দেশে তরুণরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ জন্য অভিভাবক, পরিবার, সমাজ সবাইকে সচেতন হতে হবে।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রত্যয়ও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে রোববার সন্ধ্যায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সংগঠন ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘সভ্যতার শুরুতে মানুষ সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতো। ওষুধ, টিকায় সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া শুরু হয়। হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস বাড়তে শুরু করে। এখন মনোরোগ জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি আত্মহত্যা করে। সারা বিশ্বে বয়স্করা আত্মহত্যায় এগিয়ে থাকলেও আমাদের দেশে তরুণরাই বেশি আত্মহত্যা করে। অন্যান্য দেশে আত্মহত্যায় ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও আমাদের দেশে মেয়েরা বেশি এগিয়ে। এর যেসব কারণ আমরা দেখে থাকি, তার মধ্যে মূল কারণ হিসেবে মাদকের ব্যবহারকেই দেখি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে আত্মহত্যার হার এত না হলেও প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অন্যান্য দেশে আরও বেশি। বিশ্বে ১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করে। জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশে এর হার ৫ শতাংশ।’
কারণ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, ‘একটা ছেলে বা মেয়ে স্কুলে চান্স পেল না, ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারল না, সে হতাশায় আত্মহত্যা করে বসল। এমনটাই আমরা দেখতে পাই। এ ছাড়া আরেকটা বড় কারণ দেখি ড্রাগসের ব্যবহারকে। তরুণ-তরুণীরা হতাশা থেকে মাদক সেবন করে।’
দায় স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলোজিস্ট নেই। আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠানও কম। জনসংখ্যা বিচারে প্রয়োজনের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম।’
বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য খুব জরুরি বিষয়। কিন্তু আমরা ইগনোর করে আসছি। এটাতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।’
মানুষ অনেক চাপে থাকে বলে টিভিতে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের আহ্বান জানান তিনি।
সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকলে স্যাডনেস, ড্রিপ্রেশন সব কেটে যাবে। কিন্তু বেঁচে না থাকলেই কিছুই নেই। তাই সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে টিকা নিয়ে নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
বিশেষ বক্তা হিসেবে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান মানসিক স্বাস্থ্যসেবার নানা দিক তুলে ধরেন তার বক্তব্যে।
চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান বলেন, ‘আমি তরুণদের দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলতে চাই। আপনাদের বলতে চাই যে, আপনার সন্তান কিংবা আপনার ছোট ভাই-বোনেরা সম্ভবত যে চিন্তা ভাবনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বা ভবিষ্যতে যেতে চায়, তা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। কারণ সংকটের কথা তারা খোলাখুলি বলতে পারে না। মনের কথা বলতে তখন তারা বেছে নেয়, সমবয়সী কাউকে।’
শিশু-কিশোররা যাতে পরিবারের বড়দের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে সেই পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান রাহিব।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ২০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে আত্মহত্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা বর্তমানে একটি মারাত্মক পথের দিকে যাচ্ছি। মাত্র এক দশকে তরুণদের আত্মহত্যার হার ৬০ শতাংশ বেড়েছে।’
করোনাকালে বাংলাদেশে আত্মহত্যা বেড়েছে জানিয়ে রাহিব বলেন, ‘আপনি ভাবতে পারেন- আপনার সন্তানকে আপনি চেনেন, জানেন। তারা এ ধরনের কাজ কখনও করবে না। কিন্তু আমি বলতে চাই, কেউই এর বাইরে নয়। বিষণ্নতা বা উদ্বেগ বা আত্মহত্যার চিন্তার বিরুদ্ধে কোনও ভ্যাকসিন নেই। বাবা-মায়েরা যদি সন্তানের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে।’
স্বাগত বক্তব্যে ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আনুশা চৌধুরী বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় গত তিন বছর ধরে নিরলস কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান।
সমাজে আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে, মানুষের কথা শুনতে ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’ কাজ করে যাবে বলেও জানান সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মেহতাব খানম বলেন, ‘এত বড় জনসংখ্যার দেশে সাইকিয়াট্রিস্টের সংখ্যা মাত্র ৩০০ কেন, আমি জানি না। কিন্তু এই সংখ্যাটি খুবই অপ্রতুল। সাইকোলোজিস্ট বা সাইকোথেরাপিস্টের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৫০০ হবে।’
মনোরোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিশেষায়িত নার্সের সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন মেহতাব খানম। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হলে সামগ্রিক ও ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও জানান তিনি।
অভিনেত্রী শম্পা রেজা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য মানবদেহের এমন একটি বিষয়, যা অদৃশ্য আর অস্পৃশ্য।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রাণিজগতের দিকে তাকাই, তখন ভাবি, তাদের মনের অসুখ নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয় না। কারণ তারা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে মনের চিকিৎসা নিজেই করতে পারে। মানুষ পারে না। প্রকৃতি থেকে এই শিক্ষা মানুষের নেয়া উচিত।’
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থের নেতা না হয়ে মনের নেতা হোন। হাজারও মানুষ মনের যন্ত্রণায় ভুগছে। তাদের নেতৃত্ব দেয়া প্রয়োজন। তাই বলছি মনের নেতা হোন।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য