দেশজুড়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নানা স্থানেই ঘটছে সংঘাত-সহিংসতা। প্রাণহানি, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। মাগুরা, মেহেরপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষে ঝরেছে প্রাণ।
এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। অন্য বিরোধী দলগুলোরও তেমন একটা তোড়জোর নেই। তবু কেন এত সংঘাত আর প্রাণহানি?
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভোটে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। বেশিরভাগ ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বেশিরভাগ সংঘাতের ঘটনা ঘটছে দলের প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক প্রার্থীর অনুসারীদের। সংঘাত যারা মারা যাচ্ছেন তারাও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাব বিস্তার নিয়েও সংঘর্ষ বাঁধছে।
দলে অন্তর্কোন্দল আর হানাহানির ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিশ্চুপ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। বিদ্রোহ ঠেকাতে হুঙ্কার আর বহিষ্কারেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরও এ ব্যাপারে কোনো তৎপরতা নেই, বরং অনেক নেতার বিরুদ্ধে এসব সংঘাতে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নামছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা।
গত সোমবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াস রহমানের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার চালান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদ। এতে স্থানীয় পর্যায়ে দলে বিরোধ আরও বাড়ছে। এই বিরোধ রূপ নিচ্ছে সংঘাতে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকের বাইরে হতো। এ কারণে এটা সেটেল-ডাউন করতে কিছুটা সময় লাগছে। দ্বিতীয় কারণ একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক প্রার্থী থাকে। নৌকা মার্কা ছাড়াও অনেক প্রার্থী থাকে। এরপর ওয়ার্ডের প্রার্থী আছে। সব মিলিয়ে একটি ইউনিয়নে প্রায় ৭০ জন নির্বাচন করছে। সুতরাং একে অপরের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি, মিছিলে-মিছিলে মুখোমুখির কারণে দ্বন্দ্বগুলো সৃষ্টি হয়, যাতে কখনও কখনও মানুষ মারা যাচ্ছে, যা কখনও কাম্য নয়।’
আগের চেয়ে সহিংসতার বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা আগেও হতো। তবে আমি মনে করি, কখনও বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনে আবার কোনো কোনো জায়গা দলীয় কিছু নেতাদের ইন্ধনে এই গোলমালগুলো হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কঠোর ব্যবস্থার ঘোষণা হয়েছে। যারা বিদ্রোহী হচ্ছেন, তারা কখনও আর দলের মনোনয়ন পাবেন না।’
ইউপি নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বড় সংঘাতের ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরায়। জেলার সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই ভাইসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন।
গত ১৫ অক্টোবর দক্ষিণ জগদল গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এতে নিহতরা হলেন সবুর মোল্যা, রহমান মোল্যা, কবির হোসেন এবং ইমরান।
এই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য (মেম্বার) নজরুল হোসেন ও আরেক সদস্য প্রার্থী সৈয়দ হাসান আলীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, দুই দিন আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এই হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গত ৪ নভেম্বর নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষে নিহত হন তিনজন। এতে কমপক্ষে ৫০ জন গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।
ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আসাদুল্লাহ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন।
নিহত তিনজন হলেন আশরাফুল, আমির হোসেন ও খুশি বেগম। তারা সবাই দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক।
এর আগে গত ২৬ অক্টোবর এ ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হন।
দলীয় দুই নেতার মধ্যে বারবার সংঘাত ও প্রাণহানি প্রসঙ্গে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, ‘আমাদের একজন নেতা আসাদউল্লাহ আসাদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে তিনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, দুজন মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্বে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে কারও ইন্ধন থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের দলীয় কোনো প্রভাব নেই।’
তিনি বলেন, ‘হত্যার ঘটনায় একটা মামলা হয়েছে। এটা প্রশাসনিক বিষয়। পুলিশ তদন্ত করে যা পাবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে আমাদের বলার কিছু নেই। তবে দলীয়ভাবে আমরা প্রার্থীদের অনুনয় বিনয় করছি, সংঘাত এড়িয়ে এক সাথে এক জোট হয়ে কাজ করার জন্য। এরপরও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
নির্বাচনি সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুরেও। গত ৮ নভেম্বর সকালে মেগেরপুরের গাংনীতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই ভাই নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
নিহত দুজন হলেন লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের জাহারুল ইসলাম ও তার ভাই সাহাদুল ইসলাম।
কাথুলী ইউপি নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুই সদস্য প্রার্থী আজমাইন হোসেন ও আতিয়ার রহমানের কর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ খালেক নিউজবাংলাকে জানান, হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এটি পুলিশ দেখবে। এসব ঘটনা এড়ানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আর যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
খোদ রাজধানীতেও ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনা। গত ৩১ অক্টোবর যাদবপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আবদুল মজিদের কর্মীদের ওপর বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজুর কর্মীরা হামলা চালায়। এতে আহত হয়ে পরদিন মারা যান শিহান নামে এক যুবক। আলমগীর হোসেন নামে আওয়ামী লীগের আরেক কর্মী গুরুতর আহন হন।
এ ছাড়া বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়ন, পঞ্চগড় উপজেলার ভজনপুর, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদপুরে, পটুয়াখালীর বাউফলের নওমালা ইউনিয়নে, ফরিদুপুরের ভাঙ্গায়, কুমিল্লার তিতাস, সিলেটের সদর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সংঘাত, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের এমন সংঘাতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘আমরা তো চাই নির্বাচনে কোনো সহিংসতা না হোক। এ জন্য আমাদের সাধারণ সম্পাদক কড়া বিবৃতি দিয়েছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা বিদ্রোহী তারা যাতে বসে যায়। আশা করি, আগামী নির্বাচনগুলোতে সহিংসতা কমে আসবে। তার আগে আমাদের সবাইকে মনোযোগী হতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মনোযোগী হতে হবে। আমরাও বিদ্রোহীদের পরামর্শ দিয়ে নিবৃত করার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে কঠোর হবে বলেছে। আমি মনে করি দুই একটা নির্বাচন গেলে আমরা সেটেল-ডাউন করব।’
দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের মধ্যে কিছু কিছু লোক বিদ্রোহী হচ্ছে। এই বিদ্রোহী হওয়ার পেছনে আমরা কারণ হিসেবে দেখেছি আমাদের দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা একটি ইউনিয়নে অনেকজন আছে। আমি মনে করি প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ১০ জন নেতা-কর্মী আছে, যারা চেয়ারম্যান হওয়ার উপযুক্ত, কিন্তু ১০ জনকে তো মনোনয়ন দেওয়া যাবে না।
‘একজনকে দিলে বাকি ৯ জন মনে করে, আমি আমার মূল্যায়ন পেলাম না। এতে অনেক নেতা আবেগের কারণে বিদ্রোহী হয়েছে। আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, কেন্দ্রীয়ভাবে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দল থেকে বোঝানো হচ্ছে। কেউ কেউ বসে যাচ্ছে, কেউ কেউ না বসে দাঁড়িয়ে থাকছে। অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত ইচ্ছা করে সহিংসতা সৃষ্টি করছে, জাতীয় নির্বাচনের যা তারা করার চেষ্টা করেছিল।’
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।
এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’
স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’
বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।
সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। প্রায় সাত-আট মাস কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এতে তৃণমুলে বসবাসকারী অবহেলিত মানুষগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। এমনটিই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলা ও একটি প্রশাসনিক থানা এলাকায় ৪০টি ইউনিয়ন পরিবারকেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিভিল সার্জন কর্তৃক সাতটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র পরিচালিত হয় । বাকিগুলো পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে।
সিভিল সার্জন কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি, লোহাগড়া উপজেলায় তিনটি এবং কালিয়া উপজেলায় একটি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবার ওপর গ্রামাঞ্চলের নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষগুলো সুস্থ ও সবলভাবে বেচে থাকার জন্য অনেকটিই নির্ভর করে। এসব কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ । কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ।
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার জেলার কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের অনেক মহিলা চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাদের মুখখানা ছিল মলিন । আবার অনেক কেন্দ্র ছিল ফাকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার একটি কক্ষে বসে গল্পে মেতে আছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো.আলাউদ্দীন কেন্দ্রের একটি কক্ষে চুপচাপ বসে আছেন । জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমাদের এখানে ২৫ রকমের ওষুধ বরাদ্দ ছিল। তখন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশু-নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে জড়ো হতেন। গত সাত-আট মাস হলো কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই । ফলে কেন্দ্রে রোগীদের তেমন ভিড়ও নেই। শুধু পরিবার পরিকল্পনা কিছু সামগ্রী আছে তাই দিয়ে সেবা চলছে। তিনি বলেন, এখানে যেসব রোগী আসে তার বেশিরভাগ হচ্ছে শিশু ও নারী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি হয় না।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হলে তৃণমুলে সাধারণ মানুষ বিপদে এবং স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। না হলে গ্রামের কৃষক শ্রেণির মানুষের জীবনের ছন্দ পতন ঘটবে। গতকাল বুধবার দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ি গ্রাম থেকে ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসেছেন সালমা আক্তার । তার কোলের শিশুর সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে এহেনে ডাক্তার দেহালি ওষুধ দেতো। এহোনে দেচ্ছে না । কাগজে লেহে দিলি আমাগে বাজারের দুয়ানতে কিনে নিতি হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। অত টায়া পয়সা নাই আমাগে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকাররে কচ্ছি আগের মতো আমাগে মাগনা (বিনা টাকায়) ওষুধ দিতি হবে।’
কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের মুলশ্রী গ্রামের দীপ্তি রানী মণ্ডল বুকে ব্যথা অনুভব করলে নিজের ওষুধ নিতে এসেছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘এহেনের ডাক্তার সাদা কাগজে কী যেন লেহে দেলো। আর কলো এই কাগজ নিয়ে বাজারের দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে । কিরাম কতা হলো কওদিন বাপু । আমাগে যদি দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে তালি তুমরা এহানে বসে রইছো ক্যান ? আগেতো এমন কতা শুনিনি।’
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আলিফ নূর বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় সাত থেকে আট মাস। যে কারণে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধের মধ্যেও খোলা ছিল । ওষুধ না পেলেও চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল না । যারা গর্ভবতী মা তারা চেকআপের জন্য কেন্দ্রে আসছেন । তাদের প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সংকট মোচন হবে ।
কক্সবাজারের আলোচিত সাবেক এমপি জাফর আলম কে আদালতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়েছে আজ।
জাফর আলম সর্বশেষ কক্সবাজার-১ আসনের এমপি এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
বুধবার সকাল ৯টার পর পরই জেলা পুলিশের একটু প্রিজন ভ্যানে করে যৌথ বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় তাকে আদালতে আনা হয়।
তাকে আজ আদালতে তোলার খবরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বর ও আশপাশের অন্তত অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে।
আদালত সূত্র জানায়- বিগত ৫ আগষ্ট পরবর্তী চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় দায়ের করা একাধিক হত্যাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তাকে শ্যােন অ্যারেস্ট দেখানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সেসব মামলার শুনানি করা হয় আজ। এ সময় আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল কবির শুনানী শেষে ৭ মামলায় সর্বমোট ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তন্মধ্যে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলায় সর্বোচ্চ চারদিন ও সর্বনিম্ন ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলাগুলোর মধ্যে চকরিয়া থানার ৫টি ও পেকুয়া থানার ২টি মামলা রয়েছে।
আরও জানান- আদালতের শুনানী চলাকালে জাফর আলমের পক্ষে শুনানী করেন অসংখ্য আইনজীবী। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে তথা জাফর আলমের বিপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. মঈন উদ্দিন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এপিপি মঈন উদ্দিন-ই।
আদালতের শুনানী শেষে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা জাফর আলমের মুক্তির দাবিতে সাড়ে দশটার দিকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন।
এর আধাঘন্টা পর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জাফর আলমের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল করে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে গিয়ে শেষ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোসাইপুর-জালশুকা সড়কের নির্মাণ কাজ ১১ মাসেও শেষ হয়নি। অথচ ঠিকাদারের শর্ত অনুসারে এ কাজ নয় মাসে শেষ করার কথা। অভিযোগ রয়েছে- ঠিকাদার লোকমান হোসেন এ সড়কের বক্সকাটিং করে ১১ মাস ধরে ফেলে রেখেছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও গাফিলতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। উল্লেখ্য তিতাস নদীর উত্তর পাড়ে বড়াইল ইউনিয়নের একটি গ্রাম গোসাইপুর। গ্রামের পশ্চিম অংশে বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে দিয়ে চলে গেছে গোসাইপুর-জালশুকা সড়কটি। এ বাজারের যাতায়াতের জন্য রাধানগর, চরগোসাইপুর, জালশুকা, বড়াইল, মেরাতুলী গ্রামের মানুষেরাও সড়কটি ব্যবহার করে।
গোসাইপুর বাজারের মুদি মালের ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন বলেন-"আমার গ্রামের বাড়ি জালশুকা । প্রতিদিন এ সড়কে বাজারে আসি। সড়কটি বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই পানি ও কাঁদা মিলে চলাচলে অযোগ্য হয়ে যায়"। বড়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন-"পূর্ব অঞ্চলের জনগণের জন্য এই রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসাইপুর বাজার ও রাধানগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসা-যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ার কারণে জনগণের যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে"। গোসাইপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন-"সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। নির্মাণ কাজ করতে এসে ঠিকাদার আর কাজ করছেন না। এখন বর্ষার বৃষ্টির কারনে মোড়ে মোড়ে রাস্তা ভেঙে মাটি পড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরাও"। কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন- "সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে আমি কয়েকবার তাগিদ দিয়েছি"। এ বিষয়ে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন বলেন-"এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে"। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বলেন-"এই সড়কের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করব"।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য