ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ির ঘটনায় পড়তে থাকা পুঁজিবাজারে পতন থামছে না। টানা পাঁচ দিন কমল সূচক। আর ৭ মাস পর লেনদেন নামল এক হাজার কোটি টাকার নিচে।
আগের কর্মদিবসে ৯৫ পয়েন্ট সূচক পতনের স্মৃতি নিয়ে বৃহস্পতিবার লেনদেনের আগেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ছিল চিড় ধরা। বেলা ১১টা পর্যন্ত সূচক তার অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও এরপর শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকায় শেষ পর্যন্ত ৬৫ পয়েন্ট পতন দিয়ে শেষ হয়েছে লেনদেন।
সূচকের এই অবস্থান গত ৮ নভেম্বরের পর সর্বনিম্ন। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৭৯৯ পয়েন্ট। সেদিনের পর থেকে সূচক বেড়ে ১৮ নভেম্বর দাঁড়ায় ৭ হাজার ৯১ পয়েন্ট। কিন্তু এরপর সেখান থেকে আবার শুরু হয় পতন।
সূচকের পতনের পাশাপাশি লেনদেনও কমে আসছিল গত কয়েক দিনে। এবার সেটি গত ২৮ এপ্রিলের পর প্রথমবারের মতো নেমে গেল এক হাজার কোটি টাকার নিচে।
১৩৬ কর্মদিবস আগে সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে হাতবদল হয়েছিল ৯৪০ কোটি ৩২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। আজ লেনদেন হয়েছে ৮৪৯ কোটি ৯৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
গত ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া বাজার সংশোধনে যে পর্যন্ত লেনদেন সেভাবে কমেনি, সে পর্যন্ত পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা সেভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। তবে লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে নামার পর তারাও এখন আর আশার কথা বলছেন না।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের সাবেক গবেষণাপ্রধান দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লেনদেন একটি পর্যায় পর্যন্ত ঠিক ছিল। সূচকের বড় পতন হলেও লেনদেন হাজার কোটি টাকার ওপরে ছিল। কিন্ত এখন তা এর অনেক নিচে নেমে আসায় কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে পতনে বিনিয়োগকারীরা এখন আতঙ্কিত। গত কয়েক সপ্তাহ আগে যে শেয়ার ৫০ টাকায় কেনা হয়েছে, সেটির দাম এখন ৩০ টাকার ঘরে। ফলে কেনা দামে আবার শেয়ার বিক্রি করা যাবে কি না, সেটি নিয়েও সংশয় আছে।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার যখনই ভালো হতে থাকে, তখনই বাংলাদেশ ব্যাংকের নজর আসে এদিকে। সম্প্রতি এক্সপ্লোজার লিমিটের কারণে কয়েকটি ব্যাংককে জরিমানা করায় অন্য ব্যাংকগুলো এখন হাত গুটিয়ে নিয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো যেভাবে বিনিয়োগে আসছিল সেখান থেকে ফিরে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এক্সপ্লোজার লিমিট অবশ্যই কেনা দাম বিবেচনা করা উচিত। মার্কেট প্রাইসের ভিত্তিতে বিবেচনা করলে যখনই বাজার ভালো হবে তখনই স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকের ওপর শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়বে। পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনার জন্য দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’
আগের দিনের মতো এদিনও প্রায় আড়াই শ কোম্পানির দরপতন হলো এক দিনে। দিন শেষে বেড়েছে কেবল ৮৯টি কোম্পানির দর, কমেছে ২৪১টির। ৩২টি কোম্পানি দর ধরে রাখতে পারে।
লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা পর বেলা ১১টায় সূচক দিনের সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৯২২ পয়েন্টে ছিল। সেখান থেকে বেলা ১১টা ৫৪ মিনিটে শেয়ার বিক্রির চাপে সূচক টানা নেমে আসে ৬ হাজার ৮৬০ পয়েন্টে।
সেখান থেকে কিছুটা উত্থান হলেও দেড়টাই সূচক দিনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে ৬ হাজার ৮৫০ পয়েন্টে।
সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় যারা
এদিন সূচক পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের। কোম্পানির শেয়ার দর দশমিক ৯৩ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৬.২৭ শতাংশ।
গত এক বছরে শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাওয়া বেক্সিমকো লিমিটেড আরও ২.০৭ শতাংশ দর হারানোয় সূচক কমেছে ৬.২৭ শতাংশ। কোম্পানিটির মালিকপক্ষ তিন কোটি শেয়ার কেনার ঘোষণা দেয়ার পরও দাম কমে যাওয়ার এই বিষয়টি বাজারের প্রতি অনাস্থার প্রমাণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ইউনাইটেড পাওয়ার অ্যান্ড জেনারেশনের শেয়ার দর কমেছে আরও ১.৯৫ শতাংশ। এতে সূচক কমেছে ৫.৭১ শতাংশ।
কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১৭ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত ৫০ টাকারও বেশি দর হারিয়েছে। যারা এই লভ্যাংশ নিয়েছেন, লাভ হয়নি তাদের। যত টাকা লভ্যাংশ পেয়েছেন, রেকর্ড ডেটের পর দাম কমেছে এর চেয়ে বেশি।
সূচক পতনে ভূমিকা রেখেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ১.৭ শতাংশ দরপতনও। এর ফলে সূচক থেকে কমেছে আরও ৩.১১ পয়েন্ট। দরপতন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাও।
ব্যাংক খাতের পাঁচটি কোম্পানিও সূচক ফেলে দিয়েছে অনেকখানি। এগুলো হলো হলো ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আইএফআইসি, সিটি ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
এই ১০টি কোম্পানির কারণেই সূচক পড়েছে ৩৪.৩ পয়েন্ট।
এর বিপরীতে আগের তিন দিন টানা পতন হওয়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার দর কিছুটা বাড়ায় সূচকে একক কোম্পানি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১.৪৫ পয়েন্ট যোগ করেছে।
ওরিয়ন ফার্মা, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, জেনেক্স ইনফোসিস, গ্রামীণফোন, আমান ফিড, ওয়ান ব্যাংক, বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ও আমান ফিডের শেয়ার দর কিছুটা বাড়ায় সূচকে অল্প কিছু পয়েন্ট যোগ করেছে।
তবে শেয়ার দর অল্প বাড়ার কারণে সূচকে খুব বেশি পয়েন্ট যোগ হয়নি। ১০টি কোম্পানি মিলিয়ে যোগ হয়েছে ৮.৭৩ পয়েন্ট।
আগের দিনের মতোই ঢালাও দরপতন হয়েছে ব্যাংক খাতে। তবে আগের দিনের মতো সব ব্যাংকের শেয়ার দর কমেনি। ৪টির দর অল্প বেড়েছে।
বিমা খাতেও দেখা গেছে একই চিত্র। এই খাতের ৫২টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৪৩টি। একটির দর ছিল অপরিবর্তিত। বেড়েছে কেবল ৭টির দর।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডে দর বৃদ্ধির হারও বেশি নয়, কমার হারও বেশি নয়। ১০ থেকে ২০ পয়সা পর্যন্ত পার্থক্য ছিল ইউনিটপ্রতি। সেখানেও ৩টির ইউনিট দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৫টির।
কেবল তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়তে দেখা গেছে। এই খাতের ১১টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ৬টির দর, কমেছে ৪টির। একটির লেনদেন ছিল স্থগিত।
দর বৃদ্ধিতে ১০ কোম্পানি
দর বৃদ্ধিতে থাকা সেরা ১০ কোম্পানির মধ্যে দুটি ছিল সদ্য তালিকাভুক্ত। তবে আগের মতোই দিনের সর্বোচ্চ দরেও শেয়ার বিক্রিতে আগ্রহী হয়নি বিনিয়োগকারীরা।
সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯৪ শতাংশ আর একমি পেস্টিসাইডসের দর বেড়েছে ৯.৮১ শতাংশ।
দর বৃদ্ধিতে বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতের আধিক্য ছিল বেশি। বস্ত্র খাতের নিউ লাইনের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.০৪ শতাংশ। আর দেশ গার্মেন্টসের শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৮৬ শতাংশ।
প্রকৌশল খাতের সুহৃদের দর বেড়েছে ৯.৬৭ শতাংশ। কোম্পানিটির লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ২১ লাখ ৫ হাজার ৯৪৫টি শেয়ার। একই খাতের আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের দর বেড়েছে ৬.৬৯ শতাংশ।
দর বৃদ্ধির সেরা দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সমতা লেদারের শেয়ার দর ৫.৪৫ শতাংশ, আমান ফিডের দর ৪.৬৫ শতাংশ, হেমিনি সি ফুডের দর ৪.৯৫ শতাংশ, আরামিট সিমেন্টের দর বেড়েছে ৪.৬৫ শতাংশ।
সেরা দশের পর ৩ শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে ৫টি কোম্পানির। দুই শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে ১৭টি কোম্পানির। আর ১ শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে ৩৩টি কোম্পানির।
দর পতনের সেরা ১০
সবচেয়ে বেশি দর পতন হওয়া কোম্পানির তালিকায় ছিল এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, যার ইউনিটপ্রতি দর কমেছে ৯.৮৭ শতাংশ। আগের দিন বুধবারও একই হারে দর কমেছিল এই ফান্ডটির।
ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৫১ পয়সা লভ্যাংশ যারা নিয়েছেন, রেকর্ড ডেট শেষে দ্বিতীয় দিনেই তারা লোকসানে পড়ে গেছেন। দুই দিনে ইউনিট দর কমেছে ১ টাকা ৭০ পয়সা।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল ন্যাশনাল টি কোম্পানি, যার শেয়ারপ্রতি দর কমেছে ৬.০৩ শতাংশ।
শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ার দর কমেছে ৫.৮৫ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৭৮ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭৪ টাকা। ২৩ লাখ টাকা লেনদেন হাতবদল হয়েছে ৩২ হাজার ১০২টি শেয়ার।
এ ছাড়া কেডিএস একসেসোরিজের দর কমেছে ৫.৭৪ শতাংশ। ৬৭ টাকা ৯০ পয়সার শেয়ার কমে হয়েছে ৬৪ টাকায়।
পেনিনসুলার দর কমেছে ৫.৬০ শতাংশ। ৩৫ টাকা ৭০ পয়সার শেয়ার কমে হয়েছে ৩৩ টাকা ৭০ পয়সা।
এ ছাড়া ঢাকা ডাইংয়ের দর ৫.২৪ শতাংশ, বারাকা পাওয়ারের দর ৫.১১ শতাংশ, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৪.৬৬ শতাংশ, জনতা ইন্স্যুরেন্সের দর ৪.৫৬ শতাংশ আর ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার পর এসএস স্টিলের দর কমেছে ৪.৪৪ শতাংশ।
লেনদেনে সেরা ১০ কোম্পানি
লেনদেনে সেরার অবস্থান এক দিন পরই ফিরে পেয়ছে বেক্সিমকো লিমিটেড, যার মোট ১১৮ কোটি ৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। হাতবদল হয়েছে ৬৮ লাখ ১৯ হাজার ২১৪টি শেয়ার।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর কমেছে ৩ টাকা ৬০ পয়সা। ১৭৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭০ টাকা ২০ পয়সা।
আগের দুই দিন লেনদেনে শীর্ষে থাকা ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি ২৭ লাখ টাকার। আগের দিন ৫ কোটির বেশি শেয়ার হাতবদল হলেও বৃহস্পতিবার হাতবদল হয়েছে ৩ কোটি ১৮ লাখ ৬ হাজার ১৭৩টি শেয়ার।
প্যারামাউন্ড টেক্সটাইলের ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪২টি শেয়ার ৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় হাতবদল হয়েছে। এই কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি লেনদেনের তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল।
চতুর্থ স্থানে থাকা ব্যাংক খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার দর হারিয়েছে ৫০ পয়সা। আগের দিন দাম ছিল ১৯ টাকা ২০ পয়সা, সেটি কমে হয়েছে ১৮ টাকা ৭০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক ছিল লেনদেনে সেরা ১০ কোম্পানির ৬ নম্বরে। ব্যাংকটির ১ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার ২৬৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়।
জেনেক্স ইনফোসিসের লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়। হাতবদল হয়েছে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৩টি শেয়ার।
এ ছাড়া ফরচুন সুজের ২৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, এনআরবিসির ২১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, সাইফ পাওয়ারটেকের ১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মার ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
ব্যাংক খাতের আরও কিছু প্রতিষ্ঠান লেনদেনে এগিয়ে থাকলেও কমেছে শেয়ার দর। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৪০ পয়সা। ব্যাংকটির লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের দর কমেছে ৫০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।
দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারে চলতি সপ্তাহ মোটেই ভালো কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের পতনের পর নববর্ষের ছুটি শেষে দ্বিতীয় কার্যদিবসেও বড় পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম—দেশের উভয় পুঁজিবাজার। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৭ পয়েন্ট। মন্দাবস্থা চলছে বাকি দুই সূচকেও। শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১০ এবং বাছাইকৃত শেয়ারের ব্লু-চিপ সূচক কমেছে ১৮ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭টি কোম্পানির মধ্যে সিংহভাগের দরপতন হয়েছে। আজ ৯৮টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২৫৫টি কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসেবে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’—তিন ক্যাটাগরিতেই প্রধান্য পেয়েছে দর কমা কোম্পানির সংখ্যা। বিশেষ করে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১১টির এবং কমেছে ৬৭টির; আর লেনদেন অপরিবর্তিত ছিল ৫টি কোম্পানির।
লেনদেন হওয়া ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে বেশিরভাগেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। মাত্র ৭টি কোম্পানির ইউনিটের দাম বৃদ্ধি হয়েছে, কমেছে ২৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫টির।
ডিএসইর ব্লক মার্কেটে আজ ২৬টি কোম্পানির মোট ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে মারিকো বাংলাদেশ।
ডিএসইতে সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। সারা দিনে মোট ৪৪৬ কোটি টাকার ওপর শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, গতদিন যার পরিমাণ ছিল ৪১৪ কোটি টাকা।
৯.৯৪ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ারের তালিকায় আছে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড। ১৪২.৯০ টাকায় লেনদেন শুরু হয়ে দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫৭.১০ টাকা।
অন্যদিকে, ৯.৯৬ শতাংশ দর হারিয়ে আজ একেবারে তলানিতে ঠাঁই হয়েছে খান ব্রাদার্সের। প্রতিটি শেয়ার ১৩৪.৫০ টাকা দরে লেনদেন শুরু হলেও দিন শেষে দাম কমে ১২১.১০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
চট্টগ্রামেও বড় পতন
.ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের বড় পতন হয়েছে। সারা দিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ১০০ পয়েন্ট।
লেনদেন অংশ নেওয়া ২১১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৪টির, বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৫টির এবং ২২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল অপরিবর্তিত।
সূচকের পাশাপাশি সিএসইতি আজ লেনদেনও কমেছে। গত কার্যদিবসে ১৫ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হলেও মঙ্গলবার তা কমে ৭ কোটি টাকায় নেমেছে।
এদিন ৯.৯৫ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে আর্থিক মূল্যে শীর্ষ শেয়ার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস লিমিটেড। অপরদিকে ৯.৭৭ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে নেমেছে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে আবারও সূচকের পতন ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে। দুই পুঁজিবাজারে সবকটি সূচক কমলেও বেড়েছে সামগ্রিক লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসএস ১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ কমেছে আধা পয়েন্টের বেশি।
সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। ডিএসইতে মোট ৪৮২ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগেরদিন ছিল ৪৫১ কোটি টাকা।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫০, বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৬ কোম্পানির। সারাদিনের লেনদনে দাম অপরিবর্তিত ছিল ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ এবং জেড ক্যাটাগরির বেশিরভাগ শেয়ারেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। বি ক্যাটাগরিতে দাম বেড়েছে অধিকাংশ শেয়ারের। মধ্যম মানের শেয়ারের এই ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ৮২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯, কমেছে ৩৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে তালিকাভুক্ত ৩৬ কোম্পানির ২৪টিরই দাম ছিল উর্ধ্বমুখী। দাম কমেছে ৪ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮ কোম্পানির।
ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া ২৬ কোম্পানির ২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে ব্যাংক এশিয়া সর্বোচ্চ ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ব্লক মার্কেটে বিক্রি করেছে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ দাম বেড়ে শীর্ষে আছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। অন্যদিকে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে তাল্লু স্পিনিং মিলস।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতো পতন হয়েছে চট্টগ্রামের সূচকেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১ পয়েন্টের বেশি।
তবে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে সিএসই'র বাজারে। সারাদিনে সিএসইতে মোট ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৩ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৬, কমেছে ৭৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে আছে পদ্মা ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এবং ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দাম কমে তলানিতে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকার পুঁজিবাজারে প্রধান সূচকের উত্থান হলেও সার্বিক সূচক কমেছে চট্টগ্রামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১ ও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩১, কমেছে ৬৮ এবং অপরিবর্তিত আছে ৭৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৩ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৭০ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০, কমেছে ১৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৭৩ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:টানা দুই দিন উত্থানের পর তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও ঢাকার পুঁজিবাজারে বইছে সুবাতাস।
সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৭ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক ডিএসইএস এবং ব্লু-চিপ কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১০ পয়েন্ট করে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগেরই দাম বেড়েছে। ১০৯ কোম্পানির দরপতন এবং ৫৩ কোম্পানির দাম অপরিবর্তিত থাকার বিপরীতে দাম বেড়েছে ২৩০ কোম্পানির।
ঢাকার মতো চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারেও বইছে চনমনে হাওয়া। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১০২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৭ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৭, কমেছে ৫১ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথমার্ধে সিএসইতে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবারের লেনদেনে সূচকের উত্থান হয়েছে ঢাকার পুঁজিবাজারে; বেড়েছে সবকটি সূচক।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে পতন দিয়ে শুরু হয়েছে লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে এবং বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপ সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় দাম বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের। দরবৃদ্ধির ২৪৫ কোম্পানির বিপরীতে দর কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে দিনের শুরুতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৯০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট। সূচক কমলেও বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেন হওয়া ১০২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৫, কমেছে ২৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:গত সপ্তাহের উত্থানের ধারা ধরে রেখে এ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন হয়েছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে থাকলেও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক বেড়েছে ৩ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬৯, কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর ৩০ মিনিটে ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ঢাকার মতোই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২২, কমেছে ৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম আধা ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য