নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন নুরুজ্জামানকে। ভোটের ফলের চূড়ান্ত তালিকাও দেন তাকে। সেই তালিকা নিয়ে বিজয় মিছিল করে বাড়ি ফেরেন তিনি।
তবে তাকে না জানিয়ে রাতেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে জয়ী দেখিয়ে তালিকা সাঁটিয়ে চলে যান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
এমন ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লক্ষ্মীপুর বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন নুরুজ্জামানের সমর্থকরা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লক্ষ্মীপুর বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।
সেখানে নুরুজ্জামান অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে ফলাফলের কাগজ দেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
সেখানে ফুটবল প্রতীকে তার প্রাপ্ত ভোট দেখান ৮১৮। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোরগ প্রতীকে আকতার হোসেনের ভোট ছিল ৭৯৮। এই ফলাফল নিয়ে তিনি ও তার সমর্থকরা বিজয় মিছিল করে বাড়ি ফেরেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কলম দিয়ে কাটাকাটি করে সেই ফল বদলে আকতারকে বিজয়ী দেখিয়ে তালিকা দেয়ালে টানিয়ে দিয়ে চলে যান। একই ফল তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেন।
এ বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এনামুল হক দাবি করেন, চূড়ান্ত ফল তুলতে ভুল হওয়ায় পরে তা সংশোধন করা হয়েছে।
ফল সংশোধনের সময় নুরুজ্জামান নিজে বা তার কোনো প্রতিনিধি ছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি কেউ উপস্থিত ছিলেন না বলে স্বীকার করেন।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী নেতা শেখ মো. নিজামের বালুর রাজ্যে হানা দিয়েছেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার পশ্চিম উজানচর এলাকায় শেখ নিজামের মালিকানাধীন গোধূলি পার্কে অভিযান চালিয়ে সেখানকার বিশাল জলাশয় থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে ৩টি ড্রেজার মেশিনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ৫টি বালুবাহী ট্রাক জব্দ করেন ইউএনও।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে শেখ নিজাম সেখানে তার ক্রয়কৃত কয়েক শ বিঘা জমিতে মৎস্য প্রকল্পের পুকুর খননের নামে বিপুল পরিমাণ মাটি ও বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। এভাবে সেখানে পুকুরের নামে বড় বড় দিঘির সৃষ্টি করে তিনি কোটি কোটি টাকার মাটি ও বালু বিক্রি করেন।
এ বিষয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধেও ছিল সহায়তার অভিযোগ। প্রকল্পের আশপাশের বহু লোকের কৃষি জমি ওই জলাশয়ে ধসে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হয়েছে একাধিকবার মানববন্ধন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে অনেক সংবাদ।
কিন্তু শেখ নিজাম রাজবাড়ীর সাবেক এমপি ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর একান্ত স্নেহধন্য হওয়ার সুবাদে সেখানে প্রশাসন কখনোই কোনো ধরনের অভিযান চালায়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কাজী কেরামত আলী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মোট ৪টি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস এবং মাটি ও বালু পরিবহনের দায়ে ১০টি মাটি বহনকারী ড্রাম ট্রাক জব্দ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাহিদুর রহমান।
এদিকে গত ৬ মে মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মাখন রায়ের পাড়া এলাকায় মরা পদ্মা নদী হতে বালু উত্তোলনের দায়ে শহিদ নামের এক বালু ব্যবসায়ীর একটি ড্রেজারের ৫০-৬০টি পাইপ ধ্বংস করে উপজেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহায়তার অভিযোগ এনে স্থানীয় দুলাল বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তির উপর চড়াও হয়েছেন বালু ব্যবসায়ী সহিদ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য লিপু মন্ডল।
তবে ইউএনও নাহিদুর রহমান জানান, লিপু মন্ডলের সেখানে একটি সরকারি রাস্তায় বালু ফেলার কথা থাকলেও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বালু ফেলা হচ্ছিল। সে জন্য সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। দুলাল বিশ্বাস বা এলাকার অন্য কেউ এ বিষয়ে তাকে কিছু বলেনি।
ইউএনও আরও জানান, অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলন কিংবা নদী ও জলাশয় হতে বালু উত্তোলন বন্ধ করে সড়কে জান-মালের নিরাপত্তা ও ক্ষতিরোধ নিশ্চিত করতে এ ধরনের অভিযান আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। ভবিষ্যতেও চলবে।
অভিযানে আটক করা মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকগুলোর চালকরা পলাতক রয়েছেন। মালিকরা এলে তাদের কাছ থেকে বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা আদায়সহ সতর্ক করা হবে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাচন অফিস অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ দুর্ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দিলে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই অফিসের ঘুষ ও দুর্নীতির বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ভুক্তভোগীরা পোস্ট দিচ্ছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ভোটার জটিলতার কারণে নাগরিক নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তরসহ সব কাজেই গুনতে হয় টাকা। ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা থেকে নির্বাচন অফিসার বুলবুল আহমেদ এখানে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই তিনি বিভিন্ন ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রবাসীরা তাদের ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে এলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি ঘুরাতে থাকেন। পরে জরুরী ভিত্তিতে করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোট অংকের টাকা দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। তার অফিসে প্রায় ১ হাজার সেবা প্রার্থীর ভোটার স্থানান্তর ও সংশোধনের তদন্ত প্রতিবেদন আটকে রয়েছে। এই কর্মকর্তাকে ৩ বছর আগে এ ধরনের অনিয়ম ও সেবাপ্রার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করায় কুমিল্লার সদর থেকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায়।
সরেজমিনে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের দিকে নির্বাচন অফিসের সামনে ও বিভিন্ন কক্ষের ভেতর সেবাগ্রহীতাদের ঘুরতে দেখা যায়। নির্বাচন কর্মকর্তা ভিড় ঠেকাতে অফিসের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রাখেন। নতুন আইডি কার্ড করতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে শতাধিক সেবাগ্রহীতা এসেছেন। বেশ কয়েকজন দালাল অফিসের ভেতরে অবস্থান করে। সেবা গ্রহীতারা দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই অফিসের পিয়ন শহীদ রুমে ঢুকতে দেন। পরে মেলে কাজের রাস্তা। দালালদের অধিকাংশই নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মচারীদের সাথে রয়েছে সখ্যতা।
ভুক্তভোগী শাহিদুর রহমান অভিযোগ করে জানান, গত ৩০ এপ্রিল বেলা ২ টার দিকে নতুন ভোটার হতে বেগমগঞ্জ নির্বাচন অফিসে যান। নির্বাচন কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ আবেদনে কাগজপত্রের ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। তিনি একইভাবে অন্যান্য নতুন ভোটারদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর গ্রামের শাকিল তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন, তিনি এরআগে এনআইডি সংশোধন করতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েছিলেন। নির্বাচন কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ সংশোধন হবে না মর্মে জানিয়ে দেন। পরে তার কাছে সংশোধন করিয়ে দিতে ১০ হাজার টাকা ঘুষ করেন। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তার সাথে দুর্ব্যবহার করে ওই কর্মকর্তা তার রুম থেকে তাড়িয়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেগমগঞ্জ নির্বাচন অফিসের এক কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ এই অফিসে যোগদান করার পর অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়েছে। তিনি নিজেই সেবা প্রার্থীদের কাছে এনআইডি সংশোধন, স্থানান্তর ও নতুন ভোটার হতে ঘুষ নেন। আর সেবা প্রার্থীদের সাথে প্রতিদিন দূর ব্যবহার করে থাকেন। বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, নতুন ভোটার হতে সেবা প্রার্থীরা ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে আসেন। তাই তিনি একটু রাগান্বিত হন। এখান থেকে সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া লোকজনই ফেইসবুকে দুর্নাম ছড়াচ্ছে।
ময়লা-আবর্জনা আর অবৈধ দখলের কারণে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ জারিরদোনা শাখা খালটি। এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব ও প্রশাসনের উদাসীনতাকে দুষছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা সদর হাজিরহাট বাজার অংশে জারিরদোনা খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় বহু দোকানপাট ও বহুতল ভবন। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই খালের পানি বাধাগ্রস্ত করে ইচ্ছামতো সরু পুল, কালভার্ট নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। সেই সঙ্গে গড়ে তুলেছেন অবৈধ দোকানপাট। এ ছাড়া এলাকার কিছু প্রভাবশালী বাজারের আবর্জনা দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে খালটি ভর্তি করে ফেলেছেন। যাতে করে পরে সময় সুযোগ বুঝে ওই স্থান দখলে নেওয়া যায়।
এলাকাবাসী জানান, চরফলকন, চরলরেন্স, হাজিরহাট ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিকাজ এ খালের পানি প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানি সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়, তেমনি বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনজনিত সমস্যায় সয়াবিন, ধান, মরিচ, বাদাম ও সবজীসহ বিভিন্ন ফসল ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্তমান এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা চলছে। খালটি দখলের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় জীবনযাত্রা চরম দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের। বন্যার পানি না নামার কারণ হিসেবে খাল দখলকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
হাজিরহাট এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নূর সেলিম বলেন, জারিরদোনা শাখা খালটির সংযোগ সরাসরি মেঘনা নদীর সঙ্গে। আশির দশক পর্যন্ত এ খালটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হিসেবেই বিবেচিত ছিল। এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যেও এর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ওই সময়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে বাস-ট্রাক যাতায়াত করা ছিল দুর্সাধ্য। এমনকি ৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এ অঞ্চলের সড়ক পথই ছিল না।
এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৮০ দখলবাজের কবজা থেকে খালটি উদ্ধার করতে উচ্ছেদের আদেশ হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। তারা খাল উদ্ধারে গড়িমসি করে সময় পার করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্যমতে, পিএস জরিপে হাজিরহাট বাজার অংশে খালের প্রশস্ততা ছিল গড়ে প্রায় ৩২ ফুট। বর্তমান আরএস জরিপে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ ফুটে। কিন্তু কিছু ইমারত (ভবন) এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে ওই সব অংশে খালের প্রশস্ততা বর্তমানে ২ থেকে ৩ ফুটের বেশি নেই।
হাজিরহাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাছান বলেন, ‘এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে খালটি সংস্কার করে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা একান্ত জরুরি। পুরো খাল দখল করে যারা ইমারত তৈরি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে খালটি দখলমুক্ত করা এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাত হুসাইন বলেন, ‘জারিরদোনা খাল দখলমুক্ত করতে ইতোমধ্যে আদেশ হয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত-উজ জামান বলেন, খালটি সংস্কার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
গত মার্চের ১৯ তারিখে চাল না দেওয়া ও চাল সংগ্রহে চুক্তি না করায় রাজশাহী বিভাগে ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে খাদ্য বিভাগ। রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য বিভাগ থেকে চাল সংগ্রহ মৌসুম শেষ হওয়ার পর সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এই সুপারিশ পাঠানো হয়। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল সরবরাহ না দেওয়ায় রাজশাহী বিভাগের ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চাল সরবরাহ করেনি এসব চালকল মালিকরা। এছাড়া চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে অসহযোগিতাকারী ৯১৩টি চালকলকেও সাবধান করা হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সাথে চুক্তি করেও ঠিকভাবে চাল সরবরাহ দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ১৬২টি। এর মধ্যে চুক্তির ৮০ ভাগ চাল দিয়েছে এমন চালকলের সংখ্যা ৩০টি। ৫০ ভাগ চাল দিয়েছে- এমন চালকলের সংখ্যা ৭১টি। আর চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চালই দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ৬১টি। এছাড়া, ব্যবসা করলেও চাল সরবরাহের চুক্তি না করা চালকলগুলোরও লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ।
রাজশাহী খাদ্য অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে আমন সংগ্রহ ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬,৩৫৯ টন, সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৯৫ টন (লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭%), সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন। আর আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন।
৬১টি চালকলের মধ্যে যারা সিদ্ধচালের কোনো চালই প্রদান করেনি- এমন চালকল রাজশাহীর একটি, নওগাঁয় ৮টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ তিনটি, পাবনায় ১১টি, বগুড়ায় ৩৪টি ও জয়পুরহাটে তিনটি। আর আতব চাল দেয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি মিল। এর আগে এসব চালকল মালিকদের ব্যাখ্যা তলব করা হয়। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় এসব চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
রাজশাহী খাদ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি উপপরিচালক ওমর ফারুক বলেন, সরকারি যেকোনো কাজে চুক্তিবদ্ধ হলে তা বাস্তবায়ন না করতে পারলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। যেসব মিল চুক্তি করেও ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে, তাদের জামানত থেকে জরিমানা কেটে নেওয়ার আর যারা কোনো চাল সরবরাহ করেনি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছিলাম। রাজশাহী বিভাগের যে সব মিল চাল দেয়নি বা চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি- এমন মিল ৯১৩টি মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের শোকজ করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা চাল সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
নীলফামারীর জলঢাকায় ইজারাবিহীন খাসে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারে গরু-ছাগল ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, সরকারি খাস খতিয়ানে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারের পশুরহাটে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু ক্রেতার কাছ থেকে রশীদ ফি ৬০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদাসহ গরু প্রতি মোট ৮০০ টাকা আদায় করছেন হাট-বাজারের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ। এ হাট-বাজারে প্রশাসনের কাউকে দেখা না গেলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুইজন ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক হাট বাজারের অফিসে উপস্থিত হতে দেখা যায়। তারা হলেন গোলনা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও কাঁঠালী ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। মীরগঞ্জ হাট-বাজারের টোল আদায়ের মুল দায়িত্বে ছিলেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক সময়ে হাটে এসেছি। তারা আমাদের চাপে ফেলে হাটের টোল আদায় করছেন। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করেছি।
তারা কারা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা বিএনপি-জামায়াতের লোকজন। সংবাদকর্মীদের দেখে হাট-বাজারের থাকা ক্রেতা বিক্রেতা এগিয়ে এসে বলেন, গত ৩টা হাটে শুধু গরু ক্রেতার কাছে রশীদের ফি বাবদ ৬০০ টাকা নিয়েছেন। আর যারা গরু বিক্রেতা ছিলাম আমাদের কাছ তেকে কোন প্রকার চাঁদা নেয়নি। কিন্তু আজকের হাটে গরু ক্রেতার কাছে রশীদের মাধ্যমে ৬০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছে বিধি পরিপন্থি অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নেয়। হাটের লোকজন আমাদের কাছে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। একপর্যায়ে একদল লোক দৌড়ে এসে সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হয় এবং আক্রোশমুলক গালমন্দ করতে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা এবং হত্যার হুমকি প্রদর্শন করেন।
লোকমুখে জানা যায়, তারা উপজেলা বিএনপির একাংশ একটি গ্রুপের বাহিনী। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের বাংলা ১৪৩২ সালে উপজেলার ২৬টি হাট ইজারা দেওয়ার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে ১৭টি হাটের দরপত্র জমা হলে বিধিমোতাবেক দরপত্র দর দাতাদের মধ্যে হাট-বাজার গুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে ৯টি হাটের কোন দরপত্র জমা না হওয়ায় হাট-বাজার গুলো খাস খতিয়ানে চলে যায়। খাস খতিয়ানে যাওয়া হাট-বাজার গুলো হলো, মীরগঞ্জ হাট-বাজার, পাঠানপাড়া হাট-বাজার, হলদিবাড়ী নালারপাড় হাট-বাজার, হলদিবাড়ী জয়বাংলা হাট-বাজার, নবাবগঞ্জ হাট-বাজার, ডিয়াবাড়ী হাট-বাজার, বালারপুকুর চৌধুরীর হাট-বাজার, হরিশ্চন্দ্রপাঠ হাট-বাজর, খুটামারা রহমানিয়া হাট-বাজার ইত্যাদি। এই হাটগুলো বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন তাদের নিজেদের নিয়োগকৃত জনবল দিয়ে হাট-বাজারের টোল আদায় করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, লিখিতভাবে কাউকে হাট-বাজার দেওয়া হয়নি। কিন্তু খাস খতিয়ানের হাট-বাজারে কিছু লোকের সহযোগিতা নিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ২০০ টাকা টোল আদায়ের কোন এখতিয়ার নেই। যদি এরকম কোনো প্রমাণ আপনারা দিতে পারেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোরের শার্শা উপজেলায় ১০টি সোনার বারসহ শুভ ঘোষ (৩৫) নামে যুবককে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (৪ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম।
আটক শুভ ঘোষ মনিকগঞ্জের সুনীল ঘোষের ছেলে।
পুলিশ জানায়, পুলিশের একটি দল বাঁগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে শুভ ঘোষ নামে এক যুবককে আটক করে। পরে তার দেহ তল্লাশি করে প্যান্টের পকেট থেকে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ১০টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। স্বর্ণের বারগুলো সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে শুভ ঘোষ মনিকগঞ্জ থেকে বাঁগআচড়ায় আসে।
এছাড়া জব্দ করা স্বর্ণের ওজন এক কেজি ১৯২ গ্রাম। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা বলে জানায় পুলিশ।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যুবকের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং আদালতে সোর্পদ করা হবে। স্বর্ণের বারগুলো ট্রেজারি শাখায় জমা দেওয়া হবে।’
বরগুনায় এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে দুই শিশুসন্তান বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা মামলায় ইলিয়াস পহলান নামে এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মো. ইলিয়াস পহলান (৩৪) বরগুনা সদর উপজেলার পূর্ব কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রঞ্জু আরা শিপু, আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আহসান হাবীব স্বপন। আইনজীবী রঞ্জু আরা শিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ওই নারী তার মেয়ে তাইফা (৩) ও ছেলে হাফিজুলকে (১০) নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় ইলিয়াস তাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে পড়েন। বিষয়টি টের পেয়ে বাধা দেন ওই নারী। এ সময় তাইফা ও হাফিজুলের ঘুম ভেঙে গেলে ইলিয়াস ধারালো অস্ত্র দিয়ে তিনজনকেই কুপিয়ে আহত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় হাফিজুল নিহত হয়, আর বরিশালে নেওয়ার পথে মারা যায় শিশু তাইফা।
তবে গুরুতর আহত ওই নারী দীর্ঘ চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার পরই ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়।
তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনাল সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে ইলয়াস পহলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দোষী তাকে সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেন। একই সঙ্গে দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত।
এ ছাড়াও ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছর করে আরও ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মন্তব্য