করোনাকেন্দ্রিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ধনী দেশগুলো থেকে এবার বেশি বাণিজ্য, সেবা ও প্রযুক্তিগত সুবিধা চাইবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি)।
বিভিন্ন যৌক্তিক সুবিধা পেতে ঐক্যবদ্ধ ও সরব হচ্ছে এ তালিকার ৪৭টি দেশ। বাংলাদেশসহ উত্তরণ স্তরে থাকা বিশ্বের ছোট-বড় অর্থনীতির ১৬টি দেশও রয়েছে এ তালিকায়।
স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের এই অবস্থান জানান দেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রিপর্যায়ের দ্বাদশ সম্মেলনে, সংক্ষেপে যা ‘এমসি-১২’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে।
৩০ নভেম্বর থেকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় চার দিনের এ সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মোট ১৬৪টি দেশ।
বর্তমানে এলডিসির সমন্বয়ক হচ্ছে আফ্রিকার দেশ চাদ। তবে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর নতুন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুবিধা আদায়ের বিষয়ে ডব্লিউটিওর সম্মেলনে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ।
জেনেভায় ডব্লিউটিওর এই সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যোগ দিচ্ছেন।
এ সম্মেলনে এবার মূল এজেন্ডা থাকবে করোনায় দেশগুলোর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ।
এ আলোচনায় আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ধনী দেশগুলোও। ফলে এ সম্মেলনে এলডিসিসহ ধনী-দরিদ্র সব দেশের জন্য এটিই আলোচনার প্রথম ও অভিন্ন আলোচ্য।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে যাতে ডব্লিউটিওর ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এবং টেকনোলজি ট্রান্সফার কর্মসূচির আওতায় প্রদেয় সুবিধাগুলোর পরিধি বাড়ানো যায় এবং তা প্রাপ্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়, সে লক্ষ্যে জোটবদ্ধ আওয়াজ তুলবে এলডিসি এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের পর্যায়ে থাকা দেশগুলো, যেখানে বাংলাদেশ থাকবে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায়।
এ ছাড়া করোনা ভ্যাকসিনের প্রতিষেধক এবং এর মেধাস্বত্ব যেন উন্নত দেশগুলো আটকে না রেখে সক্ষম অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, তারও জোরালো দাবি তোলা হবে।
বর্তমানে এলডিসিভূক্ত ৪৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ উত্তরণ স্তরে রয়েছে। এসব দেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময় ডব্লিউটিওর বিদ্যমান শুল্ক সুবিধা বহাল রাখা-না-রাখা ইস্যুতেও সরব হবে।
ওষুধ উৎপাদনে মেধাস্বত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। ওষুধের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এ সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাবে। কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এসব সুবিধা আর থাকবে না। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে। শুধু মেধাস্বত্ব সুবিধা প্রাপ্তিতেই নয়, উত্তরণের পর রফতানি বাজারও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শুল্ক বাড়বে।
এভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাড়তি শুল্কের চাপে পড়বে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে পণ্য রপ্তানিতে চাপমুক্ত থাকতে উত্তরণকারী দেশগুলোর সম্মেলনে অবস্থানও হবে অভিন্ন।
অন্যদিকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের দেশের মৎস্য খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে মাছ ধরার ট্রলারকে বিনামূল্যে তেল দেয়া হয়। বিশেষায়িত ট্রলার তৈরিতেও ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। বেশি মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে খাতসংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন, গবেষণায়ও ভর্তুকি দেয় দেশগুলো। এর ফলে এসব দেশ অনেক বেশি মৎস্য আহরণ করে। এটি ভৌগলিক পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোর জন্য হুমকি।
এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ বন্ধে এ খাতে ভর্তুকি তুলে দেয়া এবং দুর্বল দেশগুলোকে এ খাতের সক্ষমতা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সুবিধা দিতে জোর দাবি তুলবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো।
ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ কোন কোন বিষয় উত্থাপন করবে, এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর ভূমিকা কী হবে, শুল্ক সুবিধা প্রদানকারী ধনী দেশগুলোর ভূমিকা কেমন থাকবে এবং তাদের থেকে কী ধরনের ফলাফল আশা করা হচ্ছে- এমন প্রশ্ন তোলা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের কাছে।
এর জবাবে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, এবারের ডব্লিটিও মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। এটি সব এলডিসিরও কমন ইস্যু। বিষয়গুলো হলো: কোভিড-১৯ রিকভারি, এলডিসি গ্রাজুয়েশন সাবমিশন এবং ফিশারিজ সাবসিডি।
এলডিসি গ্রাজুয়েশন সাবমিশন সম্পর্কে বাণিজ্য সচিব জানান, গ্রাজুয়েশনের পর ১২ বছর জিএসপি সুবিধার প্রস্তাব ছিল এলডিসি গ্রুপের, যা পরে ৬-৯ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই সম্মেলনে সেটি আদায়ে চেষ্টা থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দাবির সঙ্গে উত্তরণকারী দেশগুলো ছাড়াও সব এলডিসিরাই থাকবে। কারণ বাংলাদেশ যদি উত্তরণের পর চলমান সুবিধা ৯ বছর ভোগ করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশকে মডেল দেখিয়ে একই রকম সুবিধা এলডিসিভূক্ত অন্যান্য দেশগুলোও ভোগ করতে পারবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, এবারের সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত বাণিজ্য, সেবা ও প্রযুক্তিগত অগ্রাধিকার সুবিধা প্রাপ্তি এবং এ ক্ষেত্রে অসামাঞ্জস্য থাকলে তা সমাধানে করণীয় নির্ধারণের নানা দিক। এরপর সেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর আলোচনার ভিত্তিতে যেটা চূড়ান্ত হবে, সেটাই সিদ্ধান্ত আকারে আসতে পারে।
হাফিজুর রহমান বলেন, তবে মোটাদাগে কোভিড-১৯ রিকভারি, এলডিসি গ্রাজুয়েশন সাবমিশন এবং ফিশারিজ সাবসিডি’ এই তিনটি ইস্যুই গুরুত্ব পাবে।
তিনি জানান, সম্মেলনে মূল এজেন্ডার বাইরে সাইডলাইনে আলোচনা হতে পারে এলডিসি প্রেফারেন্সিয়াল ইস্যু, রুলস অফ অরিজিনের শর্ত শিথিল, এলডিসিদের জন্য সার্ভিস ওয়েভার বৃদ্ধি, ই-কমার্সসহ ডব্লিউটিও সংস্কারের মতো আরও কিছু বিষয়ে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডব্লিউটিও সেলের এই মহাপরিচালক জানান, ফিশারিজ ভর্তুকির ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় বিধিনিষেধ আসবে, অনিয়ন্ত্রিত সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারবে না। ওভার ফিশিং, স্টক ফিশিং বা সাসটেইনেবল লেভেলের চেয়ে বেশি ফিশিং হয়ে গেছে এমন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারবে না। ওভার ক্যাপাসিটি বা অধিক সক্ষমতা থাকলেও ভর্তুকি দেয়া যাবে না। আলোচনায় বাংলাদেশ এ দাবি তুলবে। পাশাপাশি অন্যদের মতো বাংলাদেশও এই সক্ষমতা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সুবিধা দাবি করবে।
এলডিসির এসব দাবির বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর মনোভাব কী জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, গত প্রায় দুই বছর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মন্দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থাটির প্রভাবশালী সদস্যরা এরই মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও সেসব দেশকে বিশেষ কোনো বাণিজ্য সুবিধা দেয়া যায় কিনা, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে।
আরও পড়ুন:দেশের ক্রমবর্ধমান স্টার্ট-আপ খাতকে অর্থায়ন সুবিধা দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের সাথে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই চুক্তির আওতায় স্টার্ট-আপ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সৃষ্ট ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ব্যবহারের সুযোগ পাবে ব্র্যাক ব্যাংক, যা ব্যাংকটির এই খাতে অর্থায়ন সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে। এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, অর্থায়ন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উদীয়মান উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং তাঁদেরকে জাতীয় অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে উৎসাহিত করা।
২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব এসএমই ব্যাংকিং সৈয়দ আব্দুল মোমেন চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অংশগ্রহণকারী ২২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের সহায়তায় এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এই সম্ভাবনাময় খাতের উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশের স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই খাতটি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে টেকসই সম্পর্কও গড়ে তুলছে। ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন সুবিধাটি উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন পেতে সহায়তা করবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
ব্র্যাক ব্যাংকের এমন উদ্যোগ বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোগগুলোর বিকাশে ব্যাংকটির ব্যক্ত করা প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে।
ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি.:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি. ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ২৯১টি শাখা ও উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১,১২১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং দশ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৪ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
দেশে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার খাতে স্মার্ট ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী ব্যাটারির ব্যবহার বাড়াতে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ও সোলশেয়ার লিমিটেড কৌশলগত অংশীদারিত্বে যুক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিমিয়া সাআদত এবং সোলশেয়ার লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ড. সেবাস্টিয়ান গ্রোহ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি ব্যাংকের, হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মো. আরিফুল ইসলাম; হেড অব এডিসি অ্যান্ড হেড অব এমডি’স কোঅর্ডিনেশন টিম মো. মামুন-উর রহমান; সোলশেয়ার-এর ফাইন্যান্স ডিরেক্টর আনিসা আলী, সিএফএ সহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এই অংশীদারিত্বের ফলে দেশের শত শত বৈদ্যুতিক পরিবহনের গ্যারেজ সহজেই স্মার্ট ব্যাটারি প্রযুক্তি গ্রহণে সক্ষম হবে। এখন পর্যন্ত উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেক উদ্যোক্তা ব্যাটারি ব্যবহারে আগ্রহী হলেও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতায় তা সম্ভব হচ্ছিল না। কমিউনিটি ব্যাংকের গ্রিন এসএমই ঋণ সুবিধা ও সোলশেয়ার -এর উদ্ভাবনী পে-অ্যাজ-ইউ-গো (পিএওয়াইজি) প্রযুক্তি একত্রে উদ্যোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী, নমনীয় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে গ্যারেজ মালিকরা টেকসই অর্থায়ন সুবিধা পাবেন, দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে জ্বালানি-সাশ্রয়ী ব্যাটারি ব্যবহার, দেশের বৈদ্যুতিক পরিবহন খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে এবং বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানির দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
এই উদ্যোগকে দেশের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থার জন্য এক মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
যমুনা ব্যাংক পিএলসি. এবং অ্যাপোলো ক্লিনিক লাইসেন্সঃ জেএমআই স্পেশালাইজড হাসপাতাল লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে রাজধানীর যমুনা ব্যাংক টাওয়ারে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। যমুনা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিও নূর মোহাম্মদ এবং অ্যাপোলো জেএমআই স্পেশালাইজড হাসপাতাল লিমিটেডের উপদেষ্টা মসিউর রহমান কামাল উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে যমুনা ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিওও মো. আব্দুস সালামসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই চুক্তির মাধ্যমে যমুনা ব্যাংক তাদের সম্মানিত গ্রাহক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাঁদের পোষ্যদের জন্য বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য ও সুফলদায়ক করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অ্যাপোলো ক্লিনিকের লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেএমআই স্পেশালাইজড হাসপাতালের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে।
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত সোমবার কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার হতদরিদ্র কৃষক ও রিকশাচালককে স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির করপোরেট প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ইমতিয়াজ ইউ. আহমেদ হতদরিদ্র কৃষক ও রিকশাচালক মো. মেহেদী হাসানকে ওই অনুদানের চেক প্রদান করেন।
ওই অনুদানের চেক প্রদানকালে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির এসইভিপি ও কোম্পানি সচিব জনাব মো. আবুল বাশার, ব্যাংকের এসএভিপি মো. জাকির হোসেন, ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগ ও ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ইনচার্জ কে. এম. হারুনুর রশীদ এবং ব্যাংক ফাউন্ডেশন এর এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. কামাল মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সীমান্ত ব্যাংকের উদ্যোগে শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) এবং টেকনাফ (কক্সবাজার) উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হয় এবং বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করা হয়। শ্যামনগরের ৭টি এবং টেকনাফে ২টি বিদ্যালয়ে গাছের চারা রোপণ করা হয়।
সীমান্ত ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হোসেন এবং শ্যামনগর উপশাখার ব্যবস্থাপক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম যথাক্রমে টেকনাফ এবং শ্যামনগরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী সমন্বয় করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীগন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করেন।
বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজারো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে যক্ষ্মা (টিবি)। কেবল ২০২৩ সালেই ৪৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে- ফলে প্রতি ১২ মিনিটে একজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন যক্ষ্মায়। এই জাতীয় সংকট মোকাবেলায় সাহসী উদ্যোগ নিয়েছে প্রাইম ব্যাংক পিএলসি। জীবনরক্ষাকারী যক্ষ্মা প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে প্রাইম ব্যাংক বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি-এরর সাথে অংশীদারিত্ব করেছে।
আজ (০৯ সেপ্টেম্বর) গুলশানে প্রাইম ব্যাংকের করপোরেট অফিসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রাইম ব্যাংক এক বছরের জন্য আইসিডিডিআর,বি-এর সিলেট টিবি স্ক্রিনিং অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার (TBSTC)-এর যক্ষ্মা পরীক্ষার ও চিকিৎসা সেবার ধারাবাহিকতায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। প্রাইম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান ও. রশীদ এবং আইসিডিডিআর,বি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমীদ আহমেদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
দেশে যক্ষ্মা প্রতিরোধে দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে স্ক্রিনিং করেছে। এ সময়ে শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি টিবি রোগী, যার মধ্যে ১৮ হাজার শিশু। পাশাপাশি ৫,৫০০-এরও বেশি ওষুধ-প্রতিরোধী টিবি রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই সহযোগিতার মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কমিউনিটির কল্যাণে তাদের অঙ্গীকার আরও জোরদার করছে। ব্যাংকটি প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু হ্রাস এবং একটি সুস্থ, সহনশীল বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।
০২। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাস্টমস হাউস/স্টেশনে আমদানিকালে দাখিলকৃত পণ্য ঘোষণায় প্রদত্ত পণ্যের বর্ণনা ও HS Code কায়িক পরীক্ষায় পণ্যের নমুনা কিংবা শুল্কায়ন পরবর্তী সময়ে পণ্যের ঘোষিত বর্ণনা পরিবর্তিত হয়, যা ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স অথবা প্রাপ্যতা শীট বা সংশ্লিষ্ট Utilization Declaration (UD) তে অন্তর্ভূক্ত থাকে না। ফলে শুল্কায়নকালে উহা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে যথাসময়ে কাঁচামাল/পণ্য খালাস না হওয়ায় রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণে বিঘ্ন ঘটছে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অবগত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ও রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে জরুরি বিবেচনায় নিম্নরূপ নির্দেশনা প্রদান করা হলো:
(ক) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভিন্ন HS Code নিরূপণ করলে এবং নিরূপিত HS Code এর প্রথম ৪ ডিজিট বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত HS Code এর প্রথম ৪ ডিজিট এর সাথে মিল থাকলে; আমদানিকারক পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে এই নিরূপিত HS Code বন্ড লাইসেন্সে ও ইউডিতে অন্তর্ভূক্ত করবেন মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস এর কমিশনার এর নিকট দাখিল করবেন যার বিপরীতে কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
(খ) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভিন্ন বর্ণনা নিরূপণ করলে; আমদানিকারক পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে উক্তরূপ নিরূপিত পণ্যের বর্ণনা বন্ড লাইসেন্সে ও ইউডিতে অন্তর্ভূক্ত করবেন মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস এর কমিশনার এর নিকট দাখিল করবেন যার বিপরীতে কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
গ) বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভূক্ত বর্ণনা ও HS Code অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দাখিল করার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভিন্ন HS Code নিরূপণ করা হলে এবং বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে তার প্রাপ্যতায় উক্ত HS Code অন্তর্ভুক্ত করলে কাস্টমস হাউস এর কমিশনার পণ্যচালান খালাসের অনুমতি প্রদান করবেন এবং পণ্য চালান খালাসের তথ্য সংশ্লিষ্ট বন্ড কমিশনারেটকে অবহিত করবেন।
০৩। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে; এবং বর্তমানে উক্তরূপ কারণে শুল্কায়ন নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমান পণ্যচালানসমূহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
মন্তব্য