নরসিংদীর চরাঞ্চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। আর আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন যেন হামলা, সংঘর্ষ, রক্তপাতের বিভীষিকায় নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে লাশের মিছিল আরো দীর্ঘ হওয়ার।
জেলার আলোকবালী ও রায়পুরার পর দুর্গম চরাঞ্চল চরদিঘলদীতে ইউপি নির্বাচন ঘিরে পুনরায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিপক্ষের হামলার শঙ্কায় গ্রামছাড়া হয়ে আছে ১ হাজার ২০০ পরিবার। তাতে করে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ছয় হাজার ভোটারের ভোটদানের সুযোগ।
এই জনপদে ইউপি নির্বাচনের সহিসংতায় দীর্ঘ হতে পারে লাশের মিছিল। ইতোমধ্যে পৃথক কয়েকটি সংঘর্ষে আটজন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। তারপরও থেমে নেই নৈরাজ্য। আধিপত্য টিকিয়ে রাখাসহ নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে রক্তপাতের নেশায় মেতে উঠেছে গ্রাম্যপতিরা (মাতব্বর)।
চরদিঘলদী ইউপিতে আগামী ১১ নভেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে ভোটবঞ্চিত করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির অনুসারী প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারকে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ উঠেছে, এই ইউপিতে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন শাহীনের সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালান। পরে বর্তমান চেয়ারম্যানসহ প্রতিদ্বন্দ্বী তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ১৫ জন মেম্বার প্রার্থী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের ১ হাজার ২০০ পরিবারের প্রায় ছয় হাজার ভোটারকে এলাকাছাড়া করা হয়।
অবশ্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
রোববার বেলা ১১টায় মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে সদর আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক, নরসিংদীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও র্যাব-১১ দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, চরদিঘলদী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনজন। শেষ পর্যন্ত দেলোয়ার হোসেন শাহীন দলীয় মনোনয়ন পান। তাতে নাখোশ হন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হন তিনজন। এ অবস্থায় নিজের শক্তি বাড়াতে নৌকার প্রার্থী হাত মেলান চরদিঘলদী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ও বিগত নির্বাচনে ধানের শীষের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুস এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর ও প্রায় এক শ গরু লুট করে। পরে নৌকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন শাহীন বর্তমান চেয়ারম্যান মনসুর ও স্বতন্ত্র তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ছয়টি ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ১ হাজার ২০০ আওয়ামী পরিবারকে এলাকাছাড়া করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ইসি কবিতা খানমের নির্দেশ
রোববার নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নরসিংদী সদর ও রায়পুরা উপজেলার মোট ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা উপস্থিত থেকে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আমাদের প্রচারে বাধা দিচ্ছেন। প্রতিবাদ করলেই আমাদের বাড়িঘরে হামলা ও কর্মী-সমর্থকদের মারধর করছেন। এমনকি আমাদের গ্রামের প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হয়েছে। আমরা গ্রামে ফিরে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই।’
আরেক প্রার্থী সাইদ মিয়া বলেন, ‘আমি ভোটের প্রচার চালানোর সময় নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীনের লোকজন হামলা চালান। ওই সময় তারা আমার চাচাতো ভাইয়ের ওপর হামলা চালিয়ে তার চোখে উপড়ে ফেলেন। শরীরের কয়েক জায়গায় টেঁটাবিদ্ধ করেন। তিনি এখন মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমি এর বিচার চাই।’
অপর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আমির হোসেন বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী দোলোয়ার হোসেন শাহীন আমাদের গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছেন না। তারা চরদিঘলদীর তিন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ১০ মেম্বার প্রার্থীসহ সবাইকে গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছেন। গ্রামে গেলেই আমাদের ওপর হামলা করছেন।’
মতিবিনিময় সভায় নৌকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন শাহীন উপস্থিত ছিলেন না। সভা শেষে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র। বিরোধী পক্ষ একজোট হয়ে ভোটে আমাকে হারানোর জন্য নানামুখী পাঁয়তারা করছে।’
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আবারো তার সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মতবিনিময় সভায় ইসি কবিতা খানম বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কমিশনের নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কেউ যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইতোপূর্বে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহেদ আহমেদ বলেন, ‘ইতোপূর্বে অভিযান চালিয়ে চরদিঘলদী থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারে প্রতিদিন পুলিশের অভিযান চলছে।’ তিনি আরো বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে। আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তবেই টেঁটাযুদ্ধ বন্ধ হবে।’
জেলা প্রশাসক আবু নাঈম মো. মারুফ খানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম ও ঢাকা অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজা খানম।
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দাবদাহ। এ সময়ে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে করণীয় কী কী, তা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার।
এক ভিডিওবার্তায় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন, যা তার ভাষায় তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সতর্কতা
সম্মানিত দর্শকমণ্ডলী, প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে এবং এটি আরও কিছুদিন ধরে কন্টিনিউ করতে পারে। এ সময় কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে জন্য এই তাপদাহের সময় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া লাগবে।
বিশেষ করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হওয়া লাগবে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাংশ ব্যবহারের সময় এটি একটানা দীর্ঘসময় ব্যবহার না করে মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া লাগবে এবং এগুলো যারা পরিচালনা করেন, শ্রমিক যারা তাদেরও কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে একটানা কাজ না করিয়ে মাঝে মাঝে তাদেরকেও বিরতি দিতে হবে। তাহলে কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার শঙ্কা হ্রাস পাবে এবং সীমিত থাকবে।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত রাখা
সকল ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, এখনই চেক করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা বদলে ফেলতে হবে। একটি বৈদ্যুতিক লাইন থেকে অথবা একটি মাল্টিপ্লাগ থেকে অতিরিক্ত সংযোগ নেয়া যাবে না। এই জাতীয় সংযোগ থেকে কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারে সতর্কতা
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যখন ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে, সব ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। অফ করে রাখতে হবে।
রান্নার ক্ষেত্রে সতর্কতা
এ ছাড়া আমরা আবাসিক ভবনে যারা রান্নার কাজ করি, রান্না রেখে দূরে সরে যাওয়া যাবে না। রান্না শেষে অবশ্যই চুলা পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গ্রামেগঞ্জে রান্না করছি যেখানে ছাই যেন উত্তপ্ত না থাকে, ছাইও নিশ্চিন্তভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে।
ধূমপান পরিহার
আবাসিক ভবন ও কারখানায় কোনোভাবেই কিন্তু ধূমপান করা যাবে না। অপরিহার্য ক্ষেত্রে বাইরে যারা ধূমপান করবেন, বিড়ি-সিগারেটের শেষ অংশ সতর্কভাবে, সচেতনভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গাড়িতে চলাচলের সময় ধূমপান করে যেখানে সেখানে কিন্তু সিগারেটের অংশ ফেলা যাবে না।
বারবিকিউ পার্টি না করা
বাড়ির ছাদে, বারান্দায় অথবা আশপাশে দাহ্য বস্তু আছে, এমন খোলা জায়গায় এ সময় বারবিকিউ পার্টি করবেন না। কারণ একটি স্ফূলিঙ্গ উড়ে গিয়ে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। এই সময় ক্যাম্প ফায়ার, ফানুস ওড়ানো অথবা আতশবাজিকে পুরোপুরি না বলুন।
গাড়িতে অবস্থান ও পার্কিংয়ে সতর্কতা
ফিলিং স্টেশন থেকে তেল ও গ্যাস সংগ্রহের সময় অনুগ্রহপূর্বক কেউ গাড়িতে অবস্থান করবেন না। সবাই সচেতন থাকবেন। বিশেষ করে ফিলিং স্টেশনের মালিক এবং যারা কর্মরত আছেন, তাদের এ ব্যাপারে অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
এ সময় সরাসরি রোদ পড়ে এমন জায়গায় গাড়ি পার্কিং করবেন না। গাড়ি ছায়ার মধ্যে পার্কিং করবেন বা যেখানে ছায়া আছে, এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করবেন।
আগুন নিয়ে খেলা পরিহার
এ সময় বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলতে দেবেন না এবং আপনার হাতের কাছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সংরক্ষণ করুন। সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, তা পরীক্ষা করুন এবং এগুলোর সামনে কোনো ব্যারিয়ার তৈরি করবেন না।
ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পেতে
আপনার সতর্কতা এবং আপনার প্রতিবেশীকে সতর্ক করার মধ্য দিয়ে কিন্তু নিরাপদ থাকা সম্ভব। এ ছাড়া আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের মোবাইলে নিকটস্থ ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সেভ করে রাখুন। যেকোনো সময় ফায়ার সার্ভিসকে দ্রুত রেসপন্স করার জন্য ১৬১৬৩ হটলাইন অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কিংবা নিকটতম ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বরে দ্রুত কল করুন এবং ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করুন।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গাড়ির চাপায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওডালা এলাকায় শনিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার খেজুরা এলাকার সুরেশ ডাকুয়া (৩৫) ও তার ছেলে লোকেশ ডাকুয়া (৯)। এ ঘটনায় আহত লোকেশ ডাকুয়ার মা নিপু রায় (৩০) বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতে স্বামী-সন্তানসহ নারায়ণগঞ্জে ‘বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী’ মন্দিরে পূজা করতে যান তারা। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বামী স্ত্রী ও সন্তান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওঢালা এলাকা পার হচ্ছিলেন। এ সময় একটি গাড়ি তাদের চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় তিনজনকে স্থানীয়রা একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে লোকেশকে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। সুরেশ ও নিপু রায়কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে সুরেশ ডাকুয়ার মৃত্যু হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক বলেন, ‘নিপু রায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। নিহত দুইজনের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলাসহ গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে ১৯৭১ সালের অসহায় শরণার্থীদের দুর্ভোগ স্মরণে ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রায় ফুটে উঠেছে নওগাঁয় রোড ধরে ভারতে পাড়ি দেয়া শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র।
ঐতিহাসিক ২০ এপ্রিলের এ দিনে ‘রোড টু বালুরঘাট’ স্মরণ করল নওগাঁবাসী। প্রায় ৬০ মিনিটে ৩ কিলোমিটার পদযাত্রায় যুদ্ধকালীন নওগাঁ রোডের শরণার্থীদের যুদ্ধ বিভীষিকা ও অবর্ণনীয় দুর্দশা তুলে ধরা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে পাঁচ শতাধিক মানুষ নওগাঁ রোডে এ প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নেন। শহরের তাজের মোড় শহিদ মিনার পাদদেশ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মুক্ত মঞ্চ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে শরণার্থীদের প্রতীকী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা মইনুল হক দুলদুল, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যক্ষ বিন আলী পিন্টু, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সাইমা ফেরদৌসী, নাইস পারভীন, বিষ্ণু কুমার দেবনাথ, গুলশানারাসহ অনেকে।
এ সময় বক্তারা জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরোচিত অত্যাচার-নিপীড়ন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে যুদ্ধের শুরু থেকে বিশেষ করে ২০ এপ্রিল এই দিনে পায়ে হেঁটে নওগাঁর সড়ক পথে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতের বালুরঘাটে আশ্রয় নেন। চলার পথে সেই সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকের মৃত্যু হয়। সে সব শরণার্থীদের ক্লান্তি ও দুর্ভোগ স্মরণে একুশে পরিষদ নওগাঁ ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী বলেন, ‘আমরা অনেকেই একাত্তরের ইতিহাস ভুলে গেছি। ৫৩ বছরের আগে কী ঘটেছিল। লাখ লাখ মানুষ নওগাঁ শহরের ওপর দিয়ে দেশ ছেড়েছিল দেশকে মুক্ত করার জন্য। চলার পথে সে সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নওগাঁর মূল ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী এ জেলার সব তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের জানানোর লক্ষ্যেই আয়োজনটি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে জোর করে ধান কাটা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের এক উপপরিদর্শক তথা এসআইসহ চারজন আহত হয়েছেন।
উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের পলশিয়া গ্রামে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পলশিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কাজিম মন্ডল একদল সন্ত্রাসী নিয়ে একই গ্রামের সানু মিয়ার ডুব বিলের দুই বিঘা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেন। সানু মিয়া ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে গোপালপুর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম একজন কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ দেখে সস্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়।
‘তারা রামদা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথা ফেটে যায়। কনস্টেবল শফিকুল ইসলামসহ সানু মিয়ার দুই আত্মীয় আহত হয়। আহতরা সবাই গোপালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
গোপালপুর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে।’
গোপালপুর থানার ওসি ইমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। হামলার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:দেশে চলমান দাবদাহের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের উপপরিচালক (কলেজ-১) মো. ওয়াহিদুজ্জামান শনিবার বিকেলে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ সাত দিন বন্ধ থাকার সিদ্ধান্তের কথা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
এর আগে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চলমান তাপদাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আগামী ২১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ পর্যন্ত সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয়সমূহ ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।’
তারও আগে দেশজুড়ে চলমান দাবদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেশজুড়ে বহমান তাপদাহের ওপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া না পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’
গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দাবদাহ। কোনো কোনো জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ।
ভারত সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন বাস্তবতায় দৈনন্দিন কাজকর্ম করা কঠিন হয়ে গেছে বিভিন্ন বয়সীদের।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের পটিয়ার সড়কে শুক্রবার বিকেল ও রাতে দুটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
বাস উল্টে হেলপার নিহত
পটিয়ার মনসা বাদামতলা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী একটি মিনিবাস বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে মহাসড়কের পাশে উল্টে যায়। ওই সময় বাসটির হেলপার রফিক (২৩) লাফ দিলে বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তিনি।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছেন।
অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত
উপজেলার খরনা চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
নিহত দুজন হলেন চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকার আবু বক্কর তাসিফ (১৮) ও কক্সবাজারের ঈদগাহ মধ্যম মাইজপাড়া এলাকার নুরুল আমিন (২৭)।
আহত চারজন হলেন বৈলতলীর রাকিব হোসেন (২০), মোহাম্মদ জাবেদ (১৯), মোহাম্মদ সিহাব (২২) ও চকরিয়ার অটোরিকশার চালক লিটন (৩৫)।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম অভিমুখী দ্রুতগামী মারসা পরিবহনের একটি বাস নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়রা অটোরিকশার যাত্রীদের উদ্ধার করে চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চারজনকে হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জের ছাতকের ঐতিহ্যবাহী জাউয়া বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি ধারা জারি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ এড়াতে শনিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যধারার এক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মুস্তাফা মুন্না।
আদেশে বলা হয়েছে, “যেহেতু ছাতক উপজেলাধীন ‘জাউয়া বাজার’ ইজারাকে কেন্দ্র করে বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এর ফলে আইন শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতিসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে মর্মে অফিসার ইন- চার্জ, ছাতক থানা, সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছে।
“সেহেতু সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আমি গোলাম মুস্তাফা মুন্না, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ছাতক, সুনামগঞ্জ আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ৬ ঘটিকা হতে রাত ১২ ঘটিকা পর্যন্ত জাউয়া বাজার এলাকা এবং তার আশেপাশের এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করলাম।”
আদেশ অনুযায়ী, এ সময় উক্ত এলাকায় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন, লাঠি বা দেশীয় কোনো অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন, যে কোনো ধরনের মাইকিং বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার, পাঁচ বা তার অধিক সংখ্যক ব্যক্তির একসঙ্গে চলাফেরা, সভা সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।
মন্তব্য