জাল কাগজপত্র দাখিল করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন নির্মাণের ৭৫ কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে সাবেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও তার এক সহযোগী ঠিকাদার ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
ওই মামলায় জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন। অভিযোগ আছে, জি কে শামীম গ্রেপ্তার হলেও বাইরে থেকে ঠিকাদারি কাজের নামে অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত স্বপন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক প্রতারণা মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন নির্মাণের জন্য ৭৫ কোটি টাকার কার্যাদেশ যৌথভাবে পায় জিকেবিএল এবং দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স (জেভি)। মো. গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম ঢাকার জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল করিম চৌধুরী। কাজটি পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান দুটিকে জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তির মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানো হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ একাডেমিক ভবন (দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন) নির্মাণকাজের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-জিকেবিএলকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর কাজটির চুক্তি হয়। এরপর ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর জাল কাগজপত্র দাখিল করে প্রতারণার মাধ্যমে কাজটি পাওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম। মামলার দুই আসামি হলেন জি কে শামীম ও ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এই দুই কোম্পানি তাদের দরপত্রে দাখিল করা কাগজপত্রের সঙ্গে আগের পাঁচ বছরে কমপক্ষে একটি ৩৫ কোটি টাকার বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ সন্তোষজনকভাবে সমাপ্তির সনদপত্র জমা দেয়। আগের পাঁচ বছরে গড়ে কমপক্ষে ৪১ কোটি টাকার টার্নওভার এবং ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার লিকুইড অ্যাসেটসংক্রান্ত কাগজপত্রও জমা দেয়।
মো. গোলাম কিবরিয়া শামীম ও মো. ফজলুল করিম চৌধুরী প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানির প্রকৃত নিবন্ধিত নামের সঙ্গে একক মালিকানাধীন ফার্মের নাম সংযুক্ত করে নিবন্ধনের সনদ জমা দেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো চুক্তির কাগজপত্র জমা দেননি। এ ছাড়া নিবন্ধিত প্রকৃত শেয়ারসংখ্যার চেয়ে বেশি শেয়ার দেখানো হয়। ১০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ও টার্নওভারসংক্রান্ত যে কাগজপত্র জমা দেয়া হয়, তাও জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির অযোগ্যতা ও অদক্ষতার সুযোগে ব্যবসায়ী হিসেবে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে অতি সূক্ষ্ম তথ্যগত জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয়-প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করে ওই কার্যাদেশ হাসিল করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
ধরাছোঁয়ার বাইরে স্বপন চৌধুরী
প্রায় ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ধীরগতিতে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে জিকেবিএল-দি বিল্ডার্স। সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আওতায় ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর জি কে শামীম গ্রেপ্তার হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন। জি কে শামীম কারাগারে থাকলেও স্বপন চৌধুরী পুরো কাজ তদারকি করছেন, মাঝে মাঝে বিলের টাকা তুলছেন।
দুদকের মামলার পরও কেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাতিল করা হয়নি, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিকেবিএল-দি বিল্ডার্স জাল কাগজ জমা দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নিয়েছে, এটা আমরা জেনেছি দুদকের মামলার পর, ততদিনে অনেকটুকু কাজ এগিয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনা করে দেখল যে, এখন যদি কাজটা বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে রাষ্ট্রের অনেক টাকা নষ্ট হবে। সেই সঙ্গে কাজ বন্ধ করে আবার নতুন কাউকে কাজ দিতে গেলে মাঝে অনেক সময় নষ্ট হবে। সে জন্য আমরা কাজটি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তুলে আনতে চাইছি। তা ছাড়া মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের কাজের ওপর আদালত থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞাও আসেনি। তাই এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করাতে আইনি কোনো বাধা নেই। তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ করবে বলে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে কাজ শেষ না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে দুদকের মামলার পর সেটির তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্তকাজ শেষ হতে আর কত সময় লাগেবে, সেটিও নিশ্চিত করতে পারছেন না দুদকের কোনো কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। সেই সুযোগে গ্রেপ্তার এড়িয়ে ঠিকাদারি কাজের নামে নানান প্রতারণা করে যাচ্ছেন ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামকে ফোন করা হলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এরপর দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২-এর উপপরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দনের কাছে একই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কোনো তথ্য দিতে পারবেন না জানিয়ে প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
এরপর কয়েক দফা দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরেফ সাদিককে টেলিফোন করা হলে এ মামলার তদন্তের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি তিনিও। তবে জানান, শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
চট্টগ্রামে দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লোকবলসংকটের কারণে এই মামলা তদন্তে ধীরগতি রয়েছে। অন্যান্য তদন্তের চাপ থাকায় সময়মতো চার্জশিট দিতে পারছেন না দুদকের এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।’
জি কে শামীম গ্রেপ্তার হলেও ফজলুল করিম স্বপন গ্রেপ্তার হচ্ছেন না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়। চার্জশিট দাখিল হলে আর সেখানে যদি ওই আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়, তখন আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যদি প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। এখন মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন কি না, তা তদন্ত কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।’
মামলার সবশেষ শুনানি আর পরবর্তী শুনানি কবে, জানতে চাইলে মাহমুদুল হক বলেন, ‘শেষ শুনানি কবে ছিল তা ঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত ২৩ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য আছে।’
ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের এই মামলা ছাড়াও অর্থ আত্মসাতের একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। কিন্তু এরপরও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন স্বপন চৌধুরী।
রাজধানীতে চামড়ার দাম প্রতি ফুটে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে তার প্রভাব পড়েনি বাস্তবে, আগেরবারের মতো এবারও কম দামে গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
প্রতি বর্গফুট গরুর চমড়ার দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও চামড়া বিক্রি হয়েছে গতবারের মতোই ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কুরবানিদাতাদের থেকে তারা সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন এবং ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
উত্তরার চামড়া ব্যবসায়ী হেফাজ উল্লাহ বলেন, ‘কুরবানিদাতাদের থেকে ৭৫০ টাকায় চামড়া সংগ্রহ করে রীতিমতো বিপদে পড়তে হয়েছে। এই এলাকায় ভালো মানের চামড়ার দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা। এর ওপরে কোনোভাবেই চামড়া বিক্রি করা যায়নি।’
বাড্ডার চামড়া ব্যবসায়ী সিরজা বলেন, ‘কাঁচা চামড়ার চাহিদা এবারও তলানিতে। ভালো দামে চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। একটি ভ্যান আর দুইজন লেবার নিয়ে যে খরচ হয়েছে তার তুলনায় মুনাফা হয়নি বললেই চলে। সারাদিনের কষ্ট বৃথা।’
খিলক্ষেতের চামড়া ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, ‘আগে জানলে এত দাম দিয়ে চামড়া কিনতাম না। প্রতিবারই ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দাম দিতে অনাগ্রহ দেখায়। এতে আমাদের মধ্যেও দাম দিয়ে চামড়া কেনার প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।’
তবে এ ব্যাপারে ট্যানারি পরিচালক ও এজেন্টরা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণ দেয়া প্রস্তুতকৃত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ট্যানারি থেকে কাঁচা চামড়া কেনায় দাম কম পড়েছে। তবে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় সব চামড়া কেনা হয়েছে; এমন তথ্য ভুল দাবি করেছেন তারা। অনেক ভালো মানের চামড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়ও কেনা হয়েছে বলে জানান ট্যানারি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, গতবারের মতো এবারেও ছাগলের চামড়া চাহিদা নেই বললেই চলে। অনেকেই বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া দিয়ে দিয়েছেন, অনেকক্ষেত্রে দাম উঠেছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।
এবারের ঈদে সবমিলিয়ে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ট্যানারি মালিকরা যার সিংহভাগ সংগ্রহ হয়েছে ঈদের প্রথম দিনেই।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ফেরি থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিটকে নদীতে পড়ে নিখোঁজের সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর দুই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
শনিবার ভোরে উপজেলার বিশনন্দী ফেরিঘাটে অটোরিকশাটি মেঘনা নদীতে পড়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল সন্ধ্যা ৬টার দিকে নদী থেকে অটোরিকশাটি উদ্ধার করে। অটোরিকশার ভেতর থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মৃত দুই নারী হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার রসুলাবাদ এলাকার মোসাদ্দেক হোসেনের স্ত্রী খালেদা বেগম (৪০) ও তাঁর ছেলে সাগর হোসেনের স্ত্রী ফারজানা বেগম (১৯)।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ফেরি থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিটকে নদীতে পড়ে নিখোঁজের সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর দুই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
শনিবার ভোরে উপজেলার বিশনন্দী ফেরিঘাটে অটোরিকশাটি মেঘনা নদীতে পড়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল সন্ধ্যা ৬টার দিকে নদী থেকে অটোরিকশাটি উদ্ধার করে। অটোরিকশার ভেতর থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মৃত দুই নারী হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার রসুলাবাদ এলাকার মোসাদ্দেক হোসেনের স্ত্রী খালেদা বেগম (৪০) ও তাঁর ছেলে সাগর হোসেনের স্ত্রী ফারজানা বেগম (১৯)।
পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটতে গিয়ে অসাবধানতাবশত শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
শনিবার(৭ জুন) সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জেলা সদরসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে আসা আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ধারালো ছুরি, চাপাতি বা দা ব্যবহারে অদক্ষ থাকায় হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে যায়। যদিও অধিকাংশ আহতের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন—ফুলবাড়িয়া এলাকার পাবেল মিয়া (২৭), ঘাটুরা গ্রামের সেলিম (৪৫), চাঁনপুরের আরস মিয়া (২৬), জহিরুল হক (৫০), মো. মিলন (২৩), আজিজুল (২১), শাকিব (২৮), জীবন (৪০), সুমন (২৬), রামরাইলের আলামিন (২৩), আক্কাস (৪৫), উবায়দুল (৩৩), ইউবিন (২২), রহমত আলী (৫৫), সুলতানপুর এলাকার আবু সুফিয়ান (১৫), সাদেক (১৮) সহ অনেকেই। কারও হাতে, কারও বা পায়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
আহত সুফিয়ান বলেন, পায়ের নিচে রাখা মাংস কাটতে গিয়ে অসতর্কভাবে ছুরির কোপ পায়ে লাগে। পরে হাসপাতালে এসে সেলাই নিতে হয়।
আরেকজন, রিকশাচালক আরস মিয়া বলেন, মাংস কাটার সময় হাত ফসকে ছুরি লেগে যায়। হাসপাতালে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শুভ্র রায় বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন রোগী আমাদের এখানে এসেছেন। এদের প্রায় সবাই কোরবানির পশুর মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। গুরুতর কেউ নয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন করার জন্য কলাবাগান শিশু পার্ক সংলগ্ন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মো: রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বলেন, শহরে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না হলে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এমনকি রোগ-জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ১২ ঘন্টা সময়ের মধ্যেই সকল বর্জ্য অপসারণ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন এ বছর কোরবানির বর্জ্যের কারণে নগরবাসীর ঈদ আনন্দ বাঁধাগ্রস্ত হবে না।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১০০০০ হাজারের অধিক জনবল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডারসহ বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে ৭৫টি ওয়ার্ডে মোট ২০৭৯টি যানবাহন নিয়োজিত রয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপিত হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার একান্ত সচিব জনাব মো: আবুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মোঃ মাহাবুবুর রহমান তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া পাচার রোধে সীমান্ত এলাকাগুলোতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) শরীফুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কাঁচা চামড়া পাচার ও ভারতে পুশ-ইনের যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ঈদ মৌসুমে কাঁচা চামড়া পাচার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন বাস্তবতায় সীমান্তজুড়ে নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ভারতের দিক থেকে যেকোনো পুশ-ইন ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে সীমান্তরক্ষী এই বাহিনী।
বিজিবির পিআরও আরও জানান, ঈদের দিনেও ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবির সদস্যরা। টহল ও নজরদারি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া যাতে বৈধ বাণিজ্য চ্যানেলের মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করছে বিজিবি।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ঈদ মৌসুমজুড়েই তারা সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে বলে জানানো হয়।
ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে প্রস্তুত করা হয়েছে সিলেটের সাতটি প্রধান পর্যটন স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলের টিলা, চা-বাগান, ঝরনা ও স্বচ্ছ জলের ধারায় মুগ্ধ হতে ছুটে আসছেন সারা দেশের ভ্রমণপিপাসুরা।
সিলেট মহানগরীর আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি, শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজার, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, শাহী ঈদগাহ ও গৌর গোবিন্দের টিলা। তবে নগরীর বাইরে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলোই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের মনোযোগ কাড়ছে।
সাদাপাথর (ভোলাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ): সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাদাপাথরে চোখে পড়ে দিগন্তজোড়া সাদা পাথরের মেলা, স্বচ্ছ নীল জল, আর পাহাড়ের কোলে ঝরনার ধারা। ধলাই নদীর জলে মিশে প্রকৃতি এখানে যেন তার রঙের খেলায় ব্যস্ত।
রাতারগুল: দেশের একমাত্র স্বীকৃত জলাবন রাতারগুল বর্ষায় ২০ থেকে ৩০ ফুট পানিতে ডুবে থাকে। ৭৩ প্রজাতির গাছগাছালিতে ঘেরা এ বনাঞ্চলে নৌকাভ্রমণ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
জাফলং: মেঘালয়ের পাদদেশে পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত জাফলং পর্যটকদের কাছে বছরের পর বছর ধরে প্রিয় গন্তব্য। পাথরের স্তূপ, ঝরনা ও খাসিয়া সংস্কৃতির পাশাপাশি শ্রীপুর চা-বাগান ও ইকোপার্কের সৌন্দর্য জাফলং সফরকে স্মরণীয় করে তোলে।
রাংপানি (গোয়াইনঘাট): সাদা পাথর ও পাহাড়ি ঝরনার মিলনস্থল রাংপানির পাশে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম মোকামপুঞ্জি অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫৪ কিলোমিটার।
উৎমাছড়া (কোম্পানীগঞ্জ): ঝরনার স্বচ্ছ জলের ধারা, সবুজ পাহাড় এবং বিশাল পাথরের বিছানায় ঘেরা উৎমাছড়ায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে।
লালাখাল (কানাইঘাট): নীলজলের লালাখাল ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। আঁকাবাঁকা নদীপথ, পাশের পাহাড়ি বন ও চা-বাগান লালাখালকে করেছে ছবির মতো সুন্দর।
লোভাছড়া (কানাইঘাট): ঐতিহাসিক লোভাছড়া চা-বাগান ও তার আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝুলন্ত সেতু, ঝরনা, খাসিয়া গ্রাম এবং ব্রিটিশ আমলের স্থাপনাগুলো একসঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় এখানে। সুরমা ও লোভা নদীর মিলনস্থলও এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সহায়তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে এ্যামি বেগম নামে এক গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
শনিবার (৭ জুন) সকালে উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী হাসিবুল পলাতক রয়েছেন।
নিহত এ্যামি বেগম একই ইউনিয়নের ইসরাক হোসেনের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। এর জেরে শনিবার ঈদের দিন সকালে হাসিবুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রী এ্যামি বেগমের গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে পাটগ্রাম থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের কারণেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত হাসিবুলকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে।
মন্তব্য