স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের তিন বীর সেনানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ৭ নভেম্বরের ঘটনাবহুল দিন। বিদ্রোহ ও অরাজকতার বলি হয়েছিলেন খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীর উত্তম এবং এ টি এম হায়দার বীরবিক্রম। সে সময় সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো চেইন অফ কমান্ড ছিল না।
ইতিহাসবিদ, প্রতক্ষ্যদর্শী ও রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারদের মতে, ৭ নভেম্বরের এই অভ্যুত্থান নাটকের বীজতলা তৈরি হয় চারদিন আগে ৩ নভেম্বরের এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।
সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহ্যাস ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইয়ে লিখেছেন, ‘এদিন উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা একজন মহিলা ডাক্তারসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এমনকি একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকেও এ সময় হত্যা করা হয়। এ রকম জঘন্য ঘটনায় ভরপুর ছিল ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বরসহ পরবর্তী ঘটনাগুলো। আবার অনেক ঘটনা হয়তো রিপোর্টের নজর এড়িয়ে গেছে কিংবা সংরক্ষণে রাখা হয়নি।’
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন তার বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় (১৯৭৬-৮১) বইতে ৭ নভেম্বর নিয়ে লিখেছেন, ‘সেদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ড স্ট্রাকচার সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে এবং চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা ধারণ করে। এ রকম অস্থিতিশীল অবস্থা পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে ঘটেছে বলে মনে পড়ে না এবং কারো পক্ষে কিছু বলার বা করারও ছিল না। ৭ নভেম্বরের রেশ থেকে যায় দীর্ঘদিন এবং সেনাবাহিনীতে ক্যু স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। ৭ নভেম্বরের পর থেকে জেনারেল জিয়া হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত সর্বমোট ২১টি ছোটবড় সশস্ত্র রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হয় এবং ২১তম অভ্যুত্থানে নিহত হয় জিয়াউর রহমান।’
কর্নেল ফারুক ও রশিদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ৭ নভেম্বরের পটভূমি সম্বন্ধে অনেক কথা জানা যায়। তারা উল্লেখ করেন: জিয়া তার নিজ বাসভবনেই ছিলেন এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষী এবং পদাতিক বাহিনীর কোম্পানির প্রহরাধীন ছিলেন, ছিল ব্যক্তিগত স্টাফরাও। সুতরাং তিনি বন্দি ছিলেন না এবং বিদ্রোহ দমনের জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টাও করেননি। জিয়ার স্ত্রী ফারুক এবং রশিদকে এই মর্মে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তার স্বামী আটকাবস্থায় নেই এবং কতিপয় সামরিক অফিসারদের সঙ্গে মিটিং করছেন।
৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত কর্নেল শাফায়াত জামিল রচিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর শীর্ষক বইতে লিখেছেন: ‘সিপাহী বিদ্রোহে অংশ নেয়া সিপাহীরা ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত এবং তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যাটালিয়নে ছিল না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যড়যন্ত্র এবং জঘন্য হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্যই বিশেষ মহল ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। আর বিশেষ মহলের নেপথ্যে কারা ছিল তা জাতির নিকট অত্যন্ত স্পষ্ট।’
লেখক ও গবেষক আনোয়ার কবির বলেন, ‘৭ নভেম্বর প্রথম প্রকাশ্যে হত্যার শিকার হন ২ জন সেক্টর কমান্ডার ও ১ জন সাব সেক্টর কমান্ডার। আর এই ৭ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে ২১ জুলাই ১৯৭৬ সালে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন আরেকজন সেক্টর কমান্ডার। এ ছাড়া, সেনাবাহিনীর ভেতরে ১৩ জন হত্যার শিকার হন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও কোনো সেক্টর কমান্ডারকে হারাতে হয়নি। আর তাই হত্যার নৃশংস ভয়াবহতা ৭ নভেম্বরকে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ে পরিণত করেছে।’
যেভাবে হত্যা করা হয় তিন মুক্তিযোদ্ধাকে
৭ নভেম্বর সবচেয়ে বড় যে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয় সেটি সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফ, এ টি এম হায়দার ও সাব সেক্টর কমান্ডার খন্দকার নাজমুল হুদার। শেরে বাংলা নগরে ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে সকালে এই হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়। মূলত এই হত্যাকাণ্ড জিয়াউর রহমানকে এককভাবে সেনা নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করে।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা রকম মত ও বক্তব্য রয়েছে।
আনোয়ার কবির বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের, মীর শওকত আলী এবং হত্যাকারী হিসেবে মেজর আসাদ ও মেজর জলিল নামে দুই জন অফিসার, উত্তেজিত সিপাহীদের কথা বলা হয় এবং এ নিয়ে কিছু বিবরণও পাওয়া যায়। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেনাবাহিনী থেকে আজ পর্যন্ত কোনো কোর্ট অব ইনকোয়ারি হয়নি। আমি আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সে সময়ে ১০ম বেঙ্গলে উপস্থিত থাকা কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে যেটি জানতে পেরেছি তাতে সে সময়ে ১০ম বেঙ্গলে নিহত ওই তিন জন ছাড়াও আরও নয় জন অফিসার উপস্থিত ছিলেন বলে মনে হয়েছে।
তারা হলেন: লে. কর্নেল নওয়াজেশ উদ্দীন (সিও ১০ম বেঙ্গল, পরবতীতে কর্নেল ও ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সালে জিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য কোর্ট মার্শালে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন), লে. মুজিবুর রহমান (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম বিএমএ অফিসার, পরবর্তীতে মেজর, ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সালে জিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য কোর্ট মার্শালে মৃত্যুবরণ করেন), মেজর কাইউম (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ওয়ার কোর্সের অফিসার), কর্নেল সিরাজ, ক্যাপ্টেন মোক্তাদির (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ওয়ার কোর্স বা সেকেন্ড এসএস-এর অফিসার, মেজর হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত), ক্যাপ্টেন আলম ফজলুর রহমান (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ওয়ার কোর্স বা সেকেন্ড এসএস-এর অফিসার, পরবর্তীতে সেনাবাহিনীতে মেজর জেনারেল ও বিডিআর প্রধান হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত), মেজর নাসির, মেজর আসাদ (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ওয়ার কোর্সের অফিসার) এবং মেজর জলিল (বাংলাদেশ সেনাহিনীর প্রথম ওয়ার কোর্সের অফিসার)।
এই অফিসারদের অধিকাংশ এখনও জীবিত। সুতরাং সরকার উদ্যোগ নিলে এ হত্যাকাণ্ডে রহস্য উন্মোচন এবং হত্যাকারীদের বিচার করা খুব বেশি কঠিন নয়।
তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা বইতে লে. কর্নেল (অব.) এম. এ. হামিদ, পিএসসি ৭ নভেম্বর দিন খালেদ মোশারফ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে লিখেছেন: ‘সকাল ৭ ঘটিকা। টু-ফিল্ড রেজিমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সৈনিকদের ব্যস্ততা, দ্রুত আনাগোনা প্রত্যক্ষ করছিলাম। তারা হেলেদুলে ঘুরছে-ফিরছে আপন খেয়ালে। অন্য সময় হলে অফিসারদের পাশ দিয়ে যেতে তাদের স্মার্ট স্যালুট দিয়ে চলতে হতো। আজ এসবের বালাই নেই। আজ তাদের রাজ্যে তারাই রাজা।
‘এমন সময় সৈনিকদের ভিড় ঠেলে একটি আর্মি ট্রাক শোঁ শোঁ বেগে এগিয়ে এলো। ভেতর থেকে নেমে এলো একজন তরুণ লেফটেন্যান্ট। স্যালুট দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, স্যার, জেনারেল জিয়া কোথায়? জরুরি ব্যাপার আছে। বললাম, কী ব্যাপার আমাকেই বলো।
‘সে বলল, স্যার, খুবই জরুরি, ওনাকেই বলতে হবে। আমাকে ওনার কাছে নিয়ে চলুন প্লিজ! ওই দিন প্রোটোকলের কোনো বালাই ছিল না। বললাম, আসো, আমার সাথে।’
এম. এ. হামিদ আরও লেখেন, “আমি তাকে নিয়ে জিয়ার কামরায় ঢুকলাম, তাকে বললাম, এই ছেলেটি তোমাকে কিছু বলতে চায়। লেফটেন্যান্ট তৎক্ষণাৎ জিয়াকে একটি স্মার্ট স্যালুট দিয়ে বলল, ‘স্যার, আই হ্যাভ কাম টু প্রেজেন্ট ইউ ডেড বডি অফ খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা অ্যান্ড হায়দার, স্যার’। জিয়া অবাক! ব্রিগেডিয়ার খালেদের ডেডবডি। আমার দিকে তাকিয়ে জিয়া বললেন, ‘দেখো তো হামিদ, কী ব্যাপার’। আমি অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে দাঁড়ানো খোলা ট্রাকের পেছনে গিয়ে উঠলাম। সেখানে দেখি ট্রাকের পাটাতনে খড় চাপা দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে তিনটি মৃতদেহ। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা ও কর্নেল হায়দার। খালেদের পেটের ভুঁড়ি কিছুটা বেরিয়ে আসছিল। তাকে পেটের মধ্যে গুলি করা হয়েছিল, হয়তো বা বেয়নেট চার্জ করা হয়েছিল। কী করুণ মৃত্যু!
“আমি জিয়াকে কামরায় গিয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ, খালেদ, হুদা আর হায়দারের ডেডবডি’। সে জিজ্ঞাসা করল, এগুলো এখন কী করা যায়? আমি বললাম, ‘আপাতত এগুলো সিএমএইচ-এর মর্গে পাঠিয়ে দেই’। জিয়া বলল, ‘প্লিজ হামিদ, এক্ষুণি ব্যবস্থা করো’।”
এম. এ. হামিদ লিখেছেন, ‘হায় খালেদ মোশাররফ! তিনি ৭ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে এলেন বটে। তবে জীবিত নয়, ফিরে এলো তার প্রাণহীন দেহ। আমি লেফটেন্যান্টকে ডেডবডিগুলো সিএমএইচ-এ নিয়ে যেতে বললাম। আমার জিপ ছিল না। রাতে বিপ্লবীরা আমার জিপটি গ্যারেজ থেকে নিয়ে গেছে। তাকেই রেখে আসতে বললাম।’
১০ ম বেঙ্গলে কী ঘটেছিল
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও গবেষকের বইপত্র থেকে ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তটির যে চিত্র পাওয়া যায়, তা এরকম:
রাত ১২টায় সেপাই বিপ্লবের খবর পেয়ে জেনারেল খালেদ মোশাররফ দ্রুত তার প্রাইভেট কার নিয়ে বঙ্গভবন থেকে দ্রুত বেরিয়ে যান। তিনি নিজেই ড্রাইভ করছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন কে এন হুদা ও এ টি এম হায়দার। দুজন ওইদিনই ঢাকার বাইরে থেকে এসে খালেদের সাথে যোগ দেন।
খালেদ মোশাররফ প্রথমে ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের বাসায় যান। সেখানে তার সঙ্গে পরামর্শ করেন। নুরুজ্জামান তাকে ড্রেস পাল্টে নিতে অনুরোধ করে। তিনি তার নিজের একটি প্যান্ট ও বুশ শার্ট খালেদকে পরতে দেন। মৃত্যুর সময় ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের দেয়া এই ছোট সাইজের সার্ট-প্যান্টই পরে ছিলেন খালেদ মোশাররফ।
সেখান থেকে খালেদ মোশাররফ কলাবাগানে তার এক আত্মীয়ের বাসায় যান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেন এবং কয়েক জায়গায় ফোন করেন। ৪র্থ বেঙ্গলে সর্বশেষ ফোন করলে ডিউটি অফিসার লে. কামরুল ফোন ধরেন। লে. কামরুল তাকে প্রকৃত অবস্থা অবহিত করেন। খালেদ মোশাররফ বুঝতে পারেন অবস্থা খুবই নাজুক। তিনি অবস্থান পরিবর্তন করে শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ করতে যান। ১০ম বেঙ্গলকে বগুড়া থেকে তিনিই আনিয়েছিলেন তার নিরাপত্তার জন্য। পথে ফাতেমা নার্সিং হোমের কাছে তার গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে তিনি কর্নেল হুদা ও হায়দারসহ পায়ে হেঁটেই ১০ম বেঙ্গলে গিয়ে পৌঁছেন।
প্রথমে নিরাপদেই তারা বিশ্বস্ত ইউনিটে আশ্রয় নেন। তখনও সেখানে সিপাহিদের বিদ্রোহের ঢেউ এসে লাগেনি। কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কর্নেল নওয়াজিশ। তাকে দেওয়া হয় খালেদ মোশাররফের আগমনের খবর। তিনি তৎক্ষণাৎ টেলিফোনে টু-ফিল্ডে সদ্যমুক্ত জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার ইউনিটে খালেদ মোশাররফের উপস্থিতির কথা জানিয়ে দেন। তখন ভোর প্রায় চারটা। জিয়ার সঙ্গে ফোনে কর্নেল নওয়াজিশের কিছু কথা হয়। এরপর তিনি (মেজর জিয়া) মেজর জলিলকে ফোন দিতে বলেন। জিয়ার সাথে মেজর জলিলের কথা হয়। তাদের মধ্যে কী কথা হয়, সেটা কেউ অনুমান করতে পারেননি।
ভোরবেলা দেখতে দেখতে সেপাইদের বিদ্রোহের ঢেউ ১০ম বেঙ্গলেও লাগতে শুরু করে। সেপাইরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি কর্নেল নওয়াজিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তারা খালেদ ও তার সহযোগীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সেপাইরা তাদের টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনেন।
ইউনিটের অফিসার মেজর আসাদের বিবৃতি অনুসারে কর্নেল হায়দারকে তার চোখের সামনেই মেস থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে এনে প্রকাশ্যে সৈনিকরা গুলি করে হত্যা করে। বাকি দুজন উপরে ছিলেন, তাদের কীভাবে মারা হয় তিনি দেখতে পাননি।
একাধিক ভাষ্যে জানা যায় খালেদ মোশাররফ, হায়দার ও হুদা অফিসার মেসে বসে সকালের নাস্তা করছিলেন। হুদা ভীত হয়ে পড়লেও খালেদ ছিলেন ধীর, স্থির, শান্ত। তিনি হুদাকে সাহস রাখতে বলেন।
মেজর জলিল কয়েকজন উত্তেজিত সৈনিক নিয়ে মেসের ভেতর প্রবেশ করে। তার সাথে একজন বিপ্লবী হাবিলদারও ছিলেন। ওই হাবিলদার চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে বলেন, ‘আমরা তোমার বিচার চাই।’
খালেদ শান্ত কণ্ঠে জবাব দেন, ‘ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো। আমাকে জিয়ার কাছে নিয়ে চলো।’
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে ওই হাবিলদার চিৎকার করে বলেন, ‘আমরা এখানেই তোমার বিচার করব।’
খালেদ ধীর-স্থির। বললেন, ‘ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো।’
খালেদ দু’হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকলেন।
এরপর ওই হাবিলদারের ব্রাশফায়ারে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী খালেদা মোশাররফ।
কামরার ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে ধরা পড়েন কর্নেল হুদা। সেখানেই তিনি প্রাণত্যাগ করেন। কর্নেল হায়দার ছুটে বেরিয়ে যান, কিন্তু সৈনিকদের হাতে বারান্দায় ধরা পড়েন। সেপাইরা তাকে কিল-ঘুষি-লাথি মারতে মারতে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে আনে। সেখানে একজন সৈনিকের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। ঢাকায় পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বহু কমান্ডো আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কর্নেল হায়দার। ১৬ ডিসেম্বর একাত্তরে পল্টন ময়দানে ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণ মুহূর্তে অপূর্ব ভঙ্গিতে স্টেনগান কাঁধে হায়দারকে দেখা যায় জে. অরোরা ও নিয়াজীর সঙ্গে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে।
প্রকাশনা বন্ধ হওয়া আজকের কাগজ পত্রিকায় প্রত্যক্ষদর্শী মেজর আসাদুজ্জামান পরে ওইদিনের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে: ‘মেজর জলিল সাহেব উপরে (দোতলায়) ব্রিগেডিয়ার খালেদ, কর্নেল হুদা ও কর্নেল হায়দারের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই জোয়ানরা লে. কর্নেল হায়দারকে কিল, ঘুষি ও চড় মারতে মারতে নিচে নামিয়ে আনতে লাগল। আমি তখন বেশ দূরে একটা জিপের ভেতর ছিলাম। আমি জিপের দরজা খুলে বের হতেই তিনি আমাকে চিৎকার করে ডেকে বললেন, আসাদ সেভ মি। আমি দৌড়ে তার কাছে যেতে চেষ্টা করি। তার কাছে পৌঁছানোর পূর্বেই পাশে দাঁড়ানো এক জওয়ানের গুলিতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কতগুলো জওয়ান তাকে ঘিরে রাখল। চারিদিকে তখন গোলাগুলি চলছে।
‘এই পরিস্থিতিতে কে কী করল, তা ছিল খুবই অস্পষ্ট এবং ঘোলাটে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনো অফিসারকেই সেদিন দেখতে পাইনি বা কাউকে এগিয়ে আসতেও দেখিনি। অন্য দুজন (খালেদ ও হুদা) কীভাবে মারা গেলেন তা স্পষ্ট বুঝতে পারিনি। মোটামুটি এই ছিল ৭ নভেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের একটি ইউনিটের খণ্ডচিত্র।’
আরও পড়ুন:স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৌশল প্রণয়ন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র: বাসস
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা নেই। এটি কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সার্বিক সমস্যা।’
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বক্তব্য দেন। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে মোট ৮ হাজার ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৭ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সরকার দেবে এবং বাকি ৪৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আসবে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করে পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিসরের কায়রোতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ১৬৬ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম কক্ষ রাখা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পরিষেবা পান সেজন্য পর্যাপ্তসংখ্যক বুথ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাস্তা ও সেতু নির্মাণের সময় বন্যার বিষয়টি বিবেচনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স (তৃতীয় পর্যায়) নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পর্কে সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে বাকি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সগুলোর নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি উপকূলীয় এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি সোলার সিস্টেম রাখার জন্য একটি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প সমাপ্তির পথে সেগুলোর সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে বলেন, যাতে করে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।
মিরপুরে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার জন্য ১১৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সেখানে নারীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করতে না চাইলেও মাঝে মাঝে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিলম্ব হয়।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল- অতিরিক্ত ২৮৮ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত); ৪৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাশিনাথপুর-দাশুরিয়া-নাটোর-রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ-বালিয়াদিঘি সীমান্ত জাতীয় মহাসড়কের যথাযথ মান উন্নয়ন; ৩৭১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি মৎস্য খামারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়); ২৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের উন্নয়ন; অতিরিক্ত ১৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো, উন্নত দক্ষতা ও তথ্যের প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য টিকে থাকার সামর্থ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আটটি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার, হার্ট ও কিডনি রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা (প্রথম সংশোধিত)।
আরও পড়ুন:কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতি করব না। কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয়ও দেব না। আমি মানুষ হিসেবে ভুল করতেই পারি, তবে ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। আমার কাজের গতি যেন ত্বরান্বিত হয়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন উপাচার্য।
দায়িত্ব নিয়েই সবার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি আপনাদেরই লোক, আমি বঙ্গবন্ধুর লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক। আমাকে সবাই সহযোগিতা করবেন, ভুল হয়ে ধরিয়ে দেবেন। তবে কেউ আমাকে পিছু টানবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি কারও অন্যায় আবদার শুনব না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখাতে নয়, আমি আপনাদের বন্ধু হয়ে কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের পাশে থেকে সব সমস্যা সমাধান করব।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই আমি সবচেয়ে খুশি হব। অন্যকিছু দিয়ে আমাকে খুশি করা যাবে না। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারবেন, তিনিই দায়িত্ব নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আমার বন্ধু। তিনি আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আমি শারফুদ্দিন আহমেদকে শুভেচ্ছা জানাই।’
ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের লোক নই। আমি কোনো ধরনের গ্রুপে যেতে চাই না। এ বয়সে আমার কোনো গ্রুপিংয়ের প্রয়োজন নেই। আমাকে যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে পাঠিয়েছেন, আমি সেটাকে মূল্যায়ন করতে চাই।’
উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু না হওয়া প্রসঙ্গে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’ এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার দায়বদ্ধতা আছে। আমি বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক-ট্রেইনারদের নিয়ে এসে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আশা করি, সেবায় প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম জায়গায় অবস্থান করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা উপাচার্য হিসেবে তার একমাত্র অ্যাজেন্ডা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদান করেনি বলে শিক্ষামন্ত্রীর দাবির একদিন পর এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪-১৬ মার্চ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বাকু ফোরাম একাদশে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামের অফিশিয়াল অনুষ্ঠানসূচিতেও অধ্যাপক ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসকে বাকু ফোরামের সমাপনী নৈশভোজে যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারটি গ্রহণের জন্য মঞ্চে সশরীর উপস্থিত থাকেন।
ইউনূস সেন্টার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনেস্কোর পুরস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে। অধ্যাপক ইউনূসকে প্রদত্ত ‘ট্রি অফ পিস’ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত পদকের একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর আগে ২০২৩ সালের জুনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ইউনেস্কো এবং অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনূস স্পোর্টস হাবের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউনেস্কোর ফিট ফর লাইফ ফ্ল্যাগশিপের অধীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উভয় প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া।
এর আগে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের চেয়ারম্যান মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আজারবাইজানের গঞ্জাভি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ড. ইউনূসকে ইসরাইলের একজন ভাস্কর ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।”
ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বলে ড. ইউনূস যে দাবি করেছেন তা অসত্য বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:শান্তিতে নোবেলজয়ী হয়েও ড. ইউনূস ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার পক্ষ নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, হত্যাযজ্ঞে নিশ্চুপ থেকে এবং একজন ইসরায়েলির দেয়া পুরস্কার নিয়ে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন। আর ইউনূস সেন্টার এটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার উল্লেখ করে মিথ্যাচার করছে, যা খুবই দুঃখজনক।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইউনূস সেন্টারের মিথ্যাচারে আমি বিষ্মিত, হতবাক। সম্প্রতি আজারবাইজানের বাকুতে একটি সম্মেলনে মিজ হেদভা সের নামে একজন ইসরায়েলি ভাস্বর ড. ইউনুসকে একটি পুরস্কার দিয়েছেন। এ সম্মেলনে ইউনেস্কো কোনোভাবে জড়িত ছিল না।
‘এই পুরস্কার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তো নয়ই, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। আর ইউনূস সেন্টার সেটিকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বলে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করেছে। তবে এটিই প্রথম নয়, এর আগেও এ ধরনের মিথ্যাচার ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ওদিকে গাজায় আজ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
‘বরং এই সময়ে তিনি একজন ইসরায়েলির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ কি এটাই নয় যে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সীমান্ত হত্যায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২৫ মার্চ মধ্যরাতে লালমনিরহাট ও ২৬ মার্চ ভোরে নওগাঁ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো এবং সীমান্তে পতাকা বৈঠকও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। সম্প্রতি ভারত সফরেও এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে গুরুত্বসহ আলোচনা করেছি। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নন-লেথাল বা প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রাবার বুলেটে অনেকে আহত হন; কিন্তু প্রাণহানি কমে এসেছে। তবে আমাদের লক্ষ্য প্রাণহানিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা।’
নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা চলছে
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার ও জাহাজটিকে মুক্ত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ সম্পর্কে শুধু এটুকু বলতে চাই, নাবিকদের মুক্ত করার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। আমরা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছি। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাদ্য সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জাহাজটিতে খাদ্য সংকট নেই। এর আগে তিন মাস ধরে জলদস্যুদের কবলে থাকা অন্য জাহাজেও খাদ্য সংকট ছিল না।
আরও পড়ুন:ঈদের পর সমাধান করা হবে- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে এক মাসের জন্য আন্দোলন থামালেন বেতন-ভাতা বাড়ানো ও বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনকারী পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকরা যে দাবিগুলো করেছেন সেগুলো যৌক্তিক। চিকিৎসকরা হাসপাতালকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে। তারা কাজে যোগদান করুক।’
বিষয়টি কতদিনে বাস্তবায়িত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন তো লাগবেই। তবে ঈদের পর হয়তো বলতে পারব, কতদিনের মধ্যে বেতন বাড়বে।’
এর আগে গত শনিবার (২৩ মার্চ) চার দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
আগামী মাসে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব পাবে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
ওই সূত্র বার্তা সংস্থাটিকে জানায়, শেখ তামিমের সফরে জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় উভয় দেশ।
কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ডজনখানেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে সূত্রটি বলেছে, সফরকালে এসব এমওইউ ও চুক্তি সই করা হবে।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের আমিরের দুই দিনের সফরটি হতে পারে আগামী ২১ থেকে ২২ এপ্রিল।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমিরের বৈঠকের পর যেসব এমওইউ ও চুক্তি সই হবে, সেগুলো নিয়ে দুই পক্ষ এখন কাজ করছে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের সম্মেলন এলডিসি-৫-এর পার্শ্ববৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে কাতারের কাছে বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর একই বছরের ৪ মার্চ বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কাতার।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলে কাতার।
আরও পড়ুন:দেশের সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে আজকের বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সিনপটিক অবস্থান নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আজকের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা আছে, সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা সোমবার সকালে ছিল ৮৫%।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য