ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারে বেশ কয়েকটি এলাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রাজনীতিতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বর্জনের মধ্যে এই ভোটে দলটির নেতারা প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। তবে বেশির ভাগ এলাকাতেই নৌকা মার্কার প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়া ক্ষমতাসীন দল বা তার সহযোগী সংগঠনের নেতারাই।
তিন সপ্তাহের প্রচার শেষে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট হবে ৮৪৮ ইউনিয়ন পরিষদে। এরই মধ্যে প্রচার শেষ হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে এখন যাচ্ছে ভোটের সরঞ্জাম।
গত তিন সপ্তাহের প্রচারে নজিরবিহীন নানা বক্তব্য উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা তার পক্ষের নেতাদের কাছ থেকে। কোনো এলাকায় তারা জনসভায় মাইকে ঘোষণা দিয়েছেন, ভোট দিতে হবে প্রকাশ্যে, কোথাও বলেছেন, নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই, কোথাও বলেছেন, তাদের ভোট না দিলে এলাকায় নামাজ পড়তে দেয়া হবে না। একটি এলাকায় এক নেতা একে-৪৭-এর চেয়ে বড় কিছু নিয়ে আসার হুমকি দিয়েছেন।
এসব ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এমন নয়। কোথাও কোথায় তাদের সতর্ক করা হয়েছে, কোথাও কোথাও বক্তব্যের ব্যাখ্যা পেয়ে সন্তুষ্ট নির্বাচন করার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
ক্ষমতাসীন দলের বহু নেতার হুমকিসংবলিত এসব বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনও রয়ে গেছে। যদিও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কেউ কেউ দাবি করছেন, তাদের বক্তব্য কাটছাঁট করে বিকৃত করা হয়েছে। তারা অপপ্রচারের শিকার। কেউ কেউ আবার নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গাইছেন।
অবশ্য কেবল বক্তব্য নয়, ভোটে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় এখন সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শত শত। একটিতে প্রার্থীদের অজান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘটনায় সেই উপজেলায় ভোট স্থগিত হয়েছে। একটি পৌরসভায় ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করার অভিযোগে একজন বিষপান করেছেন। আরও নানা ঘটনা ঘটছে।
এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, জানতে চাইলে কমিশনের যুগ্ম সচিব (নির্বাচন) আতিয়ার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সহিংসতা রোধে সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। তারপরও কোথাও যদি কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটে, সে জন্য কমিশন প্রস্তুত আছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন জেলা প্রশাসন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের যেকোনো ধরনের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ ও যাচাইয়ের নির্দেশসহ কমিশনকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানোরও নির্দেশ দিয়েছে। ইসি এসব বিষয়ে সজাগ আছে।’
যশোরের ঝিকরগাছায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে ভোটের দিন কেন্দ্রে না গিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে গরু-মুরগি খেতে যেতে বলেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম।
সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমির হোসেনের নির্বাচনি জনসভায় ৫ নভেম্বর তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে ভোটের মাঠে আসার দরকার নেই এবং এলে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারতে হবে। যদি নৌকায় ভোট না দেয়ার ইচ্ছা থাকে, তাইলে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে মুরগি-গরু খান, শান্তিতে থাকেন।’
মনিরুলের এমন বক্তব্যের অডিও ক্লিপসহ যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন ওই ইউপিতে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বারিক। তিনি যুবলীগের নেতা।
বক্তব্যের পরপর নৌকার প্রার্থী আমির হোসেন বলেছিলেন, ‘নেতা কী বলেছেন সেটা তিনি ভালো জানেন। আমি খেয়াল করিনি।’
এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, জানতে চাইলে মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অপূর্ব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছি। এগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’
কক্সবাজারের উখিয়ার একটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে কবর দিতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ আলম।
এই বক্তব্য ভাইরাল হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থানায় তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের লিখিত অভিযোগও করেন। নির্বাচন কমিশন থেকে বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠিও দেয়া হয়।
ঘটনাটি ঘটে হলদিয়াপালং ইউনিয়নে। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়া যুবলীগের নেতা ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
১ নভেম্বর রাতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মনির মার্কেট এলাকায় নিজের প্রচার অফিসের উদ্বোধন করে নৌকায় ভোট না দেয়ার পরিণতি সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন প্রার্থী।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শাহ আলম বলছেন, ‘কী অইবা? চিহ্নিত অইবা। হবরস্থান চৌধুরীপাড়া অইব দে। আইত ন পারিবা। আর হবরস্থানত আই হবর দিত ন দিয়্যুম। হবরস্থান আঁর, আঁই দিত ন দিয়্যুম এডে।'
অর্থাৎ ‘(ভোট না দিলে) কী হবে? চিহ্নিত হবে। কবরস্থান চৌধুরীপাড়ায় হবে। এখানে আসতে পারবে না। আর এখানকার কবরস্থানে কবর দিতে দেব না। কবরস্থান আমার। এখানে আমি কাউকে কবর দিতে দেব না।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়ি চৌধুরীপাড়ায়। শাহ আলমের বাড়ি কুলালপাড়া এলাকায়। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন, তার এলাকার যে ভোটার তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভোট দেবে, তাদের কবর চৌধুরীপাড়ায় দিতে হবে। শাহ আলম তার নিজের এলাকায় হতে দেবেন না।
শাহ আলম আরও বলেন, ‘সোজা হতা, বাংলা হতা। চৌধুরীপাড়াত জনগুই পড়িব লাশ-ইবা। মসজিদত আই না পারিবা। আর বেগ্গুন ঐক্যবদ্ধ। এই পাঁচজন, আটজন, দশ ন, বেগ্গিন বন্ধ অই যাইব। চিহ্নিত গইজ্যুম, সমস্ত কিছু বন্ধ অই যাইব।’
অর্থাৎ ‘সোজা কথা, বাংলা কথা। চৌধুরীপাড়ায় এই লাশটাকে চলে যেতে হবে। মসজিদেও আসতে পারবে না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। এই পাঁচ, আট, দশজনের সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হবে। সবাইকে চিহ্নিত করে রাখা হবে। সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে।’
এমন বক্তব্যের বিষয়ে শাহ আলম শুরুতে ব্যাখ্যা না দিলেও পরে দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হয়রানি করতে তার ভিডিও এডিট করে ভাইরাল করে দিয়েছে।
এ ধরনের বক্তব্যকে নির্বাচনি আরচণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ইরফান উদ্দিন। আওয়ামী লীগের এই নেতাকে কারণ দর্শাতে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে হুমাইপুর ইউনিয়নে নৌকার বাইরে কাউকে ভোট দিতে না দেয়ার হুমকি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা। নৌকাকে জেতাতে প্রয়োজনে একে-৪৭ অস্ত্রসহ সব ধরনের শক্তি খাটানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
হুমকি দেয়া আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
৫ নভেম্বর বিকেলে বাজিতপুরের হুমাইপুর ইউনিয়নের টান গোসাইপুর গ্রামে হুমাইপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় নৌকার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়ার পক্ষে তিনি এ হুমকি দেন।
পরে সেই জনসভার ৭ মিনিট ৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা মেম্বার পদপ্রার্থী হয়েছেন, আপনাদের কাউকেই নৌকার বাইরে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না।’
মঞ্চের টেবিলটা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘নৌকার ভোট হবে এই রকম টেবিলের ওপরে, ওপেন। আপনারা যারা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মেম্বার প্রার্থী হয়েছেন, আপনারা আপনাদের জয়ের চেষ্টা করে মেম্বার প্রার্থী হন, মহিলারা মহিলা মেম্বার প্রার্থী হন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই।
‘আমাদের নেতা-কর্মীরা কোনো বাধা দেবে না। কিন্তু আপনাদের এজেন্টের বলে দিবেন নৌকার ভোট কোনো কাইত্ব্যের (গোপনে) ভেতরে হবে না, নৌকার ভোট হবে টেবিলের মধ্যে সবার সামনে। এখানে যদি কোনো মেম্বার প্রার্থী বা তাদের এজেন্ট বিরোধিতা করেন, আমরা তাৎক্ষণিক সেই প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেব।
‘আমরা সেদিন শুধু হুমাইপুরের শক্তি নিয়ে আসব না। আমাদের একে-৪৭ নাই, কিন্তু প্রয়োজনে সব নিয়ে আসব।’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের, পুলিশ বাহিনী আমাদের, সরকার আমাদের। আর কিছু কি বলার দরকার আছে? আমি কি আপনাদের খারাপ কিছু কইছি? কিন্তু কইলে এইডে আফনেরার লাইগ্যেই কইছি।’
সেই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর আল মামুন এখন দেখা দিচ্ছেন না। ফোনও ধরছেন না।
ওই এলাকায় তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা গতবারের জয়ী মামুন মিয়ার অবশ্য ভোটের পরিবশ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। যদিও অন্য একজন প্রার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্র জানায়, বাজিতপুর পৌর শহরের আলোচিত সাচ্চু হত্যা মামলায় পিবিআই ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর মামুনকে গ্রেপ্তার করে। মামলাটিতে প্রায় চার মাস কারাভোগের পর জামিনে ছাড়া পান তিনি।
সম্প্রতি আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। অভিযোগপত্রে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতার নাম আছে।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে নৌকার প্রার্থীকে খোলাখুলি ভোট দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে আলোচিত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন।
রামগঞ্জ উপজেলার ৩ নম্বর ভাদুর ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বরের ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে ৭ নভেম্বর রাতে দলীয় এক সভায় তিনি বলেন, ‘সবাইকে নৌকার ভোট ওপেনে মারতে হবে। এর বাইরে কোনো কথা নাই। মেম্বারদের ভোট গোপনে হবে। মাইন্ড ইট, এর বিকল্প কেউ কোনো চিন্তা করবেন না। আমরা আগামী ২৮ তারিখে নৌকার মাঝি জাবেদকে জয়ী করে আনব।’
সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাবেদ হোসেন ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রাসেল হোসেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান পবন বলেন, ‘আমার বক্তব্য এডিট করে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাইনি। ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ৩ নম্বর ভাদুর ইউনিয়নে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিচ্ছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন। ছবি: ফেসবুক
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পাশাপাশি কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হকের একটি বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোশারফপুরে পৌর এলাকায় নির্বাচনি সভায় তিনি ভোটারদের বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে যাতে দূরত্ব না বাড়ে। সন্দেহ সৃষ্টি না হয়, তাই আপনারা সব ওপেন ভোট দেন। কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের ভোট ভেতরে গিয়ে দেবেন। আর মেয়র ভোটটি সরাসরি দিয়ে দেবেন।’
এই বক্তব্যের ব্যাখ্যার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ভোটারদের বলেছি প্রকাশ্যে দিলে দেবেন, আমার কোনো আপত্তি নেই। বাধ্য করে ভোট নেব না। তারা অগ্রিম ভোটটা দিতে পারলে খুশি হতো।’
ভিডিও দেখার পর এ বিষয়ে কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক। তিনি বলেন, ‘আইন লঙ্ঘন করায় তার বিরুদ্ধে মামলা এবং অনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী রহমত আলী রব্বান বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী ওপেন ভোট মারার কথা বলছেন। এটা বন্ধ না হলে মানুষ ভোট দিতে আসবে না।’
কী ব্যবস্থা নিয়েছেন- জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান, অভিযোগ পেয়ে তারা এনামুল হককে সতর্ক করেছেন।
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
মন্তব্য