ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় চলাচল করা বাস থেকে ছাত্রলীগ কমিশন পায়, তাই শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের আন্দোলনে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা হামলা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশের আগে মশাল মিছিলের আয়োজন করে সংগঠনটি। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে হাফ পাসের দাবিতে ঢাকার কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে ফেরার পথে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়। এ হামলার প্রতিবাদেই এই মশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়।
মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে বিন ইয়ামিন বলেন, ‘আমরাও ছাত্র, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও ছাত্র। আমাদের হাফ পাস লাগে কিন্তু তাদের লাগে না কেন? কারণ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যেসব বাস চলাচল করে, সেখান থেকে ছাত্রলীগের কিছু চাঁদাবাজ কমিশন পায়। মাসিক মাসোহারা পায়।’
তিনি বলেন, ‘বাস কর্তৃপক্ষ যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া দেয়, তাহলে তাদের মাসোহারায় টানাপোড়েন বেড়ে যাবে। তাই তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে হাফ ভাড়ার আন্দোলন বন্ধ করতে চায়।’
ছাত্রলীগ কর্মীদের উদ্দেশে বিন ইয়ামিন বলেন, ‘মাসোহারার টাকায় বড় ভাইদের পকেট ভরলেও আপনাদের কিন্তু বাসে উঠলে ঠিকই ফুল ভাড়া দিতে হবে। সুতরাং বড় ভাইদের ভয়ে চুপ না থেকে শিক্ষার্থীদের কাতারে নেমে আসুন।’
প্রজ্ঞাপন দিয়ে হাফ পাস নিশ্চিতের দাবিও জানান বিন ইয়ামিন।
তিনি বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো আন্দোলন না চাইলে অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নিশ্চিত করুন।’
সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের যেখানেই অপরাধ সংঘটিত হয়, সেখানেই ছাত্রলীগ জড়িত থাকে। ছাত্রলীগ ছাত্র সংগঠন থেকে সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। হাফ পাস কোনো ভিক্ষা নয়, এটি আমাদের অধিকার। এই অধিকার বাস্তবায়নের আন্দোলনে যারাই হামলা করবে তাদের প্রতিহত করা হবে।’
সায়েন্সল্যাব মোড়ে হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতিও আহবান জানান আকরাম।
সমাবেশে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম, ঢাবি শাখার সহসভাপতি আসিফ মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক সালেহ সিফাত, নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক নুসরাত তাবাচ্ছুমসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ শাখার অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নীলফামারী জেলার ১০টি কলেজের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বোর্ডের অধীনে নীলফামারীর ১০টি কলেজের ৪০ জন শিক্ষার্থীর কেউই উত্তীর্ণ হয়নি।
কলেজগুলো হলো, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ সৃজনশীল কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, সৈয়দপুর উপজেলার সাতপাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নয়নখাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৮ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, একই উপজেলার চেওড়াডাঙ্গী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৯ জনের মধ্যে ৬ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, গোলমুন্ডা আদর্শ কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন, ডিমলা উপজেলার জেলা পরিষদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ১ জন ও মানবিক বিভাগের ১ জন,একই উপজেলার নাউতারা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন,ডিমলা সীমান্ত কলেজের মানবিক বিভাগের ২ জন এবং গয়াখড়িবাড়ি মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জনের মধ্যে ২ জন ফেল ও ১ জন অনুপস্থিত।
নীলফামারী জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর (২০২৫) জেলায় ৯৩টি কলেজের ১২ হাজার ১৮৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৭ হাজার ৫২৪ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮১ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) পাসের হার বিগত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবারের পাসের হার ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যা গত বছরের তুলানায় ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম। গতবছর পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এছাড়া এবার জিপিএ-৫ কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭ জন। যা গতবার পেয়েছিল ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে ফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ এবং সচিব এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ২ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫৩ হাজার ৫৬০ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৪৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ছাত্রীদের পাসের হার ৫৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে পাসের হার ৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ। জেলায় পাসের হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৩৫ দশমিক ৫৩ এবং বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ৭৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৫৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ও মানবিক বিভাগে পাসের হার ৩৭ দশমিক শূন্য ৮০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী ফলাফলের বিষয়ে বলেন, এবার মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ছিল খাতার মূল্যায়ন যেন মেধার ভিত্তিতে হয়। শিক্ষার্থী খাতায় লিখে যে নম্বরটি পাবে, সেটাই যেন মারকিং করা হয়। অতি মূল্যায়নের সুযোগ ছিল না। আমি পরীক্ষার পর সব প্রধান নিরীক্ষকদেও ডেকে এটাই বুঝিয়েছিলাম; রুব্রিক্স পদ্ধতিতে যেন খাতা কাটা হয়। তাছাড়াও জুলাই আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটেছিল। যা সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্সের ফলাফলে ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করলেন ইমরান হোসেন। একই সাথে অসামান্য সাফল্যের জন্য ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইমরান হোসেন।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডিনস অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের হাত থেকে ইমরান হোসেন ডিনস অ্যাওয়ার্ড অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
ইমরান হোসেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ডহরপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।
ইমরান হোসেন ঢাবির আররি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। স্নাতকে তিনি ৩.৮৫ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পঞ্চম হন। এবার মাস্টার্সের ফলাফলেও তিনি ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে যৌথভাবে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন।
ইমরান হোসেন ২০১৬ সালে বলুহার ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও ২০১৮ সালে ঢাকা মাদ্রাসা ই আলিয়া থেকে আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে ভর্তি হন।
এছাড়া তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বাঁশবাড়িয়া মাদ্রাসা থেকে ২০০৯ সালে কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। এসময় গওহরডাঙ্গা আঞ্চলিক বোর্ড ১০ম স্থান অর্জণ করেন।
ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন। এছাড়া ঢাকার মাদ্রাসাতুস সালমান থেকে মুফতি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইমরান হোসেন বলেন, ১৪ বছর আগে বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ায় ভেবেছিলাম লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ছোট ভাই রেজোয়ান ইসলাম পরিবারের হাল ধরে আগলে রাখেন। পরিবারের সকলের সহযোগিতার জন্য আমার লেখাপড়া অব্যাহত থাকে এবং এই ফলাফল অর্জনে সক্ষম হই।
কোটালীপাড়া সাংবাদিক ফোরামের আহবায়ক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলেন, একটি কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা ইমরান হোসেনের এই ফলাফল সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের। ইমরান হোসেন কোটালীপাড়ার মুখ উজ্জ্বল করেছে। পরবর্তী প্রজন্ম ইমরান হোসেনের এই ফলাফলে অনুপ্রাণিত হবে।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। হাদিরা-ভাদুড়িচর কলেজ ও নারুচি স্কুল এন্ড কলেজের কারিগরি শাখায় একজনও পাস করেনি। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের পাশের হার ৬৪.৬২%, কিন্তু গোপালপুর উপজেলায় এ হার আরো কম। জিপিএ-৫ পেয়েছেন জেনারেল শাখায় মাত্র ৩ জন ও কারিগরি শাখায় ১জন। অকৃতকার্য হন ৬১২জন। গোপালপুর সরকারি কলেজে জেনারেল শাখায় পাস ২৪৮, ফেল ২৭৫ ও কারিগরি শাখায় পাস ১৩৭ ফেল জন। খন্দকার ফজলুল হক কলেজে জেনারেল শাখায় পাস ৩৯, ফেল ৩১ ও কারিগরি শাখায় পাস ২৫, ফেল ৪০ জন।
নারুচি স্কুল এন্ড কলেজের কারিগরি শাখায় ৬৯ পরীক্ষার্থীর সবাই ফেল, জেনারেল শাখায় পাস ১২ ও ফেল ৫৭ জন। হেমনগর ডিগ্রি কলেজে জেনারেল শাখায় ২১৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস ৬৭ জন এবং কারিগরি শাখায় পাস ৩৪ ও ফেল ৫৫ জন।
মেহেরুন্নেসা মহিলা কলেজে জেনারেল শাখায় ১৯৩ জনের মধ্যে পাস ১০৪ জন এবং কারিগরি শাখায় পাস ২০, ফেল ১৯জন। খন্দকার আসাদুজ্জামান একাডেমির জেনারেল শাখায় ১ জনের মধ্যে ১ জন পাস এবং কারিগরি শাখায় পাস ৮, ফেল ৫৫ জন। শিমলা পাবলিক মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ জনে ১জন পাস। হাদিরা-ভাদুড়িচর কলেজে জেনারেল শাখায় ১২ শিক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি এবং কারিগরি শাখায় ৭জন সবাই ফেল। গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য মোবাইল আসক্তিকে দায়ী করেন।
বিপর্যস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক ব্যবস্থা নিবেন জানতে চাইলে বলেন, আমাদের কিছু করনীয় নেই।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তুহিন হোসেন জানান, গোপালপুর সরকারি, বেসরকারি সব কলেজে ঠিকমতো ক্লাস হয়না। শিক্ষকরা নিয়মিত কলেজে আসেন না। এজন্য ফলাফল বিপর্যয় ঘটে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। এবার নওগাঁ জেলায় ফলাফল কিছুটা হতাশাজনক। গতবারের তুলনায় কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং সামগ্রিক পাসের হার।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলার ৮৬টি কলেজ থেকে মোট ১৪ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৪৩৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। সবচেয়ে হতাশাজনক দিক হলো- জেলার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বদলগাছী উপজেলার বালুভরা আর.বি. হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের চারজন পরীক্ষার্থীর সবাই ফেল করেছে। মান্দা উপজেলার দুটি প্রতিষ্ঠান- মান্দা এস.সি. পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নয়জন পরীক্ষার্থী এবং ভারশো হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের একমাত্র পরীক্ষার্থীও উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
এছাড়া আত্রাই উপজেলার সাহেবগঞ্জ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের চারজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে দুইজন অনুপস্থিত ছিলেন, আর উপস্থিত দুইজনই ফেল করেছেন। নিয়ামতপুর উপজেলার শাংসইল আদিবাসী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন অনুপস্থিত, আর বাকি ২০ জনই ফেল করেছেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের ফলাফল গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। তারা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে খারাপ ফল হচ্ছে, সেখানে শিক্ষকদের উপস্থিতি, পাঠদানের মান ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ নিয়ে তদন্ত করা হবে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাশের হার ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে সাংবাদিকদের নিকট ফলাফল হস্তান্তর করেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহাঃ তৌহিদুল ইসলাম।
শিক্ষা বোর্ডের প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ১ লাখ ৮ হাজার ৬৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশগ্রহন করে ১ লাখ ৫ হাজার ৮৯১ জন। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬০ হাজার ৮৮২ জন পরীক্ষার্থী। গড় পাশের হার ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২৬০ জন। পাশের হার জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মধ্যে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২৬০ জন। জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৭৭৪ জন ও ছাত্রী ৩ হাজার ৪৮৬ জন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম আরো জানান, ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় শতভাগ অকৃতকার্য কলেজের সংখ্যা ৪৩টি ও
শতভাগ পাসকৃত কলেজের সংখ্যা ১১টি।
তিনি জানান, এবারে ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশী পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষক ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া শতভাগ অকৃতকার্য হওয়া কলেজগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের প্রফেসর তৌহিদুল ইসলাম।
ফলাফল ঘোষণার সময় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সচিব নূর মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর সাজ্জাদ আলী, সহকারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারীদের মধ্যে মো. মুজাহিদুল ইসলামসহ বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
এইচএসসি পরীক্ষায় একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়াতে আত্মহত্যা করেছে নুসরাত জাহান নাজনীন (১৮) নামে এক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে বরিশাল নগরীর বাংলা বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নুসরাত বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাওঘা গ্রামের মৃত বশির মৃধার মেঝ মেয়ে। তিনি বরিশালের বাংলা বাজার এলাকায় বড় বোন রাহাত আনোয়ারের (একজন নার্স) সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আশিষ কুমার সাহা। তিনি বলেন, দুপুর ১২টার দিকে নুসরাতকে হাসপাতালে আনা হলে আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সে আত্মহত্যা করেছে।
বরিশাল সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নুসরাত। সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেরে বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম ) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নুসরাত বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তিনি গণিতের এমসিকিউ অংশে অকৃতকার্য হন। এ ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানান।
সহপাঠীরা জানান, নুসরাত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন, তার এমন মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। নুসরাত আসলে ভালো ফল করেছে, শুধু একটি বিষয়ে (হাফ-ইয়ারলি মেথ) এমসিকিউ অংশে অকৃতকার্য হয়েছিল। রেজাল্ট পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ ছিল। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই বেদনাদায়ক।
মন্তব্য