ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে বাস বন্ধ রাখায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশী হাজারো পরীক্ষার্থী শতেক ভোগান্তি মাথায় নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে গেছেন; কারও কারও যাওয়াই হয়নি।
জরুরি কাজে দূর গন্তব্যের যাত্রীরা ছোট ছোট গাড়িতে কয়েক গুন বেশি ভাড়া দিয়ে রওনা হয়েছে। রিকশায় চেপেও দূরের যাত্রায় রওনা হয়েছে অনেকে।
বুধবার রাত ১২টা থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি মালিকরা শুক্রবার ভোর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেন। পরে রাতে বাস মালিকদের সংগঠনও যাত্রী বহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।
সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআটিএ অবশ্য ভাড়া পুনর্নির্ধারণে বৈঠক ডেকেছে। তবে সেই বৈঠক হবে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার। পরিবহন মালিকদের বক্তব্য, এই তিন দিন তারা কেন জ্বালানি তেলের জন্য বাড়তি খরচ করে ক্ষতির মুখে পড়বেন।
পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা তাও বৃহস্পতিবার সকাল সকাল এসেছে। কিন্তু বাস না চালানোর ঘোষণা আসে রাতে। ফলে যাত্রীদের অনেকের মধ্যে তথ্যের ঘাটতি ছিল অনেক।
কুমিল্লা
কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডে শুক্রবার ভোর থেকে নীরবতা। চালক ও হেলপারদের হাঁকডাক নেই। নগরীর চকবাজার ও জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডের অবস্থাও একই রকম।
বাসস্ট্যান্ডে ব্যাগ-বইপত্র নিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রত্যাশী পরীক্ষার্থীকে। পাশাপাশি ছিলেন অন্য যাত্রীরা।
৭টি ব্যাংকের গুচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল দিপু আহসানের।
আফসোস নিয়ে দিপু বলেন, ‘আমার আর আজ নিয়োগ পরীক্ষা দেয়া হলো না। কত প্রস্তুতি নিয়েছি। কত আশা ছিল। তা আর পূরণ হলো না। পরীক্ষা কমিটি চাইলে পরীক্ষাগুলো স্থগিত করতে পারত। সব ভোগান্তি আমাদের।’
তবে আগে থেকে বুকিং থাকায় কিছু কিছু ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চললেও নতুন ভাড়ায় কেউ নিচ্ছে না পণ্য পরিবহনও।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কোথাও গণপরিবহন চলাচলের দৃশ্য চোখে না পড়লেও দেখা গেছে পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল। মাইক্রোবাসগুলোতে উপচে পড়ছে যাত্রী।
পদুয়ার বাজার থেকে ঢাকা যেতে দুই ঘণ্টা লাগে। মাইক্রোবাসে নিয়মিত ভাড়া ২ শ টাকা জনপ্রতি, সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
লক্ষ্মীপুর
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকে অলস বসে টার্মিনালের বাস। বাস চলবে না, সে তথ্য জানা না থাকায় যাত্রীরা অপেক্ষ করতে থাকেন দীর্ঘ সময়।
পরিবহন মালিক ফখরুল আলম নাহিদসহ পরিবহন মালিকরা জানান, তেলের দাম বৃদ্ধি করার ঘোষণা দিলে একই সঙ্গে ভাড়া কত বাড়বে সে ঘোষণাও দিতে হবে সরকারকে। সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি মেনে না নেবে, ততক্ষণ ধর্মঘট চলবে।
বরিশাল
ভোর থেকে বাস টার্মিনালে এসেও কোনো উপায় না পেয়ে ব্যাগের ওপর বাচ্চাকে নিয়ে বসে ছিলেন সুফিয়ানা বেগম। নগরীর রুপাতলী এলাকার এই বাসিন্দাকে সকাল ৭টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দেখা যায়।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে মাদারীপুর যাওয়ার জন্য টার্মিনালে দুই বছরের বাচ্চা নিয়া ব্যাগের ওপরেই বইসা আছি। পারিবারিক কাজে মাদারীপুর যাওয়া লাগবে। কেমনে যাব বুঝতাছি না।’
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বরিশালেও বাস ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য চলছে, চলবে।’
বরগুনা
সকাল ৯টার দিকে বরগুনা টাউন হল বাস স্টপেজে দেখা গেছে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড়। কয়েকজন যাত্রী জানান, তারা জানতেনই না যে বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে।
জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, ‘সরকার বাস মালিক শ্রমিকদের কথা চিন্তা না করেই প্রতি লিটার ডিজেল ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। কিন্তু বাস মালিকরা যদি ৫ টাকাও ভাড়া বাড়ান তাহলে সেটা ফলাও করে প্রচার হয়। যাত্রীরা আন্দোলনেও নামেন।
‘বাস চালাতে গেলে রাস্তার খরচ, ড্রাইভার-হেলপার বেতনসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হয়। জ্বালানি তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে না আনলে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’
সিলেট
বাস বন্ধ থাকলেও জেলায় চলছে মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, লেগুনাসহ ছোট যানবাহন। তবে বেড়ে গেছে ভাড়া।
মোটরবাইক রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরাও ধর্মঘটের সুযোগে দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাড়তি ভাড়া সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে এসব পরিবহনে ভিড় করছেন যাত্রীরা।
জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আশিক আহমদ। তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাইনি। পরে দেড় হাজার টাকায় একটি মাইক্রোতে উঠেছি।’
ধর্মঘট প্রসঙ্গে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করেই আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। ডিজেলের দাম বাড়ায় যাত্রীদেরকেই বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। যে হারে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে তাতে গাড়ি চালিয়ে লাভের চেয়ে লোকসানই হবে।’
রাজশাহী
বাস বন্ধ থাকায় রাজশাহী সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন।
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ মহাসড়কে সকাল থেকে প্রচুরসংখ্যক অটোরিকশা ও টেম্পু চলাচল করছে।
জেলা ট্রাক মলিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাদরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহীর কোনো ট্রাক আজ চলেনি। বাইরের কোনো জেলা থেকেও কোনো ট্রাক রাজশাহীতে আসেনি। এটা ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতি চলছে। সেন্ট্রাল থেকে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ট্রাক রাস্তায় নামবে না।’
রাজশাহী বিভাগের নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও একাত্মতা জানিয়ে ধর্মঘট চালাচ্ছেন।
রংপুর
রংপুরের ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে ট্রাক, ট্যাংক লরিগুলো বিভিন্ন রাস্তার পাশে, তেলপাম্পে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে, বাসগুলো স্ট্যান্ডে। সড়ক ফাঁকা।
ট্রাক বন্ধ থাকায় কাঁচামাল নিয়ে চরম বেকায়দায় ব্যবসায়ীরা।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী হারুণ অর রশিদ বলেন, ‘প্রতিদিন অর্ধশত ট্রাক রংপুর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। এক দিন বন্ধ থাকলে অনেক মালামাল নষ্ট হবে। দ্রুত ধর্মঘট প্রত্যাহার চাই।’
রংপুর ট্রাক ও ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। আমাদের করার কিছু নাই।’
রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মালিক সমিতি ধর্মঘট করছে না। তবে কোনো মালিক গাড়ি চালাচ্ছেন না। কেউ চালালে বাধা দেবে না সমিতি। আবার কেউ না চালালেও গাড়ি চালাতে বলবে না।’
যশোর
সকাল থেকে ৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে যশোর থেকে বিভিন্ন বাজার ও উপজেলা শহরগুলোতে যেতে ইজিবাইক ছাড়া ভিন্ন বাহন ছিল না। নিরুপায় হয়ে তিন গুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হয় গন্তব্যে।
শহরের মণিহার, শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, ইজিবাইকে করেই যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। যে জায়গার ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা ছিল, সেখানে তারা ৫০ টাকা চাচ্ছেন।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, ‘করোনায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতের। এমন সময়ে তেলের দাম এক লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি জুলুম। ডিজেলের দাম না কমা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’
নেত্রকোণা
শহরের পারলা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আন্তজেলা ও ঢাকাসহ দেশের কোথাও বাস ছেড়ে যায়নি। এদিকে শহরের বারহাট্রা রোড থেকেও বাস-ট্রাক কিছুই ছাড়েনি।
নেত্রকোণা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ খান বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ায় বর্তমান ভাড়ায় পরিবহন চালালে লোকসান গুনতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া নাগাদ ধর্মঘট চলবে।’
গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক রাসেল মিয়া বলেন, ‘ঢাকা লাগাত যাইতে অহন তিন হাজার টাহার তেল বেশি লাগে। ভাড়া বাড়েনি। আমরা লোকসান দিয়া গাড়ি চারায়াম কেমনে। ভাড়া বাড়াক। নাইলে তেলের দাম কমাক সরকার।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কুমিল্লা থেকে মাহফুজ নান্টু, লক্ষ্মীপুর থেকে আব্বাস হোসাইন, বরিশাল থেকে তন্ময় তপু, বরগুনা থেকে রুদ্র রুহান, সিলেট থেকে দেবাশীষ দেবু, রাজশাহী থেকে আহসান হাবীব অপু, রংপুর থেকে রফিকুল ইসলাম, যশোর থেকে নিশাত বিজয় ও নেত্রকোণা থেকে অনিন্দ্য পাল চৌধুরী।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য