সিএনজি বা ডিজেলের বিতর্কে না গেলেও রাজধানীতে বাস ভাড়া বাড়িয়ে যে হারে নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে আগেই আদায় করছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এখন আরও বেশি আদায় করার পর সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে কোনো কোনো রুটে দ্বিগুণ, কোনো কোনো গন্তব্যে তিন গুণ আদায় করা হচ্ছে।
ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বাসমালিকরা ধর্মঘটে গিয়ে চাপ দেয়ার পর দূরপাল্লায় ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সা আর নগর পরিবহনে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে বড় বাসে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও মিনিবাসে ২ টাকা ৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
আগেই জানিয়ে দেয়া হয়, এই বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবে কেবল ডিজেলচালিত বাসের ক্ষেত্রে। সিএনজিচালিত বাসে তা কার্যকর হবে না।
কিন্তু দেখা গেছে, এখন সব বাসকে ডিজেলচালিত দাবি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর ভাড়া এতটাই বেশি নেয়া হচ্ছে, তাতে দেখা যায়, কিলেমিটার ২ টাকা পড়ছে না, ৪ টাকা বা তার চেয়ে বেশি পড়ে যাচ্ছে।
বর্ধিত বাসভাড়া নিয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করছেন, তর্ক করছেন, কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। কারণ, পরিবহন শ্রমিকরা মানতে রাজি নয়। আর যেতেই হবে, সব বাসেই একই চিত্র, এ কারণে যাত্রীরাও মেনে নিয়েই ক্ষোভ ঝাড়ছেন মন্তব্যে।
এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দিন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন তারা।
কিন্তু এই ধরনের হুঁশিয়ারি বারবার দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কখনও কিছুই করা যায়নি। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ এ বিষয়ে পরিবহন মালিকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
যাত্রীদের পক্ষে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ভাড়া নির্ধারণ করেছে কিলোমিটার হিসাবে। আর ঢাকা মহানগরে সেটি আদায় করা হচ্ছে ওয়েবিল হিসাবে। যখন ওয়েবিল হিসেবে ভাড়া আদায় করা হয়, তখন কিলোমিটারের হিসাবে যায় না। ফলে আমি যদি ৫ কিলোমিটার পথে যাতায়াত করি, আমাকে কখনও ১০ কিলোমিটার পথের ভাড়া দিতে হয়। আর সেই ভাড়াও নির্ধারণ করা হয় দূরত্বের তুলনায় বেশি।’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে আমি শাহবাগ থেকে সাইনবোর্ড আসার পথে রজনীগন্ধা পরিবহনে উঠলাম। শাহবাগ থেকে সাইনবোর্ডের দূরত্ব হলো ১৫ কিলোমিটার। সরকারের বর্ধিত ভাড়া অনুসারে ৩২ টাকা ভাড়া আসার কথা। যাওয়ার সময় ভাড়া নেয়া হয়েছে ৪৫ টাকা আবার আসার পথে ভাড়া নেয়া হয়েছে ৪০ টাকা। এটাই চিত্র রাজধানীজুড়ে, এটাই চিত্র দেশজুড়ে।’
তিনি বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের সময় আমাদেরকে এই ধরনের কথাগুলো বলারও সুযোগ দেয়া হয়নি। আমাদেরকে বাদ দিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নিলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমিসহ ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছি। যাত্রীদের কাছ থেকে ঘোষিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া না নেয়া হয়, এ বিষয়টি তারা দেখছে।’
প্রতিবার যখন অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়, তখন বিআরটিএ এই পদ্ধতিতেই কাজ করে। কিন্তু কখনও তা বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে পারেনি।
বিআরটিএ এর আগেও ভাড়া ঠিক করেছে, সেটি কখনও কার্যকর করতে পারেনি। নিউজবাংলা ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া হিসাব করে দেখেছে, নতুন যে হারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি টাকা আগে থেকেই নেয়া হয়। এখন সেই বাড়তি টাকার চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে।
এভাবে ১০/১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ঢাকা শহরের পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে না পারার প্রসঙ্গটি তুললে বিআরটিএ চেয়ারম্যান তোলেন জনবল সংকটের বিষয়টি।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেই সারা দেশে একযোগে মনিটরিং করতে পারব না। চট্টগ্রামে ৩ জন ও ঢাকাতে ১০, এই ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে চলছে মনিটরিং।
নির্ধারিত হারের দ্বিগুণ আদায়
রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটারেরও কম। বিআরটিএ বাস ভাড়া ২৬.৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়ার পরেও এই দূরত্বের ভাড়া হয় ১০ টাকা। কিন্তু অনাবিল পরিবহনে আগে থেকেই আদায় হতো ১৫ টাকা। এবার আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা।
৪ দশমিক ৬ কিলোমিটারের জন্য এই ভাড়া নেয়া হলে কিলোমিটার প্রতি পড়ে ৪ টাকা ৩৪ পয়সা।
কেউ যদি মগবাজার নামতে চায়, তাহলেও তার কাছ থেকে ২০ টাকাই আদায় করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া পড়ে ১০ টাকার মতো। কারণ, এই পথটার দূরত্ব তখন হয় ২ কিলোমিটারের কিছুটা বেশি।
গন্তব্য স্বল্প দূরত্বের হলে অবশ্য ২ টাকা ১৫ বা ২ টাকা ৫ পয়সা কিলোমিটারের হিসাবটা আর খাটে না। তখন মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা আর বড় বাসে ১০ টাকার হিসাব পড়ার কথা। কিন্তু যেসব বাস সর্বনিম্ন ভাড়া আগে আদায় করত ১০ টাকা, তারা এখন নিচ্ছে ২০ টাকা।
হাতিরঝিলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারেরও কম। নতুন হারে এই পথে ভাড়া হয় ১০ টাকার কিছু বেশি। কিন্তু আগেই নেয়া হতো ১৫ টাকা, অর্থাৎ কিলোমিটারে তিন টাকা, এখন নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা, অর্থাৎ কিলোমিটারে চার টাকা।
বৈশাখী পরিবহনে আগারগাঁও থেকে মহাখালী পর্যন্ত ৬.৮ কিলোমিটার দূরত্বে আগেই ভাড়া নেয়া হতো ২০ টাকা, অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি ৩ টাকা করে। সোমবার এই পথে ৩০ টাকা ভাড়া চাইতেই যাত্রীরা ক্ষেপে উঠেন। পরে ২৫ টাকা ভাড়া নেন শ্রমিকরা। অর্থাৎ কিলোমিটারে ভাড়া পড়ে ৩ টাকা ৬৭ পয়সা।
একই বাসে আগারগাঁও থেকে বাড্ডা পর্যন্ত দূরত্ব হয় ১০.২ কিলোমিটার। আগে ভাড়া নেয়া হতো ৩০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারে প্রায় চার টাকা।
শ্যামলীর শিশুমেলা থেকে এস এম লাভলী পরিবহনে উঠেছেন পারভেজ আহমেদ। যাবেন কমলাপুর। ভাড়া তুলছিলেন ইসহাক মিয়া। তিনি চাইলেন ৪৫ টাকা।
দুজনের মধ্যে ঝগড়া বাধল। যাত্রী পারভেজ বলছেন, ‘কথা এত টাকা বাড়ছে কীভাবে। ৩০ টাকা ছিল।’
কিন্তু ইসহাক মিয়া বলেন, ‘আগে ৩৫ টাকা আছিল। আপনি, সব্বাইরে জিগান। আমি ক্যা বেশি ভাড়া নিমু?’
উপস্থিত অন্যরাও জানালেন, ১০ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছে। তবুও পারভেজ আহমেদ বলতে থাকলেন, ‘এরা সুযোগ পাইলেই বেশি ভাড়া নেয়। আর আজকে তো আরও বেশি সুযোগ পাইছে।’
পরে অবশ্য ৪৫ টাকাই দিলেন পারভেজ।
এই পথের দূরত্ব ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার। ৪৫ টাকা ভাড়া আদায় হলে প্রতি কিলোমিটারে পড়ে ৪ টাকা ৭৮ পয়সা।
কেউ যদি পল্টন বা গুলিস্তানও নামতে চান, তাহলে দূরত্ব দুই কিলোমিটার কমে গেলেও ভাড়া তাকে একই দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ঠিক হয় কিলোমিটারে ৬ টাকার বেশি।
খিলক্ষেত থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত দূরত্ব হয় ১৪.৫ কিলোমিটার। নতুন হারে ভাড়া হয় ৩০ টাকা। কিন্তু ভিক্টর পরিবহনে এই পরিমাণ টাকা আগেই আদায় করা হতো, এখন আরও বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা।
একই বাসে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ৩.৩ কিলোমিটারের জন্য আগে ভাড়া নেয়া হতো ১০ টাকা। এখন তা নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। অর্থাৎ আগে থেকেই বর্তমান হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হতো। এখন নেয়া হচ্ছে আরও বেশি।
ফার্মগেট থেকে মিরপুর ১০ পর্যন্ত পথের দূরত্ব ৬.৪ কিলোমিটার। আগে থেকেই ভাড়া নেয়া হতো ১৫ টাকা, এখন তা আরও বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে।
ফার্মগেট থেকে শ্যাওড়াপাড়া পর্যন্ত দূরত্ব ৪.৩ কিলোমিটার। আর ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত দূরত্ব ৮.৭ কিলোমিটার। কিন্তু পুরো পথেরই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে একই।
আসলে ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত দূরত্বের ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করে আদায় করা হচ্ছে পথের পুরোটার জন্য।
খিলক্ষেত থেকে বনানীর কাকলী মোড় পর্যন্ত ৫.৫ কিলোমিটার দূরতে আগে কোনো বাস নিত ১০ টাকা, কোনো বাস ১৫ টাকা। যেসব বাস এতদিন ১০ টাকা নিত, তারা এখন আদায় করছে ১৫ টাকা, যেসব বাস নিত ১৫ টাকা, তারা আদায় করছে ২০ টাকা।
সোহেল আহমেদ নামে একজন মনজিল পরিবহনে এই পথ পাড়ি দেন। তিনি বলেন, ‘হেলপার ২০ টাকা চাইছিল। আমি ১৫ টাকা দিয়েছি। কিন্তু সে ২০ টাকাই আদায় করার চেষ্টা করেছে।’
বিস্ময়কর হচ্ছে, একই বাসে সোহেলকে ফেরার পথে ভাড়া দিতে হয়েছে ১০ টাকা বেশি। আগে এই পথে ভাড়া নিত ২০ টাকা, সেটি এবার বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫ টাকা।
এই বাসটি যায় আবদুল্লাহপুরের কামারপাড়া পর্যন্ত। কাকলী থেকে যেখানেই যাত্রী নামুক না কেন, তাকে পুরো পথের ভাড়াই দিতে হয়। এখানে কিলোমিটারের কোনো হিসাব নেই।
মোহাম্মদ মাসুদ বাংলামটর থেকে এস এম লাভলী পরিবহনে উঠেছেন। তার সেলুন মৌচাকে। মগবাজার ফ্লাইওভার পার হওয়ার পর বাস কনট্রাকটার ইসহাক মিয়া ১৫ টাকা ভাড়া চাইতেই তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘এইটুকু রাস্তা ১৫ টাকা! দেশটাই মগের মুল্লুক হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহায় টানা ছুটির মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার বাতাস মোটামুটি স্বাস্থ্যকর ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ আর ক্রমেই রাজধানীর পুরনো ভিড় বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে সমান তালে।
রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ফের শীর্ষস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। এ সময়ে ১৪২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর ছিল বাংলাদেশের রাজধানী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
এ সময় ১৫৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহর ছিল ইন্দোনেশিয়ার মেদান। এ ছাড়া ১২৬ ও ১২৪ স্কোর নিয়ে ঢাকার পরেই ছিল যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও মিসরের কায়রো।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ এক পরিবেশকের এক কোটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানায়, ‘আব্দুল খালেক নয়ন নগদের একজন পরিবেশক। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি তার চারজন এমপ্লয়িকে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে বাসার পাশেই পরিবেশক অফিসে পাঠাচ্ছিলেন। সাথে এক কোটি টাকার বেশি ছিল।’
‘তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল দুটি বারো নম্বর রোড ক্রস করে যখন তেরো নম্বর রোডে ঢুকছিল, তখন ওৎপেতে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিন থেকে চারজন নেমে এসে টাকার ব্যাগ বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাওয়া করে।’
পুলিশ আরও জানায়, এদের মধ্যে একজন আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তারা উত্তরা সতেরো নম্বর সেক্টরে নগদ মাইক্রোবাস থেকে তাদের ফেলে দিয়ে টাকার ব্যাগ সহ পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মইদুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফোটেজ সংগ্রহ করেছেন। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য