গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে উচ্ছেদ অভিযানের নামে সাঁওতাল পল্লিতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও তিন সাঁওতালকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর। ওই ঘটনায় হওয়া মামলার বিচার শুরু হয়নি পাঁচ বছরেও। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাঁওতাল নেতাসহ হতাহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তরা।
রংপুর চিনিকলের আওতাধীন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকার ইক্ষু খামারে সাঁওতাল ও বাঙালিদের বসতবাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী উচ্ছেদ অভিযান চালায় ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সকালে। বিনা নোটিশে ওই অভিযানের সময় জান-মাল রক্ষার্থে প্রতিরোধ গড়ে তোলে পল্লির বাসিন্দারা। বিক্ষুব্ধদের দমনে একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়।
গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্যামল হেমরম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু নামের তিন সাঁওতাল নিহত হন। আরও বেশ কয়েকজন সাঁওতাল-বাঙালি গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এ ছাড়া পুলিশসহ উভয় পক্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।
পল্লির বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এই ঘটনার সময় পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও একাধিক জনপ্রতিনিধির প্রত্যক্ষ মদদে তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা এই হামলা ও লুটপাটে অংশ নেয়। গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল, রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আউয়াল, ইউএনও আব্দুল হান্নান, থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার ও কাঁটাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিকসহ অনেকেই পুরো ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
এরপর সাঁওতাল পল্লির বাড়িঘরে পুলিশ প্রশাসনের আগুন দেয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও পাঁচ বছরেও আলোচিত এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি।
মামলার গতিপ্রকৃতি
৬ নভেম্বরের ওই ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে থমাস হেমরম বাদী হয়ে তৎকালীন গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আউয়ালসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি পরবর্তী সময়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই পিবিআই মূল আসামিদের বাদ দিয়ে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করে না-রাজি করে বাদীপক্ষ। পরে একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
সিআইডি তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৯৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেয়। মামলার মূল আসামিদের নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়ার অভিযোগ তুলে সেটিও প্রত্যাখ্যান করে বাদীপক্ষ। পরে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি আবারও এর বিরুদ্ধে না-রাজি দেন বাদী।
বাদীর সর্বশেষ না-রাজি পিটিশনের পর মামলাটির ওপর গত ১২ অক্টোবর আদালতে শুনানি ও আলোচনা হয়। শুনানি শেষে আগামী ৭ ডিসেম্বর আদেশের দিন ধার্য করে আদালত।
আবারও বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা, উত্তাপ
৬ নভেম্বরের ওই ঘটনার পর চিনিকলের এক হাজার ৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমি পুরোটাই দখলে নেয় সাঁওতাল জনগোষ্ঠী। এরপর দীর্ঘদিন এ নিয়ে আলোচনা ছিল না। পরবর্তী সময়ে কিছু জমিতে অবশ্য কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এই জনগোষ্ঠীর যাতায়াত বন্ধ করে দেয় মিল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২০১৯ সালে সরকারের এক সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায় রংপুর চিনিকলসহ দেশের বেশ কয়েকটি চিনিকল। তখন থেকে সব জমি ভোগদখল করে আসছে সাঁওতাল-বাঙালিরা।
সম্প্রতি এই এলাকা নিয়ে ফের উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় দুই হাজার একরের এই জমিতে ইকোনমিক জোন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর জমি পরিদর্শনসহ পরবর্তী কাজও শুরু করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) কর্তৃপক্ষ।
এর পরই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে সাঁওতালরা। এই জমি নিজেদের দাবি করে ফের আন্দোলনে নেমে সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে।
সরকারের বৃহত্তর এই পরিকল্পনা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে সাঁওতালরা। তাদের দাবি, ৬ নভেম্বর হামলা ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েও উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে সরকার নতুন করে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি মহল বেপজা কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করে সাঁওতাল-পল্লির তিন ফসলি জমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপনের পাঁয়তারা করছে।
পল্লির জয়পুর গ্রামের ফুলমনি হেমরম বলেন, ‘এটা আমার বাপ-দাদার পৈতৃক জমি। সরকার এটা আমাদের ফিরত দিক। আমাদের সরিয়ে ইপিজেড হতি পারে না। করতি দিব না। জীবন দিব; জমি দিব না। আর ইপিজেড হতি দিব না।’
৬ নভেম্বর হামলার সময় গুলিতে পা হারানো পল্লির বিমল কিসকু বলেন, ‘সেই ১৮১৬ সাল থাকি আমরা এখানে বাস করছি। এই যে আমরা গুলিবিদ্ধ হইছি; আমরা কোনো অনুদান পাইনি। আমরা কি দেশের জনগণ না। আমরা কি ভুট (ভোট) দিই না।’
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বার্নাবাস টুডু বলেন, ‘আমাদের নানাভাবে নির্যাতন করা হইছে। পুলিশ নির্যাতন করছে। এলাকার প্রভাবশালীরা নির্যাতন করছে। গুলি করে তিন ভাইকে মারছে। আমাদের ঘরে আগুন লাগি দিছে। লুটপাট করছে। এখন আমাদের একেক জনের পিছে ৮ থাকি ৯টি করি মামলা ঢুকি দিছে।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘প্রশাসন দিয়ে গুলি চালানোর পরও আসামিরা দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে। উল্টো আদিবাসীদের নামে একটার পর একটা মামলা দিচ্ছে।’
ইপিজেড নিয়ে এই সাঁওতাল নেতা বলেন, ‘আমরাও দেশের উন্নয়ন চাই। তবে নৃগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ আর নিঃস্ব করে সেই উন্নয়ন করাটা কতটা যৌক্তিক?’
স্থানীয় একটি পক্ষ অবশ্য বলছে, চিনিকলের জমিতে ইপিজেড হলে অসংখ্য শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। সেখানে গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
স্থানীয় প্রশাসনও ইপিজেড স্থাপনের পক্ষে। তারা বলছে, এই জমিতে ইপিজেড নির্মাণ সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ইপিজেড হলে এই অঞ্চলের শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা চাকরির সুযোগ পাবে। শুধু গাইবান্ধা নয়, বৃহত্তর রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলা নানামুখী সুবিধা ভোগ করবে। জীবনমানে পরিবর্তন ঘটবে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীরও।
তবে সাঁওতালদের জমি ফেরতের এই আন্দোলন-সংগ্রামে একাত্মতা জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। এসব সংগঠনের নেতারা সাঁওতাল পল্লিতে ইপিজেড বাতিল করে পলাশবাড়ী উপজেলার সাঁকোয়া ব্রিজ এলাকায় স্থানান্তরের দাবি তুলেছেন।
সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চ, সাকোয়াঁ ব্রিজ ইপিজেড বাস্তবায়ন মঞ্চ, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, আদিবাসী ইউনিয়ন ও জন-উদ্যোগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক ও গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘সাঁওতাল পল্লিতে ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা বিস্ময়কর ঘটনা। পৈতৃক জমি থেকে আবারও সাঁওতালদের উচ্ছেদের চেষ্টা করাটা অযৌক্তিক বলে আমি মনে করি।’
‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’
এদিকে হামলার ওই দিনটিকে প্রতিবছর ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে পল্লির বাসিন্দারা। শনিবার পাঁচ বছর পূর্তিতে সেখানে শোকযাত্রা, পুষ্পস্তবক অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্বালন, স্মরণসভা, সমাবেশসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
সিলেটের ওসমানীনগরে এনা ও ইউনিক পরিবহনের দুটি বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
শনিবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুরুয়া বাজারের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজু মিয়ার (২৬) বাড়ি ফরিদপুর জেলার তারাকান্দা থানায়। তিনি ইউনিক বাসের হেলপার ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ইউনিক পরিবহনের বাসের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা এনা পরিবহনের বাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইউনিকের হেলপার রাজু মিয়ার নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে ভুল পাশ থেকে এসে এনা পরিবহনের ওই কোচটি এ দুর্ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়াস সার্ভিস, ওসমানীনগর থানা পুলিশ ও শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ এসে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পর কুরুয়া বাজারের দুই পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে যানজট নিরসন করে পুলিশ।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, দুই গাড়ির সংঘর্ষ হলে বিকট শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাতে যোগ দেন।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ রাজুর লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাস দুটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য