প্রচার ও ভোটে সহিংসতা-প্রাণহানির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হলেও থেমে নেই সংঘর্ষ। ভোট গণনার সময়, ফল ঘোষণার পর এমনকি ভোটের পরদিনও কয়েক জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
তৃণমূল পর্যায়ের এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। তবে সহিংসতার ঘটনায় ভোটের পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন এক অন্তঃসত্ত্বাসহ ১০ জন।
কালকিনির সাহেবরামপুর ও লক্ষ্মীপুর এবং ডাসারের বালীগ্রাম ও নবগ্রাম ইউনিয়নে এই সংঘর্ষ হয়েছে। আহতদের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা।
কালকিনির লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে সকাল ১০টার দিকে সংঘর্ষে জড়ায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মৌসুমী হক ও পরাজিত প্রার্থী তোফাজ্জেল হোসেন গেন্দু কাজীর সমর্থকরা। ভাঙচুর করা বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এ সময় আহত হন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূসহ পাঁচজন।
একই উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহিম মুরাদ সরকারের সমর্থকদের প্রায় ৩০ বাড়িতে ভোররাতে ভাঙচুর চালানো হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, হামলাকারীরা পরাজিত নৌকার প্রার্থী কামরুল হাসান সেলিমের সমর্থক।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসতিয়াক আসফাক রাসেল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা আছে।
ডাসার থানা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নে দুপুরে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বিভূতি ভূষণ বাড়ৈর সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিজয়ী চেয়ারম্যান দুলাল তালুকদারের সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫ জন।
একই উপজেলার বালীগ্রাম ইউনিয়নে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী তুষার হোসেনের সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়ী প্রার্থী মজিবর খানের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে সন্ধ্যায়।
বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের এই দুই জেলার ১২টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে। তাতে চেয়ারম্যান পদে ৯ ইউনিয়নেই স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তিনটিতে জয় পেয়েছেন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
ভোটের পরদিন ভোরে সংঘর্ষ হয় শরীয়তপুর সদরেও। উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নে শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ফকিরের সমর্থকদের বেশ কিছু ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
জাহিদুলের অভিযোগ, বিজয়ী চেয়ারম্যান জামাল হোসাইনের সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছেন।
জাহিদুল বলেন, ‘আজকে সুবহে সাদিকের সময় যখন মানুষ ঘুমন্ত, সেই অবস্থায় নৌকা মার্কার সমর্থিত সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবে তুলাসার ইউনিয়নের শতাধিক ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। শত শত বোমা ফাটানো হয়। জনগণের অপরাধটা কী?
‘এই জনগণ আমাকে ভোট দিতে চেয়েছিল বলে এটাই যদি তাদের অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন, গণতন্ত্রের জন্য ভোটের জন্য ভাতের জন্য আমাদের দিয়ে আপনি লড়াই করিয়েছিলেন কেন? এই জনগণকে রক্ষা করার জন্য আপনার কাছে আমি বিনীত অনুরোধ করছি।’
জাহিদুলের অভিযোগ, প্রশাসনের লোকজনকে খবর দেয়া হলেও দুজন পুলিশ ছাড়া কেউ ঘটনাস্থলে আসেনি।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আফজাল হোসেন বলেন, ‘গতকাইল রাইতে বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী জামাল আমাগো গালাগালি কইরা গেছে। সকালে ঘুমাইয়া রইছে এমন সময় ওনার নির্দেশে রেজাউল মুন্সির নেতৃত্বে লাডি, স্যান, ডাল, বোম লইয়া হামলা করছে। ঘুমের থেকে উইট্টা কিছু বুঝার আগেই দেহি সব তছনছ কইরা থুইয়া গেছে। আমাগো কী অপরাধ? নির্বাচন শেষ এখন আবার এমন অত্যাচার কেন? আমরা কি এই দ্যাশের নাগরিক না?’
নতুন টিনের ঘর দিয়েছেন মালা বেগম। ঘরের সেই টিনের বেড়া কুপিয়ে টেনে ভেঙে ফেলা হয়েছে। তছনছ করা হয়েছে আসবাব।
মালা বলেন, ‘সকালবেলা ডাল স্যান লইয়া বাইরাইছে। আমরা ঘরের থেইক্কা কেউ বাইরাই নাই। এরপর বোমা ফাইছে, ইট মারছে। ইটে আমার ননদ ও শাশুড়ি ব্যথা পাইছে। হেইয়ার পর গরের ভিতর ডুইকা জিনিস যা আছিল আর টাকা সব লইয়া গেছে গা। আর যাওনের সময় ব্যারাগোরা সব কোপাইয়া ভাইঙ্গা থুইয়া গেছে। আমরা এইয়ার বিচার চাই।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পালং মডেল থানার উপপদির্শক রোমন জানান, কারা হামলা করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউপিতে বৃহস্পতিবার ভোট হওয়ার কথা ছিল। স্বাক্ষর জাল করে সদস্যদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগে চিতলিয়া ইউনিয়নের নির্বাচন ৮ অক্টোবর বাতিল করে কমিশন।
নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে দুইটিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় সাতটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর তিনটি ইউনিয়নে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৫ জন, ভাঙচুর হয়েছে শতাধিক বাড়িঘর।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রথীন্দ্রনাথ রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় সাজাইল ইউনিয়নে বিজয়ী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের সমর্থকরা এলাকায় বিজয় মিছিল বের করেন। এতে পরাজিত নৌকার প্রার্থী কাজী জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা হামলা চালান। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা, ঢাল-সড়কি ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় ভাঙচুর করা হয়ে বাড়িঘরও।
সংঘর্ষে আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন দুই পক্ষের অন্তত ২৫ জন। পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি শান্ত করে।
কাশিয়ানীর বুথপাশা ও পিংগুলিয়া গ্রামেও পরাজিত নৌকা ও বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া রাতইল ইউনিয়নের পাথরঘাটা ও ধানকোড়া গ্রামে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সাতটি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিতে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দুটিতে নৌকার প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
শেরপুর সদরের কামারেরচর ইউনিয়নেও শুক্রবার সংঘর্ষ হয়েছে, আহত হয়েছেন প্রায় ১১ জন।
সদর থানার ওসি মনসুর আহমেদ জানান, কামারেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জেলা যুবলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান। বৃহস্পতিবার নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তার ও আহসান হাবিবের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ কারণে ওই কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
এরই জেরে শুক্রবার সকালে মোস্তাফিজুরের সমর্থকরা আহসান হাবিবের এলাকায় হামলা চালালে আহত হন অন্তত ১১ জন।
ওসি আরও জানান, আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুজন, নয়ন ও শাহী নামের তিনজনকে জামালপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
পটুয়াখালীর গলাচিপার চরকাজল ইউনিয়নে শুক্রবার সকালে হামলা হয়েছে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী সাইদুর রহমান রুবেল মোল্লা ও তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর। রুবেলের বাড়িতে দুটি হাতবোমার বিস্ফোরণ হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদের বাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে।
এ সময় আহত হয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে দিনভর সহিংসতায় ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৬ জনকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গলাচিপা থানার ওসি শওকত আনোয়ার ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চেয়ারম্যান রুবেলের অভিযোগ, পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থী শাহীন গাজী ও তার সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে শাহীন গাজীর মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের জামির্ত্তা ইউনিয়নে শুক্রবার ভোরে নৌকা প্রতীকের এক কর্মীর বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ভুক্তভোগী খোকন মিয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হালিকের কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন।
সিঙ্গাইরের শান্তিপুর পুলিশ ফাঁড়ি তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ খালিদ মনসুর জানান, শুক্রবার ভোর পৌনে ৪টার দিকে খোকন মিয়ার আধাপাকা গোয়ালঘরে আগুন লাগে। স্থানীয়রা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আনতে গোয়ালে থাকা দুটি গরু ও সেখানে রাখা তার মোটরসাইকেলটিও পুড়ে যায়।
খোকন মিয়ার অভিযোগ, নৌকার পক্ষে কাজ করায় নির্বাচনে জয়ী নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হোসেনের লোকজন এই কাজ করেছে।
ভোট চলাকালে বৃহস্পতিবার দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে ফেনী, সাতক্ষীরা, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, যশোর, শেরপুরসহ নানা জেলায়।
এর মধ্যে নরসিংদীতে তিনজন এবং কুমিল্লা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে তিনজন নিহত হয়েছেন। ভোট শেষে গণনার সময় ও এরপর সন্ধ্যায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুর, হবিগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
এসব ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বললেও নির্বাচনকে স্বতঃস্ফূর্ত এবং উৎসবমুখর বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীতে সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংয়ে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিতে স্বতঃস্ফূর্ত এবং উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, অনেকে আহত হয়েছে। এ হতাহতের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনকে ঘিরে যে উৎসবমুখরতা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখতে সবাইকে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে যাতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ ধরে রাখার জন্য নির্বাচন কমিশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন মাদারীপুর থেকে সাগর হোসেন তামিম, শরীয়তপুর থেকে কাজী মনিরুজ্জামান, গোপালগঞ্জ থেকে মোজাম্মেল হোসেন মুন্না, শেরপুর থেকে শাহরিয়ার শাকির, মানিকগঞ্জ থেকে আজিজুল হাকিম ও পটুয়াখালী থেকে জাকারিয়া হৃদয়।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী এলাকায় গত '২৪ এর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১ টায় ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি।
বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী এলাকায় বন্যা পরবর্তী উন্নয়নমূলক সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ ও পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলার হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় এর নবনির্মিত শাহীন ভবন উদ্বোধন এবং দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী জেলার বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল সেবা পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী জেলায় ২০২৪ সালের আকস্মিক বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর ভুমিকার ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক, ত্রাণ ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিমান বাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যার সাথে তৎকালীন বৈরী আবহাওয়া ও বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনায় এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভয়াবহ এ বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিমান বাহিনী বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, দূর্গাপুর, ছাগলনাইয়্যা-এ অবস্থিত হাবিব উল্যাহ্ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করতঃ শাহীন ভবন নামে একটি চারতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা ভবন আসবাবপত্রসহ নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক, বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ, ফেনী জেলা প্রশাসক, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবি করে দুষ্কৃতিকারীরা।
পরে মুক্তিপণ না পেয়ে মোবাইল ফোন-মানিব্যাগ রেখে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।
সোমবার (২৩ জুন) বরিশাল থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার পথে মাদারিপুরে সকাল ৮টার দিকে বাস থেকে নামলে অপহরণের শিকার হন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. আসাদ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়।
আসাদের পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অপহৃত শিক্ষার্থীর বড় চাচা মারা যাওয়ায় আজ ভোরে ৬টায় বরিশাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে মাদারিপুর পর্যন্ত যান বাসে। বাস থেকে নেমে মাদারিপুর নেমে ঝিনাইদহে যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজতেছিলেন এমন সময় মাইক্রোবাসটি তাকে ঝিনাইদহে পৌঁছে দিবে বলে উঠিয়ে নেয়। উঠিয়ে নেয়ার পর অপহরণকারীরা পরিবারের সঙ্গে ০১৫১৮৪৯৫৬০৯ নম্বর থেকে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি পরিবারের মাধ্যমে জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সহযোগিতা নেন, প্রশাসনের তৎপরতার খবর পেয়ে অপহরনকারীরা তার সব কিছু রেখে তাকে ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে আসাদের সহপাঠী রাফিদ হাসান জানান, আসাদের চাচা মারা যাওয়ায় ও আজ ভোরের দিকে বরিশাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন, পথিমধ্যে এই ঘটনার শিকার হন ।
এ বিষয়ে আসাদের বাবা বলেন, আসাদের বড় চাচা গতকাল রাতে মারা যাওয়ায় আজকে ভোরে বাড়ি আসার পথে মাদারিপুর থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না পেয়ে ওর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। পরে অন্য একটি বাসে করে আসাদ বাড়ি ফিরছে বলে জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সোনিয়া খান সনি বলেন, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বরিশাল থেকে ঝিনাইদাহ বাড়ি যাওয়ার পথে মাদারিপুরে আটকিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে, এমন ঘটনা জেনে সাথে সাথে মাদারিপুর পুলিশকে কল করি। শিক্ষার্থী এখন নিরাপদে আছে সে বাড়ি ফিরতেছে শিক্ষার্থী এবং পরিবারের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসেম আলী (৩৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২২ জুন) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ গোড়ের পাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসেম আলী দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত আছান শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন একটি ভবনে ইট ভেজাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক মোটরে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন হাসেম আলী। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমানকে প্রধান করে শনিবার এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সাইফুল ইসলাম এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বেলাল শিকদার।
এসব তথ্য জানিয়ে শাবি প্রক্টর মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট দেবো। এর সাথে আরও কেউ জড়িত কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে শুক্রবার বিকেলে ওই ছাত্রী বাদি হয়ে সিলেটের কতোয়ালি থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থ’র নাম উল্লেখ করে অজ্ঞতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
আদনান ও পার্থকে বৃহস্পতিবার রাতেই আটক করে পুলিশ। পরে মামলায় তদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা দু'জনই শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার শান্ত তারা আদনান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসীূচতে তাকে দেখা গেছে। আদনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড দল ‘নোঙর’-এরও সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক শিক্ষার্থী স্বাগত দাস পার্থ গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তার ফেসবুকে প্রোফইলেও জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে ছবি যুক্ত রয়েছে। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পার্থ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তবে তিনি তেমন সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে, পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যসংগঠন ‘দৃক থিয়েটার’-এর কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালের শৃঙ্খলা-বডি সূত্রে জানা যায়- গত ২ মে সন্ধ্যারাতে সহপাঠী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থের সঙ্গে শহরের কনসার্টে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। কনসার্টে যাওয়ার পূর্বে তারা ওই ছাত্রীকে সুরমা এলাকার একটি মেসে নিয়ে যান। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণ করেন আদনান এবং পার্থ। একইসাথে এই ঘটনার ভিডিও এবং মেয়েটির নগ্ন ছবি ধারণ করেন। পরে ওইসকল ভিডিও ও নগ্ন ছবি দেখিয়ে আদনান এবং পার্থ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল করছিলেন এবং ঘটনা জানাজানি করলে ভিডিও ও ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করলে প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ আদনান এবং পার্থকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। এরপর প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদেরকে থানায় পুলিশ হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি আমরা। বর্তমানে অপরাধীরা পুলিশ হেফাজতে আছে এবং মামলার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।'
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, 'প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হচ্ছে।'
মন্তব্য