আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নয়, বরং জনগণের জন্য সেবা ও ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে দেখে বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে বুধবার বিকেলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নেইনি। ক্ষমতা মানে হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া, জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ পাওয়া।’
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ আলোচনার প্রস্তাব উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। যদি করোনা মহামারি না থাকতো তাহলে আমরা এটা ১৭ ভাগে নামিয়ে আনতে পারতাম।’
বৈশ্বিক করোনা মোকাবিলায় সরকারের সফলতা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৯ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব হবে না। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে যেভাবে পারি সংগ্রহ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই অগ্রযাত্রার পেছনের কারণ সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। আমরা পরিকল্পিতভাবে সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
‘আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। সেই পরিকল্পনা কাঠামোও করে রেখেছি। আমরা ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই, সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি।’
এসডিজির বিষয়গুলো অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনায় সংযুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের জন্য দেশের নাগরিকদের প্রস্তুত করার লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দেশ হিসেবে এবং বাঙালি জাতিকে উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন জাতি হিসেবে উন্নীত করতে চাই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলার যে স্বপ্নটা জাতির পিতা দেখেছিলেন, সেই সোনার বাংলা আমরা গড়তে পারব।’
দেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য ভূমিকার কথাও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন হয়ে ভারত ঘুরে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাবাকে পাই পরে, জনগণ পায় আগে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তার কাছে জনগণই ছিল সবচেয়ে বড়।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা যে জায়গায় আসতে পেরেছি, সেই জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারতাম, যদি জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়।’
‘জাতির পিতা একটি কথা সবসময় বলতেন, ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। আসলে আমাদের ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল।’
আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে আবারও উন্নয়নের পথে পরিচালনা শুরু করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে, বিশ্বাস রেখেছে, বার বার ভোট দিয়েছে। সরকার গঠন করতে পেরেছি বলেই আজ আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে আনতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন:গণ-অভ্যুত্থানকালে দেশব্যাপী চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে হত্যাসহ অপরাপর গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাসমূহের মধ্যে কিছু মামলায় সম্প্রতি চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশীট দাখিলকৃত মামলাসমূহের (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ব্যতীত) প্রসিকিউশনের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও গতিশীল করার লক্ষ্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যেগে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আইন ও বিচার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন:
(১) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিম্নে নয়) (২) বাংলাদেশ পুলিশের একজন প্রতিনিধি (ডিআইজি পদমর্যাদার নিম্নে নয়) (৩) জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন কর্তৃক মনোনীত শহীদ পরিবারের একজন সদস্য (৪) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত একজন মানবাধিকার কর্মী, (৫) জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন কর্তৃক মনোনীত একজন আইনজীবী এবং (৬) আইন ও বিচার বিভাগের জিপি-পিপি অধিশাখার উপ-সলিসিটর (কমিটির সদস্য-সচিব)।
কমিটির কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে: (ক) কমিটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে দেশব্যাপী চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাসহ অপরাপর গুরুতর অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার পূর্ণাঙ্গ তালিকা সংগ্রহ করবে (মামলার বর্তমান পর্যায় উল্লেখসহ)। (খ) এরুপ মামলার মধ্যে যেসব মামলার চার্জশীট দাখিল হয়েছে, সেসব মামলায় (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ব্যতীত) প্রসিকিউশনের কার্যক্রম পরিচালনায় বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করবে (যদি থাকে) এবং উক্ত সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ সরকারের নিকট প্রেরণ করবে। (গ) কমিটি এর কার্যক্রমের অগ্রগতি ভুক্তভোগী পরিবার ও দেশবাসীকে সময়ে সময়ে অবহিত করবে এবং (ঘ) মামলার ভিকটিম ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ সরকারের নিকট প্রেরণ করবে।
এটি লক্ষ্যনীয় যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত হত্যার মামলার বিচার সুষ্ঠুভাবে চলমান রয়েছে। সরকার আশা করছে, নবগঠিত উপরোক্ত কমিটির কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রচলিত ফৌজদারি আদালতসমূহেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাসহ অপরাপর গুরুতর অপরাধের বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠু ও গতিশীল হবে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ বলেছেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা সত্যের মুখে দাঁড়িয়ে লড়তে পারে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত উশৃঙ্খলতা নিরসনে মাঠে নেমে পরলে এদেশের ছেলেমেয়েরা শুরু হতে লাগলো পরিবর্তনের হাওয়া। তিনি বলেন, আমাদের লজ্জা হওয়া উচিৎ কেনো আমরা বড়রা এই উশৃঙ্খলতা নিরসন করতে পারিনি, যা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ছোট ছোট বাচ্চারা তা আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছে। ওই গণঅভ্যুত্থানে ৭০% মেয়ে অংশ নিয়েছিল, তারা সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছে। সাইবার স্পেসকে নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে তরুণদের সহযোগিতা দরকার।
তিনি গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে ক্যাপিটাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন যথা সময়ে হবে। নির্বাচনের পথে যদি অতিরিক্ত সহিংসতা হয়, তাহলে নির্বাচন ভঙ্গুর হয়ে যাবে। ফলে সেটা যেনো না হয় সে কারণে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে জনগনকেও সরকারের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনী এলাকায় যেনো সহিংসতা না হয় সে খেয়াল রাখা আপনাদের দায়িত্ব, রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। সবাই বসে আছি কবে নির্বাচন হবে, সবাই মিলে যদি আমরা সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে নির্বাচন সহজ হবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে আমাদের দায়িত্ব অর্পণ করে যাবো, যাতে তারা সুনামের সঙ্গে মাথা উঁচু করে এদেশের মর্যদা রক্ষা করে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লি. নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়ার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাইমা ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান, সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খান, সোনারগাঁ ক্যাপিটাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি আক্তার হোসেন, পরিচালক খায়রুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরিক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯৯ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
নির্বাচনের চলাকালীন ও পরে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার গুরুত্ব উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, এ দায়িত্ব পালনে কোনো গণমাধ্যমকে বাধাঁ দেওয়া হবে না।
রোববার রাজধানীর তথ্য ভবনে ‘নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ বিষয়ক মতবিনিময়সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় অংশ নেন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশক, সম্পাদক ও সাংবাদিকরা। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অতীতের দুঃসহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তারা ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিশেষ করে নির্বাচনকালে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছরে গণমাধ্যম আস্থা হারিয়েছে। সেই আস্থা পুনরুদ্ধারে নির্বাচনকালীন সময়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে।
জনগণ ভোট দিতে গিয়ে সহিংসতার শিকার হবে না, সরকার সেই চিন্তা প্রতিষ্ঠা করবে। গণমাধ্যমও যেন এ চিন্তার বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে।’
তিনি আরও আহ্বান জানান, যদি কোনো সহিংসতা ঘটে, তবে গণমাধ্যম যেন তার মূল কারণ ও দায়দায়িত্ব খুঁজে বের করে প্রকাশ করে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ ও জবাবদিহিমূলক গণমাধ্যম অপরিহার্য।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন পর্যালোচনা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিতে পাঁচজন উপদেষ্টা রয়েছেন, যারা শুধু এ কমিশনের সুপারিশ নয়, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করছেন।
তিনি বলেন, যতটুক সংস্কার জনসমর্থন, রাজনৈতিক সমর্থন ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে, ততটুকুই টেকসই হবে।
তিনি আরও বলেন, বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম অন্তর্বর্তী সরকারের একটি চাওয়া। গণমাধ্যমকে জাতীয় স্বার্থেই জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করতে হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়লেই এর স্থায়িত্ব আসবে। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থে গণমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। শুধুমাত্র কাগজে পরিবর্তন আনলে স্থায়িত্ব আসবে না, এর জন্য প্রয়োজন মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন। সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখে বলেই আলাদা গণমাধ্যম কমিশন গঠন করেছে। সুপারিশের সারাংশ ও বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। সাংবাদিকদের পেশাগত উৎকর্ষ, সেল্ফ-রেগুলেশন, সেক্টরাল ইউনিটি এবং গণমাধ্যমকে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরির বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি গণমাধ্যমে নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা ও জনআস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যদি আমরা সবাই মিলে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে সেটিই হবে টেকসই। সরকার সহায়তা করবে, কিন্তু টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব গণমাধ্যমকেই নিতে হবে।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি সায়িদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সেন্টারের সদস্যসচিব ইলিয়াস হোসেন এবং বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. আল মামুন।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বনির্ভর ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রবিবার সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আটি ভাওয়াল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত প্রাণী ও প্রাণিখাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করাই সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা চাই গ্রামের সাধারণ মানুষ যেন ছোট পরিসরে হাঁস-মুরগি, ছাগল বা ভেড়া পালন করে নিজেদের সংসার চালাতে পারে, অতিরিক্ত আয় করতে পারে এবং ধীরে ধীরে সমাজের অন্যদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। প্রাণিসম্পদ খাত কেবল খাদ্য নিরাপত্তা নয়, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় ভরসা।
অনুষ্ঠানে মোট ২১৭টি পরিবারের মাঝে প্রাণিসম্পদ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৪টি পরিবারকে ২১টি করে হাঁস, ৬৯টি পরিবারকে ২৫টি করে মুরগি, ১০টি পরিবারকে ২টি করে ছাগল, ৭৪টি পরিবারকে ৩টি করে ভেড়া বিতরণ করা হয়। এর পাশাপাশি উপযুক্ত প্রাণিখাদ্যও প্রদান করা হয় যাতে উপকারভোগীরা তাৎক্ষণিকভাবে খামার কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু সুফিয়ান ও প্রকল্প পরিচালক ড. রহিম। আরও উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কারিশমা আহমেদ এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সাত্তার বেগ, কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন মুনমুনসহ অনেকে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সুফিয়ান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রাণিসম্পদ বিতরণ কার্যক্রম সরকারের এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং একই সঙ্গে মানুষের জীবনমানও উন্নত হবে।
স্বচ্ছতা বজায় রেখে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা ও নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। বিসিএস পরীক্ষা হলো এন্ট্রি পয়েন্ট।
যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তারাই সরকার চালাবে। কাজেই এন্ট্রি পয়েন্টে যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয় তাহলে গোটা সিস্টেমে সেটার প্রভাব থেকে যাবে।’
দায়িত্ব নিয়ে সমস্যা ও সংকটগুলো সমাধান করে ফেলতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সবাই মিলে চেষ্টা করতে হবে। যারা ভবিষ্যতে সরকার চালাবে তাদের জন্যও এটা প্রয়োজন।’
বৈঠকে সরকারি কর্ম কমিশনের আর্থিক স্বায়ত্তশাসন ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করেন কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম।
তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যেই পাঁচ বছরের রোডম্যাপ দিয়েছে এবং প্রতিবছর নভেম্বর থেকে পরের বছরের অক্টোবর মধ্যেই পরীক্ষা ও নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
কমিশন সদস্যরা জানান, গত ১৫ বছর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বিসিএস পরীক্ষায় নানা ধরনের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটেছে। পিএসসিতে যেন আর কখনো অনিয়ম ফিরে না আসে, এটি যেন সবার আস্থার জায়গা হয় সেটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রশ্নপত্রের মান এমনভাবে উন্নীত করা হচ্ছে যাতে এই পরীক্ষার প্রস্তুতি দিয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাতেও চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রতিযোগিতা করতে পারেন।
মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ রোববার এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়া বদরুদ্দীন উমর ছিলেন আমাদের মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতি সংগ্রামের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা, গবেষণা, ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি তাঁর অবিচল নিষ্ঠা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।
তিনি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের পরিবর্তনের জন্য গোড়া থেকেই গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেছেন এবং জুলাই আন্দোলনকে উপমহাদেশের একটি অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি দিয়েছেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর শুধু একজন তাত্ত্বিক ছিলেন না, ছিলেন একজন সংগ্রামী, যিনি আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার।
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তাশীল মানুষদের জন্য তাঁর লেখনী ও জীবনদর্শন এক অনন্য পথনির্দেশ হিসেবে কাজ করবে।
শোকবার্তায় বদরউদ্দীন উমরের শোকসন্তপ্ত পরিবার, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত ৯৪ বছর বয়সী বদরুদ্দীন উমর আজ সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মন্তব্য