জেল আপিল নিষ্পত্তি হয়ে ফাঁসি কার্যকর হলেও অনিষ্পন্ন থেকে গেছে আসামিপক্ষের দায়ের করা নিয়মিত আপিল। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলে তালিকায় থাকা আসামির আপিল শুনানির জন্য তালিকায় আসে।
সোমবার আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি হয়। প্রশ্ন ওঠে, একটি আপিল নিষ্পত্তি হলেও আরেকটি আপিল কীভাবে থেকে গেল। এর দায় কার, তা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ শুনানি হয়। আদালত বলছে, প্রথমত, এ ভুল আইনজীবীদের। আর আইনজীবীরা বলছেন, আসামিপক্ষের কেউ যোগাযোগ রাখেনি। দ্বিতীয়ত, সিস্টেম ডিজিটাল না হওয়ায় এটি হয়ে থাকতে পারে। পর আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করে দেয়।
সোমবার (৮ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ দিন ঠিক করে দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। অন্য দিকে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
আপিল বিভাগের তালিকায় থাকা ২৬ নম্বর আইটেমটি কল করলে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড, এই মামলাটা তালিকায় আসার পর পত্রপত্রিকায় দেখলাম, এখানে নাকি আপিল পেন্ডিং থাকা অবস্থায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এটা শোনার পর আমরা খোঁজ নিয়ে দেখলাম, এরা একটা জেল আপিল ফাইল করেন। আমরা সে রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেখলাম।’
তিনি বলেন, ‘জেল আপিলে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড ছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা।’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এখানে আপিলকারী প্রথম জনের নাম কী?
অ্যাটর্নি বলেন, ঝড়ু।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এ মামলার জেল আপিল নম্বর ০৩/২০১৬। শুধু তাই নয়, এ মামলার পেপারবুক তৈরি হয়েছে কোর্টের মাধ্যমে।
২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর শুনানি হয়েছে। পরে ওই দিনই রায় দেওয়া হয়। ১৪ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি আসামির দায়ের করা আপিলের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সুফিয়া খাতুনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি কি এটা জানেন না? যখন জেল আপিল করা হয়, তখন একটা আবেদন দিয়ে দুটি একসঙ্গে কনভার্ট করে নিতে হয় যে, আমরা রেগুলার (নিয়মিত) আপিল করছি, আমাদের এটা কনভার্ট করে নেন।’
তখন আইনজীবী সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘এ মামলায় ক্লায়েন্ট আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। কোনো ফাইল দেয়নি। মামলা যিনি দিয়েছেন, তাকে যথাসময়ে জানিয়েছি। কিন্তু তারপর আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তখন আইনজীবী এমডি রুহুল আমিন তুহিন এ মামলার আইনজীবী বলে জানিয়েছিলেন।
‘তিনি ছাড়া আর কোনো ক্লায়েন্ট বা আর কারও সাথে যোগাযোগ হয়নি। আসামির পরিবারের কারও সাথে যোগাযোগ হয়নি। তাছাড়া দুটি আপিল হলে সেকশনই তো যোগ করে দেয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সেকশন তো যোগ করে না। আমাদের এখানে তো ডিজিটাল সিস্টেম না। বরং আপিলকারী আইনজীবী এসে বলেন যে, এটা ওইটার সঙ্গে ট্যাগ করেন। মামলায় ক্লায়েন্টদের যখন যোগাযোগ থাকে, তখনই আমরা অ্যালার্ট হই।’
জেল আপিলে নাহিদ সুলতানা কীভাবে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডে হলেন, প্রশ্ন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা হয়তো কোর্ট থেকে নিয়োগ দিয়েছে।
সুফিয়া খাতুন বলেন, এটা তাহলে নাহিদ সুলতানারও দায়িত্ব ছিল আপিলের বিষয়টি বলে দেওয়া।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল জেল আপিলে আইনজীবী নাহিদ সুলতানা কী বক্তব্য আদালতে দিয়েছিলেন, সেটা পড়ে শোনান।
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান আদালতে যুক্ত হয়ে কথা বলার সুযোগ চান।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ মামলায় আপিল বিভাগে রায় হয়েছে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর। ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রত্যাখ্যান করলেন। আর কারা কর্তৃপক্ষ তার পরিবারকে দেখা করার জন্য চিঠি দিল ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর। চিঠির পর তাদের পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎও করেছেন। রায় কার্যকর হলো ১৭ নভেম্বর। রায়ের এক বছর পর কারা কর্তৃপক্ষ তাদের চিঠি দেয়। এই এক বছর পর্যন্ত আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কিছুই করলেন না।
‘এতটা সময় পেল তারপরও তার কোনো আইনজীবী কিছুই জানাননি।’
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ আগে আইনজীবী হুমায়ন কবির আমাকে এ মামলায় যুক্ত করেন। তিনি এ মামলাটি করে দিতে বলেন।
‘পরে আমি বললাম, তুমি মামলায় আসামিদের পরিবারের খোঁজ নাও। আমি একটু পড়ে দেখি। এরপর মামলাটি নিয়ে আমি প্রস্তুত হলাম। ওই দিন রাতে আইনজীবী হুমায়ন কবির আমাকে জানান, এ মামলায় আসামিদের সাজা কার্যকর হয়ে গেছে। আইনজীবী হুমায়ন কবির ওই এলাকার বাসিন্দা। তিনি আপিলে এনরোল না থাকায় ২০১৩ সালে আইনজীবী নওয়াব আলীকে সাহেবকে দিয়ে ফাইল করেছিলেন। তিনি তো নাই (মারা গেছেন)।
‘ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি শুনে আমি বললাম, অসম্ভব এটা তো হতে পারে না। আপিল পেন্ডিং থাকা অবস্থায় এটা কীভাবে কার্যকর হয়। তখন আমি হুমায়ন কবিরকে বললাম, তুমি আরও খোঁজ নাও। তারপর বারবার খোঁজ নেওয়ার পরে তিনি নিশ্চিত হলেন, আসামিদের ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে। তখন আমি তাকে বললাম, ঠিক আছে আমি কোর্টকে জানাই। এটা তো হতে পারে না। শত বছরেও এমনটি হয় না। পরবর্তী সময়ে পত্রপত্রিকা ও অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে জানলাম, এটাতে জেল আপিল হয়েছে।
‘আসামির পরিবারের সদস্যরা অশিক্ষিত, অজপাড়াগাঁয়ের। তারা জেল আপিল কী, তাও মনে হয় বোঝে না। তারা নাকি জেলখানায় গিয়েছিল, দেখা করে কান্না করতে করতে বাড়ি চলে গেছে।’
এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘মিস্টার আসিফ বলেন তো দেখি এখানে প্রসিডিওর মেইনটেইন হয়েছে কি না?’
জবাবে আইনজীবী আসিফ বলেন, ‘মাই লর্ড, একটু ইয়ে আছে। যেহেতু আমাদের কোর্টের একটা রুলস আছে।’
বিচারপতি বলেন, ‘আপিল শুনানি শেষে রায়, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সব কিছু হয়েছে কি না ‘
আইনজীবী বলেন, ‘এগুলো হয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী বর্তমান আপিলের নোটিশ অবশ্যই জেলখানায় গিয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ফাঁসি কার্যকর পর্যন্ত চার বছরে এটা পৌঁছাবে না, এটা অসম্ভব ব্যাপার। এটা তো অবশ্যই গেছে। তাদের উচিত ছিল, যেখানে একজন মানুষের জীবন যাচ্ছে, তাদের সতর্ক হওয়া।’
তখন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘তাদের যেমন উচিত ছিল, অ্যাডভোকেটের কি উচিত ছিল না? যখন জেল আপিল নিষ্পত্তি হয়ে গেল, এটা তো আমরা জানতে পারিনি, কেউ জানায়নি।’
এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, ‘আপিলটা ফাইল করেই তো আপনারা একটা দরখাস্ত করবেন স্টে নেওয়ার জন্য।’
আইনজীবী বলেন, ‘মাই লর্ড, আমরা ফাইল করলেই ধরে নেই যে ইনফর্ম হয়ে গেছে।’
বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে স্টে করার বিষয়টি কেন আসে?’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আইনজীবীর বক্তব্য হলো, তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগই করেনি।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘গতকাল একটা মামলায় রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে তার ক্ষমার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তারপরও আইনজীবী যখন বিষয়টি জানালেন আমরা কিন্তু তখন ফাঁসি কার্যকরে স্থগিতের আদেশ দিয়েছি, রিভিউ দেখব বলে।’
তিনি বলেন, ‘একটা মানুষের ফাঁসি হয়ে যাবে, আমরাই হয়তো আদেশ দিয়েছি। কিন্তু শেষ চেষ্টা তাকে করতে দেওয়া উচিত।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপিল বিভাগে এনরোল না হয়েও যখন অন্য একজনকে দিয়ে মামলা ফাইল করেছেন, তখন তিনি যদি আপিলের পদ্ধতি না জানেন, তখন মহা মুশকিলের কথা।’
আইনজীবী আসিফ বলেন, ‘আমরা যখন আপিল ফাইল করি, তখন অটোমেটিক্যালি ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এটা অর্ডার ২৪ রুলস ৫-এ আছে।’
আইনজীবী আসিফ আরও বলেন, ‘মানুষের ভুল হতেই পারে। পৃথিবীতে এমন কেউ নাই, যার ভুল হয় না। এটা হতেই পারে। কিন্তু আমাদের চাওয়া হচ্ছে, জেল কর্তৃপক্ষ আরও সতর্ক হবে। তাদের আরও একটু যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জেল আপিল তো মেরিটে শুনানি হয়েছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘ঠিক আছে, তবে দুটি ট্যাগ হওয়া উচিত ছিল।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা যখন আইনজীবী ছিলাম, জেল আপিল যখন থাকে, তখন আমরা সেটি কনভার্ট করেছি। এই প্র্যাকটিস তো এখন টোটাল বন্ধ হয়ে গেছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘এটা মাই লর্ড এখনও করছি। যখন জানতে পারি, জেল আপিল আছে, তখন সেটি ট্যাগ করে দেয়। সময়মতো আমাদের আপিলটা ফাইল হয়েছে, তারপরও কেন এমনটি হলো, তারপরও কষ্ট হচ্ছে মানুষের জন্য কিছু করতে পারলাম না। আমরা দুজন মানুষের জন্য চেষ্টা করতাম। জেল আপিলের আমরা কিছুই পাইনি।’
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, ‘এটা রিপোর্টেড রায়। রায়টি ৫৯ ডিএলআরে আছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘মাই লর্ড এ বিষয়ে একটা গাইডলাইন দিয়ে দেন। সাথে সাথে এই গরিবদের জন্য যদি কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘এই ক্ষতিপূরণ কিসের জন্য?’
বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, ‘যে আইনজীবী ভুল করেছেন, তাকে বলেন। তিনি কিছু দিয়ে দিক। এটা তো কথা না।’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আইনজীবী আসিফ হাসানের কাছে জানতে চান, ‘জেল কর্তৃপক্ষের দোষটা কোথায়? আপিল বিভাগ থেকে অন মেরিটে জাজমেন্ট হয়েছে, সেটা কমিউনিকেশন হয়েছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা খারিজ হয়েছে, পরে রায় কার্যকর করা হয়েছে।’
আইনজীবী আসিফ হাসান তখন বলেন, ‘আইনগত কোনো ভুল নাই।’
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তখন বলেন, ‘তাহলে জেল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন কেন?’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘যেহেতু মামলা লিস্টে (কার্যতালিকায়) এসেছে, শুনানি হয়েছে, উচিত ছিল অ্যাপিয়ার করা। জেল আপিলের সাথে এটা ট্যাগ করে দিতে পারতেন। আপনারা দোষটা স্বীকার করেন না কেন?’
আসিফ হাসান বলেন, ‘এমন একটা মক্কেল, এমনই মূর্খ এবং গরিব মানুষ এরা, আইনজীবীকে জানায়ওনি কখনও যে, জেল আপিল হয়েছে বা করেছে তারা। আদৌ তারা জেল আপিল বোঝে কিনা সন্দেহ আছে।’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘এটা তো কোনো ব্যাখ্যা না। জেল আপিল হয়েছে, শুনানি হয়েছে, রিপোর্টেড হয়েছে…’
আসিফ হাসান বলেন, ‘আইনগতভাবে সবই ঠিক আছে।’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘রায় হওয়ার সাথে সাথে এই আপিলটা (ফৌজদারী আপিল) ইনফেকচ্যুয়াস (অকার্যকর) হয়ে গেছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আপিল বিভাগে এরা তিনজনই আছে।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আইনজীবী আসিফ হাসানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যে কথাটা বলেছেন, উনি সিনিয়র মানুষ। আমরা সবাই আইনজীবী থেকে এখানে এসেছি। প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সবাই আইনজীবী ছিলেন। যার অবহেলা (ফাঁসি কার্যকর হওয়া ব্যক্তির ফৌজদারি আপিল কার্যতালিকায় আসার ক্ষেত্রে), সে আইনজীবী, যার জীবন গেল সে অভিযুক্ত এবং দণ্ডিত। নিচের আদালতে দণ্ডিত, আপিল বিভাগেও দণ্ডিত সব ধরনের প্রক্রিয়ায়। জেলখানায় তাদের স্বজনরা দেখা করল, সবকিছুই হলো। পত্রিকায় যেভাবে নিউজটা আসল, আপনাদের এগিয়ে আসা উচিত ছিল। এগিয়ে এসে বলা উচিত ছিল ঘটনাটা এ রকম।’
আইনজীবী আসিফ হাসান এ সময় বলেন, ‘সেইটা বলার জন্যই আমি অপেক্ষা করছি।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আপনারা কিছুই করেননি। আমরাও অ্যাডভোকেট ছিলাম। আজকে আপনি বলছেন জেলখানা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা, তাদের সতর্ক করা। তারা যথেষ্ট সতর্ক থাকে, তারা কিন্তু বিষয়গুলোকে ফলো করে এবং তাদের রেকর্ড ঠিক থাকে। দেখেছি, রেকর্ডে খুব একটা ভুল হয় না। আমাদের ভুলের কারণে, আমাদের বলতে অ্যাডভোকেটদের, ভুলের কারণে অনেক সময় এ রকমটা হয়। আমরা (বিচারপতিরা) কোর্টে বসে থাকি, অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডরা আসেন না। বারবার বলা হচ্ছে, অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডরা আসেন না। কী ধরনের দায়িত্ব বলেন?’
আইনজীবী আসিফ হাসান বিচারপতির কথায় সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘এ রকম হচ্ছে।’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আইনজীবী আসিফ হাসানের কাছে জানতে চান, ‘জেল কর্তৃপক্ষের দোষটা কোথায়?’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বিচারপতিদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা অন্তত রায়টা (আপিল বিভাগের) তো দেখেছেন, অ্যাডজাস্টিং জাজমেন্ট (সমন্বিত রায়)। জবানবন্দি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আচ্ছা, আগামীকাল (মঙ্গলবার) এটা থাকুক। আগামীকাল এক নম্বর থাকবে এটা।’
এ সময় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাকে বাদ দিয়ে দেন, যেহেতু আমি এ মামলার ফিলইন লইয়ার ছিলাম।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বলা হয়েছে যে, আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সাথে সাথে অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব খবর নিলেন, আমার এখানে আসলেন রাতে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি সাথে সাথে জেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলায়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। উনারা আমাকে একদম চার্জশিট পাঠাইছে, নাম্বার পাঠাইছে, আপনাদের আদেশ দেখছি, দেখলাম যে, না এটা ঠিক না, যেভাবে (সংবাদপত্রে) আসছে, এটা ঠিক না। সাংবাদিকদের প্রপার ইনফরমেশন দেওয়া হয় নাই।’
এ সময় বিচারপতি নূরুজ্জামান বলেন, ‘এক মানুষ এটা (আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আসামির ফাঁসি কার্যকরের খবর) পত্রিকায় দেখে আমাদেরকে, কোর্টকে কত সমালোচনা করেছে। তারা কি ভেতরের এসব ঘটনা জানে? টক শোতে কত কথা বলা হচ্ছে।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘কেন করবে না, টক শো হয়েছে।’
আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘এসব (জেল আপিল নিষ্পত্তির পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন নাকচের পর ফাঁসি কার্যকর করার কথা) কারুরই জানা ছিল না।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব, আপনার কলিগরা, অ্যাডভোকেট সাহেবরা, তারা কমেন্ট করতেছেন। তারা কোনো কিছু না দেখে কমেন্ট করতেছেন, এটা কি ঠিক হলো?’
বিচারপতি নুরুজ্জামান বলেন, ‘অ্যাডভোকেট শিশির মনির কি আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত? সে যেভাবে মন্তব্য করেছে যে, সবাই দোষী। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, কোর্ট, বিচারক, এক্সিকিউট যারা করেছে, তারা সবাই দোষী। উনি কিছু না দেখে কেন এ রকম মন্তব্য করলেন? আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে, আমরা কেউ প্রিজাইডিং অফিসার, কেউ কোর্ট অফিসার। এ রকমভাবে কোর্টকে অ্যাটাক করা, এটা তো খুব খারাপ স্ট্যান্ড। প্রয়োজনে তো সবাই কোর্টে আসে, সবাই রিলিফ নেয়, সবাই রিলিফ পায়। কোর্টের কোনো সামান্যতম ত্রুটি হইলেই এ রকম করে অ্যাটাক করা, এটা তো খুবই দুঃখজনক। আমরা তো কোনো অ্যাডভোকেট সাহেবকে এ রকমভাবে অ্যাটাক করি না, পানিশমেন্ট দেই না। আমরা তো চেষ্টা করি, কোনো একটা ভুল হলে ভুলটা শুধরে কীভাবে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।’
এরপর প্রধান বিচারপতি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আপিল বিভাগের দিনের কার্যক্রম শেষ করেন।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিল্লাল শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত চৌকির অধীনে সিপাহী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিরতলা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করে। সে সময় বিজিবির সদস্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরের দিন শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর সাগর থেকে বিজিবি সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে সমুদ্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বহনকারী নৌকায় উদ্ধার অভিযানে যায় বিজিবি সদস্য। ওই সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে নিখোঁজ হন তিনি। অবশেষে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঘটনার দিন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।’
এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের ভাই আবু বকর বলেন, ‘ভাইকে খোঁজার জন্য টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এর মধ্য খবর আসে সাগরে চরের মধ্য ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
‘গত শুক্রবার সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা উদ্ধার অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছিল ভাই। ওই সময় আমাদের জানানো হয়েছিল তিনিসহ ৩৩ জন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভাসমান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাগরে ভাসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন সমুদ্রে। পরে ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবি সদস্য।
ওই সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা।
মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে মিয়ানমারের থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত শাহেদ আহমদের মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মরদেহ হস্তান্তর করে তারা।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকা গুলিবিদ্ধ শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জকিগঞ্জ বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার গোলাম কবির, কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম এবং ভারতের পক্ষে বিএসএফ ও সেখানকার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম জানান, পতাকা বৈঠক শেষে শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ থানায় নিয়ে আসার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে নিহত হন শাহেদ আহমদ। তিনি লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর পুত্র।
তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও থানা পুলিশকে অবহিত করে পরিবার। পরে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ আনার উদ্যোগ নেয় বিজিবি।
আরও পড়ুন:টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে ছিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। তবে সোমবার রাতে নতুন মোটর লাগানোর পর পানির সংকট কেটেছে।
গত তিন দিন পানি না থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করেন।
প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন। হাসপাতালে পানির সংকটের কারণে অন্তত ৩০ জন রোগী অন্যত্র চলে গেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।
পানির মোটর বিকল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে।
টানা দুই দিন বিকল হয়ে যাওয়া মোটরটি সচল করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটেনি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘বিগত তিন দিনে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এটা সত্য। তবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছি।
‘গতকাল রাতে একটি নতুন মোটর লাগানোর পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ওদুদ বেপারি নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতেন নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্যবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিন থেকে চারটি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এ বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। ওই সময় নৌযান দুটিতে ১০ থেকে ১১ জন আরোহী ছিল। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিক ভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ হন।
তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী সময়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার ধারণা, যারা মারা গেছে, তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল।
‘এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন। আহত হন পাঁচ থেকে ছয়জন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামপুর জোড়াপোল এলাকায় ৬ জানুয়ারি সুদেব হালদার (২৮) নামের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সুদের হত্যার দিনই ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা সুব্রত হালদার। কিন্তু ঘটনার তৃতীয় দিনেও হত্যায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
সকালে ঝালকাঠির বাউকাঠি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।
সকাল ১০টার দিকে সুদেব হালদারের বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরদার মো. শহিদুল্লাহ, বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী রাহুল রাড়ী, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন মোল্লা, আলী হায়দার রাড়ী, মো. আবু বক্কর, সৈয়দ রুহুল আমিন, মো. বেল্লাল খান, মো. আনিস সিকদার এবং নিহতের সহোদর সাগর হালদার সুকেশসহ অনেকে।
বক্তাদের একজন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সুদেব হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে সুদেব হালদার দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সচিবালয়ে আগুন ধরেছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে, এটা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই আগুন লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গত ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে যায়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া নমুনাতেও কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াডের সার্চেও মেলেনি বিস্ফোরকের আলামত।
আরও পড়ুন:পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও ওই সড়কটিতে বাস চলাচল করেনি।
বাস বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারগামী যাত্রীরা।
জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রের নিহতের ঘটনার জেরে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতির ডাক দেয়। এর আগে সোমবার বিকেলে মঙ্গলবার থেকে সিলেটজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিলে রাতে ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। কেবল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
কদমতলী বাস টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে জকিগঞ্জ থেকেও সিলেটের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী সেখানে বসে আছেন বাসের অপেক্ষায়। বাস ছেড়ে যাবে না জানার পরও তারা অপেক্ষা করছেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের।
জকিগঞ্জ যাওয়ার জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন কালিগঞ্জের যাত্রী বদরুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে তিনি সকালে কদমতলী টার্মিনালে এসেছেন, কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
গত রোববার সকালে জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ আব্দুল মতিন কমিউনিটি সেন্টারের নিকটে সড়কের পাশে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলে গেলে সেটি আনতে আবির আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর দৌড় দেয়। সে সময় দ্রুতগামী একটি গেটলক বাসের ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয় ওই সময়। এর প্রতিবাদে সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।
জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের বাসের চালক অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে বাস ভাঙচুর করা ও পোড়ানো সন্ত্রাসী কাজ।
‘আমরা এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বাস ভাঙচুরের দাবি করে রোববার রাতে হেলাল মিয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য