দিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে এই কথা জানালেও সিইসি বলেছেন, তিনি এই ধরনের কোনো ঘোষণা দেননি।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এই কথা বলেন হাবিবুল আউয়াল।
গত ২১ মে মাদারীপুরে একটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ইভিএম মেশিনের মতো সেরা মেশিন পৃথিবীর কোথাও নেই। রাজনৈতিক প্রতিটি দলে আইটি বিশেষজ্ঞ আছে, তাদেরকেও আমরা আমাদের মেশিন দেখাব। তাদের হাতে ছেড় দেব, দেখান কোথায় ভুল আছে? আর কোন মেশিন কোথায় যাচ্ছে কেউ জানে না। ইভিএমের কোনো ভুলত্রুটি যদি কেউ ধরতে পারে তার জন্য আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা প্রদান করেছেন।’
তবে সিইসি মনে করেন, কিছুটা স্মৃতিভ্রম হয়ে এ নির্বাচন কমিশনার ১০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলতে পারেন। তিনি বলেন, ‘বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে- সিইসি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছেন-এটা উদ্ভট কথা। সিইসি এ ধরনের উদ্ভট কথা বলতেই পারেন না।’
কিছুদিন আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ইভিএমসংশ্লিষ্টদের কেউ না কেউ এ ধরনের কথা বলে থাকতে পারেন বলে মনে করেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘এটা কমিশনের বক্তব্য নয়। কোনোভাবে কমিশনের কোনো কর্মচারীও এ কথা বলেননি, কমিশনার তো দূরের কথা।’
সিইসি বলেন, ‘১০ মিলিয়ন ডলার কথাটা উচ্চারিত হয়েছে কোনো প্রসঙ্গে, কোনো একটা জায়গায়। আমার মুখ থেকে নয়, কমিশনের কারও মুখ থেকে নয়। এটা ডিগিং করা উচিত নয়। যারা ইভিএম নিয়ে কাজ করছেন, তাদের পণ্যটার প্রশংসা করতে গিয়ে আবেগবশত হয়তো কথাটা বলেছেন।
‘একটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বলতেই পারে; এ ধরনের একটা বক্তব্য কোনো একটা জায়গায় উত্থাপিত হয়েছিল। হয়তো আমার মাথায় নেই। এটা কোট করতে গিয়ে মিস কোটিং হয়েছে। এটাই সত্য, সত্য এবং সত্য।’
ইভিএম নিয়ে এখনই চ্যালেঞ্জ করতে চান না জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা তো বলছি না- এটা ১০০ শতাংশ নির্ভুল। ওই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি।’
কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন সিইসি। বলেন, ‘মিডিয়ার সময় কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। কমিশনকে অপদস্ত করার জন্য, সিইসিকে অপদস্ত করার জন্য কথাটা বলেননি। কথাটা আসলে কিছুটা স্মৃতিভ্রমভাবে হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
আনিসুরের এই বক্তব্যে কমিশনের অবস্থানের অবনমন হয়েছে বলেও মনে করেন সিইসি। বলেন, ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এতে। ইসির প্রতি মানুষ আস্থা আনতে চায়, শুরুতে যদি বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে কমিশন আগামী যে জনপ্রত্যাশিত নির্বাচন, সেটি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এখনও চেষ্টা করছি, চার কমিশনার ও আমি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
সিইসি যখন এই কথাগুলো বলছিলেন, সেখানে আনিসুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আনিসুরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সিইসি বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য শোনার পর ইন্টারনাল তদন্ত শুরু করলাম। কেউ তার ভালোবাসা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারেন, ইভিএম যারা তৈরি করছেন তাদের মধ্যে কেউ বলেছেন। ওইভাবে কেউ একজন বলেছেন, ওখান থেকে জিনিসটা এসেছে।’
ইভিএম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনই নয়
২০০৯ সালের পর থেকেই বাংলাদেশে ভোট গ্রহণে ইভিএম চালু করার চেষ্টা চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই যন্ত্র নিয়ে বেশ আগ্রহী হলেও রাজনীতিতে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও সমমনারা এই যন্ত্রের বিরোধিতা করছে। তাদের অভিযোগ, এই যন্ত্র দিয়ে দূর থেকে ভোট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
তবে নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা চলছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন কমিশনার মো. আলমগীর।
তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান সিইসি।
বলেন, আরও কয়েকটি বৈঠক করে আলাপ আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রশ্ন রাখেন, যদি ইভিএম ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাই নেবেন, তাহলে কেন তিনি চ্যালেঞ্জে যাবেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘মাত্র পাঁচ-সাত দিন আগে চিঠি দিয়ে সকলকে জানালাম- ইভিএম নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। কোনো চাপের মুখে আমরা মাথা নিচু করছি না। আমরা যদি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণাই করে দিই, তাহলে ইয়ে (সংলাপ) হবে কেন?... আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে চ্যালেঞ্জ নেব কী, এখনও সেই সময়টাই তো আসেনি। বারবার বলেছি দায়িত্বশীল পদে আছি। এ নিয়ে আরও দশটা মিটিং হবে। এখন যদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিই- এটা হতে পারে না।’
বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সংলাপে ইভিএম নিয়ে উঠে আসা বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলন, ‘আমরা পাঁচটা মিটিং করেছি, পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারিনি। আরও মিটিং হবে। সেখানে পর্যালোচনা করব। আমরা বলেছি ইভিএম নিয়ে সবার আস্থা অর্জন করতে চাই। কালকেও কারিগরি মিটিং হবে।'
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে প্রহসনে রূপান্তর করার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। এটা আমরা অন্তর থেকে বলছি। সুন্দর নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সুস্থ ধারা অব্যাহত থাকুক।’
ভোট রাতে হবে না
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীরা করছে, তেমন কোনো ঘটনাই কমিশনের অধীনে হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘ভোট তার নিয়মানুযায়ী হবে, দিনের ভোট দিনেই হবে। ভোট রাতে হবে না- এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমাদের উনি (ইসি আনিসুর মাদারীপুরে) স্পষ্ট করে বলতে চেয়েছেন, দিনের ভোট দিনেই হবে।’
এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:চলতি শতকের শুরুতে রাজধানীবাসীকে বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাতে সড়ক থেকে টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের সব যানবাহন তুলে দিয়ে চালু করা হয় ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন বাহন। পাশাপাশি বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে পেট্রল-ডিজেলের পরিবর্তে শুরু হয় কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সিএনজির ব্যবহার। এতে নগরীর বায়ুদূষণ পরিস্থিতিতে রাতারাতি পরিবর্তন আসে।
২০০০ সালের আগের ঢাকার বাতাস ছিল গাড়ির কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। নাক-কান জ্বালা করা কিংবা শ্বাসজনিত নানা রোগ ছিল নিত্যসঙ্গী। জ্বালানি হিসেবে সিএনজির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এসব সমস্যা অনেকাংশে কমে আসে।
দুই দশক পর রাজধানীতে আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে সেই কালো ধোঁয়া। কয়েক বছর ধরে বাস, ট্রাকসহ বেশকিছু যানবাহনের সিএনজি ছেড়ে ডিজেলে ফেরার প্রবণতাকে এ জন্য দায়ী মনে করা হচ্ছে।
পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করলে বায়ুদূষণ কমে আসে। তবে এতে গাড়ির ইঞ্জিনের আয়ুষ্কালও একই সঙ্গে কমে যায়। পাশাপাশি ডিজেল এবং সিএনজির দামে পার্থক্যও অনেক কম। এ কারণে বাণিজ্যিকভাবে যেগুলো বড় পরিবহন হিসেবে পরিচিত, যেমন: বাস বা ট্রাক, এ বাহনগুলোতে ডিজেল ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।
জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলিয়ামের পরিবর্তে সিএনজি ব্যবহার করলে কালো ধোঁয়ার পাশাপাশি বায়ুদূষণ কমে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/ নিউজবাংলা
তেলচালিত এসব বাহন ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এগুলো বাতাসে ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে সড়কে চলাচল করা বাস, ট্রাক, পিকআপ বা সরকারি মালিকানাধীন গাড়িগুলোই কালো ধোঁয়ার প্রধান উৎস।
২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর টু-স্ট্রোক বেবি ট্যাক্সিসহ পুরাতন যানবাহন বন্ধের পর এক দিনে ঢাকার বায়ুতে দূষণের মাত্রা কমে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে ২০১৩ সাল থেকে তা আবারও বাড়তে থাকে। গত নয় বছরে সেই দূষণ বাড়তে বাড়তে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্তত ৪০ ভাগের জন্য দায়ী এই কালো ধোঁয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও বায়ুদূষণ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক আবদুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বায়ুদূষণের একটি বিরাট অংশ যানবাহন থেকে আসে। আমরা যে তিনটি মেজর সোর্স ধরি বায়ুদূষণের তার মধ্যে কালো ধোঁয়া, একটি ব্রিক ফিল্ড এবং কনস্ট্রাকশন। গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে যেটা আসে এটা প্রায় ৪০ শতাংশ।’
কালো ধোঁয়া কী এবং কেন বের হয়?
গাড়ির ইঞ্জিন মূলত জ্বালানি তেল পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে যেটি দিয়ে গাড়িটি চলে। কালো ধোঁয়া হলো এই জ্বালানির না পোড়া অংশ। সাধারণত গাড়ি পুরাতন হয়ে গেলে এবং এটিকে ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে এই কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘কালো ধোঁয়া মূলত দুই কারণে বের হয়। গাড়ি যত পুরাতন হতে থাকে এর কর্মক্ষমতাও কমতে থাকে। গাড়িতে যে তেল ব্যবহার করা হয় সেটা থেকে তার এনার্জি তৈরি হয়। কিন্তু গাড়ির কর্মক্ষমতা কমে গেলে এই তেলটা কমপ্লিট বার্ন হয় না বা কনভার্সন হয় না। যখনই এটা হয় না, তখনই তার একটি অংশ একজস্টের সাথে বের হয়ে আসে। এটাকে বলে ইনকমপ্লিট কনভার্সন।
‘গাড়ির একটি রেগুলার মেইনটেন্যান্স প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি হলে নিয়মিত প্রতি ৩ হাজার কিলোমিটার চলার পর মোবিল পরিবর্তন করা। এটা করা হয় না। এ কারণে গাড়ির যে লুব্রিকেটিং ফাংশন, এটা ঠিকভাবে কাজ করে না। সেখান থেকে পলিউশন হয়।’
অনেক সময় তেলের পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের গুণগত মান ঠিক না থাকলেও কালো ধোঁয়া তৈরি হতে পারে। অধ্যাপক সালাম বলেন, ‘আবার যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, সেটাও অনেক সময় ভালো মানের থাকে না। এটাও দূষণের কারণ। মুলত এই তিন কারনে কালো ধোয়াটা তৈরি হয়।
‘কালো ধোঁয়ার একটি বড় অংশ হলো টক্সিক কার্বন। এটা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং মানুষের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। এতে থাকে অনেকগুলো ক্ষতিকর উপাদান যেমন হাইড্রো কার্বন, কাবন মনোঅক্সাইড এবং জ্বালানি তেলের আনবার্ন্ট কিছু অংশ। এগুলো প্রত্যেকটাই খুব ক্ষতিকর।’
কালো ধোঁয়ার ক্ষতি রোধে বেশ কয়েকটি পরামর্শও দেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন যেটা করতে হবে, গাড়ির জ্বালানিটি কোয়ালিটি ধরে রাখতে হবে এবং গাড়ি নিয়মিত মেইনটেন্যান্স করতে হবে। মূলত পুরাতন গাড়িই এর জন্য দায়ী।
‘আমাদের এখানে নিয়ম আছে যে ২০ বছরের পুরাতন গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না। এখন এটা ঠিক মতো মেইনটেইন করা হয় কিনা জানি না। পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।’
কালো ধোঁয়া যে ক্ষতি
আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও কালো ধোঁয়া মুলত মানুষের ফুসফুস ক্যান্সারের একটি বড় কারণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নারী ও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের একটি বড় কারণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কালো ধোঁয়া মানেই হলো কার্বন মনোঅক্সাইড, ডাই-অক্সাইড এবং ধাতব পদার্থ– মূলত সিসা। এগুলো মানুষের শরীরে গেলে ফুসফুসের ক্ষতি হয়, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং এক ধরনের প্রদাহ তৈরি করে। এর ফলে আমাদের শ্বাসতন্ত্রীয় রোগগুলো বেড়ে যায়।
‘এর মধ্যে হাঁপানি কাশি ও কারও কারও অ্যাজমাটিক সমস্যাও হতে পারে। দীর্ঘদিন এটি গ্রহণে আমাদের ফুসফুসে ক্যান্সারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। কার্বন মনোক্সাইড শরীরে শোষিত হয়ে আমাদের লিভার ও কিডনিতে জটিলতা তৈরি করে এবং নারী পুরুষের বন্ধ্যাত্ব তৈরি করতে পারে। বায়ু দূষণের একটি বড় উপাদান এই কালো ধোঁয়া। শিশুদের জন্য এর প্রভাব মারাত্মক। এটি আমাদের বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ এফেক্ট বাড়িয়ে দেয়। এর কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ে, জলবায়ূ পরিবর্তনে প্রভাব রাখে।’
দায় এড়াচ্ছেন পরিবহন মালিক ও ট্রাফিক বিভাগ
কালো ধোঁয়ার ক্ষতি জানার পরেও এটি ছড়ানোর দায় নিতে চায় না পরিবহন মালিকরা। তাদের দাবি, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিতই সদস্যদের তাগাদা দেয়া হয়।
পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সতর্কতার কথা সব সময় বলা হয়। এটা তো মালিকের বিষয় না। পাম্পের তেলের সমস্যার কারণে অনেক সময় কালো ধোঁয়া হয়।
‘কালো ধোঁয়া পেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও অনেক সময় ব্যবস্থা নেয়। বাসে কোনো কালো ধোঁয়া নেই। ম্যাক্সিমাম গাড়ি তো খারাপ অবস্থায় থাকতে পারে না। কয়েকটি গাড়ি দিয়ে তো সবগুলোকে মূল্যায়ন করা যায় না। আমরা সব সময় বলি গাড়ি ঠিক রাখার জন্য। যারা করবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেক। আমরা সব সময়ই বলে থাকি।’
দেশের মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গত হলে তা জরিমানাসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অবশ্য খালি চোখে কালো ধোঁয়ার সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্রের অপেক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ট্রাফিক বিভাগ। তাদের দাবি, কালো ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় চাইলেও কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী কোনো যানকে জরিমানার আওতায় আনা যাচ্ছে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে অ্যাকশন নিতে হলে আমাদের ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র লাগবে, সেটা আমাদের দেশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ধোঁয়ার নির্ণয়ক মান নির্ধারণ করে দেয়া আছে, কিন্তু আমরা তো খালি চোখে সেটা মাপতে পারব না।
‘তাই দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আমরা এই ব্যাপারে একেবারেই নিরুপায়। তবে ধোঁয়া ডিটেকটরের জন্য ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে আবেদন করে রেখেছে। এটা পেলেই আমরা কালো ধোঁয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করতে পারব।’
২০২১ সালের হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত মোটরযান আছে ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৯৩টি। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ১৬ লাখের বেশি গাড়ি।
আরও পড়ুন:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় মানবিক বিবেচনায় জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।
মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে এ আবেদন করেন তার আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন হিরা।
দুপুরে এ জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আদালতসংশ্লিষ্টরা।
এর আগে সোমবার সম্রাটের জামিন বাতিল করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। পরে শুনানির জন্য বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে দেয়া হয়। আগামী ৩০ মে আপিল বিভাগে এ নিয়ে শুনানি হবে।
গত ১৮ মে দুদকের এই মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া জামিন বাতিল চেয়ে গত ১৬ মে হাইকোর্টে আবেদন করেছিল দুদক। এর আগে ১১ মে সম্রাটকে জামিন দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান।
দুদকের মামলাটিতে জামিন পাওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে থাকা আরও তিন মামলায় জামিন সম্রাট। চার মামলার সব কটিতেই জামিন পাওয়ায় ১১ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএসএমইউ) প্রিজন সেল থেকে কারামুক্তি পান তিনি। পরে তার জামিন বাতিল করা হয়।
সারা দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ওই বছরের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
অভিযোগপত্রে সম্রাটের বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
আরও পড়ুন:
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মোহম্মদ সেলিম তার দণ্ড বাতিল চেয়ে একটি আবেদন করেছেন।
মঙ্গলবার হাজি সেলিমের পক্ষে তার আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করেন।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা জানান, হাজি সেলিমের দণ্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত করে তার জামিন চাওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের পর দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য রোববার আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। বিচারক সে দিনই তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে পাঠানোর আদেশ শোনার পর আদালত চত্ত্বরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন হাজি সেলিম। তাকে চিকিৎসা ও কারাগারে ডিভিশনের জন্যও আবেদন করেন তার আইনজীবী। পরে আদালত এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে তাদের আইনে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেয়।
আত্মসমর্পণের পরদিন হাজি সেলিমকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিনে ভর্তি করা হয়।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিচারিক আদালত হাজি সেলিমকে ১৩ বছরের দণ্ড দিয়েছিল। রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০২০ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চুয়াল বেঞ্চ তার ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই রায় প্রকাশ হয়। এতে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
গত ৯ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট। এই হিসেবে ৯ এপ্রিলের মধ্যে কেন হাজি সেলিম আত্মসমর্পণ করেননি, সেটির ব্যাখ্যাও দেন তার আইনজীবী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য