এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্থানীয় অনেক নেতা নির্বাচন করলেও জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি তাদের পক্ষে প্রচারে। অন্য দলগুলোও এই নির্বাচন নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি।
অন্যদিকে এই নির্বাচন ঘিরে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে নির্বাচন করা হয় প্রার্থী। যারা বিদ্রোহী হয়েছেন তাদের করা হয়েছে বহিষ্কার। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের দেখা গেছে মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাতে।
এত সবের পরও ভোটে কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি ক্ষমতাসীন দলটি। দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বৃহস্পতিবার সিলেট বিভাগের ৪৩ ইউনিয়নের মধ্যে ২৩টিতে হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ফাঁকা মাঠেও কেন হোঁচট খেতে হলো আওয়ামী লীগকে- এ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে জোর আলোচনা।
দলটির স্থানীয় নেতারা বলছেন, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল, বিদ্রোহী প্রার্থীদের থামাতে না পারা ও গ্রামের মানুষের সঙ্গে নেতাদের দূরত্ব তৈরি হওয়াসহ বেশ কিছু কারণে বেশির ভাগ ইউনিয়নে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে নৌকার প্রার্থীদের।
সিলেট বিভাগের ৪৪টি ইউনিয়নের মধ্যে সংঘাতের কারণে একটি ইউনিয়নের ফল স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ৪৩ ইউনিয়নের মধ্যে ২০টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, ১২টিতে স্বতন্ত্র, ১০টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং একটিতে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী ১২ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ১০ জন আবার বিএনপির, দুজন জামায়াত নেতা।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর আহমদ। বিএনপির এই নেতা পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮১ ভোট। তার নিকটতম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াসুর রহমানের পক্ষে গেছে ৩ হাজার ৮৭৯ ভোট। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. মুল্লুক হোসেন পেয়েছেন ২ হাজার ৬১ ভোট। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই নেতার মোট ভোট বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে ৬৫৯ বেশি। এভাবে বিদ্রোহী থাকা সব ইউনিয়নেই ভাগ হয়েছে আওয়ামী লীগের ভোট। সিলেট জেলার ১৫টি ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার ভোট হয়। এর ১০টিতে ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। দল থেকে বহিষ্কার করেও তাদের দমাতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
ফল ঘোষণার পর দেখা গেছে, ১৫ ইউনিয়নের ১০টিতেই পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ৫টি স্বতন্ত্র হয়ে লড়া বিএনপি নেতারা, ৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা ও একটিতে জামায়াত নেতা জয় পেয়েছেন।
প্রার্থী বাছাইয়ে ভুলের কারণেও অনেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করেন পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রার্থী বাছাই যে ভুল ছিল, তা ফলাফল দেখেই বোঝা যাচ্ছে।’
এ অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। নিউজবাংলাকে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কমিটির নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। যাকে সবচেয়ে যোগ্য ও জনপ্রিয় মনে করা হয়েছে, তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।’
বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনে বেশির ভাগ ইউনিয়নে হেরে যাওয়ার প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির কথা ও কাজে মিল নেই। তারা ডুবে ডুবে জল খায়। প্রতীক দেয় না বটে, তবে প্রার্থী দেয় ঠিকই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ ভোট দেয়নি বলে আমাদের অনেক প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। প্রার্থীরা ভোট নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারেননি। এটা তাদের ব্যর্থতা।’
বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঠেকাতে না পারা প্রসঙ্গে শফিক বলেন, ‘দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সবাই এখন নিজেকে নেতা মনে করছেন। সবাই নির্বাচন করতে চান। মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে যান। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ছিলাম। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছি। কিন্তু কাউকে তো আর জোর করে আমরা বসিয়ে দিতে পারি না। প্রার্থী হওয়া তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।’
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ছিল। কিছু ক্ষেত্রে বিতর্কিতদেরও প্রার্থী করা হয়েছে। বিদ্রোহীদের ঠেকাতে দলের উদ্যোগ ছিল দায়সারা। অনেক ক্ষেত্রে দলের নেতারা বিদ্রোহীদের মদদও দিয়েছেন। এসবের প্রভাবও পড়েছে ফলে।’
জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির এই নেতা বলেন, ‘দল দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূলের সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নেতারা এখন আর জনসম্পৃক্ত নন। ফলে ভোটাররা তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও দল আর নেতাদের ব্যর্থতায় ভোটে হারতে হচ্ছে।’
এই নেতার বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে ভোটের ফলেও। সিলেটের সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন। কিন্তু ভোটে তিনি হেরে গেছেন জামায়াতের স্থানীয় নেতা আবদুল মনাফের কাছে।
পুরো বিভাগেই ইউপি নির্বাচনের ফলে এমন উদাহরণ রয়েছে অনেক।
সিলেট সদর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হিরণ মিয়া, কান্দিগাঁওয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা আবদুল মনাফ, জালালাবাদে আওয়ামী লীগের ওবায়দুল্লাহ ইসহাক ও হাটখোলায় খেলাফত মজলিসের মাওলানা রফিকুজ্জামান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে ইসলামপূর পূর্ব ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন আলম, তেলিখালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ আলফু, ইছাকলসে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজ্জাদুর রহমান, উত্তর রণিখাইয়ে আওয়ামী লীগের ফয়জুর রহমান ও দক্ষিণ রণিখাইয়ে আওয়ামী লীগের ইকবাল হোসেন ইমাদ বিজয়ী হয়েছেন।
বালাগঞ্জের ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা মো. আব্দুল মুনিম, পূর্ব গৌরীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব, পশ্চিম গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবদুর রহমান মাখন, বোয়ালজোড়ে আওয়ামী লীগের আনহার মিয়া, দেওয়ানবাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির নাজমুল আলম ও পূর্ব পৈলনপুরে আওয়ামী লীগের শিহাব উদ্দিন জয় পেয়েছেন।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ৫ ইউনিয়নের মধ্যে একটিতে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী। উপজেলার সাগরনাল ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন নূর, পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ওবায়দুল ইসলাম রুহেল, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনফর আলী, জায়ফরনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা মাসুম রেজা ও গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুম বিজয়ী হয়েছেন।
সুনামগঞ্জের ছাতকের ১০ ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বাকি ৭টির মধ্যে ৩টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, দুটিতে স্বতন্ত্র হয়ে লড়া বিএনপি নেতা ও একটিতে জামায়াত নেতা বিজয়ী হয়েছেন।
উপজেলার ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে গয়াছ আহমদ, গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নে সুন্দর আলী, কালারুকা ইউনিয়নে অদুদ আলম ও উত্তর খুরমা ইউনিয়নে বিলাল আহমদ বিজয়ী হয়েছেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ছাতক সদর ইউনিয়নে সাইফুল ইসলাম, দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নে জয়নাল আবেদীন ও জাউয়া বাজার ইউনিয়নে আব্দুল হক নির্বাচিত হয়েছেন।
উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নে বিএনপি নেতা নুরুল আলম ও চরমহল্লা ইউনিয়নে আবুল হাসনাত ও ইসলামপুর ইউনিয়নে জামায়াত নেতা সুফি আলম সোহেল জয় পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এম আবুল হোসেন, নরসিংপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী নুর উদ্দিন আহমদ, দোয়ারা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হামিদ, মান্নারগাঁও ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতা ইজ্জত আলী, পান্ডারগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল ওয়াহিদ, দোহালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শামীমুল ইসলাম শামীম, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জহিরুল ইসলাম, বোগলাবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিলন খান এবং সুরমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ হালিম বীর প্রতীক নির্বাচিত হয়েছেন।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে ৫টি ইউনিয়নের ৩টিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। একটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। একটির ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।
আজমিরীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম মোবারুল, বদলপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুসেনজিৎ চৌধুরী, কাকাইলছেও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিসবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও শিবপাশা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নলিউর রহমান তালুকদার বিজয়ী হন। সংঘর্ষের জেরে এই উপজেলার জলসুখা ইউনিয়নের ফল স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
মন্তব্য