সিএনজি বা ডিজেলের বিতর্কে না গেলেও রাজধানীতে বাস ভাড়া বাড়িয়ে যে হারে নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে আগেই আদায় করছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এখন আরও বেশি আদায় করার পর সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে কোনো কোনো রুটে দ্বিগুণ, কোনো কোনো গন্তব্যে তিন গুণ আদায় করা হচ্ছে।
ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বাসমালিকরা ধর্মঘটে গিয়ে চাপ দেয়ার পর দূরপাল্লায় ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সা আর নগর পরিবহনে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে বড় বাসে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও মিনিবাসে ২ টাকা ৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
আগেই জানিয়ে দেয়া হয়, এই বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবে কেবল ডিজেলচালিত বাসের ক্ষেত্রে। সিএনজিচালিত বাসে তা কার্যকর হবে না।
কিন্তু দেখা গেছে, এখন সব বাসকে ডিজেলচালিত দাবি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর ভাড়া এতটাই বেশি নেয়া হচ্ছে, তাতে দেখা যায়, কিলেমিটার ২ টাকা পড়ছে না, ৪ টাকা বা তার চেয়ে বেশি পড়ে যাচ্ছে।
বর্ধিত বাসভাড়া নিয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করছেন, তর্ক করছেন, কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। কারণ, পরিবহন শ্রমিকরা মানতে রাজি নয়। আর যেতেই হবে, সব বাসেই একই চিত্র, এ কারণে যাত্রীরাও মেনে নিয়েই ক্ষোভ ঝাড়ছেন মন্তব্যে।
এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দিন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন তারা।
কিন্তু এই ধরনের হুঁশিয়ারি বারবার দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কখনও কিছুই করা যায়নি। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ এ বিষয়ে পরিবহন মালিকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
যাত্রীদের পক্ষে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ভাড়া নির্ধারণ করেছে কিলোমিটার হিসাবে। আর ঢাকা মহানগরে সেটি আদায় করা হচ্ছে ওয়েবিল হিসাবে। যখন ওয়েবিল হিসেবে ভাড়া আদায় করা হয়, তখন কিলোমিটারের হিসাবে যায় না। ফলে আমি যদি ৫ কিলোমিটার পথে যাতায়াত করি, আমাকে কখনও ১০ কিলোমিটার পথের ভাড়া দিতে হয়। আর সেই ভাড়াও নির্ধারণ করা হয় দূরত্বের তুলনায় বেশি।’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে আমি শাহবাগ থেকে সাইনবোর্ড আসার পথে রজনীগন্ধা পরিবহনে উঠলাম। শাহবাগ থেকে সাইনবোর্ডের দূরত্ব হলো ১৫ কিলোমিটার। সরকারের বর্ধিত ভাড়া অনুসারে ৩২ টাকা ভাড়া আসার কথা। যাওয়ার সময় ভাড়া নেয়া হয়েছে ৪৫ টাকা আবার আসার পথে ভাড়া নেয়া হয়েছে ৪০ টাকা। এটাই চিত্র রাজধানীজুড়ে, এটাই চিত্র দেশজুড়ে।’
তিনি বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের সময় আমাদেরকে এই ধরনের কথাগুলো বলারও সুযোগ দেয়া হয়নি। আমাদেরকে বাদ দিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নিলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমিসহ ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছি। যাত্রীদের কাছ থেকে ঘোষিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া না নেয়া হয়, এ বিষয়টি তারা দেখছে।’
প্রতিবার যখন অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়, তখন বিআরটিএ এই পদ্ধতিতেই কাজ করে। কিন্তু কখনও তা বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে পারেনি।
বিআরটিএ এর আগেও ভাড়া ঠিক করেছে, সেটি কখনও কার্যকর করতে পারেনি। নিউজবাংলা ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া হিসাব করে দেখেছে, নতুন যে হারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি টাকা আগে থেকেই নেয়া হয়। এখন সেই বাড়তি টাকার চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে।
এভাবে ১০/১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ঢাকা শহরের পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে না পারার প্রসঙ্গটি তুললে বিআরটিএ চেয়ারম্যান তোলেন জনবল সংকটের বিষয়টি।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেই সারা দেশে একযোগে মনিটরিং করতে পারব না। চট্টগ্রামে ৩ জন ও ঢাকাতে ১০, এই ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে চলছে মনিটরিং।
নির্ধারিত হারের দ্বিগুণ আদায়
রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটারেরও কম। বিআরটিএ বাস ভাড়া ২৬.৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়ার পরেও এই দূরত্বের ভাড়া হয় ১০ টাকা। কিন্তু অনাবিল পরিবহনে আগে থেকেই আদায় হতো ১৫ টাকা। এবার আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা।
৪ দশমিক ৬ কিলোমিটারের জন্য এই ভাড়া নেয়া হলে কিলোমিটার প্রতি পড়ে ৪ টাকা ৩৪ পয়সা।
কেউ যদি মগবাজার নামতে চায়, তাহলেও তার কাছ থেকে ২০ টাকাই আদায় করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া পড়ে ১০ টাকার মতো। কারণ, এই পথটার দূরত্ব তখন হয় ২ কিলোমিটারের কিছুটা বেশি।
গন্তব্য স্বল্প দূরত্বের হলে অবশ্য ২ টাকা ১৫ বা ২ টাকা ৫ পয়সা কিলোমিটারের হিসাবটা আর খাটে না। তখন মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা আর বড় বাসে ১০ টাকার হিসাব পড়ার কথা। কিন্তু যেসব বাস সর্বনিম্ন ভাড়া আগে আদায় করত ১০ টাকা, তারা এখন নিচ্ছে ২০ টাকা।
হাতিরঝিলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারেরও কম। নতুন হারে এই পথে ভাড়া হয় ১০ টাকার কিছু বেশি। কিন্তু আগেই নেয়া হতো ১৫ টাকা, অর্থাৎ কিলোমিটারে তিন টাকা, এখন নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা, অর্থাৎ কিলোমিটারে চার টাকা।
বৈশাখী পরিবহনে আগারগাঁও থেকে মহাখালী পর্যন্ত ৬.৮ কিলোমিটার দূরত্বে আগেই ভাড়া নেয়া হতো ২০ টাকা, অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি ৩ টাকা করে। সোমবার এই পথে ৩০ টাকা ভাড়া চাইতেই যাত্রীরা ক্ষেপে উঠেন। পরে ২৫ টাকা ভাড়া নেন শ্রমিকরা। অর্থাৎ কিলোমিটারে ভাড়া পড়ে ৩ টাকা ৬৭ পয়সা।
একই বাসে আগারগাঁও থেকে বাড্ডা পর্যন্ত দূরত্ব হয় ১০.২ কিলোমিটার। আগে ভাড়া নেয়া হতো ৩০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারে প্রায় চার টাকা।
শ্যামলীর শিশুমেলা থেকে এস এম লাভলী পরিবহনে উঠেছেন পারভেজ আহমেদ। যাবেন কমলাপুর। ভাড়া তুলছিলেন ইসহাক মিয়া। তিনি চাইলেন ৪৫ টাকা।
দুজনের মধ্যে ঝগড়া বাধল। যাত্রী পারভেজ বলছেন, ‘কথা এত টাকা বাড়ছে কীভাবে। ৩০ টাকা ছিল।’
কিন্তু ইসহাক মিয়া বলেন, ‘আগে ৩৫ টাকা আছিল। আপনি, সব্বাইরে জিগান। আমি ক্যা বেশি ভাড়া নিমু?’
উপস্থিত অন্যরাও জানালেন, ১০ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছে। তবুও পারভেজ আহমেদ বলতে থাকলেন, ‘এরা সুযোগ পাইলেই বেশি ভাড়া নেয়। আর আজকে তো আরও বেশি সুযোগ পাইছে।’
পরে অবশ্য ৪৫ টাকাই দিলেন পারভেজ।
এই পথের দূরত্ব ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার। ৪৫ টাকা ভাড়া আদায় হলে প্রতি কিলোমিটারে পড়ে ৪ টাকা ৭৮ পয়সা।
কেউ যদি পল্টন বা গুলিস্তানও নামতে চান, তাহলে দূরত্ব দুই কিলোমিটার কমে গেলেও ভাড়া তাকে একই দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ঠিক হয় কিলোমিটারে ৬ টাকার বেশি।
খিলক্ষেত থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত দূরত্ব হয় ১৪.৫ কিলোমিটার। নতুন হারে ভাড়া হয় ৩০ টাকা। কিন্তু ভিক্টর পরিবহনে এই পরিমাণ টাকা আগেই আদায় করা হতো, এখন আরও বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা।
একই বাসে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ৩.৩ কিলোমিটারের জন্য আগে ভাড়া নেয়া হতো ১০ টাকা। এখন তা নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। অর্থাৎ আগে থেকেই বর্তমান হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হতো। এখন নেয়া হচ্ছে আরও বেশি।
ফার্মগেট থেকে মিরপুর ১০ পর্যন্ত পথের দূরত্ব ৬.৪ কিলোমিটার। আগে থেকেই ভাড়া নেয়া হতো ১৫ টাকা, এখন তা আরও বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে।
ফার্মগেট থেকে শ্যাওড়াপাড়া পর্যন্ত দূরত্ব ৪.৩ কিলোমিটার। আর ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত দূরত্ব ৮.৭ কিলোমিটার। কিন্তু পুরো পথেরই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে একই।
আসলে ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত দূরত্বের ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করে আদায় করা হচ্ছে পথের পুরোটার জন্য।
খিলক্ষেত থেকে বনানীর কাকলী মোড় পর্যন্ত ৫.৫ কিলোমিটার দূরতে আগে কোনো বাস নিত ১০ টাকা, কোনো বাস ১৫ টাকা। যেসব বাস এতদিন ১০ টাকা নিত, তারা এখন আদায় করছে ১৫ টাকা, যেসব বাস নিত ১৫ টাকা, তারা আদায় করছে ২০ টাকা।
সোহেল আহমেদ নামে একজন মনজিল পরিবহনে এই পথ পাড়ি দেন। তিনি বলেন, ‘হেলপার ২০ টাকা চাইছিল। আমি ১৫ টাকা দিয়েছি। কিন্তু সে ২০ টাকাই আদায় করার চেষ্টা করেছে।’
বিস্ময়কর হচ্ছে, একই বাসে সোহেলকে ফেরার পথে ভাড়া দিতে হয়েছে ১০ টাকা বেশি। আগে এই পথে ভাড়া নিত ২০ টাকা, সেটি এবার বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫ টাকা।
এই বাসটি যায় আবদুল্লাহপুরের কামারপাড়া পর্যন্ত। কাকলী থেকে যেখানেই যাত্রী নামুক না কেন, তাকে পুরো পথের ভাড়াই দিতে হয়। এখানে কিলোমিটারের কোনো হিসাব নেই।
মোহাম্মদ মাসুদ বাংলামটর থেকে এস এম লাভলী পরিবহনে উঠেছেন। তার সেলুন মৌচাকে। মগবাজার ফ্লাইওভার পার হওয়ার পর বাস কনট্রাকটার ইসহাক মিয়া ১৫ টাকা ভাড়া চাইতেই তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘এইটুকু রাস্তা ১৫ টাকা! দেশটাই মগের মুল্লুক হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন:২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার দাবিতে দেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায়। পুলিশের বাধার মুখে সেখান থেকে সরে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সেখানে সরে গিয়ে ওই স্থান থেকেই তারা লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি এখন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলবে। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকেই কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতারা এরইমধ্যে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। যারা এখনো প্রেস ক্লাবে আছেন, তাদের অনুরোধ করছি মিছিলসহ শহীদ মিনারে চলে আসতে। আমরা এখান থেকেই আমাদের আন্দোলন পরিচালনা করব এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে লাগাতার আন্দোলনকে সাজাবো ইনশাআল্লাহ।
অধ্যক্ষ আজিজী বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—যতক্ষণ পর্যন্ত জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি না হবে, আমরা শহীদ মিনার ছাড়ব না, ঢাকার রাজপথও ছাড়ব না। আলোচনার মাধ্যমে, সহযোগিতার মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন নিয়েই বিজয়ী বেশে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব।
অন্যদিকে প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে শিক্ষক নেতাদের সরাতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও করেন। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক করেন। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশে আগামী বছর একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সারাহ কুক বলেন, ‘যুক্তরাজ্য কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে বৈঠকে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। যুক্তরাজ্য বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে, বিশেষ করে দেশের দুর্বল গোষ্ঠীগুলির জন্য এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করছে। তাই আমাদের এজেন্ডা ছিল নির্বাচন কমিশনের সাথে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে আলোচনা করা। যেমনটি আমি বলেছি, জাতীয় নাগরিক শিক্ষা এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্যও আমরা কাজ করছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আজ নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা করেছি।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি যে যুক্তরাজ্য আগামী বছর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করছে।’
রাজধানীর উত্তরার কবি জসীমউদ্দীন রোডে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় এক মোটরবাইক চালক নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদ আরমান মির্জা (২১) নামের ওই তরুণ কলেজ শিক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার ভোররাত ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পথচারীরা আহত আরমানকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে মারা যান।
নিহতের খালা নাজনীন আক্তার জানান, ‘খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল জরুরি বিভাগে এসে আমার ভাগিনা আরমানের মরদেহ দেখতে পাই। সে আব্দুল্লাহপুরের নবাব হাবিবুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। গভীর রাতে আরমান মোটরবাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় জসিম উদ্দিন রোডে বেপরোয়া গতির একটি বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়।
তিনি আরও জানান, আরমানের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ থানার পূর্ব হাতিআলা গ্রামে।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টিতব্য লঘূচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি এবং ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে, রাত হতে রাজধানীতে বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বেশ কিছু এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (Emergency Response Team) কাজ করে চলেছে। গ্রীন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড, ধানমণ্ডি এলাকার জলাবদ্ধতা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। তবে, পানি নির্গমনের আউটলেট অংশ এবং খাল-নদীর অংশের পানির লেভেল প্রায় একই হওয়ার ফলে পানি নিষ্কাশনের ধীরগতি বিদ্যমান থাকায় কিছু এলাকার পানি নামতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এ সব এলাকা থেকে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, কমলাপুরে স্থাপিত হাই প্রেসার ভার্টিক্যাল পাম্পের মাধ্যমে দ্রুত পানি নামানোর কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ (01709900888) মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীতে গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টি আজ সোমবার সকালেও থামেনি। বৃষ্টির সঙ্গে ছিলো বজ্রপাতও। মুষলধারে হওয়া এই বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমেছে। ফলে সড়কে আটকে আছে গণপরিবহন। এতে সাতসকালেও ঘর থেকে কাজে বের হওয়া লোকজন পরেছেন ভোগান্তিতে।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি, আসাদগেট, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ১০, মিরপুর শেওড়াপাড়া, নিউমার্কেট, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে দেখা যায়। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুপানি পরিমাণ জমলেও আসাদগেট, মগবাজার, মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় ছিল কোমরসমান পানি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি লঘূচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি ঘণীভূত হতে পারে।
এদিকে রাজধানীতে সকালে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। শ্যামলী থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তায় আসতে গিয়ে আসাদগেট কোমরসমান পানিতে আটকা পড়েন ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, সকালে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হলেও বৃষ্টির কারণে সময়মত অফিসের জন্য বের হতে পারিনি। কোনোভাবে যাও বের হয়েছিলাম, তা পথের বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুসমান থেকে কোমরসমান পানির জন্য আটকে থাকতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তায় পানি জমে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে পরেছে। অফিসগামী লোকজনদের পরতে হয়েছে দুর্ভোগে।
এছাড়া শেওড়াপাড়া থেকে ফাহিম নামের এক তরুণ বলেন, বৃষ্টির কারণে গাড়ি পাচ্ছি না। রাস্তায় এত পরিমাণ পানি জমেছে যে, হেঁটে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। রিকশায়ও ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
প্রসঙ্গত, গতকয়েক দিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম ছিল। এ অবস্থায় গত শনিবার ও রোববার রাজধানীর আকাশ খানিকটা ঘোলাটে ছিল। তবে আজ সোমবার থেকে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল।
রাজধানীর বনানীতে যাত্রা শুরু করলো ভ্রমণ ও পর্যটনভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান ট্রিপোলজি। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুই গার্ডেনে অবস্থিত ট্রিপোলজির অফিসে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রাভেল ব্লগার শিশির দেব। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও যোগ দেন ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী এবং কোরিওগ্রাফার গৌতম সাহা।
উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল রিবন কাটিং, অফিসিয়াল ফটো সেশন এবং দর্শকদের জন্য বিশেষ মিট অ্যান্ড গ্রিট সেশন। অনুষ্ঠান ঘিরে ভ্রমণপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় এবং তারা বাংলাদেশের ভ্রমণ শিল্পে ট্রিপোলজির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ট্রিপোলজির কো-ফাউন্ডার তাজরিন আখতার, আবু বক্কর সিদ্দিক ও তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশে ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া। কোম্পানির সিইও ইমতিয়াজ কাইসুল বলেন, “ট্রিপোলজি শুধুমাত্র একটি ট্রাভেল এজেন্সি নয়; আমরা চাই মানুষ যেন ভ্রমণের প্রতিটি ধাপে নিশ্চিন্ত সেবা পায়। ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং ও হলিডে প্যাকেজ সবকিছুতেই আমরা সর্বোচ্চ পেশাদার মান নিশ্চিত করতে চাই।”
ট্রিপোলজি বর্তমানে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর ভিসা প্রসেসিংয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি সব ধরনের দেশি-বিদেশি হলিডে প্যাকেজ, এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং, থার্ড ওয়ার্ল্ড ভিসা প্রসেসিং ও স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, ট্রিপোলজির উদ্যোগ বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পকে আরও গতিশীল করবে।
ঠিকানা: জুই গার্ডেন, হাউস ২/এ, লেভেল-৭, ব্লক এল, রোড ২/১, বনানী-১২১৩, ঢাকা।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩১৩টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩৫৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১০২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বুধবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
মন্তব্য