ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের খালবলা গ্রামের অলকা রানি। বংশপরম্পরায় মাটির তৈজসপত্র বানানোর কাজ করেন তিনি৷
তার স্বামী কুমার স্বপন চন্দ্র পালসহ পরিবারের আরও বেশ কয়েকজন নারী এ কাজ করেই সংসার চালান। তবে কয়েক বছর ধরে মৃৎশিল্পের কাজ করে তিন বেলা খাবার জোগাতে পারছেন না তারা।
মাটির তৈজসপত্রের বাজার এখন অনেকটাই দখলে কাঁচ, মেলামাইন, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল ও সিরামিকের সামগ্রীতে। টেকসই, দাম কম ও সহজলভ্য হওয়ায় ক্রেতারা মাটির তৈজসপণ্যের বদলে ওই পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন।
এতে মৃৎশিল্প এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। যারা এখনও এ পেশায় আছেন তারাও দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
মাটি দিয়ে তৈজসপত্র বানানোর সময় কথা হয় অলকা রানির সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক যুগ আগেও এই উপজেলায় অনেক মৃৎশিল্পী ছিল। ধীরে ধীরে মাটির তৈজসপত্রের কদর কমে যাওয়ায় তারা এ পেশা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। শুধু আমাদের পরিবারটি এখনও টিকে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় আমাদের তৈরি মাটির তৈজসপত্র কিনতে বাড়িতে ভিড় জমাতেন লোকজন। কোথাও মেলা হলে এসব তৈজসপত্র বাড়ি থেকে কিনে বিক্রি করা হতো। ক্রেতারাও স্বাচ্ছন্দ্যে এসব মাটির জিনিস কিনে ব্যবহার করতেন।
‘তবে বর্তমানে মাটির জিনিস কেনার ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাই আমরাও এ পেশা ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছি।’
কুমার স্বপন চন্দ্র পাল বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় হাঁড়ি-পাতিল, ডাবর-মটকি থেকে শুরু করে মাটির ব্যাংক, শো-পিস, গয়না, কলস, ফুলের টব, ফুলদানি, ঢাকনা, পিঠা তৈরির ছাঁচ এবং নানা রকম খেলনা তৈরি করছি নিয়মিত।
‘শহরবাসীর দালান-কোঠা সাজাতে মাটির তৈরি নানা পট-পটারি, ফুলদানি ও বাহারি মাটির হাঁড়ির কদর রয়েছে এখনও। সেগুলো বিক্রি করে কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। এগুলোতেও প্লাস্টিকসামগ্রী ব্যবহার হলে অন্য পেশায় শ্রমিক হিসেবে যোগ দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পরিবার বংশপরম্পরায় মাটির তৈজসপত্র তৈরি করছে। আগ্রহ আর মাটির তৈরি তৈজসপত্র ব্যবহারের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতেই অন্য পেশায় যাইনি।
‘তবে আমাদের ছেলে-মেয়েরা এ কাজে আগ্রহী না। তারা পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করতে ইচ্ছুক। এতে বোঝা যায়, মাটির তৈজসপত্র বানানো ধীরে ধীরে এক দিন বন্ধ হয়ে যাবে।’
আঠারোবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবের আলম রূপক বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্যের ওপর মজেছে মানুষ। ঐতিহ্যের প্রতি মানুষের দৃষ্টি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। একটা সময় মাটির তৈরি বাসন ছাড়া বাঙালি পরিবারগুলোর দিন চলত না।
‘মেজবান অনুষ্ঠানেও খাবার পরিবেশন হতো মাটির তৈরি বাসনে। এখন আর এমন চাহিদা না থাকায় এই মৃৎশিল্পটি হারিয়ে যেতে বসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার শুধু আমাদের ইউনিয়নেই মাটির তৈজসপত্র বানানো হয়। আগে এই পেশার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকলেও এখন কয়েকজন জড়িত। এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের যথাসম্ভব সহযোগিতা করব৷ তবে উপজেলা প্রশাসনেরও উচিত মৃৎশিল্পীদের আর্থিক সহায়তা করা।’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও লোকজন কাঁধে করে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করতেন। এখন আর সচরাচর তা চোখে পড়ে না।
‘মাটির তৈরি তৈজসপত্রের সঙ্গে বাঙালির ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। এই শিল্পটা বাঁচিয়ে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:এবার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় চার হাজার প্রান্তিক পেঁয়াজচাষির পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী বিভিন্ন উপজেলার প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৭২৫ জন প্রান্তিক কৃষক। তাতে এ বছর পেঁয়াজ চাষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন তারা।
রাজবাড়ী জেলা দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়। এই বছর পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৫১ টন পেঁয়াজ।
গত ১ ডিসেম্বর গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পেঁয়াজ বীজের অংকুরোদগম না হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তার পরের দিনই ২ ডিসেম্বর জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভা আহ্বান করেন তিনি।
সভায় উপস্থিত সদস্যরা পেঁয়াজ বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে দ্রুত সমাধান কী হতে পারে সেটাও জানতে চান জেলা প্রশাসক।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে লাল তীর কোম্পানির তাহেরপুরি বীজ স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। সভায় আরও জানানো হয়, এই বীজের গুণগত মান ভালো।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘আমি ৩ ডিসেম্বর একটি ৫ সদস্যের টিম গঠন করি। কমিটির প্রতিবেদনে নিয়ে সেই দিনই সচিব স্যার বরাবর এ বিষয়ে পত্র প্রেরণ করি। ৩ ডিসেম্বর প্রেরিত পত্রের প্রেক্ষিতে সচিব এবং উপদেষ্টা মহোদয় ৪ তারিখ বিকেলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং পাবনা জেলা প্রশাসনের সাথে জরুরি ভার্চুয়াল সভা করেন।’
এ বিষয়ে মিজানপুর ইউনিয়নের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের চার হাজার প্রান্তিক কৃষককে উন্নত জাতের প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করেছিল উপজেলা কৃষি বিভাগ।
চলতি নভেম্বরে সরকারিভাবে বিনা মূল্যে এক কেজি করে ৪ হাজার জন প্রান্তিক কৃষককে পেঁয়াজ বীজ দেয়া হয়। এই বীজ বপন, সেচ, সার, কীটনাশক ও জমি প্রস্তুত বাবদ প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়েছে প্রতিটি কৃষকদের, কিন্তু বীজ থেকে চারা গজায়নি। এখন নতুন করে বীজ বপন করার বেশি সময়ও বেশি নেই।
‘সব মিলিয়ে প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে আমাদের কৃষককে এ বছর ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকি ছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসক নিজে উদ্যোগ নিয়ে দ্রুততার সাথে নতুন পেঁয়াজের বীজ না দিলে অনেক বেশি ক্ষতির মুখে পড়তাম।’
জেলার হোসনাবাদ পৌরসভার প্রান্তিক কৃষক সমশের শেখ জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এমন কৃষকবান্ধব জেলা প্রশাসক পেয়ে আমরা গর্বিত। আমরা আমাদের যেকোনো সমস্যা নিয়ে সরাসরি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে যেতে পারব বলেও তিনি আজ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রবি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রাজবাড়ী জেলায় ৪ হাজার জন কৃষকের মাঝে বিএডিসি থেকে প্রাপ্ত বারি পেঁয়াজ-১ জাতের বীজ ৫০০ জন, বারি পেঁয়াজ-৪ জাতের বীজ ১ হাজার জন এবং তাহেরপুরী জাতের বীজ ২ হাজার ৫০০ জনকে বিতরণ করা হয়েছিল। ওই বীজ না গজানোর কারণে তদন্তপুর্বক ৩ হাজার ৭২৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পুনরায় লালতীর কোম্পানির তাহেরপুরী জাতের বীজ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গত রোববার রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ২০০ জন, কালুখালী উপজেলায় ৩০০ জন এবং পাংশা উপজেলায় ৫০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মধ্যে পুনরায় এক কেজি করে পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
বাকি পেঁয়াজ বীজ দ্রুত বিতরণ করার কথা জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় গত রোববার বীজ বিতরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
তিনি ওই সময় পেঁয়াজচাষিদের দ্রুত পেঁয়াজ রোপণ করার অনুরোধ করেন, যাতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখা না দেয়।
ওই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজবাড়ীর উপপরিচালক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম, রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়া হকসহ সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফে জামায়াত নেতা মো. ইসমাইলকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
মামলায় সরকারি কাজে বাধা, কর্মকর্তাদের মারধর ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
টেকনাফ মডেল থানায় মঙ্গলবার মামলাটি করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ বিশেষ জোন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত ৯ ডিসেম্বর দুপুরে পৌরসভার কুলালপাড়া এলাকায় চিহ্নিত মাদক কারবারি আলমগীরের বসতঘরে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে ডিএনসি। এ ঘটনায় আলমগীরকে আসামি করে মামলা করা হয়।
এ অভিযানের কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী টেকনাফ পৌরসভার সহসভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইলের বাড়িতে আরও কিছু ইয়াবা মজুত আছে–এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই দিন সন্ধ্যায় অভিযানে যায় ডিএনসি কর্মকর্তারা।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ওই সময় ইসমাইল অভিযানে বাধা প্রদান করেন এবং লোকজন জড়ো করে অভিযানিক টিমের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ডিএনসির তিন সদস্য আহত হন। পরে তার অনুসারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ডিএনসি অফিসে ভাঙচুর চালায়।
এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা মোহাম্মদ ইসমাইল অভিযোগ করেন, ‘সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চারজন ব্যক্তি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। তখন স্থানীয় কিছু লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে।
‘ওই কর্মকর্তারা সাদা পোশাকে এসেছিলেন। স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে তারা দ্রুত চলে যান। কারা অফিস ভাঙচুর করছে, আমার জানা নেই।’
মামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি তিনি আইনিভাবে মোকাবিলা করবেন বলেও জানান।
জানতে চাইলে ডিএনসি টেকনাফ বিশেষ জোনের সহকারী পরিচালক সিফাত তাসনিম বলেন, ‘ইসমাইলকে প্রধান আসামি করে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বাকিদের শনাক্ত করা হবে।
‘এ ঘটনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন:গাজীপুরে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের মাঝে চাপা পড়ে একটি অটোরিকশার চালকসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বুধবার রাত ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন ছালেহা আক্তার টুকটুকি (২৬), ইমরান হাসান রাজন (৩৮), মো. মামুন (২৩) ও মো. দুলাল (৪২)।
পুলিশ ও স্থানীয়দের ভাষ্য, বুধবার রাতে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটি ট্রাক ভোগড়া বাইপাস এলাকা থেকে চান্দনা চৌরাস্তাগামী যাত্রীবাহী একটি অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। ওই সময় সামনে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ওই অটোরিকশার ধাক্কা লাগে। একপর্যায়ে অটোরিকশাটি ট্রাক ও কভার্ডভ্যানের মাঝে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই চালক নিহত হন।
অটোরিকশার তিনজন যাত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানার এসআই দুলাল চন্দ্র জানান, চারজনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
দুর্ঘটনার বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:কয়েক দিন ধরে অতিরিক্ত ঘনকুয়াশায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দিনের বেলাতেও বাতি জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
এ মহাসড়কে কোনো যানজটের চিত্র না থাকলেও স্বাভাবিক গতির তুলনায় কিছুটা ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল লক্ষ করা গেছে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে মহাসড়কের যমুনা সেতু পূর্ব রেলস্টেশন, জোকারচর ও সল্লা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে ঘন কুয়াশার ফলে দিনের আলোতে লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এতে করে যানবাহন চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটছে না।
ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা নীলফামারীর সৈয়দপুরগামী হানিফ পরিবহনের চালক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই খুব কুয়াশা পড়েছে। এই কুয়াশার জন্যে দূরের কিছু দেখা যায় না। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলাতেও লাইট জ্বালিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে গাড়ি চালাচ্ছি।’
যমুনা সেতু পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর আশরাফ বলেন, ‘রাত থেকেই তীব্র কুয়াশা পড়েছে। ফলে স্বাভাবিক গতির চেয়ে কিছুটা কম গতিতে যানবাহন চলাচল করছে, তবে মহাসড়কে কোনো ধরনের যানজট নেই। এ ছাড়া দুর্ঘটনা রোধে পুলিশ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।’
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। এ অবস্থা সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটারের রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নোয়াপাড়াসহ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশেরও একই হাল।
এ ছাড়া আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর থেকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পর্যন্ত দুই লেনের সড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়কের এই দুরাবস্থায় বিশেষ করে পণ্যবোঝাই বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে যানবাহনের গতি কমেছে এবং ঘন ঘন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, যানজটের ভোগান্তি এবং ধুলাদূষণ যাত্রীদের জন্য প্রতিদিনের অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।
চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার একটি বড় অংশ ভেঙে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
মহাসড়কের বাইরে কুমিল্লার অন্যান্য আঞ্চলিক সড়কও বেহাল।
৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক খানাখন্দে পূর্ণ ও সরু হওয়ায় চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্য ভ্রমণ চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে।
যাত্রী ও চালকদের ওপর প্রভাব
কুমিল্লা বাসমালিক সমিতির সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, ‘কুমিল্লায় মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চালক-যাত্রী উভয়কেই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মিনিবাস চালক আবুল হোসেন প্রতিদিনের ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সরু রাস্তা, ভারী যানবাহন এবং গর্ত সব মিলিয়ে চালকদের জন্য একটি নিয়মিত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মুজাফফরগঞ্জ থেকে আসা যাত্রী আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা অংশটি তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চাঁদপুর অংশে যাতায়াত অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক বন্যা ও ভারি বর্ষণে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেন কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা।
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমরা ১৫ দিনের মধ্যে মেরামতের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছি।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের বৃহত্তম বন্দর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার সংযোগকারী প্রধান সড়ক হিসেবে কাজ করে।
মহাসড়কটি গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষির মতো শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকে সহজতর করে, যা আমদানি-রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এ রুট দিয়ে পরিচালিত হয়, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য এর গুরুত্ব তুলে ধরে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে শুধু সড়ক নিরাপত্তাই বিঘ্নিত হবে না, দেশের অর্থনৈতিক গতিও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বদলি ও রদবদলের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন জেলার ১২ পুলিশ সুপারকে (এসপি) একযোগে বদলি করা হয়েছে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার উপসচিব আবু সাঈদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুলিশ অধিদপ্তরের (টিআর) পুলিশ সুপার আবু সাইমকে রংপুরের পুলিশ সুপার, গাইবান্ধার কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার) ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার আবু সায়েম প্রধানকে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমকে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার, এসবির পুলিশ সুপার জাকির হোসেনকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দীনকে বরিশালের পুলিশ সুপার, এসবির পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলামকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পুলিশ অধিদপ্তরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেককে গাজীপুরের পুলিশ সুপার, এন্টি টেররিজম ইউনিটের ঢাকার পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুনকে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার, এপিবিএন সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার নিশাত অ্যাঞ্জেলাকে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার আসলাম শাহাজাদাকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এহতেশামুল হককে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এবং এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ারকে নওগাঁর পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনি সুযোগ না থাকায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারান্তরীণ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি হয়নি। এ সংক্রান্তে ঢাকা থেকে আসা এক আইনজীবীর তিনটি আবেদনই নাকচ হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলামের আদালতে বুধবার উপস্থিত হয়ে চিন্ময়ের জামিন শুনানি এগিয়ে আনাসহ তিনটি আবেদন করেছিলেন হাইকোর্টের এক আইনজীবী। কিন্তু ওকালতনামা না থাকায় আদালত তার তিনটি আবেদনই নামঞ্জুর করে।
এ সময় ওই আদালতে উপস্থিত চট্টগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বার্তা সংস্থা বাসসকে জানান, আসামি পক্ষে ঢাকা থেকে আসা আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ আদালতে তিনটি দরখাস্ত দিয়েছিলেন। এর একটি চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ ২ জানুয়ারি থেকে এগিয়ে আনার জন্য, একটি নথি উপস্থাপনের জন্য এবং অপরটি তাকে শুনানি করার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য।
আদালত অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষের কাছে জানতে চায়, তার কাছে ওকালতনামা আছে কিনা বা মামলা পরিচালনার জন্য আসামি পক্ষের আইনজীবীর অনুমতি আছে কিনা। এ সময় তিনি নেই বলে জানালে আদালত তাকে আইন মেনে আসতে বলেন।’
অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আদালতকে বলেছি ওনার এ ধরনের দরখাস্ত দেয়ার আইনি অধিকার নেই। তার কাছে আসামির ওকালতনামা নেই এবং যিনি এই মামলা ফাইল করেছেন তার পক্ষ থেকেও তাকে কোনো পাওয়ার দেয়া হয়নি।
‘শুনানি করা বা নথি উপস্থাপনের জন্য অবশ্যই ওকালতনামা দিতে হবে অথবা ফাইলিং আইনজীবীকে বলতে হবে- ঢাকা থেকে যিনি এসেছেন তিনি তাকে ক্ষমতা দিয়েছেন। কিন্তু ওই আইনজীবীর কাছে এর কোনোটাই ছিল না। তাই আদালত এটা রিজেক্ট করে দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। এরপর ২৫ নভেম্বর ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। ২৬ নভেম্বর জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। ৩ ডিসেম্বর জামিন শুনানির দিন থাকলেও কোনো আইনজীবী না থাকায় শুনানির দিন আগামী ২ জানুয়ারি ধার্য রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য