নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১টি পদের ১৪টিই ফাঁকা। আর সিনিয়র স্টাফ নার্সের ৩০টি পদের মধ্যে আছেন মাত্র চারজন।
অন্যান্য পদ মিলে মোট ৫৫টি পদের ৪৩টিই খালি পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এ অবস্থায় জনবল সংকটে দ্বীপ উপজেলাটির জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, গাইনি, মেডিসিন, সার্জারি, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিক্স, মেডিক্যাল অফিসার হোমিও, ইএমও, আইএমও, এনেসথেশিস্ট, এমও প্যাথলজিস্ট, সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে কোনো চিকিৎসক নেই। চারটি মিডওয়াইফ পদের তিনটিই ফাঁকা।
মাত্র দুজন মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো), একজন জুনিয়র কলসালটেন্ট (শিশু), একজন মেডিক্যাল অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। জরুরি বিভাগ দেখেন মেডিক্যাল অফিসাররা।
এদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে জনবল সংকটের এই বাস্তবতায় আরেকটি সমস্যা হলো, হাতেগোনা যে কয়েকজন চিকিৎসক আছেন তারাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। হাসপাতাল চলার সময়েই তারা প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন কর্মস্থল বাদ দিয়ে একটি ল্যাবে নিয়মিত রোগী দেখেন। গত তিন মাস হাসপাতালে না এসে বাসা ও প্রাইভেট ক্লিনিকে তিনি রোগী দেখেছেন।
সম্প্রতি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপজেলার উছখালী বাজারে তিনটি ল্যাব ও একটি ফার্মেসিতে অভিযান চালায়। এ সময় লাইসেন্স, সেবার মূল্য প্রদর্শন, ল্যাবে এক্স-রে কক্ষে সুরক্ষিত দরোজা না থাকাসহ বিভিন্ন অপরাধে চারটি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভুক্তভোগীদের একজন হাতিয়ার বুড়িরচর এলাকার সুলতান আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। অথচ প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরাই টাকার বিনিময়ে সেবা দেন। কিন্তু প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই।
ডা. নাজিম উদ্দিন এ ব্যাপারে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অবসর সময়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখি। এতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের সেবা কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হওয়ার তো কথা নয়।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দ্বীপের ছয় লাখ মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসা। কিন্তু প্রসূতি, শিশুরোগসহ নানা অসুস্থতায় আক্রান্ত মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে এসে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আসা রোগীরা না পাচ্ছেন ডাক্তার, না পাচ্ছেন ভর্তি হওয়ার সুযোগ। হাসপাতালের বারান্দা ও করিডোরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে রোগীদের। তারপরও চিকিৎসকের অভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে না তারা।
হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী ডেন্টাল সার্জন এবং এমও প্যাথলজিস্ট দীর্ঘদিন ধরে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। অথচ বেতন নিচ্ছেন হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে।
উপজেলার ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। হরনী ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া চিকিৎসকবিহীন রয়েছে চানন্দী ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নলচিরা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বুড়িরচর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সোনাদিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আফাজিয়া ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ওছখালি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
এ বিষয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারী অধিদপ্তর থেকে নার্স ও মিডওয়াইফ পদে উপজেলা পর্যায়ে নিয়োগ পেয়ে এলেও কিছুদিনের মধ্যে কীভাবে যেন তারা আবার চলে যায়।’
‘আমরা হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখানে চিকিৎসক সংকটের কথা সিভিল সার্জন অফিসে বার বার জানিয়েছি। এর মধ্যে তিনজন এমবিবিএস ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছে।’
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার বলেন, ‘ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার-নার্স সংকটের বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বার বার লিখেছি। হাতিয়ায় রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেলার কোভিড হাসপাতাল থেকে দুইজন এবং সোনাইমুড়ী থেকে একজন ডাক্তার পাঠিয়েছি। আর নার্স সংকট দূর করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। নতুন নার্স নিয়োগ করা হলে হাতিয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দ্বীপ এলাকায় হওয়ায় সেখানে নিয়মিত মনিটরিং করা কষ্টকর। তারপরও বিষয়টি আমি অবগত হয়ে তাকে সাবধান করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে এমনটি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ, প্রার্থী ও ভোটাররা।
এবারের নির্বাচনে মোট ৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। একজন ভোটার গড়পড়তা ১০ মিনিট সময় ব্যয় করে ভোটদান শেষ করতে পারবেন।
সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। তবে বিকেল ৪টার মধ্যে বুথে উপস্থিত সকল ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে, এমনকি লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদেরও ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে প্রশাসন জানায়। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা থাকবে। ভোটারদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিতে সব বাস সার্ভিসের সময়সূচি অনুযায়ী চলবে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৬২ জন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বামজোট, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের মতো রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে নিজেদের প্যানেল দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও কয়েক শতাধিক।
প্রায় ৪০ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, তা ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, আজ ডাকসুর ২৮টি ও হল সংসদ নির্বাচনের ১৩টি মিলিয়ে মোট ৪১টি ভোট দেবেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
অন্যবারের তুলনায় এবার ডাকসুতে ব্যালটের আকার বেড়েছে। এবার ডাকসুতে থাকছে পাঁচ পৃষ্ঠার ব্যালট। আর হল সংসদের থাকছে এক পৃষ্ঠার ব্যালট। এ ভোট দিতে হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে।
এরই মধ্যে ভোট দেওয়ার নিয়মকানুন ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস। এই ভিডিও চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ভোট প্রদানে ছাত্র–ছাত্রীকে উৎসাহিত করতে তিনটি অনুষদ ও একটি ইনস্টিটিউটে সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব সভায়ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন ভোটারদের ভোটদানের পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
ভোটার তার সুবিধাজনক সময়ে নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ভোটকেন্দ্রে থাকা পোলিং কর্মকর্তাকে ভোটার তার পরিচয় নিশ্চিত করবেন।
ভোটার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হলে তার লাইব্রেরি কার্ড অথবা পে-ইন স্লিপ দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল আইডি কার্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন।
পরিচয় নিশ্চিতের পর ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দেবেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা।
ভোটার তালিকায় নিজের নামের পাশে স্বাক্ষর করবেন ভোটার। এরপর পোলিং কর্মকর্তাকে ভোটার নম্বর জানাতে হবে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের ব্যাগ, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ, যেকোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, পানির বোতল ও তরল জাতীয় কোনো পদার্থ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে থাকছে নিষেধাজ্ঞা।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে গতকাল সোমবার রাত ৮টা থেকে টানা ৩৪ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথ সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ করা হয়েছে, যা কাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বলবত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ (শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ী ক্রসিং, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত) সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন (অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, রোগী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন) ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
ডাকসু নির্বাচনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও ভোট দেবেন। তারা ভোট দেবেন ব্রেইল পদ্ধতিতে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভোট ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং যারা ব্রেইল পড়তে পারেন, তাদের জন্য প্রথমবারের মতো আমরা ব্রেইল পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ছাপিয়েছি।’
আপত্তি নিষ্পত্তি ও সংশোধনের পর এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ২০ হাজার ৮৭৩ জন ছাত্র এবং ১৮ হাজার ৯০২ জন ছাত্রী ভোটার রয়েছেন।
ছাত্র ভোটারদের মধ্যে অমর একুশে হলে ১২৯৫ জন, কবি জসীমউদ্দিন হলে ১৩০৩ জন, জগন্নাথ হলে ২২২২ জন, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১৬০৬ জন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ১৯৯৮ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১৭৬২ জন, বিজয় একাত্তর হলে ২০২৭ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১৭৫১ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১৯৫৭ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬৬৪ জন, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ১৪৯৯ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৩৭৭ জন এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১৪০২ জন রয়েছেন।
এছাড়া, ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে রোকেয়া হলে ৫৬৪১ জন, শামসুন নাহার হলে ৪০৮৪ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২১০৩ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৪৩৪ জন এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২৬৪০ জন আছেন।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে গতকাল সোমবার বিকেল থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাবি মেট্রো স্টেশন। গতকাল বিকেল ৪টা থেকে ও আজ পুরো দিন স্টেশন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএলের এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনসংলগ্ন যাতায়াতের জন্য বিকল্প পন্থা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হয়।
সারাদেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে: উপাচার্য
বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে বলেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, সারাদেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা শুভ কামনা জানাচ্ছেন। এখন একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তরণের প্রক্রিয়াকে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে যে কাজ করছে, তাতে তোমরা তোমাদের ভূমিকা পালন করবে, সেটাই প্রত্যাশা করছি।
গতকাল বিকাল পৌনে ৪টার দিকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ ভিডিও বার্তা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন তোমরা চেয়েছো; গভীরভাবে প্রত্যাশা করেছো; গণঅভ্যুত্থানের মৌলিক মূল্যবোধগুলোর সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণও। গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য সমন্বিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক একটি ভয়েস তৈরি করা। এসব গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধকে আমরা তুলে ধরবার জন্য তোমাদের আগ্রহে এবং ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করেছি। তোমাদের অনুষ্ঠান নির্ভয়ে তোমরা ভোট দিতে আসবা, আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি।’
এবারের ডাকসু নির্বাচনকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটি বিভিন্ন কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচন ঐতিহাসিক। এবার অনেক কিছু আমরা করেছি, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আগে ঘটেনি। আমাদের ৮১০টি বুথ থাকবে। প্রায় ৪০ হাজার ভোটার। প্রথমবারের মতো আমরা হল থেকে বেরিয়ে এসে কেন্দ্রীয়ভাবে ৮টি কেন্দ্রে এ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছি। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা; প্রশিক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ পোলিং কর্মকর্তা।’
জয়-পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে উল্লেখ করে প্রার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এ পর্যায়ে এসেছি পরস্পর পরস্পরের হাত ধরে। এখন বাকি পথটুকু আমরা খুব স্বচ্ছন্দে পার হতে পারব বলে বিশ্বাস করি। যেহেতু নির্বাচন প্রক্রিয়া; কিছু প্রার্থী জিতবেন, কিছু প্রার্থী জিতবেন না। জয়-পরাজয় থাকবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিজয়ী এবং বিজিত; উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। গণতান্ত্রিক একটি প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয়করণ বা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে আপনি আপনার ভূমিকা পালন করলেন। বহু বছর আমরা ঐতিহাসিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। সেই প্রক্রিয়ায় বিজয়ী এবং বিজিতকে ভূমিকা রাখছেন এবং রাখতে হবে। এটিই বিরাট সার্থকতা।’
হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না: সেনাবাহিনী
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। গতকাল সোমবার বাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এমনটা জানানো হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরও (আইএসপিআর) তাদের পেজে পোস্টটি শেয়ার করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না। এর আগেও সেনাবাহিনী কর্তৃক আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।’
একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টের অপচেষ্টা মাত্র, যা সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশকে ব্যাহত করতে পারে।’
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আশা করে- দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে।’
নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট জোরদার থাকবে : ডিএমপি কমিশনার
ডাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট জোরদার থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। সোমবার বিকেলে টিএসসিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি এ কথা জানান।
ডিএমপি কমিশনার জানান, গতকাল রাত ৮টা থেকে ১১ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে লাইসেন্সধারী অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। এখন ১৭৭১ জন পুলিশ নিরাপত্তায় কাজ করছে, মঙ্গলবার ২০৯৬ জন থাকবে, এর বাইরে র্যাব ও বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও থাকবে।
তিনি বলেন, কোনো কারণে আইন হাতে তুলে নেয়া যাবে না। অবাঞ্ছিত লোকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে হবে। নিরাপত্তায় ৮টি চেকপোস্ট, মোবাইল পেট্রোল, বিশেষায়িত টিম, সোয়াদ টিম, ডিবি সাদা পোশাকে থাকবে এবং সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হবে।
যারা সাইবার অ্যাটাক করছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। এবারের নির্বাচন হচ্ছে ৩৮তম বারের মতো। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়। তবে সে নির্বাচনও হয় উচ্চ আদালতের রায়ের পর। ওই নির্বাচনে ভিপি (সহসভাপতি) হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নুর এবং জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ভিপি নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহবুবুর জামান। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১৯ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও হয় মাত্র ৭ বার। এরপর ১৯৯১ সালের পর থেকে ডাকসু নির্বাচন যেন অতীত হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন, বিক্ষোভ, ধর্মঘট করে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। এরপর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় ২০১৯ সালে হাইকোর্টের একটি রায়ে ডাকসু নির্বাচনের পথ খোলে।
একসময় মাকুর (তাঁত বোনার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রবিশেষ) ঠকঠক শব্দে মুখর থাকতো নরসিংদী জেলার গ্রামীণ জনপদ। এই দৃশ্য এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। হাতে টানা তাঁতের জায়গা দখলে নিয়েছে পাওয়ার লুম এবং বিদ্যুৎ-চালিত তাঁত। হাতে বোনা তাঁতের কথা বর্তমান প্রজন্ম শুধু বই-পুস্তকেই পড়েছে বা ছবিতে দেখেছে। বাস্তবে আর দেখার সুযোগ মিলছেনা বললেই চলে।
নরসিংদী জেলায় বর্তমানে হাতে বোনা তাঁত নেই বললেই চলে। গ্রামগুলোতে এখন আর মাকুর ঠকঠক শব্দ শোনা যায় না। শোনা যায় না দিনরাত তাঁত শ্রমিকদের গানের শব্দ। পূর্বে এখানকার তাঁতীদেরকে তাদের হাতে বুনা কাপড় নিয়ে বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে দেখা যেতো। কিন্তু তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত তাঁতীদেরকে এখন আর তাঁতের কাপড় মাথায় করে বাজারে যেতে দেখা যায় না। নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী ও শেখেরচর বাবুরহাট, রায়পুরা উপজেলার রাধাগঞ্জ, মনিপুরা ও হাসনাবাদ তাঁতী বাজারগুলোতে এখন আর তাঁতীদের সমাগম ঘটে না। তাঁত পল্লী ও বাজারগুলো এখন এক পরিত্যক্ত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
প্রয়োজনীয় মূলধন, সরকারী ঋণ, রং, সূতা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং বাজারজাত করণের অভাবে সর্বোপরি শক্তিচালিত তাঁত এবং পাওয়ারলুমের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় হস্তচালিত তাঁত শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
এক সময় হস্তচালিত তাঁতের সাহায্যে তৈরী করা হতো বাংলার বিখ্যাত কাপড় মসলিন। এরপর ক্রমান্বয়ে এই হস্তচালিত তাঁতে তৈরী হতে থাকে মোটা শাড়ী, লুঙ্গী, বিছানার চাদর, দরজা জানালার পর্দা, মোটা খদ্দর ও গামছাসহ বিভিন্ন সূতী কাপড়।
এসব তাঁতের তৈরী সূতী কাপড়কে ঘিরে নরসিংদীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহাসিক শেখেরচর বাবুরহাট। নরসিংদী জেলার নরসিংদী, রায়পুরা, পলাশ, মনোহরদী, শিবপুর ও বেলাব উপজেলার হাজার হাজার তাঁতী তাদের তৈরী তাঁতের সূতী কাপড় এই বাবুরহাটে নিয়ে বিক্রি করতো। ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ক্রেতারা বাবুরহাটে গিয়ে নরসিংদীর সূতী তাঁত বস্ত্র নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতো।
আগে যে তাঁতের কাপড় না হলে মেয়েদের বিয়েই হতো না, আজ সে তাঁতই নেই। জানা গেছে, এ জেলায় নব্বইয়ের দশকের দিকে প্রায় লক্ষাধিক হস্তচালিত তাঁত ছিল। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী তাঁত ছিল রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ, আদিয়াবাদ, চরসুবুদ্ধি, হাইরমারা, মির্জানগর, মরজাল ইউনিয়নে। এছাড়া সদর উপজেলার মাধবদী, আনন্দী, আলগী, গদাইরচর, নুরালাপুর, হাসেমেরকান্দি, করিমপুর, রসূলপুর, অনন্তরামপুর, জিতরামপুর এলাকায় হস্তচালিত তাঁতের প্রচলন ছিল। বর্তমানে শতাধিক হস্তচালিত তাঁত আছে কিনা সন্দেহ।
নরসিংদী সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের রসূলপুর গ্রামের রূপ মিয়া বলেন, একসময় এ গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে তাঁত ছিল। তাঁতের এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল করিমপুর ইউনিয়ন। বর্তমানে এ গ্রামের মাত্র ১০/১৫টি পরিবারের মধ্যে হাতেগোনা কিছু তাঁত রয়েছে। এসব তাঁতে শুধু গামছা তৈরী করা হয়। সে গামছা কেলমাত্র চট্টগ্রামের মুনিপুরী কিংবা আদিবাসীরা ব্যবহার করে। এ গামছারও তেমন কোনো চাহিদা নেই। এখন অবসর সময় কাটাতে এবং অন্য কোনো কাজ না থাকায় তারা এখনো পর্যন্ত এ শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, এক সময় নিলিক্ষার তাঁতের শাড়ি না হলে মেয়েদের বিয়েই হতো না। এখন আর এ কাপড়ের কদর নেই বললেই চলে। তাই দিনের পরদিন এ হস্তচালিত তাঁত শিল্পটি বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।
তাঁত শ্রমিক আবু কালাম জানান, প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি এই তাঁতের মাধ্যমে কাপড় বুনতেন। তবে এখন আর শাড়ী, লুঙ্গী, বিছানার চাদর, দরজার পর্দা, মোটা খদ্দর তৈরী করেন না। তিনি এখন তৈরী করেন গামছা। আর এসব গামছা বিক্রি করেন শেখেরচর বাবুরহাট বাজারে।
তিনি আরো জানান, বাজার থেকে সূতা এনে প্রসেস করে এই গামছা তৈরী করেন। একটি গামছা তৈরী করতে খরচ হয় ১২৫ টাকা, বিক্রি করেন ১৫০ টাকায়। সারা দিনে ৮ থেকে ১০টা গামছা তৈরী করতে পারেন।
বিষয়টি নিয়ে বিসিক নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম খান এর সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নে বিসিকের একটি টিম পরিদর্শন করেছে। সেখানে তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ১০টি পরিবারকে এ বিসিকের আওতায় আনার জন্য এবং তাদেরকে বিসিকে নিবন্ধন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, “আপনারা যে সকল দ্রব্যগুলো তৈরী করছেন এগুলো এখনো প্রাচীন দেনধারণার আমলের দ্রব্য। এ দ্রব্যগুলো কিভাবে আধুনিকায়ন করা যায় এবং বাজারে কিভাবে প্রসারিত হয় এসব বিষয়ে তাদেরকে বিসিক পরামর্শ দিচ্ছে।
এছাড়া তাদের উৎপাদিত দ্রব্যগুলো কিভাবে উন্নয়ন করা যায় এবং বিসিকের আয়োজনে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় সে মেলায় তাদের দ্রব্যগুলো প্রচার এবং প্রসারের ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে কুটিরশিল্পের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে অল্প সুদে ২ থেকে ৫ বছর মেয়াদী ঋণ দিয়ে থাকি। তবে বর্তমানে নরসিংদী জেলায় কয়টি তাঁতশিল্প রয়েছে তা বলা মুশকিল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। সোমবার সকাল ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ মিলনায়তনে চবি চিকিৎসা কেন্দ্রের 'ফিজিওথেরাপি এন্ড স্পোর্টস ইঞ্জুরি রিহ্যাব ইউনিটের উদ্যোগে ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়৷
‘সুস্থ বার্ধক্যে ফিজিওথেরাপি—পড়ে যাওয়া ও দুর্বলতা প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব’ প্রতিপাদ্যেকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় এ আলোচনা সভা।
চবি মেডিকেল সেন্টারের চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়বের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। আলোচনা সভার প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ও ফিজিওথেরাপিস্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
ফিজিওথেরাপিস্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘শিশুকাল থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সুস্থ থাকার জন্য কিভাবে চলাফেরা করবে সেজন্য মায়েদেরকে ট্রেনিং দিতে হবে। যৌবন বয়সের কার্যকলাপ করার জন্য এরগোনোমিক গাইডলাইন সম্পর্কে ধারনা নিতে হবে, যে কিভাবে চলাচল করবে, কিভাবে বসবে, কিভাবে হাঁটবে, কিভাবে কাজকর্ম করবে। বৃদ্ধ বয়সেও সুস্থ থাকার জন্য তাদেরকে সকল নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে অনেক ধরনের রোগ হয় যেমন ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিস,স্ট্রোক জনিত সমস্যা। এছাড়াও ব্যথাজনিত রোগের জন্য অনেকে ব্যথানাশক ঔষধ খেয়ে খেয়ে ব্যথা দমিয়ে রাখে, তা থেকেও নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই বৃদ্ধ বয়সে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়াতে, মাংশ পেশির সক্ষমতা ধরে রাখতে, জয়েন্টের রেঞ্জ অব মোশন ধরে রাখার জন্য একজন ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি নিলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন৷’
উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ফিজিওথেরাপিস্টদের কাছে যাই না এটা একটা অসচেতনতা। আমরা রোগ লালন করি। প্রাথমিকভাবে রোগের নিরাময়ের চেষ্টা না করে রোগ নিয়ে বসে থাকি। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি দরকার। আমাদের ফিজিওথেরাপিস্ট দের কাছে যাওয়ার সচেতনতা তৈরি করা উচিত।’
উপউপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, দিবসটি পালনে উদ্যোগ খুবই প্রশংসাযোগ্য। এর ফলে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
অপরাধীদের গ্রেপ্তার, বিচার বিভাগীয় তদন্ত, আহতদের উন্নত চিকিৎসা, শতভাগ আবাসন ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবির।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে প্রশাসনিক ভবন, শহীদ মিনার হয়ে কাটা পাহাড় রোড দিয়ে জিরো পয়েন্টে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় বিক্ষোভ কর্মসূচি।
বিক্ষোভ মিছিলে সংগঠনটির নেতা কর্মীরা ‘এই মুহূর্তে দরকার, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার’, ‘বিচার নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, লাল সন্ত্রাসের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘মববাদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিব না’, ‘জুলাইয়ের প্রশাসন, দাও শতভাগ আবাসন’, ‘তোমার আমার অধিকার, নিরাপদ ক্যাম্পাস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শাখা ছাত্রশিবিরের বায়তুল মাল সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী, কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি
ইব্রাহিম হোসেন রনি, শাখা সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ, প্রচার সম্পাদক মো. ইসহাক ভূঁঞা, শিক্ষা সম্পাদক মোনায়েম শরীফ।
এসময়, দাবিগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে প্রশাসনকে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন নেতারা।
শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘আমরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি, সন্ত্রাসীদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের নীরবতার কারণে কিছুদিন পরপর আমাদের সন্ত্রাসীদের সাথে মুখোমুখি হতে হয়।’
প্রশাসনকে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনাদের শান্তি মতো পদত্যাগও করতে দেব না। হুঁশিয়ার হয়ে যান। শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনেক খেলেছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি উল্লেখযোগ্য কার্যকর পদক্ষেপ না নেন, তাহলে আপনারা এখন যা ভাবছেন, তার চেয়েও পরিণতি ভয়াবহ হবে।’
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন,‘প্রশাসন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ৩০ ও ৩১ আগস্টের ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ঘটনার সূত্রপাত থেকে শেষ পর্যন্ত কারা উস্কানি দিয়েছে, কারা নির্দেশদাতা, সন্ত্রাসীরা কাদের প্রশ্রয়ে এখনও গ্রেফতারের বাইরে তা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে উন্মোচিত করে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জুলাইয়ের এই প্রশাসন আমাদের আবাসনের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যার ফলে উচ্চ মূল্য দিয়ে কটেজে অবস্থান করতে হয়। আবাসন, নিরাপত্তা, বিচার বিভাগীয় তদন্ত, আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।’
ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো সকল শিক্ষার্থীদের দাবি। সংঘর্ষের ঘটনাকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এই প্রশাসনকে মুখ বন্ধ রাখলে হবে না। সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যদি গ্রেপ্তার করতে না পারেন, ভিসি মহোদয় আপনাকে অতিদ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। প্রোভিসি আপনি মনে করিয়েন না বোবার কোনো শত্রু নেই, মুখ বন্ধ রাখলে হবে না। যদি আপনি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন, আপনাকেও পদত্যাগ করতে হবে। প্রক্টর মহোদয়, আপনাকে বলছি, আপনাকেও দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা দপ্তরের সদস্যদের পদত্যাগ করতে হবে। তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’
একই সাথে দাবিগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে প্রশাসনকে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন ছাত্রশিবির নেতারা।
রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাসের চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এই বাস চলাচল বন্ধ আছে। তবে একতা ট্রান্সপোর্ট চলছে।
গত রোববার রাত ৯টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে দেওয় হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তবে কিছু বাস বিকল্প ব্যবস্থায় বাস পরিচালনা করে।
শ্রমিকরা জানান, রাজশাহী-ঢাকা বাসের স্টাফদের বেতন খুব কম। ন্যাশনাল ট্রাভেলস রাজশাহী-ঢাকা যাওয়া-আসায় চালকদের প্রতি ট্রিপে বেতন দেয় ১ হাজার ১০০ টাকা। সুপারভাইজারদের দেয় ৫০০ টাকা ও চালকের সহকারীকে দেওয়া হয় ৪০০ টাকা। এছাড়া দেশ ট্রাভেলসে চালকদের দেওয়া হয় ১ হাজার ২০০ টাকা বেতন। তারা বেতন ২ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের চালক আলী হোসেন বলেন, ১০ বছর থেকে আমাদের ১ হাজার ১০০ টাকা করে বেতন দেওয়া হচ্ছে। বেতন বাড়ানো হচ্ছে না। এর আগেও আমরা ২৩ আগস্ট শুধু ন্যাশনাল ট্রাভেলস বন্ধ রেখেছিলাম। সে সময় কর্তৃপক্ষ দুদিনের মধ্যে আমাদের বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস দিলে আবারও বাস চালু করা হয়। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও আগের বেতন দেওয়া হচ্ছে। তাই অন্য সব বাসের শ্রমিকরা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে একতা ট্রান্সপোর্ট বাদে সব বাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেতন বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে দেশ ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
একতা ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, অন্য পরিবহনের চেয়ে আমাদের বেতন বেশি। চালকদের যাওয়া-আসায় দেওয়া হয় ১ হাজার ৮০০ টাকা, সুপারভাইজারদের দেওয়া হয় ৮০০ টাকা ও চালকের সহকারীদের দেওয়া হয় ৭০০ টাকা। রাতে সব বাস বন্ধ করা হলেও একতাকে শ্রমিকরা চালাতে বলে। এরপর থেকে বাস চলছে।
এদিকে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, শ্রমিকরা তাদের বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছেন। এর আগে আমরা মালিকদের সঙ্গে বসেছিলাম। মালিকরা ১০০ টাকা বাড়াতে চেয়েছে। কিন্তু তারা মানছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা আবারও মালিকদের সঙ্গে বসব। তাদের যেন দাবি মানা হয় সেটাও বলব।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজশাহী পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হেলালের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরু পাগলের দরবারে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিদ্দিকুর রহমান। সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট দরবারে প্রবেশ করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ শুরু করার কিছুক্ষণ পর দরবার শরীফ পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা ঘুরে দেখেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম, গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, এ ঘটনার যদি প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। তবে কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি বা গণগ্রেপ্তারও করা হবে না।
এদিকে গোয়ালন্দের নুরু পাগলার কবর নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গত রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলো- গোয়ালন্দ পৌরসভার আদর্শ গ্রামের ছালামের ছেলে বিল্লু, মাল্লাপর্ট্রি শাকের ফকিরপাড়ার হেলাল উদ্দিনের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, নতুনপাড়া (মাল্লা পর্ট্রি) মো. শওকত সরদারের ছেলে মো. জীবন সরদার, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ডিগ্রিরচর বারখাদা গ্রামের মো. নিজাম উদ্দিন সরদারের ছেলে মোহাম্মদ ফেরদৌস সরদার।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে ৩ হাজার ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
গত শুক্রবার জুম্মাবাদ গোয়ালন্দ উপজেলা আনসার ক্লাব চত্বরে জনতা একত্র হয়। পরে নুরু পাগলের আস্তানায় হামলা করে। এ সময় তারা পুলিশের দুটি গাড়ি, ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে। আগুন ধরিয়ে দেয় মাজারে। এ সময় নুরু পাগলের অনুসারী ও উত্তেজিত জনতার ইট, পাথর নিক্ষেপে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরে উত্তেজিতরা কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে পদ্মার মোড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় নুরু পাগলের মরদেহ।
গত ২৩ আগস্ট নুরু পাগলের মৃত্যু পর তার পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে তার নিজ বাড়ির সামনের অংশে দুতলা সমান (প্রায় ১২ ফুট উঁচু) একটি কাঠামোর ভেতরে কবরস্থ করা হয়। পরে কবরটিকে কাবা শরীফের আদলে রং করা হয় এবং হজরত ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ্; লেখা ব্যানার টাঙানো হয়। এটা স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজীব বলেন, এ পর্যন্ত ১১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পায়ে আলতা, খোপায় বাহারি ফুল, শাড়ি আর ঢোল-মাদলের তালে তালে রিমঝিম নাচ। সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গানে মুখরিত চারপাশ। ঢোল আর মাদলের তালে নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে নওগাঁয় উদযাপন করা হলো- আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব।
সোমবার বিকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা কমিটির আয়োজনে মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব পালিত হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইনিশিয়েটিভ সোশ্যাল চেঞ্জ (আইএসসি) এই আয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা করে।
দুই দিনব্যাপী উৎসবের প্রথম দিন গত রোববার রাতে উপজেলার নাটশাল, বকাপুর, জৈন্তাপুর, ঋষিপাড়াসহ আশপাশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গ্রামের নারী-পুরুষ বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। রোববার দিনভর উপোস ছিলেন তারা। সন্ধ্যার আগে কারাম বা খিল কদমের ডাল কেটে এনে পূজার বেদিতে বসানোর কাজটি করেন যুবকরা। আর সন্ধ্যার পর কারাম গাছের ডাল বেদিতে বসানোর পর শুরু হয় পূজা। এরপর রাতভর মূল আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন নারীরা। তারা দিয়াবাতি, জাওয়া ডালি (অঙ্কুরোদগম শস্যবীজের ডালি), লাল মোরগ, ফলমূলের ডালা বা থালা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে পূজার বেদিতে উৎসর্গ করেন। সেখানে পূজা পর্ব পরিচালনা করেন পুরোহিত।
রাত একটু গভীর হলে- শিশু, কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সি নর-নারী গ্রামের পূজাস্থানে জড়ো হন। সেখানে পুরোহিত নতুন প্রজন্মের কাছে- কিচ্ছা আকারে কার্মা ও ধার্মা- দুই ভাইয়ের কাহিনি তুলে ধরেন। কিচ্ছা বলা শেষ হলে উপোস থাকা নারীরা পরস্পরকে খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়ে উপোস ভাঙেন। পরে বেদিতে পুঁতে রাখা কারাম ডালের চারপাশ ঘুরে ঘুরে ঢাকঢোল ও মাদলের বাজনার তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করেন নারীরা। রাতের পূজা পর্ব শেষে সকালে সবাই মিলে বিভিন্ন আচার শেষে গীত গাইতে গাইতে কারাম ডালকে গ্রামের পুকুরে বিসর্জন দেন।
পূজা পর্ব শেষে বিকালে নাটশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সাংস্কৃতিক মিলনমেলা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ মিলনমেলায় নওগাঁর মহাদেবপুর, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর উপজেলা ছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলা এবং বাইরের জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক দলগুলো অংশ নেয়। ৫০টি সাংস্কৃতিক দল নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য তুলে ধরে ঢাকঢোল, মাদল ও করতালের (ঝুমকি) তালে তালে নাচ ও গান পরিবেশন করে। এতে নিজ নিজ সংস্কৃতির গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক দলগুলো।
এটি মূলত সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের বৃক্ষ পূজার উৎসব। কারাম (খিল কদম) ডালপূজাকে কেন্দ্র করে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বলে একে কারাম উৎসব বলা হয়। ধান রোপণের পর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের অফুরন্ত অবসর। বহুকাল ধরে ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রধান উৎসব কারাম। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমায় (শুক্লা একাদশী তিথি) এ উৎসবের আয়োজন করে তারা। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধ্যুষিত গ্রামে গ্রামে কারাম বৃক্ষের ডালপূজাকে কেন্দ্র করে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। তাদের বিশ্বাস, এটি অভাবমুক্তি ও সৌভাগ্য লাভের উৎসব। ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে মনের কামনা-বাসনা পূরণের লক্ষ্যে প্রার্থনা করে থাকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ। এছাড়া নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এ পূজাকে ঘিরে নওগাঁসহ সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আদিবাসী সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে।
এদিন বেলা ৩টায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলার উদ্বোধন করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডি। পরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইএসসির সভাপতি ডি এম আব্দুল বারী ও নির্বাহী পরিচালক আবুল হাসনাত, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা কমিটির উপদেষ্টা আজাদুল ইসলাম, পত্নীতলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমির পরিচালক যোগেন্দ্রনাথ সরকার প্রমুখ।
মন্তব্য