স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের তিন বীর সেনানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ৭ নভেম্বরের ঘটনাবহুল দিন। বিদ্রোহ ও অরাজকতার বলি হয়েছিলেন খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীর উত্তম এবং এ টি এম হায়দার বীরবিক্রম। সে সময় সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো চেইন অফ কমান্ড ছিল না।
ইতিহাসবিদ, প্রতক্ষ্যদর্শী ও রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারদের মতে, ৭ নভেম্বরের এই অভ্যুত্থান নাটকের বীজতলা তৈরি হয় চারদিন আগে ৩ নভেম্বরের এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।
সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহ্যাস ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইয়ে লিখেছেন, ‘এদিন উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা একজন মহিলা ডাক্তারসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এমনকি একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকেও এ সময় হত্যা করা হয়। এ রকম জঘন্য ঘটনায় ভরপুর ছিল ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বরসহ পরবর্তী ঘটনাগুলো। আবার অনেক ঘটনা হয়তো রিপোর্টের নজর এড়িয়ে গেছে কিংবা সংরক্ষণে রাখা হয়নি।’
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন তার বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় (১৯৭৬-৮১) বইতে ৭ নভেম্বর নিয়ে লিখেছেন, ‘সেদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ড স্ট্রাকচার সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে এবং চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা ধারণ করে। এ রকম অস্থিতিশীল অবস্থা পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে ঘটেছে বলে মনে পড়ে না এবং কারো পক্ষে কিছু বলার বা করারও ছিল না। ৭ নভেম্বরের রেশ থেকে যায় দীর্ঘদিন এবং সেনাবাহিনীতে ক্যু স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। ৭ নভেম্বরের পর থেকে জেনারেল জিয়া হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত সর্বমোট ২১টি ছোটবড় সশস্ত্র রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হয় এবং ২১তম অভ্যুত্থানে নিহত হয় জিয়াউর রহমান।’
কর্নেল ফারুক ও রশিদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ৭ নভেম্বরের পটভূমি সম্বন্ধে অনেক কথা জানা যায়। তারা উল্লেখ করেন: জিয়া তার নিজ বাসভবনেই ছিলেন এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষী এবং পদাতিক বাহিনীর কোম্পানির প্রহরাধীন ছিলেন, ছিল ব্যক্তিগত স্টাফরাও। সুতরাং তিনি বন্দি ছিলেন না এবং বিদ্রোহ দমনের জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টাও করেননি। জিয়ার স্ত্রী ফারুক এবং রশিদকে এই মর্মে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তার স্বামী আটকাবস্থায় নেই এবং কতিপয় সামরিক অফিসারদের সঙ্গে মিটিং করছেন।
৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত কর্নেল শাফায়াত জামিল রচিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর শীর্ষক বইতে লিখেছেন: ‘সিপাহী বিদ্রোহে অংশ নেয়া সিপাহীরা ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত এবং তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যাটালিয়নে ছিল না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যড়যন্ত্র এবং জঘন্য হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্যই বিশেষ মহল ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। আর বিশেষ মহলের নেপথ্যে কারা ছিল তা জাতির নিকট অত্যন্ত স্পষ্ট।’
লেখক ও গবেষক আনোয়ার কবির বলেন, ‘৭ নভেম্বর প্রথম প্রকাশ্যে হত্যার শিকার হন ২ জন সেক্টর কমান্ডার ও ১ জন সাব সেক্টর কমান্ডার। আর এই ৭ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে ২১ জুলাই ১৯৭৬ সালে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন আরেকজন সেক্টর কমান্ডার। এ ছাড়া, সেনাবাহিনীর ভেতরে ১৩ জন হত্যার শিকার হন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও কোনো সেক্টর কমান্ডারকে হারাতে হয়নি। আর তাই হত্যার নৃশংস ভয়াবহতা ৭ নভেম্বরকে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ে পরিণত করেছে।’
যেভাবে হত্যা করা হয় তিন মুক্তিযোদ্ধাকে
৭ নভেম্বর সবচেয়ে বড় যে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয় সেটি সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফ, এ টি এম হায়দার ও সাব সেক্টর কমান্ডার খন্দকার নাজমুল হুদার। শেরে বাংলা নগরে ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে সকালে এই হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়। মূলত এই হত্যাকাণ্ড জিয়াউর রহমানকে এককভাবে সেনা নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করে।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা রকম মত ও বক্তব্য রয়েছে।
আনোয়ার কবির বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের, মীর শওকত আলী এবং হত্যাকারী হিসেবে মেজর আসাদ ও মেজর জলিল নামে দুই জন অফিসার, উত্তেজিত সিপাহীদের কথা বলা হয় এবং এ নিয়ে কিছু বিবরণও পাওয়া যায়। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেনাবাহিনী থেকে আজ পর্যন্ত কোনো কোর্ট অব ইনকোয়ারি হয়নি। আমি আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সে সময়ে ১০ম বেঙ্গলে উপস্থিত থাকা কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে যেটি জানতে পেরেছি তাতে সে সময়ে ১০ম বেঙ্গলে নিহত ওই তিন জন ছাড়াও আরও নয় জন অফিসার উপস্থিত ছিলেন বলে মনে হয়েছে।
তারা হলেন: লে. কর্নেল নওয়াজেশ উদ্দীন (সিও ১০ম বেঙ্গল, পরবতীতে কর্নেল ও ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সালে জিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য কোর্ট মার্শালে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন), লে. মুজিবুর রহমান (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম বিএমএ অফিসার, পরবর্তীতে মেজর, ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সালে জিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য কোর্ট মার্শালে মৃত্যুবরণ করেন), মেজর কাইউম (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ওয়ার কোর্সের অফিসার), কর্নেল সিরাজ, ক্যাপ্টেন মোক্তাদির (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ওয়ার কোর্স বা সেকেন্ড এসএস-এর অফিসার, মেজর হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত), ক্যাপ্টেন আলম ফজলুর রহমান (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ওয়ার কোর্স বা সেকেন্ড এসএস-এর অফিসার, পরবর্তীতে সেনাবাহিনীতে মেজর জেনারেল ও বিডিআর প্রধান হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত), মেজর নাসির, মেজর আসাদ (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ওয়ার কোর্সের অফিসার) এবং মেজর জলিল (বাংলাদেশ সেনাহিনীর প্রথম ওয়ার কোর্সের অফিসার)।
এই অফিসারদের অধিকাংশ এখনও জীবিত। সুতরাং সরকার উদ্যোগ নিলে এ হত্যাকাণ্ডে রহস্য উন্মোচন এবং হত্যাকারীদের বিচার করা খুব বেশি কঠিন নয়।
তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা বইতে লে. কর্নেল (অব.) এম. এ. হামিদ, পিএসসি ৭ নভেম্বর দিন খালেদ মোশারফ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে লিখেছেন: ‘সকাল ৭ ঘটিকা। টু-ফিল্ড রেজিমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সৈনিকদের ব্যস্ততা, দ্রুত আনাগোনা প্রত্যক্ষ করছিলাম। তারা হেলেদুলে ঘুরছে-ফিরছে আপন খেয়ালে। অন্য সময় হলে অফিসারদের পাশ দিয়ে যেতে তাদের স্মার্ট স্যালুট দিয়ে চলতে হতো। আজ এসবের বালাই নেই। আজ তাদের রাজ্যে তারাই রাজা।
‘এমন সময় সৈনিকদের ভিড় ঠেলে একটি আর্মি ট্রাক শোঁ শোঁ বেগে এগিয়ে এলো। ভেতর থেকে নেমে এলো একজন তরুণ লেফটেন্যান্ট। স্যালুট দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, স্যার, জেনারেল জিয়া কোথায়? জরুরি ব্যাপার আছে। বললাম, কী ব্যাপার আমাকেই বলো।
‘সে বলল, স্যার, খুবই জরুরি, ওনাকেই বলতে হবে। আমাকে ওনার কাছে নিয়ে চলুন প্লিজ! ওই দিন প্রোটোকলের কোনো বালাই ছিল না। বললাম, আসো, আমার সাথে।’
এম. এ. হামিদ আরও লেখেন, “আমি তাকে নিয়ে জিয়ার কামরায় ঢুকলাম, তাকে বললাম, এই ছেলেটি তোমাকে কিছু বলতে চায়। লেফটেন্যান্ট তৎক্ষণাৎ জিয়াকে একটি স্মার্ট স্যালুট দিয়ে বলল, ‘স্যার, আই হ্যাভ কাম টু প্রেজেন্ট ইউ ডেড বডি অফ খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা অ্যান্ড হায়দার, স্যার’। জিয়া অবাক! ব্রিগেডিয়ার খালেদের ডেডবডি। আমার দিকে তাকিয়ে জিয়া বললেন, ‘দেখো তো হামিদ, কী ব্যাপার’। আমি অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে দাঁড়ানো খোলা ট্রাকের পেছনে গিয়ে উঠলাম। সেখানে দেখি ট্রাকের পাটাতনে খড় চাপা দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে তিনটি মৃতদেহ। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা ও কর্নেল হায়দার। খালেদের পেটের ভুঁড়ি কিছুটা বেরিয়ে আসছিল। তাকে পেটের মধ্যে গুলি করা হয়েছিল, হয়তো বা বেয়নেট চার্জ করা হয়েছিল। কী করুণ মৃত্যু!
“আমি জিয়াকে কামরায় গিয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ, খালেদ, হুদা আর হায়দারের ডেডবডি’। সে জিজ্ঞাসা করল, এগুলো এখন কী করা যায়? আমি বললাম, ‘আপাতত এগুলো সিএমএইচ-এর মর্গে পাঠিয়ে দেই’। জিয়া বলল, ‘প্লিজ হামিদ, এক্ষুণি ব্যবস্থা করো’।”
এম. এ. হামিদ লিখেছেন, ‘হায় খালেদ মোশাররফ! তিনি ৭ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে এলেন বটে। তবে জীবিত নয়, ফিরে এলো তার প্রাণহীন দেহ। আমি লেফটেন্যান্টকে ডেডবডিগুলো সিএমএইচ-এ নিয়ে যেতে বললাম। আমার জিপ ছিল না। রাতে বিপ্লবীরা আমার জিপটি গ্যারেজ থেকে নিয়ে গেছে। তাকেই রেখে আসতে বললাম।’
১০ ম বেঙ্গলে কী ঘটেছিল
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও গবেষকের বইপত্র থেকে ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তটির যে চিত্র পাওয়া যায়, তা এরকম:
রাত ১২টায় সেপাই বিপ্লবের খবর পেয়ে জেনারেল খালেদ মোশাররফ দ্রুত তার প্রাইভেট কার নিয়ে বঙ্গভবন থেকে দ্রুত বেরিয়ে যান। তিনি নিজেই ড্রাইভ করছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন কে এন হুদা ও এ টি এম হায়দার। দুজন ওইদিনই ঢাকার বাইরে থেকে এসে খালেদের সাথে যোগ দেন।
খালেদ মোশাররফ প্রথমে ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের বাসায় যান। সেখানে তার সঙ্গে পরামর্শ করেন। নুরুজ্জামান তাকে ড্রেস পাল্টে নিতে অনুরোধ করে। তিনি তার নিজের একটি প্যান্ট ও বুশ শার্ট খালেদকে পরতে দেন। মৃত্যুর সময় ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের দেয়া এই ছোট সাইজের সার্ট-প্যান্টই পরে ছিলেন খালেদ মোশাররফ।
সেখান থেকে খালেদ মোশাররফ কলাবাগানে তার এক আত্মীয়ের বাসায় যান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেন এবং কয়েক জায়গায় ফোন করেন। ৪র্থ বেঙ্গলে সর্বশেষ ফোন করলে ডিউটি অফিসার লে. কামরুল ফোন ধরেন। লে. কামরুল তাকে প্রকৃত অবস্থা অবহিত করেন। খালেদ মোশাররফ বুঝতে পারেন অবস্থা খুবই নাজুক। তিনি অবস্থান পরিবর্তন করে শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ করতে যান। ১০ম বেঙ্গলকে বগুড়া থেকে তিনিই আনিয়েছিলেন তার নিরাপত্তার জন্য। পথে ফাতেমা নার্সিং হোমের কাছে তার গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে তিনি কর্নেল হুদা ও হায়দারসহ পায়ে হেঁটেই ১০ম বেঙ্গলে গিয়ে পৌঁছেন।
প্রথমে নিরাপদেই তারা বিশ্বস্ত ইউনিটে আশ্রয় নেন। তখনও সেখানে সিপাহিদের বিদ্রোহের ঢেউ এসে লাগেনি। কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কর্নেল নওয়াজিশ। তাকে দেওয়া হয় খালেদ মোশাররফের আগমনের খবর। তিনি তৎক্ষণাৎ টেলিফোনে টু-ফিল্ডে সদ্যমুক্ত জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার ইউনিটে খালেদ মোশাররফের উপস্থিতির কথা জানিয়ে দেন। তখন ভোর প্রায় চারটা। জিয়ার সঙ্গে ফোনে কর্নেল নওয়াজিশের কিছু কথা হয়। এরপর তিনি (মেজর জিয়া) মেজর জলিলকে ফোন দিতে বলেন। জিয়ার সাথে মেজর জলিলের কথা হয়। তাদের মধ্যে কী কথা হয়, সেটা কেউ অনুমান করতে পারেননি।
ভোরবেলা দেখতে দেখতে সেপাইদের বিদ্রোহের ঢেউ ১০ম বেঙ্গলেও লাগতে শুরু করে। সেপাইরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি কর্নেল নওয়াজিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তারা খালেদ ও তার সহযোগীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সেপাইরা তাদের টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনেন।
ইউনিটের অফিসার মেজর আসাদের বিবৃতি অনুসারে কর্নেল হায়দারকে তার চোখের সামনেই মেস থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে এনে প্রকাশ্যে সৈনিকরা গুলি করে হত্যা করে। বাকি দুজন উপরে ছিলেন, তাদের কীভাবে মারা হয় তিনি দেখতে পাননি।
একাধিক ভাষ্যে জানা যায় খালেদ মোশাররফ, হায়দার ও হুদা অফিসার মেসে বসে সকালের নাস্তা করছিলেন। হুদা ভীত হয়ে পড়লেও খালেদ ছিলেন ধীর, স্থির, শান্ত। তিনি হুদাকে সাহস রাখতে বলেন।
মেজর জলিল কয়েকজন উত্তেজিত সৈনিক নিয়ে মেসের ভেতর প্রবেশ করে। তার সাথে একজন বিপ্লবী হাবিলদারও ছিলেন। ওই হাবিলদার চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে বলেন, ‘আমরা তোমার বিচার চাই।’
খালেদ শান্ত কণ্ঠে জবাব দেন, ‘ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো। আমাকে জিয়ার কাছে নিয়ে চলো।’
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে ওই হাবিলদার চিৎকার করে বলেন, ‘আমরা এখানেই তোমার বিচার করব।’
খালেদ ধীর-স্থির। বললেন, ‘ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো।’
খালেদ দু’হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকলেন।
এরপর ওই হাবিলদারের ব্রাশফায়ারে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী খালেদা মোশাররফ।
কামরার ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে ধরা পড়েন কর্নেল হুদা। সেখানেই তিনি প্রাণত্যাগ করেন। কর্নেল হায়দার ছুটে বেরিয়ে যান, কিন্তু সৈনিকদের হাতে বারান্দায় ধরা পড়েন। সেপাইরা তাকে কিল-ঘুষি-লাথি মারতে মারতে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে আনে। সেখানে একজন সৈনিকের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। ঢাকায় পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বহু কমান্ডো আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কর্নেল হায়দার। ১৬ ডিসেম্বর একাত্তরে পল্টন ময়দানে ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণ মুহূর্তে অপূর্ব ভঙ্গিতে স্টেনগান কাঁধে হায়দারকে দেখা যায় জে. অরোরা ও নিয়াজীর সঙ্গে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে।
প্রকাশনা বন্ধ হওয়া আজকের কাগজ পত্রিকায় প্রত্যক্ষদর্শী মেজর আসাদুজ্জামান পরে ওইদিনের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে: ‘মেজর জলিল সাহেব উপরে (দোতলায়) ব্রিগেডিয়ার খালেদ, কর্নেল হুদা ও কর্নেল হায়দারের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই জোয়ানরা লে. কর্নেল হায়দারকে কিল, ঘুষি ও চড় মারতে মারতে নিচে নামিয়ে আনতে লাগল। আমি তখন বেশ দূরে একটা জিপের ভেতর ছিলাম। আমি জিপের দরজা খুলে বের হতেই তিনি আমাকে চিৎকার করে ডেকে বললেন, আসাদ সেভ মি। আমি দৌড়ে তার কাছে যেতে চেষ্টা করি। তার কাছে পৌঁছানোর পূর্বেই পাশে দাঁড়ানো এক জওয়ানের গুলিতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কতগুলো জওয়ান তাকে ঘিরে রাখল। চারিদিকে তখন গোলাগুলি চলছে।
‘এই পরিস্থিতিতে কে কী করল, তা ছিল খুবই অস্পষ্ট এবং ঘোলাটে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনো অফিসারকেই সেদিন দেখতে পাইনি বা কাউকে এগিয়ে আসতেও দেখিনি। অন্য দুজন (খালেদ ও হুদা) কীভাবে মারা গেলেন তা স্পষ্ট বুঝতে পারিনি। মোটামুটি এই ছিল ৭ নভেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের একটি ইউনিটের খণ্ডচিত্র।’
আরও পড়ুন:গত বছরের ৪ আগস্টের পর সারা দেশের ৪০টি মাজারে (মাজার/সুফি কবরস্থান, দরগা) ৪৪ বার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
ওই সময়ে মাজার/দরগাহ এবং ভক্তদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, মাজারের সম্পত্তি লুটপাট ও মাজারে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে।
পুলিশের তদন্তের বরাতে এ তথ্য জানায় প্রেস উইং।
এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সবচেয়ে বেশিসংখ্যক হামলার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এখানে ১৭টি মাজারে ভাঙচুর, লুটপাট করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগ ও ময়মনসিংহ বিভাগে যথাক্রমে ১০টি ও ৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
‘ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলায় একটি মাজারে চারবার হামলা হয়েছে।’
বিবৃতিতে জানানো হয়, ৪৪টি হামলার ঘটনার সবকটিতেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন থানায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার ভিত্তিতে বা পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ১৫টি নিয়মিত মামলা এবং ২৯টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ফৌজদারি মামলায় ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দুটি নিয়মিত মামলায় এরই মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আরও ১৩টি নিয়মিত মামলা ও ২৯টি জিডির তদন্ত চলছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশজুড়ে মাজারের (মাজার, দরগাহ) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সমস্ত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিবাদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে শান্তি বৈঠকের আয়োজন করে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। কমিউনিটি পুলিশিং প্রচেষ্টার মাধ্যমে জনসাধারণ এবং ইসলামি নেতাদের অংশগ্রহণ বজায় রেখে সংবেদনশীলকরণ কর্মসূচিতেও জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে যেকোনো সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে বলে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, দোষীদের গ্রেপ্তারের জন্য এরই মধ্যে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর (মাজার ও দরগাহ) নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ নিতে পুলিশ এরই মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করেছে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
আরও পড়ুন:জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় সংলাপের পরবর্তী কর্মপন্থা হিসেবে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের কাছ থেকে অভিমত চেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আপনাদের সুচিন্তিত অভিমত চিঠি মারফত পাঠাতে পারেন, ‘মাহফুজ আলম, উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়’ এই ঠিকানায়। আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চিঠি মারফত আপনাদের অভিমত জানাতে পারবেন। অভিমতগুলো পর্যালোচনা করে একটি সংশোধিত ও সর্বজনগ্রাহ্য ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জনগণের উপস্থিতিতে তা শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।”
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, গণতন্ত্র মঞ্চ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, যিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে আরও আলোচনা হবে। কাজটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য কমিটিও গঠন করা হতে পারে।
‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে এ বিষয়ে দ্রুত একটি কর্মকৌশল ঠিক করা হবে।’
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। সবাই বলেছেন, এ ধরনের একটা ঘোষণাপত্র করার দরকার আছে, তবে এখানে অনেক সাজেশন (পরামর্শ) এসেছে।
‘মোটাদাগে হলো ঘোষণাপত্রে সবার অবদান বলতে হবে, ধারাবাহিকতা উল্লেখ করতে হবে। ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক বা আইনি প্রকৃতি কী হবে, সেটা স্পষ্ট করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটার জন্য যতটা সময় লাগা প্রয়োজন, ততটা সময় নেওয়া যেতে পারে, তবে অযথা কালবিলম্ব বা সময়ক্ষেপণ যেন না হয়।
‘সবাই একমত পোষণ করেছে। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে আরও নিবিড় আলোচনার মাধ্যমে এ ধরনের ঘোষণাপত্র হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন:তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদন রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের শুনানির কার্যতালিকায় রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রোববারের শুনানির কার্যতালিকার ১৩ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
গত ১ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ রিভিউটি ১৯ জানুয়ারি শুনানির জন্য ধার্য করেন।
আদালতে সেদিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, শরীফ ভূঁইয়া ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে ১৬ অক্টোবর রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তার আগে এ বিষয়ে রিভিউ করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। এ ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার রিভিউ আবেদন করেন। এসব রিভিউ আবেদনের একসঙ্গে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে।
এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়।
এ সংক্রান্ত গেজেট ২০১১ সালের ৩ জুলাই প্রকাশ করা হয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
আরও পড়ুন:যুদ্ধবিধস্ত লেবানন থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ৪৭ বাংলাদেশি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে পৌঁছান তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
ফেরত আসা এসব নাগরিককে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম কর্মকর্তারা।
আইওএমের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা পকেটমানি, কিছু খাদ্যসামগ্রী ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
বিমানবন্দরে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের খোঁজ নেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এখন পর্যন্ত একজন বাংলাদেশি বোমা হামলায় নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
এ পর্যন্ত ১৯ ফ্লাইটে ১ হাজার ২৪৬ বাংলাদেশিকে লেবানন থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়।
আরও পড়ুন:সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে মিয়ানমার থেকে ২২ হাজার টন আতপ চাল নিয়ে ‘এমভি গোল্ডেন স্টার’ নামের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত চালের প্রথম চালান। জাহাজে রক্ষিত চালের নমুনা সংগ্রহ করে ভৌত পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের কাজ শুরু হবে। এ জন্য এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে পাকিস্তান থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৪ জানুয়ারি খাদ্য অধিদপ্তর ও ট্রেডিং করপোরেশন অফ পাকিস্তানের (টিসিপি) মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল খালেক ও টিসিপির চেয়ারম্যান সৈয়দ রাফিউ বশির শাহ নিজ নিজ পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সরকারের ক্রয় কমিটির অনুমোদনের পর চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওই চাল আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে আসতে শুরু করবে।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে এ সমঝোতা স্মারক এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান চলাকালীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে থাকা সব তথ্য (ডাটা) আলাদাভাবে অক্ষুণ্ন অবস্থায় সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকে তদন্তকাজে সহযোগিতা করতে দেশের সব মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারনেট প্রভাইডারদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় ৭৫ জনের সম্পদ বিবরণী ট্র্যাইব্যুনাল থেকে চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে আজ একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।
এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ ট্রাইব্যুনাল থেকে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে সংবাদটির প্রতিবেদক আলী ইব্রাহিমকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আগামী ২০ জানুয়ারি হাজির হতে স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল বৃহস্পতিবার এসব আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে এসব আদেশের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।
ওই সময় তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা আদেশ ছাড়াই যেকোনো ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষকে ডাকতে ও যেকোনো ডকুমেন্টস চাইতে পারার আইনি এখতিয়ার রাখেন। তবুও আজ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে আদেশ নিয়েছেন প্রসিকিউশন।
ব্রিফিংয়ে অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
পরবর্তী সময়ে জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জাজ্জ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার হচ্ছে।
আরও পড়ুন:সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে সরকার।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
তার পোস্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোণার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে শুধু শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছে সরকার।
এ ছাড়া নওগাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়, মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে।
পাশাপাশি জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নারায়াণগঞ্জে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বলে ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য