ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারে বেশ কয়েকটি এলাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রাজনীতিতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বর্জনের মধ্যে এই ভোটে দলটির নেতারা প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। তবে বেশির ভাগ এলাকাতেই নৌকা মার্কার প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়া ক্ষমতাসীন দল বা তার সহযোগী সংগঠনের নেতারাই।
তিন সপ্তাহের প্রচার শেষে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট হবে ৮৪৮ ইউনিয়ন পরিষদে। এরই মধ্যে প্রচার শেষ হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে এখন যাচ্ছে ভোটের সরঞ্জাম।
গত তিন সপ্তাহের প্রচারে নজিরবিহীন নানা বক্তব্য উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা তার পক্ষের নেতাদের কাছ থেকে। কোনো এলাকায় তারা জনসভায় মাইকে ঘোষণা দিয়েছেন, ভোট দিতে হবে প্রকাশ্যে, কোথাও বলেছেন, নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই, কোথাও বলেছেন, তাদের ভোট না দিলে এলাকায় নামাজ পড়তে দেয়া হবে না। একটি এলাকায় এক নেতা একে-৪৭-এর চেয়ে বড় কিছু নিয়ে আসার হুমকি দিয়েছেন।
এসব ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এমন নয়। কোথাও কোথায় তাদের সতর্ক করা হয়েছে, কোথাও কোথাও বক্তব্যের ব্যাখ্যা পেয়ে সন্তুষ্ট নির্বাচন করার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
ক্ষমতাসীন দলের বহু নেতার হুমকিসংবলিত এসব বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনও রয়ে গেছে। যদিও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কেউ কেউ দাবি করছেন, তাদের বক্তব্য কাটছাঁট করে বিকৃত করা হয়েছে। তারা অপপ্রচারের শিকার। কেউ কেউ আবার নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গাইছেন।
অবশ্য কেবল বক্তব্য নয়, ভোটে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় এখন সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শত শত। একটিতে প্রার্থীদের অজান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘটনায় সেই উপজেলায় ভোট স্থগিত হয়েছে। একটি পৌরসভায় ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করার অভিযোগে একজন বিষপান করেছেন। আরও নানা ঘটনা ঘটছে।
এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, জানতে চাইলে কমিশনের যুগ্ম সচিব (নির্বাচন) আতিয়ার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সহিংসতা রোধে সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। তারপরও কোথাও যদি কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটে, সে জন্য কমিশন প্রস্তুত আছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন জেলা প্রশাসন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের যেকোনো ধরনের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ ও যাচাইয়ের নির্দেশসহ কমিশনকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানোরও নির্দেশ দিয়েছে। ইসি এসব বিষয়ে সজাগ আছে।’
যশোরের ঝিকরগাছায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে ভোটের দিন কেন্দ্রে না গিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে গরু-মুরগি খেতে যেতে বলেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম।
সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমির হোসেনের নির্বাচনি জনসভায় ৫ নভেম্বর তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে ভোটের মাঠে আসার দরকার নেই এবং এলে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারতে হবে। যদি নৌকায় ভোট না দেয়ার ইচ্ছা থাকে, তাইলে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে মুরগি-গরু খান, শান্তিতে থাকেন।’
মনিরুলের এমন বক্তব্যের অডিও ক্লিপসহ যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন ওই ইউপিতে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বারিক। তিনি যুবলীগের নেতা।
বক্তব্যের পরপর নৌকার প্রার্থী আমির হোসেন বলেছিলেন, ‘নেতা কী বলেছেন সেটা তিনি ভালো জানেন। আমি খেয়াল করিনি।’
এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, জানতে চাইলে মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অপূর্ব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছি। এগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’
কক্সবাজারের উখিয়ার একটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে কবর দিতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ আলম।
এই বক্তব্য ভাইরাল হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থানায় তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের লিখিত অভিযোগও করেন। নির্বাচন কমিশন থেকে বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠিও দেয়া হয়।
ঘটনাটি ঘটে হলদিয়াপালং ইউনিয়নে। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়া যুবলীগের নেতা ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
১ নভেম্বর রাতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মনির মার্কেট এলাকায় নিজের প্রচার অফিসের উদ্বোধন করে নৌকায় ভোট না দেয়ার পরিণতি সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন প্রার্থী।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শাহ আলম বলছেন, ‘কী অইবা? চিহ্নিত অইবা। হবরস্থান চৌধুরীপাড়া অইব দে। আইত ন পারিবা। আর হবরস্থানত আই হবর দিত ন দিয়্যুম। হবরস্থান আঁর, আঁই দিত ন দিয়্যুম এডে।'
অর্থাৎ ‘(ভোট না দিলে) কী হবে? চিহ্নিত হবে। কবরস্থান চৌধুরীপাড়ায় হবে। এখানে আসতে পারবে না। আর এখানকার কবরস্থানে কবর দিতে দেব না। কবরস্থান আমার। এখানে আমি কাউকে কবর দিতে দেব না।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়ি চৌধুরীপাড়ায়। শাহ আলমের বাড়ি কুলালপাড়া এলাকায়। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন, তার এলাকার যে ভোটার তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভোট দেবে, তাদের কবর চৌধুরীপাড়ায় দিতে হবে। শাহ আলম তার নিজের এলাকায় হতে দেবেন না।
শাহ আলম আরও বলেন, ‘সোজা হতা, বাংলা হতা। চৌধুরীপাড়াত জনগুই পড়িব লাশ-ইবা। মসজিদত আই না পারিবা। আর বেগ্গুন ঐক্যবদ্ধ। এই পাঁচজন, আটজন, দশ ন, বেগ্গিন বন্ধ অই যাইব। চিহ্নিত গইজ্যুম, সমস্ত কিছু বন্ধ অই যাইব।’
অর্থাৎ ‘সোজা কথা, বাংলা কথা। চৌধুরীপাড়ায় এই লাশটাকে চলে যেতে হবে। মসজিদেও আসতে পারবে না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। এই পাঁচ, আট, দশজনের সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হবে। সবাইকে চিহ্নিত করে রাখা হবে। সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে।’
এমন বক্তব্যের বিষয়ে শাহ আলম শুরুতে ব্যাখ্যা না দিলেও পরে দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হয়রানি করতে তার ভিডিও এডিট করে ভাইরাল করে দিয়েছে।
এ ধরনের বক্তব্যকে নির্বাচনি আরচণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ইরফান উদ্দিন। আওয়ামী লীগের এই নেতাকে কারণ দর্শাতে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে হুমাইপুর ইউনিয়নে নৌকার বাইরে কাউকে ভোট দিতে না দেয়ার হুমকি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা। নৌকাকে জেতাতে প্রয়োজনে একে-৪৭ অস্ত্রসহ সব ধরনের শক্তি খাটানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
হুমকি দেয়া আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
৫ নভেম্বর বিকেলে বাজিতপুরের হুমাইপুর ইউনিয়নের টান গোসাইপুর গ্রামে হুমাইপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় নৌকার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়ার পক্ষে তিনি এ হুমকি দেন।
পরে সেই জনসভার ৭ মিনিট ৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা মেম্বার পদপ্রার্থী হয়েছেন, আপনাদের কাউকেই নৌকার বাইরে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না।’
মঞ্চের টেবিলটা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘নৌকার ভোট হবে এই রকম টেবিলের ওপরে, ওপেন। আপনারা যারা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মেম্বার প্রার্থী হয়েছেন, আপনারা আপনাদের জয়ের চেষ্টা করে মেম্বার প্রার্থী হন, মহিলারা মহিলা মেম্বার প্রার্থী হন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই।
‘আমাদের নেতা-কর্মীরা কোনো বাধা দেবে না। কিন্তু আপনাদের এজেন্টের বলে দিবেন নৌকার ভোট কোনো কাইত্ব্যের (গোপনে) ভেতরে হবে না, নৌকার ভোট হবে টেবিলের মধ্যে সবার সামনে। এখানে যদি কোনো মেম্বার প্রার্থী বা তাদের এজেন্ট বিরোধিতা করেন, আমরা তাৎক্ষণিক সেই প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেব।
‘আমরা সেদিন শুধু হুমাইপুরের শক্তি নিয়ে আসব না। আমাদের একে-৪৭ নাই, কিন্তু প্রয়োজনে সব নিয়ে আসব।’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের, পুলিশ বাহিনী আমাদের, সরকার আমাদের। আর কিছু কি বলার দরকার আছে? আমি কি আপনাদের খারাপ কিছু কইছি? কিন্তু কইলে এইডে আফনেরার লাইগ্যেই কইছি।’
সেই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর আল মামুন এখন দেখা দিচ্ছেন না। ফোনও ধরছেন না।
ওই এলাকায় তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা গতবারের জয়ী মামুন মিয়ার অবশ্য ভোটের পরিবশ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। যদিও অন্য একজন প্রার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্র জানায়, বাজিতপুর পৌর শহরের আলোচিত সাচ্চু হত্যা মামলায় পিবিআই ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর মামুনকে গ্রেপ্তার করে। মামলাটিতে প্রায় চার মাস কারাভোগের পর জামিনে ছাড়া পান তিনি।
সম্প্রতি আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। অভিযোগপত্রে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতার নাম আছে।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে নৌকার প্রার্থীকে খোলাখুলি ভোট দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে আলোচিত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন।
রামগঞ্জ উপজেলার ৩ নম্বর ভাদুর ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বরের ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে ৭ নভেম্বর রাতে দলীয় এক সভায় তিনি বলেন, ‘সবাইকে নৌকার ভোট ওপেনে মারতে হবে। এর বাইরে কোনো কথা নাই। মেম্বারদের ভোট গোপনে হবে। মাইন্ড ইট, এর বিকল্প কেউ কোনো চিন্তা করবেন না। আমরা আগামী ২৮ তারিখে নৌকার মাঝি জাবেদকে জয়ী করে আনব।’
সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাবেদ হোসেন ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রাসেল হোসেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান পবন বলেন, ‘আমার বক্তব্য এডিট করে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাইনি। ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ৩ নম্বর ভাদুর ইউনিয়নে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিচ্ছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন। ছবি: ফেসবুক
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পাশাপাশি কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হকের একটি বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোশারফপুরে পৌর এলাকায় নির্বাচনি সভায় তিনি ভোটারদের বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে যাতে দূরত্ব না বাড়ে। সন্দেহ সৃষ্টি না হয়, তাই আপনারা সব ওপেন ভোট দেন। কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের ভোট ভেতরে গিয়ে দেবেন। আর মেয়র ভোটটি সরাসরি দিয়ে দেবেন।’
এই বক্তব্যের ব্যাখ্যার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ভোটারদের বলেছি প্রকাশ্যে দিলে দেবেন, আমার কোনো আপত্তি নেই। বাধ্য করে ভোট নেব না। তারা অগ্রিম ভোটটা দিতে পারলে খুশি হতো।’
ভিডিও দেখার পর এ বিষয়ে কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক। তিনি বলেন, ‘আইন লঙ্ঘন করায় তার বিরুদ্ধে মামলা এবং অনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী রহমত আলী রব্বান বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী ওপেন ভোট মারার কথা বলছেন। এটা বন্ধ না হলে মানুষ ভোট দিতে আসবে না।’
কী ব্যবস্থা নিয়েছেন- জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান, অভিযোগ পেয়ে তারা এনামুল হককে সতর্ক করেছেন।
আরও পড়ুন:খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় ৮৫৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এতে ৫৯ জনকে এজাহারভুক্ত ও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় এজাহারভুক্ত প্রথম সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
খুলনার সদর থানায় শনিবার রাতে এসআই অজিত কুমার দাস বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল-মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন খুলনার রূপসা উপজেলার যুগিহাটি গ্রামের ২৩ বছর বয়সী ইশারাত ইসলাম, দিঘলিয়া উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের ৪৭ বছর বয়সী শেখ কামাল উদ্দিন, মহানগরীর রুপসা স্ট্যান্ড রোডের ৩৫ বছর বয়সী মো. জালাল হোসেন, রূপসা উপজেলার চর রুপসা গ্রামের ২৮ বছর বয়সী মো. রাজু শেখ, মহানগরীর খানজাহান আলী থানার ফুলবাড়ি গেট এলাকার ৪৬ বছর বয়সী আব্দুল হাই রুমি, ৩৪ বছর বয়সী দেলোয়ার হোসেন জসিম ও ফুলতলা উপজেলার পয়গ্রাম গ্রামের ৩২ বছর বয়সী মিজানুর রহমান। তাদের কাছ থেকে ১৫ টুকরো ভাঙা ইটের খণ্ড, ৯টি কাঠের আছাড়ি ও ৭টি লোহার রড জব্দ দেখানো হয়েছে।
মামলায় পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পি, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির।
এজাহারে বলা হয়, শনিবার বিকেল ৩টায় খুলনা থানাধীন কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিল। আকস্মিকভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, লোহার রড, কাঠের বাতা, ইট-পাটকেল, দেশীয় অস্ত্র ও বাঁশের লাঠি নিয়ে মিছিলসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে জনমনে ভীতি, দোকানপাট ভাঙচুর করতে উদ্যত হন। তারা যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ও শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চরম মারমুখী অবস্থায় পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেন। ওই সময় তারা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা করে গুরুতর ও সাধারণ জখম করেন। সে সময় সরকারি অস্ত্র ও জানমাল রক্ষার্থে তাদের ওপর ১৪টি লং সেল গ্যাস গান, ৬টি শর্ট সেল গ্যাস গান, ৩০টি শর্টগানের রাবার বুলেট, ৫টি সিসা বুলেট ও তিনটি গ্রেনেড ফায়ার করে পুলিশ।
এজাহার অনুযায়ী, বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলায় সেখানে দায়িত্বরত এসআই মো. সাইদুর রহমান, মো. আব্দুল হাই, মো. অলিয়ার রহমান, সনজিত কর্মকার, মো. শান্তিরাম পাল, মো. আব্দুস সালাম, মো. শাকিম হোসেন, মো. রিপন শেখ, নায়েক তুহিন ও এসএএফ মো. শাহিন রক্তাক্ত জখম হন।
শনিবার দুপুরে ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা ছিল বিএনপির।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য (মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান মিলটন বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি পণ্ড করতে বেলা ১১টা থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ উপস্থিত হতে থাকে। দুপুর ২টার দিকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করলে পুলিশ হঠাৎ করে লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে ঘাটভোগ ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ কবির শেখ, রূপসা উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রুবেল মীর, বটিয়াঘাটা উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব বাহাদুর মুন্সী, ডুমুরিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন মোল্লা, ডুমুরিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তামিম মোল্লা, খুলনা জেলা যুবদলের সাজু হাওলাদার, খুলনা জেলা ছাত্রদলের মনিরুজ্জামান নয়ন হাওলাদার, ইয়াসিন, ফিরোজ মাহমুদ, ইসমাইল হোসেন, ইবাদুল হক রুবায়েত, ইস্তিয়াক আহমেদ ইস্তিসহ ১৫ থেকে ২০ গুরুতর আহত হয়েছেন।’
মিলটন আরও বলেন, ‘শনিবারের এ কর্মসূচির আগে ২৪ ঘণ্টায় ১৬ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনের অধিকার আছে, কিন্তু পবিত্র রমজান মাসে রোজাদার বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর নারকীয় তাণ্ডব কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দমন-নিপীড়ন করে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’
আরও পড়ুন:একপশলা বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরী। জলাবদ্ধতার কারণে শনিবার চরম দুর্ভোগে পড়েন জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া সাধারণ মানুষ।
এদিক সকাল ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত বৃষ্টিতে চকবাজার, মুরাদপুর, হালিশহর,সঙ্গীত-হামজারবাগ, বহদ্দারহাটসহ বন্দর নগরের বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
সকাল ১০ টায় নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে নিউমার্কেট যাচ্ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম নামের একজন। তিনি বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়। চালকরা গাড়ি চলানো বন্ধ করে দেন। সড়কে গাড়ি কম থাকে। সেই সুযোগে যেসব গাড়ি চলাচল করে, সেসবে বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। এখানে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও এখনও কোনো গাড়ি পাইনি। তাছাড়া অনেক মানুষ আমার মত গাড়ি না পেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। ‘
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বিজন কুমার বলেন, ‘এখন যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেটা সিজনাল, মৌসুমী বায়ু প্রবাহের কারণে এটা হচ্ছে। আট দিন আগে থেকেই এই বৃষ্টিপাত নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার একাধিক প্রকল্প চলমান থাকলেও আলোর মুখ দেখেনি কোনোটিই। হাজার হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসীরা।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছর ধরে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ করছে তিনটি সরকারি সংস্থা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হাতে। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামের এই প্রকল্পে এরইমধ্যে খরচ হয়েছে ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
জলাবদ্ধতা নিরসনে আরেকটি বড় প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণও সিডিএর হাতে। দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। তারপরও বর্ষা মৌসুমে এর সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী।
এসব প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল পেতে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক লম্বা স্টোরি। তবে যেটা বলা যায়, তা হলো প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে তবেই এর সুফলতা পাওয়া যাবে।’
আরও পড়ুন:ফরিদপুরে ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগটি সঠিক নয় জানিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা।
অভিযোগটির বিষয়ে হাসপাতাল ও ডাক্তারের কোনো প্রকার দায় নেই জানিয়ে হাসপাতালে গণমাধ্যমের কাছে শনিবার একটি অঙ্গিকারনামা পাঠিয়েছেন প্রসূতির শ্বশর ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গেন্দু মোল্লার হাটের রফিক মোল্যা।
এর আগে গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় রফিক মোল্যা তার পুত্রবধূকে নিয়ে শহরের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হন। সেখানে রাতে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন পুত্রবধূ। অস্ত্রোপচারের সময় রোগী ও সন্তানকে বাঁচাতে প্রসূতির পরিবারের সম্মতিতে তার জরায়ু কেটে ফেলেন ডাক্তার। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফরিদপুরে ‘ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ’ এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
যা ভুল বলে অঙ্গিকারনামায় রফিক মোল্লা বলেন, ‘আমি গ্রামের সহজ সরল কৃষক। আমার পুত্রবধূর অস্ত্রোপচারের পর তার জরায়ু অপসারণের বিষয়টিকে একটি মহল ভুলভাবে আমার কাছে উপস্থাপন করে। আমি অন্যের প্ররোচনায় বিষয়টি প্রথমে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরলে তারা সংবাদ প্রকাশ করে। এর ফলে হাসপাতালের সুনামের যে ক্ষতি হয়েছে এজন্য আমি জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদকর্মীরা সংবাদে ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য নেননি। তাদের বক্তব্য নিলে আমার ভুল তথ্য উপস্থাপনের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। এখন আমার পুত্রবধূ ও নাতি সুস্থ আছে। এ হাসপাতালেই তারা চিকিৎসা নিচ্ছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই, আমি অন্যের প্ররোচনায় পরে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলাম, আমি ক্ষমা চাই।’
অস্ত্রোপচারের পূর্বে বন্ড সই করা রফিকের জামাতা সোহান শরীফ বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পূর্বে আমিই স্বাক্ষর করি। অস্ত্রোপচার চলার সময় ওটি রুম থেকে কয়েকবার রোগীর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। রোগীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাই রক্ত জোগাড় করতে বলেন। কিন্তু আমরা না বুঝেই ডাক্তারকে দোষারোপ করতে থাকি।’
ওই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রসূতি মা রিক্তা বলেন, ‘আমি ও আমার সন্তান সুস্থ আছি। কোথায় কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। শুধু এটুকু জানি জীবনের চেয়ে বড় মূল্যবান কিছু নেই।’
প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেন ডা. কল্যাণ কুমার সাহা ৷ তিনি মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে সপ্তাহে দুইদিন শুক্রবার ও শনিবার চেম্বার ও ওটি করেন। তিনি মূলত ঢাকার পিজি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার।
ডা. কল্যাণ কুমার সাহা বলেন, ‘ওটিতে নেবার পর রোগীর অবস্থা ভাল ছিল না। মা ও সন্তানের মধ্যে একজনকে বাঁচানোর অবস্থা তৈরি হয়। তখনও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি। কাকে বাঁচাবো মতামত নিই। এরপর অস্ত্রোপচার সঠিক হয়। একটি ছেলে সন্তান হয়। সন্তান সুস্থ ছিল। কিন্তু তখনও মায়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। তখনও আমরা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি ও দ্রুত রক্ত জোগাড় করতে বলি। একপর্যায়ে মাকে বাঁচাতে তার জরায়ু কাটতে বাধ্য হই। এখন মা ও সন্তান সুস্থ আছেন। এখানে ভুল অস্ত্রোপচার কোথায় বলুন?’
মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মানিক চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন মিডিয়াতে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তাতে ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো মতামত বা বক্তব্য নেই। একটি অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। যা আইন সমর্থন করে না।’
হাসপাতালটির চেয়ারম্যান নুর মো. মাজেদ বলেন, ‘একটি মহল আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে অপপ্রচার চালানোর জন্য তাদেরকে প্ররোচনা দিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করিয়েছেন। অপরদিকে রোগীর স্বজনরাও তাদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছি।’
আরও পড়ুন:নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়েছে।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে শনিবার দুপুরে ‘রাজশাহীর সচেতন নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লেখক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘সরেজমিন অনুসন্ধানের জন্য রাজশাহীর বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি দল শুক্রবার নওগাঁয় যাই। এ সময় আমরা জানতে পারি, জেসমিনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার না করে সরাসরি তুলে নিয়ে যাওয়া অপহরণের শামিল। পরে সরকারি বাহিনীর হেফাজতে তার মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত রহস্যময়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই এর পেছনের মূল কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
‘যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন ব্যক্তির এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার যে বর্ণনা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। কেননা নিহত জেসমিনও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ছিলেন। সুতরাং জেসমিন অপরাধ করে থাকলে খুব সহজেই বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া যেত। তা না করে র্যাবকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ জন্য রাজশাহীর বিশিষ্টজনরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে জেসমিনের নিহত হবার ঘটনার যথাযথ কারণ অনুসন্ধান এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে অনুসন্ধানকারী দলের ধারণা জন্মেছে যে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তারা ভীতসন্ত্রস্ত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
প্রেক্ষাপট
গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহর থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয় বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আটকের পর মস্তিষ্কে গুরুতর রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলতানা জেসমিন মারা যান বলে র্যাব দাবি করে, তবে স্বজনদের অভিযোগ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় পোস্টমর্টেম রিপোর্টসহ যাবতীয় তথ্য হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়েছে। প্রথমে রিপোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে আসে, পরে তা হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়।
ওই রিপোর্টে বলা হয়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জেসমিনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক শিশু আহত হয়েছে।
শনিবার ভোররাতে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ৮/ডব্লিউতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৬০ বছর বয়সী সৈয়দ আলম কুতুপালং ক্যাম্প ৮/ডব্লিউর এ/৪২ ব্লকের পচা বাজার এলাকার বাসিন্দা।
আহত ১২ বছর বয়সী শিশু তাইফুর একই ক্যাম্পের সাব ব্লক ডি/৫ এর নুরুল আমিনের ছেলে।
১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুনুর রশিদ জানান, শুক্রবার রাত দুইটা থেকে ক্যাম্প ৮/ডব্লিউতে থেমে থেমে গোলাগুলি হয়। যা চলে শনিবার ভোর পর্যন্ত। পরবর্তীতে এপিবিএন ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানে ঘটনাস্থল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত শিশুকে উদ্ধার করে ব্র্যাকের প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখান থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:গাজীপুর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দি এক হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া ওই কয়েদি হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সুহাতা গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম । তার বিরুদ্ধে ঢাকার লালবাগ থানায় একটি মামলা ছিল। সেই মামলায় তিনি কারাবাস করছিলেন।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ওবায়দুল রহমান জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে বন্দি ৪৮ বছর বয়সী ওই নারী হাজতির কারাগারের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সকাল ১০ টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারাগারের আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
উদ্বোধনের আগেই সিলেটের কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে কোনো নির্মাণ ত্রুটি রয়েছে কি না তা অনুসন্ধানে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট-এমজিএসপি প্রকল্পে সিলেট সিটি করপোরেশন দেশের সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ও নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে ‘কদমতলী বাস টার্মিনাল’ নির্মাণ করে। আট একর ভূমিতে এ টার্মিনাল নির্মানে ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। গত ১৫ জানুয়ারি টার্মিনালটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। এরপর টার্মিনালের ছাদের একটি অংশে ফাটল দেখা যায়।
শনিবার বিকেলে নগর ভবনের সভা কক্ষে এ নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, তদন্ত কমিটি আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সিসিক মেয়র বলেন, এখনও সিসিকের কাছে এই প্রকল্পটি নির্মাণ সংস্থা হস্তান্তর করেনি। উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষমান বাস টার্মিনালটিতে সুযোগ-সুবিধাগুলো ঠিক আছে কি না তা পর্যবেক্ষনের জন্য পরীক্ষামূলক চালু হয়। এরই মধ্যে স্থাপনাটির একটি অংশে কিছু ত্রুটি দেখা যায়।
সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর চৌধুরীকে সমন্বয়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, এলজিইডি সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রয়েছেন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, স্থাপনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে গোলাকার পাঁচতলা একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কার্যালয়, কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন কার্যালয় স্থাপন করা হবে।
যাত্রী উঠানামার জন্য পৃথক টার্মিনাল ভবন, সুপরিসর পার্কিং ব্যবস্থা, পরিবহন সেবাদানকারীদের জন্য যাবতীয় সুবিধা সম্বলিত পৃথক ভবন, রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট, পর্যাপ্ত যাত্রী বিশ্রামাগার, নারী, পুরুষ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা আলাদা শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, স্মোকিং জোন, ছোট দোকান, অসুস্থ যাত্রীদের জন্য সিক বেড, প্রার্থণা কক্ষসহ সব ধরনের আধুনিক সেবা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে এই স্থাপনায়।
এছাড়া পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সভা অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল হলরুম এবং যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ স্থাপন করা হয়েছে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও আসাম টাইপ বাংলোর স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কদমতলী বাস টার্মিনাল প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন করা হয়। এই টার্মিনালের নকশা করেন স্থপতি সুব্রত দাশ, স্থপতি রবিন দে ও স্থপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য